শি ফাউন্ড হার ফ্রিডম ইন প্রিজন......

দৃশা's picture
Submitted by drisha on Thu, 09/08/2007 - 12:35am
Categories:

[পূর্বে প্রকাশিত জগাখিচুড়ি]

আমি সবসময়ই ইজি কাজে বিজি মানুষ। তাই সবসময় অনেক কিছু করবো ভাবলেও কিছুই করা হয় না। আমার ব্যস্ত সময় কাটে অলসতায়, আমার জরুরী কাজ চলতে থাকে চিন্তার বিক্ষিপ্ততায়। আমি হইতো সেই রেস এর খরগোশ যে নিশ্চিত জয়কেও হারের দিকে ঠেলে দিতে পারে অসাবধানতায়, অলসতায়, অবহেলায়।
এমনি এক অলস সময়ে বিক্ষিপ্ত মনে দেখতে বসলাম "প্রোভকড"। অলসভাবেই গড়িয়ে যাচ্ছিলো সিনেমার কাহিনি......নতুন কি, আর ১০ টা মার খাওয়া পোড় খাওয়া মেয়েদের মতই আর এক নিপীড়িত নারীর রুগ্ন ভগ্ন জরাজীর্ন সাতকাহন। দেখতে দেখতে হঠাত মনে হল এই কাহিনিটা আমি জানি, কোথাও কি দেখেছি নাকি পড়েছি? দেজা-ভু !!! উহু সম্ভব না, তৎক্ষনাত মনে পড়লো কোথায় পড়েছিলাম। নিজ সার্থসিদ্ধির জন্যই পাঠ্যপুস্তকে এই কেসটার বেপারে পড়তে হয়েছিল। হঠাত সেই একই ঘটনার চিত্রায়ন দেখে প্রথমে বুঝতে পারিনি। একে একে মনে পড়ল সব ফেক্ট, প্রিন্সিপাল। সবই কেতাবি কিচ্ছা, যতটুকু জানার দরকার ছিল পরীক্ষায় উতরিয়ে যাবার জন্য...কিছুটা জেনেছিলাম নিজের ইচ্ছায় আর কিছুটা বাধ্য হয়ে। কিন্তু কি বুঝতে পেরেছিলাম এর ভেতরের ভয়াবহতা?এমন কিরাঞ্জিত আলোওয়ালিয়ার মত কত কত কেস আছে দেশে বিদেশে। এরমধ্যে কতগুলো লাইম লাইটে আসার সুযোগ পায় আর বেশিরভাগই ধামাচাপা পরে যায় অবহেলার গোপন স্নায়ু কুঠিরে। আমরা তো দূরের কথা একটা সময় এমন আসে যখন যে নির্যাতনের শিকার সে নিজেও ভুলে যায় তার নির্যাতনের ইতিকথা।
কিরঞ্জিত নিশ্চিত যাবতজীবন কারাদন্ডের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন ৩ টা গ্রাউন্ডে-
১। প্রোভকেশন
২।বেটার্ড ওমেন'স সিনড্রম
৩। ডিমিনিস রেস্পন্সিবিলিটি
শুধুই কি এই ৩ টা জিনিস ই যথেষ্ট ছিল? কিতাবি ভাষায় বললে বলা যায় এই বেশী। কিন্তু আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের বিক্ষিপ্ত নিউরোনগুলোর উলটো পালটা সঞ্চারণের ফলে কেন জানি মনে হল এটাই বেশী না...এরজন্য চাই জাগরন। মনের,বিবেকের, অধিকারের জাগরন । আমাদের দেশে বেশ অনেকগুলো সংস্থা আছে...নারীমুক্তি,নারী জাগরন ব্লা ব্লা ব্লা... কিন্তু কই খুব কি বেশী লাভ হচ্ছে? মনেতো হয় না। কারন যার মাঝে এই জাগরন আশা প্রয়োজন সেইতো নিশ্চুপ। অনেকেই বলে থাকেন অশিক্ষিত নারীদের মধ্যেই নিপীড়িতাদের সংখ্যা বেশী। নিজ চোখে না দেখলে হইত তাই ধরে নিতাম। কি শিক্ষিত আর কি অশিক্ষিত যেসব নারীদের নিজ অধিকারবোধ সম্পর্কে কোন সচতনতা নেই , যারা নিজেদের মূল্যায়নই করতে জানে না তাদের কাছে শিক্ষার মূল্যটুকুই বা কতখানি। মেয়ে এইটুকুন কি বুঝতে পারনা নিজেকে মুক্তি তুমি নিজেই দিতে পারো, কোন নারী মুক্তি সংস্থা তোমায় তোমার মুক্তি এনে দিতে পারবে না শতবর্ষের একঘেয়ে কলুষিত জরাজীর্ন গতিধারা থেকে।
মনের মাঝে অনেক কথায় অগোছালভাবে এখানে ওখানে জমে আছে...লিখতে ইচ্ছে করছে আবার আলসেমিও লাগছে, আবার মনে হচ্ছে লিখে কি লাভ? ১০০ লোকজনের মধ্যে হয়তো ১০ জন এটা পড়বে......এর মাঝে ৭ জন পরে বিরক্ত হবে এতো বড় পোস্ট দেখে, ২ জন পড়ে বলবে এমন বহু লেখা পড়েছি এর থেকে ঢের ভাল, হয়তো একজন একটা মন্তব্য করবে।যাদের কথা ভেবে লিখলাম তাদের কেউই এই লেখাটা পড়বে না কারন তাদের ওতো বেহুদা সময় কোথায় এমন এলেবেলে লেখকের আপঝাপ লেখা পড়বার, ওদের যে নির্যাতিত হওয়ার ঢের বাকী। তাহলে লিখলাম কেন? হয়তো নিজেকে শান্তনা দেওয়ার এ এক হাস্যকর চেষ্টা।
এরপরও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে "চুপ করে থেকো না, এই পৃথিবী অদ্ভুত রকমের রুঢ় জায়গা...এখানে নিজের জায়গা নিজের আদায় করে নিতে হয়...নিজেকে মুক্ত করো...প্রান থেকে নয় ,দুমড়ে মুচড়ে পরে থাকা ওই অবহেলিত অস্পৃশ্য আত্মা থেকে...নিজেকে দাও নিজের নুতন পরিচয়"
অনেকেই হইত প্রোভকড মুভিটা অথবা বইটা পরেছেন । কিরঞ্জিত আলোওলিয়া একজায়গায় বলেছেন-

"The most important message I would like to give is, be strong, be positive, never suffer in silence. Life is a struggle and I have struggled for long but I have worked hard and achieved everything. If I can, why can't you do? You are no different than me. Tomorrow will be better than today."


Comments

শোহেইল মতাহির চৌধুরী's picture

না লিখলে মানুষ পড়বে কি করে।
লিখে লিখে নিজের লেখাকেই পৃথিবীর একমাত্র লেখা বানিয়ে দিতে হবে। যাতে লোকে আর কোনো লেখা খুঁজে না পায়। রবীঠাকুরের মত। আমরা যেমন রবীঠাকুরের সময়ের আর কোনো লেখকের নাম জানি না।
না লিখলে আমরা পড়তে পাবো কই?

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসান মোরশেদ's picture

Quote:
Tomorrow will be better than today.

All the best!

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

থার্ড আই's picture

ভবিষ্যত ভালো হবে এই আশায় বুক বাধঁলে সব সময় বর্তমানটা খারাপ যাবে,প্রকারান্তরে সারা জীবনই ব্যর্থতার গ্নানি নিয়ে থাকতে হবে। প্রতিদিনই ভালো দিনের টার্গেট হওয়া উচিত নয়কি?
----------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

দিগন্ত's picture

থার্ড আই, আমি একমত ... আশায় বাঁচে চাষা [ঃ)]।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দৃশা's picture

হাসান ভাই আমি মুভির মেকিং নিয়ে একদমই বদার্ড না...আপবে ডিরেক্টর মানুষ ওইটা আপনে দেখবেন... আমার কন্সার্ন স্টোরি নিয়ে...রং চং মাখায়ে খোলস বদলান যায় তবে ফেক্ট না...
আর ফেক্ট হল - গল্প হোক, মুভি হোক কিংবা বাস্তবের কিরঞ্জিতই হোক এরা সবাই নির্মম ভাবে নির্যাতিত হয়েছিল।

শোমচৌ দা এইটা অনেক পুরাইন্না কাসুন্দি.. তয় এখন থেইক্কা আপ ঝাপ অখাদ্য কুখাদ্য সবই উদ্গীরন করতে থাকুম...যদি না পড়ছেন তো টেরেম টেরেম যুদ্ধ হবে......কইলাম...

মোরশেদ ভাইজান শুকরিয়া...কেমন আছেন?

থার্ড আই - বর্তমানে করা কর্মকান্ডই ভবিষ্যতকে বেটার করে...বেটার শব্দটাতো গায়েবি না যে হঠাত করে নাজিল হবেরে ভাই...আমাদের আজকের চিন্তার রিফ্লেক্সনই হল ভবিষ্যতের অবস্থান। এজন্যই বলা হল
Tomorrow will be better than today.
cause your present will make ur future better.কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
দিগন্ত আপনাকেও ধন্যবাদ

দৃশা

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

ঝরাপাতা's picture

দেখেছি প্রোভোকড। হাজার বছরের সংস্কার ভেঙ্গে, নিজের সাথে যুদ্ধ করে এক নারীর বিজয়ী হওয়ার ঘটনা।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

দৃশা's picture

ঝরাপাতা...হাজার বছরের সংস্কার নিয়ে এর আগেও ছবি হয়েছে পরেও হবে...পয়েন্ট করার মত দিক হল বিজয়ী হওয়ার দিকটা। এই স্টোরিটা থেকে যেন কিছু মানুষ হলেও কিছু শেখে।

দৃশা

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.