(ডিসক্লেইমার: এটা প্রচলঅর্থে ঠিক এই লেখকের মৌলিক কোনো গল্প নয়; এটা আমি শুনেছিলাম বন্ধুদের মুখে। সেটার অনেক সংস্করণ ছিলো। এটা সেগুলোর কোনো একটা কিংবা কয়েকটার যৌথরূপ।)
(১)
ধর্ষণের শিকার হয়ে পুলিশের কাছে বিচার চাইতে গেলেন হাসি। পুলিশ যথারীতি বললেন, ‘হিস্টোরি বলেন।’ হাসি বলতে লাগলেন, আমি যেই বাসায় কাজ করি সেই বাড়ির বড় ছেলে সাগর আজ সকালে জোর করে... পুলিশ বললেন, ‘ঠিক বুঝতে পারতেসি না। বিষয়টা বেশ স্পর্শকাতর মনে হইতেসে। আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। চলেন, ভেতরে গিয়ে বলেন।’
পুলিশের এহেন আচরণে হাসি মুগ্ধ। পুলিশ আর হাসি ভেতরঘরে গেলেন।
ভেতরঘর থেকে বেরিয়ে এসে হাসি কিছুটা সময় অপেক্ষা করলেন ওয়েটিং রুমে। এরপর তিনি ওসি’র রুমে গেলেন। প্রথামতো তিনিও জিজ্ঞেস করলেন, ‘হিস্টোরি বলেন।’ হাসি তখন হিস্টোরি বলতে শুরু করলেন। আমি যেই বাসায় কাজ করি সেই বাড়ির বড় ছেলে সাগর আজ সকালে জোর করে...’
ওসি: ও আচ্ছা বুঝছি...
হাসি: স্যার, এখনো শেষ হয় নাই। এরপর আমি পুলিশের কাছে গেলাম। তিনি আমারে ভেতরঘরে নিয়ে...
ওসি: হুম। বিষয়টা বেশ স্পর্শকাতর মনে হইতেসে। আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। চলেন, ভেতরে গিয়ে বলেন।
হাসি অতঃপর ভেতরঘরে গেলেন ওসির সঙ্গে।
ওসির রুম থেকে বেরিয়ে হাসি চলে গেলেন এলাকার মেম্বরের সঙ্গে দেখা করতে। ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে গিয়ে জানলেন মেম্বর নাই। তার সহকারী কাজল আছে। এরে আবার হাসি ভালোমতো চেনে, পাশেই এর বাড়ি। এর চরিত্র সম্পর্কে অনেকের কাছেই শুনেছে হাসি। তাই ওকে কিছু না-বলার সিদ্ধান্ত নেয়। কাজল জানালো মেম্বর আসবে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে। কিন্তু বলতে না বলতেই মেম্বর হাজির। অবাক কাণ্ড!
কিছুটা সময় অপেক্ষার পর হাসি’র সুযোগ আসে মেম্বরের সঙ্গে সাক্ষাতের। হাসি কথা বলতে শুরু করবে, কিন্তু হাসির পাশে কাজল কেমন বিটকেলে দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাসি আমতা আমতা করলে মেম্বর নিজে থেকেই কাজলকে বাইরে যেতে বললেন। কাজল সরে গেলে সপ্রতিভ হয়ে ওঠে হাসি।
মেম্বর জানতে চাইলেন ঘটনা। হাসি বলতে শুরু করলেন, ‘স্যার আমি যে-বাসায় কাজ করি...’
মেম্বর: রেইপ কেইস নাকি?
হাসি: জ্বে স্যার।
মেম্বর: ও, হিস্টোরি বলেন। পুরো হিস্টোরি না জানলে এইসব বিচার করা মুশকিল। আর তাছাড়া, বিষয়টা বেশ স্পর্শকাতর মনে হইতেসে। আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। চলেন, ভেতরে গিয়ে বলেন।
হাসি অতএব ভেতরঘরে গেলেন মেম্বরের সঙ্গে।
মেম্বরের অফিস থেকে বেরিয়ে এলাকার চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন হাসি। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। তবু শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যানের সাক্ষাত পেলেন। চেয়ারম্যানও জানতে পারলেন, এটা রেইপ কেইস। অতএব, হাসিকে হিস্টোরি বলতে বললেন, এবং ভেতরঘরে যাবার কথা বললেন। তখনই হাসি বলে উঠলো: স্যার আর কত হিস্টোরি! সেই সকাল থেকে সাগর-পুলিশ-ওসি-মেম্বর... আমার হিস্টোরি ব্যথা হইয়া গেসে স্যার...
[এটা গল্প হতে পারে, কিন্তু অবিশ্বাস্য নয়। এটা সত্য হতে পারে, কিন্তু প্রত্যাশিত নয়।]
(২)
ধর্ষণের শিকার হয়ে পুলিশের কাছে বিচার চাইতে গেলেন হাসি। পুলিশ যথারীতি বললেন, ‘হিস্টোরি বলেন।’ হাসি চমকে উঠলেন ’হিস্টোরি’র কথা শুনে। তিনি খুবই উচ্চমানের পাঠক। ২০১৪ সালে সচলায়তনে প্রকাশিত ’হিস্টোরি’ গল্পটি তাঁর পড়া ছিলো। তিনি তাই একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে পুলিশের দিকে তাকিয়ে, খানিকটা টিপ্পনী কেটে, বললেন: ‘ভেতরঘরে আসবো?’
পুলিশ: ও আপনিও সচলের সেই গল্পটা পড়েছেন? বাহ।
হাসি: আপনিও?
পুলিশ: হুম। তবে আপনাকে ভেতরঘরে আসতেই হবে।
হাসি (খানিটা দ্বিধান্বিত): চলুন।
পুলিশ: না, আমার ও-ঘরে ঢোকার অনুমতি নেই।
ভেতরঘরে গিয়ে দেখেন দু’জন পুলিশ অফিসার বসে আছেন। তাঁদের আরো দুই সহকারী। অফিসারদের একজন হাসিকে ডেকে নিলেন। সবার রুম কাঁচঘেরা। অফিসার হাসিকে বললেন, এই ঘরে যা বলবেন, পাশের রুম বা অন্য কোথাও থেকে কেউ শুনতে পাবে না। আপনি নিশ্চিন্তে সব বলতে পারেন। তাছাড়া আপনার পরিচয়ও গোপনীয় রাখা হবে।
এরপর একটা মেশিনের সামনে হাসির ভোটার আইডি কার্ডটা ধরতে বললেন অফিসার। হাসি বললো, তাহলে তো আপনি সব তথ্যই পেয়ে যাবেন। অফিসার হেসে বললেন, না, এটা শুধু আপনার বয়স নির্ধারণের জন্য। আমাদের এই সিস্টেমে আমরা এমনকি জন্মতারিখও দেখতে পাবো না। শুধু আজকের দিনের সঙ্গে আপনার জন্মসাল তুলনা করে আপনার বয়সটা বলা হবে। তাও সরাসরি বয়স বলা হবে না। শুধু জানানো হবে আপনি প্রাপ্তবয়স্ক কি না।
এরপর একটা কম্পিউটারে বসিয়ে দিলেন হাসিকে। সেখানে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে থাকলেন হাসি। শেষে ফরম জমা দেয়া হলে তাঁকে একটা কোড নম্বর দেয়া হলো। এটাই এই মামলায় হাসি তথা বাদীর পরিচয়।
অফিসার এরপর বললেন, আপনাকে এবার...
হাসি: ওসির রুমে?
অফিসার: ওসি’র রুমে কেন? ওসি’র অফিসে তো সব তথ্য চলে গেছে। আপনার ফরেনসিক টেস্ট হবে। সেখানে যেতে হবে।
পাশের ফরেনসিক বিভাগে নেয়া হলো হাসিকে। আগের রুম থেকে প্রাপ্ত আইডি দিয়ে তাঁর সিরিয়াল দেয়া হলো। এরপর হাসিকে নেয়া হলো কাউন্সেলিং রুমে। সেখানে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে কাউন্সেলিং দেয়া হলো। কাউন্সেলরের রুম থেকে হাসিকে নেয়া হলো আইন-বিষয়ক কিউন্সেলিং এবং সহযোগিতা দেয়ার জন্য। সেখান থেকে বেরিয়ে আবার ফরেনসিক বিভাগে। সেখানে ফরেনসিক পরীক্ষা হলো হাসির। হিস্টোরি’র এখানেই শেষ।
[এটা গল্প হতে পারে, কিন্তু অসম্ভব মোটেও নয়। একদিন কোনো এক লেখক এই গল্পটা লেখার সময় হয়তো লিখবেন, “একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা”। তাঁর জন্য আমার কিঞ্চিত ঈর্ষা হয়, আর সেদিনের কথা ভেবে ছদ্ম-গর্বে আমার বুকটা ফুলে ওঠে।]
Comments
হিস্টোরি যথাযথ জায়গাতেই শেষ হোক
তাই যেন হয়।
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
Post new comment