এই জোছনায়

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Fri, 14/05/2010 - 8:35am
Categories:

১।।
‘মুরাদ, চল ধানমন্ডি যাই।’
‘এখন ধানমন্ডি যাবি দোস্ত!’
‘কেন, এখন কি তোর কোন কাজ আছে না কি ?’
‘না...ইয়ে এখন না হয় না যাই, তার চেয়ে চল রাতে ঢাকা ভার্সিটিতে ঘুরতে যাই। আজ পূর্ণিমা।’
‘আমি রাজি। তুই কখন আসতে পারবি?’
‘আমি রাত এগারটার দিকে তোকে ফোন দিব।’
কলেজগেটের ঠিক সামনে যে চায়ের দোকানটা আছে, সেখানে চা খেতে খেতে কথা বলছিলাম মুরাদের সাথে। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। মুরাদ আমার ভার্সিটির বন্ধু। খুবই জোছনাপ্রীতি তার। আমিও অবশ্য কম যাই না। তবে তার চেয়ে বড় কথা রাতজাগা হবে আজ।

‘অই, বেনসন কিন।’ আমি হুংকার করি।
‘হুমম। চল আগে হলে যাই। জামালকে নিয়ে বের হই।’
রাত পৌনে বারটা। সিগারেট হাতে দুই বন্ধু হাটছি। এত রাতে ঢাকার রাস্তাঘাটগুলো অদ্ভুত মনে হয়। কোথাও কোন জ্যাম নেই। সব রাস্তাতেই রিক্সা চলে। রাসেল স্কয়ারের সামনে থেকে কিছু দূর পাল্লার বাস ছুটে যাচ্ছে। যাত্রীরা ভীড় জমাচ্ছে বাসের সামনে। দেখেই মনে হয় কোন একটা বাসে চড়ে বসি...চলে যাই কোন অজানা গন্তব্যে। আমরা হাঁটছি। কিছুক্ষন পরপরই আমরা আকাশের দিকে তাকাচ্ছি। অদ্ভুত সুন্দর একটা চাঁদ আকশের বুকে। তার পাশে ঘিরে থাকা কিছু মেঘ। দেখেই বুকের ভিতরটা যেন কেমন করে ওঠে। নিজের অস্তিত্বটা তুচ্ছ মনে হয়। মুরাদ আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এখন পুরোপুরি জোছনা ফুটে নি। রাত একটার পর হবে। আমি খুঁজ নিয়েছি।’
‘মুরাদ, হলে চল তাড়াতাড়ি। জামালকে নিয়ে বের হই। দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

আমরা তিনজন। বসে আছি মহসীন হলের সামনে পুকুরপাড়ে বাঁধানো ঘাটলায়। রাত প্রায় দুইটা। চারিদিকে চাঁদের সেই পাগল করা রুপালী আলো। চাঁদ যেন আজ জোছনার পেখম মেলে দিয়েছে। পুকুরপাড়ে নারিকেল গাছগুলো জোর হাওয়া দিচ্ছে। কি অদ্ভুত একটা অনুভূতি। জামাল আর মুরাদ মাঝে মাঝে টুকটাক কিছু গল্প করছে। আমি বসে আছি। পুকুরের জলে চাঁদের ছবি দেখার চেষ্টা করছি। পুকুরের রুপালী ঢেউতে কেমন যেন একটা উদাসী ভাব। কত কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
মুরাদ হাল্কা সুরে গুনগুন করছে, ‘জোছনায় অজানা পথচলা...’
কিছুদিন পর মুরাদ চলে যাচ্ছে দেশ ছেড়ে...অজানা পথে। কবে ফিরবে কে জানে। কোন কিছুরই ঠিক নেই।
কতটা সময় কেটে যায়। ভরা পূর্ণিমার এই রাতে আমরা তিন তরুণ জোছনামুগ্ধ হয়ে বসে রইলাম নিরবধি।

২।।
সামারে আমেরিকার গ্রেট বেসিনে ক্যাম্পিং করছি আমি আর আমার তিন বন্ধু। তিনজনের দুইজনই কলকাতার। আরেকজন আমেরিকায় বংশোদ্ভুত বাংলাদেশী। এই সময়টায় অনেকেই আসে এখানে ক্যাম্পিং করতে। সকাল থেকেই আমরা সেই তাঁবু টানানো, মালামাল টানা-হেঁচড়া করতে করতে ক্লান্ত। সন্ধ্যার পর আমরা সকলে তাঁবুর সামনে গোল হয়ে গ্যাঁজানো শুরু করলাম আর সেই সাথে চলল বার্বিকিউ পর্ব। আড্ডা বেশ ভালই জমে উঠল। হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখা গেল রাত প্রায় সাড়ে এগারটা। এম্নিতেই সারাদিন এত খাটনি...ক্যাম্পিং-এর আনন্দ ছাপিয়ে শরীরে ক্লান্তিটা টের পেলাম। আমাদের আশপাশের বেশকিছু তাঁবু ইতিমধ্যেই নীরব হয়ে গেছে। এবার বুঝি আমাদের পালা!
কি এক অজানা অস্বস্তিতে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ঘড়িতে তাকালাম। রাত প্রায় তিনটা। সবাই ভ্রমন ক্লান্তিতে বেঘোর ঘুম। এম্নিতেই মাঝরাতে একবার ঘুম ভাংলে আমার স্বভাবতই ঘুম হয় না। খুবই বিরক্তি নিয়ে তাঁবুর বাইরে বের হতেই যেন চোখ ধাঁধিয়ে গেল। ওইতো দূরের আকাশে হেলে পড়া সেই চাঁদটা দেখা যাচ্ছে যার রুপালী আলোতে তিন তরুণ মুগ্ধ হয়ে বসেছিল বছর তিনেক আগে। পূর্ণিমা! বুকের ভিতর হাহাকার করে ওঠে,
‘মুরাদ, তুই কি এখনো জোছনা দেখিস? তোর কি এখনো মনে আছে সেই রাতের কথা?’

নীল তারা।।


Comments

অতিথি লেখক's picture

তোর মনে হচ্ছে এইটাই প্রথম লেখা? চালিয়ে যা। আর জোছনার কথা উঠলেই মনটা কেমন যেন উদাসী হয়ে যায়। আমি নিশ্চিত যে মুরাদ, এখনো জোছনা দেখে, কিন্তু আগের মতো করে ভাবে কিনা জানি নাহ। আবার মনে পড়ে যাচ্ছে...

এই খানে এই তরুর তলে
তোমায় আমায় কৌতুহলে
যে কটা দিন, কাটিয়ে যাবো প্রিয়ে
সংগে রবে সূরার পাত্র
অল্প কিছু আহার মাত্র
আর একখানি ছন্দমধুর কাব্য হাতে নিয়ে...

___________
শুভ্রসাদা

অতিথি লেখক's picture

হুমম , খুব মিস করি রে !

ধুসর গোধূলি's picture

- আপনার জোছনা দেখার ঘটনায় মনে পড়ে গেলো কয়েক বছর আগের ঘটনা। ময়মনসিংহ মেডিক্যালে কলেজ আমলের ত্রিমূর্তির একজন ডাক্তারীবিদ্যা আয়ত্তে ব্যস্ত। সবে দেশে ফিরেছি। এক সন্ধ্যায় হুট করেই ময়মনসিংহগামী বাসে উঠে বসে পড়েছিলাম। নেমে খুঁজেপেতে তাকে খুঁজে বের করি। তারপর সারারাত বসে আড্ডা দেই তাদের হোস্টেলের পুকুরঘাটে বসে। পূর্ণ চাঁদ ছিলো কিনা মনে নেই। নিজেদের স্মৃতির রোমন্থনে এটোই ব্যস্ত ছিলান যে ঐ দিকে মন দেয়ার কথা মনেই হয় নি। এভাবে ভোয় হয় একসময়। পুকুরঘাট থেকে হোস্টেল হয়ে বাসস্ট্যান্ডে ফিরে আসি দুজনে। ঢাকার বাস ধরি আবার। ও থেকে যায় পেছনে। সেইদিন থেকে আজকের দিন, অনেকগুলো বছর কেটে গেছে মাঝে। আর দেখা হয় নি। এখন ত্রিমূর্তি আছি তিন দেশে। আলাদা আলাদা করে আমরা জোছনা উপভোগ করি এখন। একসাথে আর করা হয় না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক's picture

আসলেই ...কিছু কিছু জোছনা মাখা রাত মনে দাগ কেটে যায় ৷
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ৷

নীল তারা

মর্ম's picture

"..হলের সামনে পুকুরপাড়ে বাঁধানো ঘাটলা.. নারকেল গাছের ছায়া.."- জহুরুল হক হল নাতো? বড় বেশী আপন আর চেনা ছবি তো, তাই সন্দেহে পড়লাম।

হলে কাটিয়ে আসা চমত্‍কার কিছু দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন, অনেক ধন্যবাদ। হাসি

পরের লেখার আশায় রইলাম।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.