ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ওডিন's picture
Submitted by Odin on Sat, 13/02/2016 - 9:39pm
Categories:

ঙ.
ইঞ্জিনের মাউন্টিং এর কাজ করাতে গিয়ে আলাপ হলো নবু'দার সাথে। নবকিশোর চাকমা। নানিয়ারচরে বাড়ি হলে কি হবে, ঢাকায় থাকতে থাকতে আমার থেকেও বেশি ঢাকাইয়া উনি। 'দেশের বাড়ি' যাওয়া তার হয় না, কারণ 'দেশের বাড়ি' বলে কিছু তার নাই ।

ঘ.
কিছুদিন একটা এলিট আবাসিক স্কুলে পড়ার দুর্ভাগ্য হয়েছিলো। সিনিয়র সহপাঠি ছিলেন রোনাল্ড দা। দুর্ধর্ষ স্টপার ছিলেন। তার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম রাঙামাটির টিপরাদের ব্যপারে। ওনাদের বাড়ি ছিলো রাঙামাটির অনেক উত্তরে। কাসালং পাড়া বলে একটা জায়গায়। সেইখান থেকে মিজোরাম নাকি হাঁটা দুরত্বে। এইরকম একদিন হেঁটে হেঁটেই দাদা পরিবারের সবাইকে নিয়ে মিজোরাম চলে গেলেন। লোকজন এখন সাজেক ভ্যালিতে সূর্যোদয় দেখতে যায়। আমার তখন রোনাল্ড'দার কথা মনে পড়ে।

গ.
আজকে ফেব্রুয়ারি মাসের তেরো তারিখ। তেরো দিন হয়ে গেলো একুশের বইমেলা শুরু হয়েছে। অন্যান্য বছর এই তেরোদিনে কমপক্ষে এগারোবার বইমেলায় যাওয়া হতো। গতবছর, তার আগের বছর, তারও আগের বছর- এইরকম সব দিনে বিকেল হলেই তারেককে ফোন করে টিএসসির দিকে হাঁটা শুরু করতাম। হাঁটতে হাঁটতে একের পর এক ফোন- কাছাকাছি থাকে মেহদি সুহান নিবিড়, আরেকটু দূরে থাকে আশু। আরও আরেকটু দূরে কৌশিক। সবার জমায়েত হওয়ার জায়গা একটাই- শুদ্ধস্বরের সামনে। কিছুক্ষণ আড্ডা, বই দেখা কেনা। আবার আড্ডা, মেলাশেষে পুলিসের বাইরে বের করে দেয়া পর্যন্ত।

এইবার এই তেরোদিনে একবারও বইমেলায় যাওয়া হলো না। অথচ এই দুই হাজার ষোল সালের ফেব্রুয়ারি মাসটাতেই আমি সবচেয়ে নিষ্কর্মা ছিলাম।

খ.
তারেকের তলপেটে, মেরুদণ্ডের কাছে এখনো একটা গুলি আটকে আছে। তবে সেইটাতে নাকি তার সমস্যা হয় না। মাঝে মাঝে ব্যথা করে। তার বাম হাতটা অকেজো। ডান হাত প্রায় অকেজো। হাত দিয়ে সে ভাত খেতে পারে না এখনো। টাইপ করা শিখছে।

ক.


Comments

নজমুল আলবাব's picture

আমাদের জন্য ফেব্রুয়ারি আর কখনো চমৎকার হবেনা সম্ভবত

অতিথি লেখক's picture

ঙ.
কারো ‘দেশের বাড়ি’ নাই নদী বা সমূদ্রে ভেঙে নিয়েছে বলে। কারোটা গেছে ভূমিদস্যু বা প্রতিবেশি-আত্মীয়দের ভোগে। তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যে ভূমিতে জন্ম, বেড়ে ওঠা – সেখান থেকে বলপূর্বক উচ্ছেদের সাথে তুলনীয় কিছু নেই। এভাবে মানুষ ‘নাই’ হয়ে যায় – ভূমি হারিয়ে, পরিচয় হারিয়ে, সংস্কৃতি হারিয়ে।

ঘ.
এক কালে সাহেবরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা সব দেশী নামকে তাদের নিজেদের জীভ আর কানের উপযোগী করে নিয়েছিল। সেটা বিকৃতি। আমরা আর ‘টিপরা’ না-ই বলি। বরং ‘ত্রিপুরা’ বা ‘ত্রিপুরী’ বলি।

মাথাগুনতিতে কম এমন কিছু জাতির মানুষ নাকি বাংলাদেশ থেকে অরুণাচল প্রদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন আরও চার দশক আগে। ইটানগর, নাহারলাগুন, ভালুকপং-এ বাংলাদেশ থেকেও পর্যটক যায়। ঐসব শৌখিন ভ্রমণকারীদের কখনও কি মনে হয় তাদের পূর্বপুরুষরা কতশত জনকে ঐ বিভূঁইয়ে নির্বাসিত করেছিল! এবং পরবর্তীতে তারা নিজেরা ঐ ব্যাপারে কখনো কোন উচ্চবাচ্য করেনি!

গ.
আড্ডা ভেঙে দেয়া হয়েছে ছবির হাট থেকে, শিখা চিরন্তনের আশপাশ থেকে, চারুকলা-পাবলিক লাইব্রেরি থেকে, আজিজ-কোঞ্চিপা থেকে। আড্ডাকে সবাই ভয় পায় – যারা যন্তরমন্তরে বাস করে, এবং যারা যন্তরমন্তরে যেতে চায় – তাদের সবাই। সুতরাং বইমেলাতে কেন আড্ডা থাকবে! বই মেলা হচ্ছে বই কেনাবেচা করার জায়গা। দিনশেষে পাঠকের ট্যাকের কড়ি হাতানোর জায়গা। সেখানে নানা রকমের হেজেমনি তৈরি করার কী দরকার!

খ.
শ্যামলীতে, তেজগাঁয়ে, পুরনা পল্টনে কিছু বস্তিটাইপ ঘর আছে। সেই ঘরগুলোর সামনে একটা সাইনবোর্ড থাকে, পতাকাদণ্ডে জাতীয় পতাকা থাকে। সেখানে কিছু বোকা লোক বাস করেন। ঐ বোকা লোকগুলো সাড়ে চার দশক আগে নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। তারপর এখনো বোকামীর ফল ভোগ করছেন। কারো এক বা একাধিক অঙ্গ নেই। কারো গায়ে লেগে থাকা গুলি বা স্প্লিন্টার আর বের করা যায়নি। কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে গেছেন। ঐ বস্তিটাইপ ঘরগুলোতে ঠাঁই হয়নি এমন আরও হাজার হাজার বোকা লোক সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছেন।

তারেকরা ঐ বোকা লোকগুলোর পরিণতি দেখেও কিছুই শেখেনি। লাইনে আসেনি। সুতরাং তাদেরকে দেড়খানা অকেজো হাত আর শ্রোণিচক্রে একটা গুলি বয়ে নিয়ে বেরাতে হবে।

ক.
নাপিতের হাতে ছুরি দিলে এমনটাই হয়।

মধ্যসায়াহ্ন

এবার আমি ঘরে ফিরেছি
গভীর সমূদ্র ভ্রমি।
অত্যুচ্চ ঊর্ম্মিমালা,
নুনে খেয়ে গেছে স’বি।
কৃষ্ণগহ্বরে ডুবে
শমনরে টেনেছি হাত তুলি।
ঊর্ধ্বে, অত্যুর্ধ্ব অম্বরে
নিশানাথ দেখিয়েছে পথ,
হ্যাঁ চন্দ্রালোকে আলোকিত পথ।
ঊর্ধ্বে, অত্যুর্ধ্বে
পাপরাশির তরঙ্গে।

কৌস্তুভ's picture

প্রায় বছরখানেক পরে দেখলাম!

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

Quote:
আমাদের জন্য ফেব্রুয়ারি আর কখনো চমৎকার হবেনা সম্ভবত

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা's picture

চলুক মন খারাপ

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

রানা মেহের's picture

আগের বইমেলাগুলোয় ফেইসবুক ভর্তি ছবি, সচল ভর্তি লেখা দেখে কী মন খারাপ হতো।
এখন এগুলো না দেখে হয়। আবার কি কোনদিন আগের মতো হবে?

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.