গেডানকেন ট্রাভেল- একটি অবৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী

Sohel Lehos's picture
Submitted by mmalam1978 [Guest] on Fri, 12/02/2016 - 1:31am
Categories:

মোঃ সাইফুল ইসলাম এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্রতম ব্যাক্তি। তার একাউন্টে কোন ক্রেডিট নেই। একটা ক্রেডিটও না। এক ক্রেডিট থাকলেও অবশ্য কোন লাভ হত না। আজকাল এক ক্রেডিটে একটা চুষনি লজেন্সও কেনা যায় না।

ছোটখাট এক সফটওয়্যার কম্পানিতে একদম নিচের দিককার ধরতে গেলে কোন পদই না এই রকম এক পদে কাজ করত সাইফুল। বেতন ভাল ছিল না। তারপরও মাস শেষে কিছু একটা পাওয়া যেত। সেটা দিয়ে কোন কোনমতে জীবন চালিয়ে নেয়া যেত।

পৃথিবীতে আপন বলতে তার কেউ নেই। সে বড় হয়েছিল এতিখানায়। এতিমখানায় লেখা পড়ার সিস্টেম খুবই নিম্ন মানের। টেনেটুনে পরীক্ষায় পাস করেছিল বলে লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর কোথাও চাকরী হয়নি। তারপর কিভাবে যেন অনেক দেন দরবার করে এই কাজটা পেয়ে গিয়েছিল। টেনেটুনে পাস করা প্রায় ফেল্টু ছাত্রের কাজের কোয়ালিটি আর কতইবা ভাল হবে? কাজের চার মাসের মাথায় বড়সর কিছু ভুল করে বসল। সাইফুলের বস তাকে ডেকে বলল,"আসসালামু আলাইকুম। আপনি এবার আসতে পারেন।" ফলস্বরুপ কাজ ছেড়ে তাকে চিরতরে চলে আসতে হল।

আন্ডার গ্রাউন্ড শপিং মলের ফুড কোর্টে বসেছিল সাইফুল। সারা বেলা পেটে দানা পড়েনি। ক্ষুধায় তার পেট হাউমাউ করে কাঁদছিল। ফুডকোর্টে নানা রকম মজাদার খাবারের সুবাসে মুখে পানি চলে আসে। সাইফুল অসহায়েরে মত এদিক ওদিক তাকায়। এই বেলা কিছু না খেলেই নয়। সামনের এক ফাস্ট ফুডের দোকানে সুন্দর করে হরেক পদের খাবার রঙ বেরঙের টিউবের ভেতর সাজানো আছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবীতে আবাদ যোগ্য জমি শুন্যের কোঠায়। সব খাবারই এখন প্রস্তুত হয় কৃত্রিম উপায়ে।

নাহ, এখানে থাকলে ক্ষুধা বাচ্চা বিয়োয়ে বংশ বৃদ্ধি করে চলবে। সাইফুলের তেমন কোন বন্ধু নেই। ফয়েজ নামে একজনের সাথে একই এতিমখানায় বড় হওয়ার সুবাদে কিছু খাতির ছিল। ফোন করলে তাকেও আজকাল পাওয়া যায় না। সাইফুলের আর্থিক অবস্থা সুবিধার না তা সে জানে। সাইফুল নিশ্চিত ফয়েজ তাকে এড়িয়ে চলে পাছে সাইফুল ধার টার চেয়ে বসে। কিছু না জানিয়ে ফয়েজের ওখানে চলে গেলে কেমন হয়? আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ফয়েজের বাসায় থাকার সম্ভাবনা আছে।

সমস্যা হল তার একাউন্টে কোন ক্রেডিট নেই। গেডানকেন ট্রাভেল অবশ্য একবার নির্দিষ্ট দূরুত্বে কোন ক্রেডিট ছাড়াই চলে যাওয়া যায়। কিন্তু সাইফুল সেটা জমিয়ে রেখেছিল। চরম বিপদে না পরলে ফ্রি ট্রাভেল ক্রেডিটটা সে ব্যাবহার করতে চায়না। এই মুহুর্তে কিছু করার নেই বলে ফয়েজের ওখানেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সাইফুল।

মাথার ভেতরের ইন্টারনাল সার্ভারে লগ ইন করল সে। জন্মবার পরপরই শিশুদের মাথায় ক্ষুদ্র একটি চিপ ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এই চিপ UWW(ইউনিভার্স ওয়াইড ওয়েব যা WWW বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর বড় সংস্করণ) এর সাথে ওয়্যারলেসলি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে। লগ ইন করতে মনে মনে ইউজার নেম আর পাস ওয়ার্ড চিন্তা করলেই হল। লগ অন হয়ে যায়।

গেডানকেন ট্রাভেল মানে হল চিন্তার মাধ্যমে ভ্রমণ। একাউন্টে যথেষ্ট ক্রেডিট থাকলে মহাবিশ্বের যেকোন জায়গায় মুহুর্তের ভেতরেই চলে যাওয়া যায়। শুধু মনে মনে ভাবতে হয় আমি "ওমুক" জায়গায় যেতে চাই। চিন্তা করতেই যতটুকু সময় লাগে ঠিক ততটুকু সময়ের মধ্যেই মহাবিশ্বের আরেক প্রান্তে চলে যাওয়া সম্ভব। যা আলোর গতিবেগের চাইতেও বহুগুণে বেশি।

হাজার বছর আগে আইনস্টাইন নামক এক বিজ্ঞানী তার আপেক্ষিক তত্ত্বে বলেছিলেন আলোর গতিতে কিংবা আলোর গতির চাইতে বেশি দ্রুত গতিতে ভ্রমণ সম্ভব নয়। আলোর গতির কাছাকাছি আসা মাত্রই বস্তুর ভর এত বৃদ্ধি পাবে যে তখন যত শক্তিই প্রয়োগ করা হউক না কেন তা বস্তুর গতি বৃদ্ধিতে কোন কাজে আসবে না।

মজার ব্যাপার হল বর্তমান মানুষ এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যে যোগাযোগ ব্যাবস্থা এক্সটার্নাল না হয়ে ইন্টার্নাল হয়েছে। যার পুরোটাই ঘটে মানুষের মস্তিষ্কের ভেতর। চিন্তা করা মাত্রই মস্তিষ্কের ইন্টার্নাল হাইওয়েতে মানুষ উঠে যায়। তারপর চোখের পলক ফেলার আগেই গন্তব্যে পৌছে যায় সে। এই যেমন ফয়েজের বাসা খাগড়াছড়ি। আর সাইফুল থাকে বোদা, পঞ্চগড়। সাইফুলকে শুধু ফয়েজের বাসার ঠিকানা ব্রেইনের হাইওয়ে সার্ভারে ঢুকিয়ে দিলেই হবে। মুহুর্তের মধ্যে ফয়েজের বাসার সামনে চলে আসবে সে। অবশ্য ইচ্ছা করলেই সব জায়গায় যাওয়া যায় না। প্রাইভেট কোথাও যেতে হলে পারমিশন লাগে কিংবা অন্য কোন দেশের আওতাভুক্ত জায়গায় যেতে হলে এখনও ভিসা লাগে।

ইন্টার্নাল সার্ভারে লগ ইন করা মাত্রই ব্যাংক একাউণ্ট থেকে ম্যাসেজ এল। ম্যাসেজ পড়ে সাইফুলের চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা। তার একাউন্ট ব্যালেন্স তিন কোটি ক্রেডিট। এ কি করে সম্ভব? দ্রুত ব্যাংক একাউন্টে লগ ইন করল সে। কিছুক্ষণ আগে তার একাউন্টে কেউ এই ক্রেডিট ট্রান্সফার করেছে।

ভুল করে অন্য কোথাও থেকে ক্রেডিট চলে আসা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। কারণ এই সিস্টেম এরর প্রুফ। বাঘা বাঘা সব সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা আজ পর্যন্ত এর কোন ভুল ধরতে পারেনি। ক্ষুধার ঠেলায় ভুল দেখছে নাতো? সাইফুল বেশ কয়েকবার লগ অউট করে আবার লগ ইন করে দেখল। চোখের ভুল নয়। সত্যি সত্যি তিন কোটি ক্রেডিট। এত ক্রেডিট সে জীবনে কখনও দেখেনি। রাতারাতি সে কোটিপতি বনে গেছে!

হঠাৎ এত ক্রেডিট প্রাপ্তিতে তার মাথা ঘোরাতে লাগল। মনে হচ্ছিল তার ব্রেইন চিপ যেকোন মুহুর্তে ক্র্যাশ করতে পারে। সে দুই হাতে মাথা চেপে বসে পড়ল। ঘন্টা খানেক ঝিম ধরে বসে থাকার পর সে সিস্টেম মাফিক চিন্তা করতে বসল কি করে এই জিনিশ সম্ভব। ক্রেডিট ট্রাঞ্জাকশন হ্যাক করা তার কম্ম নয়। কিন্তু ক্রেডিট কোথা থেকে আসল তা ব্যাক ট্রেস করা যেতে পারে। টানা সাত ঘন্টা ব্যাপারটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করার পর ট্রাঞ্জাকশনে ভুল ধরতে পেরে থরথর করে কাঁপতে লাগল সাইফুল। তারমত বোকাচোদা সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এরকম ভুলের রহস্য উদ্ঘাটন করে ফেলবে এ যেন মহাবিশ্বের ৫১২তম আশ্চর্য।

স্প্রিং এর মত এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে সাইফুল তার অফিসের দিকে ভোঁ দৌড় লাগাল। সে নিশ্চিত এই জিনিশ দেখাতে পারলে তার প্রাক্তন বস খুশিতে ডগমগ হয়ে তার চাকরীটা ফেরত দিয়ে দেবে।

সেখান থেকে সাইফুলের অফিস মাইল পাঁচেক দূরে। দৌড়াতে দৌড়াতে তার মনেই এল না যে গেডানকেন ট্রাভেলের একটা ফ্রী ক্রেডিট এখনও তার আছে।


Comments

অতিথি লেখক's picture

সাইফুলের ভোঁ দৌড় ছাড়া আর কিছুই নতুন নয়। আলাপ হিসেবে চলে, ভালোই চলে। তবে বিস্তার কই? গল্প কিন্তু পাইনি। লেখার ধরন ভালো লেগেছে, বোকাচোদা কথাটি আপনার গল্পের ভাষার সাথে যায়নি, আরোপিত লেগেছে। এটি নিতান্তই আমার মতামত, অত সিরিয়াসলি নেবেন না আবার। গল্পটি বলার চেষ্টা করুন। আপনার লেখায় তিনটি চরিত্র রয়েছে - ফয়েজ, সাইফুল, আর বস। এদের কে নিয়ে ভাবুন, লিখুন। ছোটো গল্পের ব্যাপারে একটি ক্লিশে রয়েছে, "শেষ হইয়াও হইলো না শেষ"। লক্ষ্য করবেন "শেষ" কথাটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ক্ষেত্রে "শুরু হইয়াই হইয়াছে শেষ"। আমরা প্লট টি দেখলাম, আফসোস বসুন্ধরার জমি খালিই রয়ে গেলো, বাড়ি হল কই!

আপনার লেখার স্টাইল এবং দক্ষতার জন্য সাধুবাদ জানাই। তবে একটি সম্ভাবনাকে এই ভাবে হত্যা না করলেও পারতেন। আশা করছি মনক্ষুণ্ণ হবেন না।

-মোখলেস হোসেন।

মেঘলা মানুষ's picture

বেশি ছোট, আর কাহিনী তো মাত্র শুরু হল। আরেকটু দরকার ছিল না? পরের পর্ব লিখে ফেলুন।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.