কেন সবারই বিবর্তনতত্ত্ব শেখা উচিত

সজীব ওসমান's picture
Submitted by Shajib Osman on Wed, 23/11/2016 - 10:12am
Categories:

জীববিজ্ঞান এবং ডারউইনের ছাত্র হওয়ায় (তাঁর ধারণার বিদ্যালয়ের হাসি ) আমার একটা অনন্য সাধারন সুবিধা হয়েছে, যা থেকে অনেকেই বঞ্চিত। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, বাস্তব ঘটনা, জৈবিক ইতিহাস ইত্যাদিকে আমি ডারউইনের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করি বলে আমার পার্সেপশান অন্য অনেক মানুষের চেয়ে আলাদা (ঔদ্ধত্যটুকু নিয়েই বলি!) এবং সঠিক হতে পেরেছে। বিবর্তনতত্ত্ব, যার মূল নির্জাসটা পাওয়া বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীর জন্য খুব কঠিন নয়, তা আস্বাদন করার ইচ্ছা, এবং উপায় আমার কাছে ছিল বলেই পাখির রঙ বা ঠোঁট বৈচিত্র, মাছের ডানার কাজ, প্রাণীর লোমের উপযোগিতা, বিলুপ্ত প্রাণীর ধরণ, গোজাতীয় প্রাণীর বৈচিত্র ইত্যাদি সাধারণ পর্যবেক্ষণগুলি থেকে বিজ্ঞানের কিছু গভীরের জিনিস, যেমন মানুষের রোগের কারন, ঔষধ আবিষ্কারের উপায়, ডিএনএ'র বিন্যাসে পার্থক্য এবং সম্পর্কের সাথে জীবের বৈচিত্রের সম্পর্ক, জেনোমের গঠন, জীবের উদ্ভব ইত্যাদি বিভিন্ন ঘটনা বা বাস্তবতা ইত্যাদিকে ডারউনীয় বিবর্তনের আলোয় রেখে চিন্তা করি বলে এসব সম্বর্কে আমি পরিষ্কার এবং যৌক্তিক ধারণা তৈরি করতে পারি। বিবর্তনের আলোয় শুধু জীবজগত নয়, বরং গোটা পৃথিবীর কার্যকলাপ বোঝাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। সেজন্য আমি মনে করি জীবাণুর ঔষধ প্রতিরোধ থেকে মাছের দাম, সবকিছু বোঝার জন্যই বিবর্তনকে একটা ব্যবহারিক হাতিয়ার হিসেবে আমাদেরকে শেখানো উচিত।

চার্লস ডারউইন নিজেকে একজন জিনিয়াস হিসেবে ভাবেননি। ডারউইন তার আত্মজীবনীর একটা অংশে বলছেন -

Quote:
কোনকিছুই খুব দ্রুত বুঝে ফেলা বা অসাধারণ চাতুর্য্য আমার নেই, যেসব দারুণ গুনগুলি অনেকের মধ্যেই দেখি।

সৌভাগ্যক্রমে, আমাদের বাকিসবার জন্য তার এই আত্মবিচার নিদারুন ভুল হিসেবে প্রতীয়মান। তাই, প্রতি ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখেই আমরা সমারোহে পালন করি ডারউইনের জন্মদিন, তাকে অন্য মহারথী, যেমন নিউটন, গ্যালেলিও, কোপার্নিকাস বা আইনস্টাইনের সমকাতারে ফেলেই।

ডারউইনের অসাধারণ বুদ্ধিমত্ত্বা (এবং হ্যাঁ, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তাই সঠিক শব্দ) জীববিজ্ঞানের সেই জায়গায়গাতেই নিহিত যেখানে একটামাত্র তত্ত্ব জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র বা ঘটনাকে কোন একক একতাবদ্ধ কাঠামোয় বেঁধে ফেলতে পেরেছে। বিবর্তনিক জিনবিজ্ঞানী থেওডোসিয়াস ডবঝানস্কির (Theodosius Dobzhansky) বহুল ব্যবহৃত উক্তিটি আরেকবার তাই উল্লেখ করাই চলে -

Quote:
বিবর্তনের আলোয় ব্যাখ্যা করা না হলে জীববিজ্ঞানের কোনকিছুরই কোন অর্থ হয়না।

তারপরও এটা অবশ্যই দ্রষ্টব্য যে ডারউইন তার প্রাপ্ত কৃতিত্বের চেয়েও আরও অনেক বেশি আশা করতে পারেন। জনপ্রিয় মিডিয়াগুলির যখনই কোন অতিমেধাবী বিজ্ঞানীর আইকনিক ছবি ছাপানোর প্রয়োজন হয় তখনই তারা প্রতিবারই আলবার্ট আইনস্টাইনের উষ্কখুষ্ক চুলসহ বিখ্যাত সেই গুটিকয়েক ছবিগুলি ব্যবহার করেন। ডারউইনের আইকন স্ট্যাটাস না পাওয়ার ব্যর্থতা সৃষ্টিতত্ত্ববাদী এবং নব্যসৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের অসাড় চিন্তার পরম্পরতা এবং শতবছর আগের ইউজেনিক্স আন্দোলনের জন্য তার বিবর্তন ধারণার বিকৃতিই দায়ী হয়তো। ধর্ম ব্যাখ্যাগুলির সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়ানো কোন ধারণা বা ব্যাখ্যাকে বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে গ্রহণেও আপত্তিকে ভীতিতে রূপদান করা চলে। সাধারণ অশিক্ষিত এবং উণশিক্ষিত মানুষের মধ্যে ভীতি সহজেই ঢুকিয়ে দেয়া চলে, যার ফলশ্রুতি হয় ভয় পাওয়ার বিষয়টার প্রতি অজ্ঞানতা তৈরি এবং একে জিইয়ে রাখা সহজ হয় এবং এর প্রতি ঘৃণা তৈরি হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। ডারউইনকে অবহেলাও তাই খুব সহজ হয়ে গিয়েছিল। বৈজ্ঞানিক প্রমাণগুলির সংখ্যার এভারেস্টসম উচ্চতার কারণেই বিবর্তনকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া যায়নি, বরং পৃথিবী এবং কালব্যাপী বিজ্ঞানীরা একে এক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

কিন্তু ডারউইন শুধুমাত্র কোন একজন বিজ্ঞানধারণা প্রস্তাব করা বিজ্ঞানীর চেয়ে আরও অনেক বৃহৎ ছিলেন যার অনন্যসাধারণ বিজ্ঞানচিন্তা এবং আবিষ্কার বিজ্ঞানের মহারথীদের মাঝে তার অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে। একটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে ব্যাখ্যা করতে পারতে হয় - এবং ডারউইনের ধারণা এই তিন কালকেই ব্যাখ্যা করে, যা বোঝার জন্য আলাদা কোনধরনের সহজবোধ্য অনুবাদের প্রয়োজন পরেনা। যেকোন শিক্ষিত মানুষই তার বই অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিজে বুনে রাখা সুখকর কাব্যিক মোহময় সুরধ্বনিকে আস্বাদন করতে পারেন, যার কিছু বাণী আসলেই বেশ কাব্যিক -

Quote:
... from so simple a beginning endless forms most beautiful and most wonderful have been, and are being, evolved.

ডারউইনের চিন্তার প্রভাব কতটা বিস্তৃত সেটা বোঝার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলো এটা বোঝা যে, আমরা কিভাবে সমাজের সাধারন জনগনের জন্য পলিসি বা নীতি নির্ধারন করি, কখনও কখনও কিভাবে আমাদের জীবনযাপন করবো সেটা নির্ধারন করি এসবকিছুর উপরই ডারউইনের পরম্পরার প্রভাব আছে। বড় মাছের অতিশিকার পরবর্তিতে ছোট ছোট মাছকে নির্বাচিত করে (এবং বাজারে ফলে উচ্চদাম দিয়ে মাছ কিনতে হয়), এবং এন্টিবায়োটিকের অতিব্যবহার প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ঔষধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াকে উদ্ভব ঘটায়, যার ফলে উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিক দিয়েও আর রোগ সারানো যায়না। বহু আধুনিক রোগ - যেমন আমাদের স্থুলতা, ডায়বেটিস এবং অটোইমিউন রোগ - ইত্যাদির উদ্ভব হয়েছে দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকা পরিবেশের সাথে আমাদের জিনের অমিল ঘটার কারনে, যেখানে জিনগুলি এত দ্রুত পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে নিজেদেরকে পরিবর্তন করার মতো করে খাপ খাওয়াতে পারছেনা। এই বিভেদটাকে কোন রোগীকে বোঝানো গেলে হয়তো তাকে ভিন্নরকম ডায়েট বা খাদ্যাভাসের জন্য মানানো সম্ভব হতো, এমন খাদ্যাভাস যা আমাদের জিনগত ঐতিহ্যের দাবী অনুযায়ী সঠিক হয়। যেমন আধুনিক পরিবেশে আমাদের জিনকাঠামো আমাদেরকে অধিক পরিমান এবং মিহি শর্করা অথবা ঘন চর্বি খেতে সাহায্য করেনা। অর্থাৎ, ডারউইনীয় চিন্তার আলোয় পৃথিবীর জৈবিক এবং জীবসম্পর্কিত আপাতভাবে খুব স্বাভাবিক ঘটনাগুলিরও ব্যাখ্যা যৌক্তিকভাবে দেয়া যায়।

সেজন্য, ডারউইনের তত্ত্বটিকে সার্বিকভাবেই আমাদের স্বাভাবিক চিন্তার অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে পারা উচিত। এটা করাই সবচেয়ে যৌক্তিক। আর সেজন্য প্রয়োজন সামাজিকভাবে ডারউইনিয় বিবর্তনতত্ত্বকে আরও গ্রহণযোগ্যতা দেয়া। বিশেষকরে যদি ছাত্রছাত্রীদের শেখানো যায় কেন বিবর্তনতত্ত্ব জানা উচিত এবং কিভাবে প্রকৃতি এবং সমাজে এই চিন্তার ব্যবহার করা চলে তবে দারুণ হয়।

আশার কথা হলো এমনকিছু প্রক্রিয়ার চেষ্টা চলছে। যেমন, জীববিজ্ঞানী ডেভিড স্লোয়ান উইলসন বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ে EvoS নামের বিবর্তন শিক্ষা নিয়ে একটা কার্যক্রম শুরু করেছেন যা জীববিজ্ঞান থেকে মানবিক এবং সামাজিক বিজ্ঞানের ছায়ায় বিস্তৃত হয়েছে, কার্যক্রমটি এখন অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনুসরণ করা হচ্ছে। এখানে শিক্ষার্থীরা বিবর্তনের খুব গোড়ার শিক্ষাটা গ্রহণ করেন, যেখানে শেখানো হয় যে বিবর্তন হলো একটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং বাস্তব উভয়ই, মূলতঃ এমন একটি আলোয় পৃথিবীকে দেখানো যা অনুমানমূলক এবং ব্যাখ্যামূলক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষমতা দেয় ছাত্রছাত্রীদেরকে। তারপর তারা ক্যান্সার, গর্ভধারণ, যৌনসঙ্গী নির্বাচন, সাহিত্য এবং ধর্ম ইত্যাদি বিভিন্ন বিচিত্র বিষয়ে বিবর্তনের বিশ্লেষণমূলক কাঠামোগুলি ব্যবহার করতে অনুসন্ধান বা গবেষণা করে।

তাই, ডারউইনকে উদযাপন করার বা তাকে চর্চা করার একটা উপায় হতে পারে এটা ভেবে দেখা যে কিভাবে বিবর্তনশিক্ষা আমাদের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় আরও ব্যাপক পরিসরে অবলম্বন করা যায়। প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং জিন কিভাবে কাজ করে তার সমসাময়িক ধারণাগুলি, এককজীব এবং প্রজাতিগুলি কিভাবে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় ইত্যাদি কার্যকারণ এবং নীতিশিক্ষায় আমাদের সৃষ্টিশীল এবং জটিল চিন্তাভাবনার ক্ষমতা পরিবর্ধনের অংশ হিসেবে থাকা উচিত বিবর্তনতত্ত্ব। বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলি এই ধারায় অনেকখানি এগিয়েছে। আমাদের দেশ পিছিয়ে থাকবে কেন?

কৈফিয়ত:
বিবর্তন নিয়ে একটা সিরিজ লেখা শুরু করলাম, দেখা যাক কতটুকু হয়। এটা প্রথম পর্ব।

সূত্র:
১। লেখাটার মূল কাঠামো সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশিত নিম্নোক্ত লেখা থেকে ধার করা হয়েছে:
https://www.scientificamerican.com/article/why-everyone-should-learn-evolution/

২। ছবি নেয়া হয়েছে লার্নিং ডারউইন সাইট থেকে।


Comments

সোহেল ইমাম's picture

এই সিরিজটার জন্য খুব আগ্রহ হচ্ছে। এই এখনও বিজ্ঞান পাশকরা শিক্ষিত (?) এমনকি ডাক্তারদের সিংহভাগকে আমি ঠোঁট উল্টিয়ে বলতে শুনেছি ”বান্দর থেকে মানুষ আসছে এইটা কি কোন বিশ্বাস করার মত কথা”। বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে আরো লেখালেখি আরো আলোচনা হওয়া উচিত। এই আলোচনাটা হতে হবে আশেপাশে, বাড়িতে, আড্ডায়।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সজীব ওসমান's picture

হুমম। দোয়া রাইখেন।

নিটোল's picture

শুরুটা বেশ হয়েছে। তরতরিয় এগিয়ে যাক। চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

সজীব ওসমান's picture

চলুক

অতিথি লেখক's picture

সচলে কোন সিরিজ শুরু হতে দেখলে ভয় লাগে। কারণ, বেশিরভাগ সিরিজ কোন দিন শেষ হয় না। আর যেগুলো শেষ হয় সেগুলোর বড় অংশ যে পেসে শুরু করা হয়েছিল তারচেয়ে অনেক তাড়াহুড়ো করে শেষ করা। আপনি এই সিরিজ শেষ করবেন কিনা জানি না, তবে একটা অনুরোধ রেখে যাই। বিবর্তন নিয়ে বাংলায় 'পপুলার সায়েন্স' ধরনের বই থাকলেও অ্যাকাডেমিক বই নাই। একজন সিরিয়াস পাঠক, যিনি বাংলা ভিন্ন অন্য ভাষা পড়তে পারেন না বা অন্য ভাষায় সড়গড় নন্‌ তার জন্য বিবর্তনের ওপর কোন বই নেই। আপনি যেহেতু বিষয়টি জানেন এবং আত্মস্থ করতে পেরেছেন তাই বিবর্তন নিয়ে বাংলা ভাষায় একটা যথাসম্ভব পূর্ণাঙ্গ বই লিখুন। বৈজ্ঞানিক আলোচনায় তত্ত্বের উদ্ভব, বিকাশ, প্রমাণ, প্রয়োগ, ব্যবহারবিধি, সীমাবদ্ধতা, সম্ভাবনা ও সমালোচনার বাইরে এর দার্শনিক দিকটিও আলোচিত হওয়া উচিত। এটি না হলে ব্যাপারটি আমাদের ঐ শিক্ষকদের মতো হবে যারা ক্লাসে বিবর্তন পড়ান কিন্তু বাস্তবে ক্রিয়েশনিজমে বিশ্বাস করেন। যারা বিবর্তনকে একটি তত্ত্ব হিসেবে না দেখে যদুবাদ, মধুবাদ ইত্যাদির মতো স্বকপোলকল্পিত কোন ধারণা বলে প্রচার করেন।

সজীব ওসমান's picture

হুম। ঠিক বলেছেন হয়তো। আমি নিজে আগে দুইটা সিরিজ শুরু করেছিলাম। প্রথমটি, 'জীবের বিলুপ্তি আমার মতে ভালভাবেই শেষ করেছি, মানে তারাহুড়ো না করেই। দ্বিতীয় সিরিজ, প্রাণ কী তে গিয়ে আটকে গিয়েছি। তবে সুখবর হলো আপনার মন্তব্য পড়ে আমি আবার সেটায় হাত দিয়েছি। হাসি

টেক্সটবই লেখার মত গুরুভার নেয়ার জ্ঞান বা সুযোগ আমার এখন নাই। তবে কিছু বই বাংলায় অনুবাদ হচ্ছে - যেমন, রিচার্ড ডকিন্সের বইগুলি। আবার বন্যা আহমেদ সহজবোধ্য একটা বই লিখেছেন। প্রচলিত অর্থে টেক্সটবই না হলেও, ডকিন্সের বই টেক্সট হিসেবেই পড়ানো হয় অনেক জায়গায়।

অতিথি লেখক's picture

টেক্সটবই লেখার মতো অবস্থায় আপনি এখন না থাকলে যখন অমন অবস্থায় পৌঁছুবেন তখন লিখবেন। তবে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়া মানুষ বা ঐ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য টেক্সটবই মনে হয় এখনই লিখতে পারেন। বিষয়টা হাইস্কুলে থাকতে মাথায় ঠিকমতো না ঢুকলে ভুল শিক্ষাটা স্নাতক পর্যায় বা তার পরেও থেকে যাবে।

শুধু এইটুকু নিজের বিবেচনায় রাখুন যে, আপনি এই বিষয়ে একটা টেক্সটবই লিখবেন। তাহলে ২০১৭ সালে হোক আর ২০২০ সালে হোক বইটা লেখা হবে।

বাংলা অনুবাদের ওপর আমার কোন আস্থা নেই। অনেক ঠকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। বন্যা আহমেদের বইটি টেক্সটবই নয়। উনি অমন কিছু ভেবে লিখেছেন বলেও মনে হয় না।

একটা বিষয়ে লেখার সময় বেশিরভাগ লেখক নির্মোহ হতে পারেন না। নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দগুলো কী করে যেন চলে আসে। নিজে যে অবস্থান পছন্দ করুক না কেন তার পক্ষের দুর্বল যুক্তিগুলোকে দুর্বল হিসেবে উপস্থাপন করাই সঙ্গত। এটা তো বিজ্ঞান, একটা অনন্ত চলমান প্রক্রিয়া। এখানে শেষ কথা বলে কিছু নেই। মানুষ যতো জানবে, ততো আগের ভুল ধারণা ও ত্রুটিগুলো শুধরে আরও বেশি সত্য ও যথার্থতার দিকে আগাবে। কামনা করি এই সিরিজ এবং আপনার ভবিষ্যত টেক্সটবই অমন নির্মোহ হবে। আগাম অভিনন্দন রইলো।

সজীব ওসমান's picture

হাইস্কুলের জন্য টেক্সটবই লেখার প্রয়োজন কম, বরং বন্যা আহমেদের মত লেখাগুলির প্রয়োজনীয়তা বেশি। সেরকম আরও লেখা হওয়া উচিত। আর অনুবাদে আপনার আস্থা কেন নেই বুঝতে পারছিনা। ডকিন্সের বইগুলি যিনি বা যারা অন্য বিবর্তন নিয়ে বইগুলি অনুবাদ করছেন বা করেছেন তারা অনেকেই খুব কামেল লোক। ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমই আশা করা যায় তাদের কাছ থেকে, অনুবাদেও পক্ক।

শেষপ্যারায় লেখা 'অন্যপক্ষ' কী সেটার উপর নির্ভর করছে কোনটা উল্লেখ করছেন কোনটা না। সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক তথ্য বিরুদ্ধমত বলেই ভারসাম্য রাখতে উল্লেখ করতে হবে এমন কোন কথা নাই।

অতিথি লেখক's picture

আমার আগের মন্তব্যে দেখা যাচ্ছে আপনাকে আমার বক্তব্যটা ঠিক বোঝাতে পারিনি। বিষয়গুলো নিয়ে আবার বলি।

১. বন্যা আহমেদের লেখার মতো বইয়ের প্রয়োজনীয়তা কম নাকি বেশি সে ধরনের প্রসঙ্গে আমি যাইইনি। বস্তুত সেটা অর্থহীন। আমার বক্তব্য ছিল স্কুল পর্যায়ের টেক্সটবই নিয়ে। আমি ১০-১৮-দের নিয়ে কাজ করেছি। আমি দেখেছি এই পর্যায়ে মৌলিক জ্ঞান, বিশ্বাস, ধারণা ইত্যাদি তৈরি হয়। এই পর্যায়ে ভ্রান্তধারণা নিয়ে বড় হলে পরে সেটি ভাঙতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে। এবং বেশিরভাগ জন সেটা করতে পারবে না। শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুল পর্যায়ের টেক্সটবই নিয়ে তাই এতো মাথা ঘামানো হয়।

২. প্রথমেই বলে নেই, অনুবাদ নিয়ে আমার বক্তব্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও রুচিসঞ্জাত। এখানে সবার একমত হবার বাধ্যবাধকতা নেই। আমি জীবনে প্রচুর বাংলা অনুবাদ পড়েছি। অনেক রথী-মহারথী, কামেল-ওস্তাদদের করা অনুবাদ পড়েছি। যখন মূল বই (ইংলিশ) পড়ার সুযোগ হয়েছে তখন অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাকিগুলোর ক্ষেত্রে মনে হয়েছে অনুবাদ পড়ে স্রেফ সময় নষ্ট করেছি। অনুবাদ একটি অত্যন্ত পরিশ্রমসাপেক্ষ পেশাদারী কাজ, যেখানে উভয় ভাষাজ্ঞান, সাহিত্যজ্ঞান ও শিল্পজ্ঞান থাকাটা আবশ্যিক। অন্য ভাষা থেকে ইংলিশে করা অনুবাদগুলো পড়লে এই পেশাদারীত্বটা টের পাওয়া যায়। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে এই পেশাদারীত্ব তৈরি হয়নি। আমি বাংলা অনুবাদের বিপক্ষে নই, গয়রহ সব বাংলা অনুবাদকে নাকচও করি না। তবে যেখানে মূল ইংলিশটা সহজলভ্য সেখানে আমি বাংলা অনুবাদ পড়ে সময় নষ্ট করতে চাই না। আমি নিজের জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি, এখন আর নষ্ট করার মতো সময় আমার হাতে নেই।

৩. আমি লেখককে নির্মোহ হতে বলেছি, ভারসাম্য বজায় রাখতে বলিনি। অনেক লেখককে দেখা যায় তাদের লেখায় ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে উপেক্ষা করতে পারেন না। তাতে আপাত দুর্বল বিষয়গুলোর দুর্বলতাগুলো আর আলোচিত হয় না। বৈজ্ঞানিক আলোচনায় এ'ধরনের প্রশ্রয় কাম্য না। যে তথ্য বা ধারণা অবৈজ্ঞানিক সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকারই নেই। আর তার সাথে ভারসাম্য রাখতে গেলে তো নিজের মূল অবস্থানটাকেই অস্বীকার করা হবে।

নীড় সন্ধানী's picture

বিবর্তনীয় ধারণাগুলোর উপর সহজবোধ্য বাংলা রচনার খুব দরকার। এই সিরিজটার উপর আশাবাদী হলাম তাই।
তাছাড়া বানর থেকে মানুষ আসতে পারলে কাক থেকে কেন ময়ূর আসলো না বলে যারা আক্ষেপ করে তাদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সজীব ওসমান's picture

ধন্যবাদ। ভালোভাবে শেষ করতে পারবো আশা করছি।

হাসিব's picture

সামাজিক বিজ্ঞানে দ্বন্দ্ব বা ডায়ালেক্টিক অনেক আগে থেকেই পাঠ্য। বার্মিংহামের ধারণাটা নতুন কী যোগ করলো?

সজীব ওসমান's picture

আপনার প্রশ্নটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারিনি। সম্ভবত ইভোস নিয়ে বিস্তারিত লিখিনি বলে ভুল বুঝেছেন। শিক্ষায় দান্দ্বিক বস্তুবাদের গ্রহণ আর এই প্রক্রিয়াটা ঠিক একই জিনিস না। এখানে লিংক দিয়ে দিলাম, কিন্তু বিস্তারিত পরে লেখার ইচ্ছা আছে।

প্রাচ্য পলাশ's picture

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বমানের নয়। দেশের উচ্চ শ্রেণীর সন্তানরা বিদেশে পড়তে যায়। যারা দেশে থাকে তারা হয়তো অপাঙতেও, তাই তাদের জন্য গজামিলের শিক্ষানীতি। পরিবর্তন চাই এখনই।

প্রাচ্য পলাশ

অতিথি লেখক's picture

সিরিজের দিকে চোখে রাখলাম।
এ্যানি মাসুদ

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.