বাস্তবতার অনেক রূপ থাকে তবে সবাই নিজস্ব বিবেচনায় বাস্তবতা স্ব ীকার করে নেয়। ব্যাক্তির অবস্থান নির্ভর এই বাস্তবতা অস্ব ীকার করার কোনো উপায় নেই এখন। শুধু মাত্র গুটি কয় মানুষের মর্জিমফিক চলে বাংলাদেশ এখন ব্যার্থ রাষ্ট্রের পরিচয়ও ধরে রাখতে পারছে না ।
বাংলাদেশকে যখন ব্যার্থ রাষ্ট্রের তকমা লাগানো হলো তখন আমার জাতিয়তাবোধ আক্রান্ত হয়েছিলো। প্রায় অসম্ভব হলেও আমি বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী ছিলাম, সেই আশাবাদের প্রদীপের সলতে এখন নিঃশেষ। আমার সংস্কার স্মৃতি পরিচয় ভাসা সব কিছুই এই একটা নামের সাথে জড়িত।বাংলাদেশ নিছক একটা সমস্যাসংকুল ভূখন্ড নয় আমার আত্মপরিচয়।
সামন্ততন্ত্র ঠিক মতো জাঁকিয়ে বসার আগেই ঔপনেবিশকটার ছোঁয়াচ পেয়েছি আমরা- আমাদের মানসিক গঠনের ধারাবাহিক স্বাভাবিক পরিবর্তনটা সম্পন্ন হয় নি বলেই আমাদের ভেতনার বিকলাঙ্গতা প্রকট।আমাদের চেতনা দাসত্বশৃংখলে বন্দি।
ব্যাক্তিস্বার্থজ্ঞান এখনও টনটনে বলেই আমরা কিছু অন্যায় মেনে নেই, কিছু অন্যায়ের সহযোগিতা করি, যদিও গনতন্ত্রের স্বাভাবিক ধারার বিরোধী এরপরও তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যাবস্থা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলো বাংলাদেশ।সংবিধান সংস্কার করে 1996 সালে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেকা তৈরি হয়েছিলো সেটা আসলে কাঁচের প্রাসাদ। তত্ত্ববধায়ক সরকার আসলে ঠুঁটে জগন্নাথ- মাটির দেবতা- কোন পরিবর্তন আনতে পারে না।
বরং দেশের 10টা নাগরিককে হেনেস্থা করার এক বিষম ফাঁদ এটা।অবস্থাদৃষ্টে এমনটাই মনে হচ্ছে।ব্যার্থ রাষ্ট্রের একটা গুন বা দোষ হলো এর আমলাতান্ত্রিক গঠন ভেঙে যাওয়া। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তাদের রাজনৈতিক মতনিরপেক্ষ হতে হয়- সরকারী উর্দি গায়ে চাপানোর পর তিনি প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিকের সেবক,সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সরকারী উর্দি খুলে ফেলে তিনি সাধারন নাগরিকের মতো নিজস্ব রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে ভাববেন তবে এমন কোনো পদক্ষেপ তিনি সচেতনভাবে নিবেন না যাতে তার পেশাগত সততা প্রশ্নের সামনে পড়ে। পেশাগত জীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে একটা বিভেদ প্রাচীর গড়ে তুলতে হয়।পেশাগত সততার প্রয়োজনে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য এটুকু তাকে করতেই হবে। আমরা জনগন তাদের ভরনপোষনের দায়িত্ব নিয়েছি, আমাদের সবার সেবার দায়িত্ব অর্পিত তাদের উপরে।
সরকারী আমলারাও মানুষ, চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী, আয়া, পিয়ন, অদার্লি,সবাই মানুষ,মানুষ বলেই তাদের রাজনৈতিক মতাদার্শ থাকবে।তবে পেশাগত সততা গুরুত্বপূর্ন একটা বিষয়।1996 এ সচিবালয় থেকে আমলারা বের হয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করলো এটা আমলাতন্ত্রের জন্য কোনো শোভন বিষয় হয় নি। তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ না করে বলি এটা তাদের পেশাগত সততার অবমাননা।
রাজনৈতিক বিদ্্বেষ চাপা থাকে নি, বি এন পি পন্থি বা জামাত পন্থি হিসেবে বিবেচিত সরকারী কর্মচারীরা অবহেলিত ছিলেন আওয়ামী আমলে এটা যেমন সত্য তেমনই সত্য বি এন পি আমলে আওয়ামী লীগ পন্থিরা নিষ্পেষিত হয়েছেন। এই আমলাতন্ত্রের সাথে রাজনৈতিক বিষম মিলনে আমাদের প্রশাসনিক নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বর্তমানে দলীয়করনের মাত্রা এত বেশী যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে 4 দলীয় জোটের কাছে সহায়তা পেয়েছে। নিজস্ব পছন্দ মতো আমলাতান্ত্রিক কাঠামোকে সাজিয়ে তোলা, কিংবা নিজস্ব মতবাদের অনুসারীদের সামনে নিয়ে আসা আমলাতন্ত্রকে ব্যার্থ করে দেয়। তবুও ক্ষমতার লোভে বিগত সরকার সচিবালয়ে এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছে যে এখন নিরপেক্ষ লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন।
নির্বাচন কমিশন এখন এত বেশী বিতর্কিত যে সেখানে যাওয়ার মতো কোনো আমলা এখন নেই। কেউই সে মন্ত্রনালয়ের অংশ হতে ইচ্ছুক নন। যদিও সবাই প্রশ্ন করছে একজন দলীয় ব্যাক্তি কিভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করবেন। নির্বাচন করবে ভোটাররা। তাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে নির্বাচিত হবে জন প্রতিনিধি তবে আমলাতান্ত্রিক গঠন এমন যে এই নির্বাচন কমিশন থেকে যে নির্দেশ যাবে তাই মাঠ পর্যায়ে অনুদিত হবে। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পন্থা সম্পর্কে এরশাদ, আওয়ামি লীগ কিংবা বি এন পি যথেষ্ঠ ওয়াকিবহাল। তাই বি এন পি সংবিধান সংবিধান বলে গলা ফাটাচ্ছে যেনো তাদের সাজানো ব্যাবস্থায় বিন্দুমাত্র পরিবর্তন না আসে। নির্বাচন তফশীল ঘোষনার মতো একটা অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত সচিবালয় নিয়েছে, অবশ্যই ইয়াজ্জুদ্দিনের মতামত নিয়েই। তবে যখন দেশ ব্যাপী অধিকাংশ দলই এই সময়ে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের আন্দোলন করছে, যখন ভোটার তালিকা সংশোধনের কথা বলছে, তখন তাদের দাবীর বিপরীতে গিয়ে এই তফশীল ঘোষনার আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিলো না। এটা টার ভূমিকাকে আরও বিতর্কিত করেছে।
আমাদের আমলাতন্ত্র ক্রমশ ব্যার্থ হয়ে যাচ্ছে এবং আমলা তন্ত্র রাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ন উপাদান। আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা, নাগরিক সুবিধাদি আমরা দিতে পারছি না। এভাবেই একটা রাষ্ট্র তার উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে। ব্যার্থ হয়ে যায়। লক্ষ্যবিচু্যত রাষ্ট্রকে যখন অন্য দেশের মন্ত্রনাদাতাদের মতামত নিয়ে কিছু করতে হয় তখন আমাদের স্বাধীন চিন্তা করবার ক্ষমতা এবং সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আমাদের নেতাদের বিদেশিদের পা চাটা এবং সাংবাদিকদের বাহবা পাওয়ার অতিআগ্রহ আমাদের নির্লজ্জ একটা জাতিসত্ত্বা বানিয়ে দেয়।
আমাদের অন্য একটা প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগ। সেটা এত নিম্মনামের সংস্কৃতি ধারন করে আছে যে সেখানে এখন বিচারপতিদের দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে সব সময়ই বিচারসভা বসছে। আওয়ামিলীগের প্রতি স \হানূভুতিশীল বিচারকদের এজলাসে মামলা নিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামিপন্থিরা। তাদের আবেদন গৃহীত হচ্ছে। বিএনপি নিয়ে যাচ্ছে আদের অনুগতদের কাছে আবেদন, বি এন পি পন্থি বিচারকরা তাদের সপক্ষে রায় দিচ্ছে। ইয়াজ্জুদ্দিনের প্রধান তত্ত্বাবধায় উপদেষ্টা হওয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো সেটা গিয়েছিলো আওয়ামিপন্থি বিচারকদের কাছে। এটার ফলাফল নিশ্চিত ভাবেই আওয়ামিলীগের পক্ষে যেতো। অসচ্ছত্বা ছিলোই, ইয়াজুদ্দিনের প্রধান উপদেষ্টা হওয়াটা খুবই জঘন্য একটা আচরন হলেও এই অশতীপর বৃদ্ধ ঠিক কিসের টানে এই বয়েসে নিজের মান মর্যাদা নষ্ট করছেন দলীয় আচরন করছেন তা বোধগম্য না আমার। আমার কাছে মনে হয় ইয়াজুদ্দিন সকল অধ্যাপকদের মানসম্মান ভূলুণ্ঠিত করছেন।
প্রধান বিচারপতি ঠিক রায় ঘোষনার সময় এই মামলাকে স্থগিত করেছেন। তার যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছা থাকতো তিনি অনেক আগেই নিতে পারতেন। প্রায় 3 দিন সময় তিনি পেয়েছিলেন 2 দিন শুনানির পর রায় ঘোষনার আগে এমন বিশেষ ক্ষমতার অপব্যাবহার কেনো করলেন জানি না। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতপাড়ায় ভাঙচুর হলো। গাড়ী জ্বালানো হলো।যদিও সবাই নিশ্চিত কামাল হোসেন কিংবা রোকন কেউই প্রত্যক্ষ ভাবে এই কাজে জড়িত নন, কিংবা এই কাজের উস্কানি দিয়েছেন এমন বিশ্বাসও কারো নেই এর পরও তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্্রোহিতার মামলা হলো। বাংলাদেশে এখন পান থেকে চুন খসলেই লোকজন রাষ্ট্রদ্্রোহিতার মামলা করে বসে।
আমাদের বিচার বিভাগ কলুষিত হয়ে গিয়েছে। আগাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকারও নেই এখন।
আমাদের কোনো রাষ্ট্রিয় খাতেই এখন সম্ভবনার আলো নেই। এর প্রেক্ষিতে এখন যখন এক বন্ধু আমাকে বললো বাংলাদেশ আসলে ব্যার্থ রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছে তখন আমার তাকে দেওয়ার মতো জাতীয়তাবাদি চেতনাও সামনে আসলো না। লজ্জিত হয়ে মানতে বাধ্য হলাম আসলেই 35 বছরে যেই উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটা যাত্রা শুরু করেছিলো তার কোনোটাই পূরন করতে পারছে না আজ। আজ আমাদের রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্য ব্যার্থ হয়ে যাচ্ছে। আমরা আসলেই ব্যার্থ অসফল একটা রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছি।
Comments
Post new comment