তোমার জন্য লেখা এলোমেলো শব্দের ঝাঁক- ৪(২)

রোমেল চৌধুরী's picture
Submitted by Nebula [Guest] on Mon, 08/05/2017 - 1:33am
Categories:

তোমার জন্য লেখা এলোমেলো শব্দের ঝাঁক-৪(১)

এই যে তুমি কল্পনার পাখায় ভর করে বাংলাদেশ থেকে সাইপ্রাসে এলে, সে জন্য তোমার কোন ট্রাভেল ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হল না। এ যেন তোমার আনন্দিত শৈশবে গেয়ে ওঠা রবি ঠাকুরের গান,

Quote:
কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে!
মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে।

বাস্তব কিন্তু এতটা নির্ভার নয়। তুমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তোমায় দিয়েছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট। দেশের বাইরে যে কোন জায়গায় যাবার জন্য পাসপোর্ট একটি অত্যাবশ্যকীয় ট্রাভেল ডকুমেন্ট। এতে আছে তোমার নাম, জন্মস্থান, জন্মতারিখ, ছবি, স্বাক্ষর, ও অন্যান্য শনাক্তচিহ্ন। তোমার পাসপোর্টে এসব তথ্য মেশিনে পড়বার মত করে বিন্যস্ত করা আছে। এতে করে তুমি যে দেশে যাচ্ছ, সে দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ খুব সহজেই তোমার পাসপোর্ট পরখ করে তোমার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে।

যে দেশের অতিথি হয়ে তুমি যাচ্ছ, সে দেশ তোমাকে সাদরে বরণ করবার জন্য প্রস্তুত কিনা, সেটির নিশ্চিতি হচ্ছে সে দেশের ভিসা। এই যেমন তুমি যদি সাইপ্রাস ঘুরতে আসতে, তাহলে সাইপ্রাসের ইমিগ্রেশন দপ্তরে তোমাকে টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হত। কিন্তু ধর, আমরা যেহেতু গ্রীসে যাচ্ছি, আমরা আবেদন করব সেঞ্জেন ভিসার। এই ভিসায় তুমি ইউরোপের ২৬ টি দেশে অবাধে পরিভ্রমণ করতে পার। রবি ঠাকুরের কল্পনার পৃথিবীর সীমিত বাস্তবায়ন, তাই না?

ভিসা পাবার পর বিমানের টিকেট সংগ্রহের পালা। আমরা বাপ-বেটি দু’জনেই মিতব্যয়ী। আমাদের লক্ষ্য হত যথাসম্ভব স্বল্পমূল্যের টিকেট কেনা। সেটা যাতে সুলভে মেলে, সেজন্য আমরা দুজনে মিলে বুদ্ধি খাটিয়ে যাবার ও ফেরত আসবার দিনক্ষণ ঠিক করতাম। সিদ্ধান্ত হত, আমরা যাব ইস্টারের ছুটি শুরু হবার অন্ততঃ দিন তিনেক আগে, আর ফিরে আসব ঠিক ইস্টারের দিনে। এ দুই সময়ে ভিড়ভাট্টা কম থাকবে, শেষ মুহূর্তেও বিমানে পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত আসন। চড়া দাম এড়িয়ে টিকেট কেনা সম্ভব হবে। আমাদের অনুমান ফলে গেল। সুলভেই পেয়ে গেলাম পছন্দের টিকেট, ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসের টিকেট কেনবার সংগতি যে আমাদের একেবারেই নেই, তা নয়। কিন্তু মা, পর্যাপ্ত উপার্জন কি একজন মানুষকে যথেচ্ছা খরচের অধিকার দেয়?

কত বড় দেশ গ্রীস, অথচ তা দেখবার জন্য এই এতটুকু সময় আমাদের হাতে। মানুষের জীবনটাও যে এমনই, মা’মণি। সারাক্ষণই সময়ের আক্রা, তবু কত যে সময় আমরা হেলায় নষ্ট করি। কাজের সময় অলস বসে থেকে, মাত্রাতিরিক্ত ঘুমিয়ে, অনাবশ্যক কলহ-বিবাদে লিপ্ত হয়ে। অথচ আমরা সবাই জানি, এই যে বর্তমানের এই মুহূর্তটি অতীতের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেল, তা আর কস্মিনকালেও ফিরে আসবে না।

ফিরে আসি ভ্রমণের প্রসঙ্গে। ভিনদেশে অতিথি হয়ে বেশিদিন থাকাটা তো শোভনীয় নয়, খরচাপাতিও প্রচুর। সময়ের স্বল্পতা বুঝে কি দেখবে, কি করবে, কি অভিজ্ঞতা ঝুলিতে ভরবে, সেগুলো তোমাকে নির্বাচন করতে হবে অনেক বুঝে-সুজে। সে জন্য প্রয়োজন প্রাক-ভ্রমণের। আন্তঃজালের সুবাদে আজ পুরো পৃথিবী তোমার হাতের নাগালে। ঘরে বসে জানতে পারছ পৃথিবীর দূরতম প্রান্তেরও খবর। মাউসের কয়েকটি টোকায় হিড়হিড় করে তোমার চোখের সামনে নেমে আসছে আকাঙ্ক্ষিত তথ্য-সম্ভার। তাই ব্যাগ-প্যাক কাঁধে ফেলে বেরিয়ে পড়বার আগে এসব তথ্যের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার কর। পূর্ব প্রস্তুতির সুযোগ যেখানে অবারিত, সেখানে আগে থেকে যতটুকু পারা যায় নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়াই বিচক্ষণতার পরিচায়ক। যে জায়গাটা দেখতে যাচ্ছ, তার উপর লেখা নানাজনের লেখা ট্রাভেলগ ও রিভিউ পড়। ট্রিপ এডভাইজার, লোনলি প্লানেট এইসব ওয়েবসাইটে এসব তুমি পাবে। ইউটিউবে পাবে অনেক অনেক ভিডিও। এতে করে তোমার ভ্রমণ হবে সহজতর, নিরবচ্ছিন্ন ও ফলদায়ক। আন্তঃজাল ঘেঁটে ঘেঁটে দর্শনীয় স্থানগুলোর একটা তালিকা করে নাও। তারপর সেই তালিকাটি নিজের পসন্দক্রমে সাজিয়ে নাও। লক্ষ্য রেখ, যদি বা তোমার তালিকার সবকটি স্থান ঘুরে দেখা সম্ভব নাও হয়, অন্ততঃ অবশ্য দর্শনীয় স্থানগুলো যাতে বাদ না পড়ে। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে এই প্রায়োরিটি নির্ধারণ করা হচ্ছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্থির মস্তিষ্কে, ভেবে-চিন্তে করবার বিষয়।

অল্প ক’দিনের সফরে একটি দেশের সমস্তটা তো আর ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় সে দেশের ইতিহাস, সভ্যতা, নৃতত্ত্ব, সমাজ ও মানুষের সাথে গভীরভাবে পরিচিত হওয়া। যুগে যুগে দীর্ঘ সময় ধরে বিদগ্ধজনদের এই ভাবনা ভাবিয়েছে। তারা চিন্তা করে বের করেছেন, সীমিত কলেবরে হলেও কি করে একই ছাদের তলায় সুদূর অতীতের অন্দর থেকে নিকট অতীতের চৌহদ্দি পর্যন্ত টুকরো টুকরো নমুনাকে জড়ো করে ভ্রমণবিলাসী জ্ঞানপিপাসু মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের পাত্রটি উপাদেয় করে তোলা যায়। ফলে স্থাপিত হয়েছে নানা ধরণের মিউজিয়াম। সংক্ষিপ্ত সফরে আসা টুরিষ্টদের জন্য এই মিউজিয়ামগুলো ঘুরে ঘুরে দেখা অত্যন্ত ফলদায়ক। এখানে স্বল্পায়াসে, স্বল্প সময় লগ্নি করে, স্বল্প খরচে একটি দেশের ঐতিহ্য, সভ্যতা, উৎকর্ষ, পরিকাঠামো, শাসন, সমাজব্যবস্থা ইত্যাদি নানা বিষয়ে জানা যায়। আমাদের গ্রীস সফরের পুরোভাগে তাই স্থান দিতে চাই মিউজিয়ামগুলোকে। তোমার কি অভিমত? আগে আমরা মিউজিয়াম ঘুরে ঘুরে জেনে নেব গর্ব করার মত কি কীর্তি আছে ওদের। তারপর আমরা যদি সহমত হই, একটি দু’টি কীর্তির বর্তমান অবস্থা চাক্ষুষ দেখব, তাহলেই শুধু তোমার-আমার চারটি পা’কে আগে বাড়তে বলা যাবে।

(চলবে)


Comments

এক লহমা's picture

চলুক, হাততালি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

রোমেল চৌধুরী's picture

হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সোহেল ইমাম's picture

আপনার শব্দের ঝাঁকের জন্য কান পেতে থাকি।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

রোমেল চৌধুরী's picture

কৃতজ্ঞতা!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক's picture

ভালো লাগছে রোমেল চৌধুরী। একটা জায়গায় টেন্স এর একটু এদিক ওদিক হয়েছে মনে হয়। "সেটা যাতে সুলভে মেলে, সেজন্য আমরা দুজনে মিলে বুদ্ধি খাটিয়ে যাবার ও ফেরত আসবার দিনক্ষণ ঠিক করতাম"। 'করতাম' এর জায়গায় করবো হবার কথা নয় কি?

--মোখলেস হোসেন

রোমেল চৌধুরী's picture

হ্যাঁ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.