ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিক অবরোধের পথে হেটেছে। কিন্তু এতদিন পর এসে সবার মনে একটাই প্রশ্ন-অবরোধ কী যুদ্ধের গতি স্লথ করতে পেরেছে? অন্তত রাশিয়ার মুদ্রার দরের দিকে তাকালে মনে হবে আসলে অবরোধ উল্টা তাদের একঘরে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে শুরু করেছে। আবার, অন্যান্য দেশে তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়া শুরু করে দিয়েছে। যার কারণে বিশ্বে আবার দরিদ্রের হার বাড়া শুরু করেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অভিশাপ। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশকে আগের চেয়ে বেশী মূ্ল্যে বিল পরিশাধ করতে হচ্ছে। যার কারণে বিশ্বে দশটিরও বেশী দেশ দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে আছে। যেহেতু ডলার সার্বজনীন বিনিময় মুদ্রা তাই এর মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে সব অর্থনীতিই আক্রান্ত হয়। যেমন- জাপানিজ মুদ্রা ইয়েনের ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যপতন হয়েছে। এর কারণে বিশ্বের জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোও অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খাচ্ছে। সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মত দেশগুলো। যার প্রভাব আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে শুরু করেছি।
রাশিয়ার মোক্ষম অস্ত্র তেল এবং গ্যাস। রাশিয়া ওপেক+ এর সদস্য। করোনার সময়ে ওপেকভুক্ত দেশগুলো তেল এর দরের নিম্নপতনের কারণে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলা যায়। এখন তারা চেষ্টা করছে তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। যার কারণে আমেরিকার এত অনুরোধের পরও ওপেকের নেতা সৌদি আরব বলেছে যে চাহিদা বাড়লে তারা তেল উৎপাদন বাড়াবে। আর রাশিয়া তেল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় (প্রায় ১৩.১%)। রাশিয়ার রপ্তানি আয়ের ৪০ শতাংশই আসে তেল ও গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে। এত বিশাল উৎপাদক দেশকে কোনভাবেই বাজারের বাইরে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। আবার যেহেতু রাশিয়ার তেলের উপর ইউরোপের বেশীরভাগ দেশ সরাসরি নির্ভরশীল তাই অর্থনৈতিক অবরোধ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করাও এখন সম্ভব হবে না, কারণ হঠাৎ করে বিকল্প উৎসের সন্ধান পাওয়া কঠিনই বটে। ইউরোপীয়ান দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা পুরাপুরি কার্যকর করতে চাচ্ছে, কিন্তু রাশিয়া এর মধ্যেই তেল চীন ও ভারতের কাছে তেল বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছে এবং তেলে বিক্রয়মুল্য রুবলে পরিশোধ করতে বাধ্য করছে। যার কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর করা অসম্ভবই মনে হচ্ছে।
আবার অবরোধের কারণে দুই প্র্রকার মেরুকরণ শুরু হয়েছে। এক হচ্ছে পশ্চিমাপন্থী দেশগুলো আর আবার আছে রাশিয়াপন্থী দেশগুলো। আবার এশিয়ার দেশগুলো কোন্ পক্ষ নিলে তাদের উপকার হবে তা নিয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্তহীনতাই আছে। অবরোধের ফলাফল আবার অনেক দেশের সরকার নিজেরা আর নিজের কাধেঁ নিতে চাইতেছে না। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলো। যেমন-পশ্চিমাপন্থী জাপান প্রথমে নিষেধাজ্ঞা দিলেও এখন বলছে তারা সাখলাইন-২ গ্যাস প্রজেক্ট থেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিবে না। কারণ পুরোপুরি সরিয়ে নিলে জাপানের গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। আবার, ভারত যেহেতু সস্তায় তেল পাচ্ছে তাই তারা রাশিয়া থেকে কম মূল্যে তেল কিনছে কারণ জনগণ ক্ষেপে গেলে সেই ক্ষোভ সরকারের উপর গিয়েই পড়বে।
ইউরোপের দেশের জনগণ ও হয়তো সামনে শীত আসলে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে পারে তাই সামনে হয়তো তাদের সরকার বিকল্প কিছু সামনে আনার চেষ্টা করবে। তাই অবরোধ যে মোটামুটি ব্যর্থ তা আপাতদৃষ্টিতে বলা যেতে পারে। কিন্তু সামনে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো কীভাবে রাশিয়ার অর্থনীতির লাগাম টেনে ধরবে তাই দেখার বিষয়।
-জেএমএইচআর
Comments
আপনার লেখার শিরোনামে যে 'কী' আছে, সেটা 'কি' হবে। সচলায়তনে লেখার শিরোনামে এমন ভুল দেখলে গা কিড়কিড় করে।
প্রজেক্টের নাম সাখলাইন নয়, সাখালিন। দয়া করে যে কোন বিষয়ে লেখার সময় নামগুলো ঠিক করে লিখবেন, নইলে পাঠক ভুল জানবে।
রাশিয়াপন্থী আসলে কারা? ইন্ডিয়া? বাংলাদেশ? অবরোধে যোগ না দিলে তারা রাশিয়াপন্থী হয়ে যাবে?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
Post new comment