নিয়মিত লেখা আর ব্লগের লেখা ৪

সুমন চৌধুরী's picture
Submitted by suman on Tue, 02/09/2008 - 11:33pm
Categories:

ব্লগিঙের একেবারে শুরু থেকেই একটা প্রশ্ন পৃথিবীর সব ভাষাভাষী ব্লগ পাটাতনগুলিতে আলোচিত হয়ে এসেছে। ঠিক কোন ধরণের লেখাকে ব্লগ বলা যায়, কিংবা কী ধরণের লেখা ব্লগে লেখা উচিত। গত আট-নয় বছরের ব্লগিঙের ইতিহাসে দেখা গেছে শেষ পর্যন্ত ব্লগে কী লিখিত হবে না হবে, ব্লগাররা সেই বিষয়ে কোন ধরণের প্রাতিষ্ঠাণিক ট্যাগিং মেনে নেন নি। ছাপা মাধ্যমে বা আরো খানিক রঙ চড়িয়ে মেইনস্ট্রিম প্রিন্ট মিডিয়াতে যা যা ছাপা হয় ব্লগ শেষ পর্যন্ত তার সবটাই ধারণ করেছে। পার্থক্যটা তাহলে কোথায়? একটা পার্থক্য মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যে ব্লগারদের পারস্পরিক আদান-প্রদানে, আর খুব বড় আরো একটা পার্থক্য হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ছাপা মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সম্পাদককূলের আজ্ঞাভাজন প্রতিষ্ঠিত লেখককূলের বাইরে আরো কিছু লোকের লেখনি সক্রিয় হওয়া। ছাপা মাধ্যম লেখালেখির জগতে মনোপলি থাকা কালে প্রতিষ্ঠিত সম্পাদকগণের দুর্লঙ্ঘ ছাঁকুনি অথবা জীবনের নানান চড়াই-উৎড়াই অথবা যারা হয়তো তারুণ্যের মাঝামাঝি পর্যন্ত লেখালেখির চিন্তাও করেননি ব্লগিং জমানার প্রথম দশকে প্রধাণত তাঁরাই লেখক হিসেবে উঠে আসছেন। তাঁদের লেখাতে, প্রকাশে এমন কোন কিছু থাকছে যা প্রতিষ্ঠিত ভারী ভারী লেখকের কাজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ লেখাগুলি মানোত্তীর্ণ বা উপাদেয় নয় এমনটাও বলা যাচ্ছে না, কারণ সেক্ষেত্রে ব্লগিঙের জগত এভাবে বিস্তৃত হতো না। পাটাতন নির্বিশেষে ব্লগিং বিষয়ক সাধারণ নর্ম তৈরীর ব্যাপারে মূলধারার লেখক সম্পাদকদের তরফ থেকে ব্লগ জগতের একেবারে শুরু থেকে একটা চাপ কাজ করেছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতে তাঁরা করেছেন দীর্ঘ আধিপত্যের ভিত্তি নড়ে ওঠায়। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, ব্লগ শুধু যে নতুন পাঠক তৈরী করবে তাই না, নিয়মিত পাঠকদের মধ্যেও বিভাজন তৈরী করবে বা আরো স্পষ্ট বলতে গেলে পাঠ নামের প্রক্রিয়াটিই বিভাজিত হবে। তাঁদের এই আতঙ্কে বারুদ ছড়িয়ে নেট ব্যবহারকারী আর সেইসূত্রে ব্লগপাঠকের সংখ্যা দুটোই প্রতিদিন জ্যামিতিক হারে বিস্তৃত হচ্ছে।

পশ্চিমে এই সঙ্কট যথারীতি বাংলাব্লগের জন্মের আগে দেখা দিয়েছে। সেখানে মূলধারার ছাপামাধ্যমগুলি, বিশেষত সংবাদমাধ্যমগুলি পাঠকের অনলাইন প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। ব্লগের সাথে মূলধারার মাধ্যমের নানারকম বিনিময়ের মাধ্যমে এক ধরণের ভারসাম্য তৈরীর প্রচেষ্টা দেখা গেছে। তাতে দুই মাধ্যমের বিরোধ দৃশ্যত: কমতিতে থাকলেও, টিউশন ফী বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, লক আউট বিরোধী শ্রমিক আন্দোলন, বিশ্বায়ন বিরোধী বিক্ষোভ ইত্যাদি বৃহত্তর গণসংযোগের ক্ষেত্রে ব্লগপাটাতনগুলি অন্তত ইউরোপে নতুন মাত্রার মৌলিক গণমাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ব্লগ নামের এই নতুন মাধ্যমটির আত্মপ্রকাশ অবশ্যই কর্পোরেট বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কোন উত্তরাধুনিক প্রপঞ্চ নয়, আমার ব্যক্তিগত মতে কর্পোরেট মাধ্যমের সাথে এর সম্পর্ক সমান্তরালও নয়। এই সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক। প্রযুক্তি বিশ্বের নিয়ন্ত্রক মহোদয়গণ এই দ্বন্দ্বকে কব্জা করার ভাবনা শুরু থেকেই মাথায় রেখেছেন। তাঁরা সমাজবিজ্ঞানের এইসব আবঝাব ঝকমারি এড়াতে শুরুতেই প্রযুক্তির দিকটা নিজেদের পকেটে পুরে রেখেছেন। পশ্চিমে একে চ্যালেঞ্জ করে পুঁজির দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে বা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

বাংলা ব্লগিঙের শুরু সব রকম বিতর্ক এড়িয়ে মেরে কেটে বলা যেতে পারে ২০০৩ সালে ইউনিকোড বাংলার জন্মের সময় থেকে। ( যদিও ২০০৩ সালের কোন রেফারেন্স নেটে পাইনি ) সেইসময় বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের অল্প কিছু লোক ব্লগস্পটে টুকটাক পোস্ট করতো। বাংলায় টাইপ করতে পারাটাই তখন একটা বিষ্ময়ের ব্যাপার ছিল। ২০০৩ কে বাংলা ব্লগিঙের শুরু বলে ধরে নেওয়াটা সেক্ষেত্রে নিতান্তই তর্কের খাতিরে। ( এই পর্যবেক্ষণ ব্যক্তিগত, তবুও আশা করি রেজওয়ান ভাইয়ের মতো ব্লগবিশেষজ্ঞদের সমর্থন পাবো দেঁতো হাসি) আমি বাংলা ব্লগিঙের শুরু বলে ধরতে চাই ২০০৫ সালের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সামহোয়ারইনব্লগের জন্মকে। ইউনিকোডের তৎকালীন ঝামেলা এড়িয়ে সরাসরি বিজয়ে টাইপ করে ধুমধাম ব্লগিঙের আগাগোড়া বাংলায় প্রথম প্লাটফর্ম তৈরীর কৃতিত্ব তাদের। বাংলা ব্লগাবর্তের প্রথম ব্লগাররাও তৈরী হয় তাঁদের প্লাটফর্মকে ভিত্তি করে। এর দেড় বছর পরে আসে সচলায়তন আর প্যাচালী, আড়াই বছর পরে আমারব্লগ। এখন আরো বেশ কিছু নতুন ব্লগের জন্মের সম্ভাবনা বাতাসে ভাসছে। অর্থাৎ বাংলা ব্লগাবর্ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। কর্পোরেট পুঁজির আওয়ায় এবং আওতা বহির্ভূত দুইভাবেই হচ্ছে। ব্লগের লেখকরা শুরু থেকেই ভৌগলিক সীমাবদ্ধতার বাইরে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে দেখতে গেলে তথ্যপ্রযুক্তির আওতাভুক্ত কোন কিছুরই কার্যত: ভৌগলিক সীমাবদ্ধতা নেই। এখানকার সব কিছু শুরু থেকেই জাতীয়তা বা আন্তর্জাতিকতাকে ছাপিয়ে বৈশ্বিক। সুতরাং গ্লোবাল পলিটিক্যাল ইকোনমির সবধরণের দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষকে ব্লগমাধ্যম জন্মসূত্রে ধারণ করে। কোন বিশেষ ভাষাভাষী ব্লগকে এই বৈশ্বিকতা থেকে কাঁচি দিয়ে কেটে আলাদা করা সম্ভব নয়।

আমার ব্যক্তিগত মতে বৈশ্বিকতার এই মূলগত উপাদানই ব্লগ জগতে বিষয়বৈচিত্র্যের কারণ। ব্লগজগতে এই বৈচিত্র্য আমি বলবো বিষয়ে নয় প্রকাশে। আটপৌরে থেকে প্রমিত ভাষার উন্মুক্ত ব্যবহার (অ-ব্লগীয় মাধ্যমের ভাষায় "যথেচ্ছ ব্যবহার"), অন্তর্জালে প্রাপ্য তথ্যসূত্র উল্লেখে বিশেষ প্রযুক্তি সুবিধার মতো বিষয়গুলি ব্লগের আলোচনা-সম্পূরক আলোচনা-তর্ক-বিতর্ককে আলাদা একটা মাত্রায় নিয়ে গেছে। এই নতুন মাত্রা ব্লগের লেখকদের সাথে সাথে ব্লগ পাঠকদেরকেও ব্লগ পূর্ববর্তী পাঠ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছে। এই পরিবর্তন যে ডায়নামিজম সৃষ্টি করেছে তা লেখক পাঠকের মধ্যকার দূরত্বকে, ইতিহাসের সম্ভবত হ্রস্বতম পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। অক্ষরজ্ঞানের সাথে অন্তর্জাল ব্যবহারের ন্যুনতম প্রযুক্তিজ্ঞান আছে এমন যে কোন ব্যক্তিই ব্লগ জগতে একাধারে লেখক এবং পাঠক। লেখক-পাঠক খুব কাছাকাছি এসে পড়ার প্রতিক্রিয়া দুই তরফেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতার আর তা থেকে নতুন কিছু নর্মের ভিত্তি তৈরী করছে। একদিকে যেমন মূলধারার উন্নাসিক লেখক ব্লগজগতে এসে, তাঁদের ভাষায় অসংস্কৃত পাঠকের তরল মন্তব্য, অনভিপ্রেত আক্রমণ ইত্যাদির মুখে পড়েন, অন্যদিকে অনেক তথাকথিত তরল ব্লগারও ব্লগ পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে পূর্ববর্তী অনেক অজ্ঞানতা আর তৎজনিত সরলীকরণ থেকে মুক্ত হবার সুযোগ পান। জাঁদরেল প্রফেসরকে ক্লাসে বা সেমিনারে করতে না পারা অনেক প্রশ্নই অ্যাক্টিভ কালচারের তীব্রতা নিয়ে একজন অসংস্কৃত ব্লগার, বাস্তব জীবনের কোন প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানবাহককে করতে পারেন। এখানে প্রফেসর আর ছাত্র দুজনেই টেক্সচুয়াল কালচারের বাইরে অধিষ্ঠাণ করেন।

এই পয়েন্টে তর্ক তুলতে পারেন যোগাযোগ সমাজতত্ত্বের (communication sociology) অধ্যাপক। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারেন, নেট জগতের, তাঁর ভাষায়, এই নৈরাজ্য কি আসলে বিশ্বব্যপী ছাগলায়ন প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করছে না? এখানকার এখন পর্যন্ত বেশীরভাগ লেখালেখিতে প্রয়োজনীয় তথ্যসূত্র থাকে না, থাকলেও তার আওতা নেটে প্রাপ্য সূত্রগুলিতে সীমাবদ্ধ। নেট জগতে প্রচুর রিসোর্স গত দেড় দশকে যোগ হলেও তা এখনো নিজেকে জনগণের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাগারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি ইত্যাদি।

আমি তাঁর সাথে দ্বিমত করবো। আমি বলবো ব্লগ নামের এই নতুন মাধ্যম, মধ্য নব্বুই এর আইটি ব্যুম যে ছাগলায়নকে রাজনৈতিকভাবে উৎসাহিত করেছিল, তার মুখে ছাই দেবার ক্ষমতা ধারণ করে। এই আপাত: নৈরাজ্যিক স্বাধীনতার সুযোগে, শুরুতে ছাগল গলা উঁচু করার মওকা পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ঠিক এই স্বাধীনতা ব্যবহার করেই শুধু ব্যক্তিছাগল না তাবৎ ছাগলায়ন প্রক্রিয়ার শ্রাদ্ধ করা সম্ভব। রিসোর্স প্রসঙ্গে বলবো, নেট জগতের বয়স তো মোটের উপর দেড় বা সাহেবদের হিসেবে মেরে কেটে দু'দশক মাত্র। রিসোর্স বাড়ছে প্রতিদিন এবং বাড়তেই থাকবে। এই বিষয়ে অভিযোগকারীর কর্তব্য নেট জগতকে সমৃদ্ধ করতে নিজে এগিয়ে এসে অবদান রাখা এবং একই সাথে মূল্যবান সময় থেকে খানিক খরচ করে নেটে আসলে কী কী পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে অভিযোগ করা। সোজা কথায় নেট জগতের পুরোটাই অ্যাক্টিভিজম। ব্লগ সেই অ্যাক্টিভিজমের সব থেকে কার্যকর যোগাযোগ মাধ্যম। এই যোগাযোগ কখনো কবিতায়, কখনো কথাসাহিত্যে, কখনো প্রবন্ধে, রম্য রচনায়, চুটকিতে, কখনো বা নিপাট সংবাদে ঘটতে থাকে। নির্দিষ্ট করে গায়ে সীল চড়িয়ে ব্লগের লেখা বলে কিছু নেই। ব্লগ একটা আলাদা মাত্রার মাধ্যম, যা নিজস্ব ধরণের লেখার সাথে সাথে অভ্যস্ত মাধ্যমের প্রচলিত লেখাগুলিকেও নতুন মাত্রাতে তুলে গ্রাস করে ফেলছে।

ভিভা ব্লগিং !


Comments

অয়ন's picture

বাংলা ব্লগিঙের এই হঠাত উত্থানের কারণ খুব সম্ভবত কম্যূনিটি ব্লগিংয়ের সুযোগ থাকাটা । যদি ব্লগস্পট বা ওয়ার্ডপ্রেসের মতো কিছু হতো তাহলে মনে হয় না এতো মানুষের উত্সাহ থাকতো ব্লগিংয়ের প্রতি।

আরেকটা বড় ব্যাপার হলো ব্লগিংয়ে ভুদাইকে ভুদাই বলা যায়। এই সুবিধাটা অন্য মিডিয়ায় নাই।

ভিভা ব্লগিং !

সুমন চৌধুরী's picture

Quote:
বাংলা ব্লগিঙের এই হঠাত উত্থানের কারণ খুব সম্ভবত কম্যূনিটি ব্লগিংয়ের সুযোগ থাকাটা । যদি ব্লগস্পট বা ওয়ার্ডপ্রেসের মতো কিছু হতো তাহলে মনে হয় না এতো মানুষের উত্সাহ থাকতো ব্লগিংয়ের প্রতি।

অন্যভাষার ব্লগাবর্তেও কিন্তু কমিউনিটি ব্লগিং, অন্তত ব্যুম করার ক্ষেত্রে এক ধরণের নির্ধারক ভুমিকা রেখেছে।



অজ্ঞাতবাস

মাহবুব লীলেন's picture

যে পুস্তক পাঠ করিলে বাংলা ভাষা লিখিতে পড়িতে ও বুঝিতে পারা যায় তাহাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে

এইটুকু শুনে সেই যে ব্যাকরণ থেকে দৌড় দিয়েছিলাম আর ওমুখো হইনি

তারপর দৌড়াতে দৌড়াতে এইখানে এসে দেখি যে রচনা পাঠ করিলে বাংলা ব্লগ বুঝিতে শিখিতে ও লিখিতে পারা যায় তাহাকে ব্লগরণ বলে....

ওরে বাপরে
বাংলা ব্লগ অত কঠিন জিনিস এর আগে বুঝিনি

সুমন চৌধুরী's picture
কনফুসিয়াস's picture

তোফা হইছে লেখাটা।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অমিত's picture

কথা সেইটাই। "ব্লগ টাইপ লেখা" বলে আসলে কিছু নাই। যেটা আছে সেটা হল "ব্লগ টাইপ" লেখা। একেক ব্লগের লেখার ধরণ হবে একেক রকম।

ফারুক হাসান's picture

আমার তো মনে হয়, রীতিমত সাহিত্য ছাড়া অন্য যে কোন বিষয়ে একসময় ব্লগই নিয়মিত লেখার মেইন প্লাটফর্মে পরিণত হবে। মূল কারণ একটাই- ব্লগই এখন পর্যন্ত পাঠকের জন্য পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রকাশের সবচেয়ে মোক্ষম পন্থা।

শিক্ষানবিস's picture

ব্লগের গতিই সবচেয়ে বেশী। দৌড়ে তো সে প্রথম হবেই। পুরো দৌড় শেষ হতে একটু সময় লাগবে, এই যা।

দেবোত্তম দাশ's picture

পছন্দের লিষ্টে আরো একটা যোগ হলো
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

রেজওয়ান's picture

ঠিক আছে! বদ্দার স্টাইলে বললাম আর কি।

ব্লগ না থাকলে আমরা এরকম অনেক কিছু থেকেই বঞ্ছিত থাকতাম।

অয়ন wrote:
বাংলা ব্লগিঙের এই হঠাত উত্থানের কারণ খুব সম্ভবত কম্যূনিটি ব্লগিংয়ের সুযোগ থাকাটা । যদি ব্লগস্পট বা ওয়ার্ডপ্রেসের মতো কিছু হতো তাহলে মনে হয় না এতো মানুষের উত্সাহ থাকতো ব্লগিংয়ের প্রতি।

১৯৯৯ সালের দিকে উন্নত বিশ্বে ব্লগিং এর শুরু এই কমিউনিটি ব্লগিং দিয়েই। রাশিয়ায় লাইভ জার্নাল , চীনে ওদের বিভিন্ন প্লাটফর্ম এখনও জনপ্রিয়। বাংলাদেশ একটু পিছিয়ে তবে ধরে ফেলতে সময় লাগবে না।

তবে আপন স্পেস ও স্বাধীনতা কে না চায়, সে জন্যেই ব্যক্তিগত ব্লগের বিকল্প নেই।

টেকনোলজির এই বিবর্তনগুলো বিভিন্ন জনপ্রিয় স্টাইল ও ক্রেজের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

১৯৯৮-১৯৯৯ সালের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা আইআরসি চ্যাটিং করতাম, কিন্তু ব্লগ কি তাই জানতামনা। এখনকার যুবাদের নিশ্চয়ই অনেক অপশন, ফেসবুক, ব্লগ, চ্যাটিং ইত্যাদি।

তবে ব্লগের সবচেয়ে সুবিধা হলো এটি আমাদের পড়ার আর লেখার অভ্যাসের সুযোগ দিচ্ছে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

সুমন চৌধুরী's picture

ঈষ বেডাঙ্কে মীষ রেজওয়ান ভাই!

আপনার মন্তব্যের শেষের লাইনটাই খিয়াল করার মতো...কারণ ঐখানেই কম্পু দিয়া গেম খেলা বা চ্যাটানোর সাথে ব্লগের পার্থক্য...



অজ্ঞাতবাস

হিমু's picture

চৌধুরীর কাছ থেকেই শুনলাম গতকাল, জার্মানরা ব্লগ বিষয়ক শব্দকল্পদ্রুমে বিচ্ছিন্ন ব্লগকে পুংলিঙ্গ (জার্মানে Der Blog) এবং সমাবিষ্ট ব্লগকে লিঙ্গনিরপেক্ষ (Das Blog) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ব্যাপারটা ভাবানোর মতো।

বাংলা ভাষায় বিচ্ছিন্ন ব্লগিং অনেকেই করে থাকেন যদিও, কিন্তু কমিউনিটি ব্লগ এসে ব্লগারদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। রসায়নের বিক্রিয়ার হারতত্ত্বের সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাসায়নিক তত্ত্বে যেমন কয়েকটি অণুর পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে বিক্রিয়া ঘটে, এবং একই সাথে সংঘর্ষে সমর্থ সক্রিয় অণুর সংখ্যা সেই বিক্রিয়ার গতির হারের ক্রম (অর্ডার) নির্দেশ করে, কমিউনিটি ব্লগিঙেও তেমনি। এ কারণে আমরা প্রায়শই বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি দেখি, যেখানে মতের ওপর দ্বিমত, যুক্তির পিঠে যুক্তি এসে পড়তে থাকে, কারণ মতসংঘর্ষের জন্যে দায়ী সক্রিয় ব্লগারের সংখ্যা এখানে অনেক। বিচ্ছিন্ন ব্লগগুলিতে এই মিথষ্ক্রিয়া অনেকাংশেই অনুপস্থিত।

আমি মনে করি, অদূর ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত ব্লগের সংখ্যা বাংলা ব্লগোমন্ডলে বহুগুণিত হবে, কিন্তু একই সাথে সেই ব্লগের কনটেন্ট বাহিত হবে গোষ্ঠীব্লগে। বিভিন্ন আকারের কমিউনিটি গড়ে উঠবে নানা অভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক, রাজনৈতিক মতবাদভিত্তিক, পাঠ্যক্রমবহির্ভূতসক্রিয়তাভিত্তিক বহু গোষ্ঠীব্লগ আগামী দুই বছরে আমরা দেখতে পাবো বলে আশা করছি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু's picture

মূলধারার লেখকদের গোষ্ঠীব্লগ সম্পর্কে ঈষৎ নেতিবাচক মনোভাবের পেছনে কিছু কারণ আছে।

প্রথমত, তাঁরা গোষ্ঠীব্লগের গতির সাথে ঠিক তাল রাখতে পারেন না। গোষ্ঠীব্লগে প্রতিদিনই কেউ না কেউ লিখছে, এর নীড়পাতায় একটা লেখা দিয়ে তিষ্ঠানো যায় না, অন্যান্য লেখকদের লেখার চাপে তা একসময় অন্যপাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। এই যে পাঠকের মনোযোগের ফোকাস থেকে এই সাময়িক অপসরণ, ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি, এটিই তাঁদের কেউ কেউ সহ্য করতে পারেন না। তাঁরা চান সার্বক্ষণিক মনোযোগ। ব্লগে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের উপায় দু'টি, পোস্ট ও মন্তব্য। পোস্টে যখন তাঁরা তাঁদের চর্চিত লেখা, অর্থাৎ গল্প বা কবিতা বা উপন্যাস বা প্রবন্ধ, যা-ই হোক না কেন, দেন, তা দেন ধীর লয়ে। এর ফ্রিকোয়েন্সি হতে পারে সপ্তাহে একটা। কিন্তু সপ্তাহে একটা লেখা লিখে পাঠকের চোখের সামনে ২৪ ঘন্টা থাকা সম্ভব নয়। বিকল্প ব্যবস্থা হচ্ছে মন্তব্য, যেটিতে তাঁরা আরো অনভ্যস্ত বলে আমরা ধরে নিই সাধারণত। মূলধারার লেখকরা পাঠকের মুখোমুখি হন কদাচিৎ, এবং মুখোমুখি হলেও পাঠকের প্রতিক্রিয়া তাঁদের কাছে বিভিন্ন পরিশোধনপ্রক্রিয়া পার হয়ে আসে, আর তার উত্তর দেয়া না দেয়া লেখকের অভিরুচির ওপর নির্ভরশীল, আর উত্তর দিতে চাইলেও যথেষ্ঠ প্রস্তুতি তিনি নিতে পারেন তার জন্যে। ব্লগে ব্যাপারটি সম্পূর্ন বিপরীত। এখানে পাঠক মূহুর্মূহু ফিডব্যাকে লেখককে অস্থির করে ফেলতে পারেন। ব্লগের এই বৈশিষ্ট্যের সাথে মূলধারার কোন লেখক যদি পরিচিত না হন, তিনি কখনো কখনো বিপন্নও বোধ করতে পারেন। ফলে, ব্লগকে একটি অস্থির, অসংযত, অসংস্কৃত মাধ্যম মনে হতে পারে কারো কাছে। বাস্তবে ব্যাপারটি উল্টো। মূলধারায় যা ঘটে না, এখানে তা-ই ঘটে। এখানে লেখক পাঠক মুখোমুখি। মুগ্ধতাবোধ যেমন পাঠক জানাতে পারেন, পাঠ পরবর্তী হতাশার কথাও জানাতে পারেন। লেখক যদি এই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ভার বহন করতে সমর্থ না হন, তাঁকে হয় কমিউনিটি ব্লগ থেকেই দূরে থাকতে হবে, অথবা এমন কোন কমিউনিটি ব্লগ বেছে নিতে হবে, যেখানে তাঁর মর্জিমতো সবকিছু ঘটে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রেজাউল করিম সুমন's picture

ভালো লাগল আপনার লেখাটা। ব্লগের সম্ভাবনাময় দিক নিয়ে আর একটি পোস্ট দেখুন "মুক্তাঙ্গন : নির্মাণ ব্লগ"-এ --

http://www.nirmaaan.com/blog/wordsandbites/137

হাসান মোরশেদ's picture

সুমন চৌধুরীর এই লেখাটা পড়তে গিয়ে আমার প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীকে মনে পড়ে গেলো । কেনো? একটু বিস্তারিত বলি-
'৯৮ সালের আগষ্ট-নভেম্বর মাসগুলো সারা দেশের কয়েকহাজার তরুন-তরুনীর জন্য এক দুর্দান্ত উত্তেজনার সময় ছিলো । ভোরের কাগজ তথা মতিউর রহমান ও তার টিম ভীষন জনপ্রিয় তখন । মতিউর রহমান ভোরের কাগজ ছেড়ে নতুন পত্রিকা করবেন । নতুন পত্রিকা করার তরীকা ও সম্পূর্ন আলাদা ।
মতিউর রহমান তার জনপ্রিয় টিম নিয়ে চষে বেড়ালেন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহর , মফস্বলে । মতামত নিলেন তরুন-তরুনীদের । নেতৃত্বদানকারী ৫০ জনকে ঢাকায় নিয়ে গেলেন বিশেষ সভায় । নতুন পত্রিকার কোন পাতার নাম কি ঠিক হবে-সেটা পর্যন্ত ঠিক করে দিলো জেলা আর মফস্বল থেকে আসা ঐ তরুনেরা । কি ভীষন বিপ্লবী উত্তেজনা ।

ঐ সময় সঞ্জীবদা যিনি হাতে গোনা দু একজন সহ মতিউর রহমানের অনুগামী হননি তিনি এলেন আমাদের মাঝে । জানালেন-নতুন পত্রিকার মুলসুত্র । অর্থায়ন কারা করছে? এই পত্রিকা শেষপর্যন্ত কাদের হয়ে কাজ করবে?
বিপ্লবের উত্তেজনায় তখন কি আর আমরা সঞ্জীব চৌধুরীকে পাত্তা দিয়েছিলাম?

কিন্তু বছর কয়েক পরে ঠিকই আসল চেহারা বেরিয়ে আসল । প্রিন্টমিডিয়ার মুঘল হয়ে উঠা ঐ কথিত পত্রিকা কাদের পারপোস সার্ভ করে-সেটা আজ সবাই জানে ।

আমার আশংকা হয়, আগামী দিনের বাংলাদেশের নেটমিডিয়াকে ঠিক একই রকমভাবে সুশীল-সামরিক সমীকরনের ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিনা? এরশাদ আমলে ও প্রিন্টমিডিয়া যে সাহসী ভূমিকা রাখতো, এ সময়ে তার অবস্থান বিপরীত ।

বাংলা ব্লগিং তার নবজাতক পর্বে যে ভূমিকা রাখছে,পরিনত বয়সে তার পরিনতি কি দাঁড়াবে?

------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী's picture

ব্লগাবর্তের উপর প্রযুক্তি সহায়তার জায়গাটি তো শুরু থেকেই কর্পোরেটদের হাতে। দ্বন্দ্ব যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা নির্মিত সাইটে প্রকাশিত কন্টেন্টের ক্ষেত্রে। এই ব্লগগুলিতে প্রকাশিত লেখার ভান্ডারকে শক্তিশালী করতে হবে। পরিণত বয়সে তাজা থাকতে এখনই পুষ্টি যোগ করতে হবে। তখন প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হতে পারে।



অজ্ঞাতবাস

ইশতিয়াক রউফ's picture

পোস্টটা ভালৈছে। দৌঁড়ের উপর কমেন্টাই...

* ব্লগের গতি অবিশ্বাস্য। এই যে ক্লাসে বসেও মত প্রকাশ করতে পারছি, এটা অন্য মাধ্যমে অচিন্তনীয়।

* বাংলা ব্লগ এখনও পরিশীলিত হয়ে উঠে সারতে পারেনি। সময় লাগবে। ইন্টারনেট মানেই পর্ন দেখা নয়তো চ্যাট করা -- এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগে প্রত্যেকটা মানুষেরই। দেশ-কাল-জাতি নির্বিশেষে এ-কথা সত্যি। বাংলা ব্লগও তেমনটাই। ব্লগকে পশ্চিমের মত দিন বদলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শিখতে আরও কিছুটা পথ বাকি আছে।

* মূলধারায় "প্রতিষ্ঠিত" লেখক হতে হলে অনেক কামেল বান্দা হতে হয়। এঁদের মধ্যে এক ধরণের 'এলিটিজম' কাজ করে। ব্লগে সেটা চাইতে নেই, পাওয়াও যায় না। অনেকের জন্যই সেটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটা বই লিখে পুরষ্কার জিতে যাওয়া যায়, কিন্তু শ'খানেক পোস্ট লিখেও অনির্দিষ্টকাল 'রেলেভ্যান্ট' থাকা যায় না।

আবার ক্লাসে ফিরি... হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর's picture

ব্লগের জন্য নোবল প্রাইজের ঘোষনা আসবে কবে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুমন চৌধুরী's picture

তিষ্ঠ তিষ্ঠ।

আগে একটা জমি কিন্তে হবে...তারপর রসুনের বীজ জোগাড় করতে হবে ..তার পর সিজন পাইতে হবে....দেঁতো হাসি



অজ্ঞাতবাস

ইনসিডেন্টাল ব্লগার's picture

অত্যন্ত দরকারী আলোচনা। লেখককে ধন্যবাদ।
এ সিরিজের আপনার আগের তিনটি লেখা কিভাবে খুঁজে পেতে পারি?

সুমন চৌধুরী's picture

নিয়মিত লেখা আর ব্লগের লেখা ৩

নিয়মিত লেখা আর ব্লগের লেখা ২

নিয়মিত লেখা আর ব্লগের লেখা ১

লিঙ্কগুলি দিলাম তবে লেখাগুলি পুনরাবৃত্তি এবং অতিকথন দোষে দুষ্ট। চান্দি খাউজাইলো আর পট পট টাইপ কইরা দিলাম টাইপ। দেঁতো হাসি



অজ্ঞাতবাস

অছ্যুৎ বলাই's picture

ব্লগ হোক সত্য প্রকাশের মাধ্যম। তেলবাজি নয়, ভীতি নয়, সত্য কথাটা সহজভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হোক বাংলাব্লগ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শেখ জলিল's picture

নিয়মিত অনিয়মিত বুঝি না। ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখার ধৈর্য এখন আর নাই। পত্রিকার ধারেকাছে যাবার যোগ্যতাও বোধ হয় হারিয়েছি!
ব্লগই আমার শেষ আশ্রয়। নিয়মিত তাই ব্লগেই লিখি।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

আনোয়ার সাদাত শিমুল's picture

সিরিজটা দারুণ হচ্ছে... ।

মোরশেদ ভাইকেও ধন্যবাদ, সম্পুরক আলাপের জন্য।

রণদীপম বসু's picture

আগামীর জন্যেও আপনার এই সিরিজটা যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকলো।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। শুধু ধন্যবাদ জানানো এর জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু মানুষের নেয়ার ক্ষমতা অকল্পনীয় হলেও দেয়ার ক্ষমতা সীমিত, ব্যতিক্রম বাদে। তাই-
ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক's picture

কাগজে লেখার চেয়ে আজকাল আমার ভাল লাগে কী বোর্ড এ টাইপ করে লেখা...।অভ্র আসার পর সেটা আরো প্রসারিত হয়েছে। ইংরেজিতে ব্লগ লিখে লিখে আর ভাল লাগছিল না। আমার ত মনে হয় নিজেকে প্রকাশ করার ভাল মাধ্যম হল এই ব্লগ। নিজের চিন্তা ভাবনা গুলু শব্দের ছন্দে সাজিয়ে তোলা এবং অন্যের কাছে তুলে ধরতে পারা একটা অনেক বড় বেপার।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.