পথিকৃৎ কার্ল সেগান

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Wed, 02/09/2015 - 10:22pm
Categories:

কার্ল সেগান কসমস সিরিজের যাত্রা শুরুতেই একটা ধাক্কা খেয়েছিলেন। সাইনটিস্টদের আড্ডায় ঠাট্টা- মশকরার পাত্র হয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। অ্যাস্ট্রো-ফিজিক্স বা কসমোলজির সাধারন ব্যাপারগুলো নিয়ে টিভি শো করা, তখনকার দিনে আড়াই মাসের বাচ্চাকে পোড়া লঙ্কার চটপটি খাওয়ানোর মতই। সেগান কিন্তু পিছপা হননি। ঠিক তার বাদামী জ্যাকেটটার ধুলো ঝাড়ার মতই, ঝেড়ে ফেল দিয়েছিলেন হাসি-তামাশা গুলো।

কার্ল সেগান বিশ্বাস করতেন, বিজ্ঞানের রসালো শ্বাসটাকে আমজনতার নিউরনে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই আবিষ্কার গুলোর অপব্যাবহার আর সুবিধাগুলোর অসম বন্টনের ফারাটা কাটা যাবে। ফারাওদের আধ্যাত্বিক ক্যাটাগরির টেকনলোজি, আলেকজেন্দ্রিয়ার লাইব্রেরি আথবা ব্রিটেনের রয্যাল সোসাইটির মত আভিজাতদের হাতে কুক্ষিগত বিজ্ঞান, আবিষ্কার গুলোর একপেশে সুবিধাভোগী ব্যাবহারই বাড়াবে।

একসময় আলেকজেন্দ্রিয়ার বন্দরে ভেড়া প্রত্যেকটা জাহাজকে তল্লাশী করা হত। চোর-ডাকাত বা হীরে-জহরতের খোজে নয়, বইয়ের খোজে। আর বইগুলোর যায়গা হত শহরের লাইব্রেরিতে। আলেকজেন্দ্রিয়ার লাইব্রেরির হাফ মিলিয়ন স্ক্রোলের মধ্যে ছিল টলেমি, পিথাগোরাস, অ্যারিটস্থেনিস, ইউক্লিড, আর্কিমিডিসের মত আদ্যিকালের বিজ্ঞানিদের হাজার বছরের জ্ঞান আর গবেষনার ফলাফল। জুলিয়াস সিজারের আলেকজেন্দ্রিয়া জয়ের ধাক্কার আগুনে পূড়েছিল আলেকজেন্দ্রিয়ার লাইব্রেরী। ধ্বংস হয়েছিল অমূল্য সব আবিস্কার। এরমধ্যে হয়ত ছিল পীথাগোরাসের নতুন কোন গনিতের শাখা আথবা আর্কিমিডিসের বৈপ্লবিক কোন সূত্র । মানব সভ্যতার সর্বপ্রথম রিসার্চ ইনিস্টিউটের সাথে শতবর্ষের জ্ঞানও মহাকালের গহ্বরে হারিয়েছে। কারন একটাই, সাধারনের ধরা-ছোয়ার বাইরে ছিল সেসব।

একদিন সন্ধ্যাবেলায় আমার এক কলিগ হঠাত করেই জিজ্ঞেস করে বসল, আচ্ছা সাইদ মহাবিশ্ব তো আসীম কিন্ত আসলে এর শেষ কোথায়। আমার সোজাসাপ্টা উত্তর ছিল, আমি জানিনা ভাই। নিকোলাস কোপারনিকাসের একটা উক্তি আমার খুব পছন্দের- "To know that we know what we know, and to know that we do not know what we do not know, that is true knowledge." যা জানিনা তা আন্দাজ করা বিজ্ঞান নয়, তাকে আজানা হিসেবে স্বীকার করা আর তাকে আনুসন্ধানের নামই বিজ্ঞান। কোপারনিকাসকে বলা হয় হ্যালোসেন্ট্রিক ইউনিভার্সের জনক। হাজার বছরের পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারনাকে ফেলে দিয়ে সূর্যকে নিয়ে এসেছিলেন কেন্দ্রে। উপযুক্ত ডাটা আর প্রমান থাকা স্বত্তেও গবেষকদের গেলাতে পারেননি সেই আবিস্কার। আদি বিশ্বাস থেকে আমজনতার বেরিয়ে এসে সূর্যকেন্দ্রিক জগতকে মেনে নিতে লেগেছিল আরো তিনশ বছর।

নাসার চন্দ্র-আভিযান ছিল আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়েনের কোন্ড ওয়ারের ফসল। কিন্তু চাদের মাটি থেকে পৃথিবীর যখন ছবি তোলা হল, মানবসভ্যাতা যেন নতুন কিছু পেল। জাতীয়, আন্তর্জাতিক, সাগর বা মহাসাগরের সীমানাবিহীন একটা নীল পৃথিবী। যেন জীবন্ত একটা প্রানী যার প্রত্যেকটা অঙ্গ একে অপরের সাথে জড়িত। এই দৃষ্টিভঙ্গীটাই সকলের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন কার্ল সেগান। সত্তুরের দশকের শেষের দিকে নাসা ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ নামে সৌরজতের বাইরে দুইটা স্পেস-প্রোব পাঠায়। আনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেগান ভয়েজারের সাথে জুড়ে দিয়েছিল দুটো ক্যামেরা। সৌরজগেতের বাইরের দিকে যখন ভয়েজার যাত্রা করছিল, দিনে দিনে পৃথিবী হয়ে উঠেছিল একটা ক্ষুদ্র নীল বিন্দু।

ভয়েজারের চোখে কার্ল সেগান আমাদের দেখিয়েছেন এই বিশাল কসমিক সাগরে আমরা কতটাই তুচ্ছ, কতটাই উল্লেখযোগ্য। শিখিয়েছেন লালন করতে পৃথিবীর জীব-বৈচিত্র, আর পরের প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে সুস্থতর মানব সভ্যতার একটা আবাসস্থল।

https://www.youtube.com/watch?v=b58SfRphkKc

পীথাগোরাস

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

Comments

অতিথি লেখক's picture

Quote:
"To know that we know what we know, and to know that we do not know what we do not know, that is true knowledge.'

অসাধারণ! আর এইজন্যই বোধহয় বলা হয়, বিজ্ঞান কখনোই জানার সীমাকে সংকুচিত করে না, বরং, অজানার দিগন্তকে আরও বিস্তৃত করে!
কার্ল সেগানরা না থাকলে বিজ্ঞানের বৈপ্লবিক সব আবিষ্কার হতে থাকবে বটে, কিন্তু পৃথিবীর দখল থাকবে প্রাগৈতিহাসিক মানুষদের হাতেই; ফলাফলটা হবে আলেকজেন্দ্রিয়ার লাইব্রেরীর মতই; চোখের সামনেই বিজ্ঞানের অসামান্য সৌধগুলোকে ধ্বসে যেতে দেখবেন অভিজাত বিজ্ঞানসমাজ!
।।।।।।।।।
অনিত্র

মন মাঝি's picture

Quote:
কোপারনিকাসকে বলা হয় হ্যালোসেন্ট্রিক ইউনিভার্সের জনক।

হিলিওসেন্ট্রিক বা সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্বের জানামতে প্রথম প্রবক্তা ছিলেন আসলে প্রাচীণ গ্রীক জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদ এ্যারিস্টার্কাস অফ সামোস (৩১০ - ২৩০ খৃষ্ট-পূর্বাব্দ) - কোপার্নিকাস নন। প্রায় ১৮ শতাব্দী পরে কোপার্নিকাস এই হিলিওসেন্ট্রিসিজমকে রিভাইভ করেন, অর্থাৎ তিনি এর পূণপ্রতিষ্ঠাকারী। জনক নন, দৌহিত্র হতে পারেন হয়তো! চোখ টিপি

মজার ব্যাপার হলো, আপনার উল্লেখিত প্রাচীণ তিন বিজ্ঞানী - ইরাটোসস্থেনিস, ইউক্লিড আর আর্কিমিডিস - তিনজনই কমবেশি এই এ্যারিস্টার্কাস অফ সামোসের সমসাময়িক ছিলেন এবং এই চারজনই তাঁদের জীবদ্দশায় কোন না কোন ভাবে লাইব্রেরি অফ আলেক্সান্দ্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। ইরাটোসস্থেনিস তো এক সময় এর লাইব্রেরিয়ানই ছিলেন! এই প্রাচীণ লাইব্রেরি অফ আলেক্সান্দ্রিয়া আমার খুবই আগ্রহের একটা বিষয়। একসময় এনিয়ে কিছুটা লিখেছিলামও এখানে

ও হ্যাঁ, কার্ল স্যাগানের 'কচমচ'-এর একটা সিকুয়েল হয়েছে, জানেন নিশ্চয়ই?

****************************************

তিথীডোর's picture

সাধারনচাদেরপ্রমানসৌরজগেতেরআজানাবন্দরেভেড়াঅপব্যাবহারসাইনটিস্টদেরমানবসভ্যাতাআভিজাতদের স্বত্তেওআনুসন্ধানের কারনগবেষনাগনিতেফারাযায়গাআনেকআভিযানপূড়েছিল

বিজ্ঞান বুঝি কম।
এই টুকু লেখায় এতোগুলো টাইপো আর ভুল বানান থাকলে বোঝার আগ্রহ আরো কমে যায়।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক's picture

অসম্পুর্ণ লেখা মনে হল। আরও অনেক কিছু লেখা যেত বোধকরি...

স্বগবান

অতিথি লেখক's picture

ছোটবেলায় যখন বিটিভিতে কসমস দেখাতো তখন হা করে খালি তারা দেখতাম, কিছুই বুঝতাম না ৷ পরে যখন বুঝলাম তখনও হা করেই থেকেছি - অসাধারণ একটা অনুষ্ঠান ৷

মরুচারী

অতিথি লেখক's picture

কার্ল সেগান নিয়ে সুন্দর একটা লেখা পেলাম।

অতিথি লেখক's picture

অসাধারণ!এ ধরনের লিখা চাই।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.