অলৌকিক মানুষ

কর্ণজয়'s picture
Submitted by কর্ণজয় on Sun, 02/09/2018 - 12:04pm
Categories:

আমার ঘুরতে ভালো লাগে। অদেখা জায়গা, মানুষ। নতুন নতুন গল্প। এভাবে প্রতিদিন পৃথিবীটা বড় হয়ে ওঠে। একদিন অনেক দূরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। একদম নতুন জায়গা, ঘুরতে ঘুরতে যেমন হয় একজন মানুষের দেখা পেয়ে গেলাম, যার কথা শুনতে ভাল লাগছিলো। তিনি আমাকে আজব এক জায়গার কথা বললেন আর তার চেয়েও এক
আজব মানুষের কথা বললেন যার গল্পটা শুনে মনে হলো এই অলৌকিক মানুষের দেখা আমাকে করতেই হবে। আমার ভয় হলো, তিনি হয়তো বেঁচে নেই। কিন্তু ভাগ্যটা আমার ভালো, তিনি বেঁচে আছেন। আমি তার সাথে দেখা করতে যেতে চাই, এখনই... শুনে তিনি বললেন, অনেক দূর। তুমি আমার গাড়িটা নিয়ে যাও- আর তাকে আমার হয়ে এই চিঠিটা দিও।
সারারাত গাড়ি ছুটে চললো, তন্দ্রা আর জাগরণের মধ্যে কখনও ঘুমিয়ে পড়ি। কখনও চোখ খুলে জানালা দিয়ে দেখি আকাশে তারার দল, আমাদের সাথে ছুটে চলেছে। আবার কখনও মেঘে ঢেকে যাচ্ছে সবকিছু। আকাশে সেদিন চাঁদ ছিল না, তাই চারপাশটাকে মনে হচ্ছিলো আরো অন্ধকার। অন্ধকারের মধ্যে কখন পুরোটা ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না। ঘুম ভাঙলো ড্রাইভারের ডাকে, এসে গেছি। কিন্তু... ড্রাইভার জানালো, যার কাছে আমরা এসেছি তিনি কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন।
শুনে আমার ঘুম পুরো কেটে গেল, অলৌকিক মানুষটাকে একটুর জন্য জানা হলো না- নিজের ভাগ্যকে গাল দিতে দিতে চিঠিটা নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালাম। অন্তত তার মুখটা একবার দেখে যাই। আর তার চিঠিটা তার বুকের ওপর রেখে আসবো, এটা মনে মনে ভাবতে ভাবতে গাড়ি থেকে নামতেই চমকে গেলাম। হাতের চিঠির খামের ওপর বাবার নাম লেখা।
পাশের বাড়ির চাচা আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, তা- তুই খবর পেলি কী করে?
আমি মাথা নিচু করি। চাচা আমাকে বুকে চেপে ধরে রাখেন। বলেন, কাঁদিস না। ছেলেমেয়েরা কাঁদলে বাবার আত্মা কষ্ট পায়।
আমি তাকে বলতে পারিনা, আমি বাবার কাছে আসি নি। আমি এক অলৌকিক মানুষকে চিনতে ছুটে এসেছিলাম.. যার সাথে আর আমার দেখা হলো না...


Comments

আয়নামতি's picture

আটপৌরে গল্পটা কেমন চমৎকার ভাবে বদলে গেলো!

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

পোস্টটা একবার সম্পাদনা করুন। ফরম্যাট, বাক্যের ভুল - এসব ঠিক করা দরকার। গল্পটা একরৈখিক, সম্ভবত তাই ট্যুইস্টটাকে ঠিক ট্যুইস্ট বলে মনে হয়নি। উপস্থাপনা নিয়ে আরেকবার ভেবে দেখতে পারেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কর্ণজয়'s picture

১০০।। সত্যবাণী।।। একটু সময় প্রার্থনা-

তাহসিন রেজা's picture

Quote:
কাঁদিস না। ছেলেমেয়েরা কাঁদলে বাবার আত্মা কষ্ট পায়।

ঠিক এই কথাটাই আমাকে বলেছিল লোকজন বাবার মৃত্যুর পর। অথচ আমি কাঁদছিলাম না। শুধু অবাক হয়ে বাবার মৃত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। গল্পটা মনকে বিষণ্ণ করে দিল।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সোহেল ইমাম's picture

আদিবাসীদের মধ্যে বা আদিম ধাঁচের সমাজে কিন্তু ধারনা করা হয় না কাঁদলে মৃতের আত্মা ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন রকম দুর্ভোগ যেমন শিকার না পাওয়া, রোগবালাই এসব দিয়ে জীবিত আত্মীয়দের শাস্তি দেয়। এজন্য শোকের অনুভূতি থাকুক না থাকুক কান্না কাটির মাধ্যমে ভালোভাবে শোক প্রকাশ করাটা সবাই উচিত কাজ বলে মনে করে। কাছের মানুষ আত্মীয় পরিজন মারা গেলে বিশেষভাবে শোকপ্রকাশের কিছু নিষেধাজ্ঞা ইসলাম ধর্মে আছে। ইসলাম যেহেতু ট্রাইবাল ধর্ম গুলোকে পদানত করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সে কারণেই কি এই ট্রাইবাল রীতির বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলো?

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

জাবির বিন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ)-এর বর্ণনাঃ “রাসুল (সাঃ) আবদুর রাহমান বিন আউফের হাত ধরে তাঁর পুত্র ইব্রাহিমের কাছে গেলেন। তিনি দেখলেন ইব্রাহিম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছেন। তিনি ইব্রাহিমকে নিজের কোলে নিলেন এবং অশ্রু বিসর্জন করলেন। আবদুর রাহমান তাঁকে বললেন, “আপনি কাঁদছেন? আপনি কি আপনার উম্মতদেরকে কাঁদতে নিষেধ করেননি?” তিনি বললেন, “না। বরং আমি তাদেরকে দুটি নির্বোধসুলভ ও পাপাচারমূলক চীৎকার থেকে বিরত থাকতে বলেছিঃ একটি হচ্ছে বিপদের সময়ে চীৎকার করা, হাত আঁচড়ানো ও পরিধেয় ছিন্ন করা, আর অন্যটি শয়তানের মতো চীৎকার করা।“ (সহীহ্‌ আত্‌-তিরমিযী, হাদিস নং- ১০০৫)

“কাঁদ, কিন্তু শয়তানের মতো চীৎকার করে নয়। যা কিছু চোখ ও হৃদয় থেকে আসে তা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে আসে, এবং তা করুণা; কিন্তু যা কিছু হাত ও জিহ্বা থেকে আসে তা শয়তানের কাছ থেকে আসে।“ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ২১২৭)

অর্থাৎ, ইসলামে মৃতের জন্য কাঁদতে নিষেধ করা হয়নি, চীৎকার করে শোকোচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। বস্তুতঃ ইসলামে কোন প্রকার আবেগ প্রকাশেই বাড়াবাড়ি সমর্থন করে না। গোত্রভিত্তিক ধর্মগুলোর বিরুদ্ধে ইসলামের আগে খ্রীষ্টান আর ইহুদীরাও দাঁড়িয়েছিল।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

Emran 's picture

Quote:
অর্থাৎ, ইসলামে মৃতের জন্য কাঁদতে নিষেধ করা হয়নি, চীৎকার করে শোকোচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। বস্তুতঃ ইসলামে কোন প্রকার আবেগ প্রকাশেই বাড়াবাড়ি সমর্থন করে না।

আমাদের দেশে তো শোকপ্রকাশের ক্ষেত্রে তো উল্টো আচরণই প্রকাশ পায়, লোকজন চিৎকার করে বিলাপ করে! আমার কাছে সবসময়ই মনে হত এই ritual wailing-এর কতটুকু প্রকৃত আবেগ, আর কতটুকু থিয়েটার।

মোহররমের তাজিয়া মিছিলে বিলাপ করতে যেয়ে শিয়ারা যে নিজেদের শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে, সেই ritual laceration-এর ব্যাপারে ইসলামের কোন বক্তব্য আছে কি?

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

মৃতের জন্য কৃত বিলাপ কোথাও প্রকৃত আবেগপ্রসূত, কোথাও নাটকপ্রসূত। এক ভদ্রলোক অকালে মারা গেলে তাঁর ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যে বিলাপ করতে দেখেছি সেটা আবেগপ্রসূত - দেখলেই বোঝা যায়। আবার কিছুদিন আগে এক বড় নেতার মা অতি বৃদ্ধাবস্থায় মারা গেলে তার দলের কিছু কর্মী বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায় - যে কারো কাছে বোধগম্য এটা বিশুদ্ধ নাটক।

আশুরার তাজিয়া নির্মাণ, তাজিয়া মিছিল, সেখানে বিলাপ, নিজেদেরকে রক্তাক্ত করা ইত্যাদি ব্যাপারে শিয়া সেক্টের ভাষ্য আর সুন্নী সেক্টের ভাষ্য এক নয়। যেহেতু এসবের শুরু দ্বিতীয় ফিৎনার পর থেকে তাই এসব ক্ষেত্রে সরাসরি ক্বুরআনের আয়াত বা কোন হাদীস থাকা সম্ভব নয়। অন্য কোন ঘটনা বা নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নাযিলকৃত আয়াত বা বর্ণিত হাদীসের আলোকে একে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন ব্যাখ্যাদাতার ব্যাখ্যা বিভিন্ন প্রকার হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সোহেল ইমাম's picture

গল্পটা পড়ে চমৎকার লাগলো। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

এক লহমা's picture

যাকগে, পরের গল্পটার জন্য অপেক্ষা করা যাক। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.