হুদাহুদি ০২

হিমু's picture
Submitted by himu on Sun, 10/06/2018 - 12:30pm
Categories:

"দইবড়াটা একটু চেখে দেখবেন কি, মাই লর্ড?" নার্সিসা ম্যালফয় একেবারে নতজানু হয়ে দইবড়ার বাটি রাখেন ভল্ডেমর্টের সামনে।

ভল্ডেমর্ট চোখ বন্ধ করে চুপচাপ গরুর গোস্তো দিয়ে পোলাও খায় চপচপ করে।

"একদম খাঁটি জিনিস, মাই লর্ড।" লুসিয়াস ম্যালফয় ঘামতে ঘামতে বলে। "কুমারী বকনাকে অমাবস্যা রাতে শাপ দিয়ে গাভিন করে তার দুধ চেরনোবিল থেকে আমদানি করা দ্রোণে দুয়ে ঘরে পাতা দই দিয়ে বানানো। এরচে খবিশ দইবড়া বাজারে নেই, মাই লর্ড...।"

ভল্ডেমর্ট চেয়েও দেখে না দইবড়ার দিকে। পোলাওয়ের থালের দিকে চেয়ে হাত নাড়ে সে, হাতাটা নিজেই পোলাও ভরে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে তার পাতে এনে ঢালে। নার্সিসা কাঠি তুলে বাতানুকূলের তাপমাত্রা আরও দু'দাগ কমিয়ে এনে বলে, "গরুভুনাটা ভালো লেগেছে, মাই লর্ড? এটা সেই বকনাটারই গোস্তো, যার দুধ দিয়ে দইবড়া বানিয়েছি...।"

ভল্ডেমর্ট এবার চোখ খুলে বলে, "দ্যাটস সাম ইভল শিট ইউ পুল্ড, নার্সিসা। খুব্ভালো।"

নার্সিসার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কিন্তু লুসিয়াস দূরে বসে চুপচাপ ঘামে, একটা এল্ফ এসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে তাকে।

ভল্ডেমর্ট চারপাইয়ের ওপর সাজানো চল্লিশ পদের খাবারের দিকে সরু চোখে তাকায়, নার্সিসা কলকল করে বলে ওঠে, "এই বছর কোরবানি ঈদে একটা দুই কুঁজের উট কোরবানি দেবো। জানেন মাই লর্ড, স্নেইপ আর ইয়াক্সলি এসে ঘ্যানঘ্যান করছে, বলে কী, নার্সিসা চলো মিলেঝুলে চার নামে কোরবানি দেই। কী বলবো মাই লর্ড, এই ফকিন্নি মরণখোরগুলির সাথে কথাই বলতে ইচ্ছা করে না... আমি স্নেইপকে বেশি না ঘাঁটায়ে ইয়াক্সলিকে বললাম, কোরবান ইয়াক্সলি! তোমার নামেই কোরবান আছে কিন্তু তার পরও তুমি ভাগে কোরবানি দিতে চাও কেন? গাবতলি থেকে একটা খাসি কিনে এক নামে দিয়ে দেও। সে তবু ঘ্যানঘ্যান করে মাই লর্ড। বলে, তোমার উট তো সাত নামে ভাগ করে দেওয়া যাবে, কিপ্টামি করো ক্যান? আপনেই বলেন মাই লর্ড, আমরা ম্যালফয় পরিবার... আমাদের কি কোনো কিছু সাত ভাগ করা মানায়?"

হঠাৎ ভল্ডেমর্ট খাওয়া থামিয়ে গর্জে ওঠে, "কেন? একটা জিনিস সাত ভাগ করলে সমস্যা কোথায়? কোথাকার লাটসায়েব তোমরা যে একটা জিনিস সাতভাগ করতে পারো না?"

লুসিয়াস কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, "মাই লর্ড, গোস্তাকি মাফ করে দেন হুজুর...।"

ভল্ডেমর্ট আঙুল তুলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে আরও কিছুক্ষণ চপচপ করে পোলাও খেয়ে বলে, "নাক না থাকলে খেয়ে আরাম নাই।"

নার্সিসার মুখ এবার পলকে ফের সাদা হয়ে যায়। লুসিয়াস উদ্বিগ্ন চোখে তাকায় স্ত্রীর দিকে, এল্ফটা আরও জোরে বাতাস করতে থাকে।

"সেদিন এক রাহুত পার্টিতে গিয়েছিলাম।" ভল্ডেমর্ট করুণ মুখে পোলাও চিবায়, গরুভুনার বাটি থেকে বড়সড় এক চামচ মাংস ভেসে আসে তার দিকে। "রাহুত বুচ্ছো তো? অ্যামবাসেডর। আলিশান বাড়িঘর। খুব খাতির করলো আমাকে। ২০০২ সালের মের্লো এনে দিয়ে বললো, ইওর ইভল হেল্থ মাই লর্ড। চুমুক দিতে গিয়ে দেখি, কোনো বাসই পাই না। গন্ধ ছাড়া আঙুরসুধা খেয়ে কোনো মজা আছে? কিন্তু গন্ধ পাবোই বা ক্যামনে? আই হ্যাভ টু শিটি স্লিটস ফর নসট্রিলস। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। একটা কচি রাহুতকে শাপ দিয়ে ব্যাং বানিয়ে থুয়ে আসছি।"

এল্ফটা এবার ছুটে এসে নার্সিসাকে বাতাস করতে থাকে।

ভল্ডেমর্ট বেজার মুখে পোলাও খেতে থাকে। "আমি জানি না কেন আমার নাক এইরকম। আই মিন, ইউ ডোন্ট নিড ফাকড আপ নসট্রিলস টু বি ইভল। এই যে লুসিয়াসের নাক আছে, তোমার নাক আছে, এই বান্দির পুত এল্ফটার পর্যন্ত নাক আছে। অথচ আমি, দ্য ডার্ক লর্ড হি-হু-মাস্ট-নট-বি-নেমড, আমার নাক নাই। ওয়াইন খেয়ে মজা পাই না, মসুরের ডাল খেয়ে মজা পাই না, ওয়াসাবি খেয়ে মজা পাই না, পাঁচফোড়ন দেওয়া কোনো কিচ্ছু খেয়ে মজা পাই না... কিন্তু কেন?"

নার্সিসা আর লুসিয়াস দরদরিয়ে চুপচাপ ঘামে। এল্ফটা একবার উধাও হয়ে লুসিয়াসের কাছে ফের উদয় হয়, দু'পশলা বাতাস করে ফের উধাও হয়ে ফিরে আসে নার্সিসার কাছে।

"তবে কিছু সুবিধাও আছে।" ভল্ডেমর্ট ঢেঁকুর তোলে। "খবিশ জাদুর জন্য জলা-জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করতে হয়, ঐ পানাপচা গন্ধটা এখন আর সহ্য করতে হয় না। তারপর ধরো গিয়া মাঝেমধ্যে এখানে-ওখানে ইফতার-পয়লাবৈশাখ-ঈদ-পূজার দাওয়াতে গেলে লোকজনের গা থেকে সস্তা সুগন্ধির ভকভক গন্ধ আর নাকে আসে না, যেহেতু আমার নাকই নাই। কাউকে ধরে ক্রুসিয়াটিস শাপ মারলে তার হাগুপাদুর গন্ধে পাল্টা ক্রুসিয়াটিসে ভুগতে হয় না। এ কারণে নতুন করে আর নাক গজানোর মন্ত্রের দিকে গেলাম না।" বোরহানির সোরাহির দিকে চোখ পিটপিটিয়ে চাইলো সে। "তবে আমি যেহেতু একজন খবিশ জাদুকর, আই হ্যাভ টু স্টে শার্প অ্যান্ড ওয়ার্ক হার্ড অন মাই ডার্টি ডার্টি ইভল স্পেলস। কখন কী কাজে আসে, নোবডি নৌজ। এজন্য নতুন একখানা মন্ত্র আমি প্রণয়ন কল্লুম।" হঠাৎ কোত্থেকে কাঠি বের করে লুসিয়াস আর নার্সিসার দিকে উঁচিয়ে বলে ওঠে সে, "নাসুমক্রেসেপ্রোপেআনো!"

নার্সিসা আর লুসিয়াস আসন ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে একেবারে। ভল্ডেমর্ট তৃপ্ত চোখে কিছুক্ষণ পেছন চেপে ধরে চারপাই ঘিরে তাদের ছোটাছুটি দেখে, তারপর আরেক হাতা পোলাও নেয় পাতে। "গলদা চিংড়ি। উত্তম! ...না না, এতো উতলা হওয়ার কিছু নেই লুসিয়াস। পাছুর কাছে নাক গজালে প্রথম প্রথম একটু অসোয়াস্তি লাগতে পারে, কিন্তু সয়ে যাবে। মুলা, মুগডাল, ফুলকপি এসব কম করে খেয়ো কিন্তু। আমার কোনো সমস্যাই হবে না, বুঝতেই পারছো, নাকই নাই আমার। কিন্তু তোমরা শুরুতে একটু ভুগবে। বাসায় বদনাটদনা আছে তো? কাগজের দিন শেষ। অবশ্য...," গলদা চিংড়ি চিবায় সে কিছুক্ষণ, "পিপল লাভ টু স্মেল দেয়ার ঔন ফার্টস। ফেসবুক না কী যেন একটা নতুন ইয়ে বের হয়েছে শুনলাম, ওখানে সবাই দিনরাত ঐ কাম করে।"

লুসিয়াসের চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রু নেমে আসে। কিন্তু নার্সিসাকেও ফোঁপাতে দেখে সে তড়পে ওঠে, "এখন বুচ্ছো আমার কষ্টটা?"

নার্সিসা চোখ রাঙিয়ে চুপ থাকতে বলে লুসিয়াসকে।

ভল্ডেমর্ট খিকখিক করে হাসে আর চিংড়ি চিবায়। "কিন্তু এই দেশে এসে খুব আরামে আছি, সেজন্যে তোমাদের থ্যাঙ্কিউ।" ফের কাঠি নাড়ে সে, লুসিয়াস আর নার্সিসা সন্তর্পণে নিজেদের পেছন হাতড়ে স্বস্তি ফিরে পায়, পা টিপে টিপে আসনে এসে বসে তারা। "ডাক্তারমোক্তার শিক্ষক সাম্বাদিক রাজনীতিক বাবাপতি সবাই এসে সারি বেঁধে সালাম করে গেছে। এক ইংরেজি সম্পাদক তো বৃটিশ লর্ড আসার কথা শুনে একেবারে রাতে রাতেই ছুটে আসছে। বলে, মি'লর্ড, এই যে আমার কার্ড। যে কোনো দরকারে যে কোনো সময় শুধু একটা ফোন দিবেন, বাকিটা আমি দেখবো।" নাগিনীর মাথায় সস্নেহ চাপড় দেয় সে। "বললাম, ঠিকাছে মিস্টার, কিছু কচি পুসিক্যাট এনে দিও আমার পাইথনটার জন্য। এরপর যা ঘটলো, কী বলবো বলো... লোকে আমাকে হুদাই খবিশ ডাকে। যাই হোক," গলা খাঁকরালো সে, "হুদাই ওল্ড ব্লাইটিতে বসে সময় নষ্ট করলাম। এই দেশে আমার কারবার শুরু করলে এতোদিনে কই উঠে যেতাম।" হাত চাটতে চাটতে ডানে-বামে তাকায় সে। "হাত ধোয়ানোর কেউ নাই?"

পিটার পেটিগ্রিউ ছুটে আসে কলসি হাতে। "আসছি মাই লর্ড!"

সুদৃশ্য সোনার লোটা বোরহানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে ভল্ডেমর্টের ভুরুর ইশারায়। "হুম। খারাপ না। পুদিনা পাতা একটু বেশি হয়ে গেছে। গোরস্তানের পুদিনা তো? ...হুমম, ঠিকাছে।" হাত ধুয়ে এক চুমুকে লোটা খালি করে উঠে পড়ে সে। "এইবার এক কাপ কড়া পাত্তির চা। ...না না, তুমি না নার্সিসা। বেলা কোথায়? বেলারে পাঠাও। হিহি।" পেটে হাত বোলাতে বোলাতে দোতলার সিঁড়িতে পা রাখে সে, নাগিনী তার পিছু নেয়।

একটু পর শোবার ঘরের দরজা খুলে বেলাট্রিক্স ল্যস্ট্রেঞ্জ ঢোকে; তার পরনে পাতলা কাঁচুলি, ঊরুর কাছে চেরা ঘাগড়া, মাথায় ওড়নার ঘোমটা, নাকে বেশর, চোখে কাজল, ঠোঁটে আলতা, হাতে বড় এক গ্লাসভর্তি দুধ। ভল্ডেমর্ট একটু নড়েচড়ে বসে ছদ্মরাগে তাকে বকা দেয়, "বললাম চা আনতে, আনলা দুধ। ডার্ক লর্ডের পেটে কি ল্যাক্টোজ হজম হয় রে খবিশ নারী?"

বেলাট্রিক্স যতোদূর সম্ভব লীলা-লাস্যে বিছানার পাশে তোরঙ্গের ওপর দুধের গ্লাস নামিয়ে রাখে। ভল্ডেমর্ট আড়চোখে তার কাঁচুলির ফাঁকের দিকে তাকিয়ে খুশিতে হাতে হাত ঘষে কাঠি হাতে নেয়। "নাউ ইটস টাইম ফর সাম গুড ওল্ড স্পেলস। লেটস সি... কোন্টা দিবো বেলা বেবি? উয়িঙ্গার্ডিয়াম লেভিওসা?"

বেলাট্রিক্স যতোদূর সম্ভব সলজ্জ হেসে দাঁতে কড়ে আঙুল গুঁজে ডানে-বামে হেলতে দুলতে থাকে, কিছু বলে না।

ভল্ডেমর্ট আরও ছলনা করে বেলাট্রিক্সের সাথে। "নাহ, এইটা দুধভাত মন্ত্র। এনগর্জিও...।"

এবার বেলাট্রিক্স আঁতকে ওঠে। "মাই লর্ড! পার্ডন মাই অডাসিটি মাই লর্ড, কিন্তু... কিন্তু... আপনি কি প্যারামিটার কল করবেন না মাই লর্ড?"

ভল্ডেমর্ট ভুরু কোঁচকায়, "প্যারামিটার? কীসের প্যারামিটার?"

বেলাট্রিক্স আমতা আমতা করে বলে, "মাই লর্ড, এখন যুগ তো ধরেন গিয়ে পাল্টায় গেছে। মানে, ফাংশন কল করলে তার আরগুমেন্ট দিতে হয় তো। নাহলে এই এনগর্জিও কোত্থেকে কী করে বসবে কোনো ঠিকাছে মাই লর্ড?" নিজের কাঠি বের করে সে, "উইথ ইয়োর পারমিশন মাই লর্ড... এনগর্জিও (সাড়ে সাত, ওয়ান অ্যান্ড হাফ, ইঞ্চেস, ৯০০০০০)...!"

ভল্ডেমর্ট নড়েচড়ে বসে, ক্রমশ তার ভুরু সমান হয়ে আসে, মুখে হাসি ফুটে ওঠে। "হুমমম... কিন্তু নয় লাখ কেন?"

বেলাট্রিক্স উশখুশ করে, "মিলিসেকেন্ডে বলতে হয় মাই লর্ড...।" তার মুখটা করুণ হয়ে আসে। "মাই লর্ড, আমরা ভাবি আমরাই ইভল। কিন্তু আজকালকার লোকজন যে কী খবিশ সব জিনিসপাতি বের করেছে... মাই লর্ড কি পাইথনে কাজ করেছেন কখনও?"

ভল্ডেমর্ট অস্বস্তিভরে কাশে, "তোমার কাছে লুকাবো না বেলা। মাঝেমধ্যে নাগিনীকে নিরালায় ডাকি বটে। শি ক্যান মর্ফ ইন্টু এনিওয়ান, জানোই তো... বিশেষ করে শ্রীদেবী। ...না না, এইভাবে তাকাবা না... নাগিনীর সাথে কিছু করা মানে অয়েলিং মাই ঔন মেশিন...।"

বেলাট্রিক্স হাঁ করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে "এ পাইথন সে পাইথন না..." বলেও থেমে যায়, তারপর বেজার মুখে পিঠের দিকে হাত বাড়িয়ে কাঁচুলির আংটা খোলার চেষ্টা করে, ভল্ডেমর্ট কাঠি নেড়ে বলে, "আলোহোমোরা!"

কিন্তু সদর দরজায় কে এক বেরসিক যেন ঘা মারে, "হরি পটার হাজির! দরজা খোলেন ম্যালফয় সাব!"

ভল্ডেমর্ট লাফিয়ে উঠে বেলাট্রিক্সকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে ছুটে যায় নিচতলায়। "কই? কোথায় হ্যারি পটার? কোথায় সেই ডাইনীর পোলা?"

নিচতলায় গুঁফো এক ভদ্রলোক সহাস্যে লুসিয়াস ম্যালফয়ের সাথে কোলাকুলি করছিলো, ভল্ডেমর্টকে দেখে তাড়াতাড়ি সঙ্গে আসা আপাদম্তক কালো জামা পরা দুটো লোককে ইশারা করে সে। এক কালোজামা কলার পাকড়ে শুঁটকো চেহারার এক চশমা পরা মাঝবয়েসী লোককে সামনে ঠেলে দেয়। "এই যে লাটসাহেব। এই যে হরি পটার। একদম গরম গরম।"

ভল্ডেমর্ট কাঠি উঁচিয়ে সন্দিহান মুখে চশমাপরাকে মন দিয়ে কিছুক্ষণ দেখে বলে, "এটা হ্যারি পটার?"

চশমাপরা হাতজোড় করে কেঁদে ওঠে, "স্যার স্যার স্যার আমি হরিদাস পাল। কবিতা লিখি, বিপ্লব করি, আর একটা ফেসবুক পত্রিকা চালাই স্যার।"

লুসিয়াস ম্যালফয় গর্জে ওঠে, "এ কী খালকামান? এ তুমি কাকে ধরে হ্যারি পটার বলে চালাচ্ছো?"

গুঁফো বলে, "লাটসাহেব, এ পাল বাড়ির ছেলে, এদের চোদ্দগুষ্টি পটার ছিলো। দুই চামিচ কবিতা লিখে এখন বাপদাদার পটার নাম ও ঝেড়ে ফেলতে পারে না। এই ব্যাটা, তুই হরি পটার না?" এক কালোজামা একটা ডিম বের করে দেখায় হরিদাস পালকে।

হরিদাস এবার সাথে সাথে সোজা হয়ে স্বীকার করে, "আমিই হরি পটার।"

বাকরূদ্ধ ভল্ডেমর্ট একবার লুসিয়াসের দিকে, আরেকবার খালকামানের দিকে তাকায়। নার্সিসা গলা খাঁকরে বলে, "একটা গামছা এনে দেবো হুজুর?"

ভল্ডেমর্ট তাড়াতাড়ি কাঠি নেড়ে নিজের আলখাল্লাটা সামনের দিকে একটু ঢোলা করে নেয়। "সরি। দিস ওয়াজন্ট মেন্ট ফর হ্যারি।" তারপর খালকামানের দিকে ফিরে চোখ রাঙায় সে, "তুমি কি আমারে আবুল পাইছো হালার ভাই? এইটা হরি পটার হইলেই বা আমার কী? আমি খুঁজি হ্যারি পটারকে!" কাঠি নেড়ে হরিদাস পালকে ঝাঁঝরা করে দেয় সে, "এভাডা কেডাভ্রা!"

দুই কালোজামা সপ্রশংস চোখে ভল্ডেমর্টকে আগাপাশতলা দেখে নিজেদের মধ্যে কী যেন ফিসফাস করে। খালকামান একটুও বিচলিত হয় না, "কোনো ব্যাপারই না লাটসাহেব।" হাততালি দেয় সে, "পরেরজনরে আনো!"

দুই কালোজামা কোত্থেকে যেন আরেক শুঁটকোকে হাজির করে। এর বয়স প্রথমজনেরও বেশি। "এই যে স্যার, হাঁড়ি পটার।"

ভল্ডেমর্ট পায়চারি শুরু করে, নাগিনীও তার সাথে সাথে এঁকেবেঁকে চলতে থাকে। "লেট মি সি!" হেঁকে ওঠে ভল্ডেমর্ট। "এও আরেক কুমার, শুধু হাঁড়ি বানায়। শানকিও না, ফুলের টবও না, ঘটিও না, বাটিও না। শুধু হাঁড়ি। তাই তোমরা ওকে বলছো হাঁড়ি পটার। তাই তো?"

খালকামান খুশির হাসি হাসেন। দুই কালোজামাও হাসে হেলেদুলে। লুসিয়াসের কাজের এল্ফ ফের কোত্থেকে উদয় হয়ে তাকে বাতাস করতে থাকে।

ভল্ডেমর্ট গর্জে ওঠে, "তোমরা কি ফাইজলামি পাইছো? এইসব করে তোমরা হি-হু-মাস্ট-নট-বি-নেইমডের সাগরেদি চাও?" আবার এভাডা কেডাভ্রা হেঁকে হাঁড়ি পটারকেও ঝাঁঝরা করে ফেলে সে। নাগিনী এগিয়ে গিয়ে দুই লাশের ওপর কিছুক্ষণ চরে বেড়ায়।

খালকামানের হাসি একটুও মলিন হয় না। "লাটসাহেব, বিলাতে কী হয়, আমরা জানি না। এদেশের হালচাল ভিন্ন। ডিফারেন্ট ফোক্স, ডিফারেন্ট স্ট্রোক্স গো সাহেব!" দুই কালোজামাকে ইশারা করে সে। "শেষেরটাকে আনো।"

এবার দুই কালোজামা ঠেলতে ঠেলতে এক মোচদাড়িওলা কোঁকড়াচুলো প্রবীণকে নিয়ে আসে। প্রথমে তাকে কিছুক্ষণ কষে বেতপেটা করার পর এক কালোজামা তাকে শুধায়, "তুই হ্যারি?"

কোঁকড়াচুলো ডুকরে উঠে বলে, "আমি হ্যারি স্যার। হ্যারি। কোনো সন্দেহ নাই।"

খালকামান এক তৃপ্ত "বলেছিলাম না?" দৃষ্টি হানে ভল্ডেমর্টের দিকে। এক কালোজামা এবার কোঁকড়াচুলোর প্যান্ট খুলে তাকে পেছন ফিরে দাঁড় করায়। "এই যে স্যার, দেখুন। এই যে বাম পাছায় আপনার বাণের দাগ, যেটা ঠিকরে এসে আপনাকেই নাই করে দিয়েছিলো। সব মিলে গেছে স্যার।"

ভল্ডেমর্ট হাল ছেড়ে দিয়ে কাঠিটা দিয়ে কান খোঁচাতে খোঁচাতে বলে, "এও কি পাল পাড়ার ছেলে নাকি?"

কোঁকড়াচুলো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ফের প্যান্ট পরতে পরতে বলে, "না স্যার, আমি খাঁটি কুমার। মানে... মাটির জিনিস বানানোর কুমার না স্যার, বরং জিনিস মাটি করার কুমার।"

খালকামান লুসিয়াস ম্যালফয়ের কাঁধ জড়িয়ে হাসিমুখে বলেন, "কুমার গ্রীষ্মজিৎ। দেশের সবচে নামকরা কুমার স্যার।" পকেট থেকে অভিধান বের করে আঙুলে ছ্যাপ দিয়ে পাতা ওল্টাতে থাকেন তিনি। "এই যে স্যার, ক-তে কুমার... কুমারের ইংরেজি পটার। আর নিজেই তো শুনলেন, ও স্বীকার গেছে ও হ্যারি। হ্যারি পটার স্যার। চশমা আছে দাগ আছে হ্যারি আছে পটার আছে। এই ব্যাটাই দ্য বয় হু লিভড।"

এক কালোজামা ঠাস করে চড় মারে গ্রীষ্মজিতের গালে। "হগওয়ার্টস যখন পুড়ছিলো, এই ব্যাটা তখন জিনি উইজলিকে চুমা খাচ্ছিলো!"

ভল্ডেমর্ট কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে হাত নাড়ে, "ওকে যেখান থেকে নিয়াসছো, সেখানে ফিরায়ে দিয়াসো। তারপর সবাই দূর হও। আর জ্বালাবা না।" লুসিয়াসের দিকে ফিরে চোখ রাঙায় সে, "তুমি যে এদের মরণখোরের লিস্টে তুললা, কোনো ভর্তি পরীক্ষা নিছো? নাকি তোমার পোলা ড্রেকোরে য্যামনে ডোনেশন দিয়া হগওয়ার্টসে ভর্তি করাইছো... না না নার্সিসা, ডার্ক লর্ডের মুখে মুখে কথা বলবা না... সবাই জানে তুমি স্নেইপরে ডোনেশন দিয়া ড্রেকোরে হগা স্কুলে দিছো...।"

লুসিয়াস মুখ কালো করে বলে, "মাই লর্ড, এরা সবাই আমার ভর্তি পরীক্ষায় টপ মার্কস পাইছে। খুব কড়া কোশ্চেন করেছিলাম মাই লর্ড। দে প্যাসড উইথ ফ্লায়িং কালারস।"

খালকামান একটু আহত মুখে বলেন, "লাটসায়েব, এরে ছাইড়া দিবেন? বের হয়ে গিয়ে যদি সম্বাদসম্মেল করে?" কুমার গ্রীষ্মজিতের দিকে ফিরে চোখ রাঙান তিনি। "এই ব্যাটা, এই বিদেশি স্যাররে পার্সেলটাঙে তোর রোজ বিকেলে গানটা শোনা'ছে!"

কুমার গ্রীষ্মজিৎ ভয়ে ভয়ে সবার মুখের দিকে একবার করে চেয়ে ভাঙা গলায় গান ধরে, "তুমি রোজ বিকেলে আমার দোকানে গুল নিতে আসতে, জানি না তুমি গুল না আমাকেই বেশি ভালোবাসতে...।"

ভল্ডেমর্ট একটু শিউরে ওঠে। কাঠি নেড়ে সে বলে, "দ্যাটস সাম রিমার্কেবলি ইভল শিট দেয়ার। না না, ওকে মারার দরকার নাই। ছেড়ে দাও। হয়তো বড় হয়ে আমাদের কাজে আসবে।" হাত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা হরি পটার আর হাঁড়ি পটারের দিকে চেয়ে সে বলে, "এদের কী করবা?"

এক কালোজামা বলে, "কোনো বালুর মাঠে নিয়ে যাবো স্যার। দুইটা কাঠি, এক ছটাক বাবা, চার বোতল ফেন্সি আর গিল্ডেরয় লকহার্টের দুই কপি বই পাশে ফেলে রেখে আসবো।"

আরেক কালোজামা বলে, "এদের নিয়ে আমরা জাদুকর খুঁজতে মাঠে ময়দানে গেছিলাম। কিন্তু আড়ালে ওঁৎ পেতে থাকা জাদুকরেরা এদের উপর বাণ মারে। আমরাও পাল্টা বাণ মারি। বাণাবাণির এক পর্যায়ে এরা এভাডা কেডাভ্রাবিদ্ধ হয়। আমরাও সামান্য আহত হই।"

খালকামান বলেন, "ব্যাপার না স্যার, মাঝেমধ্যে দুই-তিনটা এরকম হবেই। আপনি রেস্ট নেন। ...ভাবী, কড়া পাত্তি দিয়ে আমাদের তুরন্ত তিন কাপ চা খিলান।"

ভল্ডেমর্ট একটু থতমত খেয়ে চুপচাপ শোবার ঘরের সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায়।

[সমাপ্ত]


সব ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। সব।


Comments

সোহেল ইমাম's picture

যার নাম নিতে নাই তার নাম নিলেন, তাও শ্রেফ একবার না। আপনার ভয়ডর নাই!! এ্যাব্রা ক্যাডাব্রার ক্রস ফায়ারে পড়ে হাপিস হয়ে যাবেন যে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আয়নামতি's picture

Quote:
পিপল লাভ টু স্মেল দেয়ার ঔন ফার্টস।

অট্টহাসি দিলেম ইহা পড়ে

Quote:
সব ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। সব।

এইটা চরম চোখ টিপি

আধ্যাত্মিক গল্পটা বেশ হয়েছে দেঁতো হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.