আনোয়ারা সৈয়দ হকের 'নরক ও ফুলের কাহিনী'

আয়নামতি's picture
Submitted by aaynamoti [Guest] on Mon, 27/08/2018 - 10:11am
Categories:

সবার শৈশবের ইনিংসটা দুধেভাতের সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয় না। আমরা অনেকেই দূরে চলে যাওয়া শৈশবকে আহ্লাদে ভেসে গিয়ে কাছে ডাকতে চাই। অনেকেই হয়ত তাদের শৈশবের বুকে বেশ করে ইরেজার ঘষে লোপাট করে দেয়া যেতো যদি, এমন আক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘশ্বাস চাপেন। আমাদের ভাবনায় যে শৈশব আছে মলিনতাহীন, নিটোল এক সুন্দরের সরোবর হয়ে; অনেকের কাছে সেটা কেবলি সীমাহীন দুঃখের। সৌভাগ্যবশত আমরা যারা দারুণ শৈশবকে মুঠোবন্দী করতে সক্ষম হয়েছি, তারা ফেলে আসা চিররঙিন দিনগুলোর প্রতি সবটুকু ভালোবাসা মেখে বলতে চাই 'ভালো থেকো মেলা, লাল ছেলেবেলা, ভালো থেকো।' অন্যদিকে কষ্টময় শৈশবের মানুষটি তখন বয়ান করেন তার তিক্ত জন্ম ইতিহাস, 'একহাতে ফুলের গন্ধ, আরেক হাতে নরকের দুর্গন্ধ মেখে আমার জন্ম।'

এমন শৈশবের অধিকারী'র শৈশব নামের ক্যালাইডোস্কোপে চোখ রেখে আমরা মুগ্ধ হতে পারিনা, বরং সে অভিজ্ঞতায় মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। বুকের ভেতর অচেনা একটা কিছু গড়িয়ে যায় এমন শৈশবের গল্প শুনে "জন্মের আগে যদি আমার কোন বক্তব্য থাকত তাহলে ঈশ্বরের কাছে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করতাম যেন এরকম একটি সংসারে, এরকম একটি সময়ে এবং এরকম একটি যুগে তিনি আমার জন্ম না দেন। কিন্তু আমার সেসুযোগ ছিল না। পৃথিবীর এমন একটি অবহেলিত জনপদে, এরকম একটি সংকট সময়ে, এরকম একটি বিশৃঙ্খল সংসারে পাঠাবার আগে ঈশ্বর আমাকে কোন লাল বিপদ সংকেত দেননি।"

পৃথিবী জুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তাণ্ডব, দুর্ভিক্ষ, উপমহাদেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন, স্বার্থপর নেতাদের মতলব হাসিলের রক্তান্ত পথ ধরে ভারতের বিভক্তি, হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা, নিজভূমে পরবাসী হয়ে যাওয়া স্বজনের অচেনা আরচণের বৈরি একটা সময়ের দোরগোড়ায় 'নরক ও ফুলের কাহিনী' নামের আত্মজীবনীর পাঠ শুরু। বাইরের পৃথিবীর সাথে পাল্লা দিয়েই যেন বিপর্যস্ত পরিবারের বিশৃঙ্খল আর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খেতে থাকা এক পরস্হিতিতে পাঠকের সাথে আনোয়ারা সৈয়দ হকের বিষন্ন শৈশবের সাক্ষাত ঘটে। স্বভাবতই সে শৈশব ভূলুণ্ঠিত, খানিকটা অবাঞ্ছিত। এরকম এক তালগোল পাকানো পরিবেশগত কাঠামোতে বেড়ে ওঠা শিশু মানস কতটা বিক্ষিপ্ত আর বিক্ষুদ্ধ হতে পারে তার নজির এ বইয়ের পাতায় পাতায় সেঁটে আছে।

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের সময় বিহারের শাশারামপুর থেকে পালিয়ে যশোর জেলার কোতোয়ালি থানার চুড়িপট্টি গ্রামে মোহাজের হয়ে আসেন আনোয়ারা হকের পূর্বপুরুষেরা। চুড়িপট্টি নামকরণের কারণ হলো সেখানে চুড়ির কারখানা বা ভাটি ছিল। তাঁর পূর্বপুরুষের কেউ কেউ এ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। এঁদের চুড়িওয়ালা বলে সম্বোধন করতো অনেকে। এই চুড়িওয়ালাদের ছেলেমেয়েরা হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই লেখাপড়া করতো না। স্হানীয় স্কুলে সেখানকার ছেলে মেয়েরা যেত ঠিকই, কিন্তু মেয়েদের ঋতুবতী হওয়ার আগেই বিয়ের পীড়িতে বসতে হতো আর ছেলেগুলোর অধিকাংশই স্কুলের শেষ পরীক্ষার আগে পারিবারিক ব্যবসায় নিযুক্ত হতো।

আনোয়ারার বাবা পূর্বপুরুষের দেখানো পথে হাঁটেননি মোটেও। শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, বৈবাহিক দিক থেকেও তিনি পরিবারে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত রাখেন। প্রথম বিয়ের স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ললিতমোহন মুখোপাধ্যায়ের কন্যা প্রতিভা মুখোপাধ্যায়ের সাথে পরিণয় সূত্রে বাঁধা পড়েন মুসলিম পরিবারের ছেলে রফিউদ্দিন চৌধুরী(ঘেনুয়া )। বিয়ের পর প্রতিভার নতুন নামকরণ হয় আসিয়া খাতুন চৌধুরী। বলাই বাহুল্য এই বিয়ে রফিউদ্দিনের জাদরেল জননী মেনে নেননি। এ কারণে যতদিন মঞ্জু অর্থাৎ আনোয়ারার দাদী বেঁচে ছিলেন ততদিন তার সম্পত্তির কোনো কিছুই তাদের বাড়ির জন্য বরাদ্দ ছিল না। আনোয়ারাদের প্রতি দাদীজানের বিতৃষ্ণা এতটাই প্রবল ছিল যে, ভাগের ফলফলাদি আত্মীয়স্বজন-পাড়াপড়শিদের বাড়ি বাড়ি গেলেও মঞ্জুদের ঘরে যায় না। ছোট্ট মঞ্জু সেখানে উপস্হিত থেকে এসব প্রত্যক্ষ করলেও, দাদীর পাথর হৃদয় সেটা গ্রাহ্যই করেনি। এরকম একবার কাঁঠালের ভাগ না পাওয়ার অপমান চুপচাপ সয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের কাছ থেকে কাঁঠাল সংক্রান্ত খোঁটায় ছোট্ট মঞ্জু যখন লুকিয়ে চোখের জল ফেলে, পাঠক হৃদয় শিশু মঞ্জুর সে কষ্টে আর্দ্র হয়ে ওঠে।

স্বাস্হ্যকর একটা পরিবেশে শিশুর বেড়ে ওঠা যতটা নিরাপদ আর আনন্দময়, তার বিপরীত অবস্হায় শিশু ততটাই নিরাপত্তাহীনতায় আর নিরানন্দে বেড়ে ওঠবে এটাই স্বাভাবিক। আনোয়ারা যে পরিবেশে বড় হয়েছেন তা ছিল চূড়ান্তভাবে অস্বাস্হ্যকর। শিশু অবস্হাতেই তাঁর মগজে পরিবার-পরিবেশ কর্তৃক এই চরম সত্য গেঁথে দেয়া হয় তিনি মেয়ে, একটা ছেলের যতটা মূল্যায়ন, একজন মেয়ের ঠিক ততটাই অবমূল্যায়ন তার সমাজ-সংসারের জন্য জায়েজ। আশৈশব মঞ্জুর বাবা তাদের মায়ের প্রতি সম্মানহানির যে দৃষ্টান্ত রাখেন তা সন্তানদের মধ্যেও কমবেশি, বিশেষ করে মঞ্জুর মধ্যে প্রবাহিত হতে দেখি এই স্মৃতিকথনে। আগের দিনের মানুষজন চারিত্রিক ক্ষেত্রে সোনার মানুষ ছিল, এমন গালভরা মিথের মুখে সপাটে চড়া কষিয়ে দেয় মঞ্জুর বর্ণমালা পরিচয়ের গৃহশিক্ষক। মাত্র চার বছর বয়সেই সেই পাষণ্ড কর্তৃক মঞ্জুকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। খুব অল্প বয়সেই তার জানা হয়ে যায় 'আপণা মাংসেঁ হরিণা বৈরী।'

মানুষের প্রতি মানুষের আচরণের ভিত্তি যখন ধর্মের বাটখারায় মাপা হয় তখন পারস্পরিক সৌর্হাদ্য সম্মান দেখানোতে যথেষ্ট মেকিত্ব ভর করে। ভদ্রতা বা সামাজিকতার খাতিরে উপরে উপরে সৌজন্যের ভণিতা চলে কেবল। সাতচল্লিশের ভারত ভাগের রাজনৈতিক নাটক এই সত্যিকে বড় বেশি প্রকট করে তোলে। মঞ্জুর জন্মস্হান, চুড়িপট্টিকেও মুখোমুখি হতে হয় সে সত্যের। প্রতিবেশি মুসলমান মানেই তখন হিন্দুর জীবন নাশকারী। এমন বাস্তবতার মুখে আশৈশবের পরিচিত জনেরা রাতারাতি নাড়ীর বাঁধন ছিঁড়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে ভারতে পাড়ি জমান। ভারত থেকেও বানের জলের মত আসতে থাকে মানুষ। ছড়িয়ে পড়া ধর্মের বিষ ছোট্ট মঞ্জুকেও নিস্তার দেয়না যেন; প্রিয় বন্ধু বেলি'র পেট কাটবে বলে কোমরে ছোট্ট দা নিয়ে বন্ধুর বাড়ির সামনে ঘুর ঘুর করে! এমন বিষের যন্ত্রণা নিয়ে মঞ্জুর কত বন্ধু হারিয়ে যায়। এই হারিয়ে ফেলবার যাতনা বইয়ের শব্দ ফুঁড়ে পাঠক মনে ঘা মেরে যায়। বিষাক্ত এই পরিস্হিতি সৃষ্টিতে হিন্দু-মুসলিম রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থবাদী মনোভাবের প্রতি আনোয়ারা তাঁর ক্ষোভ ঢেলে দিতে দ্বিধা করেন না, 'পাখির গা থেকে যেমন পালক খসে পড়ে, বড় হবার পর এদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধও খসে খসে পড়েছে।'

একটা আত্মজীবনীতে অকপটে নিজের দোষত্রুটি তুলে আনার সততা দেখানো কঠিন বৈকি। নিজের শৈশবের নানান দোষ ত্রুটিগুলো তুলে আনবার জন্যে আনোয়ারা সৈয়দ হক সাধুবাদ পাওয়ার দাবী রাখেন। 'নরক ও ফুলের কাহিনী'কে পরিপূর্ণ আত্মজীবনী বলা চলে কিনা সেটি একটি প্রশ্ন হতে পারে। মেডিক্যালে পড়তে ঢাকায় যাচ্ছেন, এ পর্যন্ত এসেই কাহিনির সমাপ্তি ঘটে। তাঁর বর্ণনায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের কিছু খুচরো আলাপে(ঘুগনি বিক্রেতা প্রসঙ্গ সহ আরো কিছু জায়গায় খুব সামান্য মুক্তিযুদ্ধের কথা এসেছে) বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনি আসবার যে সম্ভাবনা পাঠক মনে উঁকি দিয়েছিল, সেটি পূরণ না হওয়ার একটা আফসোস থেকে যায়। তাছাড়া তার প্রথম উন্মুখ ভালোবাসার ঘটনা ঠিক কী কারণে ম্লান হয়ে গেলো সেটির ব্যাপারেও পাঠকের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা তৈরি হয়। যদিও একপর্যায়ে তিনি জানাচ্ছেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে তাঁর প্রথম ভালোবাসা অর্থাৎ মুকুল যেন বাধা না হয় সেজন্য তাকে দূরে সরিয়েছেন, তারপরও শেষ হইয়াও হইল না শেষের একটা রেশ থেকে যায় এই ঘটনার পেছনে।

বইটি পড়তে পড়তে মিহির সেনগুপ্ত রচিত 'বিষাদ বৃক্ষ' এর কিছু কিছু ব্যাপারে কেমন একটা সাজুস্য খুঁজে পাই। কাহিনি বর্ণনায় সময়ের ধারাবাহিকতা ভেঙেছে 'বিষাদ বৃক্ষের' নিয়মই। পরের ঘটনা আগে, আগের ঘটনা পরে বর্ণনার খানিক ঝোঁক দেখা গেছে এখানেও, অবশ্য সেটি নিয়ে মিহির সেনগুপ্তের জবাবদিহি থাকলেও, আনোয়ারা সৈয়দ সে পথে হাঁটেননি। 'বিষাদ বৃক্ষ' এ পরিচিত স্বজনের বসতভিটে ছেড়ে চলে যাবার হাহাকার বাজতে শুনেছিলাম। জেনেছিলাম রাজনীতির নামে কিছু মানুষ কতটা স্বার্থপর হয়ে ওঠে। পাঠক হৃদয় কেঁদে ওঠেছিল মিহির সেনগুপ্তের জন্মভূমি ছেড়ে যাবার আহাজারিতে। অবশ্য 'নরক ও ফুলের কাহিনী'তে আনোয়ারার পরিবার ত্যাগের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন।

চুড়িপট্টির বদ্ধ সমাজ, অশিক্ষায় ভরা পরিচিত পরিবেশ, সবার জন্য অবারিত দ্বার বাড়িটিতে কখন কে নারীত্বের অপমান ঘটায় সে আশংঙ্কা ইত্যাদিকে পেছনে ফেলে চলে যাবার সময় পাঠক আনোয়ারা কে সঙ্গত কারণেই বিষন্ন হতে দেখেন না, বরং স্বাধীনতার আনন্দ, নারীত্বের বিকাশ ঘটবার তুমুল সম্ভাবনার প্রতিধ্বনি শোনেন 'আমি ঢাকা যাচ্ছি। শূন্য থেকে যাচ্ছি একশো'র দিকে। আমি মেয়ে মানুষ না, মানুষ হতে যাচ্ছি।' মায়ের ট্রাঙ্ক গোছানোর ফাঁকে দর্জির দিয়ে যাওয়া হাফ প্যান্টের রহস্য খুলে বলতেই চুপসে গেলো তার যাবতীয় উদ্দীপনা..বাস্তবতা মুখ নেড়ে জানিয়ে দিল তুমি আগে মেয়ে, তারপর হয়ত বা মানুষ! আশার কথা, আনোয়ারা সৈয়দ হক বাস্তবতার সাথে লড়াই করে নিজেকে প্রমাণ করেন যথাযোগ্য মর্যাদায়। চুড়িপট্টি থেকে উঠে আসা এই মানুষটি সমাজে একজন প্রতিষ্ঠিত, স্বনাম খ্যাত চিকিৎসক-সাহিত্যিক। এই সাফল্যের পেছনে তাঁর মেঘভর্তি মাথার অশিক্ষিত, বদরাগী, গোঁয়ার বাবা এবং শিক্ষাবঞ্চিত মায়ের মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যে দিয়ে নিজের স্বপ্নপূরণে যথেষ্ট কঠোর এবং ব্যাকুল অবদান অনেকের জন্যেই একটা দৃষ্টান্ত বটে। আনোয়ারা সৈয়দ হকের গুটি কয়েক ছোটগল্প, ছোটদের বই পড়েছি, যেগুলো সেভাবে মনে দাগ রেখে যায়নি। 'এখন তুমি বড় হচ্ছো' সুলেখিত ও গুরুত্বপূর্ণ বইটির পর আমার ধারণা 'নরক ও ফুলের কাহিনী' তাঁর আরেকটি সুলিখিত এবং পাঠক সমাদৃত হবার মতো বই।


Comments

ummehasina's picture

বইটি পড়ার আশা রাখি। তবে 'বিষাদ বৃক্ষ' পাঠ পরবর্তী বিষন্নতা থেকে বের হতে পারিনি এখনো।

আয়নামতি's picture

আপনার আশার প্রাপ্তি ঘটুক দ্রুত। কিছু বিষাদ না হয় থাকলো বুকে জমা ...কিছুটা উড়ে যাক পাখি হয়ে। অনেক ধন্যবাদ উম্মেহাসিনা।

ummehasina's picture

অন্য প্রসঙ্গ আলোচনা- বিষাদ বৃক্ষ তে একই বিষয়ে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে এবং অনেক প্রশ্ন পাঠকের মনে এসেছে যেগুলো বইতে যথাযথভাবে উত্তর দেয়া হয় নি, ঘটনার ক্রম ঠিকমত থাকেনি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিন্তু বিষাদের যে ছায়া লেখক বিস্তার করেছেন সেটা আমাতে সংক্রমিত হয়েছিল। আমি সেই বিষাদের কথা কথা বলেছি। 'জীবন রহস্য ' পড়ার পড় লেখকের ভাইয়ের আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে মন খারাপ লেগেছিল। সম্ভবত এটা পাঠক হিসেবে আমার দূর্বলতা তবে লেখক যে আমাকে তার লেখনী দিয়ে ছুঁয়ে গেছেন সেটাই দিন শেষে মনে পড়ে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আত্মকথনের আলোচনায় লোকজন সাধারণত এমনটা দাবি করেন যে, এটা শুধু ব্যক্তির গল্প নয় বরং ঐ সময়কালের গল্প। এমন দাবি শুনে বই পড়তে গিয়ে প্রায়ই প্রতারিত হয়েছি। দেখেছি সেখানে সময়ের গল্পের নামে অতি অল্প কিছু ক্লিশে বিষয় ও বর্ণনা যোগ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও এমন বানোয়াট জিনিসও ঢোকানো হয় যে সেগুলোর অন্তঃসারশূন্যতা প্রকটভাবে চোখে পড়ে। এই পোস্টে উল্লেখিত মিহির সেনগুপ্তের 'বিষাদবৃক্ষ' পড়তে গিয়ে পুনরাবৃত্তিতে যেমন বিরক্ত হয়েছি তেমন ক্রমাগত ফেনানোর প্রবণতাতেও ধৈর্য হারিয়েছি। এছাড়া পাঁচশতাধিক পৃষ্ঠার বইয়ে কালানুক্রম রক্ষিত না হলে পাঠক আর খেই রাখতে পারেন না। সাহিত্যিক হিসাবে মিহির সেনগুপ্তের সক্ষমতায় আমার সন্দেহ নেই, কিন্তু 'বিষাদবৃক্ষ'কে তাঁর সাহিত্যকীর্তির পরিচায়ক বলে মনে হয়নি। চুণ খেয়ে মুখপোড়া আমি 'নরক ও ফুলের কাহিনী'তে আনোয়ারা সৈয়দ হক কী করেছেন সেটা এই পোস্ট পড়ে খুব ভরসা করতে পারলাম না। সীমাবদ্ধতাটা আমারই।

মুকুল যেন বাঁধা না হয় > মুকুল যেন বাধা না হয়
সুলেখিত > সুলিখিত


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আয়নামতি's picture

ঠিকই বলেছেন পাণ্ডবদা। দৈ খাবার আশা নিয়ে যখন চুণ খেয়ে মুখপোড়াতে হয়, তখন হতাশা জাগারই কথা। সেরকম অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে স্মৃতিকথা ধাঁচের বই পড়বার ব্যাপারে ভয় ধরায় বৈকি। পোস্ট পাঠপূর্বক বানান ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য অান্তরিক কৃতজ্ঞতা জানুন।

মন মাঝি's picture

বার্ট্রান্ড রাসেলের আত্নজীবনীটা পড়ে দেখতে পারেন "সময়কালের গল্প" সংজ্ঞার আলোকে।

****************************************

অতিথি লেখক's picture

বই আলোচনা ভালো লাগলো, আনোয়ারা সৈয়দ হক এর "ছানা ও মুক্তিযুদ্ধ" আমার অসম্ভব প্রিয় ছোটোদের বই, যেকোন, ৮-১২/১৩ বছর বয়সি ছোটো মানুষদের আমি এই বইটা সাজেস্ট করবো।

আয়নামতি's picture

সত্যি বলতে কি বইটা সেভাবে মনে দাগ বসাতে পারেনি। যে একাত্তর রাতারাতি হাজার শিশুর শৈশব কেড়ে নিলো, হত্যা, ধর্ষণ, মৃতদেহের বিভৎসতা র মতো বিষয়গুলোর মুখোমুখি দাঁড় করালো, সেই একাত্তরের গল্প আগামির ছানাপোনাদের শোনাবার জন্য আনোয়ারা হক যেরকম রাখঢাক করেছেন বইটা জুড়ে..কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বপ্ন দৃশ্যের বর্ণনা পড়ছি এমন বানোয়াট পরিস্হিতি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে আমার। যা পড়ে রাগই হয়েছে। পাঠক হিসেবে নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকারপূর্বক এই পোস্ট পাঠের জন্য নামহীন অতিথি আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সোহেল ইমাম's picture

বইটা পড়া হয়নি। পড়তে আগ্রহ হচ্ছে। বই নিয়ে আলোচনা হলেও আয়নামতি আপনার লেখার ধরণটা বেশ লাগে। এর আগেও মুগ্ধ হয়েছি।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আয়নামতি's picture

বইটা হাতের নাগালে পেলে পড়ে দেখতে পারেন। আপনার প্রশংসায় আহ্লাদিত হলেম ভ্রাত। পোস্ট পড়বার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

এক লহমা's picture

রিভিউ ভাল লেগেছে। লেখালেখি চলতে থাকতে দেখে খুব ভালো লাগছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি's picture

তোমার আন্তরিক উৎসাহ আমাকে ব্যাপক অনুপ্রেরণা দেয় দাদাই! আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ভালোবাসা জানিও।

নীড় সন্ধানী's picture

বইটি পড়ার সুযোগ হয়েছিল বেশ কিছুকাল আগে। লেখিকার শৈশব যে এতটা দুর্বিসহ ছিল বইটা পড়ার আগে বিন্দুমাত্র জানা ছিল না। ওই পর্যায় থেকে কেউ উঠে আসতে পারে এও বোধহয় একটি বিরল নজির। তবে এটি কিছুতে পরিপূর্ণ জীবনী নয় বরং বলা চলে জীবনের খণ্ডাংশ মাত্র। বই নিয়ে গতিশীল লেখালেখি চলুক আরো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আয়নামতি's picture

বাহ্! বইটা আপনার কমন পড়েছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত। পোস্ট পড়বার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

তাহসিন রেজা's picture

চমৎকার রিভিউ। বইটি পড়ার ইচ্ছে রইল।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

আয়নামতি's picture

পাইলে পড়ে দেখিস, ভালো লাগবে হয়ত। পোস্ট পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

অ:ট: লেখালেখি কি ছেড়েই দিলি? রেগে টং

নীলকমলিনী's picture

তোমার সব বই রিভিউই অসাধারণ। এটাও ব্যতিক্রম নয়। ভাল লাগলো খুব।

আয়নামতি's picture

বরাবরের মতোই আপনার মন্তব্যে উৎসাহ পেলাম নীলুদি। পোস্ট পাঠের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.