প্রতিযোগিতা

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture
Submitted by ashimul on Mon, 21/04/2014 - 10:28pm
Categories:

তারা বলতেন, প্রতিযোগিতাই হচ্ছে ব্যবসার প্রাণ।
খুব অল্প বয়সে আমি বিষয়টি বুঝে গিয়েছিলাম আমার দাদাকে দেখে। আমার গরীব দাদা এ প্রতিযোগিতার কারণেই ব্যবসা করতে গিয়ে উপূর্যপরি দু’বার ব্যর্থ হয়েছিলেন।
হাঁড়িপাতিল আর কাঁচের জিনিসপাতির ছোট্ট একটি দোকান ছিল তার। দাদা বলতেন, “ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা অপরিহার্য, একে এড়ানো অসম্ভব। ধরো, আমি নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপাতির একটা দোকান খুললাম রাস্তার মোড়ে, আর আমার দোকান থেকে সামান্য দূরে অন্য কেউ একই পসরা সাজিয়ে আরেকটা দোকান খুললো। সে প্রতিযোগিতা শুরু করলো তার জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে। একই জিনিস আমার দোকানের চেয়ে তার দোকানে সস্তায় পাওয়া যায়। এ কারণে, কাস্টমার আমার দোকান বাদ দিয়ে তার দোকান থেকেই কিনবে। এভাবে দিনে দিনে আমি ফতুর হয়ে ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হবো। এটাই হচ্ছে প্রতিযোগিতা।”
“কিন্তু দাদা, এভাবে ফতুর হয়ে গেলে তো আমরা না খেয়ে মারা যাবো,” আমি প্রশ্ন করতাম।
দাদা উত্তর দিতেন, “হ্যাঁ, তুমি মারা যাবে। কিন্তু, কম দামে জিনিস কিনে কতো কাস্টমার উপকৃত হচ্ছে, সেটা ভাবো।”
“কাস্টমারের উপকারে আমার কী লাভ?”
আমার পালটা প্রশ্ন শুনে দাদা বলতেন, “মোটা দাগে, হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতাই কিন্তু ভালো। কারণ, এতে করে না চাইলেও সব সময় কাস্টমারের ভালোর কথা ভাবতে বাধ্য হবে তুমি।”
“কিন্তু কেউ যদি আমাকে পথে বসানোর জন্য এসব করে, আমিও তাকে ছেড়ে কথা বলবো না।”
“কারণ, তুমি ঝগড়াটে এবং ক্ষ্যাপাটে”, দাদা বলতেন, “মনে রেখো, অন্যদের সঙ্গে খোঁচাখুচি করে ব্যবসা করা যায় না। বেশি গন্ডগোল করলে তারা তোমাকে জেলে পাঠাবে। ফলে, তুমিই ফতুর হয়ে যাবে। ব্যবসা ওখানেই শেষ। তাই বলছি, শোনো - ব্যবসা করতে হলে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে।”

দুই.
আজ অনেক বছর পর আমি স্মৃতিকাতর হই, দাদার সঙ্গে এসব আলাপের কথা ভাবি।
সময়ের স্রোতে ভেসে আমাকেও ব্যবসায় নামতে হয়েছিল। পরিসরটা দাদার ব্যবসার চেয়ে ছোট ছিল। কারণ, এ সময়ে আমাদের পরিবারের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। আমার বাবা মারা গেছেন, দাদাও আধা-পঙ্গু হয়ে সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতেন। ব্যবসা করা কিংবা ফতুর হওয়ার সুযোগ ছিল না তার।
সংসারের দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে গিয়ে ঠেলা ভ্যানে জিনিস বেচার লাইসেন্স নিলাম। মিষ্টি জলপাই, কমলা, শুকনো ডুমুর আর বিভিন্ন রকম বাদামে ভ্যান সাজালাম। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাদের এলাকা থেকে একটু দূরে নদীর ওপর যে ব্রীজ চলে গেছে ঠিক ঐ ব্রীজের মুখেই ঠেলা ভ্যান নিয়ে দাঁড়াবো। কারণ, ওখানে সব সময় ভীড় লেগে থাকতো। শহরের বিভিন্ন দিকের সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল ওটা। জায়গা বাছাইয়ের সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল না, অল্প কয়েকদিনেই টের পেলাম, বেচাবিক্রি ভালোই হচ্ছিল।
তখন ছিল বসন্তকাল। উষ্ণ দিনগুলোর খুব ভোরে আমি ঠেলা ভ্যানে মাল ভর্তি করে ব্রিজের ওখানে দাঁড়াতাম। সন্ধ্যায় যখন ফিরতাম তখন ভ্যানে কিছু ঠোঙা এবং প্লাস্টিকের ছাউনি ছাড়া আর কিছুই থাকতো না। বিশেষ করে রোববারে, ছুটির দিনে, প্রচুর লোক ব্রীজের দিকে ঘুরতে আসতো আর কেনাকাটার এমন ধুম পড়তো যে আমি দুটা ভ্যান ভর্তি মাল নিয়ে গেলেও যথেষ্ঠ ছিল না। ব্যবসা, এক কথায়, হু হু করে বাড়ছিল।
ঘরে ফিরে দাদাকে এ সুখবর জানাতেই দেখি তিনি তার আগের ধারণায় অনড়। প্রতিযোগিতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দাদা বললেন, “এখনো তুমি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবে না। কারণ তোমার ব্যবসায় কোনো প্রতিদ্বন্ধী নেই, তাই যতো ইচ্ছা বিক্রি করতে পারছো। কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখো, কী হয়...”

তিন.
দাদার কথাই সত্য প্রমাণিত হলো।
এক সকালে দেখি ঠিক আমারই মতো করে ঠেলা ভ্যান ভর্তি জিনিস নিয়ে ব্রীজের মাঝখানে দুই মহিলা হাজির! তারা সম্পর্কে মা-মেয়ে। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে চাই, কারণ আমার পতনের পেছনে তারাই দায়ী। আমি তাদের আজীবন মনে রাখবো।
মায়ের পোশাক আশাক দেখেই বুঝতে পারছিলাম তিনি ক্ষেত খামারে কাজ করেন। লম্বা কালো স্কার্ট আর শাল পরেছিলেন তিনি। তার ধুসর চুল ঘোমটায় ঢাকা ছিল। অদ্ভুত এক উদ্বেগ-আকুলতায় ভ্রু কুঁচকে রাখতেন তিনি। তাকালেই মনে হতো, কারো দিকে বিদ্রুপ ছুঁড়ে দিচ্ছে সে চাহনী।
কাস্টমারের জন্য জলপাই ঠোঙায় ভরে দেয়ার সময় কিংবা কমলা ওজন করার সময় ভ্রু ওপরে তুলে, নাকে-মুখে সশব্দ নিঃশ্বাস ফেলে, তিনি এমন ভাবভঙ্গি করতেন, যে কেউ দেখেই মনে মনে ভাবতো – আহা! কতো না যত্নের সঙ্গে ভদ্র মহিলা এ কাজ করছে!
কাস্টমারের হাতে জিনিস তুলে দেয়ার সময় তিনি প্রায়ই বলতেন – “দেখুন আপনাকে বেছে বেছে ভালো কমলাগুলোই দিয়েছি” কিংবা “পরিমাণে একটু বেশিই দিয়েছি, শুধু আপনার জন্যই, বুঝলেন!”
আর মেয়েটির কথা কী বলবো!
মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করতো না সে। যেন নিছক নিষ্প্রাণ অলঙ্কার! তবে এ কথা অস্বীকার করবো না, যেহেতু বয়সে আমি তরুণ ছিলাম, সুন্দরী নারীদের আমি পছন্দ করতাম এবং মেয়েটি যেহেতু আকর্ষণীয় ছিল, শুরুতেই আমার চোখ পড়েছিল তার ওপর।
তার বয়স হয়তো আঠারোর মতো ছিল, অথচ দেখলে মনে হতো তিরিশ বছর বয়স। আকর্ষণীয় এবং মোহনীয় শারীরিক গঠন ছিল তার। তার মুখ ছিল দুধের মতো সাদা কিন্তু সব সময় একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের ছায়া ছিল সেখানে। তার ফ্যাকাশে ঠোঁট আর চোখগুলো ছিল ধুসর এবং বিরক্ত। কেন জানি না সে প্রায়ই ঘৃণার অভিব্যক্তি হিসেবে নাক কুঁচকাতো। অধিকাংশ সময়ই তাকে গর্ভবতী নারীর মতো মনে হতো, যেন ক্লান্তি এবং অবসন্নতায়, যে কোনো মুহূর্তে জ্ঞান হারাবে সে।
তার মায়ের পায়ে থাকতো পুরুষদের বড় সাইজের জুতো। চঞ্চল চড়ুই পাখির মতো তিনি সারাক্ষণ তার ঠেলা ভ্যানের পাশে ব্যস্ত থাকতেন। মেয়েটির পরনে ছিল আঁটোসাঁটো সুয়েটার, মিনি স্কার্ট। পাশের এক চেয়ারে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতো আর সুঁই-সুতো দিয়ে কী যেনো সেলাই করতো।

চার.
মেয়েটির নাম ছিল ইয়োনিস।
ফর্সা রূপের জন্য তাকে দেখলেই আমার মৌরি মসলার কথা মনে পড়তো।
অন্যদিকে আমি ছিলাম লম্বা এবং ভারী শরীরের মানুষ। নিয়মিত শেভ করি না, মাথার চুলও অগোছালো থাকে। গায়ের জোড়াতালি দেয়া জামা দেখে আমাকে ভবঘুরে ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।
এছাড়াও নিজেকে সংবরণের যতোই চেষ্টা করতাম না কেন, আমার আচরণ ছিল খুব রুঢ়। সহজেই রেগে যেতাম। আমার কর্কশ কন্ঠ শুনেই মানুষ ভয় পেতো।
বুঝতে দেরী হলো না, প্রতিযোগিতার বাজারে কেবল বেশ-ভুষার জন্যই আমি হেরে যাচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যে মা-মেয়ে তাদের ঠেলাভ্যান বলতে গেলে প্রায় আমার ঠেলাভ্যানের পাশাপাশি নিয়ে এসেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দের মতো করে ইয়োনিসের মা আওয়াজ তুলতো, “দেখে যান, কেমন কমলা! দারুণ কমলা! আমার থেকে কমলা কিনুন।”
অন্যদিকে আমার ওভারকোটের বোতাম গলার নিচ পর্যন্ত লাগানো থাকতো, চোখ দুটো ঢাকা থাকতো মাথার ক্যাপে। এর ভেতর থেকে কর্কশ কন্ঠে বলতাম, “কমলা, মিষ্টি কমলা, কমলা।”
দুপক্ষের ডাকাডাকিতে কাস্টমাররা প্রথমে দ্বিধায় ভুগতো। প্রথমে তারা আমার দিকে তাকাতো, তারপর মায়ের দিকে এবং সব শেষে মেয়ের দিকে। অতঃপর তারা, বিশেষ করে পুরুষেরা, দুই মহিলার দিকেই এগিয়ে যেতো।
স্বভাবজাত ঢং এবং ভ্রু ওপরে তোলা ভঙ্গিতে ফল ওজন করার সময়ও ইয়োনিসে মা “কিনুন, কিনুন” হাঁক দিয়ে যেতেন। তার শংকা ছিল, তিনি যখন ফল ওজন করছেন ঔ অবসরে না জানি কোনো কাস্টমার আমার ভ্যানের দিকে চলে আসে! এমনই লোভী ছিলেন তিনি।
এমন তৎপরতায় বাড়তি কাস্টমার দেখে প্রায়ই তিনি ইয়োনিসকে তাড়া দিতেন, “এই মেয়ে ওঠো, কাজে হাত লাগাও।”
হাতের জিনিসগুলো রেখে ইয়োনিস দুই ধাপে ওঠে দাঁড়াতো, অনেকটা রাজকীয় ঢঙে, প্রথমে বুক তুলতো এরপর কটিদেশ। অবনত চোখে, কাস্টমারের দিকে না তাকিয়ে, কাজ করে যেতো। তারপর কোনো কথা ছাড়া, হাসি ছাড়া, আবার চেয়ারে বসতো সে।
খুব অল্প সময়ে, তীব্র প্রতিযোগিতায়, আমার প্রায় সব কাস্টমারকেই ছিনিয়ে নিয়ে গেল এই দুই নারী। তাই এদের আমি ঘৃণা করতে শুরু করলাম।
ইয়োনিসের মায়ের প্রতি আমার ঘৃণার তীব্রতা ছিল বেশি, কারণ কোনো দ্বিধাগ্রস্থ কাস্টমারকে নিজের দিকে ভাগিয়ে নিতে পারলেই তিনি আমার দিকে কিস্তিমাতের বিদ্রুপ হাসি ছুঁড়ে দিতেন। এমন অবস্থায় মন-মেজাজ তিক্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, আমারও হতো। দিনে দিনে আমি আরো রুক্ষ, কঠোর এবং ক্ষ্যাপাটে হয়ে উঠছিলাম।
লম্বা দাঁড়ি, জোড়াতালি জামায় নানান অঙ্গভঙ্গি আর খসখসে কন্ঠে বেসুরো চিৎকার করতাম “ও-ই মিষ্টি ক-ম-লা!” এমন দাঙ্গাবাজ আওয়াজ শুনে লোকজন আমার দিকে তাকাতো, ভয় পেতো, এবং আস্তে করে ইয়োনিসদের ভ্যানের দিকে এগিয়ে যেতো।

পাঁচ.
একদিন আমার আগ্রাসী আচরণে বিশ্রী এক কান্ড ঘটলো।
বয়সে তরুণ, ছোটখাটো শরীরের, এক কাস্টমার এসেছিল ফুলবাবু সেজে। সঙ্গে ছিল তার দ্বিগুণ আকৃতির এক মহিলা।
তারা আমার ভ্যানের ফলগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিল, কিন্তু কিনবে কি কিনবে না – সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। ওদিকে আমি চরম বিরক্তি নিয়ে অনুরোধ করে যাচ্ছিলাম, “আমার কমলাগুলো খুবই ভালো, দেখুন...।”
এরপরেও সে কমলাগুলো হাতে নিয়ে নানানভাবে পরখ করছিল আর মাথা নাড়ছিল। পাশের স্থুলকায়া মহিলাটি সম্ভবত তার মা ছিল, যিনি মোটামুটি চুপচাপই ছিলেন।
হঠাৎ ফুলবাবুটির চোখ গেল সুন্দরী ইয়োনিসের দিকে। অসভ্য শুওর ফুলবাবুটি আমার ভ্যান ছেড়ে যখন ইয়োনিসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন আমি ধৈর্য্যের সীমা হারালাম।
ফুলবাবুর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে চিৎকার করে বললাম, “আমার কমলাগুলো কিনবি না? পছন্দ হয় না আমারগুলো? বুঝি, সবই বুঝি, কেন ঐ হাতির মতো মহিলার ফলগুলোর দিকে তোর চোখ গেছে, বুঝি। ওর মেয়েটাকে দেখলে জিহবা লিকলিক করে, তাই না?”
লোকটিও ছাড়ার পাত্র নয়, হুংকার দিয়ে উঠলো, “হাত ছাড়, নইলে এক ঘুষিতে নাক-মুখ ফাটিয়ে দেবো।”
“হা! চেষ্টা করেই দেখ না, বুঝতে পারবি তারপর,” এক হাতে কাঁচের বোতল নিয়ে ধমক দিলাম। এর মধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। শেষতক পুলিস এসে আমাদের আলাদা করলো।
এ ঘটনায় দুটি বিশেষ ব্যাপার আমার নজরে আসে; প্রথমতঃ এই প্রথম আমি ক্ষোভে বিস্ফোরিত হয়েছিলাম ঈর্ষা থেকে, প্রতিযোগিতার ক্রোধ থেকে নয়। দ্বিতীয়তঃ এ হাতাহাতির ঘটনায় যখন পুলিস এসে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল, ইয়োনিস তখন প্রচ্ছন্নভাবে আমার পক্ষ নিয়ে বলে – কিছু দেখেনি বা শোনেনি সে।
ফলশ্রুতিতে, ইয়োনিসের প্রতি আমার ভালোলাগা আরো তীব্র হয়। তার মা তখন ছিল না সেখানে। ঐ একাকী সময়ের সুযোগ নিয়ে ইয়োনিসকে আমার সঙ্গোপন অনুভূতির কথা জানাই। বলি, আমি তাকে ভালোবাসি।

ছয়.
ইয়োনিসকে আমার ভালোবাসার কথা জানানোর ভঙ্গিতে কোনো ভনিতা ছিল না। বরং কন্ঠে ছিল আমার স্বভাবজাত কাঠিন্য।
ইয়োনিস আমার কথা শুনে আশ্চর্য হয়নি। মুখ তুলে বলেছিল, “তোমাকেও আমি পছন্দ করি।” এ চারটি শব্দ শুনে আমার মনের ভেতর কী তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেন না।
ঠেলাভ্যানের হাতল দুটো শক্ত করে ধরে সেদিন আমি নদীর তীর ঘেঁষে হেঁড়ে গলায় গান গাইতে গাইতে ঘরে ফিরছিলাম। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকজন আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিল যেন আমি পাগল হয়ে গেছি।
আমি পাগল হইনি, সীমাহীন সুখী হয়েছিলাম। জীবনে এই প্রথমবার কোনো নারী আমাকে ভালোলাগার কথা বলেছে। আমি নিশ্চিত ছিলাম, ইয়োনিসকে নিজের মতো করে পেয়ে গেছি।
কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় নদীর ধারে বসে, এটা ওটা আলাপ শেষে, আমি যখন ইয়োনিসের কোমরে হাত রাখতে চাইলাম, চুমু খেতে চাইলাম, তখন বুঝলাম তাকে আমি এখনো পুরোপুরি জয় করতে পারিনি। অনেক পথ বাকী এখনো!
জড়িয়ে ধরতে চাইলে ইয়োনিসের শরীর মৃত মানুষের মতো হয়ে যেতো; হাত দুটো ঝুলে যেতো, শরীর শিথিল আর পা দুটো বাঁকা হয়ে থাকতো। চুমু খেতে চাইলে আমার ঠোঁট কখনোই তার ঠোঁট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারতো না। অসহযোগিতার কারণে ইয়োনিসের গলা কিংবা বড়জোর থুতনি পর্যন্ত গিয়ে থামতে হতো আমাকে।
এরপর আমরা সময়-সুযোগ পেলেই দেখা করতাম। কিন্তু শরীরি ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারে একই ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটতে লাগলো।
একদিন অধৈর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, আমরা এরকম দেখা সাক্ষাৎ করছি কেন তাহলে?”
সে বলে, “...তুমি বড্ডো বেশি একরোখা, মহিলাদের সঙ্গে আচরণে তোমাকে আরো নম্র হতে হবে। তুমি কমলা বেচার মতো জোরাজুরি করে সব কিছু পেতে চাও।”
আমি জবাবে বলি, “তোমার এত কথা বুঝি না, আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত, ...বিয়ের পর আমরা অন্যসব ব্যাপার নিয়ে আলাপ করবো।”
ইয়োনিস না-সূচক মাথা নাড়ে, বলে – “বিয়ে করতে হলে পারস্পরিক ভালোবাসা থাকতে হয়। আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি না। আমার ভালোবাসা পেতে হলে তোমাকে ভদ্র হতে হবে। ...কেবল নম্র হলেই আমার ভালোবাসা পাবে।”
তার এ কথায় আমি এমনই ভয় পেলাম যে আর কখনো তার কোমরে হাত রাখার চেষ্টা করিনি।
ভালো হওয়ার চেষ্টায়, ভদ্র ও শোভন দূরত্ব রক্ষায়, আমরা মূলতঃ ভাই-বোনের সম্পর্কে চলে গেলাম। কালেভদ্রে আমি তার হাত ধরতাম।
এ ব্যাপারগুলো আমার কাছে মোটেও স্বাভাবিক কিছু বলে মনে হতো না। কিন্তু ইয়োনিস আমাকে ভদ্র আচরণ করতে এত চাপাচাপি করতো যে মনে হতো আমার অনেক চিন্তা ভাবনাই ভুল। মনে হতো, আমি প্রেম ভালোবাসার কিছুই বুঝি না।

সাত.
একদিন বিকেলে, ইয়োনিসের সঙ্গে আমার দেখা করার কথা ছিল না সেদিন, আমি তাদের বাড়ির ওদিকটার রাস্তায় আনমনে হাঁটছিলাম।
আচমকা দেখলাম, আমার সামনে দিয়ে দ্রুত পায়ে ইয়োনিস হেঁটে যাচ্ছে। আমাকে লক্ষ্য করেনি সে। আগ্রহ এবং ঔৎসুক্যে আমি খানিক তফাত থেকে তাকে অনুসরণ করলাম।
দেখলাম, সে নদীর ধারের একটি জায়গায় গেল। সেখানে এক লোক আগে থেকে তার জন্য অপেক্ষা করছিল।
তারপরের দৃশ্যগুলো খুব দ্রুত ঘটে গেল – ইয়োনিস লোকটির কাঁধে হাত রাখলো, মুখে হাত বুলালো। লোকটিও ইয়োনিসের কোমরে হাত রাখলো। তারপর তারা পরস্পরের ঠোঁটে গাঢ় চুম্বনে সিক্ত হলো। এই লোকটি মাত্র এক মিনিটের মধ্যে এমন সব কিছু করে ফেললো, যা আমি গত এক মাসে ভদ্র-নম্র আচরণ করেও পাইনি!
তারপর লোকটি অন্য দিকে মুখ ঘোরালে স্ট্রীট ল্যাম্পের আলোয় আমি তাকে চিনতে পারি। খাটো, মোটা, বয়সে তরুণ লোকটিকে কয়েকদিন ধরে আমাদের ঠেলাভ্যানের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখেছি। পেশায় কসাই সে, ব্রীজের কাছাকাছিই তার দোকান। দৈহিক গঠন বিবেচনা করলে, আমার তুলনায় সে নিতান্তই তুচ্ছ।
কেবল একটাই পার্থক্য – তার নিজের দোকান ছিল, আমার ছিল না। আমার পকেটে থাকা চাকুটি বের করলাম, আবার রেখে দিলাম। নিজেকে সংবরণ করে ওখান থেকে সরে গেলাম।

আট.
পরদিন ঠেলাভ্যান বাড়িতে রেখে রাস্তায় বের হলাম।
ওভারকোটের বোতাম গলা পর্যন্ত লাগিয়ে, মাথার ক্যাপে চোখ ঢেকে ব্রীজ এলাকায় গেলাম কাস্টমার সেজে। না চেনার ভান করে তীব্র কর্কশ এবং কঠোর কন্ঠে ইয়োনিসের মা’কে বললাম, “এক হেক্টোগ্রাম জলপাই দাও, বেছে বেছে ভালো থেকে দাও। বুঝতে পারছো?”
ইয়োনিস বরাবরের মতোই চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে কাজ করছিল। আমার দিকে তাকানোর সৌজন্যও দেখালো না। নিশ্চয়ই সে অনুমান করছিল, বাজে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
তার মা যখন কোনো রকম ঢং ছাড়া, অনেকটা দেমাগ নিয়ে জলপাই ওজন করছিল, মনে হচ্ছিল যেন আমাকে দয়া করে জলপাই দিচ্ছে, ঠিক তখনই আগের দিনের কসাইটি সেখানে এলো। সোজা ইয়োনিসের কাছে গেল সে।
আমি উচ্চস্বরে বললাম, “প্রতিদিন যেরকম চুরি চামারি করে ওজনে কম দাও, সেরকম করবে না, প্লিজ!”
এ কথা শুনে ইয়োনিসের মা ডাইনী বুড়ির মতো করে বললো, “এহ! আমি ওজনে কম দিই না। তুমি দাও। আর এজন্যই তো লোকজন তোমার থেকে জিনিস কেনা বন্ধ করেছে!”
তখন কসাইটি ইয়োনিসের মাথায় হাত বুলাচ্ছিল, কাছাকাছি ঘেঁষে কানে কানে কী যেন বলছিল।
জলপাইয়ের প্যাকেটটি হাতে নিলাম। একটা জলপাই মুখে দিয়ে তীব্র বিস্বাদে থু করে ইয়োনিসের মায়ের মুখে ছুড়ে দিলাম, “ইস্‌! এক্কেবারে পঁচা জলপাই দিয়েছে!”
মহিলা রাগান্বিত স্বরে উত্তর দিলো, “তুই পঁচা, কুৎসিত ভবঘুরে কোথাকার!”
বললাম, “আমার টাকা ফেরত দাও। তাড়াতাড়ি। কোনো রকম বাড়াবাড়ি করবে না।”
“কী বললে, টাকা ফেরত? ভাগো এখান থেকে” – মহিলা জবাব দিলো।
ঠিক তখনি কসাইটি পাছা দুলিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো, “কী চাও? এদিকে এসো, বলো – কী চাও?”
“টাকা ফেরত চাই। এ জলপাইগুলা পঁচা।” – বলতে বলতে একটা আধ খাওয়া জলপাই তার মুখে থুতুর মতো করে ছুঁড়ে দিলাম।
মুহূর্তেই সে আমার দিকে তেড়ে এলো। আমার বুক বরাবর খামছি দিয়ে জামা টেনে ধরে বললো, “শোনো, ভালোয় ভালোয় এখান থেকে সরে পড়ো।”
কসাইটি আচরণে ক্ষুব্ধ ছিল, হিংস্র ছিল। আমি ঠিক এ মুহূর্তের অপেক্ষাতেই ছিলাম। কোনো কথা না বলে চোখের পলকেই এক ঝটকায় আমি নিজেকে মুক্ত করে নিলাম।
পাল্টা আক্রমণ হিসাবে এক হাতেই লোকটির গলা চেপে ধরে ঠেলতে ঠেলতে ভ্যান গাড়ির সঙ্গে চেপে ধরলাম। অন্য হাতে যখন পকেটে থাকা চাকুটি বের করার চেষ্টা করছিলাম তখন, লোকটির সৌভাগ্য, ধাক্কায় ঠেলাভ্যানের চাকা ঘুরে গেল। আমার হাত ফসকে সে মাটিতে পড়ে গেল। ভ্যানের সব ফল তার চারদিকে গড়াগড়ি খাচ্ছিল।
আশপাশ থেকে লোকজন যখন আমাদের দিকে দৌড়ে আসছিল, ইয়োনিসের মা তখন উন্মাদিনীর মতো চিৎকার করছিল। খেয়াল করলাম, অতি উত্তেজনায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমিও মাটিতে পা ফসকে পড়ে গেছি। যখন উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম, তখন দেখলাম আমার সামনে দুজন পুলিস। আমার হাতের মুঠোয় চাকু, যদিও খোলার সময় পাইনি। তবুও, ওটুকুই যথেষ্ঠ ছিল। তারা আমাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেল।

নয়.
কয়েক মাস জেল খেটে যখন মুক্ত বাতাসে ফিরে এলাম, তখন দেখতে আমি আরো কুৎসিত হয়েছি। ঠেলাভ্যানে ফল বেচার লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেছে। হাতে টাকা নেই। নৈরাশ্যে ডুবে আছি।
এমন দুরাবস্থা দেখে দাদা বললেন, “শোনো, তুমি প্রতিযোগিতার শিকার। ...ব্যবসা বাণিজ্যে চাকু দেখিয়ে কাজ হয় না। চাকু বেচার ব্যবসা করতে পারো, কিন্তু চাকু ঠেকিয়ে ব্যবসা করো না কখনো।” দাদার কথার কোনো জবাব দিইনি সেদিন।
রোদেলা দুপুরে ব্রীজের দিকটায় হাঁটতে গেলাম। দেখলাম, কসাইয়ের দোকানটি খোলা। কিছু কাটা মাংস ঝুলছে দোকানের সামনে। কাউন্টারের পেছনে জামার হাতা গুটিয়ে উজ্জ্বল রক্তিম চেহারার কসাইটি দাঁড়িয়ে ছিল। ছোরা হাতে মাংসের টুকরাগুলো সাইজ করছিল সে।
কাউন্টারের সামনের দিকে নিচে একটি চেয়ারে ইয়োনিস বসে ছিল সুঁই-সুতো আর কাপড় হাতে। আমার মাথায় ভাবনা ঘুরপাক খেলো, তারা হয়তো এখন বিবাহিত। ইয়োনিস হয়তো সত্যি সত্যি গর্ভবতী, কারণ সে সুঁই-সুতোয় গোলাপী রঙের যে জামাটি বানাচ্ছিল তার আকার ছিল অনেক ছোটো। সম্ভবতঃ অনাগত নবজাতকের জন্যই ওটা বানাচ্ছিল সে।
সামনে এগিয়ে রাস্তার চারপাশের দোকানগুলো দেখছিলাম আমি। আশা করছিলাম – হয়তো অন্য কোনো মাংসের দোকান পাবো আশেপাশে; যারা কিনা ইয়োনিসের স্বামীর ব্যবসার প্রতিযোগী হবে, প্রতিযোগিতায় হারিয়ে ইয়োনিসদের পথে বসিয়ে দেবে। কামার-কুমার-টিন মিস্ত্রী, রং মিস্ত্রীসহ কতো রকম ব্যবসার দোকান দেখলাম আশেপাশে, অথচ একটাও মাংসের দোকান চোখে পড়লো না। ব্রিজের কাছাকাছি এসে বুঝতে পারলাম, আর আশা রেখে লাভ নেই।
দ্রুত হেঁটে ব্রীজটি পার হয়ে এলাম।
_____________________
মূল গল্পঃ The Competition
লেখকঃ Alberto Moravia


Comments

অতিথি লেখক's picture

যদিও অনেক বড় লেখা , এর পরেও অনেক ভাল লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে

মেঘলা মানুষ's picture

আপনি একটা লিংক বসিয়েছেন: http://www.sachalayatan.com/ashimul/mobilebazer.com
দয়া করে সচলায়তনে এমন লিংক বসাবেন না।

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

হে হে বিজ্ঞাপনদাতা। পাপিষ্ঠ মডুর চোখ ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে গেছে "মোবাইল বাজের"। আগামীতে এরকম করলে বিপদে পড়তে পারেন।

মেঘলা মানুষ's picture

মনটা খারাপ হয়ে গেল, বেচারা খালি হেরেই যাচ্ছে মন খারাপ

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

হ্যাঁ। প্রতিযোগিতাই! ধন্যবাদ।

তারেক অণু's picture

বেশ হয়েছে অনুবাদ

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

আসলেই? সাহস পেলাম! ধন্যবাদ।

তিথীডোর's picture

ঘাঁড়ে> ঘাড়ে, অবনতে >অবনত-- এরকম দু-একটা টাইপো আছে, ঠিক করে দিয়েন। হাসি

অনুবাদ ভাল হয়েছে। চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

ধন্যবাদ। পোস্ট করার পরে চোখে পড়েছে কিছু। বাকীগুলোও ঠিক করে দিচ্ছি।

হাসিব's picture

পড়ার সময় শব্দ/বাক্যগুলো কীরকম কীরকম লাগলো পড়লো। এখানে যাদের কথা লেখা হয়েছে তারা এতো কঠিন কঠিন একাডেমিক শব্দ বাক্যে কথা বলে না।

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

কোন কোন বাক্যগুলোতে অমন হচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট করে বললে বুঝতে পারতাম। একটু কষ্ট করে বলেন। তাহলে ওগুলো অন্যভাবে লেখার চেষ্টা করবো।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

হাসিব's picture

যেমন প্রথম অংশে যে কনভারসেশন সেটা পড়ে ক্লাসরুমে শিক্ষক ছাত্রের ফর্মাল কনভারসেশনের মতো মনে হচ্ছে। দাদা নাতির আলাপ আলোচনার মতো না।

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

আচ্ছা। মূল ইংরেজীটাই ওরকম কাঠখোট্টা ছিল। চেষ্টা করবো, এ অংশটা এবং অন্য অংশ ঘষামাজা করে মসৃণ করার।
আবারও ধন্যবাদ। হাসি

অতিথি লেখক's picture

ব্যবসার প্রতিযোগিতা শেষপর্যন্ত প্রেয়সীকে পাওয়ার প্রতিযোগিতায় পরিণত হল! শুধুমাত্র ব্যবসায় সফলতার প্রতিযোগিতায় থাকলে হয়তো ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেত না!
বেশ ভালো লাগা একটি গল্প। এরকম আরও আশা করছি।

অরিয়

সৈয়দ আখতারুজ্জামান's picture

ঝরঝরে একটা লেখা পড়লাম।

আয়নামতি's picture

এক আর দুই কিছুটা আড়ষ্ট লাগলো।বাকীটা ভালো হয়েছে চলুক

অতন্দ্র প্রহরী's picture

মূল গল্প পড়িনি, তবে চমৎকার লাগল আপনার অনুবাদ‍! এখন থেকে নিয়মিত অনুবাদ করবেন আশা করি। হাসি

মনে হচ্ছিল, শেষে নাতিটা নিজে একটা মাংসের দোকান দিলেই পারত। তাহলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ওই কসাইকে পথে বসিয়ে ইয়োনিসকে জয় করার একটা সম্ভাবনা থাকত।

অছ্যুৎ বলাই's picture

বেশি নম্রভদ্র হয়ে কোনো লাভ নাই। নম্রভদ্র হওয়ার উপদেশের পেছনে সবসময়ই একজন থার্ড পার্সন কসাই থাকে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

লাভ চাইলে ভদ্রতায় কাজ হয় না প্রায়ই হাসি

অতিথি লেখক's picture

ঝগড়াঝাটির সময় তুমি সম্বোধনে কথা না বলে যদি তুই-তোকারি করত তাহলে বাঙ্গাল এস্পেক্টে ঝগড়াঝাটির আমেজটা পেতাম। অনুবাদ দারুণ লেগেছে।

গোঁসাইবাবু

হিমু's picture

"বাঙ্গাল এস্পেক্ট" কী?

অতিথি লেখক's picture

"বাঙ্গাল এস্পেক্ট" বলতে আসলে বোঝাতে চেয়েছিলাম আমরা বাংলাদেশে যেভাবে ঝগড়া-ঝাটি করি আরকি; মানে আমার বয়সের দ্বিগুণ লোককেও তুই-তোকারি করতে ছাড়ি না। পরে অবশ্য মন্তব্য যখন সংরক্ষণের জন্য জমা হয়ে যায় তখন মনে হয়েছিল এরকম একটা কিম্ভুতকিমাকার ফ্রেজ কেন ব্যবহার করলাম, যার মানে সম্পর্কে আমি নিজেই অবগত না। এইটা কোন কিছু ভেবে বলিনি এমনিই আলগা একটা ভাব নিতে গিয়ে বলছিলাম মনে হয়।

গোঁসাইবাবু

হিমু's picture

আমি ভারত আর পাকিস্তানের হিন্দি আর উর্দুভাষী মানুষকেও (নারী ও পুরুষ) ঝগড়ার সময় বয়স্ক লোককে তুই সম্বোধন করতে দেখেছি। তাই কেন এই ব্যাপারটা "বাঙ্গাল এস্পেক্ট" হয়ে গেলো বুঝলাম না।

অতিথি লেখক's picture

আমিও বুঝিনি। হয়ত একেবারে দেশীয় ঘরানার ঝগড়া বোঝাতে বলেছিলাম। অন্যান্য দেশের ( উপমহাদেশীয় বিশেষত) লোকজনও যে ঝগড়ার সময় তুই-তোকারি করতে পারে এটা মাথায় ছিল না; বলা ভাল জানতামই না হয়ত। তাই এটা কোন মতেই "বাঙ্গাল এস্পেক্ট" হয়নি। এই শব্দ-বন্ধটি ব্যবহার করা ঠিক হয়নি আমার।

গোঁসাইবাবু

তাহসিন রেজা's picture

বাঙ্গাল এস্পেক্ট!!!!! এইটা কি????

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সাফিনাজ আরজু's picture

চলুক
অনুবাদ ভাল লেগেছে । হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তাহসিন রেজা's picture

মোরাভিয়া আমার খুব প্রিয় একজন লেখক। মোরাভিয়ার 'কনজুগাল লাভ' আর "এম্পটি ক্যানভাস" পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আপনার ঝরঝরে অনুবাদে মোরাভিয়ার গল্প পড়ে দিলখুশ হয়ে গেল। আরো কয়েকটা মোরাভিয়া আসবে নাকি? পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

এমন মন্তব্য আরো অনুবাদে সাহস জোগায়। কনজুগাল লাভ শুরু করেছিলাম, ব্যস্ততা আর আলস্যে কখন না-পড়া রয়ে গেছে ভুলেই গেছি। চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।

সুহান রিজওয়ান's picture

সুন্দর গল্প। তবে শিমুল ভাইয়ের নিজের গল্পের মতো ঝরঝরে লাগে নাই হাসি

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

বুঝেন না? অন্যের জিনিসে পোদ্দারি করতে গেলে যা হয় আর কি! ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য।

সাফি's picture

ভালো লাগলো।

এক লহমা's picture

প্রতিযোগিতার হাত থেকে মুক্তি নেই!
অনুবাদ ভাল লেগেছে। রীতিমত ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছেন। আরো অনুবাদ চালিয়ে যান, ভাষা আস্তে আস্তে আরো সহজ হয়ে আসবে। মূলের স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হয়েও আপনার নিজের লেখা পড়ার আনন্দটা পাওয়া যাবে তখন। নিজের সাথেই নিজের প্রতিযোগিতা জেতার ব্যাপার আর কি! হাসি
আর, মুখে কিন্তু দাড়ি গজায়, দাঁড়ি নয়। এবং আপেল পচা হতেই পারে, পঁচা হলে ঠিক হয় না! দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ঠিক করে দেবো। কৃতজ্ঞতা জানবেন। হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ's picture

ভালো লেগেছে।

____________________________

সুবোধ অবোধ's picture

অনুবাদ ভাল্লাগছে ... চলুক

স্যাম's picture

চলুক চলুক
ঢাকামেট্রো মিস করি।

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

ধন্যবাদ। শুরুতে ভেবেছিলাম সপ্তাহের ঘটনাবলী নিয়ে সাপ্তাহিকী ঢাকামেট্রো লিখবো, আলস্যের জন্য হচ্ছে না মন খারাপ

সত্যপীর's picture

লেইখ্যালান।

..................................................................
#Banshibir.

রোমেল চৌধুরী's picture

সংলাপগুলো ছাড়া পুরো গল্পটির অনুবাদ মনকাড়া হয়েছে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

দেব প্রসাদ দেবু's picture

অনুবাদ বরাবরই একটা বিরক্তিকর কাজ। খুব যত্ন নিয়ে করেছেন আপনি। ভালো লেগেছে।

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

ধন্যবাদ, উদার মন্তব্যের জন্য হাসি

রানা মেহের's picture

শিমুলের নিজের লেখা গল্প পড়তে চাই

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

কনফুসিয়াস's picture

ভাল লাগলো পড়ে। প্রচলিত অনুবাদের ফরম্যাটেই হয়েছে, কিন্তু আরেকটু বেশি ঝরঝরে।
ব্লক কাটলো? নইলে আরও দুয়েকটা নামিয়ে দিন। হাসি

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

এ গল্প পোস্ট করার পরে যে টেনশনে ছিলাম, একেবারে দেজাভূ হচ্ছিল ২০০৬/০৭ সালের। তখন ব্লগে গল্প পোস্ট করে চুপচাপ বসে থাকতাম কে কী বলেন দেখার জন্য। আপনি একবার হুটহাট অনেকগুলো লেখায় কমেন্ট করে উৎসাহের বন্যা বইয়ে দিলেন! মনে আছে!!!
আজও আপনার কমেন্ট পেলাম। হাসি

ব্লক কাটেনি, তবে কোপ পড়েছে। কাটবে।
আপনার গল্প কই?

সুলতানা সাদিয়া's picture

অনুবাদ ভাল লাগলো। মন্তব্যের আড্ডাও খাসা।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.