ক্রিকেটই যত নষ্টের গোঁড়া!!!!!

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Sat, 03/10/2015 - 8:15pm
Categories:

২০০৬ সনের ১৭ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট সফরের মাত্র দুই মাস আগে, ব্রিটিশ পত্রিকা 'ডেইলি টেলিগ্রাফ'কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান দলপতি রিকি পন্টিং। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে 'ক্রিকেট কি কি পরিবর্তন দেখতে চান' - এমন প্রশ্নের উত্তরে রিকি বলেনঃ "I think the international schedule is about right, with 30 one-dayers and 15 Tests a year. What I would not have is the minnow nations in the World Cup and the Champions' Trophy, and I would not have Bangladesh and Zimbabwe playing Tests at present." মানে, বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অথবা টেস্ট - এই ধরণের মর্যাদাপূর্ণ ক্রিকেট আসরগুলোতে বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে বা এমনতরো ছোট-খাটো দেশগুলো যে ঘন ঘন সুযোগ পাচ্ছে, এই ধরণের ক্রিকেটীয় পরিবর্তন অসি দলপতির একেবারেই পছন্দ নয়!

বলা বাহুল্য, এপ্রিল মাসে তারপরও সাফল্যের সাথে বাংলাদেশে ক্রিকেট উৎসব হয়েছিল, এবং ফতুল্লায় রিকির দলকে প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশ! এছাড়া, মাত্র বছর খানেক আগেই কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল বাংলাদেশের আশরাফুলরা।

প্রায় দশ বছর পর আবার যখন বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট উৎসবের জোয়ারে আক্রান্ত গোটা বাংলাদেশ, অপেক্ষাকৃত তরুন ও দুর্বল অসিদের সাথে যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী উজ্জিবিত টাইগারদের সেয়ানে সেয়ানে লড়াই দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব, সেই সময় অসি ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান সাদারল্যান্ড ক্রিকেট পাগল বাংলাদেশীদের প্রবল সহানুভূতি জ্ঞাপণপূর্বক সফর স্থগিত করার কারণ দর্শানঃ 'কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এছাড়া আর আমাদের কিছুই করার ছিল না।'

সত্য, যে কোন দেশ তার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, এই অধিকার শতভাগ সংরক্ষনযোগ্য! কিন্তু একটি দেশের গায়ে সন্ত্রাসী দেশের সার্টিফিকেট সেঁটে দেয়া, এবং তাকে অন্য সব দেশের চোখেও বর্জনীয় প্রতিপন্ন করা ..... সেও সমর্থযোগ্য? আশ্চর্য হল, কিছু বাংলাদেশী নাগরিকও অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশকে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের জন্য নিরাপদ পোতাশ্রয় বানানোর আহবান জানিয়েছেন!

হ্যা, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে, ঘটেছে। ২০০৫ সনের ১৭ আগস্ট নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি ৬৩ টি জেলায় ৪৪৯ টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এর আগে ২০০৪ সনের ২১ মে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধূরি সিলেটের একটি মাজার পরিদর্শনে গেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ তাকে উদ্দেশ্য করে গ্রেনেড আক্রমন করলে সেখানেও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ২০০৪ সনেই একুশে আগস্ট ঢাকার একদম প্রাণকেন্দ্রেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ঝরে গিয়েছিল ২৪ টি প্রান। ঘটনাগুলো ছিল খুবই মর্মন্তুদ এবং বাংলাদেশের ইমেজের জন্যও ক্ষতিকর। তবু আশ্চর্যজনক হল, ২০০৪ সনের অক্টোবরে ঢাকাতেই টেস্ট খেলতে আসে নিউজিল্যান্ড, এরপর ডিসেম্বরে সেই ঢাকাতেই টেস্ট খেলে ভারত। আর ২০০৬ এর এপ্রিলে চলে আসে অসিরাও! বলা বাহুল্য, তখন পর্যন্ত জঙ্গী হামলার কোন কূল-কিনারাই করতে পারেনি বাংলাদেশের আইন-শৃংখলা বাহিনী! তবু এত্ত এত্ত স্পষ্ট জঙ্গী হামলার পরও বাংলাদেশের গায়ে 'টেররিস্ট' সার্টিফিকেট লাগানোর বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখা যায়নি এমনকি উন্নত নাসা ক্রিকেট জাতিগুলোর মধ্যে!

তো আজ এমন কি হল যে, একের পর এক সফল ক্রিকেট উৎসব আয়োজন করে, একের পর এক ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারিয়ে দিয়ে যে বাংলাদেশে সগৌরবে অবস্থান করছিল ক্রিকেট বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে, সে-ই কিনা প্রায় ছিটকে যেতে বসেছে একেবারে বৃত্তের বাইরে? হঠাৎ কি এমন পাপ করেছে বাংলাদেশের মানুষ যে, পাকিস্তানের মতই এক-ঘরে আর অস্পশ্য একটা পরিণতির দিকে তাদের প্রায় জোর করে ঠেলে দেয়া হচ্ছে?

হ্যা, ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতা হয়েছে এই দেশে, একের পর এক প্রকাশ্যে ব্লগার খুন হচ্ছেন, কিন্তু তবু কি বাংলাদেশ পাকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানের মত দেশের চিত্র তৈরী করে বিশ্ব নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অন্তরে?

বাংলাদেশে রাজনৈতিক হানাহানি-খুনোখুনি বেড়েই চলেছে, সাম্প্রদায়িক দাবদাহে পরিবেশ বিপর্যস্ত, তবু ক্রিকেট যেন এ সব কিছুর বাইরে এক আলাদা জগত আমাদের দেশে। বাংলাদেশের খেলা যখন থাকে, তখন একজন শ্রমজীবির কানে যেমন রেডিও দেখতে পাওয়া যায়, তেমনি এক শিল্পপতিকেও টাইট শিডিউলের ফাঁকে ফাঁকেই কান উৎকীর্ণ করে থাকতে দেখা যায় ক্রিকেট ধারাভাষ্যে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভালবাসায় লিঙ্গ- জাতি- বর্ণ- ধর্ম-দল-মত-বয়স ভেদ নেই, ক্রিকেট হলেই সব ভুলে উৎসবের জোয়ারে আক্রান্ত হয়, এমন জাতি, এমন দেশ পৃথিবীতে এই মুহুর্তে আর আছে?

হয়ত বাংলাদেশের মানুষের এই অতুল্য ক্রিকেট ভালবাসা-ই কাল হয়েছে! কোন কোন স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে এই ক্রিকেট উৎসব একটা আতঙ্ক ছিল হয়ত! একের পর এক সরকার পতনের ডাক দেয়া হয়, অথচ বাংলাদেশের মানুষ সেই আহবান উপেক্ষা করে মাতোয়ারা হয় একের পর এক ক্রিকেট উৎসবে; পাকিস্তান-ভারত-সাউথ আফ্রিকা বধের পর আনন্দের জোয়ারে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশ!

সুতরাং, ক্রিকেটই যত নষ্টের গোঁড়া!!!!! বন্ধ করতে হবে এই ক্রিকেট উৎসব, মানুষকে নিয়ে আসতে হবে ড্রইং রুমের টিভির সামনের সোফা থেকে রাজপথে, তাদের হাতে তুলে দিতে হবে ককটেল, পেট্রোল বোমা, গ্রেনেড........

কেউ কেউ মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ার আশঙ্কার উৎসমূল বাংলাদেশ থেকেই উৎসরিত। তবে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ যাই হউক, জঙ্গী হামলার আশঙ্কা ক্ষণে ক্ষনে বিদ্যমান, আর এখানেই ঝটতি জঙ্গী হামলার আসল বৈশিষ্ট্য, মানে, না বলে, না কয়ে, কোন ইঙ্গিত ছাড়াই ঝড়ের মত হামলে পড়ার মত দৃশ্যটি সার্থকতা লাভ করে থাকে। সেই হিসবে বাংলাদেশেও বাংলা-অসি টেস্ট চলাকালিন জঙ্গি বোম বিস্ফোরিত পারে বটে। কিন্তু এমন ঘটনা মেলবোর্ন বা পার্থে ঘটতে পারে না কি? বা, এই ধরণের জঙ্গী হামলা অস্ট্রেলিয়াতে ঘটবে না, সেই ব্যাপারে কজন অস্ট্রিলিয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ওপেন চ্যালেঞ্জ জানাতে এগিয়ে আসবেন?

পাকিস্তান জঙ্গী দেশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পরিচিত ছিল, কিন্তু তবু শ্রীলংকান খেলোয়াড়দের উপর আক্রমনের পূর্ব পর্যন্ত সেই জঙ্গী পাকিস্তানেও ক্রিকেট চালাতে খুব বেশী আশঙ্কায় ভুগতে দেখা যায়নি কাউকে!

বাংলাদেশ পাকিস্তান-আফগানিস্তান-সিরিয়া-ইরাকের মত যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট কখনো জঙ্গী তো দূরের কথা, ঠুনকো ছিনতাইকারীর কবলেও পড়েনি, তবু বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের ঘোষনাকেও পর্যাপ্ত মনে হয়নি ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা সাদারল্যান্ডদের! অবশ্য উন্নত জাতিয়তার অধিকারী সাদারল্যান্ডদের কেউ জিজ্ঞাসা করার সাহস দেখায়নি যে, সর্বশেষ পাকিস্তান-ভারত-সাউথ আফ্রিকা সফরের পর এমন কি ঘটেছে বাংলাদেশে যে, একটা চরম নিরাপত্তাহীনতায় কেঁপে কেঁপে উঠছে অসি মন?

এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে যদি সব সহিংসতা, জঙ্গিবাদ এই মুহুর্তে নির্মুলও হয়, তবু সাদারল্যান্ডদের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা দূরীভূত হবে না, কারণ তা মনে হয় অন্য সুতোয় বাঁধা! হ্যা, আমাদের দেশ থেকে জঙ্গীবাদ, সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে, তবে তার জন্য সাদারল্যান্ডের প্রেস্ক্রিপশান না নিলেও চলবে মনে হয় আমাদের! বরং অসিদের কাছে করজোড় নিবেদন করা ছেড়ে দিয়ে বিসিবির উচিত এই মুহুর্তেই ক্ষতিপূরণ দাবি করা! কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই, কোন সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমান ছাড়াই একটি দেশকে পাকিস্তানের কাতারে নিয়ে আসা, বা, সন্ত্রাসী দেশগুলোর তালিকায় ঠেলে দেয়ায় ইমেজের যে ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের, তার জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়ার শতভাগ অধিকার আছে মনে হয় বাংলাদেশের মানুষের।

..........

অনিত্র


Comments

হিমু's picture

গোড়া > মূল
গোঁড়া > অতিমাত্রায় রক্ষণশীল

অতিথি লেখক's picture

ধন্যবাদ হিমু ভাই ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য। বিশেষ করে টাইটেলে ভুল অমার্জনীয়, আমি দুঃখিত, সম্ভব হলে অ্যাডমিন বানানটি ঠিক করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে কৃতজ্ঞ থাকব।
।।।।।।
অনিত্র

সত্যপীর's picture

বাজে লেখা।

Quote:
সেই হিসবে বাংলাদেশেও বাংলা-অসি টেস্ট চলাকালিন জঙ্গি বোম বিস্ফোরিত পারে বটে। কিন্তু এমন ঘটনা মেলবোর্ন বা পার্থে ঘটতে পারে না কি?

পারে না।

..................................................................
#Banshibir.

Dixon's picture

Why do you think this is a baje lekha? Please explain yourself.

অতিথি লেখক's picture

উন্নত বিশ্বে টেররিস্ট আক্রমন হরহামেশাই হয়, হচ্ছে। হয়ত বাংলাদেশ অত উন্নত নয় বলে এখানে আশংকটা বেশী; তাছাড়া, উন্নত বিশ্ব হয়ত বাংলাদেশকে জঙ্গীবাদ তৈরীর ফ্যাক্টরি হিসেবে দেখে থাকে; কিন্তু উন্নত বিশ্বের সাথেই জঙ্গিবাদের রয়েছে নিবিঢ় সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের বিস্ফোরণে উন্নত বিশ্বের অনেকখানি ভূমিকা, তা ইতিহাস বই পাঠ করলেই বের হয়ে আসে।

আমি আমার চিন্তা-ভাবনা থেকে লিখেছি, আপনার কাছে বাজে মনে হওয়ার জন্য দুঃখিত!
।।।।।।।।।
অনিত্র

অতিথি লেখক's picture

Quote:
পারে না।

এর আগে ফ্রান্সের স্টেডিয়ামে বোমা হামলা হয়েছিল, ১৩/১১/২০১৫। আর এবার অল্পের জন্য ক্রিকেটাররা প্রাণে বেঁচেছেন নিউজল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে, মেলবোর্নের চেয়েও শান্তিপূর্ণ জায়গা বলেই লোকে জানত। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার একজন সিনেটরের রেসিস্ট উক্তি এবং তার ফলোয়ারস সংখ্যা বলে দিচ্ছে এই আক্রমনের জন্য মেলবোর্ন আরও ভাল জায়গা।
তো এইবার কি বলবেন, মশাই?

মন মাঝি's picture

বাস্তবতা, যুক্তিবোধ আর এমপ্যাথি-বর্জিত, আত্নকেন্দ্রিক আবেগে অন্ধ, জাতীয়তাবাদী নাটুকে সেন্টিমেন্টালিজমে জর্জরিত যে প্রতিক্রিয়ার ঝড় মিডিয়ায় দেখছি - এই লেখাটাও পুরোপুরি সেই গোত্রেরই হয়েছে।

****************************************

অতিথি লেখক's picture

Quote:
বাস্তবতা, যুক্তিবোধ আর এমপ্যাথি-বর্জিত, আত্নকেন্দ্রিক আবেগে অন্ধ, জাতীয়তাবাদী নাটুকে সেন্টিমেন্টালিজমে জর্জরিত

কেন বাস্তবতা বর্জিত? কেন যুক্তিবোধ বর্জিত? কেন এমপ্যাথি-বর্জিত? কেন আত্মকেন্দ্রিক আবেগে অন্ধ? কেন জাতীয়তাবাদী নাটুকে সেন্টিমেন্টালিজমে জর্জরিত?
যেহেতু ব্লগ মানেই মুক্ত আলোচনার উন্মুক্ত দুয়ার, সেই হেতু এই কেনগুলোর উত্তর মিলবে আশা করছি। তার আগে লেখাটি তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ মেনে নিচ্ছে।
।।।।।।।।।।
অনিত্র

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.