অবাক হওয়া রাত এবং অক্ষমতার গল্প

নজমুল আলবাব's picture
Submitted by albab on Fri, 11/09/2009 - 2:48pm
Categories:

অবাক করা সব কাণ্ড ঘটতে থাকে। অন্তত আমি অবাক হই। রাত দুইটা খুব বেশি রাত নয় আমার জন্যে। গত দশ বছর ধরে এই সময়টার ধারে কাছে বাড়ি ফিরি। আজও ফিরেছিলাম। দরজা খুলে দিলো বউ। প্রথম অবাক করা ঘটনা হলো এটা। আমাকে কেউ দরজা খুলে দেয় না। একটা চাবি আছে আমার। সেটা দিয়ে সদর দরজা খুলি। আর ভেতর বাড়িতে তালা টালা দেয়ার নিয়ম নেই আমাদের। আজ সেই নিয়মের ব্যত্যয় হলো। আমাদের কোনো কথা হলো না, সাধারণত হয়ও না। আমি বউকে পাশ কাটিয়ে শোবার ঘরে চলে এলাম। বিছানায় আমার পাঁচ বছর বয়েসি মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে।

আমার কাঁধে একটা ব্যাগ থাকে সবসময়। এখন এই ব্যাগের কোনো দরকার নেই। তবু থাকে। অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে। মান্নাদা একবার বলেছিলো, এই ব্যাগ ছাড়া নাকি আমি অসম্পূর্ণ। আমারো তাই মনে হয়। দরজার ফাঁকে একটা তাক আছে। সেখানে ব্যাগ রেখে লুঙ্গিটা খুঁজি, সেটা নেই। লুঙ্গি খুঁজবো বলে ঘুরে দাড়িয়ে আমাকে দ্বিতীয় দফায় অবাক হতে হয়। বউ লুঙ্গি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সাধারণত আমি অবাক হই না। আমার সে ক্ষমতা লোপ পেয়েছে অনেক আগে। তবু আজ বার বার অবাক হতে হয় আমাকে।

গরম পড়েছে খুব। শরীর চ্যাটচ্যাটে হয়ে থাকে সবসময়। গোসল করতে হয় বাইরে থেকে ফিরে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি ঘরের বাতি তখনও জ্বলছে। বউ বিছানায় নেই। অন্যদিন এটা জ্বলে না। আমি ডিমলাইটের আলোতে পা টিপে টিপে খাবার টেবিলে যাই। সেখানে খাবার ঢাকা দেয়া থাকে। ঠান্ডা ভাত আর তরকারি গলায় সেধিয়ে দিয়ে আমি ঘুমের আয়োজন করি। আজকে সেসব কিছুই হলো না। টেবিলে ভাত বেড়ে বসে আছে রোমানা। আমি বসতেই প্লেটটা এগিয়ে দেয় সে। এসব দেখে আমার ভেতর ঢং ঢং করে কি একটা বাজনা বাজতে থাকে। ধ্রিম ধ্রিম করে কি একটা বাজনা বাজে আমার বুকে।

প্রায় নিঃশব্দেই খাবার শেষ করি। মাঝখানে রোমানা ডাল তুলে দিতে চাইলে আমি না বলায় খাবারের টেবিলটা মূলত নিঃশব্দ থাকে না। শোবার ঘরে ফিরে আমি ইতস্তত করি। আমার কেনো যেনো বার বার মনে হয়, আজ রাতটা অন্যরকম। আজ অন্যরাতের মতো নিঃশব্দে শুয়ে পড়া যাবে না। মায়াবীর পড়ার টেবিলে বসি আমি। রঙ-বেরঙের বই দিয়ে সাজানো মায়াবীর টেবিল। টেবিলের এক কোনায় নীল রং এর একটা টেডি বিয়ার বসে আছে। ওর প্রথম জন্মদিনে এটা পেয়েছিলো সে। শান্তনু দিয়েছিলো এটা। এর ঠিক পাশেই একটা মগ। সেখানে বন্ধুতা নিয়ে কী একটা কথা লিখা। এটাও জন্মদিনের উপহার। রূপা দিয়েছিলো। বিষয়টা মাথায় আসতেই হাসি পায় আমার। বাবা-মায়ের সাবেক প্রেমিক-প্রেমিকারা কেমন ভালোবাসে মায়াবীরে.. আমার হাসিটা মনে হয় ঠোঁটের কিনারায় অনেকক্ষণ লেগে ছিলো। আমি মনে হয় অনেক বেশি মৌনতায় ডুবে গিয়েছিলাম। তাই খেয়াল করিনি রোমানা ফিরেছে। হাসছো কেনো? প্রশ্নটা শুনে ফিরে তাকাই। রোমানা জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে। আমি মাথা নাড়ি। এর কোনো মানে নেই। কোন উত্তরই বহন করে না এই মাথা নাড়াটায়। রোমানও সেটা বোঝে, সে কথা বাড়ায় না। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে, তারপরই বলে সেই কথাটা। যেটার অপেক্ষা করছি আমি- তোমার সাথে আমার কথা আছে...

আমাদের কথা হয় না কতদিন হয়ে গেলো। হ্যাঁ, কথা হয় না। আমরা সপ্তাহের দু’তিনদিন খুব প্রয়োজনে যেসব বাক্য বিনিময় করি, তাকে ঠিক কথা বলার পর্যায়ে ফেলা যায় না। সকালে আমি যখন বেরুই। সেটা ন’টা কিংবা দশটা হতে পারে। দশটা হলে আমাদের দেখাই হয় না। ততক্ষণে রোমানা অফিসে চলে যায়। ন’টা হলে আমাদের দেখা হয়। আমিও বেরোই, সেও বেরয়। ওর জন্যে একটা রিক্সা ঠিক করা আছে। সাড়ে আটটার পরে পরে চলে আসে। মায়াবীকে স্কুলে নিয়ে যায় ওর ছোট চাচা। স্কুলে দিয়ে সে ইউনিভার্সিটিতে চলে যায়। বাড়ী ভর্তি মানুষের সামনে অভিনয় করতে হয় তখন। সুখী দম্পতির মতো রিক্সায় চেপে বসতে হয়। আমি বাজার পর্যন্ত আসি। খুব কাজ আছে এমন ভান করে নেমে যাই। রোমানা মনে করিয়ে দেয়, বারটায় মায়াবীর স্কুল ছুটি হবে। আমি মাথা নাড়ি কোনোদিন, কোনোদিন মুখ খুলে বলি, সময়মতো পৌছে যাবো।

রোমানা কথা শুরু করে। কেমন আছো তুমি? একেবারে অপ্রাসঙ্গিক একটা প্রশ্ন। আমার ভালো থাকা কিংবা খারাপ থাকাতে তার কিছু আসে যায় না। একইভাবে তার বেলাতেও সেই কথা খাটে আমার কাছে। তবু সে প্রশ্নটা করে। আমি বুঝি ভেতরে ভেতরে অন্যকিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রোমানা। কিন্তু বলার মতো পরিবেশ মনে হয় পাচ্ছে না। এটাও একটা অবাক করা বিষয়। আমাদের মাঝে কথা বলার এমন কোনো বাধা নেই। সম্পর্ক এমন কোনো আহামরি জায়গাতে লটকে নেই যে, তিতা মিঠা কিছু বলতে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তবু রোমানাকে ইতস্তত করতে দেখি। কথা আছে বলেও সে কথা বলে না। মায়াবীর কাছে যায়। তার কোলবালিশটা ঠিক করে দেয়। কপালের অদৃশ্য ঘাম মুছে দেয়। আমি অপেক্ষা করি।

ঘরের দেয়ালে থাকা ঘড়িটা টিক টিক শব্দে জানান দেয়, সে চলছে। টিক টিক শব্দ জানান দেয়, আমাদের নীরবতায় ভারী হচ্ছে এই ঘরের পরিবেশ। ঘরময় আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে ঘড়ির টিক টিক শব্দ। আমি রোমানাকে দেখি। আরো উজ্জল হয়েছে তার গায়ের রঙ। মা এই রঙ কে বলেন দুধে আলতা। দুধে আলতা কি খুব সুন্দর কোনো কম্বিনেশন? রোমানাকে দেখলে তাই মনে হয়। কিন্তু দুধ সাদা টাইলস জুড়ে ছড়ানো আলতার মতো রক্ত দেখে আমার সেটা মনে হয়নি। এমন একটা দৃশ্য দেখেছিলাম শাহজালালের দরগাতে। গ্রেনেড চার্জ করে মানুষ মারা হয়েছিলো। নতুন বিছানো সাদা রঙের টাইলস জুড়ে ছিলো রক্ত আর রক্ত। বীভৎস... সেই রাতে অফিস থেকে ফিরেছিলাম জ্বরগ্রস্ত হয়ে। শরীর পুড়ে যায় যেনো। রোমানা সারারাত জেগে ছিলো। আশ্চর্য মোহন শরীরে সে আমারে জড়িয়ে ধরে রাত পার করে দিয়েছিলো। তখন আমরা একজন আরেকজনকে এভাবেই আঁকড়ে ধরে থাকতাম। আমরা নিজেদের পাঠ করতাম কবিতার মতো- প্রতিদিন, প্রতিরাতে।

মায়াবী নড়ে চড়ে উঠে। রোমানা গালটা ছোঁয়ায় তার নাকে। তার পর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, মায়াবী, হিসু করবে, মায়াবী... মায়াবী ঘুমের মাঝেই শরীর মুচড়ে বলে, হ্যাঁ। রোমানা আমার দিকে তাকায়। আমি আস্তে আস্তে মায়াবীকে কোলে তুলি। বাথরুমে নিয়ে যাই। রোমানা ওকে কমোডে বসিয়ে ধরে থাকে। ঘুম জাড়ানো চোখে মায়াবী আমাকে দেখে। হাসে। আমি বলি, কিরে তোর দাত দেখি সব গেলো। মায়াবী আবার হাসে, জড়ানো কণ্ঠে বলে, তুমি আমার ছাতা চকলেট আনছো? আমি জিহ্বা অর্ধেক বের করে মাথায় হাত দিই। এইরে ভুলে গেছি। কাল ঠিক নিয়ে আসবো। মায়াবী রাগ করে। বলে, তুমি রোজ রোজ ভুলে যাও কেনো বাবা? তার ঘুম চলে গেছে। চোখ দেখে বুঝি, সেখানে জমেছে রাজ্যের বিষাদ। আমি আবার তার মন ভজানোর চেষ্টা করি। কালকে ঠিক ঠিক নিয়ে আসবো। একদম ভুল হবে না। মায়াবীকে আমার কোলে দিয়ে রোমানা বলে, যাও শুয়ে পড়ো তোমরা।

মায়াবী আমার বুকের ভেতর লেপ্টে থেকে বলে, বাবা তুমি কি একটা গবেট স্টুডেন্ট? আমি বলি, কেন রে? সে আবার আমার চোখে তাকায়, ডিমলাইটের আলোয় দেখি দুষ্টুমি ভরা চোখ, বলে, এই যে রোজ রোজ ভুলে যাও। আমাদের মিস্ বলেছেন, যারা সবসময় ভুলে যায় সবকিছু, তারা গবেট স্টুডেন্ট। আমি মায়াবীকে বুকে চেপে বলি, হ্যাঁ, তোর বাবা একটা গবেট, সে সবকিছু ভুলে যায়। তার মাথায় গোবর ভর্তি। মায়াবী হাসতে থাকে বুকের ভেতরে। আচমকা সেই হাসি থামে। মায়াবী আমার বুকে তার কোমল হাত বুলাতে বুলাতে বলে, বাবা সত্যি করে একটা কথা বলোতো, তুমি কি ভুলেই গেছো না তোমার পকেটে টাকা নেই? আমি কেঁপে উঠি। আমার চিন্তাশক্তি স্থির হয়ে যায় যেনবা। ভাঙা ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করি, কেন রে, তোর এটা মনে হলো কেনো? মায়াবী আমার সেই প্রশ্নে উত্তর দেয় না। কুট কুট করে বলে, বাবা আমার মাটির ব্যাংকটা তোমাকে দিয়ে দেবো, তুমি সেটা নিয়ে যেও। ওতে অনেক টাকা আছে... আমার হু হু করে কান্না আসে, সেই কান্না চেপে রাখতে গিয়ে মায়াবীরে বুকের মাঝে চেপে ধরি আরো শক্ত করে। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি রোমানা আমার দিকে জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। এই চোখটা আমি চিনি না। এই চোখের সাথে আমার পরিচয় হয়নি কোনদিন।

কখন ঘুম জড়িয়ে আসে চোখে টেরও পাইনা। ঘামে শরীর ভিজে গেলে ঘুম ভাঙ্গে। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে। রোমানা বসে আছে মায়াবীর পাশে। হাতে একটা পাখা। আমাকে বলে, তুমি ঘুমাও, আমি বাতাস করছি। ঘুম আর আসবে না। আমিও উঠে বসি। জিজ্ঞেস করি, কতক্ষণ ধরে গেছে? আধঘন্টা হবে বলে জানায় রোমানা। বিছানা থেকে নেমে জানালার পর্দা সরিয়ে দেই। ভারি পর্দা জানালা জুড়ে। ঘরে বাতাস আসে বাধা সরে যাওয়ায়। আকাশের রঙ পাল্টে যাচ্ছে। একটা সাদা সাদা ভাব তাতে। তারাগুলো মিটমিটে। ঘড়িতে তাকাই। সাড়ে চারটা বাজে। জানালায় দাঁড়ানো বলে বাতাস লাগে। ঘামে ভেজা শরীর শিরশির করে উঠে। তবু ভালো লাগে খুব। রোমানা কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো আমাকে, সেটা মনে পড়ে আমার। আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করি, তুমি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলে আমায়... রোমানা কিছু বলে না। পাখা ঘোরার হালকা শব্দটা চলতেই থাকে। একটুক্ষণ অপেক্ষা করে ঘুরে দাঁড়াই, তুমি কি এখন বলবে, কী যেনো বলতে চেয়েছিলে? রোমানা অস্ফুটস্বরে বলে, না। এখন আর বলবো না। কালকে কি তোমার সময় হবে সকালে? অফিস যাওয়ার সময় কি তুমি আমার সাথে বেরুতে পারবে? আমার কোনো সমস্যা থাকার কথা না। আধাঘন্টা পরে বা আগে বেরুলে আমার এমন কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না। তবু কথাটা এখনই শুনতে ইচ্ছে করে আমার। সেটা বলি রোমানাকে। এখনই বলো, আমি শুনতে চাই। রোমানা আবারও মানা করে,- থাক দরকার নেই। সকালেই বলবো। আমি বলি, না, এখনই বলো। তুমিতো রাতেই বলতে চেয়েছিলে। মায়াবী না উঠলে এতক্ষণে বলা হয়ে যেতো। বলে ফেলো। রোমানা বিব্রত হচ্ছে, স্পষ্টতই টের পাই। আমি আবারও অবাক হই। আমাকে কিছু বলতে সে বিব্রত হবে কেনো?

ইলেক্ট্রিসিটি এসেছে। ঘরময় ছড়িয়ে পড়েছে ফ্যানের বাতাস। রোমানা উঠে এসেছে বিছানা ছেড়ে। আমার পাশে দাড়িয়েছে সে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। টুক টাক কথা হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না, রোমানা এতো সময় নিচ্ছে কেনো? তবু অপেক্ষা করি। এভাবে পাশাপাশি দাড়িয়ে থাকতে খুব একটা খারাপ লাগছে না। পরিচিত ঘ্রাণটা অনেক কাছে থেকে পাচ্ছি। এই ঘ্রাণ একসময় আমাকে পাগল করে দিতো!

তুমি কি মনে করো আমাদের জীবনটা এভাবেই, এই অস্বাভাবিকভাবে কেটে যাবে? রোমানার এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আমার কাছে। সে তার অপেক্ষাও করে না। কথার পিঠে কথা বলে যায়, এভাবে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে অভিনয় করে যাওয়া খুব কষ্টকর। আমি তার কথা মেনে নেই মনে মনে। অভিনয় করাটা আসলেই কষ্টের। কিন্তু আমরা সেটাই করে যাচ্ছি দীর্ঘদিন ধরে। আমরা দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে যাই, যেটার খুব দরকার নেই। দরজার আড়ালে কিছু করার মতো জীবন আমাদের নেই। আমরা পাশের বাড়ির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে একসাথে যাই। পাশাপাশি বসি, হাসি, হাসাই। মায়াবীর স্কুলে প্যারেন্টস'ডে তে একসাথে গেলাম সেদিন। স্কুলের প্রিন্সিপাল আমাদেরকে আলাদা খাতির করলেন। রোমানার কাছ থেকে 'কার লোন' নেয়ার ব্যাপারে কি কি করতে হবে তা জেনে নিলেন। আমার সাথে বললেন রাজনীতি নিয়ে। কথা শেষে দরোজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। একফাঁকে বললেন, আমাদের দুজনকে নাকি তিনি খুব পছন্দ করেন। দারুণ লাগে আমাদের জুটিকে। আমরা লজ্জা পাওয়ার চেষ্টা করলাম সেটা শুনে। মায়াবীকে নিয়ে সেদিন দুপুরে আমরা ভালো একটা রেস্টুরেন্টে খেলাম। তারপর রোমানা চলে গেলো অফিসে, আমি মায়াবীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম। এক রিক্সায় চেপেই আমরা রোমানার অফিস অব্দি গেলাম। তাকে নামিয়ে দেয়ার আগে ব্যাগ থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে সে আমার হাতে দিলো, ভাড়া দিও। আমি বললাম, ভাড়া আছে আমার কাছে, তবু সেটা আমার হাতে গুজে দিতে দিতে বললো, থাকুক। কাজে লাগবে... এই, এই হলাম আমি। বাচ্চার রিকশা ভাড়ার টাকাও আমার কাছে থাকে না।

রোমানা কথা বলতে বলতে মায়াবীর চেয়ারে গিয়ে বসেছে। ফ্যানের বাতাসে তার চুল উড়ছে। আগে অনেক লম্বা চুল ছিলো তার। কোমর পর্যন্ত যেতো। এখন সেটা ঘাড়ে এসে ঠেকেছে। আমি সামনে গিয়ে দাঁড়াই। রোমানা এখন পর্যন্ত যা বলেছে তার বিরুদ্ধে দাড় করানোর মতো কোনো যুক্তিই আমি দিতে পারি না। আমার কাছে কোনো উত্তরই নেই, এমনই কঠিন সেইসব প্রশ্নমালা। 'তুমি বলতে পারো, এতো ভাব কেনো তোমার?' এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। আসলেইতো এতো ভাব হবে কেনো আমার? কোন শক্তিতে আমি ভাব ধরি? তিন বছর ধরে আমি বেকার, রোমানা নানা ভাবে আমাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে, তার সেই চেষ্টা সফল হয়নি। হতে পারেনি। কারণ আমি তাকে সেভাবে সহযোগিতা করিনি বা করতে পারিনি। তার ক্লায়েন্টদেরকে ধরে ধরে আমাকে এটা সেটা করার পথ বাতলে দিয়েছে। আমি সেইসব শেখানো পথে হাঁটিনি। স্বপনের চায়ের দোকানে বসে দুনিয়া উদ্ধার করেছি আমি। রাতের পর রাত আমি পড়ে থাকি পার্টি অফিসে। আমি মিছিল করি, মারামারি করি আর দুনিয়া ছাড়া ভেজাল নিজের কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরি। আমার জন্যে বাড়িতে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে না রোমানা। নিজের অক্ষমতার কথা আমি ছাড়া আর কে জানে অধিক? জানে না, কেউ জানে না। রোমানা তবু বলে সে অনেক বেশি জানে আমাকে। সে বোঝে আমাকে দিয়ে আর কিছুই করা সম্ভব না। তার জীবনটা বিষিয়ে দেয়ার পর নাকি আমার আর কিছু করারও থাকতে পারে না। এইখানে আমারও কিছু বলার থাকতে পারে। আমি হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারি, যে জীবনটা কি একা তারই বিষিয়েছে নাকি আমিও এক বিষণ্ন জীবন পার করছি দীর্ঘ দিবস ও রজনী ধরে। আমাদের মাঝে যে দেয়াল, যে বিচ্ছিন্নতা তা একা আমি তৈরি করিনি... না সেসব কিছুই বলা হয় না। যেহেতু নিজেকে অক্ষম মেনেছি আমি, তাই সব দায় ও দেনা আমাকেই মাথা পেতে নিতে হয়। এটাই নিয়ম। আমি নিয়ম মেনে রোমানার কথা শুনে যাই।

এই সকালটা অন্যরকম। একেবারেই অন্যরকম। আজ আকাশে মেঘ জমেছে অনেক। আমার মনে হয় আকাশের আজ মন খারাপ। এটা একটা বেহুদা ভাবনা। আকাশের মন খারাপ হওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? আমার সংসার ভেঙে গেলে আকাশের কী ঠেকা পড়েছে মন খারাপ করার? তবু আমার সেটাই মনে হয়। এই মনে করার মাঝে আমার একটা আরামবোধ আছে। রোমানা এটাকেই মনে হয় 'ভাব' বলে। কিন্তু এসব ভাবলে চলবে না। আজ আমার অনেক কাজ। আজ রোমানার সাথে বেরুতে হবে আমাকে। তাকে নিয়ে যেতে হবে মায়াবীর স্কুলে। সেখান থেকে টি.সি নিতে হবে। মায়াবী আর এ স্কুলে পড়বে না। সে তার মায়ের সাথে ঢাকায় চলে যাবে। আমি এটা মেনে নিয়েছি। না নিয়ে উপায় নেই। রোমানা বলেছে, মায়াবীর জীবন নষ্ট করার অধিকার আমার নেই। তাকে মানুষ করতে হলে রোমানাকেই করতে হবে। আমাদের পৃথকবাসের কথাও আমি মেনে নিয়েছি। এভাবে পাশাপাশি থেকে দারুণ মর্মযাতনায় বেঁচে থাকা যায় না। তারচে বরং দূরে থাকাই ভালো। আমার হেলাল হাফিজকে মনে পড়ে। প্রেম নাকি বিরহে উজ্জ্বল হয়। আমাদের দায়িত্বশীল সম্পর্কের মাঝে যদিওবা প্রেম ছিলো না তেমন, তবু এই লাইনটাই আমার মনে আসে রাতে। রোমানা খুব অবাক হয়, এভাবে আমি এক বাক্যে সব মেনে নিলাম বলে। সে হয়তো প্রতিরোধ আশা করেছিলো, তাই প্রথমেই বলে বসে, মায়াবীর জন্যে দরকার হলে সে আদালতে যাবে। আর সেখানে গিয়ে আমি হারবোই। কারণ, তিন বছরতক বেকার থাকা বাবার চেয়ে চাকরিজীবী মা অনেক বেশি নিরাপদ সন্তানের জন্যে। আমাকে সেসব না বললেও চলতো। আমি সেটা জানি। তাই কথা বাড়াইনি। মেনে নিয়েছি। সমস্যা ছিলো একটাই। মা। মাকে কীভাবে বিষয়টা জানানো যাবে সেটা নিয়ে আমি ভাবতে থাকি। রোমানাই আমাকে উদ্ধার করে। বলে, আগেই সে মাকে বলে রেখেছে, যে একটা ট্রেনিং এর জন্যে তাকে মাস তিনেকের জন্যে ঢাকা যেতে হবে। মায়াবীকে সাথে নিয়ে যাবে সে। মা সেটা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছেন। কাল বিকেলে তাই ট্রেনিং এর কথা বলাতে তিনি নতুন কোনো প্রশ্ন করেন নি। শুধু জিজ্ঞেস করেছেন, ঢাকায় গিয়ে রোমানা থাকবে কোথায়? মায়াবীর স্কুলেরই বা কি হবে। মুখস্থ বাক্যের মতো বুলি আউড়েছে রোমানা। বোনের বাসায় উঠবে। মায়াবীর স্কুলেও ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এই বয়েসের বাচ্চাদের স্কুল ঢাকায় অনেক। সেটা নিয়ে বেশি না ভাবলেও চলে। আমার জন্যে তাই কোনো কষ্টই বাকি রাখেনি রোমানা।

মায়াবী রাস্তায় আমাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে। কেনো সে ঢাকা যাবে, কেনো দাদু তার সাথে যাবে না। কেনো বাবা এবার তাকে নিয়ে যাচ্ছে না... এমন হাজারো প্রশ্ন। আমি একটার পর একটা প্রশ্নের উত্তর দেই, হাঁপিয়ে উঠি সেসব উত্তর দিতে দিতে, তবু মায়াবীর প্রশ্ন শেষ হয় না। মায়াবী প্রশ্ন করে, এবার গেলে সে কবে ফিরে আসবে? স্কুল থেকে একেবারে নিয়ে এলাম কেনো। আমি এই প্রশ্ন দুটোর উত্তর দিতে পারি না। মেঘ জমা আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি শুধু বৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা করি।


Comments

রেনেট's picture

অদ্ভুত সুন্দর।

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ রেনেট।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

লুৎফুল আরেফীন's picture

আবারও গুলি করলেন!!!
হাতটা কেটে নিতে ইচ্ছে হয় রে অপু!!

স্তব্ধ হয়ে রইলাম খানিকক্ষণ! এত সুন্দর বুননের লেখা খুব একটা পড়া হয় না তো, তাই!

অভিনন্দন!

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ আরেফীন ভাই।

একবার দেখা হোক। দেখা যাবে কে কার হাত কাটে।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

পেন্সিলে আঁকা পরী's picture

কিভাবে লিখলেন এত সুন্দর গল্প!

-------------------------------------------------------
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নীরবে ফিরে চাওয়া, অভিমানী ভেজা চোখ।

-------------------------------------------------------
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নীরবে ফিরে চাওয়া, অভিমানী ভেজা চোখ।

নজমুল আলবাব's picture

কঠিন প্রশ্ন।
পড়লেন বলে ধন্যবাদ।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মামুন হক's picture

অদ্ভুত মায়াভরা গল্প!

নজমুল আলবাব's picture

আপনি আমার লেখাও পড়েন অনেক মায়া নিয়ে, এটা আমি বুঝি।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

নজমুল আলবাব's picture

কি? হুম টা কি জান্তা দাদা?

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মুস্তাফিজ's picture

লেখাটা টানে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত।

...........................
Every Picture Tells a Story

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ বুড়াভাই।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি]'s picture

অনেকবার পড়া ঘটনার নজমুলীয় ভার্সনটাও বেশ লাগলো চোখ টিপি

নজমুল আলবাব's picture

হ, বহুল পরিচিত গল্প।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

রেশনুভা's picture

এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। ভালো লাগল ভীষণ। কষ্টও লাগল অনেক মায়াবীর জন্য, মায়াবীর বাবার জন্য।
অপ্রাসঙ্গিক প্যাঁচালঃ
মেয়েদের মাঝে এই রোমানা চরিত্রটা খুব দেখা যায় ইদানীং। এটাতো গল্পই। বাস্তবে এমনও দেখেছি যে, স্বামী বেচারার সবকিছুই (শিক্ষা, চাকরি, মানিব্যাগ, দায়িত্বশীলতা, চরিত্র) গড়পড়তার চেয়ে ভালো থাকলেও এমনটা ঘটতে। এর কারণ কি? মেয়েদের স্বনির্ভরতা নাকি অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্খা নাকি তাঁর প্রতি স্বামীর মনোযোগের অভাব যেই মনোযোগ খেলা করে পরিচিত অন্য এক ছেলের চোখে?
[একান্ত নিজস্ব কিছু চিন্তা। কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য নয়। আসলে গল্পটা পড়ে একটু বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে যাওয়ার কুফল এই প্যাঁচালটা]

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ।

অফ টপিকে যেটা বল্লেন, সেটা ঢালাওভাবে নয় আশা করি। শুধু কি রোমানারাই কাজটা করে? না রোমানারা বরঙ অনেক বেশি সহে যায়। অনেক বেশি...

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

উজানগাঁ's picture

লেখাটা শুরু করে বারবার মনে হচ্ছিল রোমানা কিংবা বেকার ব্যর্থ পিতাটাকে আমি হয়তো জানি যেভাবে জানি চায়ের দোকানদার স্বপনকে।

আপনার গল্প পড়তে গিয়ে নাটকপাড়ার সেই স্বপনকে আবার মনে পড়ল। শেষ যখন স্বপনের সাথে দেখা হয় জাফলং ছবি তুলতে গিয়ে তখন সে ক্যান্সারক্রান্ত। সেই অসুস্থ অবস্থায় সে নারিকলগাছ থেকে ডাব নামিয়ে আমাদের খাইয়েছিল। বড় বেশী আন্তরিক ছিল ছেলেটি।

নাটক পাড়ার সেই দোকানটি হারানোর পর সম্বল বলতে তার কোনো কিছুই ছিল না। শেষ পর্যন্ত টাকার অভাবে বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায় সে মারা গিয়েছিল।

এই যে চেতনে/অবচেতনে স্বপনের গল্পের চরিত্র হিসেবে ঢুকে যাওয়া, এভাবেই দিনের পর দিন আপনার/আমার গল্পের ভেতর স্বপন ঢুকে যেতে থাকবে। তাকে ঠেকানোর সাধ্য আমাদের কারো নেই!

উত্তমপুরুষে লেখা গল্পগুলো বড়বেশি আত্মজৈবনিক! একেবারে ভেতর থেকে টেনে নিয়ে আসতে চায় সবকিছু। ঘটনাগুলোকে নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।

আপনার বর্ণনাভঙ্গি সাবলীল। কোনপ্রকার হোচট না খেয়েই পড়ে শেষ করলাম।

নজমুল আলবাব's picture

বাকি সব কথা এখন থাক। আমি বরং স্বপনের কথাই বলি।

আমাদের মাঝে এই বুঝি একটা সেতু, স্বপন। আমরা কোন না কোন ভাবে এই লোকটার সাথে পরিচিত।

আপনারাতো আসলে অতিথিই ছিলেন সেই নাটকের ঘরে। (রাগ করবেন না) আর আমরা ছিলাম সেখানকার বাসিন্দা। একবার ভেবে দেখুন স্বপন কতটা ছিলো আমাদের কাছে। এই সচলেই স্বপনকে নিয়ে দুটি লেখা আছে কমপক্ষে। আর টুকরো টাকরা স্বপনতো আছে আরো অনেক...

স্বপন মারা গেলো যেদিন, সেদিন আমি ছিলাম লাউড়ের গড়ে। পনাতির্থতে। ফিরছিলাম, ধু ধু হাওরের মাঝখানে। খবরটা যখন ভেসে গেলো মোবাইলে... এখনও আমি রোজ রোজ স্বপনকে দেখি, রোজ...

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

উজানগাঁ's picture

স্বপনকে নিয়ে লেখা দুটো পড়া হয়নি। লিঙ্ক দিলে উপকৃত হব।

নজমুল আলবাব's picture

একটা লিখছিলো আরিফ ভাই। সেইটা দেখে আমি এইটা লেখছিলাম।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

তীরন্দাজ's picture

রেশনুভার মন্তব্যের আলোকে..

এই গল্পে মেয়েদের স্বনির্ভরতার কথাই বলা হয়েছে বলে মনে হয়। অনেক সময় একটি সংসারের জন্যে কষ্টদায়ক হলেও এই স্বনির্ভরতার দরকারও আছে আমাদের সমাজে। পুরূষের নিপীড়ণ থেকে মুক্তি পাবার এটাই একমাত্র পথ। আর আমাদের সমাজে এধরণের পুরূষের সঙখ্যা একাবারেই কম নয়।

গল্পের আমি চরিত্রের জন্যে কষ্ট হয় খুব। তারপরও মনে হয় , এটাই তার প্রাপ্য।
বাকী দু'জনের জন্যেও কষ্ট পাই। কিন্তু জীবন তো সমসময় একই গতিতে বহমান নদী নয়! এই কষ্টটুকুও জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।

গল্পকার হিসেবে আপনি পুরোপুরি স্বার্থক নাজমুল আলবাব!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ তীরুদা। রেশনুভাকে এই কথাটা আমিও বলতে চাইছিলাম। কিন্তু পারিনি।

আমার যে প্রশংসা করলেন, সেটাতো শুধুই স্নেহমাখা মনে হলো। ভালো থাকবেন।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

তানবীরা's picture

তীরুদা আর অপু ভাই দুজনকেই ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। মেয়েদেরকে ফ্রেমে বন্দী না করে দেয়ার জন্যে।

অপু ভাই গল্প বরাবরের মতোই দুর্দান্ত।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ তানবীরা আপা।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি লেখক's picture

সহজ, সুন্দর, সাবলীল লেখা।

পড়ার সময় চিন্তা করছিলাম যে দূঃখিত বলতে হবে শেষে ।(হা হা হা)

(অপ্রাসংগিক ব্যাপারঃ ইমো দিতে পারছি না কেনো?)

(মরকূটে ঘোড়া)

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ অতিথি। (আপনি মরকূটে??!!)

পড়ার সময় চিন্তা করছিলাম যে দূঃখিত বলতে হবে শেষে ।(হা হা হা) এই কথাটা বুঝিনি।

হাসি এইতো দেয়া যাচ্ছে ইমো।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মরকূটে ঘোড়া's picture

হু।
ওইটাও একধরনের প্রশংসা।
মনে করেছিলাম নিজের কাহিনী ই না আবার লিখে দিয়েছেন!

নিবিড়'s picture

বাউল ভাই কেন জানি আপনার উত্তম পুরুষে গল্প বলার স্টাইলটা দারুণ লাগে হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ।

আমি কিন্তু ভাই আর কোনো পুরুষেই লিখতে পারি না। আর স্যাররা কিন্তু বলেন, এইভাবে লেখা দুর্বলেই লিখে।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সুহান রিজওয়ান's picture

মন খারাপের গল্প আমার ভালো লাগে না। আর আপনি তো বেশি মন খারাপ করায়া দিলেন, কাজেই এই নিয়া আর অধিক কী বলবো ??
... গল্পের বুনট খুবই ভালো লেগেছে। কিন্তু হতাশার গল্প নয়, আশার গল্প চাই ভালো লিখিয়েদের কাছ হতে...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

নজমুল আলবাব's picture

রণদা কিছু একটা বলছেন, তার কথা পুরাটা না হলেও অনেকটাই মনে হয় ঠিক।

আর আমার কথা কি বলবোরে ভাই, মনোটোনাস জীবনের মালিক, মনখারাপে ঘর বাড়ি বেঁধেছি, তাই এই নিয়েই লিখি।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

শান্ত [অতিথি]'s picture

অপু ভাই শুধু মন খারাপ করা গল্প লেখে।

ভালো লেগেছে গল্পটা।

নজমুল আলবাব's picture

এইভাবে বলাটা কি ঠিক শান্ত? আমি ছাড়া কবে কোন মজার আড্ডাট দিয়েছিস বুঝতে শেখার পর থেকে, একবার সেটা হিসাব করতো।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

রণদীপম বসু's picture

ঈর্ষণীয় রকমের ঝরঝরে ও সাবলীল !

আসলে সুখী সুখী ভাব দিয়ে কোন সার্থক গল্প হয় না। কবিতার ক্ষেত্রেও তাই। একান্তই আমার বিশ্বাস।
আমাদের কষ্টবোধগুলোই একেকটা গল্প, জীবনের গল্প।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ রণদা।

আনন্দও কিন্তু জীবনেরই গল্প রণদা। সবাই সেটা অনুবাদ করতে পারে না। এটা যে পারে না তার ব্যর্থতা। সেই হিসাব মেনে আমি ব্যর্থদের কাতারে পড়ি।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অনিন্দিতা's picture

গল্পটা অসাধারন লাগল নজমুল আলবাব।
একেবারে টান টান।
এক নিৎশ্বাসে পড়ে গেলাম!
বেশী করে লিখুন।

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ অনিন্দিতা।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি লেখক's picture

অক্ষমতা মানুষকে নির্বাক করে দেয় এটা সত্য। তাই বলে এইভাবে নীরব পরাজয়? ধারুন লিখেছেন। পড়তে পড়তে বিমুগ্ধ হয়ে গিয়েচিলাম। ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য।

দলছুট।
================
বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

নজমুল আলবাব's picture

মানুষতো একটা কঠিন জিনিসরে ভাই। সে কখন নিরব হয়, আর সরব হয় কখন সেটা কি সবাই বুঝে? বুঝে না।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি লেখক's picture

বাঙ্গালী মধ্যবিত্তের জীবন নিয়ে কোন লেখা গল্প সাধারণত পড়িনা বা পুরানোদিনের বাংলা ছবি দেখিনা। কারণ একটাই, পড়ার পরে অনেক সময় নষ্ট করে মধ্যবিত্তের জীবন নিয়ে ভাবতে হয়। এই গল্পটা পড়তে গিয়ে প্রথমে ভেবিছিলাম এটা গল্পকারের জীবন থেকে নেয়া। পড়তে পড়তে যতই ভিতরে যাচ্ছিলাম গল্পটা ততই জীবন্ত হচ্ছিল । এটা তো আমার খুব চেনা একটি সংসারের কাহিনী, হ্যাঁ আমার নিজের কাহিনী। বিশ্বাস করুন একবিন্দুও মিথ্যা বলিনি। পার্থক্য শুধু তাদের সংসারে ৫ বছরের মেয়ে আর আমাদের ৫ বছরের ছেলে, বেকার নই তবুও সে আমাকে শেষ শর্ত দিয়েছে বাসা ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হবে অন্য কোথাও। আমিও নিঃশব্দে তার শর্ত মেনে নিয়েছি। অন্তত একজন ভালো থাকুক। অভিনয় করার চেয়ে বাস্তবতা মেনে নেয়াই উত্তম। ছেলেকে খুব ভালবাসি তাই এখনও পড়ে আছি এখানে। ঈদের পরেই হয়ত শুরু হবে আমার নিরুদ্দেশ যাত্রা। তারপরেও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি -জীবনের গল্প এত ছোট নয়।

ওয়াজেদ আলি

দুষ্ট বালিকা's picture

অন্তত গল্পগুলোতে সবাই কেন ভালো থাকেনা? মন খারাপ হলো! খুব সুন্দর লিখেছেন।

-----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নজমুল আলবাব's picture

গল্পগুলোতে সবাই কেনো ভালো থাকে না, এটাতো আমারও প্রশ্ন? লেখককে ধরে পিটানো যেতে পারে, যে কেন সে একটা সুখি সুখি গল্প লিখে না। অন্তত একটা দুষ্টু দুষ্টু গল্প লেখানো যেতে পারে পিটানি দিয়ে। হাসি

@ওয়াজেদ: আপনার সন্তানের জন্যে খারাপ লাগছে ভাই। ভালো থাকবেন। অতিথির দারুণ চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে মন্তব্য করার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

বালক's picture

অনেক ভালো লাগলো।

_____________________________________________
"যে কথায় কবিতা জন্মাতো সে-কথার শিরায় শিরায় বিষ, এক-একটা কথার ছোবলে কবিতার খাতা পুড়িয়ে দিস..."

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

নজমুল আলবাব's picture
দময়ন্তী's picture

খুবই চেনা পরিচিত গল্প৷ আমিই এরকম দুটো ঘটনা দেখেছি আমার চেনাজানার মধ্যে৷ কিন্তু গল্পটা আগাগোড়া কেমন একটা বিষন্নতা আর মায়ামাখানো ---- একটা ছায়া ছায়া মন নিয়ে শেষ করলাম৷ গল্পটার যে জিনিষটা আমার ভীষণ ভাল লাগল, সেটা হল কোন চরিত্রই সেভাবে অথর-ব্যাক্ড্ নয়৷ লেখক অদ্ভুত নির্মোহভাবে "আমি" ও "রোমানা'কে এঁকে গেছেন৷ এই ধরণের গল্পে সাধারণত ছেলেটিকে "পরাজিত কিন্তু মহান' দেখানোর একটা চেষ্টা থাকে৷ এখানে সেই চেষ্টাটা না থাকার জন্যই অসম্ভব ভাল লাগল৷ রোমানা'র দ্বিধা অস্বস্তি খুব সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে৷
চলুক চলুক চলুক
-----------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ দময়ন্তী। আপনার প্রশ্রয়মাখা মন্তব্য অনেকদিন মনে থাকবে আমার।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

কাজী আফসিন শিরাজী's picture

চমৎকার!!

নজমুল আলবাব's picture
জি.এম.তানিম's picture

বড্ডো জীবন্ত সব কটা চরিত্র। সবাইকে খুব আপন মনে হলো। বাস্তবের মতোই কাউকে দোষ দিতে পারলাম না, কিন্তু তাদের দুঃখটা অনুভব করতে পারলাম অনেকটাই। ধন্যবাদ!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

নজমুল আলবাব's picture

এইসব মানুষের দুঃখ অনুভব করা যায়। কিন্তু বলা যায় না কিছুই।

ধন্যবাদ আপনাকে তানিম।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

s-s's picture

অতি পুরাতন ভাব নব আবিষ্কার, বলেছিলেন রবিঠাকুর --

নজমুল আলবাব's picture

আবিস্কারটা কেমন হলো সেটা কিন্তু বলেন নাই s- s

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

প্রবাসিনী's picture

এতো সুন্দর!
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

নজমুল আলবাব's picture
অতন্দ্র প্রহরী's picture

অসাধারণ একটা গল্প, অপু ভাই। অনেক আগেই পড়েছি, বলা হয়নি। জানিয়ে গেলাম।

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ বিডিয়ার ভাই।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সৌরভ's picture

অনেকদিন আগে পড়ছিলাম। আজকে একটা পাঁচতারা দিয়ে গেলাম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব's picture

হ, ঘটনাতো আমি জানি। হাসি

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

স্নিগ্ধা's picture

নজমুল আলবাব (সৌরভকে ধন্যবাদ, তার মন্তব্যের কারণেই মনে পড়লো আবার) মন্তব্য করছি/করবো করে করে শেষ পর্যন্ত আর হয়নি, আর তাই বলাও হয় নি - কি ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলাম গল্পটা পড়ে!!

যান, আপনাকে আর মন-খারাপ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া নিয়ে কিছু বলবো না। লেখেন আপনি মন খারাপ করা যত্ত লেখা, তাইই লিখতে থাকেন।

কী আর করা - মন খারাপ-করা লেখা পড়তেই যদি এতো ভালো লাগে? হাসি

[আশা রাখি, এত্ত প্রশংসার পর দেশে গেলে সিলেটের বিখ্যাত 'গুড়া গুড়া' না 'গুলগুলা' না কী জানি কী একটা মিষ্টি খাওয়ার সৌভাগ্য হবেো দেঁতো হাসি ]

নজমুল আলবাব's picture

স্নিগ্ধা আপা গুলগুলা মিস্টিতো সিলেটের মাল না। এইটা খুঁজে খুঁজে বের করে খাইতে হয়। আমি নিজেই এইটার জন্যে লালায়িত থাকি। কিন্তু পাওয়া যায় না সবসময়। মেলা টেলায় গেলে দেখা মিলে।

তবু সিলেটে আসেন একবার। গুলগুলা না হোক অন্যকোন মিস্টিতো মিলবেই।

আপনাদের করা কমেন্টগুলো এমনভাবে ছুঁয়ে যায়... ভালো থাকবেন।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আহির ভৈরব's picture

বাইসাব ঈ কিতা কইলা? সিলোটোর মিষ্টি কুনো খাইবার লাগি নি? ঈ তো মুসা বান্দি এক গর তাকি আরোক গরো লইয়া যাইবার দায়!

সিরিয়াস কথা আবার সিলেটি ভাষায় বলতে পারি না, তাই 'বাংলা'য় বলি, লেখা ভীষণ ভালো লাগলো।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

নজমুল আলবাব's picture

ইয়া মাবুদ, ই কিতা আরম্ব খরছেবে? হখল গোফন খতাবার্তা আউট খরি দের!!! এই ফুড়ি বেশি মাত না। মুখ বন রাখিছ... (পোয়েটিক তুই তুকারি, ক্ষমাযোগ্য)

পুরনো লেখা কেউ খুজে খুজে পড়লে কি ভিষন আনন্দ হয়... অনেক ধন্যবাদ।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আহির ভৈরব's picture

জী আইচ্চা, বাইসাব, মুক বন্দ্‌। খালি এখ্‌টুতা দাঁত দেখাইয়া যাই দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

সচল জাহিদ's picture

অসাধারণ। লেখাটি আগে কেন চোখে পড়েনি সেটা বুঝতে পারছিনা।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নজমুল আলবাব's picture

পড়ার জন্যে ধন্যবাদ জাহিদ ভাই।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

যুধিষ্ঠির's picture

বুকমার্ক করে রেখেছিলাম, পরে পড়বো বলে। আর পড়াই হয়নি। আজকে পড়লাম। চমৎকার একটা গল্প। খুব ভালো লেগেছে। আপনি আজকাল আর লেখেন না কেনো?

নজমুল আলবাব's picture

ধন্যবাদ দাদা। আমি বেশি লিখতে পারি না।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.