বাস কথন -০৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture
Submitted by Shashtha Pandava on Sun, 21/01/2018 - 12:29pm
Categories:

১৭.

ঢাকা মহানগরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বাসে যেতে গেলে আপনাকে জানতে হবে কোন্‌ কোন্‌ কোম্পানীর বাস সেই গন্তব্য দিয়ে যায়। এখানে রুট নাম্বার জেনে বিশেষ ফায়দা হবে না। এখানে বেশিরভাগ বাসের গায়ে কোন রুট নাম্বার লেখা থাকে না। কোথাও যাবার জন্য বাসের রুট নাম্বার জিজ্ঞেস করলে বাসের কর্মীদের কেউ কেউ হয়তো বলতে পারবেন তবে খুব কম বাসযাত্রী বা পথচারী এর সদুত্তর দিতে পারবেন। বিআরটিসি’র ওয়েবসাইটে শুরু ও শেষ গন্তব্য অনুযায়ী বাসের রুট নাম্বার জানতে পারবেন বটে তবে সেখানে রুটের বিস্তারিত না থাকায় বুঝতে পারবেন না সেই বাস কোন পথ দিয়ে কোন্‌ কোন্‌ গন্তব্য ছুঁয়ে যাবে। এই ব্যাপারে একটা ওয়েবসাইট দেখলাম — মন্দ না। এই প্রকার মোবাইল অ্যাপও হয়তো আছে, আমি খুঁজে দেখিনি। সাধারণ বাসের গায়ে যেসব গন্তব্যের কথা লেখা থাকে সেসব জায়গাতে ঐ বাস যাবে কিনা তার ঠিকঠিকানা নেই। এই কারণে বাসে ওঠার আগে পোড়খাওয়া যাত্রীরা জিজ্ঞেস করে নেন্‌ অমুক জায়গায় যাবে কিনা। এই জিজ্ঞেস করা যে সব সময়ে ফল দেয় তা নয়। মিরপুর ১২ অথবা ১০ হয়ে ১, ২ যাবার কথা যে বাসের সে বাস ১০ নাম্বার গোলচক্করের আগের ফলপট্টিতে দাঁড়িয়ে থাকে ‘আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা’র মতো। মোহাম্মদপুর বা গাবতলী যাবার কথা যে বাসের সে বাস ইন্দিরা রোডে তেজগাঁ কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শিকড় গজিয়ে যায়। মতিঝিলে যাবার কথা যে বাসের সে বাস বঙ্গভবনের কাছাকাছি আসতে ইউ-টার্ন নেয়া শুরু করে। প্রতিটি রুটে বাসযাত্রীদের জন্য এমন দুয়েকটা দু’দণ্ড শান্তি দেবার জায়গা আছে। তাছাড়া মৎস্যভবন, শাহ্‌বাগ, কাওরানবাজার, রোকেয়া সরণি, এলিফ্যান্ট রোড, জিগাতলা, মিরপুর টেকনিক্যাল, মহাখালী, কাকলী, কুড়িল, বাড্ডা, মালিবাগ, বায়তুল মোকাররম, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, নর্থ-সাউথ রোড, নিউ মার্কেটের মতো এমন অনেক পয়েন্ট আছে যেখানে জ্যামের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হতে পারে। এই কারণে যারা অভিজ্ঞ লোক তারা বাসে চড়লে দূর গন্তব্যের জন্য ভাড়া দিতে চান না, নিকটতম জ্যাম পয়েন্ট পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে জ্যামের প্রকৃতি বুঝে কখনো বাস থেকে নেমে পড়েন অথবা কখনো বাকি ভাড়াটুকু দিয়ে গ্যাঁট হয়ে বসে গল্প করেন, ভিডিও দেখেন, গান শোনেন, ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বিচরণ করেন, মোবাইলে পত্রিকা পড়েন, ফোনে কথা বলেন, তসবিহ্‌ জপেন, চুপচাপ বসে থাকেন অথবা ঘুমান।

১৮.

সবচে’ বিড়ম্বনার ব্যাপার হয় যখন দেখা যায় দূরত্ব হয়তো খুব বেশি নয় কিন্তু তার জন্য দু’বার বাস পাল্টাতে হবে। ঢাকায় চাইলেই কোন রুটে বাস নাও পাওয়া যেতে পারে, বাস থাকলেও সে বাস আপনাকে নাও নিতে পারে। এখানে বাসের রুটগুলো যাত্রীদের চাহিদার পরিমাণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এক কালে আসাদগেট থেকে আজিমপুর যাবার জন্য একটা বাস পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো; আর এখন মিনিটে চারটা বাস মেলে। আগের বাসসঙ্কট আর এখনকার বাসবাহুল্য দুটোই অপরিকল্পিত রুট পরিকল্পনার ফসল। ঢাকার অনেক এলাকা আছে যেখানে কোন বাস সার্ভিস নেই, আবার কোথাও তা আছে নাম-কা-ওয়াস্তে। এতে সেসব এলাকা টেম্পু-লেগুনা-হলার-ম্যাক্সি-টম্‌টমের রাজত্বে পরিণত হয়। আর ঐ রাস্তাগুলোর নিরাপত্তা আরও কয়েক ধাপ নিচে নেমে যায়। যাত্রী আর পথচারী – উভয় দলের ভোগান্তি চরমে ওঠে।

১৯.

ঢাকার বাস কোন গতিতে চলবে এটা প্রথমত নির্ধারিত হয় কোন্‌ কোম্পানী বা কোন্‌ রুটের বাস তার ওপর, দ্বিতীয়ত চালকের মেজাজ-মর্জির ওপর। চিড়িয়াখানা-বাবুবাজার রুটে চলা ‘দিশারী’ বা মিরপুর ১২-আরামবাগ রুটে চলা ‘বিকল্প অটো’ আর সদরঘাট-কুড়িল রুটে চলা ভাঙা মিনিবাস বা পীরজঙ্গী-গুলশান রুটে চলা ৬ নাম্বারের বড় বাসের গতি কখনোই এক হবে না। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা পেলে এখানে প্রথমোক্তরা চলবে পঙ্খীরাজের গতিতে, পরের দুজন চলবে বেতো ঘোড়ার গতিতে। চালকের যদি মনে হয় সামনের বাসগুলো তার সাথে বেয়াদবী করছে তাহলে তিনি এমন গতিতে চলবেন অথবা এমন একটা ঘষা খাওয়াবেন যে তাতে বাসের যাত্রীরা উচ্চস্বরে দোয়া ইউনূস পড়া শুরু করে দেবেন। স্কুল শিক্ষকরা যদি তাঁদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকার লোকাল বাসে একটা ট্রিপ দেন তাহলে তিনি বল ও গতিবিদ্যা সংক্রান্ত নিউটনের তিনটি সূত্র, গতি-জাড্যতা-দ্রুতি-বেগ-ভরবেগ-ত্বরণ-মন্দন-ভ্রামকের সংজ্ঞা বাস্তব উদাহরণসহ শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারবেন। যারা দরজার হাতল ধরে ঝুলতে বাধ্য হন তাদের কাছে সরল দোলকের সূত্র, স্থিতিস্থাপকতার সূত্র, মহাকর্ষ-অভিকর্ষ সংক্রান্ত নিউটনের সূত্র সব শেখা হয়ে যাবে। আর পাবলিক টয়লেট বিরল এই শহরে যদি প্রকৃতির চাপ নিয়ে ভীড়-বাসের সুগভীরে, জ্যামক্লিষ্ট রাস্তায় যেতে হয় তাহলে বয়েল-চার্লস-গে লুসাক-আভোগাদ্রো’র গ্যাস সংক্রান্ত সূত্রাবলী অথবা আর্কিমিদিস-প্যাসকেলের প্রবহী সংক্রান্ত সূত্রাবলী, বার্নৌলী’র সমীকরণসহ চাপ-তাপ-আয়তন-প্রবহীসংক্রান্ত সকল সূত্র-সমীকরণ শেখা হয়ে যাবে।

২০.

বাস চলতে গেলে বাসচলার উপযুক্ত রাস্তা থাকতে হবে। ঢাকার মতো প্রায় দুই কোটি লোকের শহরে রাস্তার পরিমাণ থাকা উচিত নূন্যতম ২৫%, সেখানে বাস্তবে তা আছে ৭%-এরও কম; সুতরাং ঢাকার রাস্তায় জ্যাম থাকাটা ঢাকাবাসীদের নির্বন্ধ। যে ৭% রাস্তা আছে সেগুলোর প্রস্থ সব জায়গায় এক নয়। ক্ষমতাবানদের এই শহরে ক্ষমতাবানেরা নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে প্রায়ই নিজের (বা দখল করা) জমির পাশের রাস্তা থেকে দুয়েক মিটার রাস্তা নিজের কুক্ষিতে নিয়ে নেন। সেই বিষমপ্রস্থের রাস্তা আবার খুব অল্প জায়গাতে সহজ-সরল, বাকি জায়গায় সে অক্সবো’র মতো এঁকেবেকে গেছে। এই শহরের রাস্তাগুলোর মানচিত্র থেকে এই মহানগরের একটা অংশ মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে আঁচ করা যায়, যারা চারপাশের জলাভূমি, বনভূমি, প্রাচীন স্থাপনা, নিঃশ্বাস নেবার জায়গাকে উদরাসাৎ করে। এমন বিচিত্র জ্যামিতির পথে বাড়তি যোগ হয় তার মসৃণতার অভাব। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, আইল্যান্ড-ফুটপাথ ভাঙচুর, ওভারব্রীজ-ওভারপাস-আন্ডারপাস-ফ্লাইওভার-মেট্রোরেল বানানো, ময়লা ফেলা ইত্যাদি কারণে রাস্তার মসৃণতা এমন পর্যায়ের হয় যে, প্রয়াত নেইল আর্মস্ট্রংকে চোখ বেঁধে এই মহানগরের বাসে ভ্রমণ করালে তাঁর মনে চন্দ্রপৃষ্ঠে ভ্রমণের স্মৃতি জাগরুক হবে। এমনতরো রাস্তায় নিয়মিতভাবে দুর্ঘটনা ঘটাটাই স্বাভাবিক। এক বিদেশী সহকর্মী বলেছিলেন, “ঢাকায় নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য ভালো ব্রেক, ভালো চোখ, ভালো কানের সাথে ভালো ভাগ্যও থাকতে হবে”। ঢাকার বাসযাত্রীদের পরম সৌভাগ্য যে তারা অধিকাংশ দিন অক্ষত অবস্থায় ঘরে ফিরতে পারেন।

২১.

বাস চালানো একটা কঠিন কাজ। এর জন্য শারিরীক, মানসিক যোগ্যতার বাইরে প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। ঢাকায় বাস চালানো আরও বেশি কঠিন। বিআরটিসি’র বেশ কয়েকটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে যেখানে স্বল্পমূল্যে বেসিক ড্রাইভিং, আপগ্রেডেশন, এবং ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় বাস চালানোর জন্য চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অমন কোন প্রশিক্ষণ থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে মোটামুটি একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে প্রশিক্ষণ ছাড়াই একজন চালকের আসনে বসে পড়েন। গরু-ছাগল চিনলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবার কথা আমরা জানি, সুতরাং প্রশিক্ষণ ছাড়া শুধু লাইসেন্স সম্বল করে ঢাকা মহানগরীর রাস্তায় বাস চালাতে দিলে যা হবার, তাই হচ্ছে। তাছাড়া ঢাকার বাস চালকগণ জানেন দুয়েকটা রিক্‌শা-ভ্যান পিষে ফেললে, একজন পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেললে, সাইকেল-মোটরসাইকেল চালককে একটু ‘শিক্ষা’ দিলে, ক্ষমতাবান নয় এমন কারো ‘পেলাসটিক’কে দুমড়ে দিলে, এমনকি আরেকটা বাসের পেট বরাবর ধাক্কা দিয়ে কয়েকজন যাত্রীকে পরপারে পাঠিয়ে দিলেও তার কিছু হবে না। ‘৩০২ ধারা’র মতো ব্যাপার-স্যাপার তাদের মতো ‘ইনডেমনিটি’প্রাপ্তদের জন্য নয়। আইনের রক্ষকরা এই ব্যাপারে কিছু করতে গেলে সারা দেশের বাস চালকগণ স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে অবুঝ লোকদেরকে আসল সত্যটা হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দেবেন।

(প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটা পর্যবেক্ষণের কথা বলি। ঢাকা মহানগরীর রাস্তায় চলাচলকারী বিভিন্ন প্রকারের গণপরিবহনগুলোর চালকদের মধ্যে সবচে’ ভয়ঙ্কর হচ্ছেন টেম্পু-লেগুনা-হলার-ম্যাক্সি-টম্‌টমের চালকগণ। এনাদের প্রশিক্ষণ দূরে থাক লাইসেন্সও আছে কিনা সন্দেহ। এদের বড় অংশ দিনের বেলা যে গাড়ির (টেম্পু ইত্যাদি) কন্ডাকটর-কাম-হেলপার থাকেন রাত দশটার পর সেই গাড়ি চালিয়ে হাত মক্‌শো করে মাসখানেকের মধ্যে চালক বনে যান। এই যানগুলোর কোনটাকে আসতে দেখলে আমি সভয়ে ফুটপাথের উপরে উঠে যাই।)

২২.

ধরুন, সকাল ছয়টা। রাস্তা ফাঁকা, ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা কম, পথচারীর সংখ্যাও কম। দেখবেন বাস চালক বাসটাকে চার রাস্তার মাঝখানে এনে এমনভাবে দাঁড় করাবেন যে, ডান বা বাম দিক থেকে আসা (৯০ ডিগ্রি বরাবর) কোন গাড়ি পার হতে পারবে না। অথচ তার উচিত ছিল মোড়টা পার হয়ে বাস থামানো। একই দৃশ্য দেখতে পাবেন কখনো ট্রাফিক পুলিশ অনুপস্থিত থাকলে। চালক যখন বাস স্টপে বাস থামান তখন তিনি এমনভাবে বাসটিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন যেন তার পেছনের কোন বাস যেন তাকে অতিক্রম করতে না পারে। একই দৃশ্য দেখা যায় ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে। ‘বাঙালীর নরকে প্রহরী লাগে না’ – গল্পে কেউই কাউকে পার হয়ে যেতে না দেবার বাস্তব চিত্র। এতে বাসে বাসে ধাক্কা দেয়া, ঘষা দেয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে। ধাক্কা দেয়া, ঘষা দেয়ার ঘটনা বেশি ঘটে একই রুটের বাসগুলোর মধ্যে যখন তারা গন্তব্যের কাছাকাছি বা দুদণ্ড শান্তির জায়গার কাছাকাছি আসে এবং তাদের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। অমন প্রতিযোগিতায় বাসযাত্রী, পথচারী, রাস্তায় চলা অন্যান্য যান সবার দফা-রফা হয়ে যায়। ফার্মগেটের এক জায়গায় ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ একটা সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন — “এখানে বাস থামানোর কথা চিন্তাও করবেন না”। বাস চালকগণ বোধহয় চিন্তাভাবনা করার কোন অবকাশ পান না, তাই তারা সেখানে অবধারিতভাবে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করতেন। পৃথিবীর একমাত্র ট্রাফিক সিগন্যালসমৃদ্ধ ফ্লাইওভারটির যে অংশটি সাতরাস্তা থেকে রমনা থানা পর্যন্ত গেছে সেখানে রমনা থানার সামনেই সাইনবোর্ড লাগানো — “এখানে বাস দাঁড়ালেই দণ্ড”। ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত কয়টি বাসকে বা তার চালককে দণ্ড দিয়েছে জানি না, তবে ঐ রুটে চলাচলকারী প্রায় সব বাস ঠিক ঐ জায়গাটিতে থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করে। ফ্লাইওভারের উৎরাই থেকে বিপুল ভরবেগ নিয়ে নামা বাসকে মুহূর্তে ব্রেক চেপে থামানো অত্যন্ত বিপদজনক কাজ, এতে পেছনের গাড়িগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের একটা সিরিজ হবার সম্ভাবনা তৈরী হয় — সাইনবোর্ডটা ঐ কারণে দেয়া। কিন্তু সাইনবোর্ডটাতে তো গরু-ছাগলের ছবি দেয়া নেই তাই বোধকরি বাস চালকগণ তাতে কী লেখা আছে সেটা ধর্তব্য মনে করেন না।

(দেশের বাইরের এক শহরে দেখেছিলাম এমনধারা চৌরাস্তাতে নানামুখী ক্যামেরা লাগানো। নিষিদ্ধ জায়গায় গাড়ি দাঁড় করানো, সিগন্যাল না মানা, গতিসীমা অতিক্রম করা, উলটোপথে যাওয়া, নিষিদ্ধ বাঁক নেয়া – এমনসব অপরাধের কোনটা কোন গাড়ি করলে সাথে সাথে মোড়ে লাগানো বিশাল ইলেকট্রনিক বোর্ডে ঐ গাড়ির নাম্বার উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ গাড়ির নামে একটা জরিমানাসহ মামলা হয়ে গেল। কোন গাড়ি বার বার এমন মামলা খেলে তার রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা হয়। ঢাকায় এমন ব্যবস্থা করা গেলে এই বদভ্যাসটা মনে হয় হ্রাস করা যেতো।)

২৩.

বাংলাদেশের যানবাহনগুলো ডানহস্তে চালিত বলে বাস থেকে বাম দিকে নামতে হয়। নামার আগে বাসের সহকারীরা চীৎকার করে চালকের উদ্দেশ্যে বলেন, “বাঁয়ে চাপান” আর নামতে যাওয়া যাত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, “বাম পাও আগে” (ওঠার সময়ে “ডাইন পাও আগে”)। এই বাঁয়ে চাপানোর সময় বামে অন্য কোন গাড়ি আছে কিনা, আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য গাড়ির দরুণ যাত্রীদের নামার উপায় আছে কিনা, ফুটপাথের নিচে রাস্তায় বসা হকারের টুকরি পিষে ফেললো কিনা – এসব কিছুই বিবেচনা করা হয় না। ভাবটা এমন – আমার বাস থামানো দরকার আমি বাস থামিয়েছি, যাত্রীর বা রাস্তার অন্যদের কী হলো বা না হলো সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। বাস থামানোর সময় যদি দেখা যায় নারী বা বয়স্ক যাত্রী নামবেন তাহলে চালকের উদ্দেশ্যে চীৎকার – “আস্তে, জমায়া, লেডিস/মুরুব্বী নামবো”। তবে কালজয়ী চীৎকার হচ্ছে, “আস্তে, লেডিস, বাচ্চা কোলে”! যাত্রী নামানোর ক্ষেত্রে গন্তব্য যতই কাছিয়ে আসতে থাকে যাত্রী নামানোর ক্ষেত্রে বাসের কর্মীদের ধৈর্য্য আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তারা কেবল ক্রমাগত তাড়া দিতে থাকেন এবং যাত্রী নামতে না নামতে গাড়ি টানতে থাকেন। এতে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু বাসকর্মীরা এমনটা কেন করেন? এই কিছুক্ষণ আগেই তো রাস্তার মোড় জুড়ে দাঁড়িয়ে এই যাত্রীগুলোকেই আদরে বাসে তুলেছিলেন, আর এখনই তাদের সাথে এমন দুর্ব্যবহার! এর কারণ হচ্ছে, গন্তব্য যতো কাছিয়ে আসে বাসে নতুন যাত্রী ওঠার সম্ভাবনা কমতে থাকে — মানে আয়ের সম্ভাবনা কমতে থাকে। তাছাড়া চূড়ান্ত গন্তব্যের অতি নিকটে যারা বাসে ওঠেন তাদের কেউ কেউ একেবারেই ভাড়া দেন না। সুতরাং ঐ সময়ে বাস বেশিক্ষণ থামিয়ে ধীরে সুস্থে যাত্রী নামানোর চেয়ে বাসকর্মীরা তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছে আগেভাগে আরেকটা ট্রিপ ধরার চেষ্টা করেন।

২৪.

ঢাকার বাসের সহকারীরা শুধু যাত্রী উঠা-নামার কাজে সাহায্য করেন না এর সাথে তারা চালকের গতি ও দিক নির্দেশক, রাস্তার বিবরণের ধারাবর্ণনাকারী, পরবর্তী গন্তব্য ঘোষণাকারী, যাত্রী ডাকাডাকির প্রধান কুশীলব, গোলযোগে বাসের পক্ষ থেকে লড়াইয়ের অগ্রসৈনিক। আমি জানি না পৃথিবীর আর কোথাও সহকারীদের মাধ্যমে “ওস্তাদ! ডাইনে”, “বাঁয়ে কাটেন”, “বরাবইল” (বরাবর), ‘পিছে ব্যাক করেন’ ইত্যাদি বলে বাস চালানো হয় কিনা। ঢাকা থেকে ছাড়া বড় বড় আন্তঃনগর বাসগুলো এমন দরজায়ঝোলা সহকারী ছাড়াই যদি চলতে পারে তাহলে ঢাকা মহানগরে চলাচলকারী বাসগুলোর অমন সহকারী প্রয়োজন হয় কেন? বাসের সহকারীদের রসবোধ প্রবল। ‘বাঁয়ে পেলাস্‌টিক” কথাটার অর্থ যদি আপনি না বোঝেন তাহলে বুঝতে হবে গত দুই দশক আপনি ঢাকায় ছিলেন না। এখানে পেলাস্‌টিক = প্রাইভেট কার। কিন্তু কেন? তার উত্তর জানা নেই। একবার বাস আজিমপুর আসতে বাস সহকারী চীৎকার করে বললেন —

আজিমপুর থামায় যান
জিন্দা লাশগো নামায় যান

২৫.

নব্বইয়ের দশক থেকে ঢাকায় একটু একটু করে কাউন্টার বাস সার্ভিস চালু হয়। এই পদ্ধতিতে বাস স্টপগুলোতে বাস কোম্পানীগুলোর প্রতিনিধিরা কেরোসিন কাঠের ছোট ছোট চেয়ার টেবিল নিয়ে বসতেন। কোথাও একেবারে খোলা আকাশের নিচে, কোথাও মাথার উপরে প্যারাসোল। টেবিলের উপরে দামভেদে দুই তিন রঙের টিকিট। যাত্রীরা টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে বাসে উঠতেন। একই রুটে একাধিক কোম্পানীর বাস চলতো, তাদের কাউন্টারগুলো পাশাপাশি, তাদের নামগুলোও একই প্রকার — এটিসিএল/এমটিসিএল/এফটিসিএল, আবাবিল/অনাবিল/ছালছাবিল, শিকড়/শিখর, সিটি/রাজা সিটি, ফাল্গুন/শ্রাবণ/বৈশাখী ইত্যাদি। এক বাস কোম্পানীর টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়ালে মার্ফি’র সূত্র অনুযায়ী দেখা যেতো অন্য কোম্পানীগুলোর বাস একের পর এক আসছে, কিন্তু এই কোম্পানীর বাসের কোন খবর নেই। নদীর ঐ পাড়ের ঘাস বেশি সবুজ বিবেচনায় পরের দিন অন্য একটা কোম্পানীর টিকিট কাটলে দেখা যেতো শ্রীযুক্ত মার্ফি আজও পিছু ছাড়েননি। বাসের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করতেন অমন একজন একবার আমাদের অফিসে ‘অফিস সহকারী’ পদের জন্য আবেদন করলেন। বাস কোম্পানী যা বেতন দিতো আমাদের অফার তারচেয়ে কম ছিল, তবুও তিনি আমাদের এখানেই চাকুরী করতে চাইলেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন, টিকিট কেনার সময় প্রায়ই অনেক যাত্রী ছেঁড়া, জোড়া দেয়া বা জাল টাকা গছিয়ে দেয়। এমন ঘটনায় বাস কোম্পানী পুরো নোটটার মূল্য টিকিট বিক্রেতার বেতন থেকে কেটে রাখে। ফলে মাস শেষে দেখা যেতো বেতনের অর্ধেক ছেঁড়া, জোড়া দেয়া বা জাল টাকার নোট। লাইন ভাঙা, লাইন না মানা, বাস নির্দিষ্ট স্টপের বাইরেও থামা, দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া ইত্যাদি কারণে কাউন্টার বাস সার্ভিসের বেশিরভাগের টিকিট সিস্টেম আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। কিছু বাস কোম্পানী কিছু দিন এক টেবিলে এক জন টিকিট কর্মী রেখে পাঁচটি কোম্পানীর বাস চালানোর চেষ্টা করলো, তারপর টিকিটের ব্যাপারটাই মোটামুটি নাই হয়ে গেলো। এখনো কিছু বাসে টিকিটের ব্যাপার আছে বটে, তবে কেউ টিকিট না কাটলেও অসুবিধা হয় না, বাসে উঠে সমপরিমাণ ভাড়া দিলেই হয়। আজকাল কিছু বাসে অমন কাউন্টার সার্ভিস না থাকলেও পথে কোথাও কোথাও যাত্রী গোনাগুনতি করার এবং ওয়েবিল স্বাক্ষর করার ব্যাপার আছে। এটা বাস মালিক পক্ষের আয়কে নিশ্চিত করার জন্য ও বাসকর্মীদের দুর্নীতি হ্রাস করার জন্য করা হয়। তবে এই কায়দায় দুর্নীতি খুব একটা হ্রাস হয় না। বাসকর্মীদের সাথে ওয়েবিল স্বাক্ষরকারী চেকারের একটা স্ট্যান্ডার্ড সমঝোতা হয়ে গেছে। চেকার ওয়েবিলে যাত্রীসংখ্যা ৩/৪ জন কম লেখেন আর নামার সময় কন্ডাক্টরের কাছ থেকে ১০ টাকার একটা নোট নিয়ে যান। যাত্রীরা এসব দেখেন, সবই বোঝেন, কিন্তু কিছু বলেন না। যে দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা অন্য দেশে পাচার হয়ে যায় সে দেশের লোকের দুর্নীতি সহনশীলতার মাত্রা অনেক।

২৬.

ঢাকার বাস সংক্রান্ত কতিপয় সংজ্ঞা (অসম্পূর্ণ)

লোকাল = এই বাস সকল স্টপে থামে। সব স্টপে যাত্রী উঠা-নামা করায়। কখনো ‘ইচ্ছাপুর’ স্টপেও থামে। এখানে বসা যাত্রীর সংখ্যা ত্রিশ হলে দাঁড়ানো যাত্রীর সংখ্যা কমপক্ষে ষাট জন। ভাড়া দূরত্বের সাথে পরিবর্তনশীল। এই বাসে ভাড়া নিয়ে তর্কযুদ্ধ প্রতি মুহূর্তের ঘটনা। এই বাসগুলোর চেহারা-হাল ধারণাতীত রকমের খারাপ।

বিরতিহীন = যে বাস পথিমধ্যে কোন স্টপে না থেমে চলে। কোন কোন ক্ষেত্রে পথিমধ্যে যাত্রী কেবল নামতে পারবেন, কিন্তু নতুন যাত্রী উঠতে পারবেন না। ভাড়া গন্তব্য নির্বিশেষে একটাই। এই বাসগুলোর চেহারা-হাল অপেক্ষাকৃত ভালো।
(এককালে যে বাসগুলো গায়ে ‘বিরতিহীন’ লিখে অপেক্ষাকৃত বেশি ভাড়ায় চলতো কিছুদিনের মধ্যে দেখা যেতো তারা সব স্টপেই থামছে এবং যাত্রী উঠা-নামা করছে। বেশি ভাড়া দিয়ে এমন সবিরাম সার্ভিস পাওয়ায় যাত্রীরা এমন বাসকে ‘বিরতিহীন’ না বলে বলতেন ‘চরিত্রহীন’।)

গেটলক = এটা বিরতিহীন বাসের একটা সংস্করণ। এই বাস পুরো রুটে গেট বন্ধ করে চলাচল করার কথা। বাস্তবে দেখা যায় শুরুর দুই/তিন স্টপের মধ্যে বাস যাত্রীপূর্ণ হলে গেট বন্ধ করা হয় এবং তা পরবর্তী চার-পাঁচটা গন্তব্য পর্যন্ত গেট বন্ধ থাকে। তারপর ‘যে লাউ, সে-ই কদু’। গেটের কাঁচ খুলে ফেললে যে সরু আয়তাকার গবাক্ষ তৈরি হয় সেখান দিয়ে বাস সহকারী গলা বের করে তার চীৎকার-নির্দেশনা চালান।

সিটিং গেটলক = এটা গেটলক বাসের একটা সংস্করণ। এখানে কোন দাঁড়ানো যাত্রী নেবার কথা না। নাদের আলী বা বরুণা যেখানে কথা রাখেনি সেখানে ঢাকার বাসকর্মীদের কী দায় পড়েছে সামান্য আসনে বসা-দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে কথা রাখার!

খোদার কসম গেটলক = এটা সিটিং গেটলক বাসের একটা সংস্করণ। এর নামের সাথে ঈশ্বরের দোহাই যুক্ত করার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। দেড়েল বুড়ো বলেছিলেন, “মানুষ পণ করে পণ ভাঙিয়া ফেলিয়া হাঁফ ছাড়িবার জন্য”, সুতরাং এই বাস কোম্পানীও বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে হাঁফ ছাড়ার জন্য ‘খোদার কসম’-এর পরওয়া বিশেষ করে না। স্বস্তির বিষয়, এই বাসগুলো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সিটিং = এরা সিটিং গেটলকের আরেকটা সংস্করণ যেখানে গেট খোলা থাকে অথবা থাকে না। এর বাকি সব কিছু সিটিং গেটলকের অনুরূপ।

ইস্টাপ (স্টাফ) = এর মানে অন্য কোন বাসের কর্মী। গুঢ়ার্থে, এই যাত্রী কোন ভাড়া দেবেন না, এবং সাধারণত সব যাত্রী আসন না পাওয়া পর্যন্ত তিনি কোন আসন গ্রহন করবেন না। উর্দিপরা লোকজনের একাংশ বাস ভাড়া না দিলেও ঠিকই আসন দখল করেন।

ইশটুডেন (স্টুডেন্ট) = এর মানে বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধয়নরত শিক্ষার্থী যিনি সাথে নিজ বিদ্যায়তনের পরিচয়পত্র বহন করেন। গুঢ়ার্থে, এই যাত্রী অর্ধেক ভাড়া দেবেন। অনেক বাসে লেখা থাকে ‘হাফ পাস নাই’। এই কথার মানে হচ্ছে কোন শিক্ষার্থী তার পরিচয়পত্র দেখালেও এই বাস তার অর্ধেক ভাড়া মওকুফ করবে না। এই ব্যাপারটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে বাসকর্মীদের উচ্চকণ্ঠে অসন্তোষজনিত বাক্যালাপ একটা নিয়মিত ব্যাপার।


Comments

নীড় সন্ধানী's picture

Quote:
ঢাকার রাস্তায় বাস চালানোর জন্য চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অমন কোন প্রশিক্ষণ থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে মোটামুটি একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে প্রশিক্ষণ ছাড়াই একজন চালকের আসনে বসে পড়েন।

বাংলাদেশে ভারী যানবাহনের চালকদের দেখে মাঝে মাঝে অবাক হই। এদেশে ছোট গাড়ির প্রশিক্ষণ নিতে দেখেছি নানান জায়গায়, কিন্তু ভারী গাড়ির প্রশিক্ষণ দেখিনি কোথাও। তাহলে এরা কিভাবে ভারি গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পায়। যারা লাইসেন্স দেয় তাদের মনে কী প্রশ্ন জাগে না এই মানুষগুলো কোথায় প্রশিক্ষণ নিল? মনে হয় না এটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা আছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

একটা যৌক্তিক প্রশ্ন হতে পারে কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়া কি একজন মানুষ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারে? উত্তরটা 'না' হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এর উত্তর প্রায়ই 'হ্যাঁ' হয়। আপনার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ভারি যানবাহনের চালকেরা এর বাস্তব উদাহরণ। হালকা যানবাহনের চালকদের ক্ষেত্রেও এই পর্যবেক্ষণটার বিশেষ ব্যতয় হয় না। দুটো গল্প বলি।

এক, আমাদের অফিসের হালকা যান চালক এক তরুণ নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য একদিনের ছুটি চাইলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম তার আগের লাইসেন্সের কী হয়েছে। তার উত্তর, দশ বছর পার হয়ে যাওয়ায় এখন আর সেই লাইসেন্স নবায়ণ করা যাবে না, নতুন ডিজিটাল লাইসেন্স করাতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বয়স কত? উত্তর, তেইশ বছর। তাহলে তের বছর বয়সে তোমাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিলো কে? উত্তরে তিনি শুধু একটু লাজুক হাসলেন।

দুই, ধানমণ্ডী আট নাম্বার ব্রিজের কাছে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট একটা দামি প্রাইভেট কার থামালেন। গাড়ির চালক এবং অন্য আরোহীকে নামতে বললেন। নামার পর সার্জেন্ট তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন কে কোন শ্রেণীতে পড়ে। জানা গেলো, তারা দুই ভাই, চালক অষ্টম শ্রেণীতে আর সহযাত্রী ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। আরও জানা গেলো তারা এবং তাদের বন্ধুরা নিজেদের (মানে মা-বাবা'র) গাড়ি নিয়ে নিয়মিত রাতে বের হয় এবং এয়ারপোর্ট রোড, উত্তরা, পূর্বাচল হাইওয়ের মতো রাস্তায় মোটর রেস খেলে।

ছড়াকার বাপী শাহ্‌রিয়ারের কোমর, পা আর মেরুদণ্ড চুরমার করে দেয়া, কবি লুৎফর রহমান বাবু'র হাঁটু থেকে পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা গাড়িগুলো যে চালকেরা চালাচ্ছিল তাদের প্রশিক্ষণ দূরে থাক, ড্রাইভিং লাইসেন্সটাও ছিল না। এই মুহূর্তে সারা দেশের রাস্তাতে অযুত সংখ্যক অমন চালক গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ's picture

পাণ্ডবদা, আপনার ধারাবাহিক লেখাটা এই সময়ের একটা সুন্দর দলিল হয়ে থাকছে। সময়ের সাথে ছবিটা পরিবর্তন হচ্ছে/হবে, আশির দশকের শেষদিকে পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম ছিল। প্রসঙ্গের বাইরে না গিয়ে মন্তব্যের ঘরে লাইসেন্স সম্বন্ধে কিছু কথা বলে রাখি। (প্রশিক্ষণের ব্যাপারটা আবশ্যিক কিংবা পূর্বশর্ত কিনা জানিনা)

১। বাংলাদেশে পেশাদার এবং অপেশাদার দুধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হয়। পেশাদার লাইসেন্সধারীদেরকে লাইসেন্স নবায়নের সময় আবার একটি ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয় এবং তাতে পাশ করতে হয় (যেটা অপেশাদার লাইসেন্সেধারীর জন্য প্রযোজ্য নয়)।

২। পেশাদার চালকের আবার তিনটা ভাগ আছে। প্রথমটা হল হালকা যানবাহনের জন্য পেশাদার লাইসেন্স।

৩। পশ্চাত্যের দেশগুলোর মতন ন্যূনতম তিন বছর হালকা পেশাদার লাইসেন্স থাকার পর মধ্যম ভারী লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে।

৪। ন্যুনতম তিন বছর মধ্যম ভারী যানবাহনের লাইসেন্স থাকলে ভারী যানবাহনের পেশাদার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে। ঢাকার বড় বাস গুলি সম্ভবত ভারী মটরযানের ভাগে পরে (৬৫০০ কেজির বেশি)

নিয়মকানুন কঠিনই, কিন্তু প্রয়োগের অভাব। কড়াকড়ি করলে আবার আন্দোলন। আবার দেখুন ‘ডিজিটাল লাইসেন্স’ প্রবর্তন করায়, আগে বিআরটিএর মূল ফটকের কাছে দালালেরা যে লাইসেন্স ইস্যু করে দিত, সেটা এখন আর সম্ভব নয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজনের জন্য ধন্যবাদ বস্‌! আইন সব সময়েই ছিল, এবং যখন যা ছিল সেটা সেই সময়ের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সাধারণের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা থাকলে এই অপ্রতুল ট্রাফিক বাহিনী দিয়ে সেটা সামাল দেয়া যাবে না। তাই 'ডিজিটাল লাইসেন্স' প্রবর্তন করে লাইসেন্স ইস্যুতে দুর্নীতি রোধ করা গেলেও হালকা যানের লাইসেন্স নিয়ে ভারি যান চালানো বন্ধ করা যায় না, এমনকি কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোও রোধ করা যায় না। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটা কথা বলি, দেশে চলমান ৭/৮ মিলিয়ন মোটরসাইকেলগুলোর চালকদের কতোজনের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে? বিশেষত গ্রামাঞ্চলে চলমান সকল প্রকার যানের যে চালকেরা আছেন তাদের কতোজনের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক's picture

ঢাকার রাস্তায় দাপিয়ে চলা বাস গুলোর সাথে ছোটবেলার রচনার গরুর মিল পাই আমি। গরুর মাংস, চামড়া, শিং, লেজ, দাঁত, গোবর কিছুই যেমন ফেলনা নয়। তেমনি যেন বাসের সিট , ইঞ্জিন, মেঝে, ছাঁদ, জানালা, পাদানি, বাম্পার। এরই মাঝে হুডিনির দক্ষতায় যাত্রীদের 'বাড়া' কেটে চলেন হেল্পার।

---মোখলেস হোসেন

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

একবার সরকার ঢাকার বাসের জন্য সাত বছর না দশ বছরের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে দিল। বাস মালিকেরা দাবি করলেন যেহেতু তারা বাসের নানা পার্টস প্রতিনিয়ত বদলে থাকেন তাই তাদের বাসের আয়ুষ্কালের শুরুটা ধরতে হবে সর্বশেষ পার্টস সংযোজনের তারিখ থেকে। এমন অভিনব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল সেটা জানতে পারিনি বটে তবে সাত বছর বা দশ বছর জাতীয় বিষয় নিয়ে কোন কথা আর কখনো শুনতে পাইনি। ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিশ্চয়ই এমন পর্যায়ে যাবে যখন মানুষ ঢাকার বাসগুলোর মতো সময়ে সময়ে মগজ থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গ-তন্ত্র পালটে চিরযৌবন লাভ করবে।

'বাড়া' তো কাটেন 'কন্টেকটার'। যাত্রী ভীড়ের মধ্যে ঠেলে গিয়ে ভাড়া আদায়ের দক্ষতায় তিনি হুডিনি হলে 'হেল্পার' ডেভিড কপারফিল্ডের ঠাকুরদা'। চলন্ত বাসে ঝুলে থেকে তিনি কী না করেন! ছাদে উঠে মাল তোলেন, মাল নামান; রিয়ারভিউ মিরর ঠিক করেন, অন্য গাড়িকে থ্রেট দেন; যাত্রী উঠানামা করান; খাবার বিক্রি করা হকারের কাছ থেকে এক চিমটি তোলা নেন, ওস্তাদের জন্য সিগারেট কিনে তাতে দুটো টান দেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী's picture

Quote:
একবার সরকার ঢাকার বাসের জন্য সাত বছর না দশ বছরের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে দিল।

সরকার করবে আয়ু নির্ধারণ? ঘোড়ায় হাসবে শুনলে। আইন করলেও সর্বশক্তিমান বাস ট্রাক অলারা সেটা মানবে না। তাদের শক্তি হাঁটুবাহিনীর চেয়েও বেশী।

আসলে অনেকেই জানেন না যে বাস ট্রাকের মৃত্যু নাই। তারা অমর। বেশ কয়েক বছর আগে জরাজীর্ণ এক বাসের মালিকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এই বাসের বয়স কত, পুরোনো বাস ফেলে নতুন বাস কিনেন না কেন? বাস মালিক অবাক হয়ে বলেছিল -"বাস ট্রাকের আবার বয়স কী? চেসিস যতদিন ঠিক থাকবে ততদিন বাস চলবে। বাকী সব পার্টস অদল বদল করে নতুন বডি তৈরী করা যায়। এই বাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার, এখনো চলছে। আরো একশ বছর চলতে পারে। এরকম শতশত গাড়ি আছে শহরে"।

সত্যি সত্যি কিছুদিন পর অতি জীর্ণ গাড়িটাকে দেখেছিলাম চকচকে নতুন বডি নিয়ে রাস্তায় নেমে গেছে । বলে না দিলে কেউ বুঝতে পারবে না এই গাড়িটাই কদিন আগে ভাগাড়ে যেতে বসেছিল।

চট্টগ্রাম শহরে রেঞ্জার নাম দিয়ে কিছু চার চাকার কিছু ভারতীয় হিউম্যান হলার নেমেছিল দশ বারো বছর আগে। আট দশজনের সিট ক্যাপাসিটি। ছোট গাড়ির তুলনায় একটু বেঢপ উচু ধরণের বডি। রাস্তায় ভুরি ভুরি দেখতাম। একদিন দেখি ওগুলো নেই হয়ে গেছে। কোথায় গেল কে জানে। কিছুদিন পর ওই রুটে নতুন একটা মিনিবাস বাস সার্ভিস চালু হলো। চকচকে ছোট ছোট মিনিবাস চলছে যেগুলোতে ঘাড় সোজা দাড়ানো যায় না। এমন অদ্ভুত মিনিবাস কোথা থেকে এল। খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওই রেঞ্জারগুলার পুরোনো বডি ফেলে দিয়ে চেসিসের উপর মিনিবাসের কেবিন বসিয়ে দিয়েছে। আগে যেখানে দশ জন বসতো, এখন সেখানে ২০ জন বসে আর, দাঁড়ায় ঝুলে আরো বিশজন। এমন লাভজনক বিবর্তন আমি আগে দেখিনি এই খাতে।

বাসট্রাকের মৃত্যু নাই বলেই বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে কখনো পরিচ্ছন্ন যানবাহন চলাচল করার দৃশ্য দেখা যায়নি।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আপনার বলা 'রেঞ্জার'-এর মতো অন্য অনেক যানবাহনকে বাস (যাত্রী পরিবহনের যান)-এ রূপান্তরের ব্যাপারটা গ্রামাঞ্চলে অনেক কাল ধরে প্রচলিত। জীপ ধরনের গাড়ি, পিকআপ ভ্যান, তিনটনী ট্রাক, টেম্পো, সকল প্রকার হিউম্যান হলার, মাল পরিবহনের ছোট ট্রেইলার - এমন কিছু নেই যেটাকে বাসে রূপান্তর করা হয় না। শহরে যে বাসটা অ্যাক্সিডেন্টে ভচকে গেলো, কোন কারণে অনেক মামলা খেয়ে গেলো - ব্যাস! দে ওটাকে গ্রামে পাঠিয়ে। ব্যাপারগুলো এমন যে গ্রামের পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে বুঝি ভাবার কিছু নেই। মনে পড়ে, দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনের অটোরিক্‌শা ঢাকায় নিষিদ্ধ হলো, সাথে সাথে সেটা ঢাকার আশেপাশে চলে গেলো। ব্যাপারটা এমন যেন ঢাকার বাইরে পরিবেশ রক্ষার কোন বিষয় নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক's picture

'কন্টেকটার' কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম। অনেক অনেক কাল দেশে যাইনা।

---মোখলেস হোসেন।

অতিথি লেখক's picture

Quote:
আগের বাসসঙ্কট আর এখনকার বাসবাহুল্য দুটোই অপরিকল্পিত রুট পরিকল্পনার ফসল।

বাসের রুট নির্ধারণের ক্ষেত্রে কি কোন কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা আছে, নাকি বাস কোম্পানির ইচ্ছামত রুট বানানো হয়?

Quote:
আর পাবলিক টয়লেট বিরল এই শহরে যদি প্রকৃতির চাপ নিয়ে ভীড়-বাসের সুগভীরে, জ্যামক্লিষ্ট রাস্তায় যেতে হয় তাহলে বয়েল-চার্লস-গে লুসাক-আভোগাদ্রো’র গ্যাস সংক্রান্ত সূত্রাবলী অথবা আর্কিমিদিস-প্যাসকেলের প্রবহী সংক্রান্ত সূত্রাবলী, বার্নৌলী’র সমীকরণসহ চাপ-তাপ-আয়তন-প্রবহীসংক্রান্ত সকল সূত্র-সমীকরণ শেখা হয়ে যাবে।

ঢাকার গণশৌচাগারের ভেতরের পরিস্থিতি দেখলে যেসব পদার্থ শরীরের বাইরে আসতে চাইছিল, তারা আবার শরীরের ভেতরে ঢুকে যায়! হাসি

Quote:
বাস চলতে গেলে বাসচলার উপযুক্ত রাস্তা থাকতে হবে।

ঢাকায় তো এখন দুই লেনের রাস্তায় অন্ততঃ তিনটা লেন বানিয়েও গাড়ি চালাতে দেখা যায়।

Quote:
(দেশের বাইরের এক শহরে দেখেছিলাম এমনধারা চৌরাস্তাতে নানামুখী ক্যামেরা লাগানো। নিষিদ্ধ জায়গায় গাড়ি দাঁড় করানো, সিগন্যাল না মানা, গতিসীমা অতিক্রম করা, উলটোপথে যাওয়া, নিষিদ্ধ বাঁক নেয়া – এমনসব অপরাধের কোনটা কোন গাড়ি করলে সাথে সাথে মোড়ে লাগানো বিশাল ইলেকট্রনিক বোর্ডে ঐ গাড়ির নাম্বার উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ গাড়ির নামে একটা জরিমানাসহ মামলা হয়ে গেল। কোন গাড়ি বার বার এমন মামলা খেলে তার রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা হয়। ঢাকায় এমন ব্যবস্থা করা গেলে এই বদভ্যাসটা মনে হয় হ্রাস করা যেতো।)

ঢাকার রাস্তায় যেখানে ট্রাফিক বাতি কাজ করে না, সেখানে ক্যামেরা আশা করাটা কি বাস্তবোচিত? বাঙালির প্রখর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ, প্রতিবাদ-প্রতিরোধকামী পরিধ্বংসী প্রবণতা, এবং উদ্ভাবনচাতুর্যের ওপর শতভাগ আস্থা রেখে আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে ক্যামেরা স্থাপন করার (বড় জোর) এক মাসের মধ্যে সেগুলি নষ্ট এবং/অথবা চুরি হবে।

Emran

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

বাসের রুট সম্ভবত বিআরটিএ ঠিক করে দেয়, তবে সেখানে কয়টা বাস চলবে বা কয়টা কোম্পানী বাস চালাতে পারবে সেটা বোধকরি কেউ ঠিক করে না। তাই কোন রুটে বাসের স্বল্পতা আর কোন রুটে বাসের আধিক্য থাকে।

দুনিয়ার আর কোন শহরে ভারি ট্রাক, হালকা ট্রাক, বিশাল বাস, ছোট বাস, নানা রঙ-পদের পিকআপ-ভ্যান-এসইউভি-সেডান-হ্যাচব্যাক-স্টেশন ওয়াগন, ঠেলাগাড়ি-সাইকেল ভ্যান-অটোরিক্‌শা-রিক্শা‌-সাইকেল, ঘোড়ার গাড়ি, ঘোড়া, হাতি সব পাশাপাশি একই রাস্তায় চলে?

ক্যামেরা স্থাপন নিয়ে আপনার আশঙ্কাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে ব্যাপারটা বেসরকারী খাতে ছাড়লে কিছুটা কাজ হবার আশা করি।

আচ্ছা, ট্রাফিক বাতি কাজ না করার জন্য ট্রাফিক বিভাগ ছাড়া আর কাউকে কি দায়ী করা যায়?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক's picture

Quote:
দুনিয়ার আর কোন শহরে ভারি ট্রাক, হালকা ট্রাক, বিশাল বাস, ছোট বাস, নানা রঙ-পদের পিকআপ-ভ্যান-এসইউভি-সেডান-হ্যাচব্যাক-স্টেশন ওয়াগন, ঠেলাগাড়ি-সাইকেল ভ্যান-অটোরিক্‌শা-রিক্শা‌-সাইকেল, ঘোড়ার গাড়ি, ঘোড়া, হাতি সব পাশাপাশি একই রাস্তায় চলে?

ঢাকার রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়বে, কারণ গাড়ি কেনার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয়; সরকারী কর্মচারীরাও এখন সরকার থেকে গাড়ি কেনার জন্য ঋণ পায়। তদুপরি আছে জ্বালানী হিসেবে সিএনজির স্বল্প মূল্য এবং সহজলভ্যতা। যেখানে ট্রাফিক পরিস্থিতির বিবেচনায় ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়কে নিরুৎসাহিত করা উচিৎ, সেখানে এসব পদক্ষেপের কারণে নিকট ভবিষ্যতেও ট্রাফিক এবং পরিবহন পরিস্থিতির এই অবনতি অব্যাহত থাকবে।

Emran

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

মাস রেপিড ট্রানজিট নিয়ে যে এখানে বিশেষ ভাবনা নেই সেটা সিরিজের শুরুতে বলেছিলাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

খালেদ তমাল's picture

মেয়র আনিসুল হককে একবার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল প্রধান প্রধান সড়কের মোড়গুলো সমন্বিত ভাবে ট্রাফিক সংকেত বাতি দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা ও তা নিয়মিত হাল নাগাদ রাখা-সম্ভব হলে যানপ্রবাহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সক্রিয় রাখা সংক্রান্ত প্রকল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে। এতে ট্রাফিক পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সময় না দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে পারতো। ঊনি হতাশ হয়ে ইনফরমালি বলেছিলেন, উনি এরকম প্রকল্প অনেক আগেই নিতে চেয়েছিলেন, তার জন্য তহবিলও জোগাড় করা ছিল। কিন্তু প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়েই বাধাগ্রস্ত হয় এই বলে যে, ভিআইপি রা এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে গন্তব্যে যেতে পারবে না। ‘ওনা’দের জন্য উরুক্কু গাড়ি না আসা পর্যন্ত মনে হয় এই ধরনের প্রকল্প কার্যকর হবে না!

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

দিনের যে সময়টাতে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ কম থাকেন, এবং রাস্তাতেও গাড়ি কম থাকে ঐ সময়ে একটু লক্ষ করবেন গাড়িগুলো ট্রাফিক আইন, বাতির সংকেত কতটুকু মেনে চলে। প্রদত্ত ভিআইপি চলাচল সংক্রান্ত দোহাইটির সত্যাসত্য জানি না, তবে সেটি না থাকলেও এই মহানগরে শুধু বাতির সংকেত দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। ট্রাফিক আইনভঙ্গকারীকে পাহাড় পরিমাণ জরিমানা দিয়েও সম্ভব না। আইন কার্যকর করার পন্থা বের করার আগে উক্ত জনপদের সংস্কৃতিটা বুঝতে হয়।

অটঃ প্রয়াত মেয়রকে নিয়ে বলা গল্পটি বিশ্বাস করতে পারলাম না। তহবিল যোগাড় করতে গেলে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প দাঁড় করাতে হয়, সেটির বিস্তারিত এবং বাজেটসহ তহবিলের অনুমোদনের জন্য পেশ করতে হয়। তারপর প্রকল্পের বাস্তবতা ও সফলতার সম্ভাবনা যাচাই করে অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত হলে বাজেট বরাদ্দ হয়। কেবল তখনই বলা যেতে পারে যে, তহবিল যোগাড় হয়েছে। আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে অতকিছু হলে তার ঢাকঢোলের বাদ্যে সারা দেশে খবর হয়ে যেতো। আমরা যারা ঢাকা উত্তর মহানগরের অ-ভিআইপি এলাকার বাসিন্দা তারা এমন অনেক ঢাকঢোলের বাদ্যি শুনেছি কিন্তু তাতে আমাদের ভাঙ্গা রাস্তা, উপচে পড়া ড্রেন, মশার কামড় খেয়ে চিকুনগুনিয়া হওয়া, ট্রাফিক জ্যাম, বাসার সামনে ছিনতাই হওয়া, বাতিবিহীন অন্ধকার রাস্তা, সরকারী জমি দখল হওয়া, নানা রঙের মাস্তানদের দাপট এমন অনিঃশেষ তালিকার জীবনক্ষয়ী বিষয়ের কোনটার এক কণামাত্র নিরাময় হয়নি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

খালেদ তমাল's picture

শুধু সংকেত বাতি দিয়ে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় আর এটা বলাও হয় নি। কিন্তু সংকেত বাতি ছাড়াও সমাধান সম্ভব নয় অন্যান্য প্রকল্পের পাশাপাশি। বাতি তখনি কাজ করবে যদি তা যানপ্রবাহের সাথে পরিবর্তিত হয়। একই সাথে স্বভাব-সংস্কৃতি সম্পর্কিত সফট প্রকল্প নিতে হবে যা দীর্ঘমেয়াদে উপকার আসবে। কিন্তু ততদিন প্রর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে কাজ চালানো নিশ্চয় কেউ ভাববে না। ব্যস্ত সময়ে একটি চৌরাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত যানপ্রবাহ আটকে রেখে দেয়, যার ফলে ঐ দিকে ক্রমবর্ধিতভাবে যানজট বাড়তেই থাকে (ঢাকাতে অবশ্য নির্দিষ্ট কোনো ব্যস্ত/পিক সময় নেই)। স্থির অবস্থান থেকে যানপ্রবাহ শুরু করতে অনেক সময় অপচয় হয়, হয়ত দেখা যেত সর্বোচ্চ ১ মিনিট (উদাহরন) এক দিকে সবুজ থাকলে কার্যকরতা বাড়তো। হাতে করে যান পরিচালনা করাতে তো আরও সিস্টেম লস হয়, সেই সময়টাও সবুজ সময়ে যোগ হতে পারতো। প্রশস্ত সড়কগুলোতে সংকেত বাতির মোড়ে অল্প একটু (৫০০ মিটার) বাস অনলি লেন করা যায়, যা ভিআইপিরা ব্যবহার করতে পারে, পর্যাপ্ত গবেষণা না করে তা কার্যকরি হবে কিনা বলা যায় না অবশ্য।

মেয়র সম্পর্কিত তথ্য সম্পুর্ন বলছি না, মূল লেখার সাথে সম্পর্কিত না দেখে। প্রকল্পটিকে জাইকা তহবিলের একটি অংশ থেকে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এই প্রকার প্রকল্পতে ব্যয় কিন্তু বেশি নয়, মুল কাঠামোতো তৈরিই আছে, সরকার শুধু দৃশ্যমান প্রকল্পতে আগ্রহি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

১। ট্রাফিক ব্যবস্থা একটি বহুমাত্রিক ও জটিল ব্যাপার। সমস্যা হচ্ছে আমাদের নীতিনির্ধারক এবং জনপ্রতিনিধিরা এখানে একটি মাত্র কাজ করে (বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে) তাবৎ সমস্যার সমাধান করে ফেলতে চান। রাস্তার সংখ্যা বাড়ানো, রাস্তার প্রশস্ততা বাড়ানো, রাস্তা যান চলাচলের জন্য মুক্ত রাখা থেকে শুরু করে হাজারোটা ব্যাপার এখানে জড়িত। সেটার ইঙ্গিত আপনিও দিয়েছেন। ওটা নিয়ে আমাদের দ্বিমত নেই। আপনি বলেছেন,

Quote:
এতে ট্রাফিক পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সময় না দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে পারতো

- সমস্যাটা এই ভাবনাটা নিয়ে। মানসিকতার পরিবর্তন প্রযুক্তিগত বা কৌশলগত ভাবে সম্ভব না। ফ্রাংক বাংকার আর লিলিয়ান মোলার গিলব্রেথের টাইম এন্ড মোশান স্টাডি থিয়োরি তখনই কাঙ্খিত দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে যখন পরীক্ষণপাত্র সবাই নিয়মগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে।

২। একটা প্রসঙ্গ যখন তুলেছেন এবং যেটা এই পোস্টের বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত সেটা নিয়ে এখানে আলোচনা হতে পারে। আপনি বলেছেন,

Quote:
ঊনি হতাশ হয়ে ইনফরমালি বলেছিলেন, উনি এরকম প্রকল্প অনেক আগেই নিতে চেয়েছিলেন, তার জন্য তহবিলও জোগাড় করা ছিল। কিন্তু প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়েই বাধাগ্রস্ত হয় এই বলে যে, ভিআইপি রা এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে গন্তব্যে যেতে পারবে না

- (ক) প্রয়াত মেয়র সংকেতনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আগেই নিতে চেয়েছিলেন। এই "চেয়েছিলেন"টা কি মনে মনে নাকি বাস্তবেও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল? (খ) জাইকার তহবিল থেকে একটি অংশ বরাদ্দ কে রেখেছিল? জাইকার তহবিল থেকে মূল অনুমোদিত প্রকল্পের বাইরে কিছু করতে গেলে জাইকা এবং বাংলাদেশ সরকার উভয়ের অনুমতি লাগবে। হয়তো মূল প্রকল্পেও সংযোজন-বিয়োজন করতে হবে। প্রয়াত মেয়র কি এখানে জাইকার অনুমতি নিয়ে সরকারের অনুমতি নিতে গিয়ে বাধাগ্রস্থ হয়েছিলেন? (গ) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন একটি স্থানীয় সরকার যার নিজস্ব বাজেট আছে এবং যার কাজ করার যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে। জাইকা টাকা না দিলে অথবা সরকার প্রকল্পের টাকা ব্যয়ের অনুমোদন না দিলে কর্পোরেশন নিজে থেকেও এই কম ব্যয়ের কাজটি করতে পারতো। সেটা না করে 'সরকার' আর 'ভিআইপি'-দের দোহাই দেয়াটা কোন কাজের কথা না। যে কোন বিষয়ে কাজ না করতে চাইলে বা না করতে পারলে এমন হাজারোটা অজুহাত দাঁড় করানো সম্ভব।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক's picture

জুন ২০১৭ এর দিকে সম্ভবত প্রয়াত মেয়রের সাথে আমার সহকর্মী (পরিবহন পরিকল্পনাবিদ, যুক্তরাজ্য) এর কথোপকথন হয়েছিল। মুলত স্বপ্রনোদিত হয়ে উনি কিছু উপদেশ দিতে চেয়েছিলেন প্রয়াত মেয়রকে (অল্প পরিচিতি ছিল)। মেয়র উনাকে বলেছিলেন ৩ বছরের মধ্যে করা যায় - মেয়াদের মধ্যে, এমন কিছু বলতে। অনেক কিছুর সাথে সহকর্মী ট্রাফিক সংকেত বাতির উন্নতিকরণ এর উপযোগিতার কথা বলেছিলেন। তার উত্তরে প্রয়াত মেয়র ভিআইপি সম্পর্কিত কথাটি বলেছিলেন।

JICA এর DUHT প্রতিবেদনেও ট্রাফিক সিগনাল কন্ট্রোল সিস্টেম সম্পর্কে বলা আছে ()। একটি পরীক্ষামূল্পক প্রকল্পে JICA তহবিলের কথাও বলা হয়েছে ()

Quote:
আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে অতকিছু হলে তার ঢাকঢোলের বাদ্যে সারা দেশে খবর হয়ে যেত

মেট্রো, উড়াল সেতু ইত্যাদি বড় বড় অবকাঠামো সম্পর্কিত প্রকল্প মূল মেডিয়া তে চলে আসে সহজেই। সেই হিসেবে ট্রাফিক সিগনাল কন্ট্রোল সিস্টেম উন্নতিকরণ খুবই মামুলি ব্যাপার মেডিয়ার কাছে। প্রয়াত মেয়রের কথামত ট্রাফিক সংকেত উন্নতিকরণ যেহেতু সরকারের অন্য অধিদপ্তরের কাছে কোন বাহবাযুক্ত প্রকল্প না (উদা: ভিআইপি ইস্যু), সরকার নিজ উদ্যোগে সেটি মেডিয়া তে আনবে কেন, এই সম্পর্কে কিছু অনিশ্চয়তা ছিল বলেই হয়তো পরে পরীক্ষামূলক ভাবে ৪টি জংশনে করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

২কখগ এর সারাসরি উত্তর আমার কাছে এই মুহুর্তে নেই। এই লিঙ্কে JICA তহবিলের উল্লেখ আছে যদিও ।

Quote:
সমস্যাটা এই ভাবনাটা নিয়ে। মানসিকতার পরিবর্তন প্রযুক্তিগত বা কৌশলগত ভাবে সম্ভব না। ফ্রাংক বাংকার আর লিলিয়ান মোলার গিলব্রেথের টাইম এন্ড মোশান স্টাডি থিয়োরি তখনই কাঙ্খিত দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে যখন পরীক্ষণপাত্র সবাই নিয়মগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে।

ট্রাফিক পুলিশ অন্য কাজ মানে - আইন বলবতকরণ, অনিয়মের জন্য নোটিশ ইস্যু ইত্যাদি কাজে থাকতে হবে এটি বলতে চেয়েছি। এমনিতেই তো লোকবলের অভাব - সার্জেন্ট এর কাজ নিশ্চয় এই নোটিশ ইস্যু করা নয়! নিয়মিতভাবে আইন ভঙ্গকারিকে নোটিশ দিলে সবাই ধীরে ধীরে আইন মেনে চলবে।

অন্য একটি খবরে দেখা যাচ্ছে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে ট্রাফিক সংকেত বাতি নিয়ন্ত্রনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে ! ইয়ে, মানে... ! অ্যাঁ !

- খালেদ তমাল

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

একদম শেষে যে খবরের লিঙ্ক দিলেন সেখানে অধ্যাপক শামসুক হকের ভাষ্যে বলা হচ্ছে,

Quote:
but that did not work because at different times of the day, the traffic varies

- ঠিক এই কারণে আগে অনেক বার উদ্যোগ নিয়েও স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারেনি। একবার তো চালু করার দুই ঘন্টার মধ্যে সেটা বন্ধ করতে হয়েছিল। এই প্রকার স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরীর ক্ষেত্রে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পয়েন্টে যান চলাচলের অবস্থা কী হয় সেটা নিয়ে জরীপ করে সেই অনুযায়ী কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করে গোটা ব্যবস্থাটি তৈরী করতে হয়। কিন্তু এখানে অমন কিছু করা হয়না বলে ব্যবস্থাটা প্রতিবার ফেইল করে। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটা তথ্য দেই। প্রায় দুই যুগ আগে আমার এক সহপাঠী তার স্নাতক গবেষণার বিষয় হিসাবে চক সার্কুলার রোডের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়করণের উপায় নির্ণয়ে অমন বিস্তারিত জরীপ করে কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরী করেছিলেন। তার গবেষণাপত্রটি আশা করা যায় বহুকাল আগেই হয় উই-ইঁদুরের পেটে গেছে অথবা ঠোঙা বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

আর রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের যে খবর জানা গেলো সেখানে হয়তো টেকাটুকার ব্যাপার আছে, অথবা দাদাদের চাপ আছে। আচ্ছা, পরামর্শক দাদাদের দেশের কোথায় এমন রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি's picture

Quote:
এই প্রকার স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরীর ক্ষেত্রে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পয়েন্টে যান চলাচলের অবস্থা কী হয় সেটা নিয়ে জরীপ করে সেই অনুযায়ী কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করে গোটা ব্যবস্থাটি তৈরী করতে হয়

আমার ধারণা এইসব ক্ষেত্রে শহর-ব্যাপী নাগরিক ট্রাফিক নেটওয়ার্ক জুড়ে বিস্তৃত প্রয়োজনীয় তাবৎ ফিজিকাল যন্ত্রপাতি ও মেকানিজম সহ তাৎক্ষণিক (রিয়েল-টাইম) ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাই রেজুলিউশন ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্থানিক ও কালিক ট্রাফিক ফ্লো ডাটা গ্রহণ/ধারণ/সঞ্চালন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা, ক্যাওস থিওরির প্রয়োগে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাফিক ফ্লো প্যাটার্নের নিখুঁত বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যদ্বাণী এবং ট্রাফিক ভলিউম এস্টিমেশনের জন্য উপযুক্ত এলগরিদম তথা পূর্ণাঙ্গ সিস্টেম ডেভেলপ করা লাগবে। আর আমার মতে বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরও লাগবে কাঙ্খিত ফ্লো ও সিগন্যালিং-এর সাথে সমন্বয় করে ট্রাফিক থ্রটলিং-এর স্বয়ংক্রিয় ফিজিকাল মেকানিজম। শুধু মেধাসম্পদই না, মনে হয় বিশাল অর্থ-সম্পদও লাগবে এসব করতে গেলে! হাসি

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

ঠিক! শুরুতে ব্যবস্থাটা ছোট কোন শহরে চালিয়ে তার উপযোগিতা, সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি যাচাই করে নিতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি's picture

এ বিষয়ে ভিনদেশে কিছু নতুন অগ্রগতির খবরঃ http://www.bbc.com/future/story/20181212-can-artificial-intelligence-end-traffic-jams

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

অতি চালাক বিজনেস ম্যানেজারদের দেয়া প্রেজেন্টেশনের মতো লাগলো। পা-কে চেপেচুপে, কেটেকুটে তাদের বানানো জুতোর ভেতর ঢোকানোর চেষ্টা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফারুকুর's picture

দৈনিক যুগান্তরের একটি খবরে (লিন্ক https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/3801/%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%85%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0) এক আপামনির সাক্ষাতকার ইউটিউব আছে। ঐখানে উনি দাবী করেছে যে ডিআইজি মিজান উনাকে বাড়ির সামনে থেকে অপহরন করে গাড়িতে তুলে তিনশ ফুট না কই যেন নিয়া গেছে। এবং এই কাম করার সময় ডিআইজি হুজুর অয়ারলেছে হুকুম দিয়া রাস্তা আগাম খালী করাইছেন যাতে উনি মনজিলে মকসেদে তাড়াতাড়ি পউছাইতে পারেন। এই দাবী সত্য হইলে টার্ফিক বাতির ভবিষ্যদ অন্ধকার। বাতির হাতে রাস্তা ছাইরা দিলে ডিআইজি মিজানরা বাড়ি হতে নারী তুলে তিনশ ফুট যাওয়ার পথে জেমে আটকা পড়বেন ত।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

এই ঘটনাটির উলটো ভার্সানও আমি শুনেছি। ঘটনাটি সম্ভবত আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয়। এমন বিষয়ে কিছু সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নানা প্রকার কনসপিরেসি থিয়োরি হাওয়ায় ঘোরে। এক শ্রেণীর মিডিয়া সেখানে মওকা বুঝে বাতাস দিয়ে যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা's picture

"সাধারণের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা থাকলে এই অপ্রতুল ট্রাফিক বাহিনী দিয়ে সেটা সামাল দেয়া যাবে না।" ভাবতে খারাপ লাগে, কিন্তু এই প্রবণতাটা সম্ভবতঃ প্রাচ্যের বেশীরভাগ দেশগুলোতে সাধারণ প্রবণতা।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আপনার মন্তব্যের সাথে আমি প্রবলভাবে একমত। এই একমত হবার উৎস আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। কিন্তু এই ধরণের কথা আমি সাধারণত বলি না। কারণ, কিছু লোক এমন কথা শুনলে/পড়লে বলেন, "দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখে এমন গয়রহ মন্তব্য কি করা যায়"?* অথবা "এই ব্যাপারে কি কোন জরীপ হয়েছে, গবেষণা হয়েছে, আপনি কীসের ভিত্তিতে এই কথা বলেন"?**

* আমি বলি, দুনিয়ার কোন ঘটনাটা বিচ্ছিন্ন নয়? আপাত পূর্বসংযোগসম্পন্ন ঘটনাকে যেমন বিচ্ছিন্নভাবে দেখানো যায় আবার আপাত বিচ্ছিন্ন ঘটনাকেও অন্য ঘটনার সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্ত করা যায়।
** আমি বলি, মানুষের ওপর করা জরীপ বা গবেষণার ফলাফল কীভাবে নিজের পছন্দের ছাঁচে ফেলা যায় সেটা যাদের জরীপ/গবেষণার অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক's picture

Quote:
** আমি বলি, মানুষের ওপর করা জরীপ বা গবেষণার ফলাফল কীভাবে নিজের পছন্দের ছাঁচে ফেলা যায় সেটা যাদের জরীপ/গবেষণার অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন।

দেখুন উদাহরণ!

Emran

এক লহমা's picture

উদাহরণ-টা খাসা! হাততালি হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মেঘলা মানুষ's picture

দুই দরজা ওয়ালা বাসে এককালে চারজন পরিব‌হন কর্মী থাকতেন। একজন বাস চালাবেন, একজন দরজার হেল্পার, একজন সামনের ভাড়া নেবেন, একজন পেছনের ভাড়া নেবেন এবং সময় সময় পেছনের দরজায় ঝুলে থাকবেন।

ভীনদেশে এসে হেল্পার কন্ডাকটর বিহীন বাস দেখে অবাক হয়েছিলাম। আমার নানীর বয়সী এক ভদ্রমহিলাকে দেখতাম পাহাড়ী পথে আর্টিকুলেটেড বাস নিয়ে সাঁইসুই করে চলতে #সম্মান

হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আগে ৫৬ সিটের সব বাসই দুই দরজার ছিল। এখন হাতেগোনা কয়েকটা বিআরটিসি'র বাস ছাড়া দুই দরজার বাস আর নেই। জনপ্রিয় দুই দরজার বাস ছিল ৬ নাম্বার রুটের (পীরজঙ্গী মাজার থেকে গুলশান-বনানী) সুপিরিয়র কোচগুলো। এই বাসের দুই দরজা নিয়ে বহুল প্রচলিত একটা গল্প হচ্ছে, এক হেলপার সামনের দরজা দিয়ে যত যাত্রীই তোলেন না কেন তাদের সবাই বাসে এঁটে যায়। এমন আশ্চর্য ঘটনা কী করে সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, যখন সামনের দরজা দিয়ে দুই জন যাত্রী তোলা হয় তখন পেছনের দরজা দিয়ে তিন জন যাত্রী বাইরে পড়ে যান। ফলে ৬ নাম্বার বাস অসীম সংখ্যক যাত্রীকে তুলতে সক্ষম হয়।

সবাই টিকিট কেটে বাসে উঠবেন, বাস নির্ধারিত স্টপ ছাড়া থামবে না, যাত্রীরা টিকিট অনুযায়ী স্টপে নামবেন, বাস নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টপ ছেড়ে যাবে - এমনটা যদি হতো তাহলে বাস চালাতে, যাত্রী পরিবহন করতে হেলপার-কন্ডাকটর কিছুই লাগতো না।

বাংলাদেশে লোলচর্ম বৃদ্ধকে ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে দেখেছি, এক হাতবিহীন বা পায়ের পাতাবিহীন লোককে রিক্‌শা চালাতে দেখেছি, সারা শরীর রডের মতো শক্ত-সোজা হয়ে যাওয়া লোককে (কোন দিকে ফিরতে পারেন না) মুদি দোকান চালাতে দেখেছি। অনন্ত জলিল না হয়েও মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। এরা প্রকৃত শ্রদ্ধা-সম্মানের পাত্র।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি's picture

১। '৮০-র দশকে তিতুমীর কলেজে যখন পড়তাম এবং মোহাম্মদপুরে থাকতাম, যদ্দুর মনে পড়ে তখন ফার্মগেট পর্যন্ত অন্য বাসে বা টেম্পোতে এসে তারপর আপনার উল্লেখিত ৬ নম্বর রুটের ঐ দুই দরজাওয়ালা পেট-মোটা বাসগুলিতে করে কলেজে যেতাম বা ফিরতাম অনেক সময় (মহাখালিতে নেমে অন্য বাস নিতে হতো কিনা মনে নেই)। আপনার লেখা পড়ে এইসব বাসে করে সহপাঠী বন্ধুবান্ধবদের সাথে হৈ-হল্লা আর দুষ্টুমি করতে করতে কলেজে যাওয়া-আসার সুখস্মৃতি মনে পড়ে গেল। ঐ দিনগুলির কথা মনে পড়িয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২। "যাত্রীরা টিকিট অনুযায়ী স্টপে নামবেন, বাস নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টপ ছেড়ে যাবে - " এবং কাউন্টার থেকে টিকিট করে তারপর লাইন ধরে ধাক্কাধাক্কি না করে ধীরেসুস্থে বাসে উঠবেন ও নামবেন এবং নির্ধারিত সীটে বসতে পারবেন - এর সবই ভালোভাবে ছিল কিছুকালের জন্য এসি বাসের যুগে। মিরপুর-মতিঝিল এবং উত্তরা-মতিঝিল রুটে দু'টো সার্ভিস ছিল অন্তত। প্রথমটা বহুকাল আর নেই, অন্যটার খবর জানি না।

৩। অভ্যন্তরীণ রুটে মেরুন রঙের সরাসরি বিআরটিসি পরিচালিত বিআরটিসি বাসগুলি যখন প্রথম বন্ধ হয়ে গেল তখন খুব খারাপ লেগেছিল। এই বাসগুলি সম্পর্কে তখন আমাদের অনেক অভিযোগ ছিল, কিন্তু শহরের ভিতর বাস সার্ভিস সম্পূর্ণ প্রাইভেট খাতে ছেড়ে দিয়ে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। বিআরটিসির হেল্পার-কন্ডাক্টারদের ব্যবহার তখন অনেক ভালো ছিল মনে হয়।

৪। আমার বিআরটিসি যাত্রার শুরু প্রায় মায়ের কোলে চড়ে '৭০-এর দশকের প্রথমার্ধে। আম্মা ঢাকা ইউনির ল' ডিপার্টমেন্টে পড়তে যেতেন আর আমি মাঝে মাঝে যেতাম সাথে। তখনকার এবং পরেও বহুকাল শহরের ভিতরকার রুটে বিআরটিসি বাসবহরে বাসের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ছিল, অনেক দেরি করে করে স্টপেজে আসত, গদাইলষ্করি চালে চলতো (ড্রাইভারদের বেশি-বেশি ট্রিপ মারার তাগিদ ছিল না মনে হয়), ফলে স্টপেজে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, ইত্যাদি। তবে ঠিক এই কারনেই এবং ভাড়া কম ছিল বলে একবার ক্লাস নাইন বা টেনে পালিয়ে চট্টগ্রাম বেড়াতে যাওয়ার পরও ঢাকায় ফিরতে পেরেছিলাম বিনা ঝামেলায়। যদ্দুর মনে পড়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৫০ টাকা - বিআরটিসিতে। আমার কাছে ছিল সর্বশেষ ৪০ বা ৪৫ টাকা। ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া একটা অব্যবহৃত লাক্স সাবান একটা পানের দোকানে বিক্রি করে বাকি টাকাটা জুটেছিল। বিআরটিসির ঐ নিশীথকালীণ ভ্রমণটাও ছিল আরাম্প্রদ। অন্য বাসগুলি যখন স্পিডীং করছে, একে-অপরকে ওভারটেক করছে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে, বিআরটিসির বাসটা তখন বিন্দুমাত্র তাড়াহুড়া না করে পুরো রাস্তাটা ইভেন গতিতে ধীরস্থির ভঙ্গিতে নিজের মতো চালিয়ে গেছে। এমনকি ফেরিঘাটের লাইনে এসে যখন অন্য বাসগুলি আগের ফেরিটা আগেভাগে ধরার জন্য ঐ অতি সীমিত জায়গার মধ্যে লাইন ভেঙ্গে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে একে-অপরকে ওভারটেক করার জন্য ম্যানুভারিং লাগিয়ে দিল, তখন বিআরটিসি বসে থাকল চুপচাপ। মজার ব্যাপার হলো, শেষ পর্যন্ত ঐ বিআরটিসিই কিভাবে যেন অন্য বাসগুলির এ্যাক্রোব্যাটিক্সের ফাঁক গলে ফেরিতে উঠেছিল সবার আগে! বিআরটিসি সম্পর্কে তখন যত অভিযোগই থেকে থাকুক, এখন সেগুলি ভুলে গেছি। শুধু ভালোটুকুই মনে পড়ছে এখন। অনেকটা বিটিভির মতো! দেঁতো হাসি

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

১। আশির দশকের কোন এক সময় আমিও কলেজে (মানে ঊচ্চ মাধ্যমিক) পড়তাম। তখন বিআরটিসি'র ৩/৪/৯ নাম্বার রুটের বাসগুলো আমার ভরসার স্থল ছিল। মোহাম্মদপুরের বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড (যেটা নারায়ণগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড নামেও পরিচিত ছিল) থেকে ফার্মগেট আসার জন্য ছিল ৯ নাম্বার বাস। এটা কমলাপুর পর্যন্ত যেতো। ফার্মগেট থেকে দুই দরজাওয়ালা ৬ নাম্বার-এ বাসে উঠলে আপনাদের কলেজের গেটেই নামিয়ে দেয়ার কথা। ৬ নাম্বার-বি বা সি বাসে উঠলে আমতলী মোড়ে নেমে সেখান থেকে হেঁটে বা টেম্পুতে করে বা ৬ নাম্বার-এ বাসে উঠে তীতুমীরের গেটে নামা যেতো। ফার্মগেট থেকে তীতুমীরের ভাড়া সম্ভবত ৫০ পয়সা ছিল।

২। সিরিজের প্রথম পর্বের মন্তব্য আলোচনায় এসি বাস নিয়ে কথা হয়েছে।

৩। বিআরটিসি বাসের আগের স্টাফরা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরতেন। তারা ছিলেন বিআরটিসি'র স্টাফ, তাদের চাকুরী ছিল রাজস্ব খাতে। এখনকার বিআরটিসি বাসের স্টাফরা থার্ড পার্টির। সুতরাং বাসের আচরণে, কর্মীদের ব্যবহারে পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক। আমিও স্বীকার করি, আগের বিআরটিসি বাসের স্টাফদের ব্যবহার এখনকার তুলনায় ভালো ছিল।

৪। সত্তরের দশকে ঢাকার বিআরটিসি বাসের প্রধান আকর্ষণ ছিল দোতলা বাসের দোতলাতে চড়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা যাওয়া। তখন মিরপুর ছিল লালমাটির রাস্তাওয়ালা, গাছপালায় ঢাকা, নিরিবিলি রাস্তার আর সুন্দর সব বাড়ির এক চমৎকার উপশহর। রবিবার সকালে লোকজন সপরিবারে বিআরটিসি বাসে চড়ে চিড়িয়াখানা, শাহ্‌ আলী'র মাজার, রপ্তানী মেলা দেখতে যেতেন। সন্ধ্যায় তারা নকুল দানা, রঙিন কলস, ছোট আকারের গায়ে মাখা সাবান, বিশাল আকারের দেয়াশলাই, কাচের বক, কাচের রকেট, বাঁশের বাংলো, কাঠের বলাকা এমনসব অদরকারী জিনিস কিনে ভুট্টা পোড়া আর হাওয়াই মেঠাই খেতে খেতে ঘরে ফিরতেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি's picture

হা হা হা -- ৪ নম্বরটা দারুন লাগল। হ্যাঁ, এইরকমই কিছু ছিল। ভাল মনে নেই এই অংশটা, তবে বাঁশের বাংলোটা মনে পড়ছে।
আপনার কমেন্টটা পড়তে পড়তে একটা ফর্মুলা মাথায় আসলো হঠাৎঃ আমাদের (বাংলাদেশিদের) সামষ্টিক জীবনে অতীত+বর্তমান+ভবিষ্যৎ = স্বপ্ন+বাস্তব+আতঙ্ক। অতীতটা স্বপ্নের মতো, বর্তমানটা কঠিন বিশৃঙ্খল বেদিশা অর্থহীণ বাস্তব, আর ভবিষ্যৎ এক অজানা আতঙ্ক!

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

ছবি আঁকতে না পারার দুঃখ আমাকে প্রায়ই তাড়িত করে। আমি ছবি আঁকতে পারলে এমনসব বিষয়গুলো এঁকে রাখতাম। শুধু লিখে এসবের ডকুমেন্টেশন হয় না।

দুঃস্বপ্নের মতো অতীত + মোটামুটি নিঃশ্বাস নেবার মতো বর্তমান + অজ্ঞাত ভবিষ্যত ----> এই প্রকার সূত্রের জীবনও আমাদের খুব চেনা। তবে গত কয়েক বছরে আমি নিকটজনদের থেকে শুরু করে স্বল্প পরিচিত মানুষদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি। খুব খুব অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবাই বলেছেন - অবস্থা আগে খুব যে ভালো ছিল তা নয়, তবে এখনকার মতো এতো ভয়াবহ ছিল না। ভবিষ্যতের প্রশ্নে তারা সবাই চরম আতঙ্কগ্রস্থ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নজমুল আলবাব's picture

যথারিতি চমৎকার আলোচনা।

ঢাকার বাস আমার জন্য ভয়ঙ্কর বিষয়। হাতে গুনা দু-একদিন চড়েছি এবং অবশ্যই সাথে কোন ঢাকার নাগরিক ছিলেন। রোট সমস্যাতো ছিলই, সাথে ভীড়, গরু ছাগল চিনে লাইসেন্স পাওয়া ড্রাইভার... ভয়ের নানা উপসর্গ।

সিলেটে ওয়ান ইলেভেনের সময় স্থানীয় সেনা শাসকের ছত্র ছায়ায় বাস সার্ভিস চালু হয়েছিলো। হাপিস হয়ে গেছে।

ঢাকার বাসে নারী নিপিড়ন ভয়ঙ্কর ভাবে বাড়ছে।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.