ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব

নজমুল আলবাব's picture
Submitted by albab on Sat, 27/07/2019 - 10:29pm
Categories:

রোজাটা ৩০ দিনের হলে সবকিছু নিয়ম মতোই হয়। আগেও হতো। কিন্তু যদি হয় ২৯, তাহলেই বিরাট ভজঘট। অবশ্য ২৯ বিরাট একটা রোমাঞ্চকর বিষয় ছিলো। ২৮ তম দিনেই আমাদের মাঝে একটা চঞ্চলতা চলে আসতো। পরশু কি ঈদ হবে? নাকি আরেকদিন বেশি অপেক্ষা করতে হবে? যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখা বাটার জুতোটা কি পরা হবে পরশু নাকি আরেকদিন অপেক্ষা করতে হবে?

এটা সেসময়ের কথা, যখন আমরা কোন এক প্রত্যন্ত থানা সদরে থাকি। জগন্নাথপুর- দিরাই। নদী ও হাওরের উদার ভূমি। রোজার শেষ কয়েকটা দিন আম্মা শুধু ব্যাগ গোছাতেন। আমাদের তিনতলা ব্যাগ ছিলো একটা। নিচে গোপন তিনটা কুঠোরি। কাপড় চোপড় ভরা শুরু হলে, যখন সেটা উপচে পড়তো তখন আম্মা একটা করে চেইন খুলে ব্যাগটা বড় করে দিতেন। আর আব্বা বলতেন, ''ইয়া! ওতোতা কিতা নিতায়! একদিন আর দুইদিনর লাগি ওতোতা নেওয়া লাগেনি?'' আম্মা হয়তো বলতেন, ''হুরুতা দুগুর খতো কাপড় লাগে ইতা আপনার হিসাব আছেনি?''
আমরা তখন বিশ্বনাথে। বাসার ঠিক সামনে বড় রাস্তা। বিকালে, সময় টময় জানিনা তখন। সকাল, দুপুর, বিকাল আর রাত চিনতাম শুধু। আব্বা হঠাৎ এসে বল্লেন, কালকেই ঈদ। আম্মা দৌঁড়ে দৌঁড়ে ঘর গোছালেন। বাসার সামনে থেকেই একটা বাসে উঠা হলো। ভিড়ে ভর্তি সেই বাস। কেউ একজন চিৎকার করে বল্লেন, ''মাস্টর সাবরে সিট দেওবা।'' দুটো সিট বের হলো। আম্মা আব্বা বসলেন। আব্বার কোলে আমি। দাদাভাই পেছনের দিকে পরিচিত আরো কেউ একজনের পাশে বসলেন। সিলেটে গিয়ে আবার বাস বদলাতে হতো। তখন বাস টার্মিনাল নামের কোন বস্তু ছিলো না সম্ভবত। ক্বিন ব্রিজের আশেপাশে আসলেই শোনা যেতো ''গোলাফগইনজ-জকিগইনজ'' কিংবা বিয়নীবাজার বলে কন্ট্রাক্টররা চেঁচাচ্ছে। তেমন একটা ভিড়ের বাসে ওঠা গেলো। আমি যথারিতি আব্বার কোলে। যদিও আম্মার কোলে বসার আগ্রহটাই বেশি ছিলো। জানলার বাইরে তাকানো যেতো। মাঝখানের ফাঁকা যায়গাটায় ভাঁজ করা একটা ছোট সিট থাকতো। দাদাভাই সেটাতে বসলো। আমার ভেতরটা একদম জ্বলে গেলো। না বসলাম জানলার পাশে, না বসলাম সিটে।
হেতিমগঞ্জ বাজারে যেতেই সেই বাসটা থেমে গেলো। ইফতারের সময় হয়েছে। ছোট ছোট প্লাস্টিকের প্লেটে করে অল্প কিছু ছোলা ভাজা, দুটো মনেহয় পিয়াজু আর কটকটে হলুদ রঙের খিচুড়ি। আম্মা কখনো এতো মজার খিচুড়ি রাঁধতে পারেননি!
বর্ষায় গোলাপগঞ্জের থানার ঘাট থেকে নৌকা যেতো। একদম নানা বাড়ীর টিলার নিচে। সেই ঘাটে যখন খালামনি আমার ঘুম মুখে মায়া দিতে দিতে সজাগ করলেন তখন কতো রাত ছিলো জানিনা। কিন্তু এখন বুঝি সেটা সন্ধ্যা রাতই ছিলো। অতটুকুন পথ যেতে গভীর রাত হবার কথা নয়। আমার নানাবাড়ী। আমার জন্মমাটি। সোজা বিশ তলা ভবনের মতো খাড়া হয়ে ওঠা টিলা। শৈশব বলি আর ঈদ বলি সবটুকু স্মৃতি জুড়ে এই একটা বুনো গন্ধওয়ালা বাড়ী। তার এক পাশে উদার হাওর। অন্যপাশে গা ছমছম করা টিলার পাশ দিয়ে রেখার মতো হাঁটাপথ। উত্তরের আকাশে লেগে থাকা দুরের জাফলং কিংবা মেঘালয়ের পাহাড়...

জগন্নাথপুরে তখন গাড়ি যায়না। ভবের বাজার থেকে হেঁটে যেতে হয়। সেবার আমরা রোজা শুরুর আগেই নানা বাড়ী গেলাম। নানা বাড়ী যাবার আনন্দে প্রজাপতির মতো উড়তে উড়তে সেই পথ পেরিয়ে গেলাম। নানা বাড়ীর রোজা ছিলো একদম অন্য রকম। সেখানে রোজা রাখা যেতো। অনেক গুলো কলস সার বেঁধে রাখা মাচানের ওপর। মাটির কলস। আমরা লাইন ধরে দাঁড়াতাম। মাসী কায়দা করে একেক জনের মুখ থেকে রোজা নিয়ে টুপ করে সেসব কলসে ঢুকিয়ে রেখে ঢেকে রাখতেন। খেয়ে দেয়ে, ইচ্ছে হলে তখনই সেটা আবার নিয়ে নেয়া যেতো। নয়তো ফুটবল মাঠের মতো বিশাল উঠানে হুটুপুটি খেলে-টেলে তারপর আস্তে ধিরে আবার রোজাটা ফেরত নেয়া যেতো। মাঝে মাঝে খালাম্মা আসতেন। তখন আপা, দাদাভাই বোকাদের মতো কলসে রোজা না ঢুকিয়েই সারাদিন শুকনো মুখে হেঁটে বেড়াতো। বিকাল হলে কায়া লেগে শুয়ে থাকতো কোথাও। এমদাদ ভোন্দার মতো থাকতো। সে না যেতো খেলতে না রাখতো রোজা। আমি একদম পছন্দ করতামনা ওরে। তখন আবার তারে আমার ভাই বলতে হতো! অথচ সে আমার তিন মাসের বড়ো মাত্র।
আব্বা চিঠি লিখলেন। ঈদের আগের রাতে তিনি আসবেন। অধীর আগ্রহ নিয়ে সেই দিনের অপেক্ষা করতে শুরু করলাম। কিন্তু দিনগুলো একদম আস্তে আস্তে যাচ্ছিলো। বড় মামা রোজ দুপুরেই তখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন। আর ফিরতেন রাতে। হাত ভর্তি থাকতো বাজারে। একেকদিন একেক যায়গায় ইফতার করতেন তিনি। কোনদিন খালাম্মার বাড়ীতে, কোনদিন তার কোন বন্ধুর বাড়ীতে কিংবা রিয়াজ মামার দোকানে।
রোজ ইফতারের সময় বড় পাটি বিছিয়ে আমরা সবাই বসতাম। আম্মা বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকতেন। মাসী আমাদের দেখাশোনা খাবার দাবার করানো সব করতেন। আমাদের মা খালাদের চেয়ে বেশি বয়েসী একেকটা প্লেটে করে ইফতারি সাজিয়ে দিতেন তিনি। শুধুমাত্র এই সময়টাতে কলসে রোজা ঢুকানো যেতোনা। চুপটি করে বসে থাকতে হতো। ছোট একটা রেডিও ছিলো। সেখানে একটা অনুষ্ঠান হতো এক নানা তার নাতনীদের নিয়ে সম্ভবত গল্প স্বল্প করতেন। তারপর মনেহয় তেলাওয়াত হতো বা সরাসরি আজান। সাথে সাথে সেই রেডিও বন্ধ হয়ে যেতো।
সেদিন আজানের পর রেডিও বন্ধ হলো না। নানা সাহেব বল্লেন, আওয়াজ কমিয়ে দিয়ে পাশে সরিয়ে রাখতে। ছোটমামা আওয়াজ কমাতে গিয়ে বন্ধ করে দিলো, তারপর আর ছাড়তে পারে না! অনেক কসরত করে, ইফতারি ফেলে যখন সেটা চালু করলো তখন গান হচ্ছে- 'ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে...' এই একটা গান জীবনের সাথে মিশে গেছে যেনো। না শুনলে মনেই হয়না ঈদ এসেছে। পরে যখন আমাদের টিভি হলো, শেষ রোজার বিকেলে টিভির সামনে বসে থাকতাম গনটার জন্য। আমারই বয়েসি ছেলে মেয়েরা লাইন বেঁধে দাঁড়িয়ে পুরো শরীর মোচড় দিয়ে দিয়ে গানটা গাইছে সে এক অসম্ভব ভালো লাগার দৃশ্য। যেদিনের কথা বলছি, সেদিন আমরা অধীর আগ্রহে বসে আছি সন্ধ্যার পর থেকে। আব্বা আসবেন। অপেক্ষা করতে করতে আমি কখন ঘুমিয়ে গেলাম টেরই পেলাম না। আব্বা এলেন সেটা আর দেখা হলো না। পরের ভোরে আব্বা আমার গয়ে শুড়শুড়ি দেন! আমি চোখ মেলে আব্বাকে দেখি, দেখি দিনের আলো ফুটে উঠেছে! আমি বুঝে যাই আব্বা আরো অনেক আগে এসেছেন আর আমি তখন ঘুমে ছিলাম! কাঁদতে শুরু করি, কেনো আমাকে রাতেই ডাকা হলো না সেজন্য রাগ করি। আব্বা আমাকে নিয়ে বাঘা হাওরের জলে নাইতে যান। ছোট মামা কোলে করে একদম তার গলা পানি অব্দি গিয়ে একেবারে আমাকেসহ টোপ করে একটা ডুব দিয়ে গোসল করে ফেলে!
সেবার ঈদে নানাবাড়ী খুব জমাট ছিলো। বিকেল খালাম্মা এলেন, তার আগে এসেছিলেন আমাদের আরেক খালু। মাসি আগে থেকেই ছিলেন সেখানে। আমার নানার ভাগ্না ভাগ্নিদের কেউ কেউ এসেছিলেন। উঠানে পাটি বিছিয়ে গল্পের আসর বসলো সন্ধ্যার পর। বড় খালু একটার পর একটা কিচ্ছা বলে যাচ্ছেন। মাসি একটু পর পর চা বানিয়ে নিয়ে আসছেন। পুরো বাড়ি গমগম করছে। বড় মামা একটা হ্যাজাকও জ্বালিয়ে দিলেন এক সময়। হ্যাজাকের সেই আলোতে বসেই আমাদের রাতের খাবার হয়ে গেলো, তবু কিচ্ছা আর শেষ হয় না। বড় খালু চলে গেলেও ছোট মামা একটার পর একটা কিচ্ছা বলেই যাচ্ছে, তার কোন মুক্তি নেই। অলৌকিক সেইসব গল্পমালা শুনতে শুনতে একজন একজন করে আমরা ঘুমের রাজ্যে ঢলে পড়ি।
রাত তখন ঠিক কতটা গভির জানিনা, অদ্ভুদ শব্দ শুনে ঘুম ভাঙ্গে। নিজেকে আবিস্কার করি বারান্দায়, আব্বার কোলে। আব্বা বিলাপ করে কাঁদছেন আর সবাই তাকে শান্তনা দিচ্ছেন। আমি ভয় পেয়ে যাই। কাঁদতে শুরু করি। আব্বা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন, তার কান্না থামেনা। নানাসাহেব আর নানী আব্বাকে নানান কথা বলে বুঝাতে থাকেন সেসবের কিছুই আমি বুঝিনা। আম শুধু বুঝি আব্বার অনেক কষ্ট...
পরের দিন আপা আমারে বলে, রাতে আব্বার ঘুমের মাঝে আমার দাদী এসেছিলেন আব্বাকে দেখতে, আব্বা ঘুম থেকে কাঁদতে কাঁদতে জেগে উঠেছেন। সবাই তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলো কিন্তু আব্বা থামছিলেন না। মাসি আমাকে নিয়ে এসে আব্বার কোলে তুলে দিলে আস্তে আস্তে আব্বা শান্ত হলেন।

অল্প অল্প করে লিখছিলাম। এরমাঝে খবর পেলাম বড়খালু মারা গেছেন। টুপ করে আমাদের শৈশবের একটা রঙিন দরোজা বন্ধ হয়ে গেলো খবরটা শুনে। খালুর আসর জমানো গল্প আজ এই চল্লিশের চালসে সময়েও মুগ্ধতা নিয়ে মনে করি। আমাদের শৈশব বৈচিত্র্যময় হয়েছিলো এমনসব মানুষের জন্য। এরা একজন একজন করে চলে যাচ্ছেন।
আর লিখতে ভালো লাগছে না...

বাইসাইকেল দুপুরে ঠিক ঠিক যখন
ঘুমিয়ে পড়ে মায়ের পাঠশালা। আলো
হেলে পড়েনা তখনও, তখনও মন্দিরে
টুংটাং বাজতে থাকে বাতাসের বাজনা।
তুমি তখন ঝরাপাতা বনে হেঁটেছিলে।

আজ কোন স্মৃতি নেই, ছড়ানো ঝিঙে লতা
বিরান উঠোন, ধুলো উড়ছে আমাদের নিরবতা

খসে পড়া তারাদেরও থাকে গন্তব্য
ঝরে পড়ে মেঘ হয় তুমুল বৃষ্টি
ভাসতে থাকা আলবাব, আব্বা ছাড়া
তোমার আর কোন গন্তব্য নাই


Comments

রাজর্ষি 's picture

লেখাটা পড়ছিলাম আর কী এক অনুভূতি যেন গ্রাস করছিল। প্রত্যেকটা মানুষের মনে হয় ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু কোথাও এক অভিন্ন শৈশবের গল্প থাকে। দিরাই থেকে এক দীর্ঘ পরবাসে এসে আমি গভীর রাতে ঘুমের ঘোরে সেইসব চিরপরিচিত মানুষের মুখ,রাস্তা-গাছ, কালনী নদী নৌকা, আকাশ, বর্ষার দাদুর বাড়ি, আনন্দপুর গ্রা্‌ম নিথর দুপুর দেখি। এই সুন্দর অস্পর্শনীয় অনুভূতিতে জমা থাকে এক দীর্ঘশ্বাস। লিখতে ইচ্ছে করেনা।

জীবনটা এরকমই, ভালো বা খারাপ পরিবর্তনই ধ্রুব।

মেঘলা মানুষ's picture

Quote:
জীবনটা এরকমই, ভালো বা খারাপ পরিবর্তনই ধ্রুব।

সময় আস্তে আস্তে করে আমাদের থেকে কতকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একসময় যারা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আজ তাদের থেকে কতদূরে ভেসে এসেছি, কেউ কেউ পারি দিয়েছেন ওপারে।

রাজর্ষি 's picture

অপসৃয়মান এক দূরগামী ট্রেনের মত সবকিছু দূর থেকে আরো দূর চলে যেতে থাকে নির্নিমেষ নয়নে বালক
ব্যাথাহত হয়ে তাকিয়ে থাকে।

এই কষ্টটাও একসময় গা-সওয়া হয়ে যায়।

মন তরে কেবা পার করে,
হজরত শাহ জালালাহর দরগায় বসি, হায় মন ইদম শাহয়ে কান্দে
মন তরে কেবা পার করে

নজমুল আলবাব's picture

দিরাই একটা অমোঘ টানের নাম আমার জন্য। কেউ যদি আমাকে পেছনে ফিরে যেতে বলে আমি নিশ্চিতভাবে আশির দশকের দিরাইয়ে ফিরে যেতে চাইবো। শেষ সময়টা কোথায় কাটাতে চাই এমনটা বেছে নেবার সুযোগ থাকলে কালনীর পারকে বেছে নেবো।

মেঘলা মানুষ's picture

লেখা ভালো লেগেছে। এখন অনেক চেষ্টা করেও ওরকম খুশি হতে পারি না।

নজমুল আলবাব's picture

সময় এতো পাল্টে গেছে, আমরা তার সাথে আর তাল মেলাতে পারলামনা সম্ভবত

আব্দুল্লাহ এ.এম.'s picture

আহা! কী যে ছিল সেই সব দিন।

নজমুল আলবাব's picture

আমি সেই একই বাড়ীতে ফিরে গিয়েছি পরে। সেই একই উঠোন, মানুষও কমবেশি এক তারপরও কেনো যেনো মেলেনি। সুর-তাল-লয় কেটে গেলে যেমন হয়।

এক লহমা's picture

মায়াময় লেখা। মন ভিজে যায়। (আপনার লেখা - সেটাই স্বাভাবিক)।
আমদের ছোটবেলাগুলো এইরকম অজস্র টুকরো স্মৃতির মালা। চোখের সামনে ভাসে - কিন্তু ছোঁয়া যায়না।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নজমুল আলবাব's picture

কঠিন প্রশংসা করলেন! আনত হই।

শুধু ছোটবেলা কেনো, প্রতিদিনইতো জীবনটা ছড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি

মুস্তাফিজ's picture

সচলে ঢোকা হয় না, পড়া হয় না, লেখা তো দুরের কথা। আজকে হঠাৎ ঢুকে তোমার লেখা দেখে মনে হলো দেশে ফিরে যাই।

...........................
Every Picture Tells a Story

নজমুল আলবাব's picture

অনেকদিন পর আপনার মন্তব্য পেলাম। ম্লান আলোয় যেমন শৈশব দেখি সেই রকমই হয়তো আরো কিছুদিন পরে সেকালের সচল জামানাকে আমরা দেখবো।

নাসিম's picture

চমৎকার লেখনী। তবে এইখানে এসে একটু খটকা লাগলো:

"হেতিমগঞ্জ বাজারে যেতেই সেই বাসটা থেমে গেলো। ইফতারের সময় হয়েছে। ছোট ছোট প্লাস্টিকের প্লেটে করে অল্প কিছু ছোলা ভাজা, দুটো মনেহয় পিয়াজু আর কটকটে হলুদ রঙের খিচুড়ি। আম্মা কখনো এতো মজার খিচুড়ি রাঁধতে পারেননি!"

কারন চাঁদ দেখা যাওয়ার এত সময় পরে তো আর ইফতার করার কথা না। এবং ঈদের চাঁদ নরমালি শেষ ইফতারের পরেই দেখা যায়।

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক আগের প্যারাতেই দেখুন লিখেছি, বিকালেই রওয়ানা দেওয়া হয়েছিলো। আমার যদ্দুর মনে পড়ে ঈদ নিয়ে এখন যত বিতিকিচ্ছিরি হয়, তখন ওতো হতোনা। আম্মা বল্লেন, সৌদি আরবে ঈদ হয়েছে খবর পেলেই মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যেতো পরেরদিন আমাদের ঈদ।

তারেক অণু's picture

কী ভীষণ মায়াঘেরা লেখা! আপনাকে দিয়ে জোরে করে রোজনামচা লেখাতে হবে। আজ ১৫ কিলোমিটার হেঁটে এসে কেবল জিরচ্ছিলাম ফ্লোরেন্সে, লেখাটা পড়ে বেশ কেমন যেন হয়ে গেল চারপাশ।

নজমুল আলবাব's picture

লেখা পাঠের জন্য অনেক ধন্যবাদ অণু

লুৎফুল আরেফীন's picture

“ মাসী কায়দা করে একেক জনের মুখ থেকে রোজা নিয়ে টুপ করে সেসব কলসে ঢুকিয়ে রেখে ঢেকে রাখতেন। খেয়ে দেয়ে, ইচ্ছে হলে তখনই সেটা আবার নিয়ে নেয়া যেতো।”
আমার বড় মামাও এই বিষয়টা জানতেন! উনি নিজে জেনেই ক্ষান্ত থাকেননি, আমার মা (ওনার ছোট বোন)-কেও শিখিয়েছিলেন!

নজমুল আলবাব's picture

আমাদের মাসী এসবের জন্য এক প্রতিভা বিশেষ। তাঁকে আপামর শিশুসাধারণ খুবই পছন্দ করতো। অসাধারণ পিঠা বানাতেন তখন। এখনও তিনি আমাদের প্রধান পিঠা কারিগর। উনার হাতের কাজের তুলনা নেই। বছর দুয়েক আগে আমাদের দেখতে এসেছিলেন, সাথে করে নিয়ে এলেন নিজের বানানো বাহারীসব শো পিস। এতো চমৎকার একেকটা যে এদেশের ওভার স্মার্ট বাচ্চাদেরও সেসব দারুণ পছন্দ হলো।

অনেক অনেক দিন পর আপনার দেখা পেলাম। অসম্ভব ভালো লাগছে।

লুৎফুল আরেফীন's picture

এসেই আপনার লেখা পড়তে পারলাম, সেটাও একটা বড় সৌভাগ্য!

নজমুল আলবাব's picture

আপনার লেখার জন্য কেমন তীব্র অপেক্ষায় থাকে পাঠক তা যদি জানতে পারতেন...

অতিথি লেখক's picture

জীবনের নানা ব্যাস্ততায় ভূলেই গিয়েছিলাম একদিন ছোট ছিলাম। ছোটবেলার এরকম হাজারটা গল্প জমে জমে একটার উপর আরেকটা স্তুপ হয়ে আছে। আজ সব মনে করিয়ে দিলেন। শৈশব স্মৃতি ভর করলো মনে।

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ আপনাকে, এবং আপনি চাইলেই সেসব স্মৃতি লিখে ফেলতে পারেন। দেখুন একবার চেষ্টা করে।

কর্ণজয়'s picture

চোখ বুলিয়ে গেলাম। কিন্তু এর আগে পড়েছি আরো ৩ বার। লেখার চেয়ে নিজের জন্য। এমন একটা মায়া, মায়াটার টানে-

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ

পান্থ রহমান রেজা's picture

শেষে এসে মন কেমন করে উঠলো।
মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে মুঠোফোনে খবর আসে, অমুকে মারা গেছে। তখন মনে হয়, কতো স্মৃতি হারিয়ে গেল অতলে!

নজমুল আলবাব's picture

স্মৃতি হারায় না। আমরা হারিয়ে ফেলি বা মনে করতে পারিনা

নীড় সন্ধানী's picture

লেখাটা সময় নিয়ে আয়েশ করে পড়বো ভেবে জমিয়ে রেখেছিলাম, পড়তে পড়তে মাস পার হবার যোগাড়।

এমন চমৎকার শৈশব স্মৃতিচারণ একবার পড়ে তৃপ্তি মেটে না। আবারো পড়ার ইচ্ছে জাগে। কেননা পড়তে পড়তে নিজের শৈশবও পায়ে পায়ে ঘুরতে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেছনের স্মৃতি থেকে আনন্দ আহরণের প্রবণতা বাড়তে থাকে। সেখানে শৈশব হলো অন্যতম আনন্দময় পর্ব। এমন কিছু বিষয় লিখেছেন যেখানে আমার নিজের কিছু স্মৃতি মিলে গেছে বলে আনন্দটা কয়েকগুন বেশী লাগলো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নজমুল আলবাব's picture

অনেক ধন্যবাদ

কনফুসিয়াস's picture

পড়তে শুরু করলাম আপনার মায়াময় বর্ণনা নিয়ে, শেষ করলাম নিজের মন খারাপ আপনার সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে দিয়ে। আইজ আমার ঘটিলো জঞ্জাল...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নজমুল আলবাব's picture

জঞ্জাল মাঝে মাঝে খারাপ না। কাজে আসে। এখন কাজে লাগাও

হাসিব's picture

এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়।
জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা..

অতিথি লেখক's picture

ভালো লাগলো। নিজের স্মৃতির মাঝে হারিয়েছিকাম খানিক টা সময়....

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.