আকাশ কুসুম

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Fri, 20/02/2015 - 7:23pm
Categories:

এই যে আমাদের কথা হচ্ছে না। তুমি ভেবে নিও না, তুমি নেই!

রিকশার উপরে সরু সিটটার উপরে উঠে বসেছো কখনো? কিংবা এক কাত হয়ে অনেকক্ষন ঘুমানোর পরে অবশ হাতটা?

রিকশায় বসে থাকতে থাকতে এই পা অবশ হয়ে যাওয়ার সাথে আমি বেশ পরিচিত। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। তিনজন মিলে যখন রিকশায় উঠতে হয়, তখন কোনো এক কারণে আমিই উপরে বসি। প্রথমে সব কিছুই স্বাভাবিক থাকে। কিছু সময় পরে, আস্তে আস্তে হঠাৎ করে বুঝতে পারি আমার পা’য়ের আঙুলে কোনো অনুভূতি পাচ্ছি না। পা’য়ে জুতো আছে কি নাই তার ও কোনো অনুভূতি নেই। খুলে যদি পড়েও যায় কিছুই বলতে পারবো না। যেন এটা দেহের কোনো অংশই না। থেকেও নেই। নড়ে চড়ে বসি। কোন লাভ হয় না। বরং দু'পায়ের ফাঁকে বসে থাকা বন্ধু বিরক্ত হয়।

অয়ন নিচে বসে ডাক্তারী কপচালো, “দোস্ত তোর ফিমোরাল আর্টারি ব্লক হয়ে গেছে, নামলেই সব ঠিক হয়ে যাবে”।

এই যে তোমার সাথে আমার কথা হচ্ছে না। আমার ঠিক সেই অনুভবটাই হচ্ছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ যেন আমার শরীরের কোন একটা নির্দিষ্ট অংশের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে রেখেছে। ব্যথা নেই। আমি জানি তুমি আছো, তবু তোমার অস্তিত্ব টের পাচ্ছি না। কেমন একটা ভোঁতা অনুভূতি। অ্যা স্ট্রেন্জ নাম্বনেস।

ফিমোরাল আর্টারি’র মায়রে বাপ!

আমি অপেক্ষা করতে থাকি কখন রিকশাটা তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছবে। কখন আবার রক্ত সঞ্চালন শুরু হবে। রিকশাওয়ালার তিনজন জোয়ান ছেলে কে টানতে ঘাম ঝরে যাচ্ছে। রাস্তার জ্যাম কে অসহ্য মনে হয়। মনে হয় নেমে পড়ি। জুতোটা নিয়ে টেনশন বাড়ে। খুলে যদি পড়ে যায়! এক পায়ে স্যান্ডাল পড়েই হাঁটতে হবে মনে হচ্ছে আজকে। আচ্ছা, এতক্ষন ধরে রক্ত চলাচল বন্ধ, পার্মানেন্ট ড্যামেজ হয়ে যাবে না তো? আর কখনো হাঁটতে পারবো!? অস্বাভাবিক কথাবার্তা মাথায় আসতে থাকে।

আমার জীবনটা রিকশার মতো চলছে। আমি অপেক্ষা করতে থাকি কখন আমি সত্যি সত্যি নিজের পা’য়ে দাড়াবো। কখন তোমাকে বলতে পারবো আর ভয় নেই, চলে এসো। এখন তো চলে এসো? আর আমাদের কথা বন্ধ করে থাকতে হবে না। এখন ভালোবাসো বলতে বাঁধা নেই আর! তোমার কথা আমার শরীরের রক্তের প্রবাহের মতোই। অসহ্য মনে হয় এই অসহায়ত্ব।

আমি অপেক্ষায় থাকি। কোন একসময় হুট করে এসে বলবে, "নামো তো রিকশা থেকে! কেমন কুৎসিত ভাবে রিকশার সিটটার উপর বসে আছো! এক্ষুনি নামো!! আসো। হাঁটো আমার সাথে"।

নেমে পড়েছি। ধীরে ধীরে রক্ত সঞ্চালন শুরু হচ্ছে বুঝতে পারছি। ঝিনঝিন করছে পা। জানি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
তোমার সাথে হাঁটতে হাঁটতে।

-অপ্রকৃতিস্থ


Comments

অতিথি লেখক's picture

আহা রে! আপনার জায়গায় আমি হলে জুতোটা খুলে বসতাম চোখ টিপি । লেখাটা সুন্দর। আপনার পা ঠিক হয়ে যাক তার সাথে হাঁটতে হাঁটতে। শুভকামনা।

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক's picture

কিছুক্ষনের জন্য ভাবছিলাম জুতোটা খুলে বসতেন কি অপ্রকৃতিস্থ কে মারার জন্য কিনা! খাইছে যাক! সেইটা না! অসংখ্য ধন্যবাদ দেবদ্যুতি! আপনার দ্যুতি ছড়িয়ে যাক সবখানে। শুভকামনা।

অপ্রকৃতিস্থ

অতিথি লেখক's picture

কী যে বলেন না! আসলে রিকশার ঐ জায়গাটায় বসলে আমার পা এতই অবশ হয়ে যায় যে আগে থাকতে জুতো সাবধানে রাখা আর কী। মানে পা’টা যখন বশে ফিরবে তখন যেন খালি পায়ে হাঁটতে না হয় চোখ টিপি শুভকামনার জন্য এত্তগুলো আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক's picture

ভাল লাগলো।

স্বয়ম

অতিথি লেখক's picture

ধন্যবাদ স্বয়ম।

- অপ্রকৃতিস্থ

অতিথি লেখক's picture

"কোন একসময় হুট করে এসে বলবে, "নামো তো রিকশা থেকে!"........

তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম। দারুন হয়েছে ।

-----------
রাধাকান্ত

অতিথি লেখক's picture

আশায় আছি। বললেই নেমে যাবো একদিন হাসি

-অপ্রকৃতিস্থ

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.