ঢাকায় শীত আসি আসি করছে।
সকালের দিকে ফ্যান বন্ধ করে দিতে হয়। আবার দুপুর ২টায়ও মনে হয় বিকেল হয়ে এলো। সন্ধ্যা নামে সাড়ে পাঁচটার আগে।
আবহাওয়ার এ বদলী সময়ে চারদিকে সর্দি কাশি হচ্ছে। আমার নিজেরও ঠান্ডা লেগেছে। টিভিতে রিপোর্ট দেখছিলাম, শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। আবহাওয়ার পাশাপাশি পানিতেও সমস্যা আছে মনে হয়। ওয়াসার পানিতে ব্যাপক ময়লা। বালতির তলানীতে কালো ময়লা জমে যায় দ্রুত।
সকালটা বেশ ভালো লাগে। হাল্কা একটা ঠান্ডা বাতাস থাকে। পরশু সকাল সাড়ে ছয়টায় বাসা থেকে বের হতেই একটা শিরশির ঠান্ডা বাতাস কানে লাগলো। মনে পড়ে, চৌদ্দ-পনেরো বছর আগে, ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে, এরকম বাতাস পেতাম সেপ্টেম্বরের শেষাশেষি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সেপ্টেম্বরের শেষাশেষি বেশ ভালোই গরম থাকে। অক্টোবরে বৃষ্টিও হতো একসময়, এখন কমে গেছে।
মিরপুর ওএসবি চক্ষু হাসপাতালের সামনে একটা বিজ্ঞাপন দেখে চমকালাম।
পারিবারিক সমস্যার জন্য কিডনী বিক্রয়ে আগ্রহী জনৈক আনোয়ারুল হাছান।
মোবাইলে ছবি তুলে রাখলাম।
দুপুরে ফোন করলাম, ঐ নম্বরে।
"হ্যালো, আনোয়ারুল হাছান বলছেন?"
"জ্বি, কে বলছেন?" - খুব দূর্বল কন্ঠস্বরের জবাব এবং প্রশ্ন।
"আপনি কিডনী বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন?"
"জ্বি, দিয়েছি" - এবার কন্ঠ আরো দূর্বল। শুরুতে ভেবেছিলাম, মধ্য বয়সের কেউ হবে, এবার মনে হচ্ছে কিশোর কিংবা পঞ্চাষোর্ধ কেউ কথা বলছে।
"আপনি কি অসুস্থ?"
"না, আমার জানামতে তো কোনো অসুখ নাই।"
জিজ্ঞেস করলাম "আপনার বাসা কই?"
"মিরপুর।"
"কিডনী বিক্রি করবেন কেন?"
"টাকার দরকার, ভাই।"
"কত টাকার দরকার?"
কোনো জবাব নেই।
"হ্যালো, হ্যালো"।
ওপাশ থেকে ক্ষীণস্বরে কী যেন বললো, বুঝলাম না। এরপর লাইন কেটে দিলো।
ভাবলাম, আবার ফোন করবো কিনা। এ-ও মাথায় এলো, কী লাভ? আমি কি তার প্রয়োজনীয় টাকা সাহায্য হিসেবে দেব?
ছবি তোলার সময় খেয়াল করিনি। ছবিটি কম্পিউটারে নেয়ার পর খেয়াল করে দেখলাম, ঐ বিজ্ঞাপনের নিচে লুকিয়ে আছে আরেকটি বিজ্ঞাপন। কোনো এক মোঃ হানিফ কিডনী বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। যতোদূর জানি, বাংলাদেশে নিকট আত্মীয় ছাড়া কারো কিডনী প্রতিস্থাপনের অনুমতি নেই। গত বছর এরকম কিডনী ব্যবসায়ী এক চক্রকে ধরা হয়েছিল।
অবাক হবো না, আগামী দিনগুলোয় যদি দেখি- কিডনী বিক্রি, চোখ বিক্রি, লিভার বিক্রি, সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপনে শহরের দেয়ালগুলো সয়লাব হয়ে যায়।
কুরবানীর ঈদ সমাগত। আজ সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছিলাম।
গলির মোড়ে চার কিশোর একটা গরুকে ঠেলছে, গরু হাঁটছেই না। গোঁ ধরে আছে।
একজন বললো, "গরু হাঁটবে না।"
আরেকজন বললো, "হাঁটবে না মানে, ওর বাপ হাঁটবে। ৩দিন ধরে খাওয়াইছি কী জন্য?"
পাশ দিয়ে আরেক মুরুব্বী যাচ্ছিলেন, জিজ্ঞেস করলেন "দাম কত?"
"তেত্রিশ হাজার"
"অনলি তেত্রিশ হাজার? সস্তা হইছে তো!"
সন্ধ্যা নামতেই চারপাশে গরু ছাগলের ডাক। গ্রামীণ পরিবেশের আবহ সৃষ্টি হয়। সকালে ঘুম ভাঙে ছাগলের ডাকে।
টিভি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, ঈদের ৫ দিনের আয়োজন।
ট্রেলারে দেখতে পাচ্ছি - মেহের আফরোজ শাওন, অনন্ত জলিল এবং আরেফিন রুমী। বাজার জমজমাট।
উৎসবের সময়ে এ শহরের মানুষগুলোকে সুখী মনে হয়। সিয়েঞ্জিওলা ২০ টাকা কিংবা রিক্সাওলা ৫ টাকা বাড়তি নিয়ে সুখের হাসি দেয়। মধ্যরাতেও পাশের টিনশেড ঘরের বাসিন্দা শ্রমজীবি মানুষগুলো গল্প-গুজবে হা-হা শব্দে হেসে ওঠে।
কামনা করি, আনন্দ দীর্ঘজীবি হোক।
আজকের ঢাকামেট্রো এখানেই থামাই। চাইলে গান শুনতে পারেন, বাউল শাহ আব্দুল করিমের - কোন মেস্তরী নাও বানাইলো। অনলাইনেই পাওয়া। গেয়েছে- দোহার ব্যান্ড, দলছুটের বাপ্পা-সঞ্জীব, রমেশ ঠাকুর আর রাশেদুল হাসান কায়েস। শেষ জনের গান কিংবা নাম কোনোটাই শুনিনি আগে।
ঝিলমিল ঝিলমিল - রাশেদুল হাসান কায়েস
ইস্নিপ্স থেকে গান এমবেড করার উপায় পেলাম না। ওরা নিয়ম পাল্টিয়েছে নাকি অনভ্যাসে আমিই ভুলে গেলাম, বুঝতে পারছি না।
Comments
ঈদ মোবারক!
অলস সময়
শহরের একজন বাসিন্দা টাকার অভাবে কিডনি বিক্রি করছে। আরেকজন বাসিন্দার কাছে তেত্রিশ হাজার অংকটা স্রেফ 'অনলি'। কী স্ট্রেঞ্জ, তাই না!
উৎসবের আনন্দে মজে থাকাই আপাত সমাধান।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
শহরের যে বাসিন্দা টাকার অভাবে কিডনি বিক্রি করছে, তার আচরনে একটা সন্দেহ উঁকি দেয়। যে লোক কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়, তার অভাবটা সেরকম এক্সট্রিম হবার জন্যে হয়তো সেটা সে করে। কিন্তু সন্দেহ লাগে যখন একজন কাষ্টমার (শিমুল ভাই তা সেজে..) যখন ফোন হরে, ও আলাপচারিতার মাঝে সে ফোন কেটে দেয়, তখন মনে হয়, এরকম একজন টাকা ম্যানেজ করার জন্যে বেপরোয়া মানুষ একজন পটেনশিয়াল কাষ্টমার কিভাবে উপেক্ষা করে? হতে পারে- এটা এখন হয়তো কিডনি বিক্রির চক্রের একটা নতুন কৌশল মাত্র। হতে পারে.... আবার অভাবটাও জেনুইন হতে পারে। তবে ফোন রেখে দেয়াটা একটা ভালো সন্দেহ ও কিছু প্রশ্ন রেখে যাচ্ছে।
শিমুল ভাই এর এই সিরিজটায় ব্যবহৃত নাম্বারগুলো ভেবেছিলাম রেনডম প্রথমে। এখন খেয়াল করলাম তারিখ হিসেবে ব্যবহৃত।
লেখা বরাবরের মতো দারুন। শব্দের শাটারে তুলে আনা টুকরো টুকরো স্ন্যাপ-শট।
ভালো থাকা হোক।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
বাংলা মটর থেকে শাহবাগের দিকে হেটে যেতে শাকুরার নিচে এরকম একটা বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখতাম। ভুল বানানে ফোন নাম্বার সহ একই রকম আবেদন। কয়েকদিন পর দেখি এর অর্ধেকটা ঢেকে দিয়ে কোন নেতার মুক্তি চাই টাইপ পোস্টার ঝুলছে, পরে আবার একটা আবেদন ঝুলল একি ভুল বানানে লেখা। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত কিডনি বিক্রি করতে চাই বিজ্ঞাপনটা দেখে। প্রতিদিন একি রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে এক সময় অভ্যাস হয়ে গেল। আসলে ভাল খারাপ সব জিনিসে আমরা খুব দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে যাই।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আর সেটা নিয়ে বিজ্ঞাপন নামে একটা দারুণ গল্পও লিখেছিলেন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
পড়ছি, পড়ে যাচ্ছি।
facebook
এই শহরবাসী আমাদের গল্পটা ঠিক ঠিক লিখে দিচ্ছেন;
_____________________
Give Her Freedom!
আপনার সিরিজটা অনুসরণ করি এবং বরাবরের মতোই ভালো। রাস্তায় গরু দেখলেই "ভাই কতো" বলে চিৎকার করে উঠা মানুষগুলোকে ভালো মতো লক্ষ্য করি। জবাবে দামের অঙ্কটা শুনলে তাদের মুখভঙ্গি বদলে যায় এক একজনের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
তবুও
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
মন খারাপ হলো লেখাটা পড়ে।
এইটা আজকে পড়তে গেলেন কেন? আজ বাংলাদেশ জিতসে
আজ দুপুর থেকে পুরাতন বেশ কিছু না-পড়া লেখা পড়লাম। তার ধারাবাহিকতায় এইটাও পড়া হলো। টাইমিংটা ঠিক হয় নাই।
Post new comment