মিশন নাগাল্যান্ড, মিশন কামাখ্যা- ২,৩ ও ৪

তারেক অণু's picture
Submitted by tareqanu on Sun, 07/12/2014 - 8:51pm
Categories:

10849968_10154878574780497_4407182491609884413_n

অসাধারণ শহর শিলং, বেশ ছড়ানো এক উপত্যকায়, যেমন সবুজ তেমন পরিষ্কার। কিন্তু মুস্কিল করলো ইন্টারনেট, হোটেলের লবিতে তা মাঝে মাঝে ভালই কাজ করে, কিন্তু রুমে করে না ! এবং হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় এই লবিতেও যখন অপেক্ষা করেও নেট কাজ করে না তখন শাপ-শাপান্ত করা ছাড়া আর গতি ছিল না, ফলে গত ৩ দিনের ঘটনা খুব অল্প করে লিখেছি প্রতিদিন, কিন্তু পোস্ট করতে পারলাম আজকে, আসামের কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের কাছে অবস্থিত এক সাইবার ক্যাফে থেকে।

৫ ডিসেম্বর সকালেই সবাই চললাম উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় বাজার লেদুহ বাজারে, এইটা মূলত খাসিয়া জাতিদের একটা কাঁচাবাজার এবং অধিকাংশ দোকানীই মহিলা! ভিড়ে ভিড়ারণ্য! সেখানে হাঁস-মুরগি থেকে শুরু করে লোহা-লক্কড় সবই হাজির, তবে বেশি ভালো লাগল উজ্জলরঙা সব শাক সবজি, আর তার চেয়েও বেশি ভালো লাগলো হাজার হাজার লোকের এই বাজারে ঘণ্টাখানেক থেকে অনেক বার লোকজনের ধাক্কা খেয়েও একটি বারের জন্যও আমরা কেউই কোন রকম অশালীন খিস্তি বা কটু কথা শুনি নাই, তারা কেবল খুব কাছে আসলে হিস হিস ধরনের শব্দ করে সাইড দিতে বলে।

সেখান থেকে রওনা দেওয়া হল চেরাপ্নুঞ্জির পথে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত যেখানে হয় বলে শুনে আসছি শিশুকাল থেকে! মাঝে শিলং ভিউ পয়েন্টে থেমে দেখা হল পাহাড়ি শহরটি। পথে থামা হল এলিফেন্ট জলপ্রপাত এবং ওয়াকাবা জলপ্রপাতে, বিশেষ করে ওয়াকাবা মনে করিয়ে দেয় ভেনিজুয়েলার লস্ট ওয়ার্ল্ড মাউন্ট রোরাইমার কথা, একবারে ভিনগ্রহের পাহাড়, বন, প্রপাত যেন!

10847970_10154878531950497_3287462163973940588_n

একটা ধাবাতে মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে সূর্য ডুবে যাচ্ছে এই সময় সকলে মিলে প্রবেশ করলাম আরোয়া গুহাতে, সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা এই আঁধার গুহাতে কোথাও দাঁড়িয়ে , কোথাও হামাগুড়ি দিয়ে অপূর্ব সব ফসিল, স্ট্যালাকটাইট¸ স্ট্যালাকমাইট দেখে যখন বের হলাম তখন আকাশে এত্ত বড় একটা চাঁদ!

10846107_10154878538715497_8651153500765152823_n

1781269_10154878582365497_4758204586926581088_o

সময় চেরাপুঞ্জির কনিফার রিসোর্টে যাবার, সেখানে ততক্ষণে এসে হাজির হয়েছে আমাদের দলের শেষ দুই সদস্য তন্ময় দা এবং তুহিন। এতদিনে পূর্ণতা পেল আমাদের টিম নাগা।।

10481922_10154878923480497_1302716260474250346_n

৬ ডিসেম্বর

সকালেই নাস্তার পরপরই যাওয়া হল সদলবলে সেভেন সিস্টার জলপ্রপাতে, যদিও এই মুহূর্তে সেখানে জল বেশি না থাকায় পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করা গেল না। কিন্তু বিশ্বের ৪র্থ উচ্চতম নোকালিকাই জলপ্রপাত অনেকখানি পুষিয়ে দিল সেই আফসোস তার বিশালত্ব দিয়ে।

10647138_10154878544040497_3182014705908287618_n

মাউসমাই গুহাতে যাওয়া হল এর পরে, সবাই মিলে অবাক বিস্ময়ে গুহার আঁধারে সেধিয়ে অপূর্ব সব পাথর দেখে নানা সুড়ঙ্গ পেরিয়ে কাটানো হল এক ঘণ্টা। এই গুহার সাথে সাথে এলাকা সংলগ্ন বনটিও পবিত্র।

ফেরার পথে খাসিয়া জাতির কমলা বাজারে, যা কিনা সপ্তাহে মাত্র একদিনই বসে! রঙ ঝলমলে সেই অসাধারণ বাজার, কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা সুর ভাজতে ভাজতে ঘুরে বেড়ালাম সারা বাজার, সবার অবাক দৃষ্টির সামনে!

10846463_10154878534180497_7458703156547104414_n

যাওয়া হল একটা খাসিয়া গ্রাম আর জীবন্ত, অনন্য অসাধারণ মফলং পবিত্র বনে। বনটি গত কয়েকশ বছর ধরে খাসিয়া জাতিদের কাছের পবিত্র, এখানে আছে ৩৫০ ধরনের উদ্ভিদ যেখানে প্রায় ২৫০ জাতের অর্কিড, ১৬২ জাতের পাখি, এমনকি আবিষ্কৃত হয়েছে নতুন জাতের সরীসৃপ। বারবার মনে হলে লর্ড অফ দ্য রিংগস এর ফ্যাংগর্ণ বনে চলে এসেছি আমার পথ ভুলে, সবুজ মসে ভরে আছে প্রতিটা গাছের গুড়ি, ঝরা পাতার স্তুপে ডুবে যায় পা।

10801794_10154878848530497_8197038190062487069_n

10424309_10154878563175497_8649165894972921209_n

সেদিন আরও যাওয়া হল মওসিনরামে, মওসিনরাম এর নাম শুনেছেন কি আগে? আসলে চেরাপুঞ্জি নয়, মওসিনরাম গত ১০ বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ডের অধিকারী স্থান। এবং সেখানের সবচেয়ে বড় গ্রামে প্রবেশের সময় মেঘের ডানায় ভর করে এল বৃষ্টিকুমারী! আহা কী অপূর্ব লাগল দূর দিগন্তে ধুলার মত বৃষ্টি পড়তে দেখে! আর পবিত্র গুহাতে শিব ল্লিং মনে করা স্ট্যালাকটাইট¸ স্ট্যালাকমাইট আর প্রায় কলাম বা স্তম্ভ দেখে !

10850263_10154878588985497_2732933797621655656_n

আবার ফেরা হল শিলং শহরে।
৭ ডিসেম্বর

আজ সকালে যাত্রা শুরুর পর একটানা গাড়ী চালিয়ে মেঘালয় ছাড়িয়ে আসামে প্রবেশ করতে হয়ে গেল দুপুর, আর কাজিরাঙ্গা আসতে আসতে পুরোই সন্ধ্যা! পথে এক জায়গায় কয়েকটা হরিণ দেখে থামা হল তাদের হ্যালো বলতে, এছাড়াও দেখা হল শামখোল আর রাজহাঁসদের সাথে। এখন পরিকল্পনা হয়েছে আগামীকাল ভোর সাড়ে চারটায় যাত্রা শুরু হবে বিশ্বখ্যাত কাজিরাঙ্গা বনে, হাতির পিঠে চেপে! আশা রাখি দেখা হবে এশিয়ান এক শৃঙ্গ গণ্ডারদের সাথে, অসাধারণ পাখি বেঙ্গল ফ্লোরিকান (বাংলা ডাহর)দের সাথে, হয়ত গর্জন শুনবো রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও!

16403_10154878513915497_7586529842416696250_n

এখন আমরা আছি প্রায় পূর্ণিমার চাদকে সঙ্গী করে ফ্লোরিকান গেস্ট হাউজে আমরা! এক সাইবার ক্যাফেতে বসে লিখছি এখন, দেখা যাক পরের বার নেট কবে পাই আবার--

আগের পর্ব


Comments

স্যাম's picture

দলে নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে! উনারা কি স্থানীয়? চোখ টিপি

মেঘলা মানুষ's picture

কি আর করা! আপনি যখন কষ্ট করে ঘুরছেনই, আমরাও আপনার সাথে সাথে ঘুরি দেঁতো হাসি

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.