আমাদের বাতিঘরগুলি ও আসন্ন দিন – ০৬ (প্রথম অংশ)

মুহম্মদ জুবায়ের's picture
Submitted by zubair on Mon, 24/03/2008 - 12:52pm
Categories:

৬.১ দুই স্বাধীনতার মধ্যবর্তীকাল

১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – এই চব্বিশ বছর সময়কালের মধ্যে আমাদের ভূখণ্ড দু’বার স্বাধীনতা দেখেছে। এর বাসিন্দারা দুটি পৃথক রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছে। দুটি পতাকা অর্জন করেছে। স্পষ্টতই ৪৭-এর স্বাধীনতা আমাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, নাগরিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সম্প্রদায়গত অধিকার নিশ্চিত ও সুরক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। শুধু তা-ই নয়, পশ্চিম পাকিস্তানীদের চোখে বাঙালি মুসলমান সাচ্চা মুসলমান নয় বলে প্রতিভাত হলো। যে মুসলমানত্বের দোহাই পেড়ে পাকিস্তান হলো, সেই রাষ্ট্রে বাঙালি মুসলমান অচ্ছুৎ মুসলমানের পরিচয়ে পরিচিত হয়, যদিও ইসলামে এই ভেদাভেদের কোনো স্বীকৃতি ছিলো না। তাদের চোখে বাঙালি মুসলমানরা হয় হিন্দু, না হয় হিন্দুত্ব-প্রভাবিত অথবা কম-মুসলমান।

তারা কখনো এই সত্য জানেনি যে বাঙালি জীবনাচরণে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে দেওয়া-নেওয়া সবকালেই ছিলো। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের ধর্মীয় উগ্রতা বাদ দিলে সাধারণভাবে মুসলমান পীরের দরগায় হিন্দুদের মানত, বা দুর্গাপূজার উৎসবে মুসলমানদের সমান অংশগ্রহণ কোনো বিরল ব্যতিক্রম কখনোই ছিলো না। প্রতিদিনের জীবনচর্যায় বা উৎসবে-পরবে ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে এক ধরনের ভ্রাতৃত্ববোধই ছিলো প্রধান। বাঙালি মেয়েদের শাড়ি পরা, কপালে টিপ পরাকেও তারা হিন্দুত্ব বলে বিবেচনা করে। সত্য এই যে বাঙালি সাধারণভাবে পোশাক-আশাক বা বাহ্যিক আচরণভিত্তিক মুসলমানত্বে কখনো আস্থা স্থাপন করেনি। ধর্মীয় যেসব গোলযোগ ঘটেছে তার মূলে সবসময়ই ছিলো স্বার্থবাদীদের উস্কানি ও ইন্ধন, সাধারণ মানুষ তার অনিচ্ছুক বলি অথবা ভুক্তভোগী।

পাকিস্তান বিষয়ে বাঙালি মুসলমানদের আশাভঙ্গ ক্রমেই গভীরতা পেতে থাকে। ৪৭-এর পরে হিন্দুদের পূর্ব বাংলা ত্যাগ ও পশ্চিম বাংলা থেকে মুসলমানদের আগমনের ফলে জীবনচর্যায় এক ধরনের রূপান্তর ঘটেছিলো, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। গতকাল পর্যন্ত যে হিন্দু পরিবারটি আমার পাশের বাড়ির প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিলো, উৎসবে-সংকটে পাশে ছিলো – সে আজ আর নেই। তার জন্যে বেদনাবোধ অস্বাভাবিক ছিলো না। কিন্তু নতুন আসা প্রতিবেশী হিসেবে যাকে পাওয়া গেলো, সে রাতারাতি আমার বন্ধু হয়ে উঠবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অস্পষ্ট হলেও নতুন দুই প্রতিবেশীর পরস্পরের প্রতি এক ধরনের সতর্কতামূলক সন্দেহ ও অবিশ্বাস খুব অমূলক নয়। এর ওপরে রোপিত হয় আরেক বিষবৃক্ষ। অবাঙালি যে মুসলমান সম্প্রদায় ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসে হাজির হয় (যাদের আমরা সাধারণাবে বিহারি হিসেবে চিনেছি), সেই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই বাঙালিদের কাছ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, তারা বৃহত্তর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একাত্ম হতে চায়নি বা সক্ষম হয়নি।

মনুষ্য সভ্যতার ইতিহাসে এই ধরনের স্থানান্তর ও নতুন ভূমিতে বসতি স্থাপনের ঘটনা চিরকাল ঘটেছে এবং দখলদার না হলে নতুন আসা জনগোষ্ঠী স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টাই সবসময় করেছে, আজও করে। বিহারি বলে কথিতরা বিজয়দর্পী দখলদারের ভূমিকায় ছিলো না, এক অর্থে ছিলো আশ্রিত, তবু তারা নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিলো, স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা তেমন ছিলো না। তাদের এই মনোভাবটি বোঝা দুষ্কর। এই বিষবৃক্ষের ভয়ঙ্কর রূপ আমরা দেখেছি ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় – আমাদের শত্রুদের তারা পরম আত্মীয় ও বন্ধুজ্ঞান করে এবং সর্বতোভাবে আমাদের নিশ্চিহ্ন করার তৎপরতায় শামিল হয়।

পাকিস্তানের জন্যে নতুন সংস্কৃতি নির্মাণের তাগিদের বিষয়টি আগের পর্বে উল্লেখ করেছিলাম। তার কিছু নমুনা তুলে আনি। ‘আপনারা রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখতে পারেন না?’ বলে ক্ষমতাবানদের কেউ বুদ্ধিজীবীদের তিরস্কার করেছিলেন বলে কথিত আছে, আমি সেদিকে যাচ্ছি না। কারণ, এটি আদৌ ঘটনা, না বাজার-চলতি কৌতুক তা আমার ঠিক জানা নেই। তবে এখন যা উল্লেখ করছি তা আজ সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে (হয়তো অবিশ্বাস্যও নয়, আজকাল বাংলা বলা হচ্ছে হিন্দি-ইংরেজি মিশেল দিয়ে কষ্টার্জিত উচ্চারণে)।

ক. সম্ভবত ১৯৪৯ সালের দিকে ঢাকার একটি দৈনিকে হরলিকস-এর একটি বিজ্ঞাপনে লেখা হলো: “ফজরে ঘুম থেকে উঠে যদি কমজোর মালুম হয় তাহলে এক গ্লাস হরলিকস পিয়ে নিন।” আহা, কী চমৎকার পাকিস্তানী বাংলা!

খ. ৫০-এর দশকের শুরুর দিকে রেডিও পাকিস্তান থেকে প্রচারিত বাংলা সংবাদের অংশ: “আজ ফজরে পাকিস্তানের উজিরে খাজানা জনাব … কুর্মিটোলার হাওয়াই আড্ডা তশরিফ এনেছেন।” সরল বঙ্গানুবাদে তার অর্থ, আজ সকালে রাজস্বমন্ত্রী কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছেন।

গ. কলকাতার আকাশবাণীর মাসিক পত্রিকা ‘বেতার জগৎ’-এর মতো ঢাকা থেকে রেডিও পাকিস্তানের প্রকাশনার নাম ছিলো ‘এলান’ (ঘোষণা)।

ঘ. স্কুলপাঠ্য বইয়ে নজরুলের কবিতার পঙক্তি “সজীব করিব মহাশ্মশান” বদলে দিয়ে লেখা হলো “সজীব করিব গোরস্থান”। এই পণ্ডিতদের মাথায় ঢোকেনি যে কোনো কবির রচনা (বিশেষ করে নজরুলের মাপের) এভাবে বদলানো যায় না এবং কবিতায় মহাশ্মশান ও গোরস্থানের ব্যঞ্জনা এক হওয়া সম্ভব নয়।

শুধু সরকারি মনোভাব নয়, সেই সময়ে বাঙালির খণ্ডিত মন-মানসিকতার পরিচয়ও কিছু তুলে ধরা দরকার। নতুন গঠিত রাজনৈতিক দলের নামকরণে তার ছাপ আছে – আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ইত্যাদি। তখনকার বাংলা ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকাগুলির নামকরণের প্রবণতা লক্ষ্য করলেও তা বোঝা যাবে – ‘আজাদ’, ‘নও বেলাল’, ‘ইনসাফ’, ‘ফরিয়াদ’, ‘ইত্তেফাক’। কোনো কোনো কাগজে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ঊর্দূ-ফারসি শব্দের প্রয়োগ করা হতো। যেমন, রাষ্ট্রপতি = সদরে রিয়াসত, প্রজাতন্ত্র = জমহুরিয়াত, কৃষ্টি-সংস্কৃতি = তাহজীব-তমদ্দুন ইত্যাদি।

এর পাশাপাশি বিশুদ্ধ বাংলা নামের যেসব পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে সেগুলি হলো – ‘সৈনিক’, ‘চন্দ্রবিন্দু’, ‘মৃত্তিকা’, ‘মুক্তি’, ‘সংকেত’, ‘প্রতিভা’, ‘যুগের দাবী’, ‘দ্যুতি’। ৫০-এর দশকের গোড়ায় প্রকাশিত স্বল্পায়ু আরেকটি সাময়িকীর নাম আলাদা করে বলা দরকার – মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ও ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’। কাগজের নামই বলে দিচ্ছে ঠোঁটকাটা তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপই এর চরিত্র। এই পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যায় কাকে ধরাশায়ী করা হবে এই নিয়ে মুসলিম লীগ শাসকরা তটস্থ থাকতেন। বাংলা ভাষায় যথেচ্ছ ঊর্দু-ফারসি শব্দের আমদানি বিষয়ে অগত্যা-য় “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি / সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি”-র একটি প্যারডি করা হয় – “ফজরে উঠিয়া আমি দীলে দীলে বলি / হররোজ আমি যেন আচ্ছা হয়ে চলি”।

ঢাকা থেকে বাংলা নামকরণে সর্বপ্রথম দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ পায় ১৯৫১ সালে। নাম ‘সংবাদ’। সম্পাদক খায়রুল কবির, প্রকাশক নাসিরউদ্দিন আহমদ। এই কাগজের যাত্রা শুরু হয় যেসব কর্মীদের নিয়ে সেই নামগুলির দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার, কারণ এঁদের অনেকেই বাংলাদেশের সাংবাদিকতা বা অন্য কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়েছেন – সৈয়দ নূরুদ্দিন, খোন্দকার আবু তালেব (৭১-এ শহীদ), কে. জি. মোস্তফা, তোয়াব খান, সিরাজউদ্দিন হোসেন (৭১-এ শহীদ), সিকান্দর আবু জাফর, কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস, জহুর হোসেন চৌধুরী, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, আবদুল গণি হাজারী, সরদার জয়েনউদ্দীন, দাউদ খান মজলিশ, সানাউল্লাহ নূরী ও আবদুল গাফফার চৌধুরী। ‘সংবাদ’-এর প্রসঙ্গ বিশেষভাবে উল্লেখ করা এই কারণে যে, কিছুকালের জন্যে মুসলিম লীগের নূরুল আমিনের কব্জায় আটকা পড়লেও তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এই কাগজটি প্রগতিশীল রাজনীতি ও চিন্তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হয়ে থাকে অনেককাল।

ভাষা আন্দোলনের সফল পরিণতির পর পাকিস্তানের পূর্বাংশে স্বাতন্ত্র্যের বোধ তীব্রতর হলেও তার গোড়াপত্তন মূলত ৪৭-৪৮ সালে ভাষার অধিকার ও স্বীকৃতি দাবির শুরু থেকে। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরির প্রয়াস দেখা যায়। ড. শহীদুল্লাহ ও ধীরেন্দ্রনাথ দত্তরা বাংলা ভাষার লড়াইয়ের পক্ষে দাঁড়ান। ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষকালের অবিস্মরণীয় ছবিগুলি এঁকে খ্যাতি পাওয়া ৩৪ বছর বয়সী চিত্রকর জয়নুল আবেদীন (পরবর্তীকালে তিনি শিল্পাচার্য হিসেবে স্বীকৃত হবেন) ১৯৪৮-এ স্থাপন করেন ঢাকা আর্ট স্কুল, যা ক্রমশ পরিণত হয় বাঙালির সর্বপ্রকার আন্দোলন ও সংগ্রামের এক বিশাল সহায়ক হিসেবে। স্বল্পসংখ্যার কিছু মানুষকে বাদ দিলে ধর্মকেন্দ্রিক পাকিস্তানী সংস্কৃতি পয়দা করার স্বপ্ন তখন পরিত্যক্ত হয়েছে। বুলবুল ললিতকলা, উদীচী, ছায়ানট এবং এই ধরনের আরো অনেক প্রতিষ্ঠান বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণের কাজ করে। তমদ্দুন মজলিশ নামের প্রতিষ্ঠানটি নামের কারণে বিভ্রান্তি জাগায়, কিন্তু বাঙালি মননচর্চায় তাদের বড়ো একটি সদর্থক ভূমিকা ছিলো।

১৯৫৩ সালে হাসান হাসান হাফিজুর রহমান নামের এক যুবক পৈত্রিক জমি বিক্রি করে সেই টাকায় আগের বছরে ভাষা আন্দোলনের স্মরণে একটি স্মরনিকা প্রকাশ করছেন। সেই সংকলনে লিখছেন একদল নবীন লেখক ও কবি যাঁদের আমরা পরবর্তীকালে চিনবো শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবদুল গাফফার চৌধুরী এইসব নামে। মুর্তজা বশীরের আঁকা স্কেচ ছিলো একুশের এই প্রথম সংকলনে।

পাকিস্তানী তথা মুসলমানদের জীবনভিত্তিক সাহিত্যকে ভারতভাগের পর থেকে প্রতিষ্ঠিত করার সচেতন একটা চেষ্টা চলছিলো। তারই নমুনা ছিলো নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন রচিত ‘আনোয়ারা’, মোজাম্মেল হকের ‘জোহরা’ অথবা কাজী ইমদাদুল হকের ‘আবদুল্লাহ’ জাতীয় অনুল্লেখ্য উপন্যাস অথবা গোলাম মোস্তফা (ইনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন), আবদুল কাদির, বেনজীর আহমদ, তালিম হোসেনদের মতো কবিদের দুর্বল রচনা স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তার সম্পূর্ণ বিপরীতে উঠে এলেন ভাষা আন্দোলনের ধারায় উদ্বুদ্ধ এই নবীন লেখক-কবিদের দলটি। এঁদের কণ্ঠস্বর ও সৃষ্টি নবীন, অথচ এঁরা বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের মূল ধারাটির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে রাখলেন। ৪৭-এ উদ্ভুত পাকিস্তান-মার্কা সাহিত্যচর্চার মৃত্যু তখন ঘটেনি বটে (বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৩৭ বছর পরেও যে ঘটেছে তা বলা মুশকিল), কিন্তু সরকারি উদার সহায়তা ও উৎসাহ সত্ত্বেও তা আর কখনোই পায়ের নিচে শক্ত মাটি পায়নি। এই সময়ের অন্য সৃষ্টিশীল তরুণ লেখক-কবিদের মধ্যে আরো উঠে এলেন মুনীর চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান। অগ্রবর্তীদের মধ্যে এই ধারায় ছিলেন শওকত ওসমান, আহসান হাবীব, সিকান্দর আবু জাফর, আবু জাফর শামসুদ্দীন, আবুল হোসেন, আবু ইসহাকরা। এরপর ক্রমশ এলেন শহীদ কাদরী, আল মাহমুদ, হাসান আজিজুল হক।

(চলবে)

আগের পর্বগুলি:
আমাদের বাতিঘরগুলি ও আসন্ন দিন – ১
আমাদের বাতিঘরগুলি ও আসন্ন দিন – ২
আমাদের বাতিঘরগুলি ও আসন্ন দিন – ৩
আমাদের বাতিঘরগুলি ও আসন্ন দিন – ৪
আমাদের বাতিঘরগুলি ও আসন্ন দিন – ৫


Comments

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

সহজ লেখার দাবিদাওয়া ও স্রোতের মুখে এই লেখা নিয়ে ভয়ে আছি। কেউ মারবে না তো? চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নজমুল আলবাব's picture

জুবায়ের ভাই প্রচন্ড গতি পেয়েছে লেখাটা। এইবার মনে হয়না আপনি আর সময় পাবেন। নতুন পর্বের জন্য আমাদের অপেক্ষায় রাখতে পারবেননা। লেখাই আপনাকে টেনে আনবে কি-বোর্ডে।

“ফজরে উঠিয়া আমি দীলে দীলে বলি / হররোজ আমি যেন আচ্ছা হয়ে চলি”

মজাদার

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

সিরিজটা শুরু করার আগে সত্যিই বুঝিনি কীসের ভেতরে যাচ্ছি। কোনো প্রস্তুতি ছাড়া এতো বিশাল একটা বিষয়ে ঢুকে পড়েছি, এখন পালাতেও পারছি না।

জানি না শেষ পর্যন্ত কিছু একটা হয়ে দাঁড়াবে কি না। এখনো সঙ্গে আছেন দেখে আনন্দিত।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

পড়ছি, জুবায়ের ভাই।
সচলায়তনের সেরা সিরিজগুলোর মাঝে এটি অন্যতম, নি:সন্দেহে।

ধন্যবাদ।

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

অনেক বড়ো কমপ্লিমেন্ট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায় তাই নিয়ে সংশয় আমার কাটে না। সঙ্গে থাকার জন্যে কৃতজ্ঞতা জানাই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

হাসান মোরশেদ's picture

ভাষার বিবর্তন প্রসংগে একটা লেজুড় জুড়ে দেই জুবায়ের ভাইঃ

১৭৫৭'র আগের সময়ে দেখা যাচ্ছে রাজকীয় ভাষা আরবী-ফার্সী । রাজকর্মচারী হিসেবে তখনো হিন্দুসম্প্রদায়ের আধিক্য ছিলো,তখন তারা ও চাকরী প্রাপ্তির সুবিধার্থে আরবী-ফার্সী শিখছেন , ভাষার ধর্ম অনুযায়ীই বাংলার সাথে তখন থেকেই এইসব ভাষার শব্দ মিশ্রিত হচ্ছে । তৎকালীন সাহিত্যে এমনকি ভারতচন্দ্রের কাব্যে ও এই মিশ্রন দেখা যাচ্ছে ।
পরবর্তীতে ইংরেজ শাসনামলে মুসলমানদের অভিমান ও অযোগ্যতার সুযোগে আবারো চাকরী-বাকরি,কাব্য-সঙ্গীতে হিন্দুদের অগ্রসরতা । ভাষা সংস্কারের দায়িত্ব পেলেন ফোর্ট উইলিয়ামের চাকরীজীবি টোলপন্ডিতগন । মুলতঃ তাদের দায়িত্বে বাংলাভাষাই সংস্কৃত প্রভাবের পুনঃ প্রবেশ ।
এর পরের ইতিহাস তো আপনিই বললেন,উর্দুর প্রভাব ।

আরেকটু বোধ হয় যোগ করা যায়, উর্দু মুলতঃ একটা মেইড ল্যাংগুয়েজ,কৃত্রিম্ভাবে তৈরী করা - পাকিস্তানের কোন জনগোষ্ঠির আদি মাতৃভাষা নয় । মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানতেন ভিন্নভাষাভাষী পাকিস্তানের নানা অংশের মানুষের বিচ্ছিন্নতার প্রধান সুত্র হতে পারে মাতৃভাষা । তাই সবার জন্য ইউনিফায়েড ল্যাংগুয়েজ হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেয়া । এই চাপিয়ে দেয়াকে পাঞ্জাবীরা সহজে মেনে নিয়েছে কারন তারাই মুলতঃ শাসক ছিলো । বাংগালী,সিন্দী,বেলুচরা এর প্রতিবাদ করেছে ।
মোদ্দা কথা,এই অঞ্চলের শাশন কেন্দ্রিক রাজনীতিকে ভাষা সবসময়ি ডি ফ্যাক্টো হিসেবে কাজ করেছে । অধুনা হিন্দীর প্রভাব- সে ও ঐ রাজনীতিরই অংশ ।

দেখার বিষয়- আরবী-ফার্সী,সংস্কৃত,ইংরেজী,উর্দুর পর হিন্দী কতোটুকু শেয়ার অধিকার করে?
----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

টীকাভাষ্যটি যোগ করার জন্যে ধন্যবাদ। এক ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার লেনদেন সর্বকালে এবং সর্বত্র হয়ে এসেছে। স্বতস্ফূর্ত হলে তাতে দোষের কিছু থাকে না, বরং গ্রহীতার ভাষা তাতে অগ্রবর্তী ও সমৃদ্ধ হয়। গোল বাধে তখনি যখন তা হয় আরোপিত।

ঊর্দূ ভাষার উৎপত্তি হয়েছিলো আকবরের আমলে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সৈনিকদের মধ্যে একটি সাধারণ ভাষা প্রচলনের তাগিদ থেকে। বলা হয়ে থাকে, উর্দিধারীদের জন্যে তৈরি হয়েছিলো বলেই এই ভাষার নাম হয় ঊর্দূ।

শুরু থেকেই পাকিস্তানী উর্দিধারী বা সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব ছিলো পাঞ্জাবীদের হাতে, রাজনৈতিক ক্ষমতাও ছিলো পাঞ্জাবী সামন্তদের কব্জায়। এই সামন্ত প্রভুদের প্রতিদিনের ব্যবহারিক ভাষা ছিলো ঊর্দূ। ফলে নব-স্বাধীনতাপ্রাপ্ত পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশের কোথাও ব্যাপকভাবে ঊর্দূর প্রচলন না থাকলেও পাঞ্জাবী-অধ্যুষিত সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের সিদ্ধান্তে রাতারাতি ঊর্দূ রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়ে যায়। পাকিস্তানের মানুষ এই আচরণকে জবরদস্তিমূলক বলেই চিনতে পারে এবং প্রতিবাদ করে। ইতিহাস বলছে, এই সংগ্রামে বাঙালির প্রতিবাদ ছিলো সবচেয়ে তীব্র এবং জয়ীও তারাই হয়েছিলো। পাকিস্তানের অন্য প্রদেশগুলি তাদের ভাষার দাবি আদায় করতে ব্যর্থ হয়।

অথচ ভারতের মতো বিশাল ও অগণন ভাষার দেশেও সাধারণ ভাষা হিসেবে হিন্দির প্রচলন হয়, যদিও ঊর্দূর মতো এই ভাষারও কোনো ব্যাপক প্রচলন ভারতে ছিলো না, আঞ্চলিকভাবে আজও নেই। হিন্দি প্রচলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়নি, তা-ও নয়। তবে আমার ধারণা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় ভারতে হিন্দির সাফল্য এসেছিলো। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, এই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো উর্দির আদেশ ছিলো না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

জ্বিনের বাদশা's picture

শুধু জানছি আর জানছি ....আবদুল্লাহ পাঠ্য ছিল নাইনটেনে ,,,, পাকিপ্রভাবিত বাংলার আধিক্য ছিল, পড়লে হাসি পেত চোখ টিপি

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

উপন্যাস তো নয়ই, এমনকি মুসলমান সমাজ/পরিবারের ডকুমেন্টারি হিসেবেও 'আবদুল্লাহ' ফালতু। একেবারেই অপাঠ্য, কিন্তু এই বস্তু পরীক্ষা পাশের জন্যে আমাকেও পড়তে হয়েছে। বলা উচিত, ওটা ছিলো এক ধরনের অত্যাচার। আশা করি এই বই এখন আর পাঠ্য নয়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ's picture

পড়ছি, পড়লাম। অপেক্ষায় আছি পরবর্তী পর্বের। আর, আব্দুল্লাহর কথা কী আর বলবো। এই রকম একটা অপন্যাস পাঠ্য ছিল... পরের বছর থেকেই হাজার বছর ধরে পাঠ্য হয়েছে। সেই আফসোস আজও ভোগায়।

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

পরীক্ষার জন্যে পড়তে হলে "হাজার বছর ধরে" কেন, কোনো উপন্যাসই পছন্দ হওয়ার কথা নয়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক's picture

এই পর্বটিতে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের যে বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে এসেছে সেটা নিয়ে লেখালেখি কম হয়েছে ।
সাধারনত : রাজনৈতিক ইতিহাসই আলোচ্য হয় দেখি সবখানে , ভাষা আন্দোলনটাও রাজনীতির মোড়কেই উপস্থাপিত হয় ।

এই পর্বটি তাই আলাদা গুরুত্বের দাবী রাখে ।
-------------

জুবায়ের ভাইয়ের কাছে এখন আরেকটা বিষয় আশা করি । সেটা হচ্ছে তৎকালীন বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্তের বিকাশ ও অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির ধারা নিয়ে আলোচনা ।

৪৭ পূর্বের মুসলিম আর ৪৭ পরের পাকিস্তানী মুসলিমদের মাঝে তফাৎ অনেক বেশি । একটা বিশাল শ্রেনী উত্তরন -রাজনৈতিক ভাবেও যেমন , অর্থনীতিতেও তেমন ।

এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করলে খুশী হতাম।

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে। ভাষা আন্দোলন বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক নয়, অর্থনীতিও কি সেখানে ছিলো না? ঊর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙালির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়তো। সুতরাং ঐ প্রতিবাদ-প্রতিরোধের পেছনে অর্থনীতিকে ছোটো করে দেখার সুযোগ নেই।

Quote:
তৎকালীন বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্তের বিকাশ ও অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির ধারা নিয়ে আলোচনা

দুঃখের সঙ্গে জানাই, এই বিষয়টা নিয়ে লেখার মতো উপযুক্ত মানুষ আমি নই। যতোটুকু জানি, ভাসা ভাসা। পড়াশোনাও তেমন নেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তারেক's picture

সকালে ক্লাসে যাবার আগে এই সিরিজের সবগুলো পেইজ খুলে রেখে কম্পিউটারকে শীতনিদ্রায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম... দুপুরে এসে পড়া হল। অনেক কিছু জানতে পারছি... উৎসুক হচ্ছি নিজেদের ইতিহাসের প্রতি... এর পুরা কৃতিত্ব আপনার। হাসি

আরিফ ভাইয়ের দাবীটা আমারো... ই বুক ই বুক ই বুক চাই।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

কৃতিত্ব আমার নয় আসলে। এর সিংহভাগ তাঁদের (প্রথম পর্বে নাম উল্লেখ করেছিলাম) যাঁরা এ বিষয়ে লেখার দায়িত্বটা আমার অক্ষম কাঁধে তুলে দিয়েছিলেন। এখানে আমার ভূমিকা সরবরাহকারীর, তার বেশি বোধহয় নয়। আর সরবরাহটা আসছে প্রধানত আমার মস্তিষ্কের কোষ থেকে, সহায়ক রসদপত্র হাতের কাছে নেই-ই বলতে গেলে। সেটুকুই দিতে পারলে আমার আনন্দ।

কেউ কেউ আগ্রহ নিয়ে পড়ছেন জেনে খুশি হতেই পারি। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, এইসব কচকচি কারো বিরক্তির কারণ ঘটাচ্ছে না তো!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধুসর গোধূলি's picture

Quote:
“সজীব করিব মহাশ্মশান” বদলে দিয়ে লেখা হলো “সজীব করিব গোরস্থান”

তখন হাসতাম কিনা জানি না কিন্তু এখন মোটামাথা হুজুরদের কথা ভাবতেই হাসি পাচ্ছে।

গোলাম মোস্তফা মোনে হয় আমরাও পড়েছি স্কুলে। আবদুল্লাহ্ও তাই। আপনার এই লেখাটি পড়ার আগে ওভাবে কখনো বিচার করিনি আবদুল্লাহ্কে। পরীক্ষা পাশের জন্য যতোটুকু না পড়লেই নয়, পড়েছি। আমার কাছে মনে হতো ধর্মের গোঁড়ামির গালে খুব শক্ত একটা চপেটাঘাত হলো আবদুল্লাহ।

কিন্তু আপনার লেখাটা পড়ার পর মনে হচ্ছে ওখানে অন্যান্য আরও অনেক ইঙ্গিত ছিলো বৈকি!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

ধর্মীয় গোঁড়ামির বিপক্ষে কিছু বিষয় ছিলো 'আবদুল্লাহ'-তে, কিন্তু বড়ো আরোপিত আর বানোয়াট মনে হতো। উপন্যাস হিসেবে কিছুই নয়।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধ্রুব হাসান's picture

Quote:
মনুষ্য সভ্যতার ইতিহাসে এই ধরনের স্থানান্তর ও নতুন ভূমিতে বসতি স্থাপনের ঘটনা চিরকাল ঘটেছে এবং দখলদার না হলে নতুন আসা জনগোষ্ঠী স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টাই সবসময় করেছে, আজও করে। বিহারি বলে কথিতরা বিজয়দর্পী দখলদারের ভূমিকায় ছিলো না, এক অর্থে ছিলো আশ্রিত, তবু তারা নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিলো, স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা তেমন ছিলো না। তাদের এই মনোভাবটি বোঝা দুষ্কর। এই বিষবৃক্ষের ভয়ঙ্কর রূপ আমরা দেখেছি ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় – আমাদের শত্রুদের তারা পরম আত্মীয় ও বন্ধুজ্ঞান করে এবং সর্বতোভাবে আমাদের নিশ্চিহ্ন করার তৎপরতায় শামিল হয়

জুবায়ের ভাই আমার কেন জানি মনে হয় সমস্যাটা গোড়াতেই। প্রথমত ৪৭ এর ভারত ভাগ আদতে কোন স্বাধীনতাই ছিলো কিনা এইটা একটা বড় প্রশ্ন! যে মুসলিমটি রাজনীতিবিদদের রঙ্গিন মুসলমান দেশের স্বপ্নে স্ব-ইচ্ছাই হোক আর অনিচ্ছাই হোক এপাড়ে এসেছে তার ধর্মীয় চাহিদা কিন্তু এপাড়ের সাধারন মুসলমানের চেয়ে ব্যাপক মাত্রায় থাকাটাই কি স্বাভাবিক নয়? ঠিক তেমনি একজন হিন্দু বা শিখের বেলাতেও একই কথা খাটে। আপনি ৪৭ পরবর্তী দাঙ্গাগুলোর পরিসংখ্যান দেখুন দেশান্তরীরাই কিন্তু দাঙ্গাগুলোর হোতা হিসেবে ভুমিকা পালন করেছে। কারন একটা স্বপ্ন নিয়েই কিন্তু দেশত্যাগ করেছে সে। যখন নিজে চোখের সামনে দেখছে, যে স্বপ্নে বিভোর হয়ে সে আসলো সে স্বপ্নের পাকিস্থান ভেঙ্গে যাচ্ছে, ঐ অবস্থায় তার মরিয়া হয়ে উঠা কি অস্বাভাবিক? যেমন আমাদের কাছে স্বাভাবিক ছিলো আলাদা হয়ে যাওয়াটা। যতদিন যাচ্ছে ততই একটা ধারনা আমার দৃঢ় হচ্ছে তা হলো আজকের ভারতের আঞ্চলিক সমস্যা বা পাকিস্থানের সমস্যা বা বাংলাদেশের সমস্যা তার মূলে এক ভয়াবহ ইন্ধন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এই ৪৭। এইটা কেমন স্বাধীনতা হতে পারে যে স্বাধীনতা লাভের সময় টেন মিলিয়ন মানুষ মুসলিম-হিন্দু-শিখ একে অপরকে খুনে মত্ত ছিলো! অথচ ভাবখানা এমন আমরা ইংরেজ থেকে লড়াই করে ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা! প্রায় এক মিলিয়ন ভারতীয় খুন হলো শুধুমাত্র নিজের ধর্মীয় আইডেনটিটির জন্য?? এই স্বাধীনতা দিয়ে যে ভূখন্ডের যাত্রা সে ভূ-খন্ডে শান্তির আশা কি করে করি?

মুহম্মদ জুবায়ের's picture

Quote:
৪৭ এর ভারত ভাগ আদতে কোন স্বাধীনতাই ছিলো কিনা এইটা একটা বড় প্রশ্ন! .... যতদিন যাচ্ছে ততই একটা ধারনা আমার দৃঢ় হচ্ছে তা হলো আজকের ভারতের আঞ্চলিক সমস্যা বা পাকিস্থানের সমস্যা বা বাংলাদেশের সমস্যা তার মূলে এক ভয়াবহ ইন্ধন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এই ৪৭।

এই উদ্ধৃতির প্রথম বাক্যটিতে আপনি ভারতভাগ ও স্বাধীনতা দুটি শব্দই ব্যবহার করেছেন। অনেকেই একমত হবেন যে, আসলে সেটা ভারতকে বিভক্ত করার ঘটনাই ছিলো, ধর্মের নাম করে বিবদমান দুটি সম্প্রদায়কে আলাদা করে দেওয়া। দুই ভাইয়ের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার মতো। অথচ রাজনীতিকরা বগল বাজাতে লাগলেন, তাঁরা স্বাধীনতা এনেছেন। এই স্বাধীনতা ছিলো অনেকটা নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মানো শিশুর মতো রুগ্ণ। অশক্ত। রক্তশূন্য। ফলে অপুষ্ট শিশুটি খুব সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে তা মনে করার কারণ হয়তো আসলে নেই। আপনার মন্তব্যের এই অংশের সঙ্গে একমত

Quote:
দেশান্তরীরাই কিন্তু দাঙ্গাগুলোর হোতা হিসেবে ভুমিকা পালন করেছে।

এই কথাটা বোধহয় এই উপমহাদেশের বেলায়ই শুধু সত্য। তবে তা আংশিক। নোয়াখালির দাঙ্গায় বা ৪৬-এ কলকাতার দাঙ্গায় কোনো বহিরাগত ছিলো বলে তো জানি না। আর আমার মন্তব্যটা মানুষের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে একটা সাধারণ প্রবণতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো। সংখ্যায় অল্প হলেও কোনো কোনো বিহারী তো বাঙালির সঙ্গে মিশে যেতেও পেরেছিলো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.