আমার ব্যর্থ লেখা {যে লেখার কোন পরিনতি হলো না }...

কর্ণজয়'s picture
Submitted by কর্ণজয় on Mon, 26/11/2007 - 3:24am
Categories:

আমার দিনকাল /
মানুষ স্মৃতির মধ্যেই বাচে।
আমি জানি লোকটা এরপরে কি বলবে। ঠোটের কোনে মোটা সিগারটা দাত দিয়ে কামড়াতে কামড়াতে লোকটা তার পুরনো ড্রয়ার হাতড়ে একটা ছবি খুজতে খুজতে আধঘন্টা কাটিয়ে দেবে ততন আমাকে ঠায় দাড়িয়ে থাকতে হবে। তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই। ঠিক আধঘন্টা পরে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ঠেলে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলবে আজো পেলাম না। মুখের লালায় ভিজে সিগারটা কোণের বাস্কেটাঁয় ফেলে বারান্দায় ইজি চেয়ারে না বসা পর্যন্ত আসলে আমার কোন কাজ নেই। আসলে বলা ভাল এই কাজহীন বসে থাকাটাই আমার কাজ। একটা ভবিষ্যতহীন বুড়োকে সঙ্গ দেয়ার জন্য আমাকে মাসে মাসে বেতন দেয়া হয়। বন্ধুরা আমার এই কাজটাকে খুব ঈর্ষা করে। দিনরাত উদয়াস্ত পরিশ্রমে যেখানে ওদের হাড় য়ে যাচ্ছে আর রকে বসে গুলতানি মার্কা এই কাজটার জন্য চকচকে এতগুলো নোট প্রতিমাসে পকেটে ঢুকবে এটা প্রকৃতির যে একটা বড় অবিচার এই নিয়ে প্রতিদিনই আমাকে শুনতে হয়।
কিন্তু প্রতিদিন আমি অনেকবেশি কান্ত হয়ে যাচ্ছি।
একটা মানুষের সবচাইতে বেশি কষ্ট বোধহয় অন্যের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে চলা। আমার মায়ের কথা মনে পড়ে।
আমার মায়ের মুখের সাথে গৌতম বুদ্ধের মূর্তিও কোথায় একটা মিল আছে।
ড্রয়ারটা বন্ধ করার সময় একটু বেশিই শব্দ হয়।
- খুজে পেলাম না। কিসের মধ্যে যে ঢুকে আছে।
আমি কোন কথা বলি না। হারিয়ে যাওয়া ছবিটার মতোই কথা বলার মতো কিছু আমি খুজে পাই না। তিরিশ বছরের সামনে অনেককিছুই পড়ে থাকে। আমার সামনে পুরোটা দিন এই তিরাশি বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে কাটাতে হবে। বৃদ্ধটা মুখের সিগারটা ছুড়ে দেয়ার জন্য হাত বাড়ায়। ঠিক সেই মূহূর্তে কাষ্ট্রোর কথা মনে হয়। আমাদের নীলকান্ত সরকার ওরফে নীলু পাড়ার বই এর দোকানে কাষ্ট্রোর একটা পোষ্টার ঝুলিয়ে দিয়েছিল। তার ঠোটেও জ্বলছিল এরকম একটা সিগার। কি একটা শ্লোগান লেখা ছিল তাতে মনে পড়ছে না। বই এর দোকানটা উঠে গিয়ে সেখানে একটা ভিডিও সিডি ডিভিডির দোকান বসেছে।
- চল একটু বারান্দায় বসি।
পুরনো আমলের চওড়া বারান্দায় রোদ ঝলমল করছে। সামনের দিকে তাকালে আকাশ ছুয়ে আছে অ্যাপার্টমেন্টর দল।
একটা আমগাছের মাথায় অনেকগুলো কাক জটলা বাধে। বারান্দার এক কোণে ছাদ থেকে ঝুলে আছে পুরনো একটা দোলনা। বুড়োটা একটু পওেই দোলনার দিকে তাকিয়ে নরীনের কথা বলবে।
- মেয়েটা একেবারে দাদীর মতো হয়েছে –
নাতাশার একগাদা আনকোরা ছবি গতকাল পোষ্টে এসেছে। বুড়োটা সেইসব ছবি হাতে নিয়ে খানিন নেড়ে চেড়ে পাশে সরিয়ে আর ছুয়েও দেখেনি। আমি নিশ্চিত ১৯ বছরের এই টসবগে মেয়েটাকে সে সহ্য করতে পারেনি। বুড়োরা এমন হয়। খুব বাচ্চাদেও বড় হয়ে যাওয়া তারা সহ্য করতে পারে না।
আমার দাদুর কথা মনে হয়।
আমি তার কথা মনে করতে চাই না।
তার স্মৃতির সাথে সাথে আরো অনেককথা হুড়মুড়িয়ে চলে আসবে যেগুলো আমার মাথার উপর একটা চাপ তৈরী করে।
বুড়োটা এখন অনেকন চুপ করে থাকবে।
এই সময়টা যেন কাটতেই চায় না। একজন নিশ্চুপ মানুষের সামনে বসে থাকার চাইতে জেলখানাও অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ। আমি বসে বসে এইসময় আকাশ পাতাল ভাবি। এই বয়সে সেইসব ভাবনাগুলো মোটেই মানায় না। কিন্তু এয় মধ্যেই আমার দিন কেটে যাচ্ছে।
এখন আমি নাতাশার কথা ভাবছি। ও এখন ঠিক কিভাবে সময় কাটাচ্ছে সেই ছবিটা মাথার মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। আমি দেখছি উজ্জ্বল রঙের স্কার্ট পড়ে ছবির মতো সুন্দও একটা বাড়ির পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। গায়ের সাদা শার্ট ঝিরঝিরিয়ে তুষারের হালকা বৃষ্টির সঙ্গে বেশ মানিয়ে গেছে। একটা লাল কালো চেকের ছাতি হাতে আমার পাশ কাটিয়ে যেতেই আমি হেড়ে গলায় কা কা করে উঠলাম।
মেয়েটা চমকে কেপে উঠলো।
- তুমি কাক খুব ভয় পাও - না
- আপনি কি করে জানেন ?
মেয়েটার অবাক হয়ে যাওয়া উজ্জ্বল চোখজোড়া দেখে আমার খুব ভালো লাগে।
- খুব ছোটবেলায় একটা কাক এসে তোমার মাথায় ঠোক্কর দিয়েছিলো - সেই কাকটা এষনও তোমাদের বাসার সামনের আমগাছটার মাথায় থাকে।
আমি আরও খানিকদুর এগুতে পারতাম কিন্তু বৃদ্ধের খুকখুক কাশির শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়ে।
আমি আমগাছটার ডালে কাকগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবি এদেও মধ্যে কোন কাকটা নাতাশার মাথায় ঠুকওে দিয়েছিল। একবার মনে হয় কাকটা বেচে নেই - কিন্তু পরনেই মনে পড়লো পাখিদের মধ্যে কাকের আয়ুই মানুষের চেয়ে বেশি।

- জামাল ছিল ভীষন দুষ্টু।
বুড়োর চোখ এর মণি কথা বলার সময়ও স্থির। মনে হয় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রথম প্রথম খুব অস্বস্তি হতো। মনে হতো আপনার ভেতরটাকে পড়ার চেষ্টা কছে। কদিন পরে বুঝতে পারি মানুষটা বলার সময় কিছু দেখে না। আগে মন দিয়ে কথাগুলো শুনতাম এখন আর অতটা মনোযোগ দিয়ে শুনি না। কাজে মন না বসলে যেমনটা হয়। জামাল কবে কার বাগান থেকে কি উৎাড় করে দিয়েছিল তার গল্প শুরু হবে তাতে কান দিতে ইচ্ছে কওে না। আমি বারান্দা দিয়ে উচুতে আকাশটা দেখি। আকাশের কোনা ধরে বিল্ডিংগুলোর ছাদ দেখা যায়। আমি অনেকদিন বিল্ডিং এর ছাদগুলোয় মানুষ দেখার চেষ্টা করেছি।


Comments

সুজন চৌধুরী's picture

ঐ মিয়া থাকো কই??
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

সুমন চৌধুরী's picture

পরিণতি হইলো না?
তুমি কৈ ডুব্দিছিলা?



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসান মোরশেদ's picture

পরিনতি খুব প্রয়োজনীয় মনে হলো না তো!

দুই চৌধুরীর মতো আমি ও বলি- কই ছিলেন? ।

-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কর্ণজয়'s picture

খালি আন্ধারে

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.