জেনে নিতে হবে, মনে তাঁর কোন দাগ রয়ে গেছে কিনা আজো----

অনিকেত's picture
Submitted by Aah on Thu, 16/07/2009 - 2:40pm
Categories:

অনুপ জলোটাঅনুপ জলোটা

আশির দশক।
আমি তখন ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি।
সে সময়টাতে বাজারে 'গজল' নামের একটা জিনিস খুব চলছে। রাস্তা-ঘাটে বেরুলেই বিজাতীয় ভাষায় কিছু গান কানের উপর আছড়ে পড়ে।সবচাইতে অদ্ভূত ব্যাপার হল---ঐ সব গানের ফাঁকে ফাঁকে বিস্তর লোকজনের 'ক্যা হুয়া' 'হুক্কা হুয়া" 'ক্যাবাৎ ক্যাবাৎ' ইত্যাকার চেঁচামেচি শোনা যায়। আমি কিছুতেই ঠাহর করে উঠতে পারিনা---গানের মাঝখানে লোকজন চেঁচাচ্ছে কেন?? তাদের কী গান ভাল লাগছে না?? নাকি খুবই ভাল লাগছে??!! সেই সময় বিটিভি নানান কমেডি শো সম্প্রচার করত (যুক্তরাষ্ট্রে এসে জেনেছি---এদের 'সিট-কম' বলে!)। সেইসব কমেডি শো-তে এইরকম কিছু চিল্লা-ফাল্লা শোনা যায়। কিন্তু সেগুলো শুধুই হাসির শব্দ। প্রথমে অবশ্য সেইটাও খুব অবাক লাগত---লোকেদের হাসির আওয়াজ দিচ্ছে কেন? আমার 'উন্নত মস্তিষ্ক' অবশ্য খুব দ্রুত এর একটা কারণ খুঁজে বের করে ফেলল----যেহেতু আমরা ইংরেজি বুঝিনা, তাই ঐ লোকগুলো 'সময় মত' হেসে আমাদের বলে দিচ্ছে কোনটা 'কমেডি সিন' আর কোনটা নয়!!

গানের কথাগুলো প্রায় কিছুই বুঝতে পারিনা।কিছু কিছু শব্দ অবশ্য ঘুরে ফিরে শোনা যায়------'দিল', 'জিন্দেগী','মহব্বত' আর সেইসাথে লোকজনের উন্মত্ত কন্ঠে 'ওয়াহ-ওয়াহ' তো আছেই।আরো একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। এই গান শোনার আবার একটা ইস্পেশাল 'তরিকা' আছে।মাথা ঝুকিয়ে ঝুকিয়ে ডান হাত তুলে খানিকটা ভিক্ষা চাইবার মত ভঙ্গি করতে হয়। এরই ফাঁকে ফাঁকে দু'একবার করে 'ওয়াহ-ওয়াহ' করতে হয়। তখন আবার ভারতীয় চ্যানেল দেখার ধুম পড়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আসছে বদনা-সহ এন্টেনার---এইটাতে নাকি ভারতীয় চ্যানেল একেবারে ঝকঝকে দেখা যায়। শোনা গেল, এন্টেনাতে যত বেশি বদনা-লোটা-কাসের থালা ইত্যাদি ঝুলানো যায়---এন্টেনার নাকি 'জোর' তত বৃদ্ধি পায়। উৎসাহের চোটে আমি আর বাবা দোকানে গিয়ে একটা এন্টেনা কিনেই ফেললাম।শেষ পর্যন্ত লজ্জা কাটাতে না পারায় বদনা ছাড়াই এন্টেনা কিনে বাড়ি ফেরা হল। আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। বদনা ছাড়া চ্যানেল কী আর আসবে? এন্টেনার কানেকশন দিয়ে বাবা দেখি ম্যাপ নিয়ে বসলেন। আমাদের সবচেয়ে কাছে ইন্ডিয়ার কোন শহর আছে সেইটা খুঁজে বের করতে হবে। তারপর সেদিকে এন্টেনা ঘুরিয়ে দিতে হবে। আমরা তখন থাকি সিলেটের সবচাইতে সুন্দর বাসাটাতে---এম সি কলেজের প্রিন্সিপালের বাংলো। একটা পাহাড়ের মাথায় অসাধারণ একটা বাংলো। পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে গেছে ঘোরানো প্যাচানো পাকদন্ডী। ছায়ায় ঘেরা, পাখি ডাকা নিঝুম এক প্রাসাদ। যেন স্বর্গ হতে খসে পড়া পারিজাত।আমার এখন মাঝে মাঝে অবাক লাগে যে আমি আমার কৈশোর আসলেই কী সেই স্বর্গচ্ছায়ায় কাটিয়েছি???

ফিরে যাই কাহিনীতে। এন্টেনা বাঁশের আগায় লাগিয়ে বাবার হিসেব করে বের করা 'সঠিক-দিকে' এন্টেনা ঘুরিয়ে দেয়া হল।এবং কী তাজ্জব!!!! টিভিতে প্রচুর ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ভেতর থেকে হঠাৎ করে উঁকি দিল একটা অচেনা চ্যানেল। বাবা বললেন এইটাই ইন্ডিয়ান চ্যানেল। বাসা শুদ্ধ সবাই মুখ হা করে সেই আধা-স্পষ্ট-আধা-ঝাপসা চ্যানেলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই বিশেষ ঘটনা উপলক্ষে আমার রাতের পড়া সেইদিন মওকুফ ঘোষনা করা হল। আমার মনে হল এই "অলৌকিক আনন্দের ভার" আমি বোধহয় সইতে পারবনা।

যাই হোক, সেইসব ইন্ডিয়ান চ্যানেল (ডিডি-১,ডিডি-২) তখন প্রায়ই গজলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করত। সেইসব অনুষ্ঠান দেখে দেখে আমি গজল শোনার 'কেতা' রপ্ত করে ফেললাম। ভাষা যেহেতু বুঝিনা সেইজন্যে গানের কথার দিকে আমার খেয়াল নেই। আমার মূল আকর্ষন ছিল---'তবলা'। সেই সময় আমার তুমুল প্রেম তবলার সাথে। দিন-রাত মাথায় শুধু একই স্বপ্ন---জাকির হুসেনের মত তবলা বাজাতে হবে। হাটতে-বসতে সকল সময় আমি কিছু না কিছু বাজাচ্ছি। বাসায় পড়ার টেবিল, খাবার টেবিল, স্যারের বাসার টেবিল, ইস্কুলের বেঞ্চ,নেহাৎ কোন কিছু না পেলে বন্ধু'র মাথা----- মোটামুটিভাবে যে কোন কিছু যদি আঘাতে-প্রত্যাঘাতে কোন রকম শ্রবন যোগ্য ধ্বনি তৈরি করতে পারত---সেইটাই হয়ে দাঁড়াত আমার কাছে ভার্চুয়াল তবলা। গজল শোনার পেছনে মূল নেশাটা তখন তবলা শোনা। আমি খেয়াল করে দেখলাম--অন্যান্য গানের তুলনায়--গজলে তবলচিরা অনেক রকমের 'কারিকুরি' করেন। গজলে অস্থায়ী থেকে অন্তরা বা সঞ্চারী-তে যাবার পথে যে ইন্টারল্যুড থাকত---সেইখানে আমি অবাক হয়ে শুনতাম তবলিয়াদের হাতের কাজ। সামান্য বিশ বা ত্রিশ সেকেন্ডের গ্যাপে একজন লোক যেন একেকটা জল-প্রপাত নামিয়ে দিত। কী সব ছন্দের কারুকাজ---কী সব 'তেহাই'---শুনে আমার "চোখে পানি চলে আসত" (থ্যাঙ্কু রানা---এই দূর্দান্ত এক্সপেশানটার জন্যে)।

বাসায় তখন তারকালোক রাখা হত। সিনে জগতের সব হাল-ফিলের খবর পেতাম সেখান থেকেই। সেই তারকালোকেই তখন একটা রিপোর্ট বেরুলো সমসাময়িক গজল গায়কদের নিয়ে। সেইখানে উল্লেখ করা হয়েছিল যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন --অনুপ জলোটা। আমার বেশ কৌতুহল জাগল---এর গান শোনা দরকার। কেন সে জনপ্রিয়তার শীর্ষে? তারচেয়ে অদ্ভূত ঘটনা হল, এই লোকের নাম কিন্তু তখনো কারোর শোনাই হয়নি। গজল বলতে তখন মূলত পঙ্কজ উধাস। মাঝে মধ্যে ফাঁক-ফোকরে গুলাম আলী বা মেহেদি হাসানের নাম শোনা যায়। কিন্তু পঙ্কজের জনপ্রিয়তার কাছে সেগুলো যেন ঝড়ের মুখে কুটোর মত। এহেন পঙ্কজকে 'লেঙ্গি' মেরে কেমনে শীর্ষস্থান নিয়ে নিল??

কিছুদিন পর বাবা ঢাকা যাচ্ছেন কী একটা কাজে। আমি আবদার জুড়লাম অনুপ জলোটার ক্যাসেট আনার জন্যে। বাবা গজলের ব্যাপারে---বিশেষ করে হিন্দী-উর্দূর ব্যাপারে বেশ উন্নাসিক। যাই হোক অনেক ঝুলাঝুলি করে রাজী করানো গেল। তিন-চার দিন পর বাবা ফিরলেন। আমিও ফিরলাম স্কুল থেকে। আগেই বলেছি----আমাদের বাসাটা ছিল পাহাড়ের চূড়ায়। কাজেই ইস্কুল শেষে বাড়ি ফিরে পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে বেশ হয়রান লাগত। আমি উপরে উঠতে উঠতেই শুনলাম বাসায় একটা গান বাজছে----'যারা ডাকে তারা ভুলে যায়"
বাহ, এই গান তো আগে শুনিনি! আমার ঘুণাক্ষরেও মনে হয়নি এইটা অনুপ জলোটার গাওয়া গান। কারণ আমার ধারণা ছিল বাবা অনুপের গজল আনবেন।অনুপ যে বাংলা গান গেয়েছেন সে তো আমার জানার কথা নয়। সেইসাথে এইটেও জানার কথা নয় যে বাবা এলিফ্যান্ট রোডের গীতালী-তে গিয়ে যখন অনুপের ক্যাসেট চেয়েছেন তখন তারা তাকে নানান গজলের এলবামের সাথে ঐ বাংলা গানের এলবামও দেখিয়েছিল। আমার গজল-বিদ্বেষী বাবা অম্লান বদনে বাংলা এলবাম খানা নিয়ে এসেছেন।

সেই থেকে শুরু হল!

বাসায় বোন হল গানের ক্ষেত্রে মহাজ্ঞানী-মহাজন। সে খুব ভাল রবীন্দ্র সঙ্গীত গায়। এলাকায় খানিকটা নাম-ডাকও আছে। যেকোন গানের/গায়কের ব্যাপারে তার কথাই শেষ-কথা!! আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম---কী রে, কেমন লাগে এঁর গান? আপা বেশ খানিকটা বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়িয়ে বলল, একে তো বেশ গায়ক-গায়ক বলেই মনে হচ্ছে, সাধা গলা বোঝাই যায়। পঙ্কজের মত এত 'ফিল্মি' স্টাইল এর নেই-----বেশ 'সিরিয়াস' গায়ক!!!

আপার কথার উপরে কোন কথাই নাই!! একে তো তারকালোক তাকে 'শীর্ষ' গায়ক বলেছে---তারচেয়ে বড় কথা, আপা একে সার্টিফিকেট দিয়েছে যেটা পংকজ বাবাজিও পাননি। আমি একেবারে ভক্তি সহকারে গান শোনা শুরু করলাম। গীতালীর সেই ক্যাসেট পরবর্ত্তী কালে কত হাজার বার যে বাজানো হয়েছে আমার বাসায় তার সীমা সংখ্যা নেই। সবাই ভেবেছিল, ওহ কিছুদিন পরে এই ঘোড়ারোগ আমার সেরে যাবে। কিন্তু দেখা গেল সারার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।কারণ ততদিনে আমি বাংলা গান থেকে তার হিন্দী-উর্দূ গজলে "প্রমোশন" পেয়েছি এবং আরো জানতে পেরেছি ইনি নাকি 'ভজন' বলে একটা জিনিস আছে---সেইটাও নাকি খুব ভাল গাইতে পারেন! কিন্তু সবচাইতে বড় কথা--অনুপের বেশ কিছু গজলের লাইভ রেকর্ডিং ক্যাসেটে পাওয়া যেত---'A live concert',"Farmaish","Tekhaiyul" ---প্রভৃতি এবং আমি বড় আনন্দের সাথে আবিষ্কার করলাম ঐসব লাইভ কন্সার্টে অনুপের নিজের বাজানো হারমোনিয়ামের সাথে পাল্লা দিয়ে ছোটে তবলা---প্রতিটা বার এক অন্তরা থেকে আরেক অন্তরায় যাবার পথে যেন একেকটা নতুন নতুন পথে তবলা বাজে---আমাকে এক মুহূর্তে সাগর-পাহাড়-নদী পেরিয়ে এনে আবার ক্যাসেট প্লেয়ারের সামনে ফেলে।

দিন কে দিন আমি অনুপের গানে বুঁদ হতে লাগলাম।ব্যাপারটা গুরুতর হয়ে উঠল যখন আমি গজল থেকে আস্তে আস্তে ভজনের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম। গজল পর্যন্ত হয়ত ঠিক ছিল। কিন্তু এখন অহোরাত্র বাসায় 'বলো রাম-রাম-রাম বলো শ্যাম-শ্যাম-শ্যাম" বাজছে।মা দুয়েকবার কটমটিয়ে তাকিয়েছেন---ব্যস ঐ পর্যন্তই। আমি থেমে নেই---অনুপও থেমে নেই। একের পর এক তুমুল সব এলবাম আসতে থাকল।'ভজন যাত্রা(Bhajan Yatra)', 'ভজন সন্ধ্যা', 'ভজন গঙ্গা'---আহা, কী সুখের সময়! ততদিনে একটু একটু হিন্দি বোঝা শুরু করেছি। তারচেয়ে বড় কথা একটু আধটু ভারতীয় মার্গীয় সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেছি। অনুপের একটা বিখ্যাত ভজন আছে ---'চাদারিয়া ঝিনি রে ঝিনি'। ভক্ত কবীরের লেখা এই ভজন রাগ দেশ-এ নিবদ্ধ। তো এই গানের একটা জায়গায় এসে ('ধ্রুব প্রহ্লাদ সুদামা নে ওঢ়হি----') একটা লাইন অনুপ প্রায় ছ'টা ভিন্ন রাগের আলোয় পরিবেশন করেন।রাগ কেদার, মালকোষ,কাফি,বসন্ত হয়ে
'সদা সোহাগিন রাগ ভৈরবী'।তারপর আবার ঘরে ফেরা--রাগ দেশ। একই লাইন---অনুপের গলায় একেক রাগের আলোয় মোহিনী রূপ ধারণ করে----সরগমের আতশ বাজী ওড়ে আকাশে---আমার ছোট্ট মাথা শ্রদ্ধা ভক্তিতে একদম নুয়ে আসে-----

আমার সেই সময়টাতে তেমন কোন বন্ধু-বান্ধব ছিল না। সেই সময়টায় আমি বড্ড অন্তর্মুখীন ছিলাম। 'হিরো'-হীন এই 'জিরো' আমার কাছে--অনুপ তখন একমাত্র হিরো। কিন্তু সেইটাতো লোকজনের কাছে বলা যায় না।কেন?

---হিরো যদি কেউ হতে হয় সে হবে মিঠুন দাদা! বলিঊড ভাল লাগে না? ঠিক আছে হলিঊডই সই। হিরোর মত হিরোর ছড়াছড়ি----র‌্যাম্বো-স্ট্যালোন বা কমান্ডো-শোয়ার্জেনেগার!! পেট-মোটা নিরীহ এক গায়ক কী করে হিরো হয়?

---কাছাকাছি মানুষদের মাঝেও হিরো হবার মত লোকের অভাব নেই। পাশের বাসার রাসেল---যে দারুণ অধ্যাবসায়ী মনোযোগী ছাত্র, যে কিছুদিন পর পর বৃত্তি-টিত্তি পেয়ে আমার জীবনটা ছারখার করে দিচ্ছিল---অথবা ইস্কুলের বড়ভাই একজন--যিনি মাধ্যমিকে সেকেন্ড স্ট্যান্ড করেছেন। এদের ছেড়ে শেষে কি না এক গায়ক ???!! লোকে শুনলে বলবে কী? সেইভয়ে কেবল খুব 'আপন কিছু জন' ছাড়া কাউকেই বলা হল না অনুপ-ভক্তির কথা।

এস এস সি দিয়েই আমি চলে যাই রাজশাহীতে। এইখানে এসে আমি বেশ জোরে-সোরে তবলা শেখা শুরু করি। অনুপের গান শুনতে শুনতে আমি ততদিনে সেসব গানের সাথে বাজানো শুরু করেছি। নতুন নতুন 'ঠেকা','তেহাই','চক্রধার','পড়ন'-----সবকিছু নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ অনুপ আমাকে দিচ্ছিলেন। সেইসাথে ঐসব গানের সাথে অক্লান্ত ভাবে বাজাতে বাজাতে তবলার ঠেকাগুলো একেবারে মুখস্থ--থুক্কু, হাতস্থ করে ফেলেছি। কাজেই আমার ওস্তাদজী'র এক ছাত্র যিনি অনুপের গজল গুলো অসাধারন গাইতেন----তার সাথে আমার প্রায়ই বাজাতে হত--নানা জনের সামনে---এবং কিঞ্চিৎ কুন্ঠার সাথে স্বীকার করতে হচ্ছে, লোকজনের বেশ প্রশংসাও পাচ্ছিলাম।

এমনি এক সময় মা আর বোন কে নিয়ে রাজশাহীর সাহেব বাজারে (খুব সম্ভবত) একটা কাপড়ের দোকানে গেছি। দোকানের নাম খুব সম্ভবত 'দোয়েল'।
মা আর বোন গিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কাপড় নিয়ে। আমার করার কিছুই নেই। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখি দোকানের কাউন্টারের ওপর একটা সিনে পত্রিকা। দোকানীর কাছ থেকে সেটা চেয়ে নিয়ে একটা চেয়ারে বেশ আয়েস করে বসে পাতা ওলটাচ্ছি।হঠাৎ দেখি অনুপ কে নিয়ে একটা আর্টিকেল। আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে পড়া শুরু করলাম।

কিন্তু যা পড়ছিলাম---সেইটা আমার জন্যে মোটেও আনন্দদায়ক ছিল না। সেই আর্টিকেলে ছিল কীভাবে অনুপের সংসার সম্প্রতি ভেঙ্গেছে। অনুপের সাথে প্রায় বাঁধা এক তবলচি ছিলেন সেই সময়। নাম রুপ কুমার রাঠোড়। রুপ কুমার আসলেই খুব চমৎকার তবলা বাজাতেন। কেউ যদি অনুপ জলোটার 'Live in Fiji' এলবামটা শুনে থাকেন তবে নিশ্চয়ি জানেন রুপ কুমার কি রকম তুখোড় তবলিয়া! অথবা যারা পঙ্কজ উধাসের সেই বিখ্যাত 'চাঁদনী য্যায়সা রঙ্গ হ্যায় তেরা' (সেই বিশাল হাউ-কাউ সমৃদ্ধ গজল!!) শুনেছেন---ঐখানে যিনি তবলা বাজিয়েছিলেন---তিনি রুপ কুমার। যাই হোক। অনুপের স্ত্রী হচ্ছেন সোনালী জলোটা। অনুপের বাবা শ্রী পুরুষোত্তম দাস জলোটা ভজনের জগতে আরেকজন দিকপাল।এখনো তার ভজন গুলো পুরোনো দিনের লোকেরা খুব প্রীতিমুগ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন। বাবার নির্দেশ অমান্য করে---অভিনেত্রী জিনাত আমানের বাড়িতে পালিয়ে গিয়ে অনুপ- সোনালী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল। জিনাতের স্বামী মাজহার খান ছিলেন অনুপের খুব কাছের বন্ধু। যাই হোক, এসব ক্ষেত্রে সাধারনত যা হয়---কিছুদিন পরে অনুপের পরিবার সব মেনে নেয়।কিন্তু বেচারা অনুপের কপালে স্বস্তি নেই। সোনালী জলোটা নিজেও খুব ভাল গায়িকা। সেই সময়টাতে গজলের সম্ভবনাময় মহিলা শিল্পীদের মাঝে ছিলেন--পিনাজ মাসানী আর সোনালী জলোটা। বস্তুতঃ সোনালীর গান শুনেই অনুপ প্রেমে পড়েছিলেন। গজলের জগতে তখন সিংহাসন দখলে রেখেছেন জনপ্রিয় জুটি জগজিত-চিত্রা।বাংলাদেশ থেকে নতুন আসা মিতালী তখন সবেমাত্র ভুপিন্দরের সাথে জুটি বেধেছেন। গজল প্রেমীরা সাগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন---অনুপ-সোনালী জলোটার জুটি কেমন করে সেটা দেখার জন্যে।

এমনি সময় সোনালীর ভোকাল কর্ডে কী একটা অসুখ দেখা দেয়। ডাক্তাররা বলে দেন যে সোনালীর সঙ্গীত-জীবন প্রায় শেষ। আর যাই হোক---গান গাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না।গান পাগল সোনালী ভীষন ভেঙ্গে পড়লেও অনুপ হাল ছাড়েন না। জমানো সব টাকা সাথে নিয়ে সোনালীকে আমেরিকায় নিয়ে আসেন।এখানেও ডাক্তাররা খুব একটা আশাবাদী নন। জলের মত পয়সা খরচ হচ্ছে।অনুপ চিকিৎসার ফাঁকে ফাঁকে অনুষ্ঠান করছেন---যাতে টাকা তুলতে পারেন চিকিৎসার। ঠিক এই সময়েই অনুপের তবলচি ছিলেন রুপ কুমার রাঠোড়। রুপ কুমার কেবল গুনী শিল্পী শুধু নন---তার নামের প্রতি সুবিচার করেই যথেষ্ট সুদর্শন পুরুষ।রুপ কুমার সোনালীকে 'ভাবিজি' বলে ডাকতেন, সসম্ভ্রমে 'পদধুলি' নিতেন। কিন্তু কোন এক সময় মদনদেবের বিষমাখা তূণে দুই জনেই বিদ্ধ হন। অনুপের অজান্তে দানা বেঁধে উঠতে থাকে তুমুল পরকীয়া প্রেম (তাসলিমা খুব সম্ভবত বলেছিলেন---'পরকীয়া' আর 'আপনকিয়া' আবার কী? ঠিকই তো-----ইয়ে তুমনে কেয়া কিয়া? এই প্রশ্নের উত্তর কখনো 'পরকিয়া' হয় না--- বরং শুনতে পাবেন----'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া')।

ঠিক এইরকম মূহুর্তে সোনালীর কন্ঠ ফিরে আসে।উদারা,মুদারা,তারা অবলীলায় ছুঁয়ে আসে তার কন্ঠ। আর এই আনন্দের ক্ষণে হঠাৎ একদিন অনুপ জানতে পারেন তার স্ত্রীর প্রেমের কথা।দেশে একা ফেরেন অনুপ।

কাহিনীটা ঠিক বোম্বাই ছবি মার্কা শোনাচ্ছে না? অবশ্যই।কিন্তু সেই সময়টাতে আমি এইসব বিচার করার মত অবস্থায় নেই। আমার চোখের সামনে ভাসছে আমার প্রিয় গায়কের পরাজিত মুখ! আমার তখনকার সেই বালখিল্য জগতে যে মানুষটা সূর্য হয়ে জ্বলছিলেন--হঠাৎ যেন সেটাতে গ্রহণ লাগল। হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম---আর সবার মত এরাও সাধারণ মানুষ---আর সবার মত প্রেম-দুঃখ-ঘৃণা-হতাশায় তারাও জ্বলে চলেছেন নিত্যদিন।যে অনুপের সাঙ্গীতিক প্রতিভায় আমি মুগ্ধ হয়ে এক দেবতার অধিষ্ঠানে বসিয়েছিলাম,কোন এক বিচিত্র কারণে মনে হয়েছিল----এই লোকটা বড় খাঁটি,সৎ,চরিত্রবান(যার কোনটাই ঠিক নয় বলে পরে জানতে পেরেছি)--তার জীবনে এমন দুঃখের আনাগোনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না---এ অসম্ভব! সবচেয়ে বড় কথা তার এই আপাত 'পরাজয়' তাকে দেবকোটির অবস্থান থেকে নামিয়ে এনে ফেলে এই ধুলি ধুসর পৃথিবীতে।আমি এখন নিজের কাছেই মুখ দেখাই কী করে---এমন একজন আমার হীরো---যার স্ত্রী ভেগে গেছে তার নিজের তবলিয়ার সাথে!!!! আর কি সর্বনাশ!!!----আমি নিজেও তো এক তবলিয়া !!!!!!!

আজ বহু বছর পর যখন এইসব পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে তখন মাঝে মাঝে নিজেকে বড্ড ছেলেমানুষ মনে হয়। ইচ্ছে করে অতীতে ফিরে গিয়ে এই বোকা আমি-টা কে খুব করে বকে দিয়ে আসি। ইচ্ছে করে এই বর্তমান থেকে অতীতের আমি কে একটা চিঠি লিখি----যাতে তাকে খুব করে শাসিয়ে দিই, রূঢ় গলায় জানিয়ে দিই---আসলে পৃথিবীটা কী রকম, পুতুপুতু ভাব আর সেন্টিমেন্টের কোন দাম নেই--কখনো ছিল না--কখনো থাকবে না...

আর সব বকাবকি শেষ হলে পরে---আস্তে করে আমার 'ছোট্ট আমি'-টা কে কাছে টেনে বলে দিতাম-----বড় হয়ে যখন তার নিজের জীবনে এই রকম কিছু ঘটবে--তখনো যেন সে ভেঙ্গে না পড়ে---তাকে মনটা শক্ত করে থাকাটা শিখতে হবে----

আমার অতীতে ফিরে যাওয়া হয়নি----
ছোট্ট আমি-টা কে বলাও হয় নি---
আমি তাই এখনো একটা অশক্ত দূর্বল মন নিয়ে ঘুরে বেড়াই
এখন আর অনুপের গান ভাল লাগে না
যত্রতত্র তার গানে স্বরচ্যুতি---বড্ড কানে লাগে---
কিন্তু এখনো কেন যে মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই ইউ-টিউবে খুঁজে বেড়াই তাকে----তার গান ভালো লাগে না---অথচ ঠিকই iTunes থেকে নামাই তার নতুন নতুন গান গুলো-----

কেন করি এসব?
কে জানে??
হয়ত এইটা আমার কোন এক অদ্ভূত উপায়ে তাঁকে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা-----বস, সবাই তোমাকে ছেড়ে গেলেও আমি যাই নি----
তুমি আর আগের মত নেই---তোমার গান এখন আমার কাছে কেবল বেসুরো ঠেকে---তোমার লোভী চরিত্রের কথা এখন আমি জানি---মানুষের কাছে ধর্মের বেসাতি করে অর্থগৃধ্নু হবার কথা জানি---

কিন্তু তোমার কাছে আমার এক বালকবেলার সমান ঋণ আছে----
কোন এক রাতে তোমার দুখের কথা ভেবে এক বোকা ছেলের
বোকার মত শপথ নেয়ার অনপনেয় স্মৃতিটুকু আছে---
আর এত বছর পরেও সেই শপথ টেনে নিয়ে বেড়ানোর মত কিছু নাবালকত্ব মনের কোথাও পড়ে আছে----

কী হাস্যকর আমার এই 'বিশ্বস্ততা'---
হোক,
অন্তত নিজেকে বলতে পারব আমি আমার প্রতিজ্ঞাটুকু ভঙ্গ করিনি---

বস, তোমার 'স্বর্ণযুগের' একটা গান দিয়ে এই দীর্ঘ বিরক্তিকর লেখটার ইতি টানছি----

"জেনে নিতে হবে, মনে তাঁর কোন দাগ
রয়ে গেছে কি না আজো
চোখের জলসা ঘরে
খুশির বাসর তার রোজ রাতে বসে কি আজো--

চোখে তার স্বপ্নের হাট বসে কি না বসে
গোধুলীর বুক চিরে
পথ চাওয়া চোখ তার জলে ভরে আসে কিনা আজো
------
ভালবাসা নিয়ে বুকে
আগুন লাগিয়ে সুখে
সবকিছু ফেলে দিয়ে
'পিয়া পিয়া পিয়া' করে প্রাণ তার যায় কিনা আজো"

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA


Comments

রেনেট's picture

লেখার বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন, আপনি লেখার মধ্যে এমনভাবে মায়া ঢুকিয়ে দেন... চোখের পলকে কখন যে পড়া শেষ হয়ে যায়, টেরই পাই না।

অনেক, অনেক ভালো লাগলো আপনার স্মৃতিচারণ।
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

অনিকেত's picture

অনেক ধন্যবাদ রেনেট---
আমি আশাও করিনি যে কেউ এত্ত দীর্ঘ লেখা পড়বে।
কোন এক অদ্ভূত ঋণ স্বীকারের দায় চেপে বসেছিল বলেই এই লেখাটা লিখেছিলাম।

কিন্তু তোমার মন্তব্যে আমি ভাল লাগায়, কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হলাম।
অনেক ধন্যবাদ রেনেট---

অতিথি লেখক's picture

অতিথি: ফিরোজ জামান চৌধুরী

অনুপ জালোটাও আমার খুব প্রিয় শিল্পী।
খুবই ভালো লাগল আপনার পোস্ট টা। ধন্যবাদ।

অনিকেত's picture

ধন্যবাদ ফিরোজ।
শুভেচ্ছা রইল----

মামুন হক's picture

রেনেটের সাথে একমত।
বস , তোমার লেখা পড়তে শুরু করলে আর থামার অবকাশ থাকেনা।

অনিকেত's picture

বস,তোমাদের মত কিছু কিছু মানুষের 'লাই' পেয়েই আমার আজ এই অবস্থা!
অশেষ কৃতজ্ঞতা এই দীর্ঘ লেখাটা পড়ার জন্যে এবং এমন চমৎকার একটা মন্তব্যের জন্য।

নিরন্তর শুভেচ্ছা----

ছায়ামূর্তি [অতিথি]'s picture

আমরা তখন থাকি সিলেটের সবচাইতে সুন্দর বাসাটাতে---এম সি কলেজের প্রিন্সিপালের বাংলো।

একেবারে ২০০% খাঁটি কথা। কলেজে পড়ার সময় খালি ভাবতাম কী ভীষণ সৌভাগ্যবান এই বাসার লোকজন!

আপনারেতো তারা দিয়া লাভ নাই!
কোটি কোটি তারা আপনার ভান্ডারে।

নিরন্তর শুভকামনা।

অনিকেত's picture

ধন্যবাদ ছায়ামূর্তি,কষ্ট করে এই দীর্ঘ লেখাটি পড়ার জন্যে।
শুভেচ্ছা রইল

কীর্তিনাশা's picture

রেনেট ভাই আর মামুন ভাই'র সাথে একমত।

এত বড় লেখাটা মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে গেলাম। বলতে পারেন লেখায় ডুবে গেলাম। আপনার আবেগের ঢেউগুলোতে আমিও দুললাম।

স্যালুট অনিকেত দা...... গুরু গুরু

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অনিকেত's picture

অনেক ধন্যবাদ কীর্তি!
তোমার ঘর আলো করে এসেছে এক অপ্সরা।
তাকে একপাশে রেখে এই লেখাটা পড়ার জন্যে তোমাকে কঠিন মাইর দেয়া দরকার।
যাও, মিয়া--ভাতিজি'র কথা ভেবে আজ 'মাইর' মওকুফ করে দিলাম।

তোমার ঘরে নেমে আসা চাঁদটাকে অনেক আদর----

ফাহা's picture

বস, লেখাটা দারুণ লাগলো!

অনিকেত's picture

থ্যাঙ্কু বস----

প্রজাপতি [অতিথি]'s picture

অনিকেতদা এবার মনে হয় আমি আরও বেশী দ্রুততার সংগে আপনার লেখা পড়ে শেষ করলাম। গজল শোনার ও বোঝার অভ্যাসটা কেন জানি আমার মধ্যে গড়ে উঠেনি। কিন্তু আপনার লেখা পরে মনে হচ্ছে বড় একটা জিনিষ মিস করেছি। আর আপনার লেখা নিয়ে আমি মন্তব্য করে ছোট মুখে বড় কথা বলতে চাই না। আমি রেনেটদা, কীর্তিদার সাথে একশোমত দেঁতো হাসি

সোনালির সাথে যে অনুপ জালটার বিবাহ বন্ধনে একদা আবদ্ধ ছিলেন তা আমি জানতামই না, তারকাদের ব্যাপারে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানভান্ডার বাড়ানোর জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

অনিকেত's picture

ধন্যবাদ প্রজাপতি

আর

Quote:
তারকাদের ব্যাপারে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানভান্ডার বাড়ানোর জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

এই কথা আমাকে বলছ?? থাক জনসমক্ষে হাঁড়ি আর ভাঙ্গালাম না। হে হে হে--

ভাল থাকো---

মূলত পাঠক's picture

খুব ভালো লাগলো লেখা। নস্টালজিক করে দিলেন!

আমি অনুপ জলোটার তেমন ভক্ত ছিলাম না, তবে তাঁর জনপ্রিয়তার স্রোতে ভারতবর্ষকে ভেসে যেতে দেখেছি। গান খারাপ লাগতো এমন কথা বলছি না, তবে গানের মাঝখানে দমের কারবার করতেন, এক দমে কতক্ষণ টানা যায়, ঐটা বড়োই অশৈল্পিক লাগতো, পাঞ্জাবী টপ্পার বাড়াবাড়ি কসরৎ যেমন তেমনি। দেশে অবশ্য তাঁর জনপ্রিয়তা মূলত ভজনেই দেখেছি, গজলে জগজিৎ সিং একচ্ছত্র রাজত্ব করেছেন। অনুপ জলোটার একটা নজরুলগীতির অ্যালবাম খুব বিখ্যাত হয়েছিলো, "খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে"। সঙ্গীতবোদ্ধারা সমালোচনা করলেও জনগণ খুবই পছন্দ করেছিলো, আমারও খারাপ লাগতো না গানগুলো।

অনিকেত's picture

Quote:
তবে গানের মাঝখানে দমের কারবার করতেন, এক দমে কতক্ষণ টানা যায়, ঐটা বড়োই অশৈল্পিক লাগতো, পাঞ্জাবী টপ্পার বাড়াবাড়ি কসরৎ যেমন তেমনি।

হা হা হা ---একদম ঠিক কথা বলেছেন। আমার মনে আছে---'যখন দমের খেলা' শুরু হত তখন আমি স্টপ ওয়াচ নিয়ে সময় মাপতাম--সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ৩৪ সেকেন্ড। আমি যেহেতু গান-কানা ছিলাম(এখনো খানিকটা আছি) সেহেতু এইরকম গিমিক গুলোই একটা আকর্ষন ছিল। একবার দেশ পত্রিকায় একজন অনুপের এক অনুষ্ঠানের রিভিউ করেছিলেন। তাঁর পাশে বসা একটা বাচ্চা ছেলে তার বাবা কে বলছিল---বাবা, একে আমাদের কিত কিত খেলায় নিলে দারুন হতো না ?? হা হা হা ---

মূলত পাঠক's picture

হা হা, হাডুডু টিমের ক্যাপ্টেন অনুপ জলোটা হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল's picture

বড়ো লেখা আমি সাধারণত এড়িয়ে যাই।
আপনারটা কখনোই পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না, অনিকেত'দা।
রেনেট ঠিকই বলেছে। আপনার লেখায় কেমন অদ্ভুত একটা মায়া ছড়ানো থাকে।
লেখাটা পড়ে কষ্ট লাগছে।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অনিকেত's picture

শিমুল,

আমি যত যাই বলি না কেন, যতই ভাব দেখাই না কেন যে "আমি তো আসলে কমেন্টের লোভে লেখালেখি করিনা---আমি আসলে (=>এই জায়গায় কোন মহান ভাবের কথা বসবে) এর জন্য লেখি"---কোন লেখা এখানে দিলেই মাঝে মাঝে এসে ঘুরে যাই---- কিছু লোকের কমেন্ট পেয়েছি কিনা দেখার জন্য। সেই কয়েকজনের কমেন্ট পেলে আমার সারা দিনটা ভাল যায়। না পেলে মন খারাপ হয়। তুমি সেই কয়েকজনের একজন----

নিরন্তর শুভেচ্ছা---

সুলতানা পারভীন শিমুল's picture

লইজ্জা লাগে

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

কিংকর্তব্যবিমূঢ়'s picture

রূপ কুমার যে তবলা বাজায় জানতাম না খাইছে, কিছু হিন্দী মুভিতে প্লেব্যাক করতে দেখসিলাম [আমীর খানের সারফারোশের টাইটেল সংটা ওর গাওয়া ছিল] ... রুপকুমার আর সোনালির একসাথে একটা মিউজিক ভিডিও ছিল, অনেক আগে, যখন স্কুলে পড়ি সেই সময়ের, বেশ পছন্দের ছিল আমার গানটা ... ইউ টিউবে অনেক খুঁজেও আর পাইলাম না মন খারাপ

এত এত ইতিহাস কিছুই জানতাম না, অনেক জ্ঞানলাভ হইলো ...

পোস্টে জাঝা চলুক

[অফটপিকঃ শাহান চাইলে দুর্দান্ত লিখতে পারবে, ওরে একটু ঠ্যাংগানি দিয়ে দেখেন লেখা শুরু করাইতে পারেন কিনা ... আপনার তো রিক্রুটিংয়ে ভালো দক্ষতা আছে দেঁতো হাসি ]
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

অনিকেত's picture

রূপ কুমার রাঠোড় তাদের তিন ভাই এর মাঝে সবচেয়ে দেরীতে গানে এসেছেন। তার একভাই নব্বই দশকের জনপ্রিয় সুরকার জুটি নাদিম-শ্রাবনের শ্রাবন, আরেক ভাই বিনোদ রাঠোড় এক সময়ের নাম করা প্লে-ব্যাক সিঙ্গার।

রূপ কুমার মুলতঃ তবলাই বাজাতেন। আমার মনে পড়ে---যেদিন প্রথম তার গান শুনি---আমি মনে প্রাণে চাইছিলাম তার গান, তার গলা কে অপছন্দ করতে।
কিন্তু লোকটা আসলেই বড় ভাল গায়। মদন-মোহনের সুরে 'বীর-জারা' ছবিতে লতার সাথে গাওয়া 'তেরে লিয়ে' বা অনু মালিকের সুরে 'বর্ডার' ছবিতে ' এয় যাতে হুয়ে লামহো---' অথবা তুমি যেমন বলেছ সারফারোশে গাওয়া টাইটেল সং 'জিন্দেগী মউত না বন যায়ে--' অসাধারন!

তার গাওয়া একটা গজল এলবাম এসেছিল বছর আটেক আগে 'পেয়ার কা জশন'। বিগত কয়েক বছরের মাঝে আমার শোনা সেরা গজল এলবামের একটি বলে মনে হয়েছে। এইখানে সেই এলবামের একটা গান দিলাম---শুনে দেখো কেমন লাগে---

প্রজাপতি [অতিথি]'s picture

অফ টপিক: আমার একটা ছোট প্রশ্ন ছিল রুপ কুমার রাঠোড়ের মা কি তার ছেলের বাবার তবলচির হাত ধরে কোন কারণে পালিয়ে গিয়েছিলো? হয়তো সে কারনে রুপ কুমার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে "বদলা" নিয়েছিল (শয়তানীহাসি)

মূলত পাঠক's picture

ঐ ভিডিওটা পেলাম না তবে এইটা দেখতে/শুনতে পারেন, রূপকুমার ও সোনালির:

অনিকেত's picture

আহা, এইটাই একটু আগে দেখছিলাম
ধন্যবাদ পাঠক দা-----

সাইফ তাহসিন's picture

এই মিয়া সেই তবলিয়ে?

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

রানা মেহের's picture

অনুপ জালোটা কিংবা গজল কোনটাই বিশাল পছন্দ ছিলনা
কিন্তু আপনার লেখাটা ছুঁয়ে গেল খুব
(আপনার পাওনা পার্টিতে আরেকটা মেন্যু যোগ হলো) চোখ টিপি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অনিকেত's picture

হা হা হা, ধন্যবাদ রানা---কিন্তু পার্টিটা দিচ্ছ কবে???

মৃদুল আহমেদ's picture

অসাধারণ আপনার এই লেখায় কমেন্ট করার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
অসাধারণ। অসাধারণ। অসাধারণ।
এক কথায় অসাধারণ।
অনুপের সংসারজীবনের এই কাহিনীর কথা জানি আমি। রূপকুমার আর সোনালীর প্রেম, অনুপের সংসার ভগ্ন।
কিন্তু দেবতার মতো ভাবতেন যে মানুষটিকে, আর সেই দেবতার একান্ত ভক্ত যে সঙ্গীতপ্রিয় অনিকেত, তার চোখ, তার ভাবনা, তার জীবন, বেড়ে ওঠা, তবলিয়া হয়ে ওঠা, সেই সুদূর শৈশব, পাহাড়ের সেই পাকদণ্ডী, আর জীবনের সেই সরল স্বপ্নের সঙ্গে জীবনের রূঢতার সংঘাত যা এই জীবনে আমরা প্রায় সবাই দেখেছি, এই সমস্তটার মিশেলে এক আশ্চর্য অনুভূতির স্রোতে একদম ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন ভাই...
বহুদিন কোনো লেখা পড়ে এতটা আপ্লূত বোধ করি নি!
আপনার এই লেখা পড়ার পর আর কোনো লেখা পড়াটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে... এতটাই বুঁদ হয়ে আছি স্বপ্নচারী শৈশব আর কাঁটাভরা বাস্তবের আধো ভালো লাগা আধো যাতনার এক বিচিত্র অনুভুতিতে...
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অনিকেত's picture

মৃদুল ভাই,
আমি যার যোগ্য নই, সেই রকম প্রশংসা দিয়ে একেবারে ভাসিয়ে দিলেন !!!
নিজের সম্পর্কে আমার মোহ ভঙ্গ ঘটেছে অনেক বছর আগেই। তাই আমি ঠিক জানি--আমি কী, আমি কে আর কীইবা আমার ক্ষমতা!

কিন্তু এইখানে এসে এই আপনাদের মত কিছু লোকের দেখা পেলাম---যারা বিনা কারণেই আমাকে নানান প্রশংসা বচনে অভিষিক্ত করেন। আমি জানিনা কি করে আমি এই সৌভাগ্যের অধিকারী হলাম----কিন্তু আজীবন নানান দুর্ভোগে ভোগা এই প্রাণ এসব নিয়ে আর বিন্দুমাত্র চিন্তাও করবে না।বরং এই অলৌকিক মুহূর্ত্তগুলো 'প্রাণপনে' উপভোগ করার চেষ্টা করবে।

অজস্র ধন্যবাদ---

মৃদুল আহমেদ's picture

ভাই অনিকেত। নিজের সম্পর্কে মোহভঙ্গের কোনো কারণ নেই। তুমি যা তুমি তাই্। সংসারের লোকজন তোমার সম্পর্কে কী ধারণা করে, তা নিয়া মাথা ঘামানোর আমার কোনো দরকার নাই। আমি জানি, আমরা জানি, তুমি কী বিশাল মাপের একটা অন্তরের মানুষ। এই সম্পদের কোনো তুলনাই নাই।
এই অন্তর যার আছে, সেই রাজা, বাকি সবাই তার তুলনায় ফকির।
তোমারে প্রণাম মিয়া। বিখ্যাত, সফল মানুষ অনেক আছে, কিন্তু বড় মনের মানুষ খুব কম। নিজের সম্পর্কে ভুল ভাইবো না।
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অনিকেত's picture

মৃদুল ভাইও,
আমি কী অপরাধ করসি কন----
এইভাবে জন-সমক্ষে নির্দয়ের মত পচাইতেসেন---
গরীব রে মাফ দেন রে ভাই---
আপনার 'দিল কি দয়া হয় না?'---

দময়ন্তী's picture

অনুপ জলোটা'র গান আমার কোনকালেই খুব একটা ভাল লাগে নি, আবার খুব যে একটা খারাপ লাগত, তাও নয়৷ ঐ আর কি! তবে সোনালি'র খবর পড়ার পরে জনৈক সিনিয়ার দিদি এই বলে আমাদের বন্ধুমহলে প্রবল আলোড়ন ফেলে দেন যে "সেই যে হরিসাধন দাশগুপ্ত'র বৌ সোনালী দাশগুপ্ত, সেও তো ------- দেখেছিস, দেখেছিস এও সোনালী ---' ইত্যাদি৷ তো, তখন আমরা অনেকেই আমাদের নামটা যে "সোনালী' নয় তাতে বেশ স্বস্তি পেয়েছিলাম৷ হাসি

আমরাও ঢাকা টেলিভিশান দেখার জন্য ম্যাপ দেখে দেখে এন্টেনা ঘুরাতাম৷ বাংলাদেশ ধরার জন্য একরকম উঁচু আর অজস্র ডান্ডা লাগানো ছিল. আমাদের বাড়ী টিভি ছিল না, একটু পরে মামাবাড়ীতে যেতাম দেখতে৷ তো, ওদের ঐরকম এন্টেনা ছিল না৷ আমি তাই ৩ তলার ছাদের কার্নিশে চড়ে এন্টেনা ঘুরিয়ে ম্যাপ দেখে ঠিক করা ঢাকার দিকে ঘুরিয়ে দিতাম৷ আর সত্যি সত্যিই তাতে ঢাকা ধরা যেত৷ তখন "বহুব্রীহি' নামে একটা নাটক হত৷ সেইটা দেখার জন্য এত কান্ড৷

লেখা যথারীতি সুন্দর৷ যেকোন ব্যপারে আপনার ইনভলভমেন্ট আসলে লেখাগুলোকে একটা অন্য মাত্রা দেয়৷

--------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অনিকেত's picture

Quote:
"সেই যে হরিসাধন দাশগুপ্ত'র বৌ সোনালী দাশগুপ্ত, সেও তো ------- দেখেছিস, দেখেছিস এও সোনালী ---' ইত্যাদি৷ তো, তখন আমরা অনেকেই আমাদের নামটা যে "সোনালী' নয় তাতে বেশ স্বস্তি পেয়েছিলাম৷

--হা হা হা দময়ন্তী দি জমিয়ে দিলেন।

Quote:
তখন "বহুব্রীহি' নামে একটা নাটক হত৷ সেইটা দেখার জন্য এত কান্ড৷

--হ্যা আমাদের হু মা-র লেখা নাটক। একটা ক্ল্যাসিক। এখনো মাঝে মাঝে খুজে বের করে দেখি---হাসতে হাসতে গড়াগড়ি

সহৃদয় মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

স্বপ্নহারা's picture

মায়াভরা চমৎকার একটি লেখা। খুবই অসাধারণ লাগল।
----------------------------------
হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

অনিকেত's picture

ধন্যবাদ এমন মায়াভরা কমেন্ট করার জন্যে
ভাল থাকবেন---সব সময়

সবজান্তা's picture

আহা ! দুর্দান্ত !

অনুপ জালোটার গান প্রথম শুনি অনেক ছোট থাকতে, সম্ভবত ভজনগঙ্গা। একটা গানের লাইন এখনো মনে আছে, "রাম রামাইয়া ..." । যাই হোক বড় হওয়ার পর একটা সিডি পেলাম, ভজন সন্ধ্যা।

অনুপ জালোটার বাংলা গানও শুনেছি কিছু। নজরুল গীতি তো আছেই, আরেকটা ছিলো আধুনিক গান, "আহা শুন শুন বধূ সুন্দরী" ছিলো ওই অ্যালবামের। যাই হোক একটা বয়স পর্যন্ত ভালো লাগলেও পরবর্তীতে খেয়াল করলাম অবাঙালি গায়ক গায়িকাদের বাংলা গান আসলে ভালো লাগে না, কারণ তাঁদের সুর জ্ঞান যতোই ভালো হোক, উচ্চারণের আড়ষ্টতা অস্বস্তি সৃষ্টি করে। তবে সংগীত বোদ্ধা অনেকেই অনুপ জালোটাকে সে অর্থে পাত্তা দিতে রাজি না হলেও, আমার মতো অ-বোদ্ধা, শুধু মাত্র "লিসেনিং ফর প্লেজার" এর স্বার্থে যে গান শোনে, এর কাছে অনুপ জালোটাকে বেশ ভালোই লাগে।

আপনার পুরো লেখাটাই পাঁচ তারা পাওয়ার মতো। কিন্তু আমি পাঁচ তারা দিবো "চাদরিয়া ঝিনি রে ঝিনি" গানটার বর্ণনার জন্য। এতো বেশি জীবন্ত লাগলো আমার কাছে যে, লেখাটা পড়েই সোজা গানটা ছেড়ে দিলাম মিডিয়া প্লেয়ারে।

পুনশ্চঃ ডাউনলোড প্রায় শেষ হয়ে আসছে। জি টকে টোকা দিয়েন, নতুন গান লাগবে।


অলমিতি বিস্তারেণ

অনিকেত's picture

Quote:
খেয়াল করলাম অবাঙালি গায়ক গায়িকাদের বাংলা গান আসলে ভালো লাগে না, কারণ তাঁদের সুর জ্ঞান যতোই ভালো হোক, উচ্চারণের আড়ষ্টতা অস্বস্তি সৃষ্টি করে।

--হক কথা,সবজান্তা। অবাঙালী শিল্পীদের কেউই এই জটিলতা মুক্ত নন--হোক না সে শিল্পী লতা, আশা বা অনুপ জলোটা। ওরা অবাঙ্গালী----কাজেই আমি তাদের বাংলায় গান করার চেষ্টাটা কে সাধুবাদ জানাই। অনেকেই মৌসুমী পাখির মত কিছু বাংলা গান গেয়ে---তারপর ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকটা এমন যেন, তার resume' তে এই ব্যাপারটা থাকা দরকার---তাই করা। অনুপ কে আমি এইদিক থেকে এগিয়ে রাখব অন্যদের চেয়ে। বহুবিচিত্র ধারায় ও শাখায় গান করেছেন তিনি। আমাদের দ্বিজেন্দ্রগীতির একটা সঙ্কলন করেছিলেন তিনি "আজি গাও মহাগীত", সেটা খুবই চমৎকার হয়েছিল। আমি নিজে বাঙ্গালী হয়েও ঐ গানগুলোর অনেকগুলোই এর আগে শুনিনি। তারপর শ্রী রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের প্রিয় কিছু গানের একটা সঙ্কলন করেছেন----'মন চল নিজ নিকেতনে'।অনবদ্য একটা এলবাম। নজরুল গীতির এলবাম করেছেন অনেকগুলো---

মন জপ নাম,

বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে

আমার আপনার চেয়ে আপন যেজন

তোমার মহাবিশ্বে

আমার কালো মেয়ে(নজরুলের শ্যামা সঙ্গীতের সঙ্কলন)

এই এলবামগুলো যে সব ব্যবসা সফল হয়েছে--তা কিন্তু নয়। কাজেই ভদ্রলোক শুধু টাকার লোভে একের পর এক এলবাম করে গেছেন----এমনটা মনে হয় না।

অবাঙ্গালীদের উচ্চারণে সমস্যা হতেই পারে। বিরক্ত লাগে যখন দেখি বাঙ্গালী গায়ক/গায়িকা ওঁদের অনুসরণ করতে গিয়ে ওঁদের মত আড়ষ্ট উচ্চারণে গান করেন। আমাদের দেশে সামিনা নবী অনেক দিন ধরেই 'আশা-কন্ঠী' গায়িকা বলে পরিচিত। সমস্যা হল----তিনিও এইটে ভাল করেই উপভোগ করেন। ফলে যেটা হয়েছে---বেশ কিছু গানে তাঁর উচ্চারণে হিন্দি-ওয়ালা প্রভাব রয়ে গেছে, যেটা ঠিক কাম্য নয়।

যাক অনেক বড় কমেন্ট করে ফেললাম।
ভাল থেকো, সব সময়-----

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি]'s picture

কিছু বলতে চাইছিলাম, মৃদুল ভাই আগেই বলে দিলেন। যথারীতি যা বলতে চেয়েছি কিন্তু কখনই গুছিয়ে উঠতে পারিনা, সেটা মৃদুলভাইয়ের জন্য স্বভাবজাত প্রতিভা। অসাধারন লাগল আপনার শৈশবকে ফিরে দেখা।

গজল আমার-ও বেশ লাগে। বিশেষত জগজিৎ আর গুলাম আলী-র গজল বেশ শোনা হয়।

সাইফ তাহসিন's picture

অনিকেতদা, আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠি মোবাইলের টুং টুং শুনে, উঠে দেখি SMS, যার পিছে ঘুরার কথা, সে আমাকে সঙ্গে নিতে পারবে না, তাকে আগেভাগে কাজ সেরে আরেক জায়গায় যেতে হবে। আমি মনের আনন্দে হেইও বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। দ্বিতীয়বার ঘুমালে আমার ঘুম খুব ঘন হয়, কারন সামারা পাশে থাকে না, যত্রতত্র ঠেলা গুতা না থাকায় ঘুম ভাঙ্গার প্রশ্নই উঠে না। এর মাঝে এমি নানা ভাবে আমাকে ডাকাডাকি করে, কিন্তু তার সব চেষ্টাই বিফলে যায়, ১২ টার দিকে আর না পেরে বলে, অনিকেতদা লেখা দিয়েছে সচলে। আমি যেন শোয়া থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম, তারপর দাঁত মাজতে না গিয়ে একেবারে ল্যাপটপের সামনে এক লাফে হাজির। আমার এত কথা থেকে বুঝতেই পারছেন, আপনার লেখার মূল্য কতখানি, কতটা ভালো লিখলে মানুষ এমন ভক্ত হয়।

লেখার শিরোনাম দেখে কিছুটা ভরকে গেলাম, আমার গান শোনার হাতে খড়ি হয়েছে হেমন্ত, কিশোর, সন্ধা আর ভূপেন হাজারিকার হাত ধরে। তারপর শুধুই অধঃপতন, চার বছর বয়সে আমি প্রতিদিন সকালে উঠে শুনতাম "আমি এক জাজাবর"। এ গান ছাড়া যেন আমার দিন চালু হত না। সে হল ১৯৮৩, আমি ব্যান্ডের গান প্রথম শুনি মনে হয় ১৯৮৯ এ, নোভা, ফিডব্যাক, সোলস ইত্যাদি ইত্যাদি। একই সাথে ইংরেজী গানো শোনা শুরু করি। গজল আমার বাসায় কেউ শুনত না, কাজেই কখনো শোনা হয়নি। হিন্দি ছবিও খুব একটা দেখতাম না, আর হিন্দি ভাষার প্রতি আমার কেমন যেন একটা বিতৃষ্ণা আছে এমনিতেই। এখানে আরেকটি মজার কথা বলে রাখি, আমার বাবা মা প্রচুর উত্তম-সুচিত্রার ছবি দেখতেন, ফলে আমার ধারনা হয়েছিল, যারা অভিনয় করে তারাই গান গায়, ডাবিং বলে কিছু আছে তা বুঝতামনা মন খারাপ

কাজেই আজকে আপনার শিরোনাম দেখে ভয় পেলেও একটু একটু সাহসের সাথে পড়তে শুরু করি আপনার লেখা, নাম দেখে অস্বস্তি, কিন্তু না পড়েও থাকতে পারি না, পুরাই দিল্লিকা লাড্ডু। কিন্তু শুরু করার ২ মিনিটের মাথায় কিভাবে যেন শেষ হয়ে গেল, আর দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল, বেচারা অনিকেত আর বেচারা অনুপ জালোটা। সোনালী ভেগে গেলেও অনিকেতদা ছাড়তে পারেন নি, আর অনুপের গান প্রথম শুনি তারই গাড়ীতে, শুনে কিন্তু বেশ ভালোই লেগেছে। তবে, সবচেয়ে মজা লাগলো আপনার কৈশরে বাড়ন্ত বয়সে অনুপের সাথে প্রেমের ইতিহাস। আরো মজা লেগেছে আপনার গজল শোনার 'তরিকা' এর বর্ননা শুনে। আমার বাবা মা খুব ব্যস্ত থাকায় বাসার লোকাল গার্জেন হিসাবে নানুর ভুমিকা অনেক। তিনি বলতেন, ঐ বাজনা শুনবি না, বাজনা বাজলে বাসায় ফেরেস্তা আসেন না, ঐ পরিবেশে যদি ভজন শুনতাম নানু মনে হয় হার্টফেল করতেন, অথবা ঠেঙ্গিয়ে আমার পশ্চাৎদেশ লাল করতেন গড়াগড়ি দিয়া হাসি

যাক, লেখার দোষ ধরব বলে আজকে উঠে পড়ে লেগেছি, আর এমি আমার এই ব্যার্থ প্রচেষ্টা দেখে হি হি করে হাসছে আর বলে, "বেকুব, কত বাঘা বাঘা সচল পারে নাই, তুমি কোথাকার কোন ইয়ে, মিনসে, ঢং বাদ দিয়ে ভাত খেয়ে কাজে যাও, যেয়ে কাজ করে কিছু পয়সা পাত্তি আনো গে, দেখব কেমন মুরদ মরদের"। এরপর বাঘ থেকে বিড়াল হয়ে পুতুপুতু করতে করতে খেয়ে কাজ এ যাবার প্রস্তুতি নিতে গেলাম মন খারাপ

ও, হ্যা, ২টা সিরিয়াস দোষ পেয়েছি আপনার, মিয়া এত ডুব দেন কেন? আর বড় লেখা বড় মনে হয় না ক্যান? এক নিঃশ্বাসে যদি লেখা পড়ে শেষ করা যায়, তাহলে লেখা বড় হয় কেম্নে? জাতির কাছে এই প্রশ্ন রেখে বিদায় নিলাম।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মৃদুল আহমেদ's picture

পিডান দিমু তোরে, "জাজাবর" বানান ঠিক কর...
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সাইফ তাহসিন's picture

বস, ঠিক করতে দিতাসে না :)। ভুল আরো কিছু আছে, ইচ্ছাকৃত, ধরে নিসি কেউ পড়বে না, সেইটা পরীক্ষা করতে চোখ টিপি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অনিকেত's picture

বস, আমি বাক্যহারা-----
অশেষ কৃতজ্ঞতা----
আর কিছুই বলার ক্ষমতা নেই আমার---

মঙ্গল হোক

প্রজাপতি [অতিথি]'s picture

আমার নামে ঝা তা রটনা ঘটানো হচ্ছে, আমি এর তেব্র পেতিবাদ জানাই।

অনিন্দিতা চৌধুরী's picture

যথারীতি অনিকেতীয় পোস্ট।
শুধু কোন একসময়ের ঋণ পরিশোধের জন্য ই কি অনুপ জালোটার গান শোনা হয়?
মনে হয় না।
হয়ত আগের সেই মোহ নেই কিন্তু ভালবাসা নিশ্চয়ই মনের গহীনে কোথাও লুকিয়ে আছে। এটা তো মরে না।
কি বলেন?

অনিকেত's picture

Quote:
শুধু কোন একসময়ের ঋণ পরিশোধের জন্য ই কি অনুপ জালোটার গান শোনা হয়?
মনে হয় না।
হয়ত আগের সেই মোহ নেই কিন্তু ভালবাসা নিশ্চয়ই মনের গহীনে কোথাও লুকিয়ে আছে। এটা তো মরে না।

এরচেয়ে সুন্দর করে এই কথা গুলো আর কেউ বলতে পারবেন না---
অনিন্দিতা, অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে---

হিমু's picture

অনুপ জালোটার কণ্ঠ খুবই মসৃণ। আমার কাছে ভালো লেগেছে তাঁর একটি গজল, যব সে গ্যয়ে হ্যায় আপ, কিসি আজনাওয়ি কে সাথ ... ঐটা তিনি সলিড দরদ দিয়ে গেয়ে থাকেন। কারণ বুঝতে কষ্ট হয় না চোখ টিপি । তবে গজলে আমার সবচেয়ে পছন্দ মেহদি হাসান, পাকি হওয়া সত্ত্বেও।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

জাহিদ হোসেন's picture

আমি তেমন একটা গান শুনিনে, গান বুঝিনে। একা যখন গাড়ী চালাই তখন টক-রেডিও শুনি।
কিন্তু আজ আপনার লেখাটি পড়ে চোখে জল এলো। সেকি ইস্নিপসে "চাদরিয়া" গানটি শুনে, নাকি অনুপ জালোটার স্ত্রী হারানোর কথা জেনে, নাকি আপনার লেখাটির প্রতি পরতে মিশে থাকা এক কুয়াশাময় নিঃস্বতার সাথে পরিচিত হয়ে?
উৎরটি আমার জানা। কত লোকেই তো গান গায়, কত লোকেরই তো বৌ চলে যায়। ভাইরে-এমন লেখা ক'জনে লেখে বলুন! কামনা করি পাঠকের চোখে এমনি করে কান্না আনবার ক্ষমতা আপনার লেখনীতে চিরস্থায়ী হোক! ভাল থাকুন!

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

অনিকেত's picture

জাহিদ ভাই,

এই গত কালই আমি সচলায়তনের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম।
আপনার সাথে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করার জন্যে।
একটা ছোট্ট চিঠির মত কিছু ওদের দিয়ে বলেছিলাম---আপনাকে পৌছে দিতে। জবাবে তারা বললেন, আপনার লেখাতে যেন কমেন্ট হিসেবে দিয়ে দিই। কিন্তু সেইটা আমার মন চাইল না।

আপনার "একজন হিটলারের কথা" আর "নির্বাসনে যাবার আগে" এই লেখা দুটি সচলায়তনে এখন পর্যন্ত পড়া সেরা লেখার একটি। সেই আপনি যখন এমন দয়ার্দ্র কথা লেখেন আমার জন্যে-----আমার বিবশ-বিহবল হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।

আপনাকে যেহেতু আর কোন ভাবেই ধরা সম্ভব হচ্ছে না---কাজেই এই খানেই সবার সামনে লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে একটা অনুরোধ করছি-----আপনাকে আমি বন্ধু হিসেবে যোগ করতে চাই সচলায়তনে----আপনি কি সম্মতিটুকু দেবেন???

না দিলেও ক্ষতি নেই। আমি আপনার চির-ভক্ত হয়ে আছি। যেমন ছিলাম অনুপের----

অমিত আহমেদ's picture

দুর্দান্ত লেখা। অসাধারণ অভিব্যক্তি ও তার প্রকাশ।

গজল কখনোই সেভাবে শুনিনি। হিন্দি গান শোনা শুরু করেছি ক'বছর হলো। তবে শুরু করার পরে খুব মন দিয়েই শুনছি। বিনোদ রাঠোড়ের গান শুনেছি। গলাটা ভারী। তেমন আহামরি কিছু মনে হয় নি। রূপ কুমার রাঠোড়ের গান এর চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। "মাউলা মেরে" একটা গান আছে, সিনেমার নাম "আনোয়ার", সেই গানটা একটানা অনেকদিন শুনেছি। অনুপ জলোটার নজরুল সঙ্গীতের সিডিটা আছে। ওটা শুনেছি। খারাপ না। তার অন্য কোনো গান শোনা হয়নি।

ভাই আপনি নিয়মিত লেখেন। আপনার লেখার হাত খুব ভালো।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল

কিংকর্তব্যবিমূঢ়'s picture

মওলা মেরে তো দুর্দান্ত একটা গান ... অসংখ্যবার শোনা ... এইটা যে রূপকুমারের ঝানতাম না দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

প্রজাপতি [অতিথি]'s picture

রূপকুমারের গাওয়া এই গানটা আমার অসম্ভব প্রিয় ছিল

অনিকেত's picture

আমি আজ মোটামুটি বাক্যহারা----
আপনার মত একজনের এই মাপের কমেন্ট---আমি আশাও করিনি---
আমি আপ্লুত,কৃতজ্ঞ---

'মওলা মেরে' আসলেই একটা চমৎকার গান---
এই গানের ব্যাপক সাফল্যের পরে ঠিক এই গানের সুর ধরে রুপ কুমার গেয়েছেন আরেকটি গান 'তেরে জুস্তজু' শিরোনামের। সেইটেও শুনে দেখতে পারেন---আমার খুব ভাল লেগেছে----

শুভেচ্ছা--

অনিকেত's picture

রুপ কুমার রাঠোড়ের বেশ কিছু ভিডিও লিঙ্ক দেয়া হয়েছে। ভাবলাম অনুপের একটা লিঙ্ক আসুক। আমার প্রিয় একটা গান। গানটার শুরুতেই প্রথম লাইনটি কত ভিন্ন ভাবে কত বার এসেছে--শুনে দেখুন

ধুসর গোধূলি's picture

- লেখাটা পড়ে কেমন একটা মিশ্র অনুভূতি হলো। ভাঙনের খেলা ভালো লাগে না একদমই। এখানেও ভালো লাগলো না। এ জাতীয় খবরে একটা চাপা অভিমান টের পাই কোথায় যেনো!

তবে লেখাটা ভয়ানক রকম ভালো লেগেছে। টিলার উপরের আপনাদের সেই বাংলোতে যাওয়ার কোনো সিস্টেম কি এখন নেই? থাকলে যেতাম আরকি! হাসি

গজলের বেলায় তবলার বোল নিয়ে আপনার জহুরী চোখে যা বর্ণনা করলেন, স্মৃতি মিলিয়ে দেখলাম যথার্থই! আচ্ছা, অনিকেত'দা, লেখাটার কোথাও কি একটা আক্ষেপের ফ্লেভার দিয়েছেন? পড়তে পড়তে একটা জায়গায় এসে তেমনি কিছু একটা মনে হচ্ছিলো, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই আপনি ভয়ানক এক টানে পাঠককে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছেন! আমি হয়তো ভুল বুঝছি, কে জানে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অনিকেত's picture

ধু গো,

Quote:
ভাঙনের খেলা ভালো লাগে না একদমই।

--আমারো লাগে না একদমই।

Quote:
টিলার উপরের আপনাদের সেই বাংলোতে যাওয়ার কোনো সিস্টেম কি এখন নেই?

--হ্যা আছে বস। শেষবার যখন দেশে গিয়েছিলাম তখন একদিন গিয়েছিলাম বাসাটা দেখতে। কিন্তু হতশ্রী, ভগ্ন পাকদন্ডী, অবহেলা অযত্নে আগাছায় ছেয়ে যাওয়া সে বাসাটা---কোনভাবেই আমার স্মৃতির বাসাটা হতে পারে না----

চেনা মানুষের অচেনা মুখ দেখতে ভাল লাগে না---তাই বাসাটার কাছে না গিয়েই দূর থেকে ফিরে এসেছিলাম----

শুভেচ্ছা

সুলতানা পারভীন শিমুল's picture

চেনা মানুষের অচেনা মুখ দেখতে ভাল লাগে না---
সত্যিই তাই।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মণিকা রশিদ's picture

খুব ভালো লাগলো লেখাটা। এতো সাবলীল লেখা যে এক নিঃশ্বাসে পড়া ছাড়া উপায় থাকে না। আমাদের বাড়িতেও অনুপ জালোটার ওই বাংলা গানগুলো খুব বাজতো আমাদের ছেলেবেলায়। একটা গান তো এখনো আমি গুন গুন করে গাই...অমন চুল খুলে আর নাইতে নেমোনা...না অমন...রূপ কুমার রাঠোরের কিছু বেশ ভালো গান শুনেছিলাম( বেশ কয়েক বছর আগে, ) Vaadaনামক একটি album এ। ওঁর সাথে আরো ছিলেন উস্তাদ আমজাদ আলী খান, গুলজার ও সাধ্‌না সরগম।

........................................
......সবটুকু বুঝতে কে চায়!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অনিকেত's picture

ধন্যবাদ মনিকা---
Vaada এলবামটি আমিও শুনেছি।উস্তাদ আমজাদ আলী খানের সুরে, গুলজারের কথায় রুপ কুমার আর সাধনা সরগম গানগুলোতে প্রাণ ফুঁকে দিয়েছেন।

শুভেচ্ছা রইল

স্নিগ্ধা's picture

অনেকদিন পর আমারও বেড়ে ওঠার সময়ের কথা, সেইসময়কার পছন্দের গানগুলোর কথা মনে পড়ে গেল! সত্যি, একটা সময় অনুপ জালোটার গান কত্ত যে শুনেছি!

আমার অবশ্য এখনও তার গান খুবই পছন্দ।

লেখাটা চমৎকার হাসি

অনিকেত's picture

ধন্যবাদ স্নিগ্ধা'পু।

Quote:
আমার অবশ্য এখনও তার গান খুবই পছন্দ।

যাক, মাথা নষ্ট কেবল আমি নই---আরো অনেক লোক আছে দেখা যাচ্ছে----- হাসি

নিরন্তর শুভেচ্ছা---

অতন্দ্র প্রহরী's picture

ব্যাপক দৌড়ের উপর আছি। মাঝে মাঝে হয়ত অল্প কিছু সময়ের জন্য একবার ঢুঁ মেরে দেখা হয় কার কার পোস্ট আসলো, কখনো সেটাও করা হয় না। তবে ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, কিছু মানুষের পোস্ট ঠিকই পড়া হয়ে যায়, অথবা না পড়তে পারলে অনেকটা সময় মনের মধ্যে কেমন যেন অতৃপ্তি থেকে যায় একটা। আপনি তাদের মধ্যে একজন।

কী অসাধারণ লিখলেন! কতোটা ভাল লাগল, বলে ঠিক বোঝাতে পারব না। বলতে গেলে মৃদুল ভাইয়ের কিছু কথার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। অনুপ জলোটা, রূপ কুমার রাঠোড়ের গান আমারও অনেক ভাল লাগে। তবে এত ইতিহাস জানা ছিল না। আজই জানলাম।

যাই হোক, মুগ্ধতার কথা জানাতেই শুধু লগ-ইন করা। যাই, আবার দৌড়াই...

নিয়মিত লিখুন। আপনার লেখা পড়তে সবসময় ভাল লাগে।

অনিকেত's picture

বস, তুমি কবে ফিরবে?? তুমি ছাড়া ঠিক জমছে না---
চলে এসো চটপট---আমরা অপেক্ষায় আছি
তোমার চীন ভ্রমন নিয়ে লেখা পাবার ইচ্ছা---ওই ম্যাগ্লেভ ট্রেনের ভিডিওটা অসাধারন লেগেছিল----

ভাল কথা তোমার এক বন্ধু, শাহান, এখন আমাদের কব্জায়---মু হা হা হা---

অতন্দ্র প্রহরী's picture

এই তো বস, খুব তাড়াতাড়িই ফিরব আশা করি।
লিখতে তো চাই-ই, কিন্তু আমি আর কী লিখব... লিখতে পারলে তো! দেঁতো হাসি

শাহানকে ভালমতো চেপে ধরেন তো। লেখা না দিয়ে ব্যাটা যাবে কই! আর খুব বেশি উল্টাপাল্টা করলে খালি বলবেন যে জোর করে নিডো খাওয়ায়া দিবেন, তাহলেই দেখবেন কেমন জোঁকের মুখে লবণ পড়ে চোখ টিপি

আপনার লেখাটা আবার পড়লাম। কী আর বলব। আপনার মতো করে বললে বলতে হয়, এমন লেখায় একশ বিশ কোটি তারা।

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

চমৎকার লেখা...। বারবার পড়ার মতো। গানটির জন্য বিশেষ ধন্যবাদ, আগে শুনিনি।

অনুপ জলোটার প্রথম গান শুনি নজরুল গীতি। 'খেলিছো এ বিশ্বলয়ে' অমন করে আর কেউ গেয়েছে কিনা জানি না।

____________
অল্পকথা গল্পকথা

রেনেট's picture

খেলেছ এই বিশ্ব লয়ে গানটার ইস্নিপস লিঙ্ক জানা থাকলে দিয়েন। ডাউনলোডাবো
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

অনিকেত's picture

রেনেট এই লিঙ্কটা দেখতে পারো---

রেনেট's picture

ধন্যবাদ, অনিকেতদা। তবে গানটি mp3 ফরম্যাটে হলে ডাউনলোড করা যেত। এটি wma ফরম্যাটে। তবে ডাউনলোড করা না গেলেও অনলাইনে শুনতে তো সমস্যা হচ্ছে না, কাজেই সমস্যা নেই হাসি
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

অনিকেত's picture

রেনেট, তোমারে আমি গানটা পাঠাইতাসি---

অনিকেত's picture

অনেক ধন্যবাদ শিমুল!!
শুভেচ্ছা রইল---

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর's picture

খুব আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম। এক তৃতীয়াংশ পড়তেই সেলফোন বেজে উঠলো। ১০টার সময় ডিরেক্টরর্স গিল্ডের সম্মেলন। আমি এখনো বাসীমুখে কম্পিউটারে বসে আছি।
যাই... ঘোড়ার ডিমটা শেষ করে আসি... রাতে বাকীটুক পড়ে নিবো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনিকেত's picture

ঠিক হায় নজু ভাই--অপেক্ষায় আছি আইজুদ্দিন---

ভুতুম's picture

গজলের কিছুই বুঝি না, তবু এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেলাম পুরোটা। চমৎকার লেখা, অতি চমৎকার!

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

অনিকেত's picture

ধন্যবাদ ভুতুম---!

শুভেচ্ছা

প্রকৃতিপ্রেমিক's picture

চলুক

অনিকেত's picture

হাসি

রানা [অতিথি]'s picture

বিবাহমন্ত্রে বেদনাগুলোর শ্রাদ্ধ হোক, কষ্টগুলো "শরীল-সমাধি" পাক -- এই কামনা করি।

এবার ভালবাসার কথা শুনতে চাই । দেখতে চাই অনিকেতের যাদুকরী (লেখনি-)স্পর্শে ভালবাসা কি রূপ নেয় ।

সাইফ তাহসিন's picture

ইহা কি আমাদের চোখে পানি আসা শ্রদ্ধেয় রানা ভাই দেঁতো হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

রানা [অতিথি]'s picture

ঠিক । ভাল থেকো।

রণদীপম বসু's picture

দুর্দান্ত লিখলেন ! অসম্ভব সুন্দর এ লেখাটার জন্য যদিও আরো অনেক বড় বিশেষণ দরকার, কিন্তু এ মুহূর্তে আমার ভাণ্ডারে যোগ্য কোনো বিশেষণ খুঁজে পাচ্ছি না।

আপনার লেখাটার মতোই আমার ব্যক্তিগত অনুভূতিও। আমাদের পরিবারে কোন সঙ্গিতজ্ঞ নেই, তবে জন্মের পর থেকেই অনেক সঙ্গিতজ্ঞের আগমনে সংগীতমুখর পরিবার হিসেবেই দেখে এসেছি নিজের পরিবারটিকে। প্রজন্মান্তরে এসে এটা কিঞ্চিৎ হ্রাস পেয়েছে বটে।

জেলোটার প্রথম ভজন বেরুবার অনতিবিলম্বেই শুনার সুযোগ পাই। যেহেতু নিজে শিল্পী না হলেও ক্লাসিক্যাল সংগীতে আমার আকর্ষণ আকৈশোর, তাই জেলোটা শুনার পর থেকেই আমি তার উপর উন্মাদগ্রস্ত হয়ে যাই বলা চলে। একে একে সবগুলো ক্যাসেট নিয়ে পাগলের মতো বহুকাল ছিটগ্রস্ত থাকা, সে আর বলতে হয়। পরবর্তিতে নজরুলগীতির রেকর্ড একটা ডাইমেনশানই। বেসিক্যালি আমি গজলের ভক্ত। আর এখনো জেলোটার ভক্ত রয়ে গেছি। তবে এখনকার জেলোটাকে নিয়ে সম্ভবত আমার আকর্ষণ খুব একটা নেই।

আমার ছোট ভাই আমাদের শহরের অন্যতম ভালো তবল বাজিয়ে হিসেবে কিঞ্চিৎ সুনাম কামানোর সুবিধার্থে রূপ কুমার রাঠোরের কাহিনীও সেই সময় মনে দাগ কাটে বৈ কি। রূপ কুমার অনেক বড় শিল্পী অবশ্যই। তবু তাঁর তবলাকে কখনোই ভুলতে পারবো না আমি। ভুলতে পারবো না সেই সময়কার অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভজনের রাজকুমার অনূপ জেলোটাকেও।

সাথে সাথে আরেকটা বিষয় মাথায় গেথে গেলো, অনিকেত নামের চমৎকার একজন আবেগী লিখিয়ে তাঁর ভালোবাসার অনপনেয় যে দাগটা কীবোর্ডে ছড়িয়ে দিলেন অন্তর্জালের ভার্চুয়াল জগতে, তা এক কথা মারভেলাস্ !

হ্যাটস অব ইউ, অনিকেত দা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অনিকেত's picture

রণ দা,
এইরকম প্রশংসা করে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছেন----
আপনার ভাল লেগেছে----এতেই আমি খুশি---

ভাল থাকবেন, সব সময়

বইখাতা [অতিথি]'s picture

অনুপ জলোটার গান তেমন শোনা হয়নি তবে আপনার লেখা মন ছুঁয়ে গেল।

দুষ্ট বালিকা's picture

অনি'দা [আবারও আধা নামে ডাকলাম, মাইর দিতে চাইলে আপত্তি নাই।] পরীক্ষা চলছে, তাই ব্লগে আসা হয়না। মনের আবহাওয়া আজ খুব খারাপ, তাই এদিকে উঁকি দিতে এসে আপনার বাড়িতে হাজির হলাম। মায়াভরা লেখাটা পড়তে গিয়ে অনেকটা সময় কেটে গেল কোনখান দিয়ে, টেরই পেলাম না! আম্মু এসে বকুনি দেয়াতে মনে পড়ল, কাল পরীক্ষা, এখন ঘুমানো দরকার! [এখন বাতি নিভিয়ে চুপিচুপি মন্তব্য করছি!]

আপনি ছোটবেলার অনেক কথা মনে করিয়ে দিলেন। মা অনুপের গান শুনতেন অনেক। নজরুল সঙ্গীত বিশেষত। মাঝেসাঝে গজল। আমি নিজে গান শিখতাম যখন তখন থেকে গজল আমার অনেক প্রিয়। ছোটবেলার অনেক উদাস দুপুর কেটেছে আমার জানালায় বসে আঁকার খাতায় আঁকিবুকি করতে করতে এদের গান শুনে। সেপিয়া মোডে যেন দেখতে পেলাম আপনার স্রৃতিগুলোও। বড় ভাল লেখেন ভাইয়া আপনি। কেমন যেন একটা আপন ভাব আছে আপনার লেখায়। [কথা খুঁজে পা্চছিনাগো ভাইয়া! ] ভাল লাগল অনেক। পুরো লেখাটায় কিসের যেন ছায়া, যদিও আলোয় আলোকিত অংশও আছে জায়গায় জায়গায়।

অনেক অনেক অনেক লেখা চাই। ভাল থাকুন সবসময়।

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

অনিকেত's picture

বালিকা,
অনেক ধন্যবাদ এত ব্যস্ততার মাঝেও সময় করে আমার লেখাটা পড়ার জন্যে।
তোমার পরীক্ষার জন্যে শুভ কামনা রইল।
পরীক্ষা শেষে তোমার কাছ থেকে অ-নে-ক লেখা পাওনা রইল।

মামুন হক's picture

Quote:
অনেক অনেক অনেক লেখা চাই। ভাল থাকুন সবসময়।

--অনি ভাইয়া, দুষ্ট বালিকার সাথে আমিও সুর মেলালাম।

অনিকেত's picture

তবে রে-----

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

অনিকেত, এই লেখাটার জন্য ধন্যবাদ দেয়া অকিঞ্চিতকর, মন্তব্য করাও আমার জন্য দুঃসাধ্য। কেন বললাম এই কথা? কখনো দেখা হলে এই লেখা নিয়ে আপনার সাথে একঘন্টা কথা বলে তা বোঝাবো।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিকেত's picture

পান্ডব দা,
আপনার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ----
আপনার সাথে আড্ডা দেবার অপেক্ষায় আমিও রইলাম

মঙ্গল হোক

নওশীন's picture

অনেক সুন্দর লিখেছেন অনিকেত'দা! বেশী বেশী ভালো। রেনেটদা'র এর সাথে আমি একমত........ লেখায় যেনো মায়া ঢুকানো।

অনিকেত's picture

ধন্যবাদ নওশীন!

অফুরান শুভেচ্ছা---

তানিম এহসান's picture

আমি মন্তব্যের ঘরে চোখ রাখি, যখনই দেখি পুরনো কোন পোষ্ট এর নাম, চট করে কিলিক করি। কিলিকবাজ হয়ে যাচ্ছি মনে হয়। এইরকমই মৃদুল এর লেখা পড়তে পড়তে আপনার লেখার একটা লিংক পেয়ে ফের কিলিক করতেই এই অসামান্য লেখার সাথে দেখা। প্রথম দেখাটা মারাত্মক হলো! আমি গানের জগতে আকাট মুর্খমানুষ, কিন্তু মুর্খ মানুষও যখন পড়তে পড়তে এক্কেরে দেওয়ানা হওয়ার একটা অনুভুতি লাভ করে তখন লেখককে প্রাণপন সাধুবাদ দিতে পেরে চোখমুখ হেসে উঠে। কি অসাধারন লিখেছেন, ঝরঝর ঝরঝর একটা আবেশের সাথে পড়ে গেলাম।

আপনার আরো লেখা পড়বো, মান লিয়া হ্যায়!!

ত্রিমাত্রিক কবি's picture

অসাধারণ একটা লেখা। গজল ট্যাবে ঢুকে আপ্নার এই লেখাটা পেলাম। ্স্যালুট বস।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক's picture

বিশ্বস্ততাই তো জীবনের মূলমন্ত্র ।।।

আফরিন আহমেদ

Naren Chakraborty 's picture

আমিও অনুপ জালোটার অনেক বড় ভক্ত গানটি কভার করার চেষ্টা করলাম।https://youtu.be/un0eUowWOMo

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.