পতাকা ও জামার গল্প

চরম উদাস's picture
Submitted by udash on Thu, 27/03/2014 - 12:23am
Categories:

১।
সন্ধ্যের দিকে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করেন কামরুল হাসান। সকালে থেকে চলছে এই কবিতা পাঠের আসর। ফয়েজ আহমেদ তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসেন। বুঝতে পারেন পটুয়া মহা ক্লান্ত। একটি কাজেই পটুয়ার কখনো ক্লান্তি আসে না, আঁকা আঁকি। আশেপাশে যা কাগজ পাচ্ছেন পটুয়া সকাল থেকে সেখানে নানা আঁকিবুঁকি করে যাচ্ছেন। এখন কবি রবীন্দ্র গোপের ডায়েরীতে চলছে পটুয়ার আঁকা আঁকি। কিছুক্ষণ আঁকিবুঁকি করে হঠাৎ মনে হল পটুয়া কিছু একটাতে মন বসিয়েছেন। পটুয়ার মাঝে কেমন যেন একটা ঘোর লাগা ভাব। সারাদিন ধরে এত কবিতা শুনলেন কিন্তু এখন আর মনে করতে পারছেন না কি কবিতা শুনলেন। মাথার মধ্যে শুধু মোহাম্মদ রফিকের চারটি লাইন ঘুরপাক খাচ্ছে -
সব শালাকবি হবে, পিপীলিকা গোঁ ধরেছে উড়বেই, বন থেকে দাঁতাল শুওর, রাজ আসনে বসবেই।

পটুয়া দ্রুত হাতে স্কেচ করে যান। এক টানে লম্বা একটা সাপ এঁকে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। এবারে কি একটা দাঁতাল শুয়োর আঁকবেন? নাকি হিংস্র শ্বাপদ? সবচেয়ে ভালো হয় মনে হয় শেয়াল। একটা বেহায়া কিন্তু হিংস্র মুখ আঁকতে হবে। মাথায় বারেবারে ইয়াহিয়ার মুখটা ভেসে আসে। কিন্তু এই মুখটা ইয়াহিয়া থেকে আলাদা। কিন্তু আসলেই কি অত আলাদা? পটুয়া আপন মনেই বিড়বিড় করেন, বিশ্ববেহায়া, বিশ্ববেহায়া। ঘোরের মাঝে বেশ কিছু সময় কেটে যায়। গোপের ডায়েরী ছাড়াও তার চারপাশে একগাদা খাতা কাগজ ছড়ানো। একটা খাতার পেছনে আঁকা লাল সবুজ পতাকার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন। লাল বৃত্তটা মাপের চেয়ে একটু ছোট মনে হতে থাকে তার। তাকে অবাক করে দিয়ে একসময় লাল বৃত্তটা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। ঘোর লাগা চোখে পটুয়া দেখতে পান লাল বৃত্তটা বড় হতে হতে আকাশ ছুঁয়েছে।

২।
সেলিনা পারভীন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
সুমন তুমি মামার সাথে খেয়ে নিও। আমি যাব আর চলে আসব।'
শাড়িটা বদলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এরা রাজী হলনা। গায়ে ঘরে পরার সাদাসিধে সাদা শাড়ি-ব্লাউজ। তিনি বরাবরই শীত-কাতুরে। শাড়ীর সাথে গায়ে সাদা স্কার্ফ, পায়ে সাদা জুতা ও মোজা। এমন অদ্ভুত পোশাকেই রওনা দিলেন। দুদিন পরে রায়ের বাজারের মাটির ঢিবিটার পাশে কে যেন খুঁজে পায় সাদা মোজা পরা একটি মেয়ের লাশ, আরও অনেক লাশের সাথে। চোখ বাঁধা, মুখ ও নাকের কোনও আকৃতি নেই, কে যেন অস্ত্র দিয়ে তা কেটে খামচিয়ে তুলে নিয়েছে। স্তনের একটি অংশ কাটা। মুখ দেখে চেনার উপায় নেই। চেনা গেল সাদা মোজা দেখে।

৩।
মেজর প্রচণ্ড ক্রোধে চিৎকার করে ফারুককে বলতে বলে, পাকিস্তান জিন্দাবাদ। ফারুক শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে চিৎকার করে, জয় বাংলা।
তার সামনে রডে বাধা লাল সবুজ পতাকা। মাস কয়েক আগে এই লাল সবুজ পতাকাটাই একটু একটু করে উঠে গিয়েছিল পিরোজপুর শহীদ মিনারের মাথায়। ওমর ফারুক তার পাশে দাঁড়ানো দলের কর্মীর দিকে তাকিয়ে বলেছিল, কি মিয়া কি বুঝলা? এইটা তো সবে শুরু। মার্চের দুই তারিখে বটতলার সভায় পতাকাটা প্রথম সচক্ষে দেখেন ফারুক। সাথে সাথে সাদা কাগজে এঁকে ফেলেন শিবনারায়ণ এর ডিজাইনটা। পিরোজপুর ফিরে এসেই দিনরাত এক করে শুরু হয় সেই পতাকা বানানো। শহীদ মিনার আসলেই শুরু ছিল। এর পর পুলিশ সুপারের অফিস থেকে শুরু করে সব স্কুল কলেজে পতাকা উঠানো শুরু হয়। শেষ পতাকা উত্তোলন হয় ফারুকের শরীরে। পতাকা সহই পুরো রডটা ফারুকের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। দেখে আশেপাশের কয়েকজন জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে যায়। ফারুক কিছুই অনুভব করেন না।

৪।
শিবনারায়ণ কুমিল্লার শাসনগাছায় হন্যে হয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিলেন। টায়ারে আগুন দেয়ার কাজটা শুনতে যত সহজ মনে হয়,আদতে অত সহজ না। আর তা ছাড়া কর্মীরা একেকজন সব আবেগে উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে। পারলে একেকজন নিজের গায়েই আগুন লাগিয়ে দেয়। ঢাকায় কি হচ্ছে এই বিষয়ে কারো স্পষ্ট ধারণা নেই। শুধু ভাসা ভাসা নানা খবর আসে কানে। তিনি মাথা ঝাঁকিয়ে ঢাকার চিন্তা দূর করার চেষ্টা করলেন। ঢাকায় যা হবার হোক। আপাতত এখানে ব্যারিকেড দেয়ার কাজটা করে যেতে হবে। কে জানে সামনে কি অপেক্ষা করছে। তিনি চেঁচিয়ে কয়েকজনকে দুটি টায়ার আরও ডানে সরাতে বললেন।

সতীশচন্দ্র বিড়বিড় করে বলেন, একটু জল দ্যান। একটু জল।
উত্তরে কিছু গালিগালাজ ভেসে আসে। কিছু উর্দুতে, কিছু ভাঙা বাংলায়। চিৎকার করে কে যেন বারবার শিবনারায়ণ এর খোঁজ চায়।
সতীশচন্দ্রের কাছে জন্ম মৃত্যু ব্যথা সবই তুচ্ছ মনে হয়। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ। শুনেছিলেন মানুষ নাকি জল না খেয়ে বেশ কয়দিন নাকি বেঁচে থাকতে পারে। তাকে ধরে এনেছে একটা পূর্ণ দিনও তো হয়নি। এক একটি ঘণ্টা তার কাছে এক এক বছরের সমান দীর্ঘ মনে হয়। শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে শেষবারের মত চিৎকার করেন, একটু জল দ্যান। একটু জল।
উত্তরে গুলির শব্দ শুনতে পান। প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কোন ব্যথার অনুভূতিও জাগেনা শরীরে।
বিড়বিড় করে বলেন, ও শিবু , শিবুরে।

৫।
রাবেয়া খাতুন ড্রেন পরিস্কার করতে করতে চোখের কোন দিয়ে একের পর এক জিপ আর ট্রাক ঢুকতে দেখেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। সেখান থেকে প্রথমে মিলিটারি নামে। তারপর একের পর এক বিভিন্ন বয়েসি মেয়েরা নামে। কেউ একটু বয়স্ক, কেউ তরুণী, কেউ কিশোরী, কেউ বালিকা। কাউকে নিয়ে যাওয়া হয় হেডকোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের উপর তলার রুমে, কাউকে ব্যারাকের ভেতর। এত মেয়ের জায়গা হয়না। বাকিদের দাড় করানো হয় ব্যারাকের বারান্দায়। অনেক হাতেই তখনও স্কুল কলেজের বই খাতা। কেউ কেউ অঝোরে কাঁদে, কেউ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। এরপর শুরু হয় উৎসব! ব্যারাকের বারান্দায় জমা হয় শাড়ি, কামিজ, ছোট্ট ছোট্ট ফ্রক। রাবেয়া খাতুন কোন দিকে না তাকিয়ে পরিস্কার ড্রেন আরও পরিস্কার করতে থাকেন। দিন যায়। অনেক মেয়েকে নগ্ন করে ঝুলিয়ে রাখা হয় ব্যারাকের বারান্দায়। ওভাবেই খাওয়া, ওভাবেই ঘুম, ওভাবেই বাথরুম। মাঝেমাঝে একেকটা জায়গাটা খালি হয়ে যায়। রক্তাক্ত একটা দেহ ডাস্টবিনে চলে যায়, সেখানে ঝুলতে আসে নতুন আরেকজন। রাবেয়া খাতুন প্রতিদিন মলমুত্র পরিস্কার করে যান। রাবেয়া খাতুন প্রতিদিন রক্তভেজা ড্রেন পরিস্কার করে যান। ঝুলতে ঝুলতে কিশোরী একটা মেয়ে একদিন ফিসফিস করে একটা জামা চায়। খেতে চায়না, ঘুমাতে চায়না, মুক্তি চায়না। শুধু একটা জামা পরতে চায়। রাবেয়া খাতুন এক মনে শুধু ড্রেন পরিস্কার করে যান।

৬।
জয়নুল আবেদিন এর পাশে শুয়ে ঘুমান পটুয়া। তার স্বপ্নে ঘুরেফিরে আসে ইয়াহিয়া আর বিশ্ববেহায়া। সবচেয়ে বেশী আসে লাল সবুজ একটা পতাকা। ঘুমের মাঝে তিনি হিসেব করেন বৃত্তটা আরেকটু বড় হলে কি ভালো হতো? সবুজটা আরেকটু গাঢ় হলে বুঝি মন্দ হতো না। ঘুমায় শিবুর বাপ সতীশচন্দ্র দুচোখে শিবুর পতাকার স্বপ্ন নিয়ে। তার পতাকায় লালের ভেতর একটা সোনালি মানচিত্রও থাকে।
মাঝে মাঝে অপ্রাসঙ্গিক সব দুঃস্বপ্নও আসে। ঢাকা স্টেডিয়াম লোকে লোকারণ্য। পাকিস্তানের খেলা চলে। মাঝেমাঝেই পুরো স্টেডিয়াম উল্লাসে ফেটে পড়ে। পটুয়া বিড়বিড় করেন, বেহায়া, বিশ্ববেহায়া। চার বছরের এক ছোট শিশু বাবার কোলে বসে হাততালি দেয়, গালে চাঁদ তারা পতাকা আঁকা। হালকা সবুজ পতাকা। পটুয়া ঘুমের মাঝে মাথা নাড়েন, না না, গাঢ় সবুজ, গাঢ় সবুজ।
সতীশচন্দ্র অসহায় ভাবে ডাকেন, ও শিবু শিবুরে।
ওমর ফারুক তার ফুটো হয়ে যাওয়া খুলিতে হাত দিয়ে খুঁজে ফিরেন লাল সবুজ পতাকা।

ঘুমায় সেলিনা পারভীনের সাদা মোজা, ছিঁড়ে যাওয়া ব্লাউজ। ঘুমের মাঝেই তারা বারেবারে কেঁপে ওঠে। তাদের ঘুমেও হানা দেয় অদ্ভুত সব দুঃস্বপ্ন।
- বড়ে ভাই আপকা জার্সি চাহিয়ে
ভাঙা ভাঙা উর্দুতে কাতর আবেদন জানায় বাঙ্গালী ছেলেটি।
- আব শার্ট মুঝে কাহা মিলেঙ্গে
একটু বিরক্ত ও বিব্রত হলেও মুখে মৃদু প্রশ্রয়ের হাসি মাখিয়ে বলে পাকিস্তানী।
- ম্যানেজ কারনা ইয়ার, ম্যানেজ কারনা। পাকিস্তানমে ইয়ে জার্সি বহুত সারে মিলেঙ্গে, বাংলাদেশ মে নেহি।
একজনের জামা অন্যের গায়ে আসে। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে।

এত চমৎকার একটি স্বপ্নেও শিউরে উঠে সেলিনা পারভীনের ছোট্ট সাদা মোজা। শিউরে উঠেন সেলিনা পারভীন । বিড়বিড় করে শুধু ডাকেন, সুমন, ও সুমন।

শিউরে উঠে কিশোরীকে খোঁজে কিশোরীর ছোট্ট ফ্রক। রাবেয়া খাতুন দেখেও না দেখার ভান করেন। কোন দিকে না তাকিয়ে পরিস্কার ড্রেন আরও পরিস্কার করতে থাকেন।


Comments

মেঘলা মানুষ's picture

পাক-ভারতের পতাকা নিয়ে ময়দানে খেলা দেখা যাবে না বলে স্টেডিয়ামে যাওয়াই ছেড়ে দিতে পারে কেউ কেউ। এত টাকা দাম দিয়ে কেনা হিলালি নিশান/চরকার পতাকা তো আর নষ্ট হতে দেয়া যায় না। হয়ত, বাসায় বসে টিভি সেটের সামনে বসে বসে এরা বিদেশি পতাকা দুলাবে, বাসার দেয়ালে টাঙিয়ে রাখবে তারপর।

আরে, আমাদের এই পতাকাটা জোগাড় করতে যে কত ত্যাগ আর কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তার হিসেব আছে?
হে ভীনদেশি পতাকা প্রেমিকরা, কতখানি রক্ত ঢালার পর আমাদের পতাকার মাঝখানটা লাল হয়েছে সেটা ভেবে দেখেছ কখনও?

আপনাকে শুভেচ্ছা, উদাস হাসি

সাকিন উল আলম 's picture

ইটা রাইখ্যা গেলাম... রেখে গেলাম । পড়ে কমেন্টাইতেসি ।

সাকিন উল আলম 's picture

কি লেখেন ভাই খালি চোখে পানি আসে ।

ভাবুক পাঠক's picture

এতা কিতা? এতো ছোতো ক্যা?

ভাবুক পাঠক's picture

লেখায় গুরু গুরু

অতিথি লেখক's picture

চরম উদাস, ভাই এভাবে এমন উদাসী কীক দিলেন? আমাদের কি মেরুদন্ড জায়গায় আছে? নাকি সব নটোকর্ডের ভিড়ে হারিয়ে ফেলেছি বলেন তো? আর কত ? আর কত অপেক্ষায় একদিন এসব সার্কাস বন্ধ হবে?

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
ভাবনা আমার শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে, মহুয়ার বনে মাতাল হাওয়া খেলে।
এক মুঠো রোদ আকাশ ভরা তারা, ভিজে মাটিতে জলের নকশা কর,
মনকে শুধু পাগল করে ফেলে।

অতিথি লেখক's picture

কি হবে ভাই এইসব 'ছাইপাশ' লিখে? হুদাই আমাদের চোখ ভিজান। মাসুদ সাঈদী'রা এখনো বিশাল ব্যবধানে চেয়ারম্যান হয়। চন্দনা বর্মনদের চালে এখনো সিঁদুরের অভিশাপে আগুন ধরে। প্যারেড গ্রাউন্ডে ইবনে সিনার স্যালাইন দেয়া হয় সরকারি ভাবে। যে জাতি নিজের পুটু নিজেই খুলে রাখে রক্তাক্ত করার জন্য সেখানে চোখের জলের কোন দাম নেই, রঙ নেই। কিচ্ছু নেই, কিচ্ছুনা!

-দেব প্রসাদ দেবু

সুবোধ অবোধ's picture

হাচল হবার পর এটাই প্রথম কমেন্ট। (এই মাত্র হাচল হলাম)
কাকতালীয়ভাবে আপনার লেখা পড়েই সচলে পাঠক হিসেবে যাত্রা শুরু, তারপর ধীরে ধীরে প্রেমে পড়া।
যাই হোক, লেখা পড়ে চোখে পানি চলে আসল।
গুরু গুরু

মেঘলা মানুষ's picture

বাহ, আপনি চমৎকার একটা লেখায় কমেন্ট করে হাচল কমেন্টের খাতা খুললেন।

হাচলত্বের শুভেচ্ছা হাসি
[এটা আমার দেয়া প্রথম হাচলত্বের শুভেচ্ছা। এতদিন মনে হয় আমিই সবচেয়ে নতুন হাচল ছিলাম ]

অতিথি লেখক's picture

সুবোধ অবোধ, আপনাকে অনেক দিন থেকে ফলো করছি। আপনাকে অবশেষে সচল হতে দেখে ভালো লাগছে। শুভেচ্ছা আপনাকে। চালিয়ে যান বস। আপনার একটা সচলগ হলো, ভরিয়ে তুলুন নিজের মতো করে।

- সুচিন্তিত ভুল

অতিথি লেখক's picture

কেন আমাদের সাথেই এমন হলো? দেশের কিছু মানুষ দেশকে এতো তীব্রভাবে ভালোবেসেছিলেন বলেই কি কিছু কুলাঙ্গার তাদের ভাগের দেশপ্রেমের পাশমার্ক পরিমাণটুকুও পায় নি? মন খারাপ হয় খুব, কিন্তু কী করবো বুঝতে পারি না।

- সুচিন্তিত ভুল

অতিথি লেখক's picture

চরম উদাস, আপনি অসাধারণ একটি কাজ করে চলেছেন। অনেক সময় পাকিজ ব্রেনওয়াশডদের কিছু পয়েন্টের সমুচিত জবাব দিতে পারি না। যতোক্ষণে মোক্ষম জবাবটা মাথায় আসে, ততক্ষণে তারা ঘোঁৎ-ঘোঁৎ শেষ করে খোয়াড়ে চলে গেছে।
আপনার লেখাগুলো যে কোন পরিস্থিতিতে ছাগুবিদ্ধংসী অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার মতো।

- সুচিন্তিত ভুল

নিহন আহসান 's picture

স্বভাব বিরুদ্ধ লেখা মনে হচ্ছে। ...

নিহন আহসান 's picture

এমতেই মনডা উদাস। এলা দিলেন তো কান্দায়া ,,,

সজল's picture

ভাষাহীন হয়ে গেলাম এটা পড়ে!

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অতিথি লেখক's picture

বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাই ঘটা করে ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বরে তাঁর ২ ছেলেকে নিয়ে ছাদে যেতেন পতাকা উত্তোলনের জন্য। পুরো গ্রামে শুধু আমাদের ছাদেই লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা, সেই ৮-১০ বছর বয়সে যে গর্বটা অনুভব করতাম এখনো তা অটুট আছে। তারই ধারাবাহিকতাই আমি দেশ থেকে দূরে থাকলেও মা এখনো জাতীয় দিবসগুলতে ঠিকই পতাকা উত্তোলন করেন ছাদে। অনেক সময় রাত ১২টায় বিটিভি সম্প্রচার শেষের জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাপ-বেটার ঘুমাতে যাওয়া। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যে বুকে হাত দিয়ে নয়, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে গাইতে হয় তাও সেই অইটুকুন বয়সে বাবার কাছ থেকে শেখা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি ছিলেন ৯ম শ্রেণির ছাত্র। এক রাতের আঁধারে তাঁর আরেকজন বন্ধুসহ আশে পাশের বাড়ির টিনের চাল থেকে সব পাকিস্তানি পতাকা খুলে এনে আমাদের পুকুরে চুবিয়ে রেখেছিলেন। পাশের বাড়ির তাঁর সম্পর্কে একজন চাচীর কাছ থেকে ১০ টাকা মিথ্যা বলে (আমার দাদী দিতে বলেছে এই বলে) নিয়ে আর এক কাপড়ে একটা ছেড়া ছাতা (সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল) সম্বল করে তাঁর ঘরছাড়া। এই ২৭ বছর বয়সে এসেও আমি এখনো বুঝতে পারিনা কতটা আবেগ থাকলে একদল সাধারণ মানুষ কোন প্রকার প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলা বারুদের নিশ্চয়তা ছাড়া মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে এভাবে যুদ্ধের জন্য ঘর ছাড়তে পারে।

অনেক ধন্যবাদ চরম উদাস, এই স্মৃতি গুলোকে নিয়ে আবারো জাবর কাটার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।

নির্ঝরা শ্রাবণ

চরম উদাস's picture

অনেক অনেক শ্রদ্ধা আপনার বাবাকে, আমাদের সবার বাবাকে।

অতিথি লেখক's picture

তাদের এই সাহস, দেশপ্রেম আর দেশের মানুষের প্রতি মমত্ব কখনো হয়তো বুঝে উঠতে পারবো না। শুধু প্রার্থনা করি, দেশকে তাদের হাজারভাগের একভাগ আবেগ দিয়ে কখনো যেন ভালোবাসতে পারি।

গুরু গুরু

---- মনজুর এলাহী ----

সাফি's picture

আলাদা করে কিছু বলার নাই। গুরু গুরু ^:)^

অতিথি লেখক's picture

...

কড়িকাঠুরে

অনিকেত's picture

কেন এমন করে লিখলেন উদাস'দা??!!
দিব্যি ছিলাম নিজের মত করে সব ভুলে-নিজের ফেনিল দুঃখকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আকাশ কাঁপিয়ে।
আপনার লেখাটা এক নিমেষে দাঁড় করিয়ে দিল রক্তে ভেজা মাটিতে---

কেন এমন করে লিখলেন?

'আমাদের সকলের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক'--এমন কামনা আমি করি না। এই কামনা করার মাঝে এক ধরণের অপমান আছে। দেশপ্রেম জাগ্রত হবার জন্যে আমাদের প্রার্থনা করতে হবে কেন? ৪২ বছর কী এতই দীর্ঘ যে মানুষ ভালবাসাও ভুলে যায়?

মরুদ্যান's picture

ধুর মিয়া! আপনে মানুষ ভাল না!
গুরু গুরু

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক's picture

এটা কি লিখলেন চউদা, কি লিখলেন এটা। যা আমি একবারে পড়ে শেষ করতে পারিনি, আপনি কিভাবে শেষ পর্যন্ত লিখে গেলেন? অন্তরের সবটুকু নিংড়ে শ্রদ্ধা জানাই আপনাকে।

----ইমরান ওয়াহিদ

এক লহমা's picture

শ্রদ্ধা

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ত্রিমাত্রিক কবি's picture

মাঝে মাঝে বড্ড মন খারাপ করিয়ে দ্যান উদাসদা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সবজান্তা's picture

বিদেশের মাটিতে বসে যখন দেখি, প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি নির্দ্বিধায় অন্য দেশের পতাকা হাতে নাচানাচি করে, তখন মনে হয়, "শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা ভাই"- এর কথাই ঠিক,

Quote:
বাংলাদেশ কায়েম হওয়ায় অনেকের মাতব্বরি বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ কায়েম না হলে এই মাতবরি কই থাকতো, দেখতে আগ্রহী।

আয়নামতি's picture

মন খারাপ

স্পর্শ's picture

আমাদের পাঠ্যবইতে এই লেখাগুলো থাকার খুব দরকার।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক's picture

গত কয়েকদিন থেকে এমনিতেই মনটা খারাপ খারাপ লাগছে, আপনার লেখা পড়ে আরও মন খারাপ হয়ে গেল মন খারাপ / আমরা কি আদৌ কোনদিন মানুষ হয়ে উঠতে পারবো?
ইসরাত

তিথীডোর's picture

এইসব লেখায় চুপচাপ পাঁচ তারা দাগিয়ে যেতে হয়।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ঝিঝি পোঁকা's picture

-------------বলার কিছূ নেই শুধু গুরু গুরু

-ঝিঝি পোঁকা

মাসুম মুনীম's picture

"আমাদের পাঠ্যবইতে এই লেখাগুলো থাকার খুব দরকার।" চরম ভাবে সহমত।

উদাস কেন কি কারনে এই প্রসঙ্গে, এখন লিখলেন জানিনা, আবারো ভিত নাড়িয়ে দিয়ে গেলেন।

রেহানা আক্তার's picture

এই কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা পড়েই যেখানে সহ্য করা মুশকিল, সেখানে এরকম হাজার হাজার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে পুরো নয় মাস জুড়ে। আমরা কতো সহজেই সবকিছু ভুলে যাই। মন খারাপ

- রেহানা আক্তার

অতিথি লেখক's picture

আপনি ভালো হয়ে যান।
চরম উদাস, আপনাকে বলছি, আপনি ভালো হয়ে যান।
আপনার কোন অধিকার নেই আমাকে বা আমার মতদের এভাবে কাঁদানোর।

************************
শুভেচ্ছা নিন। ভালো থাকুন।

----------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

তাহসিন রেজা's picture

মন খারাপ শ্রদ্ধা

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

তারেক অণু's picture
রংতুলি's picture

কিছু বলার নেই! মন খারাপ

স্যাম's picture

...............

অতিথি লেখক's picture

৫ এর মাঝামাঝি আসতেই চোখের মধ্যে বন্যা। ঝাপসা চোখে বাকিটা কোন রকমে পড়লাম। কান্না থামছে না। খুব অসহায় লাগতেসে উদাসদা।

এতো বেহায়া কেন এই মানুষগুলা!! এমন করে কেমনে ভুলে যায় কেউ নিজের মা, বোন, বাপ, ভাইয়ের সাথে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার কথা!!

---- মনজুর এলাহী -----

চরম উদাস's picture

অনেক ধন্যবাদ সবাইকে ।

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাফিনাজ আরজু's picture

গুরু গুরু

কিছু বলতে পারলাম না, চোখ শুধু ঝাপসা হয়ে আসল ......

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ's picture

অশ্রু ভারাক্রান্ত চোখে শেষ করলাম লেখাটা। হে মহান পূর্ব পুরুষরা, আমাদেরকে ক্ষমা করুন অক্ষমতার জন্য!!

____________________________

অতিথি লেখক's picture

তখন আমি খুবই ছোট, আর সবার মতো আমারও ছোট সময়ের বেশীরভাগ ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মনে নেই। তার পরেও একটা ঘটনার কথা কখনো ভুলতে পারিনা, আমার দাদু ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। বোকা আর সাধা-সিধে এই লোকটা আমাদের ছোটদের মাঝে বরাবরই অজনপ্রিয় ছিলো। আমরা যখন রাতের আধারে বাড়ীর উঠোনে গোল হয়ে বসে ঘুম ঘুম চোখে দাদীর মুখে শুনতাম পাশের বাড়ির শিমুল গাছের চুড়োয় বসে থাকা পেত্নী টার নানারকম রোমহর্ষক কীর্তিকলাপ এর বর্ননা তখন দাদু উঠোনের অন্ধকার কোনে বসে তাকিয়ে থাকতেন। রাতের তারা জলা আকাশের দিকে তাকিয়ে হয়তো ভাবতেন তার দেখা সত্যিকারের কোন ভয়াল রাক্ষসের কথা। বরা-বরিই চুপচাপ এই লোকটা একলাফে আমার কাছে আমার সমস্ত গর্বের মূল হয়ে উঠলো এক ঈদের সময়।সেদিন আমি ঘুম থেকে থেকে উঠে দাদুর হাত ধরে যথারীতি পাশের স্কুল মাঠে চলে গেলাম, ঈদের মাঠে। চারদিকে ওইদিন আলাদা একটা সাজ সাজ রব ছিলো কারন আমাদের ছোট্ট গ্রামের ঈদে সেবার এসেছিলেন আমাদের সহ আশে-পাশের সব এলাকার সবচেয়ে প্রতাপশালী এবং এলাকার একমাত্র নিজ নামে স্কুল, মাদ্রাসা সহ বেশীরভাগ স্থাপনার অর্থ দান কারী জনৈক ভদ্রলোক। ঈদের নামাজের লোকারন্যের মাঝে আমি আর দাদা এককোনায় গুটিশুটি মেরে বসে পড়লাম। নামাজ শেষ করার পর আমরা যখন বের হয়ে যাচ্ছিলাম তখন এলাকার ঈমাম সাহেব এর গলা ভেসে আসলো মাইকে, আগত উক্ত ভদ্রলোক আমাদের উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখবেন। সবার ঘুরে দাড়ানোর কারনে অগত্যা আমদেরকেও থেমে দাড়াতে হলো। বক্তব্য এ উক্ত ভদ্রলোক তার নানা রকম উন্নয়ন মুলক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরার পর বললেন- এখন থেকে আপনারা আমাকে আপনাদের সাথেই পাবেন আমাকে,আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশের বাইরে থেকে আমি স্থায়ী ভাবেই আপ্নাদের মাঝে চলে আসব,এলাকার বাকী উন্নয়ন এর জন্য আমি এবার চেয়ারম্যান হবার ইচ্ছা রাখি এবং আশা রাখি আপনারা নির্দিদ্ধায় আমাকে নিবার্চন করবেন। চারদিকে হাততালির মাঝে হঠাৎ একটা গমগমে স্বর ভেসে আসলো, আমার দাদুর। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি বরাবরই চুপচাপ থাকা লোক টার চেহারায় আজকে কেমন যেন কাঠিন্য চলে আসছে। চারদিকে হঠাৎ এত্ত চুপ হয়ে গেল যে আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম পাশের লোকটা বড় বড় শ্বাসের শব্দ। দাদু বললেন,- আর কেউ জানুন বা না জানুক আমি জানি যুদ্ধের সময় কি হইছিলো এই এলাকায়। আমার চোখের সামনেই ঘটছিলো ধোপা বাড়ির সমস্ত ঘটনা গুলো। তুমি আর তোমার বাপে তখন বাজারে শান্তি রক্ষা কমিটির  দ্বায়িত্বে ছিলা। এই এলাকায় মিলিটারিগোরে পথ দেখাইছিলো তোমার বাপে। আমারেও খুজছিলা তোমরা ধরাইয়া দিবার জন্য। কিচ্ছু ভুলি নাই। দেশের বাইরে থাকও এতোদিন কিচ্ছু বলি নাই কাউরে, এই এলাকার সবাই এ জানে তোমাগো সম্পর্কে। সবাই ভুইলা গেলেও আমি ভুলি নাই। এই আমি তোমারে এইখানে সাবধান কইরা দিতাসি, চেয়ারম্যান হইতে যাইও না আর দেশে থাকারও চিন্তা ভাবনা থাকলে বাদ দিয়া ফালাও। আমার কথা শুন বা না শুন কিন্তুক আমি কে এইটা মাথায় রাইখো।
সেদিন বুজতে পারি নাই এই ছোটখাট লোকটার ভেতর একটা বাঘের অস্তিত্ব ছিল। এখনও যখন বাড়িতে যাওয়া হয় লোকজন এসে দেখা করে, নানা কিছু জানতে চায়।সবার শেষ উপদেশ একটাই থাকে আমার প্রতি -কক্ষনো ভুলে যাইও না তোমার দাদা কে ছিলেন।
আমার দাদা মুক্তিযোদ্ধা লতিফুর ভুইয়া মারা গেছেন প্রায় ৫ বছর আগে। মাঝে মাঝে যখন ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখি পার্কে বসে থাকে তাদের দাদা দের সাথে তখন কেমন জানি একটা ছেলে মানুষি অহংকার হয়, আমার এমন কারো নাতি যার দাদার জন্যই আজকের দেশটার নাম আজ বাংলাদেশ,পতাকা টার রং লাল আর সবুজ।

সজল //ইরন

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ's picture

এখন সময় এসেছে আমাদের মাঝে লুকিয়ে থাকা সেই বাঘকে খুঁজে বের করে পূনর্জাগরিত করার।
আপনার দাদা সহ সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য শ্রদ্ধা।

____________________________

চরম উদাস's picture

কিছু বলার ভাষা নেই। এরকম গল্পগুলা কমেন্টে না দিয়ে আলাদা লেখা হিসেবে দেন। এই গল্পগুলা সবার জানা দরকার।

অতিথি লেখক's picture

মন খারাপ

আর কত মর্মস্পর্শী ঘটে যাওয়া সত্য গল্পগুলো বললে আমরা পাকিপ্রেমী হবো না? আর কত বেহয়া হয়ে লজ্জার গ্লানি টানবো? আমি জানি না, আমি আশার আলোও দেখি না, তবে এইটুকু বুঝি বাঙালির অন্ধ ধর্ম তত্ব যতদিন মাথায় চেপে থাকবে ততদিন এসবের থেকে মুক্তি নেই। মন খারাপ

মাসুদ সজীব

সূর্য্য ঠাকুর's picture

গুরু গুরু

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.