দরকার নাপিতকে ডাক্তারি শেখানো

শোহেইল মতাহির চৌধুরী's picture
Submitted by ShohailMC on Mon, 23/10/2006 - 12:18am
Categories:


দেশের নেতৃত্বের কথা উঠলে, ভবিষ্যতের কথা উঠলে প্রায় সবাই বলে, ভুল লোকগুলো ভুল জায়গায় বসে আছে। তাতে কি? এসব ছুটকো কারণে গদি থেকে নিতম্ব সরানোর কথা তারা ভাবেন না । চেয়ার দখলে থাকায় আর টেন্ডলদের হাম্বারবে বরং তারা একসময় ভাবতে থাকে দক্ষতা তাদের থাকুক না থাকুক জনসমর্থন তাদের পেছনেই আছে। গদিনশীন তাদেরকে সালাম ঠুকতে ঠুকতে জনগণ অভ্যসত্দ হয়ে যায় এরকম ছায়াছবিতে আর ভাবতে থাকে বিষয়টা পরদাদাদের আমল থেকে এরকমইতো ছিল। সুতরাং কোনো অদল-বদলের দাবী ওঠে কদাচিৎ। দর্জি চালাতে থাকে বিদু্যৎ মন্ত্রণালয়, ডাক্তার কূটনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ে বক্তৃতাবাজি করে জাতিসংঘের সম্মেলনে, জমির দালাল পত্রিকা প্রকাশনা চালিয়ে যায়, সিপাহী পানির বোতলে ফুঁ দিয়ে মরমীবাদ বেঁচে।জনগণকে বোকা ভাবার কোনো কারণ নেই। তারা হাততালি দেয় সুবিধা বুঝেই। রোকনউদ্দৌলা মোবাইল কোর্ট বসিয়ে যখন বনানীর দামী রেস্টুরেন্টগুলোর জরিমানা করে তখন তারা পুলকিত হয়। আবার সরকারী লোকজন চলে যাওয়া মাত্র লাইন দিয়ে সেখানেই খাবার কিনতে যায় আর বয়-বেয়ারার সাথে বাতচিতে সরকারের গুষ্ঠি উদ্ধার করে। ম্যাজিস্ট্রেটের পাওয়া খাবারের তেলাপোকাটি আসলে জায়ফলের শেকড় ছিল এমন ব্যাখ্যা মেনে নিয়ে তারা রেস্টুরেন্টের মালিকের সাথে সহাস্যে মাথা নাড়ে। তারা কোনো নতুন বিদআতে যায় না। অথচ ভ্যাটসহ রশিদটা নিতে তারা ভুলে যায়, নিজে বাড়তি টাকাটা দিলেও দোকানমালিককে ট্যাঙ্রে হাত থেকে বাঁচিয়ে সমাজসেবা করার আনন্দ পায় তারা। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় জনগণ জানে গ্রামে পেটের অসুখ দেখা দিলে এ্যাডভোকেট সাহেবকেই ধরতে হবে। কারণ হাসপাতালের সব ওষুধ আর কেমিক্যালগুলো আপাতত: তার গুদামেই চালান হয়ে গেছে। ডাক্তারগুলো ছেলে-মেয়েকে ইংলিশস্কুলে পড়ানোর সুবিধা ছাড়তে চায় না বলে উপজেলার সরকারী হাসপাতালে তারা আসে পনেরদিনে একবার। তারচেয়ে এ্যাডভোকেট সাহেবকেই হাসপাতালের ডাইরেক্টর বানিয়ে দেয়া ভালো। নাহয় তিনি ডাক্তার না কিন্তু তার ফার্মেসিটা তো সবসময় খোলা পাওয়া যায়। তারা আসলে যে ভুল ভাবে এমন বলা যাবে না। গল্পের সেই নাপিতের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ডাক্তারহীন গ্রামে যে ছিল জনপ্রিয় শল্যবিদ। ক্ষুরের পোঁচেই সে করে ফেলতো বড় সড় অপারেশন। তারপর নতুন পাশ করা ডাক্তার এসে যখন দেখলেন কেউ তার কাছে আসছে না বরং ছুটছে নাপিতের দিকে তখন তিনি সিদ্ধানত্দ নিলেন নাপিতকেই বরং কিছুটা ডাক্তারি শিক্ষা দেবেন। তাতে তার ব্যবসা নদীতে ডুবুক গ্রামের লোকের কিছু লাভ হয়। নাপিতও পরম আগ্রহে শিখতে থাকে এনাটমি, ফিজিওলজি। কিন্তু যত শেখে ততই দ্বিধা বাড়তে থাকে তার। আগের মত ফচাফচ ক্ষুর চালাতে গেলে হাত চলে না। নতুন শেখা বিদ্যার কত সূত্র, কত নিয়ম-কানুন। সে বরং রোগীদের ফেরৎ পাঠায় পাশ-করা ডাক্তারের কাছে। জনগণ বেজার হলেও পাশ-করা ডাক্তার খুশিতে বাকুম বাকুম করে।আমাদের যতসব নরসুন্দর-নাপিত-শীল, চারপাশে করছে কিলবিল, তাদেরও এমন করে সূত্র বা নিয়ম-কানুন শেখানোর একটা উদ্যোগ যদি নেয়া যেত। যদি বলা যেত, ব্যবসার পসার তো আপনার রয়েছেই, নাহয় আরেকটু ইংরেজি-ফারসি শেখে আমাদের সামনে নাচলেন কুঁদলেন, আমরা গরীব জনগণ, আপনারাই আমাদের বুশ-বেস্নয়ার, হলিউড-বলিউড; আমরা একটু গর্বভরে ঘুমাতে পারতাম।


Comments

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.