বান্ধব

মণিকা রশিদ's picture
Submitted by Monika Rashid on Sun, 23/01/2011 - 9:19am
Categories:

নিজের বাড়িতে জ্ঞানদা দেবী বড় একা ছিলেন। বাড়ি বলতে তার টিনের চালের ছোট্ট ঘরটি ছাড়াও পেছনের ফল ফলাদির বাগান, ধানক্ষেত, পাড় বাঁধানো কালো পুকুর, তিনটা গাই, একটা বলদ। ঘরের সামনা সামনি স্বামীর সমাধিতে ছেলেদের বানিয়ে দেয়া স্তম্ভ। একা একাই বাড়িময় ঘুরে বেড়ান।মন্দিরে রাধাগোবিন্দর পূজা শেষ করে পেছনের বাগান থেকে সুপারির খোল কুড়িয়ে এনে রান্নাঘরে জমা করেন, পানের বরজে বেড়ে ওঠা নতুন পাতাগুলোর গায়ে হাত বোলান; লোক ডাকিয়ে আম গাছের মরা ডাল কাটান, বহুবর্ষী নিষ্ফলা গাব গাছটিকে বলেন, “তুই তো বাঁজা! তোর ফল ধরবার আগে আমার দশটা পুতির জন্ম অইবে!” মাঝে মাঝে লোকজন না থাকলে নারকেল গাছ দিয়ে বানানো নদীর ঘাটে হাঁটু অবধি ধূতি তুলে দুই পা জলে ভিজিয়ে গুনগুন করে গান ধরেন- 'দীনবন্ধু, ব্রজের রাখাল… '। এ সবই এখন থেকে সাতাশ বছর আগের কথা। তার নির্জন জীবনে সাতাশ বছর আগে একটি পরিবর্তন এসেছিল। একজন বন্ধু হয়েছিলো তাঁর।

ছোটর বউ তখন আবার পোয়াতি। বরিশালে তার বাসায় গিয়ে জ্ঞানদা আকাশ থেকে পড়লেন, ‘এ বউ তো দেখি খালি অফিস করে আর বাসায় ফিরে গদিয়ালা চেয়ারে ঠেস দিয়া মোচড়ায়, তার নাকি খালি শরীর খারাপ, ক্লান্ত লাগে! পোয়াতি কি আমরা হইনাই? এদের আদিখ্যেতা দেখে আর বাঁচি না! জোড়া বছরে এপিঠ ওপিঠ কইরা দুই জায়ে বিয়াই নাই? তাতে কি ধান ভানা থেকে চৈত সংক্রান্তির দুইশ মাইনষের রান্ধা কিছু বাদ গেছে!’

জ্ঞানদার মায়া লাগে ছোটর প্রথম মেয়েটার অযত্ন দেখে। ‘আহারে! তোর লেহাপড়া, মরার চাকরী তো ঠিকই চলতেছে-, দুই আঙ্গুল মেয়েরে রোজ রোজ খিচুড়ি খাওয়াস!’ ছোট খোকা তখন ঘাড় ত্যাড়া করে বলেছিল,’ ওর পড়াশুনা আছে! স্কুল আছে!’ জ্ঞানদা ছেলের কথা পাত্তা না দিয়েই বলেছিলেন, ‘ওখানে কি স্কুল নাই? আর আমি কি মুখ্যু নাকি? শতকিয়া, কড়াকিয়া পড়ছি, বাংলা বই পড়তে পারি, সংষ্কৃত জানি, কী অপমান ছেলে হইয়া মায়েরে!’ নাতনীকে তিনি প্রায় জোর করে নিয়ে এসেছিলেন সঙ্গে।

নাতনীর সাথে নৌকায় বসেই ভাব হয়ে গেল। জ্ঞানদা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিলেন, মেয়ে কী করে সারাদিন, কী খায়, মায়ে আদর করে কি-না, বাপে ঠ্যাঙ্গায় কি-না, কাজের মেয়েটা কু-কথা শেখায় কি-না; স্কুলে সে কী কী শিখেছে, সাতের সাথে বারো যোগ করলে কত হয় তা জানে কি-না।

স্বামীর মৃত্যুর পর এই প্রথম তার জীবনে অন্যরকম ছন্দ আসে; ছয় বছরের মেয়েকে তিনি দুধকলা মেখে হাতে তুলে ভাত খাওয়ান, দুপুর বেলা স্কুল থেকে নিয়ে এসে ধুন্দলের খোসায় গা ডলে স্নান করান, স্নানের পর রোদ্দুরে বসিয়ে গামছা দিয়ে চেপে চেপে তার মাথার লম্বা চুল শুকান। লাল ফিতেয় সেই এলোমেলো চুল বাঁধেন। এই মেয়ের ছন্নছাড়া সোজাসোজা চুল; জ্ঞানদা সবরকমের চেষ্টা করেন চুলে কোঁকড়া ভাব আনার। কপালের মাঝখানে বড় করে কাজলের টিপ এঁকে দেন, কালো কাজলে চোখ সাজিয়ে চোখের মণির বাদামি ভাব দূর করতে চান, বাদামি চোখ বড় অস্বস্তিকর। বাদামি চোখের মেয়েদের ভাগ্যে বড় কান্না লেখা থাকে! সন্ধ্যে বেলায় মেয়েকে পড়তে বসান। গরমে বাইরের চুলায় জ্ঞানদা রান্না করেন, মেয়ে তার পাশে বসে হারিকেনের আলোয় সুর করে বই পড়ে,
‘ফুটফুটে জ্যোৎস্নায়-
জেগে শুনি বিছানায়-
বনে কারা গান গায়-
ঝিমিঝিমি ঝুমঝুম!’
জ্ঞানদা বললেন, “সোনা দাদু, মন দিয়া পড়। পড়াশুনা হইল গিয়া নিজের জিনিস। সারাজীবন লগে লগে থাকে।‘

আর রাত্রিবেলা বসে তাদের দু’জনের গল্পের আসর। নাতনীর চুলের গোড়ায় বিলি কেটে কেটে ঠাকুমা রাধাকৃষ্ণের গল্প শোনান।
- কেষ্ট তো আছিল বাউরা একটা। আইজ এই গোপিনীর ঘরে তো কাল ওই গোপিনীর ঘরে...
মেয়ে বলেঃ কেনো গো ঠাকুমা, তুমিই না কইছ তারা সবাই কৃষ্ণকে ভালোবাসত!
- ভালবাসলেই যাওন লাগবে?চরিত্র আছিল না ওইটার!
- চরিত্র কি গো?
জ্ঞানদা স্বগতোক্তির মত করে বলেন, “চরিত্র কী, বড় অইলে বুঝবি! আমি এহন শত বুঝাইলেও বুঝবি না।”

একাদশীর দীর্ঘ উপবাস কাটিয়ে জ্ঞানদা উঠোনে বসে বসে আকাশের তারা গুনতেন আর বলতেন, “পুন্নিমা যে কবে আইবে!’ পূর্ণিমার জ্যোৎস্নার জন্যে তাঁর প্রাণ কাঁদত। পূর্ণিমা এলেই নাতনীর হাত ধরে বাড়ির বাইরে হাঁটতে বেরোতেন আধো অন্ধকার বাগানের পথ ধরে। ঘন পাতায় আকাশ ঢাকা গাছেদের বাদামি গায়ে চাঁদের চোরা আলো এসে মায়াময় ছায়াচিত্র আঁকত। জ্ঞানদা সেই চিত্রকল্পের দিকে আঙুল তুলে বলতেন, “এইটা যজ্ঞ্যবল্ক, ওইটা মৈত্রেয়ী!” ছয় বছরের মেয়ে কিছুই দেখতে পেতনা তার; আলো অন্ধকারের অদ্ভুত খেলায় ভয়ে তার লোমকূপ দাঁড়িয়ে যেত। শর শর করে শুকনো পাতার ওপর দিয়ে সাপ চলে গেলে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যেত সে। জ্ঞানদা বলতেন, “ডরাস ক্যান? ওরা কিচ্ছু করবে না। পুন্নিমা দেখতে বাইরে আইছে!” হেঁটে হেঁটে নদীর পারে এসে জ্ঞানদা হাঁটু অবধি ধূতি তুলে জলে পা ডুবিয়ে বসতেন। নাতনীকে বসাতেন নিজের কোলে। জলের গায়ে দুজনের পা ছন্দ তুলতো ছপছপ ছপছপ! মধ্য রাতে নদীতে শোঁ শোঁ জোয়ার এলে ছয় বছরের মেয়ে বলতঃ ভয় করে ঠাকুমা!

- ওইটা তো নদীর গান, চোখ বন্ধ কইরা শোন!
নদীর গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ত মেয়েটি। সকাল হত তার মন্দিরার তালে তালে গাওয়া ঠাকুমার কীর্তনে; পাখির ডাকে, ধূপের গন্ধে, প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোয়।

বছর ঘোরার আগেই নবান্নের মাসে জ্ঞানদার বাড়িতে উৎসব শুরু হয়। বরিশাল থেকে আসে তার ছোট ছেলে, বর্ধমান থেকে আসে বড় ছেলে আর তার সংসার, কলিকাতার পলতা থেকে তার একমাত্র মেয়ে আসে একপাল আত্মীয় সমেত। সারা বাড়ি জুড়ে ধানের গন্ধ, ধানের শীষ না চেনা শহুরে ছেলেমেয়েদের শরীর জ্বলে খড়-নাড়ার স্পর্শে। বাড়ি ভর্তি কোলাহলের মধ্যে তার দুই ছেলে, ছেলে-বউ, মেয়ে-জামাই জ্ঞানদার চারপাশ জুড়ে বসে বরিশালের, বর্ধমানের, কলিকাতার গল্প বলে। আকাশছোঁয়া বিপণি বিতানের গল্প বলে, রিকশার গল্প বলে; এম্বাসডার গাড়ির গল্প বলে।

বড় ছেলে বলে, “মা, আমার কাছে এসে থাকো না! পল্লবী খুব ভালো মেয়ে, তোমার অযত্ন হবে না!”
ছোট ছেলে অভিযোগ করে, “আমি তো প্রত্যেক মাসে দুইবার করে কই, কথা শোনে নাকি!”
পলতা থেকে আসা মেয়ে বলে, “তুমি একা একা ক্যানো থাকো মা! আমার বাড়িতে চলো। আমি অফিসে গেলে বকুলকে দেখার কেউ থাকে না, কাজের মেয়েগুলো কি শেখায়, কি খাওয়ায়, কে জানে!”
জ্ঞানদা গম্ভীর মুখে বলেন, “আমি কোনোহানে যামু না, এই বাড়ি দেখবে কেডা?”

জ্ঞানদা কোথাও যেতে চান না। তার ধানিজমি, পানের বরজ, তুলসী গাছ, সুপারি আমের বাগান, দুধেল গাই-তেজী বলদ, লাউ-কুমড়ার মাচা, ডালিমের ফুল- এসব কে দেখবে! মাটির দিকে তাকিয়ে কাউকে না শোনাবার মত বিড়বিড় করেন, “আমি এহানে ভালো আছি, সোনা দাদু আর আমি!” না শোনাতে চাওয়া কথা কিভাবে যেন সবাই শুনতে পায়। তিন ছেলে মেয়ে, পুত্রবধুরা, জামাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, একে অন্যের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর সব চোখ গিয়ে স্থির হয় বড় ছেলের ওপর। বড় ছেলে সংকোচে ভরা বিনীত স্বরে বলে, “তুমি যখন যাবেই না মা, ওকে যেতে দাও। ওর তো একটা ভবিষ্যৎ আছে- এখানে থাকলে তো...”

জ্ঞানদা চমকে ওঠেন, “ক্যান? এইখানে তো ও স্কুলে যায়, বিপিন মাস্টার পড়ায়, মাস্টার অনেক ভালো জানে, কত বই পড়ছে! সন্ধ্যাকালে অরে আমি নিজে পড়াই...শতকিয়া কড়াকিয়া...”

বড়ছেলে বলে, “এটা তো মা যথেষ্ঠ নয়, পড়াশোনার ধরণ বদলাচ্ছে, তাছাড়া ছোটর ইচ্ছে ওকে ভালো মাস্টার রেখে গান শেখাবে। এইখানে, গ্রামের মধ্যে তো তা হবে না মা!”
জ্ঞানদা আবার চমকে ওঠেন, কোলে বসা তার সোনা দাদু তাকে জলে ভাসা গাছের ডালের মতন শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকে নিঃশব্দে।

শেষ আশ্রয় হিসেবে তিনি আবার বলেন, “বরিশালে অর খাওন দাওন ভালো হবে না। বাড়ন্ত শরীর! বউর ছোট বাচ্চা, চাকরি; দেখবে কেডা?”

জ্ঞানদাদেবীর ছোট ছেলের বউ এবার প্রথম কথা বলে, তার দুই চোখে ছলছল করে অশ্রু, কান্নার ধাক্কায় বুঁজে বুঁজে আসা কন্ঠে সে মৃদু স্বরে বলে, “আমার খুব মন পোড়ে ওর জন্য, ওরে যেতে দেন মা!”
সে কথায় কেঁপে ওঠেন জ্ঞানদা, এই কান্নার কোনো জবাব খুঁজে পওয়া সম্ভব হয় না তাঁর পক্ষে। কারো পক্ষেই সম্ভব হয় না। অনেকদিন পরে আয়োজিত পারিবারিক সভা নীরব হয়ে যায় সহসা।

নবান্নের কটা দিন জ্ঞানদা নাতনীকে বলেন মায়ের কাছে শুতে, সবাই ঘুমিয়ে গেলে মেয়ে চুপি চুপি চলে আসে তার ঘরে; সারাদিন পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায় আঁচলের প্রান্ত শক্ত করে ধরে রেখে, এই পৃথিবীর আর সব মানুষ তার কাছে অজানা দ্বীপ! দুজনের কেউই আসন্ন বিচ্ছেদের কথা বলে না, দুজনের কেউ একে অপরের চোখের দিকে তাকায় না। এই ব্যস্ততায় দুজনের ব্যক্তিগত গল্প হয় না। কোনোদিনই হয় না আর।

পরিশিষ্টঃ
কার্তিক মাসের এক কাকডাকা ভোরে জ্ঞানদা দেবীর দুই ছেলে আর এক মেয়ের সংসার ছঁই তোলা নৌকায় উঠে বসে। ঘাটের ওপর তার সাত বছরের নাতনী গাছের মত গোঁজ হয়ে ঠাকুমার গা ঘেঁসে দাঁড়িয়েই থাকে। জ্ঞানদা তাকে সামনের দিকে ঠেলে দেন, “যা, নৌকায় ওঠ, যা!” সে নড়ে না। জ্ঞানদা এবার ধাক্কা দিয়ে নড়াতে চেষ্টা করেন, সে একটুও নড়ে না। আরো শক্ত করে আঁচলের প্রান্ত আঁকড়ে ধরে। আরো জোর করে গায়ের সাথে লেপ্টে থাকে! নৌকার ভেতর থেকে তার মায়ের চিকন স্বরের কান্না বাইরের বাতাসে এসে লাগে, সেদিকে তাকিয়ে জ্ঞানদা নাতনীকে পাঁজা কোল করে নৌকার পাটাতনে ধপ করে বসিয়ে দিয়ে নিজের আঁচল টেনে নিয়ে দ্রুত ঘাটে উঠে দাঁড়ান। সূর্য ওঠার তখনো অনেক দেরী। নদীর জলে ভাটার টান লাগে। অজস্র পাখির ডাক প্রতিধ্বনিত হয় বাতাসে, গাছের ডালে, জলে। দুটি ছঁই তোলা নৌকা নদীর বুকের মধ্যে ঠেলে দিয়ে বৈঠা বাওয়া শুরু করে মাঝিরা। এর একটি নৌকায় ছঁইয়ের বাইরে সাত বছরের একটি মেয়ে দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ ডুবিয়ে তীরের দিকে নিঃসহায়ের মত তাকিয়েই থাকে। শাদা শাড়ি পরা এক বৃদ্ধা তীরের জঙ্গল, ঝোপ-ঝাড় উপেক্ষা করে ঝড়ের মত হাঁটছে, চোখের জলে ঝাপসা তার দৃষ্টি হাঁটুতে মুখ গোঁজা মেয়েটির দিকে। এই প্রথম মাথা থেকে ঘোমটা সরে গিয়ে শাদা চুলগুলো বাতাসে ওড়ে। তীর ছেড়ে নৌকা বিষখালির বুকের গভীরে প্রবেশ করতে থাকে; হাঁটুতে মুখ গোঁজা মেয়েটি দেখতে পায় একগুচ্ছ শাদা পালক নদীর তীর ধরে ছুটছে- গন্তব্যহীন-দিশাহীনের মত!


Comments

অপছন্দনীয়'s picture

গল্পটা ভালো লাগলো। হাসি

খানিকটা কাকতালীয় ব্যাপার যে জ্ঞানদা নামটা খুব একটা শোনা যায়না, কিন্তু বরিশাল শহরে সত্যিই একজন জ্ঞানদা ছিলেন - কলেজ রোড থেকে কলেজ রো-তে ঢুকে প্রথম মোড়ে একটা ভাঙাচোরা কাঠের বাড়িতে থাকতেন। অনেক আগের কথা - সেই ১৯৮৮। এখনো আছেন কিনা জানিনা।

মণিকা রশিদ's picture

পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। আপনি বরিশালের কোন অঞ্চলের কথা বলছেন?

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অপছন্দনীয়'s picture

বরিশাল শহর - কীর্তনখোলার পাড়ে হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

১. পড়ে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম!

২. ‘ফুটফুটে জ্যোৎস্নায়-জেগে শুনি বিছানায়-বনে কারা গান গায়-ঝিমিঝিমি ঝুমঝুম!’-এই কবিতাটার শুরুটা যেন কী ছিল? কিছুতেই মনে করতে পারছিনা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মণিকা রশিদ's picture

ছড়াটা মোহিতলাল মজুমদারের। শুরুটা এরকমই যেটুকু মনে আছে বলিঃ
‘ফুটফুটে জ্যোৎস্নায়-
জেগে শুনি বিছানায়-
বনে কারা গান গায়
-ঝিমিঝিমি ঝুমঝুম!
চাও কেন পিটিপিটি
উঠে পড়-লক্ষ্মীটি
চাঁদ চায় মিটিমিটি
বনভূমি নিঝঝুম।

ফাল্গুনে বনে বনে
পরীরা যে ফুলবনে
চলে এসো ভাই বোনে
চোখে কেন ঘুম ঘুম?

জানালায় কান পেতে
দেখি শাদা জ্যোৎস্না
পাতাগুলো হলো কী এ
রূপালী রোশনা!

ওগো শোন কান পেতে
মোরা আছি গানে মেতে
ছোট ছোট লন্ঠণ
গায়ে গায়ে ঠন্‌ঠন্‌--

ঘোর ঘোর এই আলো
আবছায়া বাসি ভালো
ঘুরে উড়ে গান গাই
খুশ দিলে হুঁশ নাই!'

এই ছড়া পড়ে আমরা দুই বোন একবার, হারিকেন নিয়ে সত্যি সত্যি মাঝরাতে বনের ভিতর চলে গেছিলাম পরী দেখার আশায়...।

পড়েছেন জেনে আনন্দ হলো, পাণ্ডব দা!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

নিবিড়'s picture
মণিকা রশিদ's picture

ধন্যবাদ!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

মণিকা রশিদ's picture

আচ্ছা, এই ইমোটার মানে কি?( জানিনা বলে আপ্রস্তুত ভাব নিয়ে)

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

তিথীডোর's picture

চলুক চলুক চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মণিকা রশিদ's picture

হাসি

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

সুহান রিজওয়ান's picture

খুবই চমৎকার একটা গল্প।

Quote:
এই পৃথিবীর আর সব মানুষ তার কাছে অজানা দ্বীপ!

মণিকা রশিদ's picture

ধন্যবাদ, সুহান! আপনি মনে হয় এই প্রথম আমার কোনো লেখায় মন্তব্য করলেন।

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক's picture

এতো Detailed চরিত্র শুধু বিভূতিভূষণ এর লেখাতে পড়েছি মনে হয়।আপনার লেখাতে চারিদিকের বর্ণনা এককথায় অসাধারণ হাততালি

আরিফিন সন্ধি

মণিকা রশিদ's picture

ধন্যবাদ, আরিফিন!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

শাহেনশাহ সিমন's picture

অসাধারন!!! চলুক

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

মণিকা রশিদ's picture

হাসি

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

পান্থ রহমান রেজা's picture

গল্পের মূল চরিত্র জ্ঞানদা দেবী, তার নির্মাণ খুব সুন্দর হয়েছে।
পরিশিষ্টের আগে

Quote:
এই ব্যস্ততায় দুজনের ব্যক্তিগত গল্প হয় না। কোনোদিনই হয় না আর।

এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গল্প শেষ হয়ে গেছে। পরিশিষ্টটুকু না দিলেও পারতেন।

মণিকা রশিদ's picture

পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো, পান্থ। সাজেশান মনে থাকবে।

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক's picture

ভালো লাগল কিন্তু মা এবং দাদী -দুজনের জন্যই খারাপ লাগছে।দাদী একা হয়ে গেল কিন্তু মায়ের সাথেও তো দূরত্ব তৈরি হল।সেটাও কম কষ্টের নয়।

ইশরাত

মণিকা রশিদ's picture

সেই! পড়েছেন জেনে ভাল্লাগল, ইশরাত। ভালো থাকবেন।

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

রানা মেহের's picture

কীযে সুন্দর একটা গল্প পড়লাম।
একটা চমতকার সিনেমা হয় এটা নিয়ে।
রুবাইয়াত আপারা কেন যে এই থিম গুলো দেখেন না।

ঝিমিঝিমি ঝুমঝুম ছড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মণিকা রশিদ's picture

আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো, রানা। ছড়াটার কয়েক লাইন ভুলে গেছি...

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অদ্রোহ's picture

ভাষাটা গল্পের নির্মাণে আমার কাছে খুবই যুতসই ঠেকল। আর গল্পটাও দারুণ ছিমছাম, একদম একটানে পড়লাম।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

মণিকা রশিদ's picture

ধন্যবাদ, অদ্রোহ!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

তানবীরা's picture

মনি, পড়ছিলাম আর মনে হলো চোখের ওপর দেখতে পেলাম সব। তোমার গল্পের হাতও দারুন।

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

মণিকা রশিদ's picture

হাসি

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

মুস্তাফিজ's picture

খুবই চমৎকার গল্প। পড়তে যেয়ে মা'র কথা মনে এলো, নাতীদের ধরে রাখতে পারেন না বলে আবদার করেন মাঝে মাঝে বাড়ী যেতে, যখন যেতে পারিনা তখন উনি নিজেই ফোন করেন, আমার ছেলের সাথে গল্প করেন।

...........................
Every Picture Tells a Story

মণিকা রশিদ's picture

ধন্যবাদ, মুস্তাফিজ ভাই।

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

দ্রোহী's picture

বাহ!

চমৎকার লাগলো গল্পটা। মুগ্ধ হলাম।

মণিকা রশিদ's picture

পড়েছেন জেনে আনন্দ পেলাম। ধন্যবাদ!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক's picture

আজকে আমার দিনটা ভালো যাবে। ঘুম থেকে উঠেই সব ভালো ভালো গল্প পড়ছি।

--আদু ভাই

মণিকা রশিদ's picture

হাসি

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

বইখাতা's picture

গল্পটা খুব ভাল লেগেছে। খুবই ভাল লেগেছে।

মণিকা রশিদ's picture

ধন্যবাদ, বইখাতা!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক's picture

চরম!!!

-অতীত

মণিকা রশিদ's picture

চরম?

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার's picture

খুব চমৎকার লাগলো আপু। উপমা আর বর্ণনা দারুণ।

Quote:
হাঁটুতে মুখ গোঁজা মেয়েটি দেখতে পায় একগুচ্ছ শাদা পালক নদীর তীর ধরে ছুটছে- গন্তব্যহীন-দিশাহীনের মত!

ছড়াটা মনে পড়ছে না আগে কখনো পড়েছি। ঐটার জন্যেও ধন্যবাদ।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

মণিকা রশিদ's picture

ধন্যবাদ! ছড়াটা আমরা পড়েছিলাম ক্লাস ফাইভের চয়নিকা বইএ।

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

চয়নিকার কথা বলাতে আরেকটা কবিতার কথা মনে হলো। আবদার রশীদের লেখা, কবিতার নাম মনে নেই, কবিতাও পুরোটা মনে নেই।

এইসব লাল ফিতে রোদ্দুর
ওইসব নীলিম সমুদ্দুর
পাড়ি দিয়ে দূরদেশে
হয়তো চাঁদের দেশে
চলে যাবে সে-ও
যেখানেতে মাস্টার, বাবা, আপা
বকবেনা কেউ
বকুক না, চাঁদ ছাড়া
সব্বার-সব্বার সাথে আড়ি তার


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আনন্দী কল্যাণ's picture

অপূর্ব গল্প।

মণিকা রশিদ's picture

অনেক ধন্যবাদ!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

আশরাফ মাহমুদ's picture
জোহরা ফেরদৌসী's picture

অসাধারন । মনিকা, আপনার লেখার হাতটি অনেক শক্তিশালী । আরো লিখুন ।

সচলায়তন এখন অতিথিদেরকেও ভোট দিতে দিচ্ছে । আপনার লেখায় পাঁচ তারকা দিতে পেরে খুব ভাল লাগল ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

Asad Raihan's picture

Wish I knew how to write in Bangla to say asadaran to the writer. So compact but detailed in narrating a story longer than life. I think it encouraged me to think in a positive way. I am better off than Ganada Devi. Thanks a lot.

মণিকা রশিদ's picture

Asad Raihan,
http://www.omicronlab.com/
বাংলা লেখার জন্যে এই লিঙ্কটা দেখতে পারেন। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

প্রীতি গাঙ্গুলী's picture

অসাধারন লাগল।

এক লহমা's picture

গুরু গুরু

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.