স্কুলের আরিফ স্যার এবং ঘরের আবুল ভাই

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Mon, 26/05/2008 - 4:33am
Categories:

১৯৭৪-৭৫এর দিকে ঢাকার রমনা রেলওয়ে প্রাইমারি স্কুলে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আমি। তখন আগামসি লেন থেকে আসতেন আরিফ স্যার। দেখতে ছোটখাট। খাতায় এমন ভাবে মু.আরিফ লিখতেন, আমি ভাবতাম লেখাটা মুথা। অনেকদিন আমরা ছোট তিন ভাইবোন তাঁকে মুথা স্যার হিসেবেই জেনেছি। দেখতে মোটামুটি ফর্সামত। ভালো স্বাস্থ্য। তিনি আমাদের ক্লাসে অংক নিতেন।

ছাত্র হিসেবে খুবই বাজে ছিলাম বলে আমার জ্যেষ্ঠ ভাইদের বন্ধু আবুল ভাইও আমাদের ঘরে পড়াতে আসতেন দুপুরের পর। অবশ্য তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তো একদিন ক্লাসে সাপ্তাহিক পরীক্ষা হলো। আরিফ স্যার আমাদের একটি অংক করতে দিয়েছেন। ক্লাসেই দেখা আর ক্লাসেই লেখা। কিন্তু আমি ক্লাসের সবচেয়ে হাবলু ছাত্র ছিলাম বলে অংকটার ব্যাপারে কী করতে হবে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলাম না।( আসলে ২+২ এর মত সাধারণ যোগ অংক ছিলো।) অন্যরা বেশ দ্রুতই অংকটা করে খাতা জমা দিয়ে দিলো। আমি বুঝতে পারছিলাম না এবং অংকটা কষে খাতা জমা দিতে পারছিলাম না দেখে কষ্টে আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো।
ক্লাসে তখন মোশাররফ ক্যাপ্টেন। তার পড়শী বাবু (মোঃ আলি)। দুজন আমারও ভালো বন্ধু। আমাকে কাঁদতে দেখে বাবু হয়তো দয়া পরবশ হয়েই বললো, উত্তর বিশ ল্যাহ।

আমাকে আর পায় কে? উত্তর ২০ লিখে নিয়ে স্যারের টেবিলে খাতা জমা দিয়ে দিলাম। এবং তদসঙ্গে তিনি ২০ এ ২০ নাম্বার দিয়ে যথারীতি মু.থা সাইন করে দিয়ে দিলেন। বিশ এ বিশ। তার মানে একশ একশ! খুশিতে টগবগটগ করছি। দুপুরের পর বাসায় আবুল ভাই এলেন আমাদের পড়াতে। অতি উৎসাহে আমার নাম্বার পাওয়ার কথা জানিয়ে খাতাটা দেখালাম। কিন্তু তিনি অংকটি দেখে ঘ্যাচাং করে কেটে দিলেন। আমি তো পারলে আবুল ভাইকে গুলি করি। যতই প্রতীবাদ করি যে অংক হয়েছে, তিনি ততই বলেন যে, অংক ভুল। তারপর বুঝিয়ে দিলেন যে, আসলে এর উত্তর ঠিকই আছে। ব্লাক বোর্ডে দেখে দেখে অংকটা খাতায় তুলেছিলাম বলে বিপত্তিটা সেখানেই ঘটেছে। সেই থেকে যে অংকের প্রতি আমার বিরাগ শুরু হলো। তা আমার এস.এস.সি পরীক্ষায়ও বহাল ছিলো।

এখানে খুবই নির্লজ্জের মত উল্লেখ করতে বাধ্য হচ্ছি যে, এস.এস.সি-তে বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও নির্বাচিত গণিত আমার ছিলো না। সাধারণ অংকে তেইশ পেয়েছিলাম। ভাগ্যিস সে বছর নিয়ম ছিলো- সর্বোচ্চ ১০নাম্বার গ্রেস মার্ক দেওয়া হলেও তা টোটাল মার্ক থেকে কাটা হবে না। এমন কি পরীক্ষার্থীয় প্রাপ্ত ডিভিশনেরও কোনো ক্ষতি হবে না। আজ মধ্য বয়সে এসেও মাঝে মাঝে ভাবি যে, এমন নিয়মটি মনে হয় কেবল আমাকেই অংক পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্যে হয়েছিলো। নচেৎ আগে পরে কখনোই এমন অদ্ভূত নিয়মের কথা শোনা যায়নি।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী


Comments

সবুজ বাঘ's picture

ভালা হইছে।

অতিথি লেখক's picture

ধন্যবাদ।

দুর্দান্ত's picture

অংকে অরুচি গুনাহ্‌র কিছু না।

অতিথি লেখক's picture

ঠিক।

অতিথি লেখক's picture

হক কথা! ধন্যবাদ।

রায়হান আবীর's picture

আমারও ম্যাথ ভাল্লাগেনা...কিন্তু সারাজীবণ ম্যাথই কর্তে হলো...লেখা ভালো হইছে।

---------------------------------

অতিথি লেখক's picture

যেই অংকের ভয়ে আর্টস নিয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু দূর্ভাগ্য, প্রবাসে চাকরির অভিশাপ হিসেবে এখন নতুন করে সায়েন্ফিক ক্যালকুলেটর টিপতে হচ্ছে। এখানে শুধু কান্না নয়, মাথা খারাপ হয়ে গেলেও সহযোগীতার কেউ নেই। হাবিজাবি এরিয়া ক্যালকুলেশন করতে গিয়ে শুধুই ভুল করি। ভাগ্যিস বারবার ভুল করলেও সেগুলো সংশোধনের ভার আমার কাঁধেই চাপে। এখন তো অনুশোচনা হচ্ছে যে, স্কুলঝীবনেই কেন অংকটার প্রতি জোর দিলাম না।
*পাদটীকা*
অপছন্দের কাজটাই মানুষকে বারবার করতে হয়।
ধন্যবাদ।

সংসারে এক সন্ন্যাসী's picture

নম্বর মোটামুটি ভালোই পেলেও স্কুলে ‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍অঙ্ক আর আতঙ্ক আমার কাছে ছিলো সমার্থক হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক's picture

অংকের আতঙ্ক মনে হয় ভূত-পেত্নীর আতঙ্কের চাইতেও খারাপ! ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

পড়লাম ।

অতিথি লেখক's picture

এবং এজন্যেই আপনি ধন্যবাদার্হ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

ধুসর গোধূলি's picture

- অংক জিনিষটা আসলে গোটা ছাত্রজীবন থেকেই উঠিয়ে দেওয়া উচিৎ।
ভুটাভুটি করলেও এই অংক নামক জন্তুর বিপক্ষেই সর্বাধিক ভুট যাবে, এইটা আমি মোটামুটি নিশ্চিৎ।

অংক বিরাগে সর্বদা সাথে আছি জুলিয়াস সিজার ভাই। চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক's picture

জুলিয়াস সিজার একটু আগেই গেল না! আপনাকেই তো খুঁজছি। কোথায় আপনি? একটা অভিনন্দন পাওনা আছেন।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

তানবীরা's picture

অঙ্কের জন্য সায়েন্স থেকে আর্টসে ভর্তি হলাম। অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান আবার অঙ্ক করো। গেলাম আইন পড়তে আবার অঙ্ক করো তাও দুইবার পনের করে নাম্বার। বিয়ে করে ফেললাম এই যন্ত্রনায়, ওম্মা কিসের কি? স্বামী আইন্না আবার স্কুলে ভর্তি। এখন কপাল মাইরা দিনরাত আর এক লোকের ব্যাবসার হিসাব রাখতেছি।
ধন্য মানব জীবন।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতিথি লেখক's picture

যারে ডরায় হ্যায়ই লড়ায়
-গ্রাম্য প্রবাদ।
যার আধুনিক সংস্করণ হলো- যেখানে বাঘের ভয়...
অংকের হাত থেকে কিন্তু কারোই মুক্তি নেই। সর্বত্রই গণিত। ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

নুশেরা তাজরীন's picture

লেখা ভাল লাগল।
কিন্তু গণহারে গণিতবিদ্বেষ তো সুবিধার লাগেনা মন খারাপ
আমার প্রিয়তম বিষয়; যখন যেভাবে পেরেছি, অপশনাল, সিলেক্টিভ, থার্ড-ফোর্থ পেপার কোনোভাবে নিতে বাকী রাখিনি।
আফসোস, শুধু জীবনের অংকই মিললনা...

অতিথি লেখক's picture

যার হাত থেকে বাঁচা কঠিন, মুক্তি পাওয়া কঠিন, তার সঙ্গে আর যাই হোক সখ্য হয় না মনে হয়।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

স্বপ্নাহত's picture

অঙ্কাতঙ্কে এখনো ভুগি মন খারাপ

সামনের দিনগুলান তো পইড়াই আসে ওঁয়া ওঁয়া

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতিথি লেখক's picture

মনে সাহস রাখেন। জানেন তো, করতে করতে কর্তা!
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

অতিথি লেখক's picture

গণিত নিয়ে আমার ভয় একটু একটু ছোট থেকেই আছে।পড়াশোনায় উপায় নাই দেখে করতে হচ্ছে এখনো গণিত।যাই হোক, লেখা ভাল হয়েছে জুলিয়ান ভাই।কেউ পাঁচ এখনো দেয়নাই দেখে ব্যাথিত হইলাম।আমি যদিও দিতে পারিনা তবে দিলাম মনে মনে।চালিয়ে যাবেন লেখা আশা করছি।

~~~টক্স~~~

অতিথি লেখক's picture

মাথাটা একটু খেলালেই সমাধান পেয়ে যাবেন। ৫ বড় কথা না। কথা হচ্ছে লেখাগুলো কতটুকু গভীরতা পাচ্ছে। আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.