আমার হুমায়ুন আহমেদ... পর্ব -এক

মানিক চন্দ্র দাস's picture
Submitted by manikchandradas [Guest] on Fri, 16/09/2011 - 3:32am
Categories:

প্রাইমারীতে থাকতে পাশের বাসার পাড়াতো দাদা-দাদীর কল্যানে টিনটিন,চাচা চৌধুরী, হাঁদা-ভোদা, নন্টে ফন্টে, বাঁটুল দ্যা গ্রেট ইত্যাদি চমৎকার সব কমিকস পড়া শেষ।
তারপর সেই দাদীর কল্যানেই বোমকেশ বক্সী কিংবা কিরিটি শেষ এবং তারপর প্রফেসর শঙ্কু, ফেলুদা,ঘনাদা,টেনিদা মোটামুটি একটা কব্জা করা গেছে।

(এইসব বই কব্জা করার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু ছিলো ভিন্ন। প্রতিটি বই পড়া শেষে দাদীর কাছে রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে নূতন বই আনতে হতো। দাদী পড়া বই থেকে নানা রকম প্রশ্ন করতেন এবং খুব জ্ঞানী জ্ঞানী চোখমুখ নিয়ে সেইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। দাদীর উত্তর পছন্দ হলেই একটা আস্ত মিমি পকেটে ঢুকে যেতো।

দাদীর কাছে যে কত্ত বইপত্র ছিলো তা সেই বয়সে মনে হয়েছে আমি গুনে শেষ করতে পারবোনা।

দাদাজান ও ছিলেন ভয়াবহ পড়ুয়া একজন মানুষ। কারো নিজের স্টাডিতে যে মেঝে থেকে এক্কেবারে সিলিং পর্যন্ত সারি সারি বই থাকতে পারে সেটা আমার ধারনায় ছিলো না। ক্লাশ টু তে থাকতে একবার দাদার অনুপস্থিতিতে তাঁর স্টাডিতে ঢুকেছিলাম, কিছুই করিনি খালি রুমের মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, বই দেখে আমি হতবাক।

কিছুক্ষন পর অবশ্য দাদাজান এসে আমার হাতে একটা টফি গুজে দিয়ে বললেন, এতো বই পড়তে পারবি? আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম না, পারুম না।তাইলে দাড়ায়া আছস ক্যান? বাইরে যা, আমি পড়তে বসুম। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। পক্ককেশ একজন মানুষের আবার পড়া লাগে নাকি? আমি অবাক হয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।)

বের হতেই দাদীর সামনে। কিরে মোটকু, দাদার ঘরে কি করছিলি?
কিছুনা দাদী। এত্তো এত্তো বই তাও আবার সব ইংরেজীতে লেখা। দাদাজান ক্যামনে ঐসব বই পড়ে?
দাদী কোলে তুলে নিলেন, বললেন, ইংরেজী বই পড়বি?
না দাদী আমি ইংরেজী খুব ভয় পাই। আমি পারুম না।
আরে ভাই পারবি,তোর দাদাজান পারে আর তুই পারবিনা? আরো বেশী পারবি। আজকে তোকে একটা বাংলাদেশের লেখকের বই দেবো,পড়বি?
কি বই?
উহু,আগে নাম বলবোনা। পড়ে তুই আমাকে বলবি তোর কেমন লাগলো, ঠিক আছে?
জ্বী আচ্ছা দাদী।

দাদী আমার হাতে যে বই তুলে দিলেন তা দেখি এক্কেবারে নূতন,বইয়ের নাম বোতল ভূত।
বই নিয়ে দাদীর আশেপাশে ঘুরঘুর করছি। দাদী বললেন। কিছু বলবি মোটকু?
দাদী আমাকে একটা মিমি দেননা। মিমি খাইতে ইচ্ছা করতেছে।
বই পড়া শেষ হলে মিমি, তার আগে না। ঠিক আছে?
জ্বী দাদী। আমার চোখ তখন জলে টলোমলো।

আমার কথা শুনেই দাদী আমার অবস্থা বুঝে ফেললেন। আমার হাতে একটা পাকা ছোট্ট ডালিম ধরিয়ে দিয়ে বললেন, যা ভাগ। আমি পড়তে বসবো। এখানে বলে রাখা ভালো দাদীর নিজের রক্তের বেশ কয়েকজন নাতনী এবং একজন নাতি ছিলো। সেই নাতি আমাদের সবার বড় ভাই, রুপল ভাই।তারপরেও দাদী তাঁর নাতির মতোই আমাকে দেখতেন।

বাসায় এসে বোতল ভূত পড়ে আমি যেনো একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম। বাসাতে বেশ কয়েকটা হোমিওপ্যাথীর শিশি ছিলো। সবকটা আমার গোপন বাক্সে ঢুকিয়ে ফেললাম। ওতেই আমার ভূত আমি পুষবো। আমার স্কুলের দপ্তরি দেখতে বোতল ভূত বইয়ের সেই বুড়োর মতো ছিলো। আমি তখন নিশ্চিত এই দপ্তরি চাচার কাছেও নিশ্চয়ই ভূতের বাচ্চা আছে।

পরদিন আমি স্কুল ব্যাগের ভেতর দুটো হোমিওপ্যাথের শিশি নিয়ে,স্কুল ছুটির প্র সোজা দপ্তরির কাছে উপস্থিত।
আমি বললাম, আপনার কাছে যে ভূতের বাচ্চা আছে তার মধ্য থেকে আমাকে একটা দিন। এইযে আমি শিশি নিয়ে এসেছি।কোন অযত্ন করবোনা। প্রতি পূর্নিমায় জোছনার আলো খাওয়াবো। কোন সমস্যা হবেনা।
দপ্তরি চাচা অবাক। আমার কাছে ভূতের বাচ্চা আছে এইডা তোমারে আব্বু কিডা কইছে?
কেউ বলে নাই। আমি জানি আপনার কাছে আছে।

নারে বাপজান, আমার কাছে নাই। থাকলে আমি তোমারে অবশ্যই দিতাম।
দেখেন চাচা আমি কিন্তু হেড মিসের কাছে নালিশ করবো।
করবা?

হুম করবো (গলায় বেশ একটা মাস্তান মাস্তান ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছলাম তখন।)
চলো তাইলে হেড মিসের কাছে।
(চলবে)


Comments

কল্যাণF's picture

চলুক চলুক

মানিক চন্দ্র দাস's picture

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

জয়ন্তী's picture

চলুক চলুক

নিটোল.'s picture

ভালো লাগল। চলুক। চলুক

মানিক চন্দ্র দাস's picture

উৎসাহ দেবার জন্যে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মৌনকুহর's picture

দাদা, বানানটা হুমায়ূন আহমেদ।

লেখা চলুক।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

মানিক চন্দ্র দাস's picture

প্রিয় মৌনকুহর, নিজেই শরমে মইরা যাইতেছি আর আপনে দিলেন নুনের ছিটা...আপনে মানুষটা খুব ভালো মন খারাপ

মৌনকুহর's picture

সম্পাদনা করে ভুলটা শুধরে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়, শরমে মরার কী দরকার!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

তানিম এহসান's picture

তারপর কি হলো দাদুভাই দেঁতো হাসি

মানিক চন্দ্র দাস's picture

তানিম ভাই, আমারে এক্কেরে দাদুভাই বানায়া দিলেন??? ওঁয়া ওঁয়া
ধন্যবাদ অধমের লেখা পড়ার জন্যে।

আরিফ's picture

এই বোতল ভুত দিয়েই হুমায়ুন আহমেদ পড়া শুরু আমার। কয়েকবার পড়েছি বইটা। আমি অবশ্য আপনার মতো শিশি-বোতল নিয়ে কারো কাছে ভূতের বাচ্চা ধার করতে যাই নাই। তবে এই বইয়ের ভিতরের জগতটা দিয়ে বের হতে চাইতাম না, এই জন্যই বারবার পড়া।

চলতে থাকুক হাসি

গৌতম's picture

...পর্বটা একেবারেই ছোট হয়ে গেল!

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মানিক চন্দ্র দাস's picture

হ দাদা, একদমই ছোট হয়ে গেছে। তবে আপনি যে আমার হুদাই ভুংভাং লেখা পড়েন এটা জেনে ভালো লাগলো। আসল ব্যাপারটা বলি। উন্মাদের নির্বাহী সম্পাদক মেহেদী হক আমার বন্ধু, সে আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলো হুমায়ূন স্যার অসুস্থ এবং তিনি এখন আমেরিকায় চিকিৎসা করার জন্যে পাড়ি জমিয়েছেন। শুনে আমার মাথায় মনে হলো গর্জন কাঠের চ্যালার গদাম বাড়ি খেলাম।

(দাদা, আমি এই খবরটা পত্রিকাতে পড়িনাই, আমি অতি গর্দভ, পত্রিকা পড়িনা,খালি খারাপ খবর থাকে তাই উটের মতো বালিঝড়ের সময় বালিতে মুখ গুঁজে থাকার একটা চেষ্টা বলতে পারেন।)

মেহেদীর কাছ থেকে শোনার পর লিখতে বসেছিলাম কিন্তু এত্তো সব অনুভূতি আমার এই প্রিয় লেখককে নিয়ে যে কোত্থেকে শুরু করবো তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শেষে মনে হলো ছেলেবেলা থেকেই শুরু করা যাক। লিখতে বেশী সময় পাইনি তাই পর্বটা ছোট্ট হয়ে গেলো। আগামী তিন পর্ব আশা করি বড় হবে। আমি লেখার আগেই বন্দনা দিদি একটা লেখা দিয়েছেন, এটাও বোধহয় লেখা ছোট হবার কারন। ভালো থাকবেন দাদা।

শিশিরকণা's picture

আমার প্রথম পড়া হুমায়ূন আহমেদের বই "নিশীথিনী"। ছয় বছর বয়সে ঐ বই পড়ে যে আগা মাথা কিছুই বুঝি নাই, বলাই বাহুল্য। বানান করে পড়ার আনন্দে পড়ে গেছি। হেহে

অটঃ হুমায়ূন আহমেদের বাড়িতে তার লাইব্রেরী দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। এখনো আমার স্বপ্ন ঐ রকম একটা লাইব্রেরী হবে আমার একদিন। শুধু বইএর পাঠক না, বই রসিক হইতে হয় এইরকম লাইব্রেরী বানাইতে, সাথে ট্যাঁকে টাকাও লাগে অবশ্য। মন খারাপ

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.