অনেকদিনের ইচ্ছা একটা গল্প লেখব।সেটা ভাল খারাপ যাই হোক ইচ্ছা করত মানুষকে শোনাতে।সেই ইচ্ছার মূল্য দিতেই সচলায়তনে প্রবেশ এবং আজকের এই লেখা। বাংলা বানান এবং ব্যাকরণ বিষয়ে বরাবর ই খুব কাঁচা , তাই লেখার বানান এ ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী এবং সেই সাথে সঠিক বানানটি জানানোর জন্য অনুরোধ রইল।
হত্যা
অন্ধকার ঘর। কোন জানালা নেই। তারপরেও কোন এক অজানা উৎস থেকে একটু আলো এসে ঘরের মাঝখানে পড়েছে। সেই আবছা আলোতে চেয়ারে বসা একজন মানুষ কে দেখা যাচ্ছে।মধ্যবয়স্ক ,নিতান্তই সাধারন চেহারার একজন মানুষ।পরনে তার সাদা শার্ট, সাদা পাজামা। তার হাত এবং পা চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাধা। মুখে কাপড় গোঁজা। মাথা উদ্ধত। চোখে বিষন্নতা, কিন্তু মুখে ভয়ের লেশমাত্র নেই।সে জানে কিছুক্ষন পরে তাকে খুন করা হবে।
আলোকিত অই অংশটুকু ছাড়া ঘরের বাকি অংশে গাঢ় অন্ধকার।সেখানে শব্দ করে অদ্ভুত ছন্দে হাটছে একজন।হাটার শব্দ ঘরের একমাথায় গিয়ে থেমে যাচ্ছে, এর পর আবার শুরু হচ্ছে। হঠাৎ করেই দাড়িয়ে পড়ল আততায়ী। লম্বা একটা নিঃশ্বাস।এরপরে কর্কশ হাসির শব্দ। আপনমনেই বলে উঠল,
বিস্ময় ,দুঃখ, আনন্দ!!! আমি ত ভাবছিলাম এইগুলি আর অনুভব করা আমার পক্ষে সম্ভব না”,কিন্তু তারপর ও যখনই আমি তোকে অই চেয়ারে অসহায় অবস্থায় দেখি আমার মনে হয় আমি আনন্দে আর বিস্ময়ে পাগল হয়ে যাব। দুঃখিত ও হই তবে সেটা মাঝে মাঝে।
হাসছে আততায়ী।
জানিস কেন বিস্মিত হই আমি? তোর ক্ষমতা আমার চেয়ে অনেক বেশী, তাও সবসময় তোর পরিনতি এরকম ই হয়
এইবার বল ত দুঃখিত কেন হই?
আচ্ছা থাক তোর বলতে হবে না, আমি ই বলি, হাজার হোক আমরা ভাই তো, একই পয়সার এপিঠ ওপিঠ, তোর কিছু হলে বল আমি ত একটু কষ্ট পাবই
তবে কি আমার কথা বিশ্বাস করিস না, আমার কি দোষ বল,জানিস ই ত, সত্য কথা বললে আমার আয়ু কমে যায়।
আর যাই বলিস, এই রহমান সাহেবের প্রশংসা করতেই হয়, পয়তাল্লিশ বছর , কম সময় না একেবারে। অবশ্য তোর আর আমার কথা আলাদা, আমরা ত অনন্তকাল থেকে অপেক্ষা করি
এই দুনিয়ার জন্ম থেকেই তোর আর আমার ঝগড়া, লড়াই। হিসাব করে দেখতো কয়বার তুই হারছিস? গুনে শেষ করতে পারবি না , তাও আশ মেটে না তোর, এখনো গোয়ার এর মত লড়ে যাচ্ছিস। যাক গে, কি যেন বলছিলাম? হ্যা, রহমান সাহেব, তুই মন খারাপ করিস না, অনেকদিন পরে এক বান্দাকে দেখালাম এতদিন তোর সাথে ছিল।
কিন্তু এখন সে কি করবে বল, পরিস্থিতিটাই এরকম হয়ে গেল। বাধ্য হয়েই না রহমান তোর সঙ্গ ছেড়ে দিল
সত্য বলতে কি , তোকে একদম বিক্রি করে দিয়েছে ব্যাটা,এতদিন তোর বন্ধু ছিল, কিন্তু বেইমানী করার সময় দুইদিনের বেশী সময় নেয় নাই।তুই কিন্তু মন খারাপ করিস না, জানিস ই ত রহমানের অবস্থা। সরকারী চাকরী, অল্প বেতনে বউ আর দুই বাচ্চার সংসার চালাতে হয়।চাকরীতে কোন প্রমোশন হয় না। দশ বছর ধরে একই পদের ঘানি টেনেই যাচ্ছে। আবার কপাল খারাপ ব্যাটার, বউটাও জুটছে এমন, দুইদিন পর পর এই অসুখ, সেই অসুখ।কিছুদিন আগেই ত বউ এর হার্টের অপারেশন করলো।গ্রামের জমিজমা , বউয়ের গয়নাগাটি সব বেচতে হইসে। তবে লোকটা বোকা, অইসময় যদি অই চৌধুরী এন্ড সান্স এর ফাইলটা চোখ বুঁজে সই করে দিত, তাইলে অই ঘুষের টাকা দিয়াই চিকিৎসা করাইতে পারত।কিন্তু সৎ মানুষদের এই ত সমস্যা। চিন্তা ভাবনা কিছু করে না, ফালতু আদর্শ দিয়ে চলে। তারপর জিনিসপত্রের দাম দেখ, রহমানের বাচ্চারা অনেকদিন মাছ মাংসই দেখে নাই। ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে গেসে লোকটা। দুই মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি পড়সে, বাড়িওয়ালা প্রতিদিন হুমকি দেয়, ভাড়া না দিলে, গুন্ডা দিয়া বাড়ি খালি করাবে। দুই বাচ্চাকে গত ঈদে নতুন জামাও দিতে পারে নাই।নিজের শরীর এর অবস্থাও খুব খারাপ, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার কিছুই বাদ নাই।এইগুলার চিকিৎসা করানোর টাকাও নাই তার কাছে।
একটানা অনেকক্ষন কথা বলার পর চুপ করে গেল খুনী।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেসিল বুঝলি, অইসময় যদি আমি সাহায্য না করতাম, নিশ্চিত আত্মহত্যা করত ব্যাটা। বুঝাইলাম যে আমার কথা শুনলে, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, কিছুই না শুধু মাসে দুই তিনটা ফাইল চোখটা বন্ধ করে সই করে দিতে হবে। আর এরকম ভাবে চলতে থাকলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন ফ্ল্যাট, গাড়ি, বউয়ের জন্য নতুন গহনা সবই হবে। রহমানের চোখ চকচক করতেসিল কথা শুনে। এর পরে শর্ত দিলাম আমি, খুবই সহজ শর্ত আমার, তোকে খুন করতে হবে। শুনেই কেমন জানি চুপসে গেল ব্যাটা। কিন্তু আমি জানতাম যে রহমান আর সেই আগের রহমান নাই। জানিস ই তো সুযোগ চিনতে আমি কখনো ভূল করি না।
এরপর আরকি, দুইদিন সময় নিল ব্যাটা, তবে শুনে খুশী হবি রে, রহমান জানপ্রান দিয়ে যুদ্ধ করছে, কিন্তু ব্যাটা অঙ্কে ভাল ত, বিশেষ করে লাভ ক্ষতির অঙ্কে। সহজেই বুঝল যে তার আদর্শ নিয়া পড়ে থাকলে তার বাচ্চাগুলা ভিখারী ছাড়া কিছু হবে না। বউ এর উন্নত চিকিৎসা দরকার, টাকার দরকার অনেক টাকা। কিন্তু তারপরেও কিছুতেই শেষ কাজটা করতে পারতেসিল না। মানুষ অভ্যাসের দাস বুঝলি, এতদিন তোর সাথে চলেছে, একটু মায়াদয়া ত থাকেই।খালি ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে ছিল। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল, শালার পুরুষমানুষ হইসিস, আবার কান্না কিসের!!!যাই হোক বাধ্য হয়েই আগায়া গেলাম আবার। অভয় দিলাম, যে অর কিছু করতে হবে না, আমিই যা করার করব। এর কথা শোনার পর চুপ করে গেল রহমান। এর পরে তোকে আমার হাতে ছেড়ে দিয়ে আস্তে করে ঘুমায়া গেল। কত্ত বড় বেইমান চিন্তা কর
সবই ত তোর জানা, তাও তোকে এত কিছু কেন বলতেসি জানিস?
মনে করিস না এতকিছু বলে তোর বোধোদয়ের চেষ্টা করতেছি, তুই একগুয়ে গোয়ার ছিলি, সবসময় ই থাকবি, আসলে তোর এই অবস্থায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে মজা নিচ্ছিলাম আরকি
তুই কি সবসময়ের মত আজকেও চুপ থাকবি? থাক তাহলে। কিন্তু সময় হয়ে আসছে। কিছুক্ষন এর মধ্যেই সকাল হবে।
হঠাৎ করেই অন্ধকার থেকে আলোয় এল আততায়ী। চেয়ারের সামনে গিয়ে মুখটা বন্দীর মুখের কাছাকাছি নিল সে। একই চেহারা, একই চোখ, একই মুখ, একই শরীর। পোশাকটা শুধু কাল।চোখমুখ থেকে ঠিকরে পড়ছে জিঘাংসা। আবার হাটতে লাগল আততায়ী। হাটতে হাটতে এবার বন্দীর পিছনে গিয়ে দাড়াল। বন্দী আগের মতই নিশ্চুপ, দৃষ্টি উদ্ধত।
হিস হিস কন্ঠে বলে উঠল খুনী
আজকে আবার আমার জয় হবে, আজকে আরেকবার তুই খুন হবি, তোর বখে যাওয়া ভাই ই তোকে খুন করবে
বিদায় ভ্রাতা, আশা করি সামনে আরেকবার দেখা হবে আবার এই ঘরেই
সকাল হয়ে গেছে। সৃষ্টিকর্তার পৃথিবীতে আরেকটা দিনের শুরু। শরীর খারাপ স্বত্ত্বেও সালেহা সকালেই উঠলেন। নাস্তার আয়োজন করতে হবে, বাচ্চাদের স্কুল এর জন্য রেডী করতে হবে। অনেক কাজ। সবার আগে চা বানাতে হবে। এই অভাবের সংসারেও রহমান সাহেবের ঘুম থেকে উঠেই চা খাবার অভ্যাস।পাশ ফিরে দেখলেন , রহমান সাহেব এখনো ঘুম এ। থাক ঘুমোক আরো কিছুক্ষন, বেচারা এত সমস্যা সহ্য করে এখনো তাদের সংসার চালাচ্ছে এর জন্য তিনি সৃষ্টি কর্তাকে ধন্যবাদ দিলেন।রান্নাঘর এ গিয়ে চা বানাতে বসলেন। এই ফাকে ঘরও ঝাট দিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন এর মধ্যেই কেটলী থেকে ধোয়া বের হতে লাগল। চা কাপে এ ঢেলে তিনি রহমান সাহেবের ঘুম ভাঙাতে গেলেন।
বিছানা খালি। সামনে তাকাতেই সালেহা দেখলেন তার স্বামী ঘরের সাথে লাগোয়া এক টুকরো বারান্দায় দাড়িয়ে আছেন। রোদ এসে পড়ছে রহমান সাহেবের মুখে। স্বামীর পাশে এসে দাড়ালেন তিনি। মুখের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলেন সালেহা। এমন ত ছিল না তার স্বামীর মুখ। সারা মুখ কেমন যেন বিকৃত লাগছে,হলুদ হয়ে গেছে চামড়া, পশুর মত জ্বলজ্বলে দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন রহমান সাহেব। সালেহার হাত থেকে চা ছলকে মাটিতে পড়ে গেল। শব্দ পেয়ে রহমান সাহেব তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন।কই না তো, আবার সেই আগের চেহারা, বিয়ের ১৫ বছর ধরে যে চেহারা দেখছেন সালেহা। চোখে ভুল দেখেছি নিশ্চয় ভেবে স্বামীকে চা দিয়ে আবার ঘরের কাজে লেগে গেলেন তিনি। তার পরও এক অজানা আশংকায় তার বুক দুরুদুরু করতে লাগল।
সকালের চা তে আস্তে আস্তে চুমুক দিচ্ছেন রহমান সাহেব। আজকে সেই দিন।চৌধুরী এন্ড সান্স আবার তাকে একটা অফার দিয়েছে দুইদিন আগে। ফাইল এ একটা সই, সাথে সাথে ব্যাংক এ লাখ টাকা জমা হয়ে যাবে। আজকে বিনা দ্বিধায় সই করবেন তিনি। অনেক সয়েছেন তিনি আর না। সৎ থাকার ফলাফল হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন তিনি। তিনি আজ মুক্ত। তার বিবেকবান সত্যবাদী সত্বাকে কে গতরাতেই হত্যা করেছে তার অশুভ সত্বা।আর কোন বাধা নেই। প্রসন্ন মনে আবার চা তে চুমুক দিলেন তিনি।
Comments
গল্পের থীমটা দারুণ লেগেছে। গল্পটাও।
বানান বেশ কিছু ভুল আছে। তবে সেটা ছাড়াও, ফরম্যাটিং পছন্দ হয়নি। সংলাপগুলো এভাবে উদ্ধৃতির আকারে না দিলেই ভালো হতো।
সচলায়তনে স্বাগতম। নিয়মিত লিখুন।
ভালো লাগলো। সচলে স্বাগতম!
Quote বাটনের ভুল ব্যবহার হয়েছে মনে হচ্ছে। মডুদেরকে অনুরোধ করে দেখতে পারেন কেউ সদয় হয়ে ঠিকঠাক করে দেবেন কি না।
অনেক চমৎকার প্লট
গল্পটাও
কিন্তু লেখকের নাম নেই কেন?
চমৎকার প্লট। গল্পের বিস্তারন ও ঘটেছে সুন্দরভাবে।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
বনফুলের একটা গল্পে ছিলো- গল্পের শেষে নায়ক স্বপ্নে দেখতে পায় কেউ একজন ফাঁসি নিচ্ছে। সে যখন প্রশ্ন করে তাঁর নাম কী, জবাব পায় 'তোমার বিবেক, রাস্কেল কাঁহিকা !!!'
... গল্পের থিমটা দারুণ লেগেছে- কিন্তু "উদ্ধৃতি" আসলে এভাবে সংলাপের ক্ষেত্রে ব্যবহার না করা শ্রেয়- কেউ করেন না।
নামটা লেখার শেষে লিখে দিয়েন এরপর।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
গল্পটা খুবই ভালো লেগেছে। অনেকটা স্বগতঃ সংলাপের ঢঙে লিখেছেন বলে আন্দাজ করতে পারছিলাম যে নিজের সাথেই কথোপকথন হবে হয়তো। তবে থীমের কারণেই খুব চমৎকার একটা পরিণতি পেলাম!
আপনার নামটা জানায়েন।
পড়ে খুব মজা পেলাম। নাম নেই কেন?
গল্পের বিষয়বস্তু ভালো লেগেছে। সচলে স্বাগতম!
স্বাগতম! দারুন থীম, আরও লিখুন!
---------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। গল্পটা ভাল লাগছে শুনে যারপরনাই আনন্দিত। অনেক অনেক দিন পর একটা ফোরাম /ব্লগ এ ঢুকলাম, quote বাটন এর ব্যবহার টাই ভুলে গেসি, আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল যে quote দিলে বাক্যর দুই পাশে quotation mark বসে যাবে । কিন্তু এরকম চেহারা যে দাড়াবে তা কল্পনা করি নাই। কোন এক মডারেটর ভাই যদি কষ্ট করে quote গুলি উঠিয়ে দেন(কোনভাবে যদি আমার পক্ষে করা সম্ভব হয় সেটা জানাবেন প্লীজ), তাহলে কৃতার্থ থাকব।
বানান ভুলের জন্য আবার ও ক্ষমাপ্রার্থী। তবে আবার ও সঠিক বানান জানানোর অনুরোধ রইল।এখন থেকে নিয়মিত লেখা এবং মন্তব্য করার চেষ্টা করব। লেখার শেষে নিজের নিবন্ধন নাম দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। এইবার দিলাম --
অবিনশ্বর
ভালো লাগল। থীমটাই গল্পের প্রাণ। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা প্রতিরাতে নিজের বিবেককে হত্যা করে, হত্যা করতে বাধ্য হয় দারিদ্র্যের কাছে হেরে।
অগ্রীম ঈদ মোবারক।
দলছুট।
========
বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।
Post new comment