গল্প : প্রতিশোধ

অতন্দ্র প্রহরী's picture
Submitted by prohori on Mon, 01/09/2008 - 11:26am
Categories:

রাস্তায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও ক্যাব-সিএনজি কিছুই না পেয়ে মেজাজ পুরো সপ্তম আকাশে চড়লো রানার। কব্জি উল্টিয়ে ঘড়িতে সময়টা দেখে নিল আরেকবার। বাসায় পৌঁছুতে নির্ঘাত অনেক দেরি হয়ে যাবে আজ। এক পা থেকে আরেক পায়ের উপর ভর বদল করে অস্থিরভাবে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখছে কখন কিছু একটা পাওয়া যায়। এদিকে হাতে ধরা বইয়ের ব্যাগের ওজনও বেড়ে মনে হচ্ছে যেন কয়েক টন হয়ে গেছে!

পাশে তাকিয়ে দেখে হাতে ভিডিও গেমস নিয়ে স্কুলপড়ুয়া এক ছেলে ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে যে কি না এসে ওকে বাসায় নিয়ে যাবে। আরেক লোক রিকশা খুঁজে হয়রান হয়ে ওর মতোই দাঁড়িয়ে আছে, হাতে বাজারের ব্যাগ। কিছুক্ষণ আগের বৃষ্টি থেমে এখন বেশ কড়া রোদ উঠেছে। টপটপ ঘাম গড়াচ্ছে।

এমন সময় একটা সিএনজি আসতে দেখে রানা উৎসাহের সাথে একটু হাত নেড়ে দৌড়ে গেল কিন্তু সেই নবাবপুত্তুর ওর গন্তব্যে যাবে না! মেজাজ খারাপ করে আবার জায়গামতো ফিরতে গিয়ে ভুল করে পা পড়ল বৃষ্টির বদৌলতে রাস্তার পাশে জমে থাকা পানিতে। ধ্যাত্তেরি! ঠিক এমন সময় কোনরকম চিন্তাভাবনার সুযোগ না দিয়েই ওকে কাদাপানিতে পুরো মাখিয়ে দিয়ে সাঁ করে পাশ কেটে বেরিয়ে গেল একটা গাড়ি। কষে একটা গালি দেবার আগেই হঠাৎ দেখল গাড়ির ভেতর থেকে একটা হাত বের হলো। হতবিহ্বল অবস্থায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওকে মধ্যাঙ্গুলি দেখিয়ে পগাড় পার হলো গাড়িটা।

বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে না উঠতেই পেছনে বাজারের ব্যাগ হাতের লোকটা দাঁত বের করে হাসছে দেখে মেজাজ আরেকটু খিঁচিয়ে গেল।

- আমি ভাই একটা ডিম ঢিল মারসি ওই গাড়িটায়। দেখসেন আপনের কি অবস্থা কইরা দিয়া গ্যাছে! আরেকটু হইলো তো আমিও গেছিলাম! ভালো করসি না?

লোকটার দাঁত কেলানো হাসি দেখে বিরক্তি লাগলেও কিছু বলতে ইচ্ছা করলো না। কিন্তু এরপর স্কুলপড়ুয়ার কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না।

- ভাইয়া, তোমাকে এভাবে ভিজিয়ে দেয়ার পরও থ্যাংকস কেন দিয়ে গেল?
- মানে!
- আমি একদিন টিভিতে দেখেছিলাম। তখন আম্মুকে জিজ্ঞেস করলে আম্মু বলেছে ওভাবে নাকি বিদেশীরা থ্যাংকস দেয়!

মুখ বেজার করে কোনমতে জবাব দেয় রানা, "র্হ্যাঁ, তোমার আম্মু ঠিকই বলেছে!"

আরো কয়েক ঘন্টার যুদ্ধ শেষে বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে কম্পিউটার ছেড়ে বসল রানা। ততক্ষণে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মেজাজ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে ওর। নেটে কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক ঘুরাঘুরি করে ইয়াহু! চ্যাটরুমে ঢুকল। অপরিচিত এর ওর সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে হঠাৎই একটা নাম চোখ কাড়লো ওর। নক করে দেখা গেল ওরই সমবয়সী এক মেয়ে, ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রী। সামান্য কথা থেকে গভীরে তো বটেই এমনকি শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়ালো রাতে এক রেস্তোয়ায় দেখা করার পরিকল্পনায়!

সময়ের কিছুটা আগেই যথাস্থানে গিয়ে হাজির হলো রানা। কিছুটা নার্ভাস লাগছে বটে। এর আগেও এ ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে যদিও, কিন্তু তার বেশির ভাগের পরিণতিই খুব একটা সুখকর হয়নি! একবার তো ওর বন্ধুরাই বাকরা বানিয়েছিল ওকে!

নির্ধারিত সময়ের প্রায় মিনিট বিশেক পর এলো মেয়েটা। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী লাল রঙের একটা ড্রেস পড়ে এসেছে। রানা নিজেও পড়েছে নীল রঙের টি-শার্ট। তাই চিনতে অসুবিধা হলো না দুজনেরই। মেয়েটাকে দেখে একটা হার্টবিট মিস করলো রানা। পুরো আগুন! যেন জ্বলছে পুরো ঘরময়! চুলগুলো টেনে পেছনে নিয়ে বাঁধা, হাতে ব্রেসলেট আর মিষ্টি একটা পারফিউমের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে ওর চারপাশে। মেয়েটা নিমেষেই ওর অবস্থা বুঝে ফেললো মনে হয়। কারণ ঠোটের কোণে মিটিমিটি একটা দুষ্টুমি হাসি।

"হাই!" দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে অনেক গল্প করে ফেললো ওরা। মেয়েটার নাম সারা। মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতো ঘটনায় ব্যাপারটা রানার জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে গেল। হাসি-গল্পে প্রায় ঘন্টাখানেক কাটলো। হঠাৎ করেই সারার মনে হলো ও মোবাইলটা ভুলে গাড়িতে ফেলে এসেছে। আনার জন্য উঠতে চাইলে রানা নিজে থেকেই ভদ্রতা করে ওকে যেতে দিল না, নিজেই বরং উঠল নিয়ে আসার জন্য।

সারার হাত থেকে গাড়ির চাবি আর মডেল শুনে "বাপরে! মেয়ে দেখি নিজেই গাড়ি হাকায়!" ভাবতে ভাবতে গাড়ির কাছে গেল ও। দেখেই খুব চেনা চেনা লাগল গাড়িটা আর তখুনি নাকে হালকা একটা গন্ধ এসে ঝাপটা দিলো। কি মনে করে ঘুরে পেছনে এসে দেখল হলদেটে কি যেন লেগে আছে! বুঝতে আর কিছু বাকি থাকল না ওর!

গটগট করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখে সারা মিষ্টি হাসি নিয়ে বসে আছে ওর অপেক্ষায়। রানার শক্ত চেহারা দেখে হাসিটা সামান্য মলিন হলো সারার।

- মোবাইলটা পেয়েছ? কি হয়েছে! এনিথিং ড়ং?

এরপরই আসল ধাক্কাটা খেলো যখন রানা কোন কথাবার্তা ছাড়াই মধ্যাঙ্গুলি দেখিয়ে দিলো ওকে!

- হোয়াট দা হেল ডু ইউ থিংক ইউ আর ডুয়িং!

নিখাঁদ বিস্ময় ঝরলো সারার গলা থেকে।

রানাও কম যায় না। আর সারার কপালে ওঠা চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে এক নিষ্ঠুর আনন্দ পেলো ও। এরপর কি যেন একটা মনে করে চোখ মুখ খিঁচিয়ে পাল্টা জবাব দিলো, "আই অ্যাম থ্যাংকিং ইউ ফর দিস প্লেজ্যান্ট ইভনিং!"


Comments

অনিশ্চিত's picture

কর্ম সারা।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

অতন্দ্র প্রহরী's picture

পুরা! দেঁতো হাসি
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

পরিবর্তনশীল's picture

হা হা হা। ভালো হইছে। মেয়েটা একটু বেশি মিষ্টি হয়ে গ্যাসে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতন্দ্র প্রহরী's picture

কি করব কও! আমি আবার বহুত দিলখোলা মানুষ, বর্ণনা দিতে শুরু করলে সব মেয়েরেই মিষ্টি বানায়া ছাড়ি! দেঁতো হাসি
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

মুশফিকা মুমু's picture

হাহাহা, নিজের এক্সপেরিয়েনস থেকে লিখলেন নাকি চোখ টিপি কিন্তু ব্যাপারটা কিন্তু প্রায় অসম্ভব একটা বেপার, মেয়েরা কখনও এমন করে না।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অতন্দ্র প্রহরী's picture

হাহাহা। নাহ, নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে লিখিনি। পুরাটাই বানানো, বলতে পারেন গাঁজাখুরি গল্প। চোখ টিপি
দুনিয়ার সব মেয়েই কি আর আপনার মতো ভালো নাকি? হাসি
এই প্রসঙ্গে বলি, এই তো দুইদিন আগে আমি আর এক কলিগ রিকশায় করে গুলশান থেকে বারিধারা অফিসে ফিরছিলাম। কলিগ বলছিল যে একটা মেয়ে নাকি গাড়ির ভেতর থেকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তখন আমরা জ্যামে আটকে ছিলাম। আমার কলিগ আবার দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ বেশ সুন্দর। সে আমার সাথে কথা বলছিল, ওই মেয়ের সাথে তাল মেলায় নি। এরপর গাড়িটা যখন রিকশাটাকে ক্রস করে গেল, মেয়েটা নাকি ওকে মিডল ফিঙ্গার দেখিয়েছিল! ও তো পুরো হতবাক! এমন করার কোন কারণ বা যুক্তি কোনটাই ওর মাথায় ঢুকছিল না। এ নিয়ে পরে অবশ্য অনেক হাসাহাসি করেছি। হো হো হো
আর মজার কথা হলো, এই ঘটনা কিন্তু গল্পটা লেখারও কয়েকদিন পর ঘটেছে! চোখ টিপি
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

দৃশা's picture

পোলার উচিৎ আছিল ইচ্ছা মত খাওয়া দাওয়া কইরা বিলটা মাইয়ার হাতে ধরাইয়া দেওয়া। কনস্ট্রাক্টিভ একখান পেতিশোধ হইত দেঁতো হাসি
--------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

অতন্দ্র প্রহরী's picture

ইশ, আগে কইবেন না! তাইলেই তো পুরা রেস্টুরেন্টটাই পোলার পেটে ঢুকায়া দিতাম! হো হো হো
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

টিকটিকির ল্যাজ [অতিথি]'s picture

এর পর? এর পর কি হলো???
ইংলিশ মুভির কাহিনী হলে তো এর পর...... চোখ টিপি

অতন্দ্র প্রহরী's picture

এটা বাংলা গল্প তো তাই ইংলিশ মুভির মতো ব্যবহারিক প্রয়োগ নেই চোখ টিপি
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

কনফুসিয়াস's picture

হা হা হা। মজা পাইলাম।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতন্দ্র প্রহরী's picture

হাসি
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

তারেক's picture

একটা আগুন মাইয়ার সাথে এই হীন আচরণ? পোলাগো জাত ডুবাইলেন দেখি !
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

অতন্দ্র প্রহরী's picture

মাইয়াটার কাজ-কম্মো দেখেন নাই কি সব করে! দেঁতো হাসি
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

অতন্দ্র প্রহরী's picture

আসলেই, পরে কিন্তু বেচারা খুব আফসোস করসে, কারণ সারা'র বাসায় ওর আরো তিনটা আগুনে বোন আছে! চোখ টিপি
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

রায়হান আবীর's picture

ঠিক হলো না... খাইছে

=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

অতন্দ্র প্রহরী's picture

কি হইলে ঠিক হইতো কও তাইলে! শয়তানী হাসি
_____________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

রায়হান আবীর's picture

কইতে শরম লাগে। তবে আপনের মাথায় যেইটা আসছে সেইটাই।

=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

অতন্দ্র প্রহরী's picture

ওই মিয়া, ব্যাটাছেলের এইরম শরম থাকলে হয়? চোখ টিপি
আর আমার মাথায় কি আসছে সেইটা তুমি কেমনে জানলা? চিন্তিত
__________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.