বঙ্গবন্ধুর ফেরা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর's picture
Submitted by nazrul islam on Sat, 17/03/2018 - 5:16pm
Categories:


[প্রতিকৃতি: আকাশলীনা নিধি]

মোট চারবার তাঁকে ফিরতে হয়েছে এই বাংলায়। জীবিতকালে দুইবার, মৃত্যুর পর দুইবার!

গোপালগঞ্জের কিশোর, মুসলিম লীগের তরুণ কর্মী, পাকিস্তান আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবার দেশে ফিরেছিলেন দেশভাগের পর। তাঁর কাছে তখন জাতির কোনো প্রত্যাশা ছিলো না, তিনি তখন তেমন উল্লেখযোগ্য কেউ নন। কিন্তু পাকিস্তান প্রেমে বিভোর জাতিকে ধারাবাহিকভাবে তিনি ভাষা থেকে স্বাধীকার, স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। ২৪ বছরের এই স্বপ্ন বুননের পথ পরিক্রমায় তিনি পরিণত হয়েছিলেন বাংলার একক নেতায়। বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতায়। তাঁর ইশারায় যেখানে গোটা জাতি ঢাল তলোয়ার ছাড়াই অসম যুদ্ধে ঝাঁপ দিতে একটুও ভয় পায়নি। তাঁর প্রত্যক্ষ অনুপস্থিতিতেও যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলো।

এই ২৪ বছরে শেখ মুজিব নিজেকে তৈরি করেছিলেন জনগনের সমান্তরালে একজন একক বঙ্গবন্ধুকে। গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে, এক স্বপ্নের মালায় গাঁথতে, এক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরতে তিনি জাতির আকাঙ্খাকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন। গোটা জাতির প্রত্যাশা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। এছাড়া বিকল্প ছিলো না।

দ্বিতীয়বার শেখ মুজিবুর রহমান এই বাংলায় এলেন জাতির জনকের বেশে, বঙ্গবন্ধু হয়ে। ১০ জানুয়ারী ১৯৭২, সবচেয়ে স্মরণীয় ফেরা ছিলো সেবার। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, তথ্যবিচ্ছিন্ন, চোখের সামনে নিজের সমাধি নিয়ে তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন দশ মাসের মতো। জানতেও পারেননি তাঁর প্রিয় বাংলায় কী হচ্ছে না হচ্ছে। দেশের মানুষও জানতে পারেনি ‘মুজিব ভাই’ বেঁচে আছেন কি নেই! সেই জীবন্মৃত শেখ মুজিবুর রহমান আবার ফিরলেন নিজের দেশে, স্বাধীন বাংলায়। এ ফেরা ছিলো সবচেয়ে স্মরণীয়, সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ, সবচেয়ে ভালোবাসার, সবচেয়ে গর্বের এবং সবচেয়ে ভয়েরও!

ত্রিশ লক্ষ স্বজন হারিয়ে, সম্ভ্রম হারিয়ে, ঘর পুড়িয়ে, পঙ্গু হয়ে, নিঃস্ব হয়ে, ক্ষুধায় কাতর হয়ে সাত কোটি মানুষ অপেক্ষায় ছিলো এক জাদুকরের। জাদুর ছোঁয়ায় যিনি এই জাতির সব দুঃখ দুর্দশা দূর করে দেবেন। ২৪ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন, জাতির পিতা হয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিজন মানুষের সবচেয়ে আপন স্বজন হয়ে উঠেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন সকলের নিরাপদ আশ্রয় আর স্বপ্ন পূরণের জাদুকর। সবাই অপেক্ষায় আছে সেই স্বপ্ন পূরণের সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে! সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত একটি দেশে, আর্থিক মজুদহীন একটি দেশে নিমেষে এই স্বপ্ন পূরণ করতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাদুকরও পারবে না। বঙ্গবন্ধুও পারেননি। তিনি সময় চেয়েছিলেন, চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সে সময় তাঁকে দেওয়া হয়নি। তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। হত্যা করা হয়েছিলো সপরিবারে। হত্যা করা হয়েছিলো তাঁর স্বপ্ন, আদর্শ, চেতনাকে।

পরবর্তী ২২ বছরের প্রতি মুহূর্তে তাঁকে মুহূর্মুহু হত্যা করা হয়েছে এই জাতির সামনে। তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নামে মিথ্যে অপবাদ ছড়িয়ে, ভুল তথ্য ছড়িয়ে এই বাংলায় তাঁকে ঘৃণার পাত্রে পরিণত করার সবরকম চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিহাস থেকে মুছে ফেলবার চেষ্টা করা হয়েছে তাঁর নাম। সেই নাম নেওয়াও শাস্তিযোগ্য ছিলো। দীর্ঘ ২২ বছরে গড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে নিকৃষ্ঠ একজন মানুষ হিসেবে!

সেই বাংলাদেশে আবার ফিরলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ফিনিক্স পাখির মতো। ১৯৯৬ সালে। যখন আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। মৃত্যুর পর তাঁর প্রথম ফেরা, নিজের বাংলায়। এই ফেরাও ছিলো প্রত্যাশাহীন। মুজিব ভাইকে যাঁরা ভীষণ ভালোবাসেন, ২২ বছর যাঁরা সেই ভালোবাসা গোপন করে নিভৃতে কেঁদেছেন, তাঁরা শেখ মুজিবকে ফিরে পেলেন। এই ফেরায় কোনো প্রত্যাশা ছিলো না। কন্যা শেখ হাসিনা এই বাংলায় নতুন করে শেখ মুজিবকে প্রতিষ্ঠিত করলেন তিলে তিলে। নতুন প্রজন্ম নতুন করে চিনলো তাঁকে। নতুন করে জানতে শুরু করলো বাঙালি জাতির সত্য ইতিহাস। সে ফেরায়ও তাই কোনো চাওয়া পাওয়া ছিলো না।

মৃত শেখ মুজিব নতুন করে আবার ফিরলেন এই বাংলায়, এবার। এ এক সম্পূর্ণ নতুন ফেরা। ততোদিনে ‘মুজিব’ একটা ব্র্যান্ড হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘসময় সরকারী দায়িত্ব পালনের ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে মুজিবকন্যার আওয়ামী লীগ। যে ৭ মার্চের ভাষণ হারিয়ে যেতে বসেছিলো ইতিহাস থেকে, সেই ভাষণ এখন বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত। পথে প্রান্তরে সর্বক্ষণ বাজে এই ভাষণ। কণ্ঠে কণ্ঠে বাজে গান ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই!’

মুজিবকোট এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী পোশাক, মুজিব এখন সবচেয়ে বড় ক্ষমতা, সবচেয়ে বড় দাপটের নাম। আর সেই ক্ষমতার প্রত্যাশার ’দায়’ কাঁধে নিয়ে শেখ মুজিব আবার জীবিত হয়ে উঠছেন তাঁর বাংলাদেশের প্রতি প্রান্তে। আবার তিনি অধিষ্ঠিত এবং প্রতিষ্ঠিত বাংলার মসনদে, সর্বজনপদে!

অসংখ্য মুজিবকোট পরিহিতজনের কাছে শেখ মুজিব ফিরেছেন কেবলই ক্ষমতা আর দাপটের প্রয়োজনে। এখানে তিনি শুধুই একটি ব্যাবহার্য ব্র্যান্ড। আরেক অংশের কাছে শেখ মুজিব ফিরেছেন মুক্তিযুদ্ধের নতুন লড়াইয়ের অধিনায়ক রূপে। যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর বিচার করতে, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে। নতুন এই ‘মুজিব’কে ঘিরে তাই আবারো প্রত্যাশার পাহাড় জমেছে, জমছে। সেই প্রত্যাশার এবং ক্ষমতার দায় মেটাতে হবে এবার মুজিবকে! ২০ বছর আগের ২২ বছরে গড়ে ওঠা যে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিলো মুজিব ঘৃণার পুঁথি মুখস্ত করে, তারা এখন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রজন্ম। এরও আগে যারা মুজিবহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলো, তারা এখনো গুরুত্বপূর্ণ এবং সক্রিয়। তাদের কাছে শেখ মুজিব এখনো ঘৃণিত। শেখ মুজিবকে এখন মেটাতে হবে এই ঘৃণার দায়ও!

পুনরায় হারিয়ে যাবেন? নাকি গৌরবে অধিষ্ঠিত থাকবেন অনাদিকাল? পুলসেরাতের সামনে দাঁড়ানো নতুন শেখ মুজিব। আজ তাঁর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী। দু’বছর পর জন্মশতবর্ষ।

জীবদ্দশায় দেবতার সম্মান পেয়েছিলেন রবিঠাকুর, শতবর্ষ এমনকি সার্ধশতবর্ষ পরেও তিনি স্বস্থানেই আছেন। বিবিসির জরিপে সেই রবীন্দ্রনাথকে পেছনে ফেলে শেখ মুজিব হয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। জাগরণ পুনর্জাগরণের শেখ মুজিব নিজের জন্মশতবর্ষে কোথায় থাকবেন? বাঙালির হৃদয়ের মনিকোঠায়? নাকি পুনরায় তাঁকে ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে আস্তাকুড়ে? ভবিষ্যতের কাছে এ এক বিরাট প্রশ্ন।

কিন্তু এই প্রশ্ন এবং উত্তরের বহু উর্ধ্বে এখন শেখ মুজিব। তাঁর পোশাক গায়ে জড়ানো লাখো নতুন মুজিব সেনা কি তাঁকে আগলে রাখবেন আগামী দিনগুলোতে? পার করবেন পুলসেরাত? নাকি প্রয়োজন ফুরোলে কিংবা সঙ্কট এলে শরীর থেকে খুলে ফেলতে দ্বিধা করবেন না ‘মুজিব কোট’?

বিপ্লবী চে গুয়েভারাকে ধ্বংস করার প্রয়োজনেই তাঁকে সবচেয়ে জীবিত রাখতে হয়েছে। হ্যাটে, টিশার্টে, মদের বোতলে, অন্তর্বাসে চে’কে ব্র্যান্ড করে দেওয়া হয়েছে। ‘তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়’ বলে চিয়ার্স করতে ভালোবাসি আমরা। ব্যাস।

মুজিবের মৃত্যু কাউকে অপরাধী করে দেয়? দেবে? বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে প্রশ্নটা থাকলো।

শুভ জন্মদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আপনাকে আমি ভালোবাসি। যেমন ভালোবাসি এই বাংলা মা’কে।


Comments

আব্দুল্লাহ এ.এম.'s picture

৭৫এ আমি স্কুলের ছাত্র। আমাদের বাসার পাশেই অন্য একটি স্কুল। সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর মাসের দিকে একদিন সে স্কুলের একটি কক্ষের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি সেখানে বাঁশের খুঁটি, কাঠের তক্তা, পুরাতন কাগজ-খাতা-বই ইত্যাদি নানা পরিত্যাক্ত জিনিষপত্র স্তূপ করে রাখা হয়েছে। তারই এক প্রান্তে মেঝেতে পড়ে আছে বঙ্গবন্ধুর একটি ফ্রেমে বাঁধানো ছবি। আগে এ ছবিটা অফিস কাম শিক্ষকদের বসার ঘরে টানানো ছিল দেখেছি, এখন আর সেখানে রাখার কোন প্রশ্নই আসে না। কিন্তু একেবারে ফেলে না দিয়ে রেখেই বা দেয়া হয়েছে কেন, তা ও ঠিকমত বুঝে উঠতে পারি নি। অপরিণত বয়সের চিন্তা ভাবনায় আমার আশঙ্কা হয়েছিল, এখানে এভাবে নষ্ট হয়ে গেলে এই ছবিটি বোধ হয় আর কোনদিন পাওয়া যাবে না। সিদ্ধান্ত নিলাম- ছবিটি চুরি করবো। সে রাতেই কক্ষটির দরজায় লাগানো একটি নড়বড়ে তালা ভেঙ্গে ছবিটি চুরি করে এনে বাসায় আমার গোপন সংগ্রহশালায় রেখে দিয়েছিলাম। হায় অবোধ বালক! যে ছবি মানুষের হৃদয়ে আঁকা রয়েছে, তার কাগজের প্রতিকৃতি রক্ষা করার এই হাস্যকর প্রয়াস!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর's picture

বাহ্... কী দারুণ!
স্যালুট আপনাকে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক's picture

শেষের বিশ্লেষনগুলো একদম টু দ্য পয়েন্ট হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত মত, বড় রকমের টালমাটাল অবস্থায় এই নব্য মুজিব কোট পরিহিত-দের একজনকেও আপনি খুঁজে পাবেন না। ঘৃণার দায় মেটানোর কিছু নেই। মুজিব এমন এক বিশাল মানুষ, এই এট্টুক ঘৃণা তার এক-আকাশসম উপস্থিতির কাছে নগণ্য। যারা মনের ভেতর, বুকের ভেতর মুজিবকে লালন করেন, তারাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নসারথি। তবে আফসোস, এদের সংখ্যা খুবই কম।

অন্তরা রহমান

অতিথি লেখক's picture

আপনার লেখটা কদিন আগেই পড়েছি। খুব ভালো লেগেছ। এই প্রসঙ্গে আমার একটা স্মৃতিময় ঘটনা রয়েছে। বুঝতে পারছিলাম না এখানে লিখবো নাকি লিখবো না। আজ ভাবলাম লিখেই ফেলি।

একানব্বই সালের জানুয়ারির নয় তারিখে আমরা চার বন্ধু একটা রিকশায় করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম সাত মসজিদ রাস্তার আশেপাশের বিভিন্ন গলিতে। বিষয়টা যতখানিক অমানবিক শোনাচ্ছে ততটা আসলে নয়। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আমরা, পাখির মতো হালকা শরীর। এখনকার মতো তেল-চর্বি-মাখনময় ফাস্ট ফুডের চল তো তখন ছিলোনা, ডালপুরি আর সিঙাড়ায় আর যাই হোক ভুঁড়ি গজায় না।

তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। পাড়ায় পাড়ায় কেমন অদ্ভুত একটা উত্তেজনা, শিহরণ। কাল দশ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। স্বৈরাচার মুক্ত বাংলায় দ্বিতীয়বারের মতো ফিরে আসছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এর আগেও মাঝে মাঝে মাইকে বাজানো হতো, তবে সেটা সাধারণত বিভিন্ন এলাকার আওয়ামীলীগের অফিসের সামনেই। তাও কতো ঝামেলা পার হয়ে! কিন্তু সেই নয় তারিখে মানুষের মনের বাঁধন খুলে গিয়েছিলো যেন। পাড়ার ভিডিও ক্লাবের সামনে দুটো স্পিকারে বাজছে সাতই মার্চের ভাষণ, বেবি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে, মহল্লার লাইবেরির দরজায়, বাজারের ঘুপচিতে কোন এক মসলা বিক্রেতার দোকানে,...........যেদিকেই যাই বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত কণ্ঠস্বর। আলো আঁধারিতে মনে হচ্ছিলো যেন একানব্বই নয়, একাত্তুরের দ্বাদশ মাসের শেষের দিকের কোন একটি দিন। আমরা বুক ভরে মুক্তির নিঃশ্বাস নিতে নিতে চলছি ঢাকার পথে।

আমাদের চারজনের একজন যাকে বলে ভালো ছেলে। কারও সাতেপাঁচে নেই। মোটা মোটা বই পড়ে, ভারি ভারি সিনেমা দেখে, মাঝে মাঝে আলিয়াস ফ্রসেজে গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করে নিতুন কুণ্ডের ভাস্কর্যের মানে। আমারা অন্য তিনজন রাজনীতি করি। দুজন ছাত্রলীগ, একজন ছাত্রফ্রন্ট। ফ্রন্টের বন্ধুটা অনেকটা আমাদের 'ভালো ছেলে' বন্ধুটার মতোই, তবে সে মিছিলে যায়। আমাদেরই মতো গলা ছেড়ে স্লোগান দেয়, ঢিল কুড়িয়ে ছুড়ে মারে পুলিশের দিকে।

রিকশা চলছে, আমরা তখন ধানমন্ডির কোন এক গলিতে। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, আমাদের সেই 'ভালো ছেলে' বন্ধুটা রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে দিয়ে হাঁক ছাড়লো, 'জয় বাংলা'। আমরাও কণ্ঠ মেলালাম 'জয় বাংলা', সেই ফ্রন্টিয়ারও। জয় বাংলা শব্দটা অন্যরকম, শুনলেই রক্ত গরম হয়ে যায়।

হঠাৎ শুনি কুকুরের ঘেউ ঘেউ, মানুষের ক্রুদ্ধ চীৎকার, লোহার গেট খুলে যাবার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ। কিছু বোঝার আগেই আমাদের ঘিরে ধরল পাঁচ ছয়জন তরুণ। তাদের হাতে পিস্তল, কাটা, কিরিচ। মুখে গালির তুবড়ি। একজনের হাতে ধরা শেকলে বাঁধা দুটি জার্মান শেপার্ড খেঁকিয়ে চলছে পাল্লা দিয়ে। আতংকে আমাদের গলা শুকিয়ে আসছে, বেঁচে ফিরবো তো!

সন উনিশশ একানব্বই, তাং ৯ই জানুয়ারী, বুধবার। আমাদের রিকশা দাঁড়িয়ে ধানমন্ডির ফ্রিডম পার্টির অফিসের সামনে....................................

----মোখলেস হোসেন

এক লহমা's picture

চলুক
"এরও আগে যারা মুজিবহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলো, তারা এখনো গুরুত্বপূর্ণ এবং সক্রিয়। তাদের কাছে শেখ মুজিব এখনো ঘৃণিত। শেখ মুজিবকে এখন মেটাতে হবে এই ঘৃণার দায়ও!"

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

এক লহমা's picture

"[প্রতিকৃতি: আকাশলীনা নিধি]" - খুব সুন্দর হয়েছে। অনেক আদর তাকে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সোহেল ইমাম's picture

বঙ্গবন্ধুকে মনে হয় বারবার এই বাংলাদেশে আসতেই হবে। একদিন আওয়ামীলীগও হয়তো থাকবেনা, আমরাও কেউ থাকবোনা কিন্তু বাংলাদেশ থাকবে আর এই বাংলায় তিনি আসবেন, পরম মমতায় ঘাসে পা ডুবিয়ে হেঁটে বেড়াবেন। একটা দেশের অস্তিত্বের সাথে যে মানুষটা মিশে গেছেন তাকেতো বারবারই ফিরে আসতেই হবে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.