লোহিত খাঁড়ি আর কৃষ্ণ নদীর গল্প

অবনীল's picture
Submitted by naved on Sun, 25/11/2018 - 8:38pm
Categories:

- “লাল পানির নদী দেখেছ কখনো" ? আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো নিক। মুখে মিটিমিটি হাসি।
- “না ত। এ নদীর পানি খেলে কি নেশা হবে নাকি ? পাল্টা প্রশ্ন করি আমি।
- "আরে ধুর। এ পানি সেই পানি না।" হাত নেড়ে কথাটা উড়িয়ে দেয় নিক। খানিকটা আশাহত অবার ভান করি আমি।
- “ও। তাহলে পানি লাল হবার কারন কি ? লোহার আধিক্য না লাল মাটির মিশেল ?”
নেতিবাচক ভাবে মাথা নাড়ে নিক। জবাব দেয় না। মিটিমিটি হাসে।
- “রেড ক্রিকের পাড়ে গেলেই জানতে পারবে।" রহস্য করার চেষ্টা করে সে।
- “খান্ট ওয়েট ঠু গেট দেয়ার।" আমিও তাল দেই।

ট্যুর পুর্ব মিটিং এ বসেছি আমরা কজন আউটডোর রিক্রিয়েশান সেন্টার (সংক্ষেপে রেক সেন্টার) এর ইকুইপমেট স্টোর রুমে। চারিদিকে ক্যানু, তাবু, লাইফ জ্যাকেট, হাইকিং ব্যাগ ইত্যাদি হাবিজাবি টাল করে থরে থরে সাজিয়ে রাখা। এর মধ্যে মাঝে ফাকা জায়গায় মেঝেতে গোল হয়ে বসেছি আমরা ন'জন। নিক হচ্ছে আমাদের গাইড। তার সাথে সহকারী গাইড হিসেবে আছি কুড়ি বছর বয়সি স্বর্ণকেশী সুন্দরী তরুনী তেরেজিয়া।( না তেরেসা লিখতে গিয়ে ভুল করিনি।) আর সহযাত্রীদের মধ্যে আছে চিনা তরুনী ইফেং । সে এখানে ফার্মাকোলজিতে পিএইচডি করছে। দারুন এডভেঞ্চারপ্রিয় এক মেয়ে। কদিন আগেই টাফ মাডার নামে এক অবস্টাকল রেস শেষ করে এসছে পিটসবার্গ থেকে। আরো আছে বিবাহিত যুগল আয়ান আর এনি। আয়ান লাইব্রেরীতে চাকরীরত জানতে পারলাম। ইংরেজিতে যাকে বলে নার্ড সেই গোত্রীয়। ফিলসফি তে পিএইচডি। এছাড়া দু'জন আন্ডারগ্রাড ছাত্রী, আনুশকা আর মেই । সবশেষে বিশালদেহী যুবক এন্থনী। কথা প্রসংগে জানালো এইসব হাইকিং-ক্যাম্পিং তার রেগুলার করা হয়। হাবভাবে বুঝিয়ে দিল এসব জংগল-ফংগলে রাত কাটানো তার কাছে নস্যি ।

যে সময়ের কথা বলছি সেটা সেপ্টেম্বারের মাঝামাঝি। পূর্ব উপকূল দিয়ে হারিকেন ফ্লোরেন্সের আগমন বার্তা জানিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে রেডিও-টিভি-ইন্টারনেটে। এরই মধ্যে রওনা দেয়বার জন্য তৈরী হচ্ছি ডলি সডসের উদ্দেশ্যে। বৃষ্টিস্নাত একটা রাত কাটাবো জংগলের মধ্যে। নিক জানালো এরি মধ্যে একজন সাইন আপ করে টেকাটুকা দিয়েও আসেনি। তারমানে আমরা ক'জন একটু বেশি পাগল। না হলে এই দূর্যোগের সময় জংগলে যায় ? গাইডদের সাথে আলোচনা করে স্টোর থেকে আমাদের সাইজমতো হাইকিং ব্যাগ , জুতো , হাইকিং লাঠি, এসব নিয়ে নিলাম। বাসায় ফিরে ব্যাগে সিন্থেটিক কাপড়-চোপড়, ক্যামেরা, ডায়েরী আরো টুকটাক জিনিস্পাতি ভরে তাড়াতাড়ি ঘুম দিলাম। পরদিন চলে আসতে হবে একই জায়গায়।

small
ছবিঃ যাত্রার জন্য গোছগাছ করে নিলাম সবকিছু।

পরদিন সকালে এসে দেখি নিক আর টেরেজিয়া আরো জিনিসপত্র টাল করে রেখেছে। স্টোভ, ক্যানিস্টার, রান্নার পাতিল, তাবুর ব্যাগ, খাবার আরো হাবিজাবি। ভাগেযোগে যা পারি সব ব্যাগে ভরে নিয়ে মিনিভ্যানের পিছনে লাগানো ট্রেইলারে তুলে দিয়ে ভ্যানে উঠে পড়লাম সবাই। মরগানটাউন থেকে আড়াই ঘন্টার ড্রাইভ ডলি সডস। এ পর্যায় এসে আগ্রহী পাঠক নিশ্চই অধৈয্য হয়ে উঠেছেন ? আরে ভাই, ডলি সডস জায়গাটা কিরাম ? আসলে জায়গাটা এত বৈচিত্রময় এক বাক্যে বুঝিয়ে দেওয়া কঠিন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই থেকে প্রায় পাচ হাজার ফিট উচুতে অবস্থিত পাথুরে এক জায়গা, মননগালেহা ন্যাশনাল ফরেস্টের একাংশে প্রায় ১৭ হাজার একর জায়গা জুড়ে এর অবস্থান। কি নেই সেখানে। তীব্রবাতাসের সাথে প্রতিনয়ত যুদ্ধ করতে করতে বেকেচুড়ে যাওয়া গাছের গুড়ি, ক্ষয়ে যাওয়া উচু উচু পাথরের চাঁই, কাটাঝোপে পূর্ন বিস্তির্ন অনুর্বর জমি, আবার আছে মানুষ্যসৃষ্ট বিশাল ঘাসময় প্রান্তর। এর মূল আকর্ষন হচ্ছে , যার জন্য প্রতি বসন্তে প্রকৃতিপ্রেমিক পর্যটকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে এখানে ক্যাম্পিং করার জন্য, তা হলো অবিশ্বাস্য সুন্দর বর্নিল প্রান্তর অবলোকন করা যায় এসময়। ১৮শ শতকের দিকে ডাহলেস নামক এক জার্মান পরিবারের দখলে ছিলো এই জায়গা, সেই থেকে নাম হয়েছে ডলি। আর সডস একটা আঞ্চলিক শব্দ, যার মানে হলো পাহাড়ের উপরে অবস্থিত বিস্তির্ন উম্মুক্ত ঘাসভূমি। নেট থেকে একটা ছবি দিয়ে দিলাম নিচে ধারনা দেবার জন্য।

small
ছবিঃ বসন্ত বর্ণালীতে সজ্জিত ডলি সডস। (ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত )

কানান ভ্যালি স্টেট ফরেস্ট আর ব্ল্যাকওয়াটার ফলস পেরিয়ে ডলি সডসের কাছাকাছি আসতেই আকাশে দেখা দিতে লাগলো কালো মেঘের ঘনঘটা। বুঝলাম হারিকেন জোনের ভেতরে চলে এসেছি। দমকা হাওয়া দিয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষতি শুরু হলো। নিক মূল রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলের রাস্তা ধরলো। আমাদের উদ্দেশ্য রেড ক্রিক ট্রেইলের কাছে অবস্থিত লগ কেবিন এর জায়গা। পৌছে রাস্তার পাশে গাড়ী থামিয়ে ট্রেইলার থেকে ব্যাগ নামিয়ে নিলাম সবাই একে একে। রেইন জ্যাকেট নিয়ে নিয়েছিলাম সবাই রেক সেন্টার থেকে, এবার গায়ে চড়িয়ে নিলাম। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে গাড়ির পাশে দাড়িয়ে দুপুরের খাওয়া সারলাম স্যান্ডউইচ দিয়ে।

small
ছবিঃ এখন এমন মেঘ করুক যেন মেঘ ছিঁড়ে কোনদিন চাঁদ উঠতে পারে না।

small
ছবিঃ ডলি সডসে আপ্নাদের আমন্ত্রন।

এবার শুরু হলো অভিযানের মূল পর্ব। গোল হয়ে ঘিরে দাড়ালাম। নিক শুরু করলো তার ব্রিফিং -

- "এবার আমাদের আসল অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। লোকালয় থেকে আমরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। এখান থেকে রেড ক্রিক ট্রেইল ধরে প্রায় মাইল দুই হেটে আমরা পৌছাব ক্যাম্পিং -এর জায়গায়। রেড ক্রিকের পাড়ে। এরপর সেখানে তাবু খাটিয়ে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করা যাবে।" বলা শুরু করলও নিক। ওর চেহারায় বেশি উৎসাহ দেখলাম না। এর কারন যে আকাশের গম্ভীর অবস্থা তা বেশ বোঝা গেল।

- "এসব সরকার অধিকৃত প্রাকৃতিক অঞ্ছলের পরিবশ সংরক্ষনের জন্য কঠোরভাবে 'কোন চিহ্ন রেখে যাবো না' (লিভ নো ট্রেস) এই মুলনীতি মেনে চলা হয়। তাই ময়লা আবর্জনার জন্য আমরা ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছি সেসবে সব ভরে নিয়ে আসতে হবে। আর প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য আমরা সাথে করে এনেছি বেশ কটা পু-কিট।" একটা পু-কিট বের করে এর ভেতরের জিনিস্পাতি বের করে দেখালো। জরুরী কর্ম সারার জন্য সবকিছু তাতে ভরে দেয়া আছে। সাথে আছে গর্ত খোড়ার জন্য একটা ছোট্ট শাবলও । তারপর কি কি পজিশানে মাটিতে কিংবা গাছের গুড়িতে বসে কর্ম সারা যায় তার কয়েকটা নিদর্শন একেবারে ত্রিভঙ্গ মুরারি হয়ে দেখিয়ে দিলো।

small
ছবিঃ রেড ক্রিক ট্রেইল ধরে এগোচ্ছি আমরা।

এবার পিঠে ব্যাগ নিয়ে ট্রেইল ধরে সারিবদ্ধ ভাবে এগোতে লাগলাম সবাই। সবার আগে নিক । হাতে হাইকিং লাঠি নিয়ে নিয়েছি আমিও, বেশ সুবিধা হচ্ছে হাটায়। সরু ট্রেইল চলে গেছে বনের ভেতর দিয়ে। কখনো চড়াই, কখনো উৎরাই। একজায়গায় পথের দুপাশ ভরে ফুটে আছে নাম না জানা বুনো ফুল। চোখে একরকম প্রশান্তি লাগে দেখলে।

small
ছবিঃ পথের দুধারে ফুটে আছে বুনো ফুল।

আরো কিছুদূর হাটার পর সামনে পড়লো ছোট একটা খাড়ি। পাথরের উপর সাবধানে পা দিয়ে পেরোতে লাগলাম আমরা। শ্যাওলা জমে কোনো কোনোটা ভয়ানক পিচ্ছিল। সতর্ক থাকতে হচ্ছে।

small
ছবিঃ "এই পাথরটায় পা দেয়া যায়।" দেখিয়ে দিচ্ছে নিক।

small
ছবিঃ ছোট স্রোতধারা গিয়ে মিশেছে মূল ধারায়।

এরকম বেশ কয়েকটা ছোট ছোট খাঁড়ি পার হবার পর অপর পাড়ে এসে কিছুক্ষন জিরিয়ে নিলাম। তেরেজিয়া ম্যাপ বের করে বুঝিয়ে দিলো আমাদের বর্তমান অবস্থান। ফের শুরু হলো পথচলা।

small
ছবিঃ ম্যাপে দেখে নিচ্ছি আমাদের অবস্থান।

দলের সামনে নিক। কিছুক্ষন পরে হঠাৎ থেমে ঘুরে আমাদের দিকে ফিরে বললো,

-"এখন আমাদের পাহাড় বেয়ে বেশ খানিকটা পথ উপর নিচ করতে হবে। পিঠে জিনিসপত্র বোঝাই ব্যাকপ্যাক নিয়ে চলার সময় এখানে ওনেকেই তাল হারিয়ে ফেলে। তাই সময় নিয়ে আস্তে আস্তে আসো।"

বেশ খানিকখন চড়াই পার হবার পর আবার ঢাল বেয়ে নামা শুরু হলো । সাবধানে ভারী ব্যাগ সামলে নামতে লাগলাম সবাই। ঢালের গোড়ায় এসে চারিদিকে তাকিয়ে দেখি সারি সারি গাছপালার ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে এক টুকরো ঘাসে ছাওয়া জায়গা। কানে ভেসে আসলো বেগমান স্রোতের গর্জন। চলে এসেছি ক্যাম্পিং -এর জায়গায়।

small
ছবিঃ ক্যাম্পগ্রাউন্ডে নেমে আসার আগে কিঞ্চিত ফটোসেশান।

small
ছবিঃ ইফেং নেমে আসছে শেষ অংশ বেয়ে।

এক জায়গায় সব ব্যাগ জড়ো করে এগিয়ে গেলাম রেড ক্রিকের দিকে। গাছের সারি পেরিয়ে বড় বড় পাথরের চাই । আর সেগুলোর ফাক গলে প্রবল গর্জনে বয়ে চলেছে রেড ক্রিক। লাল পানির খাঁড়ি। অপূর্ব এক দৃশ্য। ক্যামেরাটা বের করে কিছুক্ষন রেকর্ড করে নিলাম সেই দৃশ্য।


ভিডিওঃ রেড ক্রিক।

খেয়াল করিনি কখন নিক পাশে এসে দাড়িয়েছে। বললো,

- "আজকে এই স্রোত পার হওয়া সম্ভব না। সাধারনত হাতে হাত ধরে মানবসেতু বানিয়ে এই খাড়ি পার হতে হয়। কিন্তু এখন যা স্রোত তাতে তাও সম্ভব না। আমাদের পরিকল্পনা ছিল খাড়ির ওপারের আউটলুকে যাওয়া। খুবি সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় উচু যায়গা থেকে। তোমাদের কপাল খারাপ এবারে হবে না।"

কি আর করা । ফিরে গিয়ে ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করতে লাগলাম। এখন তাবু খাটানোর পালা। দেখি এইবারের যাত্রায় যে তাবুগুলো খাটানো হলো সেগুলো এপালাচিয়ান ট্রেইলে যে তাবুগুলোতে ছিলাম তার থেকে ভিন্ন। এগুলোতে দরজা-জানালার বালাই নেই। শুধু খুটির উপর তেরপল দিয়ে খাড়া করে রাখা। চারটা তাবু গাড়া হলো। এবার রান্নার জোগাড়যন্ত্র শুরু, তেরিজিয়া দেখি স্প্যাগেটি আর মাংস রান্নার যোগাড়যন্ত্র ক্করে ফেলেছে। নদী থেকে পানি এনে তা দিয়ে ফুটিয়ে নেওয়া হলো। এরি মধ্যে শুরু হলো তোড়জোড়ে বৃষ্টি। এর মধ্যেই রান্না শেষ হলো। সবাই সিন্থেটিক কাপড় পড়ে এসেছি যাতে গায়ে পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। একমাত্র এন্থনি দেখলাম সুতির কাপড় পড়ে ঘুরছে । ঠান্ডা না লেগে যায় না। হলোও তাই কিছুক্ষন পরেই তার শুরু হলো থেকে থেকে হাঁচি।

small
small
ছবিঃ আমাদের রাত্রির অস্থায়ী আবাসন।

খাবার দাবার সেরে এবার আমরা বেরোলাম দ্বিতীয় হাইকিং এ। লাল পানির এই স্রোতধারা আসলে শুধু রেড ক্রিকেই সীমাবদ্ধ নয়। এই এলাকা জুড়ে যত ছোটখাট ঝর্ণা বা জলাশয় আছে সব লাল। কেন ? সে কথায় আসছি পরে। পাথুরে খাল আর চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এগোতে লাগলাম সবাই। ভেজা মাটিতে হাইকিং বুট ছাড়া চলার কথা চিন্তাই করা যায় না। মনে মনে নিজেকে ধন্যবাদ দিলাম রেক সেন্টার থেকে মনে করে নিয়ে নেবার জন্য। সামনে তেরেজিয়া পথ দেখিয়ে চলেছে। বেশ কিছুক্ষন যাত্রার পরে হঠাত বামে ঝোপঝাড় ভেদ করে চোখের সামনে আবির্ভূত হলো অপূর্ব এক ঝর্না। লাল পানির স্রোত বয়ে চলেছে।


ভিডিওঃ নামহীন এক লাল পানির ঝর্না।

- "এই বনাঞ্চলের প্রধান গাছ হলো কনিফেরাস জাতীয় (coniferous) । ব্লাক স্প্রুস গাছের প্রাচুর্য এখানে। এই গাছের পাতা যখন পানিতে ঝরে পড়ে। চা-য়ের মতো পানিকে রাঙিয়ে দেয়।" তেরেজিয়া ব্যাখ্যা করে। ব্ল্যাক স্প্রুস এর পাতা চা-পাতা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় পরে জেনেছি।
- "এই ঝর্নার কোন নাম আছে?" । জিজ্ঞেস করি আমি।
- "না।" জবাব দেয় তেরেজিয়া।
- "তাহলে আমরা নাম দিলাম চা-ঝর্না"। আমি বলি। সে হেসে দেয়।
- "এখানে কাছেই আরেকটা খাড়ি আছে যেটার নাম আসলেই টী ক্রীক বা চায়ের খাড়ি।"
কিছুক্ষন এর পাড়ে বসে এবার ফেরত যাওয়া শুরু করি আমরা। ক্যাম্পে ফিরে সিদ্ধান্ত যেহেতু নদী পার হওইয়া সম্ভব না এবারের যাত্রায় তাই ক্যাম্পে রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালের নাস্তা সেরে ফেরত যাবো গাড়ির উদ্দেশ্যে। এরি মধ্যে বেশ অন্ধকার নেমে এসেছে। সেই সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝরেই ছলেছে। এর মধ্যেই আমরা সবাই মিলে ক্যাম্পফায়ার জ্বালিয়ে ফেললাম। বনের ভেতর বেজায় শীত। আগুন ছাড়া টিকে থাকা মুশকিল। ইফেং এর দেখলাম উৎসাহ নিয়ে আশপাশ থেকে কাঠ জোগাড় করে আনছে কিছুক্ষন পর পর আর আগুন উস্কে দিচ্ছে। না হলে নিভে যেত অনেক আগেই। আমিও চেষ্টা করলাম ওকে সাহায্য করতে। সন্ধ্যা নেমে আসলে রাতের খাবার সেরে নিলাম ক্যাম্পের আগুনে। তারপর শুরু হলো আগুন ঘিরে আড্ডা।

small
ছবিঃ একটু উষ্ণতার জন্য।

হঠাৎ তেরেজিয়া আয়ানকে ফস করে জিজ্ঞেস করে বসলো -
-"তোমার পিএইডি কিসের উপর?" আর যায় কোথায়। ঝাড়া দশ মিনিট শুনতে হলো আয়ানের জ্ঞানতত্ত্ব বিষয়ক ডিসার্টেশনের খুটিনাটি। তেরেজিয়ার মুখ থমথমে। আমি মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করছি। বেটি আর প্রশ্ন করার বিষয় পাইলি না। সারাদিন খাটনি শেষে এই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এসব শুনতে কার ভালো লাগে? ওদিকে এন্থনি দেখি খুব মাথা নেড়ে সব বুঝে ফেলেছে এমন ভাব দেখাচ্ছে। মনে মনে বলি আমার হিন্দি চুলটা বুজছো তুমি। আয়ানের পর্ব শেষ হলে নিক শুরু করলো তার এর আগের ডলি সডসে আসার অভিজ্ঞতা-

- "বেশ কয়েকবার এর আগে আসা হলেও সবচেয়ে ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়েছিলো পড়েছিলাম এইরকম হারিকেনের বিপদবার্তা থাকা অবস্থায় ব্যাকপ্যাকিং-এ এসে। রাতের মধ্যেই রেড ক্রিকের পানি এত বেড়ে গেছিলো যে পুরো ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড পানিতে সয়লাব । ভোর হতেই সিদ্ধান্ত নিলাম আর থাকলে পানিতে ডুবে মরতে হবে। তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নিয়ে রোনা দিলাম গাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু মাঝপথে দেখি খালের পানি বেড়ে গিয়ে ফেরত যাবার পথও বন্ধ হয়ে গেছে। সবসময় ক্যাম্পিং এ গেলে আমাদের কাছে স্যাটেলাইট ফোন থাকে। এবারো আছে। তবে আশা করি ব্যবহার করতে হবে না। যাহোক, তখন ফোন দিলাম অফিসে। কিন্তু কানেকশান পাওয়া যাচ্ছিলো না দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার জন্য। উপায়ান্তর না দেখে উচু জায়গায় উথে পানি নামার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। পানি বাড়তে বাড়তে সৌভাগ্যজনকভাবে দুপুরের দিকে হঠাৎ পানি নেমে যেতে লাগলো। মোটামোটি অগভীর জায়গা খুজে নিয়ে সেখান দিয়ে আমরা পার হয়ে যাই। বড় বাচা বেচে গেছিলাম সে সময়।"

ঘুমানোর তোড়জোড় শুরু হলো। রাতে যদি বের হওয়া লাগে তার জন্য সবার তাবুতে একটা করে ফ্ল্যাশলাইট রাখা হলো। কনকনে ঠান্ডা হলেও একবার স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে শরীরটাকে ঢুকিয়ে চেন টেনে দিলে শরীর বেশ গরম থাকে তাই তেমন সমস্যা হলো না। শুয়ে আছি। তাবুর উপর অনবরত বৃষ্টির ফোটার আঘাতের শব্দ। সেই সাথে তিনদিক থেকে ভেসে আসছে রেড ক্রীকের প্রবল স্রোতের শব্দ। চোখ বন্ধ করে থাকলে মনে হয় যেন মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরছে আর তার থেকে শো শো শব্দ হচ্ছে। এই তাবুতে আছি আমি আর ইফেং। শুয়ে শুয়ে চেয়ে দেখি সে ফ্ল্যাসলাইটের আলো স্লিপিং ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে বই পড়ছে। দারুন পড়ুয়ে মেয়ে ত! ক্যাম্পিং এও পড়ার জন্য মনে করে বই নিয়ে এসেছে। একনাগাড়ে স্রোতের শব্দ শুনতে শুনতে কখন দূচোখ বন্ধ হয়ে গেল জানি না।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। ঘন অন্ধকার। কটা বাজে বোঝার উপায় নেই। ফোনের চার্জ শেষ। তাকিয়ে দেখি ইফেং ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর পাশে রাখা ফ্লাশলাইটটা তুলে নিলাম। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এখনো পড়ে চলেছে। থেমে নেই। তাবু থেকে বেরিয়ে এলাম। প্রকৃতি ডাকিতেছে। কাজ সারতে হবে ক্যাম্পগ্রাউন্ডের একটু বাইরে গিয়ে। ফ্ল্যাশলাইটের আলোর জোর কম। হাত-দুইয়ের বেশী দেখা যায় না। ক্যাম্পের আগুন নিভে গেছে অনেক আগেই। জায়গাটা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেলাম। দুটো আলাদা জায়গায় চারটা তাবু গাড়া হয়েছে। এর মাঝখান দিয়ে চলে গেছে বনের দিকে রাস্তা। দ্বিতীয় ক্যাম্প সাইটের দিকে আগাতে লাগলাম। শহুরে মানুষের পক্ষে জংগলের আঁধার কি তা অনুভব করা মুশকিল। চিন্তা করুন আপনি চোখ খুলে আছেন কিন্তু যেন চোখের সামনে কালো পর্দা ফেলে রাখা হয়েছে। আপনি চেষ্টা করছেন কিন্তু এতটুকু আলোর দেখা পাচ্ছেন না। বাজে রকম একটা মানসিক ধাক্কা লাগে এরকম সময়। ছোটবেলায় মনে আছে টেকনাফের সমুদ্রসৈকতে গিয়ে এরকম অন্ধকার অনুভব করেছিলাম প্রথম। সেদিনও আজকের মত মেঘলা। আকাশে তারার আলোও ছিলো না দিক চেনাবার জন্য। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার যাকে বলে। যাহোক, এক জায়গায় সব পু-কিট মাটিতে রাখা আছে পানি ফিল্টারিং ইউনিটের পাশে। একটা তুলে নিলাম। জঙ্গলের দিকে আগাতে লাগলাম। নদীর গর্জন ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই। এই জংগলে কি কোন নিশাচর প্রাণী নেই নাকি ? অবশ্য নিক বলেছিলো ভালুকের প্রাদুর্ভাব ঘটে মাঝেসাঝে। তাই বেশী দূরে না যাওয়াই ভালো। একটু ঝোপঝাড় ঘেরা নরম মাটি-ওয়ালা জায়গা খুজছি। বেশ খানিকটা এগোনোর পর মনে হলো জায়গা মতো পৌছে গেছি। কিট থেকে শাবল বের করে মাটিতে চাড় দিয়ে দেখি সহজে উঠে আসচ্ছে। আর ঝামেলা নেই। মোটামোটি গর্ত খুড়ে ফেল্লাম। না আতংকিত পাঠক ভয় নেই। এর থেকে বেশী বর্ণনায় যাচ্ছি না। কাজ সেরে ফেরত যাবার রাস্তা ধরলাম। কিছুদুর আগানোর পর হঠাৎ সামনে রাস্তার বদলে গাছের সারি । তাহলে কি পথ ভুল করলাম? অন্ধকারে কোন কিছু ঠাহর করা যাচ্ছে না। গাছটাকে পাশে ফেলে আগালাম। মনে হচ্ছে পানির গর্জন বাড়ছে। তারমানে আমি খাড়ির দিকে আগাচ্ছি। মুশকিল। ভুলে খাড়িতে পড়ে গেলে আর ফিরতে হবে না। সলিল সমাধি। দিক পরব্বর্তন করলাম। আন্দাজে ঠিক করলাম খাড়ি ধরে পাশাপাশি আগাই, তাহ্লে অন্তত্য ক্যাম্পগ্রাউন্ডের কাছাকাছি চলে যাওয়া যাবে। তারপর দেখা যাক। কিছুক্ষন আগাতেই ফ্ল্যাশলাইটের আলোতে দূরে কি যেন চকচক করে উঠলো। কাচের বোতল নাকি ? তাহলে ত ওদিকেই ক্যাম্পগ্রাউন্ড হবে। উৎসাহ নিয়ে আগাতে লাগলাম। কাছে গিয়ে দেখি পুরোনো একটা বোতলের ধাতব ছিপি আলোতে চকচক করছে। তাহলে কি এখনো ক্যাম্পগ্রাউন্ডে আসিনি ? চারিদিকে ফ্ল্যাসলাইটের আলো ঘুরালাম। ঐ ত দ্বিতীয় ক্যাম্প ! যাক আর চিন্তা নেই । পথ খুজে নিয়ে ফিরে আসলাম নিজের তাবুতে।

সকালে ঘুম ভেঙে দেখি নিক এবং আরো কজন ইতিমধ্যেই উঠে পড়েছে। হট কোকো আর ম্যাকারনি দিয়ে নাস্তা সেরে তাবু গুটানোর কাজে লেগে গেলাম। জিনিসপত্র ভাগাভাগি করে ব্যাকপ্যাকে ভরে নিলাম সবাই। রাতে আর জোর বৃষ্টি না হওইয়ায় খাড়ির পানি আর বাড়েনি। তবে বেশ ফুলে ফেপে উঠেছে ইতিমধ্যেই। আর দেরি করা যায় না। পা চালালাম সবাই গাড়ির উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ হাইকিং শেষে ট্রেইলার ব্যাগ ভরে গাড়িতে উঠে পড়লাম সবাই। গন্তব্য মরগানটাউন। তবে ফেরার পথে পড়ছে ব্ল্যাকওয়াটার ফলস। তাই সেখানে না থামলেই নয়!

টাকার কাউন্টিতে অবস্থিত ব্ল্যাকওয়াটার স্টেট পার্কের প্রধানতম আকর্ষন ব্ল্যাকওয়াটার ফলস বা কালো পানির জলপ্রপাত। ব্ল্যাকওয়াটার নদী এক জায়গায় এসে প্রায় ৬২ ফিট নেমে গেছে খাড়া। এই অংগরাজ্যে মাটির উপরে অবস্থিত যত জলপ্রপাত আছে তার মধ্যে এইটাই সবচেয়ে উচু। যেখান থেকে জল গড়িয়ে পড়ে ঠিক সেই খাদের মাঝখানে বড় একটা পাথর স্রোতকে দুভাগে ভাগ করে দিয়েছে। ব্যাপারটা এতটাই বৈশিষ্ট্যপূর্ন যে এটা দেখেই প্রপাতটাকে চিনে ফেলা যায়। শীতকালে আরেক সৌন্দর্য্য। বেশীরভাগ সময়ি জমে বরফ হয় যায় পুরো প্রপাত। গাড়ী থেকে নেমে একটু এগোতেই দেখলাম থাকে থাকে সিড়ি নেমে গেছে বহুদূর। একবারে প্রপাতের কিনার পর্যন্ত। নামতে লাগলাম ধীরে ধীরে সবাই মিলে। অসংখ্য ধাপ শেষে প্রপাতের কিনারায় এসে হাটার কষ্ট ভুলে গেলাম। অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে ক্রমাগত ঝরে চলেছে ব্ল্যাকওয়াটার জলপ্রপাত। ভিডিও করে নিলাম এই বিমুগ্ধকর দৃশ্য। লাল পানির কারন ত জানলাম আমরা। কিন্তু কালো পানির কারন কি? কারন প্রায় একই। উদ্ভিজ্জ কষ মিশে পানির রং বদলে গেছে।


ভিডিওঃ ব্ল্যাকওয়াটার ফলস !

অপরূপ জলধারার পাশে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ফিরে আসলাম উপরে। দুপুরের খাবার সেরে নিলাম বেঞ্ছিতে বসে। গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম মরগান্টাউনের দিকে।


Comments

এক লহমা's picture

চলুক আপনার ভ্রমণকাহিনী উপভোগ করছি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অবনীল's picture

লেখাগুলো উপভোগ্য হচ্ছে জেনে শান্তি পেলাম। মাঝে মাঝে মন হয় এইসব ছাইপাঁশ লেখা লিখে কি লাভ ? কে পড়বে। আবার লিখতে মজাও লাগে । তাই লিখে যাই। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আশা করি সামনে আরো পোস্ট দিতে পারবো ।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

হিমু's picture

একটু গুগল করে দেখলাম, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যে মন্থর উপনদী বয়ে চলার ফাঁকে ট্যানিন শুষে চায়ের রং ধরে, সেটাকে ব্ল্যাকওয়াটার রিভার বলে (মানে নামবাচক বিশেষ্যের জায়গায় জাতিবাচক বিশেষ্য)। আমরা দেশে যেটাকে ছড়া বলি, সেটা আবার এর সাথে ঠিক যায় না। একটু কাব্যি করে একে বাংলায় মিশিনদী বললে কেমন শোনায়?

অবনীল's picture

তাহলে একই শব্দ নাম এবং জাত হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে! দারুণ। মিশিনদী অতি চমৎকার হয়। আবার ভাবছি নিশিনদীও খারাপ না। নিশি রাইতের আন্ধারের মত নদীর পানি ।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

হিমু's picture

কোনিফারের একটা বেশ ছিমছাম বাংলা দেখলাম সেদিন: শঙ্কুল

অবনীল's picture

বাহ। অতীব সুন্দর শব্দচয়ন। এটা থেকে আমারও একটা শব্দ মাথায় এলো । শ্বাপদশঙ্কুল । মানে বাঘ-সিংহীতে পূর্ন কনিফারের বন। কেমন হলো বলেন ত ?

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

হিমু's picture

এক লহমা's picture

বাঘ-সিংহীতে পূর্ন কনিফারের বন = শ্বাপদসঙ্কুল শঙ্কুল বন বা শ্বাপদসঙ্কুল শঙ্কুল অরণ্য। এর থেকে কমে দিতে পারবোনা দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

এই শব্দটা সম্ভবত ঠিক হলো না। কারণ, শন্‌ক্‌ + উল = শঙ্কুল একটি বাংলা শব্দ যার অর্থ হচ্ছে জাঁতি (সুপারি কাটার যন্ত্র বিশেষ)। জাঁতি যেমন দুদিক থেকে চেপে ধরে সুপারিকে কেটে ফেলে, তেমন যে জায়গায়/বনে শ্বাপদেরা পথিককে দুদিক থেকে চেপে ধরে পালাবার পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে তাকে 'শ্বাপদসঙ্কুল' বোঝায়। কনিফারকে শুধু 'শঙ্কু' বললে ভুল হয় না, তবে একটু বিভ্রান্তি হয়। একে 'শঙ্কুশ' বললে কেমন হয়?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু's picture

জাঁতি শঙ্কুল নয়, শঙ্কুলা। আর সঙ্কুল অর্থ ভরপুর। যে বনে শ্বাপদ গিজগিজ করছে সেটা শ্বাপদসঙ্কুল, আবার নির্বাচনের মাঠ আপদসঙ্কুল।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

ভুল হয়ে গেছে। 'শ' আর 'স' গুলিয়ে গিয়েছিল।

যতদূর জানি জাঁতি শঙ্কুলও বটে। শন্‌ক্‌ + উল্‌ -এর সাথে 'আ' স্ত্রী-প্রত্যয় (টাপ্‌) যোগে একে 'শঙ্কুলা' হিসাবে ব্যবহারও সিদ্ধ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু's picture

না বস। শঙ্কুল মানে ডহরকরমচা গাছ (Pongamia Glabra)। রবিবুড়োর আমলের প্রায় সব অভিধানেই শঙ্কুলা ভুক্তিটা আছে, শঙ্কুল নেই প্রায় কোনোটাতেই। হালের বাংলা-বাংলা অভিধানগুলোয় শঙ্কুলাও নেই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

শঙ্কুলের ব্যাপারে আমার জানা সাহিত্য থেকে। সুতরাং লেখক ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত ভুল করে থাকলে সেটা আমার জানা নেই। আমি আর শব্দটা অভিধানের সাথে মিলিয়ে দেখিনি। আপনি বলার পর অভিধানে দেখলাম সেখানে 'শঙ্কুলা' আছে, কিন্তু 'শঙ্কুল' নেই।

Pongamia glabra'র বাংলা নাম 'ডহরকরমচা' কে করেছেন? Pongamia pinnata'র বাংলা নাম 'করঞ্জ' বা 'করচ'। সুতরাং Pongamia glabra'র বাংলা নামটা কোন উপসর্গ বা বিশেষণযুক্ত করঞ্জ হওয়াটা সঙ্গত। Pongamia-রা Fabaceae পরিবারের যাদের ফল হচ্ছে লিগিউম/পড্‌ (সীমের মতো)। পক্ষান্তরে করমচা হচ্ছে Carissa carandas, পরিবার Apocynaceae, ফল বেরি (গোলগাল, ভেতরে দানা)। নামটা যে-ই করে থাকুন, ঠিক করেছেন বলে মনে হচ্ছে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু's picture

ডহরকরমচার নাম আয়ুর্বেদ প্রসঙ্গে কোথায় যেন পড়েছি। পুরানো অভিধানেও পাবেন।

আর করমচা তো করঞ্জেরই অপভ্রংশ। করঞ্জ/করঞ্জক = যে পানিকে রাঙায় (ক (=জল) + √ রন্জ্ + অ + ক)। অভিধানে দুটো ভুক্তি পাবেন:

এদের নাম যখন সেই আদ্যিকালে রাখা হয় তখন শ্রেণিকরণের মূলনীতি নিশ্চয়ই ভিন্ন ছিলো। যাই হোক, এখানেই দাঁড়ি টানি; অবনীল বেচারা নির্ঘাত মনে মনে চেতেমেতে অতিলাল হচ্ছে।

অবনীল's picture

না না। ছি ছি। চেতার কি আছে। খুবই জ্ঞানবর্ধক আলোচনা । তবে নাদানের পোস্টের তলায় লিখলে কজনে পড়বে বলেন। আলাদা শব্দকল্পদ্রুম পোস্ট দরকার।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আলোচনাতে আমিও দাঁড়ি টানার পক্ষপাতি। যেহেতু প্রসঙ্গটা উঠেছে তাই আমি আমার শেষ কথাটা বলে যাই।

আগে শ্রেণীবিন্যাসের মূলনীতি যাই থাকুক, আমাদের উচিত বিদ্যমান ভ্রান্তির অপনোদন করা। Pongamia glabra ও Pongamia pinnata'র বাংলা নামে করমচা/করঞ্জ/করঞ্জক/করন্দা/করচ/করমর্দ্দক/পানি-আমলা থাকাটা যৌক্তিক না। বরং এদের নামে সীম/ছই/উশী ইত্যাদি থাকলে তা যৌক্তিক হয়। এদের পাতা, ফুল বা ফল 'শঙ্কু' আকৃতির নয়। সুতরাং এদের কারো নাম 'শঙ্কুল' দেয়াটাও ঠিক হয় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আয়নামতি's picture

ইশশ মনে হচ্ছে লাল পানি বিষয়ক ব্যাপারটায় আপনি আসলেই মর্মাহত হয়েছিলেন। সেকারণে ভানটা ঠিকঠাক হয়নি। খাইছে "খানিকটা আশাহত অবার ভান করি আমি।"

আপনার ভ্রমণ কাহিনিগুলো বেশ উপভোগ্য। অণুদার কথা মনে পড়ে ভাই এগুলো পড়তে গিয়ে। আছেন মজায়। ঘুরে নিন যতটা পারেন। শুভকামনা।

অবনীল's picture

হেহেহে ঠিক ধরেছেন আয়নামতিজি। ফ্রি লালপানি কিন্তুক এই পানি সেই পানি না শুনে মর্মে যেন শেলবিদ্ধ হলো। বাট চক্ষুলজ্জার খাতিরে আবেগটা একটু কমায় লিখছি। আপনি ধরে ফেলেছেন। দেঁতো হাসি

কাহিনী উপভোগ্য হয়েছে জেনে ভালো লাগলো। পরিব্রাজকশিরোমণীর সাথে তুলনা করে লজ্জা দেবেন না। আমি অতি নগন্য একজন লেখক। তাঁর মত লেখালেখি আর ঘোরাঘুরি খালি স্বপ্নেই সম্ভব। আপনাকেও অনেক শুভকামনা আর সামনের লেখা পড়ার অগ্রীম আমন্ত্রন।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

আয়নামতি's picture

দেঁতো হাসি

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.