নিজামী জেলে গেলে কি হয় ?

এনকিদু's picture
Submitted by enkidu on Tue, 20/05/2008 - 12:47am
Categories:

গত সরকারের আমলে একমুখী শিক্ষা নামক একটা ব্যবস্থার কথা উঠেছিল । সেবার কিছু লোকজন সময়মত এর বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করলে জিনিসটা থেমে যায়। খবরের কাগজে মোটামুটি জীববিজ্ঞানে ব্যাং এর পেট কেটে পাকস্থলী পর্যবেক্ষনের মত তার পেট কেটে দেখার মত বিশ্লেষন হয়েছিল । পেট কেটে দেখার মত ছিল অনেক কিছুই, তবে কোনটাই সুবিধার কথা ছিলনা । আমি নিজে বিজ্ঞানের ছাত্র বলেই বিজ্ঞান শিক্ষার যেই ক্ষতি করা হচ্ছিল সেটা আমার চোখে পড়েছে । আমার বিশ্বাস বানিয্য ও কলা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারাও বলবেন বানিজ্য আর কলা শিক্ষারও বারোটা বাজিয়ে দেয়া হয়েছে । যতদূর মনে পড়ে, মূল কথা গুলো ছিল অনেকটা এরকম :-

১০ম শ্রেনী পর্যন্ত বিজ্ঞান,বানিজ্য,কলা তিনটি বিভাগ থাকবে না । সবাই একই জিনিস পড়তে হবে । এই 'একই' জিনিস গুলোর মধ্যে রয়েছে ১০০ নম্বরের ধর্ম, ১০০ নম্বরের সাধারন বিজ্ঞান সেই সাথে বাংলা ইংরেজি ইত্যাদি বিষয় ।

মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকে ১২ বছরে যা কিছু শিখেছি সেই বিদ্যার উপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখি, বিশ্বের অন্য দেশের একজন ছাত্রের তুলনায় আমি নিতান্ত এক অর্বাচীন বালক । জ্ঞান বিজ্ঞানের কিছুই জানি না । তখন আফসোস করি কেন আমাদের মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম এত অপ্রতুল হল । এই অবস্থায় একমুখী শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান কেটে ১০০ নম্বর করে কার কি লাভ হত আমি জানি না, কিন্তু সেসময়ের শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক বলেছিলেন এটাই নাকি আধুনিক বিশ্বের চল । বিশ্বের বেশ কিছু দেশের নাম শুনিয়ে দিয়ে বলেছিলেন ঐসব দেশে এমনটাই চলে । সেসময় লেখাপড়া, গবেষনা ইত্যাদি সূত্রে ঐসমস্ত উন্নত দেশের কিছু দেশের ছেলেপেলেদের সাথে আমার খাতির ছিল । তাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানলাম এগুলো সব গাঁজাখুরি কথা । এখনই কেউ আবার শিক্ষামন্ত্রীকে মিথ্যেবাদী বলে মনে করে বসবেননা যেন । উনি কিন্তু একজন শিক্ষাবিদ । উনি যা বলেছেন সঠিক হতেও তো পারে । আমাদের দেশেও তো মাদ্রাসা আছে, সেখানে তো শুন্য নম্মবরের বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয় । হয়ত জনাব শিক্ষাবিদ আল্লাহর দুনিয়ায় এরকম কোন rare specimen নিয়ে গবেষনা করেছিলেন কোনকালে, সেই সূত্রে এই সিলেবাস ।

আচ্ছা নাহয় মানলাম বেশি বিজ্ঞান শিক্ষার দরকার নেই । কিন্তু ধর্ম শিক্ষাকে এর মধ্যে ঢুকানর যুক্তিটা কি ? এর জবাব হল আধুনিক বিশ্বে মানুষের বিবেকবোধ ও মানবিক গুনাবলি কমে যাচ্ছে, তাই ধর্ম শিক্ষা দরকার । কথাটা খারাপ না, কিন্তু আমাদের ইশকুল গুলা তে কোণ অশ্বডিম্ব ধর্ম শিখায় তা তো সবাই জানেন । কোটেশন না লিখলে নাম্বার নাই ।

কেউ চাইলে বলতে পারেন, স্কুলগুলো তো আসলে ধর্মশিক্ষার সঠিক স্থান নয়, 'জেনুইন' ধর্মশিক্ষা হয় মাদ্রাসাতে । এই যুক্তিতেই মনে হয় এখনো আমাদের দেশে একদল লোক সন্তানকে স্কুলে না পড়িয়ে মাদ্রাসায় পড়তে পাঠান । আজকাল মাদ্রাসার শিক্ষার যেই নমুনা দেখি, তাই যদি জেনুইন ধর্ম শিক্ষা হয় তাহলে আর রাখঢাক করে শিখার কী দরকার । চলেন সবাই ক্ষত্রিয় হয়ে যাই । দেশের পাড়ায় পাড়ায় একটা করে মিলিটারি একাডেমি খুলে সবাই যুদ্ধ-বিগ্রহের কলাকৌশল রপ্ত করি । সবাই যুদ্ধবিদ্যা রপ্ত করতে পারলে তাও একটা কাজের কাজ হত । অন্তত জাতি কিছু বীর যোদ্ধা পেত । প্রকৃত যোদ্ধা আদর্শবান আর ন্যায়পরায়ন হন । কিন্তু তার বদলে তৈরী হচ্ছে একদল নীচ অপরাধী । এরা আবার এটাকে 'ধর্ম' বলে চালিয়ে দিচ্ছে ।

যাহোক সেবার অনেক হৈচৈ করে একমুখীকে ঠেকান গেল । কিন্তু তার কিছুদিন পরেই আরেক কাহিনী - শিক্ষামন্ত্রনালয় কোন রকম আগাম ঘোষনা ছাড়াই ফাজিল নাকি কামিল কোন একটা ডিগ্রীকে মাস্টার্সের সমকক্ষ হিসেবে ঘোষনা করে বসল । আমি নিজে ফাজিল কামিল বা মাস্টার্স কোনটাই করিনি, তাই বেশি কথা বলব না । শুধু এইটুক বলে রাখি, আমার কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাইও একজন ফাজিল কামিল ডিগ্রীধারীর থেকে দশ গুন বেশি জানে । মাদ্রাসার প্রডাক্টদেরকে টেনে তুলার জন্য একটা মই দেয়া হল আর কি ।

আরো একটা সমস্যার কথা - মাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তির নতুন নিয়ম । সবাই মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ক্রম অনুযায়ী কলেজে ভর্তি হবে । তাহলে ছাত্রদের উপর ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অহেতুক চাপ কমবে । বেশ তো । কিন্তু সবাই যে জিপিএ ৫ পেয়ে বসে আছে তার কি হবে ? এই পরিস্থিতিতে নিয়ম হল, ছাত্রদের বয়সের ক্রমানুসারে ভর্তিতে অগ্রাধিকার পাবে । যাদের বয়স বেশি তারা সুবিধা পেয়ে গেল । এই নিয়ম করা হল যেবছর সেবয়ার অনেল ভাল ভাল ছাত্র শুধুমাত্র এই ফালতু কথার গেরোতে আটকা পড়ে পছন্দমত কলেজে ভর্তি হতে পারল না । ভর্তি হওয়া তো দুরের কথা, কলেজে মৌখিক পরীক্ষাতেও যেতে পারেনি অনেকে ।

এসব বাইচলামি নিয়ম করলে জনাব ওসমান ফারুকদের কিছুই আসে যায়না । তারা বনেদি বংশের লোকজন । গোটা পরিবারের সবাই বিদেশে লেখাপড়া করেন । আমরা যারা ফকির-টকির আছি দেশে থাকি, পড়ি, কাজ করে খাই - এরকম একএকটা খামখেয়ালী নিয়মে আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে । এরকম ফকির গুলো বাঁচলেই কি আর মরলেই কি । সেখানে তাদেরকে অন্তত লেখাপড়া করতে দিচ্ছেন তারা এই তো বেশি । আর তাছাড়া এত লেখা পড়া করে কি হবে ? আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ঢুকব তখন তো তাদের ছাত্র সংগঠনেই আমাদের ভবিষ্যত । ঐ জায়গায় লেখাপড়া খুব একটা কাজে লাগে না ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে অনেক কিছু করেছে কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার যেই বারোটা বাজান হয়েছিল তাকে ঠিক করার দিকে নজর দেয়নি । স্কুলের বইতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঠিক করে দেয়া হয়েছে, ভাল কথা । কিন্তু এটা একমাত্র সমস্যা না, এর থেকেও সুদূরপ্রসারী অনেক সমস্যা আছে ।

নিজামী জেলে গেছে এই নিয়ে আনন্দ করছি অনেকেই । কিন্তু নিজামী জেলে গেল কি না গেল তাতে খুব অল্পই আসে যায় এটা মনে হয় বুঝে নেয়ার সময় এসেছে । কারন তারা যা যা ক্ষতি করে রেখে যাচ্ছে আর যেসব সুদূরপ্রসারী কাজ করে যাচ্ছে, দুই চারটা নিজামীকে গ্রেফতার করে তার কিছুই বদলাবে না । পারলে সবগুলোকে ধরে, একেবারে ছাগল দাড়িওয়ালা কাঠমোল্লা থেকে শুরু করু বুড়া হাবড়া গুলো পর্যন্ত সবাইকে 'সিস্টেম' করা লাগবে । সিস্টেম করা বলতে আমি তাদেরকে খাতির করে জেলে নিয়ে ট্যাক্সের পয়সায় খাওনোর কথা বলছি না । ওদের সাথে পেরে উঠতে হলে ওদের মতই সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা আর কাজ করতে হবে ।

- এনকিদু


Comments

স্নিগ্ধা's picture

Quote:
স্কুলের বইতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঠিক করে দেয়া হয়েছে, ভাল কথা । কিন্তু এটা একমাত্র সমস্যা না, এর থেকেও সুদূরপ্রসারী অনেক সমস্যা আছে ।

কয়েকদিন আগে এক গবেষক বলছিলেন বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত একটা বিষয়ে জরিপ চালিয়ে তিনি রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছেন - মাদ্রাসা নাকি দু'ধরনের হয় একটাতে আরবীর সাথে সাথে কিছু কিছু অন্যান্য বিষয় বাংলায় পড়ানো হয়, আর অন্যটাতে ধর্ম ছাড়া সব বিষয়, সবকিছু, এমনকি অঙ্ক টঙ্কও পড়ানো হয় -
উর্দূতে !!!!

এবং যেহেতু ওই সব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের একদম ছোটবেলা থেকেই 'রিক্রুট' করা হয় তারা বাংলা বলতে পারে না - উর্দূ ছাড়া অন্য কোন ভাষায় তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব না।

স্থান - বাংলাদেশ, কাল - ২০০৮, পাত্র - কাকে বাদ দেব???

অতিথি লেখক's picture

এধরনের মাদ্রাসার কথা আগেও শুনেছি । আপনার পরিচিত গবেষক যেই মাদ্রাসার কথা বলেছেন, সেটা ঠিক কোন জায়গায় অবস্থিত জানেন কি ?

যশোরে এরকম মাদ্রাসা আছে আমি নিজে সেরকম মাদ্রাসার একটা লোকের সাথে একবার কথা বলেছিলাম । সে চাঁদা তুলতে এসেছিল আমাদের পাড়ায় ।

স্নিগ্ধা's picture

ঠিক একই প্রশ্ন আমিও করেছিলাম এই আশায় যে হয়তো শুনবো ওগুলো কোন 'বিশেষ' অঞ্চল কেন্দ্রিক। হায়রে, তা তো না - ওগুলো নাকি পুরো বাংলাদেশে ছড়ানো ছেটানো। এই একই গবেষক কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বেশ কয়েক বছর (বছর পনেরো হবে) আগেও জরিপ এবং গবেষণা করেছেন, কিন্তু এবার এই জিনিষ দেখে তিনি রীতিমত হতাশ এবং
ভীত !

অতিথি লেখক's picture

চালায় কারা ?

- এনকিদু

অতিথি লেখক's picture

ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মাদ্রাসার বিরোধিতা করছি না, যাদের ইচ্ছে হয় তারা সেখানে তাদের সন্তানদের পাঠাবেন। তাতে আমার কি?

আমার খারাপ লাগে যখন দেখি তথাকথিত মাদ্রাসার সমর্থনকারী নেতাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়াশুনা করছে। জামাত নেতা (বর্তমানে নিজামীর জেলে যাওয়ার পর ইনি ভারপ্রাপ্ত আমীর) মাওলানা ইউসুফের তিন ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে। তাদের শানশওকত দেখলে সাধারণ মানুষের চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। এদের কেউই মাদ্রাসার ধারেকাছেও যায়নি কোনদিন।

এই ভন্ডামীটাই খারাপ লাগে।

অতিথি লেখক's picture

দেশে কি কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠি আছে, যাদের নেতাদের এই দোষটা নেই ? আমার জানা মতে এরকম কোন নেতা বা দল নেই । তবে আমার জানার পরিসর অল্প ।

- এনকিদু

স্নিগ্ধা's picture

মাদ্রাসার ব্যাপারটা কিন্তু শুধু ভন্ডামীর সাথে সম্পর্কিত না, এটা একটা দীর্ঘসময় নিয়ে পরিকল্পিত স্ট্র্যাটেজী। সব নেতাই নিজের ছেলেমেয়েদের পারলেই বাইরে পাঠায় এবং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ নিজ দলের ক্যাডার তৈরী করে। আর মাদ্রাসাগুলোয় যারা পড়তে আসে তাদের এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা হয়, এবং এককালীন না এটা করেই যাওয়া হয়। অর্থাৎ মাদ্রাসায় পড়াটা যারা পড়ে তাদের জন্য একধরনের lifelong career এ পরিণত হয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা কতোখানি আকর্ষণীয়, লোভনীয় একটা 'সুযোগ' ধারনা করতে পারেন?

আর সেকারণেই মাদ্রাসীদের আনুগত্যও থাকে প্রশ্নহীন।

আর সেকারণেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা টাকায় মাদ্রাসার সংখ্যাও যেমন নির্বিরোধে বাড়ছে তেমন 'রাজনৈতিক ইসলাম'ও মৌরসীপাট্টা গেড়ে বসেছে সবখানে।

দ্রোহী's picture

এককালে শিখেছিলাম "হুইস্কি খেয়ে মুতলে ব্র্যান্ডি বের হয়"

নিজামী, গোলাম আযমের মত রাজাকারেরা জেলে গেলে দেশপ্রেমিক হয়ে বের হয়।

আচোদা দেশের আচোদা মানুষ আমরা। কী বাল ছিঁড়তে পারবো? এতদিন কী বাল ছিঁড়েছি যে নতুন করে বাল ছিঁড়বো?


কি মাঝি? ডরাইলা?

সুজন চৌধুরী's picture

আসেন পাব্লিক্রে আঁটি বানতে উত্সাহ দেই তারা যেন ঐ বালাঁটি নিয়া টাওকা মইন উ-কে উপহার দেয় যাতে তার ও তার অধীনস্ত টাওকাদের বালাভাব দূর হয়। নাইলে পাব্লিকও তো ওগো বাল ছিড়তে পারবোনা।
তারপর এটা ১টা সাইক্লিক অডারে রূপ নিবো- বালের অবিনাশিতাবাদ সূত্র।


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

দ্রোহী's picture

হাঃ হাঃ।

"টেকো মাথায় গাঁথো বাল
নিজের মাথায় ভাঙো ডাল।"


কি মাঝি? ডরাইলা?

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.