গুগল কথন ৩: গুগলপ্লেক্সের ভিতরে বাইরে

রাগিব's picture
Submitted by ragib on Fri, 30/11/2007 - 11:48pm
Categories:

auto
ইন্টার্নশীপের প্রথম দিনেই হাজির হলাম গুগলের সদর দপ্তরে। এতো বিখ্যাত কোম্পানি, কিন্তু নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি নেই। প্রথম দিনে লবিতে আমার ইন্টার্নশীপের কাগজপত্র আর আইডি দেখানোর পরে ছবি সহ গুগল ব্যাজ দেয়া হলো। ব্যাস, এই ব্যাজ থাকলে গুগলের সর্বত্র অবাধে আসা যাওয়া করা সম্ভব।

auto
গুগলের প্রধান অফিসকে বলা হয় গুগলপ্লেক্স। প্রযু্ক্তির প্রাণকেন্দ্র সিলিকন ভ্যালির একেবারে কেন্দ্রস্থল মাউন্টেইন ভিউ শহরে এর অবস্থান। আসলে সান ফ্রান্সিস্কো হতে সান হোসে পর্য্ত প্রায় ৪০ মাইল লম্বা যেই উপদ্বীপ আকারের এলাকা, তার পুরোটাই আধুনিক প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবসার কেন্দ্র। মাউন্টেইন ভিউ এর পাশেই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পালো আল্টো নামের শহরে। প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে এখানে অভাবনীয় সব গবেষণা হয়ে চলেছে শ খানেক বছর ধরেই, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের দিক থেকেও এটা দুনিয়ার প্রথম কাতারে। নামজাদা সব মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বিশেষত ইদানিংকার অধিকাংশ সফটওয়ার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা অনেকেই এখানকার ছাত্র ছিলেন। গুগলের সের্গেই ব্রিন আর ল্যারি পেইজ তো বটেই, ইয়াহু!র প্রতিষ্ঠাতা ফিলো এবং ইয়াং, সানের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাকনিলি, বিনোদ খোসলা - এরা সবাই স্ট্যানফোর্ডে পড়ার সময়ে বা পাস করেই নিজেদের কোম্পানিগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর সেই কারণেই পালো আল্টো বা মাউন্টেইন ভিউতে এই সব কোম্পানির সদর দপ্তর গড়ে উঠেছে।

auto
ফিরে আসি গুগলপ্লেক্সের কথায়। গুগলের শুরুটা হয়েছিলো ব্রিন ও পেইজের এক বন্ধুর গ্যারেজে, মাত্র কয়েকটি কম্পিউটার নিয়ে। মেনলো পার্কের ঐ গ্যারেজে পরে গুগল চলে আসে পালো আল্টো শহরে। কিন্তু গুগলের অভাবনীয় সাফল্যের কারণে জায়গার দরকার বাড়তে থাকে অচিরেই। তাই ২০০৩ সাল এক কালের নামকরা কোম্পানি সিলিকন গ্রাফিক্সের ১৬০০ অ্যাম্ফিথিয়েটার পার্কওয়েতে অবস্থিত বিশাল হেড কোয়ার্টারটি গুগল ভাড়া নেয়। এখানে রয়েছে চারটি ভবন - বিল্ডিং ৪০, ৪১, ৪২, এবং ৪৩। আগেই বলেছিলাম, এই চারটি ভবনের মাঝখানের চত্ত্বরের বিশাল ডাইনোসরটির কথা। এছাড়াও মাঝখানের চত্ত্বরে রয়েছে একটি ভলিবল কোর্ট। সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে কেউ না কেউ খেলে বেড়াচ্ছে ... দেখলে মনে হবে অফিস নয়, বরং একটা হোটেলের খেলার কোর্ট। অনেকের কাছে শুনেছি, বিকেলের দিকে সের্গেই ব্রিন বা পেইজও নাকি যোগ দেয় খেলাতে। আমার অফিসটা অবশ্য একটু অন্যপাশে থাকায় সেই দৃশ্য দেখিনি।
auto

এর পাশেই ক্যাফের চত্ত্বর। গুগলের সুবিখ্যাত খাওয়া দাওয়া নিয়ে পরে লিখবো। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সেরা সব রেস্তোঁরার খাওয়াকেই গুগলের ক্যাফেগুলো হার মানায়। মোট ক্যাফের সংখ্যা এখানে ১৫টি। একেক ক্যাফে একেক রকমের - প্রধান ক্যাফেটা গুগলপ্লেক্সের বিল্ডিং ৪০এর চার্লিজ ক্যাফে। ওখানে এক সাথে প্রায় কয়েক হাজার লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় প্রতিদিন।

auto
আমাদের ওরিয়েন্টেশন হয়েছিলো বিল্ডিং ৪৩ আর ৪২ এর বিশাল অডিটোরিয়ামে। প্রথম দিনের সব কাজ কর্ম শেষে পুরো গুগলপ্লেক্স ঘুরে দেখানো হলো। প্রতিটি তলাতেই একটু পর পর মাইক্রো কিচেন আছে, যাতে থরে থরে সাজানো আছে নানা রকম ফলের রস, চিপ্স, আইসক্রিম, ডাবের পানি, চকলেট, স্যান্ডউইচ থেকে শুরু করে কতো কি!! এই ব্যাপারে নাকি সের্গেই ব্রিনের একটা নীতি আছে, "কোনো মানুষকেই খাবার দাবারের থেকে দেড়শো ফুটের বেশি দূরে রাখা ঠিক না"। কাজ করতে করতে একটু খিদে পেলেই দূরে যাবার দরকার নেই, অফিস থেকে দুই পা হাঁটলেই একটা মাইক্রোকিচেন, আর সেখানে এরকম জিভে জল আনা সব খাবার।

auto
গুগলপ্লেক্সের চারটি ভবন ছাড়াও এই এলাকাতেই কেবল গুগলের অফিস রয়েছে মোট ১৬টি। এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত প্রায় ২ মাইল দূরত্ব। আমার অফিসটি পড়েছিলো পশ্চিম পাশে। অবশ্য এক অফিস থেকে আরেক অফিসে যাবার জন্য অনেক ব্যবস্থা আছে। পুরো ক্যাম্পাসের প্রতিটি ভবনের সামনেই রয়েছে গুগলের মনোগ্রাম লাগানো বাই সাইকেল বা জি-বাইক। যে কেউ যে কোনো জি-বাইক নিয়ে অন্য অফিসের সামনে গিয়ে পার্ক করে রাখে, পরে আবার সেটা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে। তালা মারার ব্যাপার নেই। এটা ছাড়াও রয়েছে ইলেকট্রিক স্কুটার, শাটল বাস, এবং দুই চাকার অদ্ভুত যান সেগওয়ে। কিন্তু সবকিছুকে হার মানায় মাকড়শার মতো আকৃতির কনফারেন্স বাইক। প্রথম যেদিন দেখলাম, অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মাকড়শার অনেক গুলো পায়ের মতো এই বাইকের সাতটি বসার জায়গা বৃত্তাকারে বসানো, কেন্দ্রের একটি বিন্দুতে যুক্ত। বসার সময় কেন্দ্রের দিকে মুখ করে সবাই বসে। প্রতিটি সিটের নীচে প্যাডেল রয়েছে। সবাই প্যাডেল চালালে এক অদ্ভুত উপায়ে সেটা এক সাথে যুক্ত করে বাইকটিকে চালায়। আটজনের মধ্যে একজনের হাতে স্টিয়ারিং থাকে, সে এটা কোনদিকে যাবে তা ঠিক করে। আর এই বাইকের নাম কেনো কনফারেন্স বাইক হলো? আসলে গুগলের প্রকৌশলীরা কনফারেন্স রুমে মিটিং না করে অনেক সময় এই বাইকে মজা করে চালাতে চালাতে মিটিং করে থাকে, এমনকি ল্যাপটপে করে ইন্টারনেটে যোগাযোগ, সবই করা সম্ভব এটাতে।

গুগলপ্লেক্সে মোট কাজ করে হাজার ছয়েক মানুষ। এদের অজস্র গাড়ি পার্ক করার জন্য যে পার্কিং লট রয়েছে, গুগল সেটাকেও অন্যভাবে কাজে লাগিয়েছে। গুগলপ্লেক্সের স্যাটেলাইট ছবিতেই দেখবেন, পুরো গুগলপ্লেক্সের উপরের ছাদ, এমন কি পার্কিং লটের অনেক অংশের ছাউনির উপরে সোলার প্যানেল বসানো। এই সোলার প্যানেলগুলো থেকে প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুত উৎপাদন করা হয় - দিনে গড়ে ২ মেগাওয়াটেরও বেশি। আর গুগলের নিজস্ব আরেকটা প্রজেক্ট হলো প্লাগ-ইন হাইব্রিডের গবেষণা, অর্থাৎ এমন গাড়ি বানানো, যা বাসার ইলেক্ট্রিক সকেটে প্লাগ ঢুকিয়ে চার্জ করে নেয়া যাবে।

থাক, আজ এতটুকুই, পরের পর্বে গুগলের বিখ্যাত খাবার দাবারের গল্প করা যাবে ...

(ছবিগুলো গুগলপ্লেক্স, আমার অফিসের বাইরের অংশ, গুগলপ্লেক্সের মধ্যকার ভলিবল কোর্ট - এই সব এলাকার)

[চলবে]


Comments

ইশতিয়াক রউফ's picture

কনফারেন্স বাইক জোগাড় করতে হচ্ছে একটা...!

নজমুল আলবাব's picture

এইটাও শেষ হাসি নতুনটা দেন, জলদি, বেচাইন হওয়ার আগেই দেন, পইড়া ফালাই...

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

দ্রোহী's picture

চলুক বর্ণনা। সাথে থাকবো।


কি মাঝি? ডরাইলা?

অদৃশ্য ভগবান's picture

সত্যি গুগুল সম্পর্কে কত কিছু জানার আছে ।
সব তো আর উইকিপিডিয়ায় পাওয়া যায় না .......
খুবই ভালো লাগছে । চলুক আরো অনেক পর্ব ।

নামহীন's picture

এইখানে বেশ কিছু ছবি পেলাম http://www.time.com/time/photoessays/2006/inside_google/1.html

এস এম মাহবুব মুর্শেদ's picture

ল্যারী পেইজের বিয়ের খবর পড়লাম সেদিন কোথায় যেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

রায়হান আবীর's picture

অসাধারণ অভিজ্ঞতা...
---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!

আবুল's picture

ছবি দেখতে পাচিছনা তো! ওঁয়া ওঁয়া

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.