তৃতীয়বার ফোন করার সময় মেজ আপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে হুমকির সুরে বললেন, আপনি যদি আধ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমি ডিআইজি সদরুল আনামকে ফোন করতে বাধ্য হবো। তিনি আমার মামাতো ভাই।
আগের দুইবার ফোন করে কাজ না হওয়াতে মেজ আপা তৃতীয়বারে ডিআইজি সদরুল আনামকে আমদানী করলেন।
রাত তখন সাড়ে বারোটা। গত দুই রাতের মতো আজকেও সামনের মাঠে হুজুরের কানে তালা লাগানো ওয়াজ তারস্বরে পাড়া মাতিয়ে যাচ্ছিল। শীতকালে প্রতিদিন এই উৎপাত- যেখানে দর্শকের চেয়ে মাইকের সংখ্যা বেশি থাকে। ওয়াজ শুরু হয় রাত এগারোটায়, শেষ হবার কোন সময়সীমা নাই। আপার মারাত্মক ঘুমের সমস্যা, ওষুধ খেয়েও কাজ হয় না মাঝে মাঝে। তার ওপর মধ্যরাতের এই অত্যাচার।
সেদিন যখন হুজুর ওয়াজের মধ্যে রসিয়ে রসিয়ে মানবজন্মের সকল প্রক্রিয়া হাতে কলমে শিখিয়ে দেবার চেষ্টা শুরু করলেন, তখন আপা আর সহ্য করতে পারলেন না। ক্ষেপে গিয়ে থানায় ফোন করলেন। পর পর দুইবার ফোন করেও কাজ না হওয়াতে তৃতীয় অস্ত্রের প্রয়োগ।
পনের মিনিট না যেতেই ওয়াজের মাঠে একটা গোলমালের শব্দ শোনা গেল। সম্ভবত তৃতীয় অস্ত্র লক্ষ্যভেদ করেছে। মাইকের শব্দ আচমকা থেমে গেল। শুধু চিৎকার চেঁচামেচি হুড়াহুড়ির শব্দ। কয়েক মিনিট পরেই আপার ফোন বেজে উঠলো।
ওসি সাহেব।
-ম্যাডাম, ফোর্স পাঠিয়ে দিয়েছি। আসর ভেঙ্গে দিয়েছে। এত রাতে ডিআইজি স্যারকে ফোন করে বিরক্ত করার দরকার নেই।।
মেজ আপা হাসি চেপে ওসি সাহেবকে ধন্যবাদ দিলেন অকুন্ঠ চিত্তে। কিন্তু যেটা বলতে পারলেন না সেটা হলো ডিআইজি সদরুল আনাম তাঁর মামাতো ভাই না। তবে নিঃসন্দেহে তিনি নিশ্চয়ই কারো না কারো মামাতো ভাই।
ঘটনা সেখানেই শেষ হবার কথা থাকলেও আরেকটু বাকী ছিল।
খানিক পরেই কলিং বেল বেজে উঠলো। দরোজা খুলতেই দেখলো দুটো বিরিয়ানীর প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির দারোয়ান কুদ্দুস।
-আফা, ওয়াজে নাকি গণ্ডগোল লাগছিল, সব ভণ্ডুল হয়ে গেছে। তারা আফনার তবারুকটা পাঠায় দিছে।
আপা কিংকর্তব্যবিমুঢ়। আয়োজকরা কী টের পেয়ে গেছে পুলিশ ডেকে আনার পেছনে তাঁর হাত ছিল? তবারুক নেবেন নাকি ফিরিয়ে দেবেন সেটা ভাবতে ভাবতে আপা শীতকালেও ঘেমে উঠলেন।
Comments
মোচড়টা জবরদস্ত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আপার কাছ থেকে যা শুনেছি সেটার আংশিক লিখতে পেরেছি মাত্র। পুরোটা শুনে আমি হাসতে হাসতে খুন হয়ে গেছিলাম।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার জানা মতে এক কালে এই কৌশলে কাজ হলেও এখন তেমন আর হয় না। এখন কে কোন উপদলের মানুষ, এবং কোন উপদল ঐ এলাকায় প্রভাবশালী সেসব প্রশ্নের উত্তর গুরুত্বপূর্ণ। উপদ্রবকারী উপদল দুর্বল হলে কারো ফোন লাগে না, তাদের বিরুদ্ধে suo moto অ্যাকশন হয়ে যায়। সেসব যাই হোক, গল্পে যে সমস্যাটির কথা বলা হয়েছে সেটির ভুক্তভোগীরা কেবল জানেন তা কতটুকু অসহনীয়। এই গল্পে সেটি অল্প কথায় ঠিকঠাকভাবে ডকুমেন্টেড হয়ে থাকলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কথা সত্য। সবার ক্ষেত্রে এই কৌশল কাজে দেবে না। আমার এলাকায়ও এই যন্ত্রণা আছে। আমি পারি নাই। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত জাদরেল সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে আপার কিছু বিশেষ কোয়ালিটি আছে। সেই কারণেই তিনি সফল হইছেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
দারুণ লিখেছেন। একসময় এই অত্যাচারে অসুস্থবোধ করতাম। কাউকে ফোন করতে পারিনি, কেউ ছিলো না। যাদেরকে ফোন করবো তারাও আয়োজকদের মঞ্চে গিয়ে আত্মপ্রচারে যোগ দিতো। লেখা বরাবরের মতো জবরদস্ত। নিয়মিত লিখুন। সচলকে সচল করা কমিটি গঠন করা ইচ্ছে আছে। বহুদিন পর এসে দেখি সব ঝিমায়ে আছে। আপনাদের পেয়ে ভালো লাগলো।
Post new comment