ছবিব্লগঃ পানিগ্রাফি ...

অনুপম ত্রিবেদি's picture
Submitted by Anupom Tribedi on Wed, 17/12/2014 - 11:29pm
Categories:

পানির অপর নাম জীবন। আর আমি শুরু করলাম পানি নিয়ে খেলা, এক্কেবারে ছিনিমিনি খেলা। সুতরাং ঘটনাটাকে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বলতেই পারি। আগের লেখায় যেমন বলেছিলাম যে, এই তেল-পানি-ধূয়া নিয়ে সেই ২০০৮-এ কিছু খেলা-ধুলা করেছিলাম, মাগার আবার এই ভূত মাথায় চেপে বসাতে দিলাম একটু গুগলে সুড়সুড়ি। যাহ বাবা, এক্কেবারে লাখ টাকার মামলা! কম্পিউটার থেকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে কর্মকান্ড চালাতে পারে এমন মাইক্রো কন্ট্রোলার সহ তিনটি সলিনয়েড ভাল্ভ আর তিন বোতলের পুরো রিগ কিনতে প্রায় লাখ টাকার মতো লাগবে! আমি কি কান্দুম, না হাসুম, নাকি মাটি বিছায়া গড়ানি দিমু হেইটা বুঝতে বুঝতে গেলো এক রাত! যা বুঝলাম তা হলো, পানি অত্যন্ত খতরনাক এক লিকুইড। ঘনত্বের দিক থেকে এটি খুবই পাতলা, আবার এর ম্যাজিক মোম্যান্ট গুলো তৈরি হয় মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ডের জন্যে। যার কারনে মানুষের চোখ কখনই ঐ ম্যাজিক গুলো দেখতে পায় না। আর মাইক্রো কনট্রোলার থাকলে নিজের ক্রিয়েটিভিটি আর বুদ্ধি খাটিয়ে ঐ ম্যাজিক মোমেন্ট গুলো আরো ম্যাজিকেল করে ফুটিয়ে তোলা যায়। কিন্তু আমি তো ঐ পানির ম্যাজিক গুলো তুলতে চাই, কিন্তু ক্যাম্নেকী রে মুমিন? সারা রাত ঘুম আসেনা, চোখে শুধু পানির নাচানাচি ভাসে, কানে পানি পড়ার টিপ-টপ আওয়াজ শুনি (ঈমানে কই, ঘটনা সত্য)। পণ করলাম, মাথায় যখন ভূত চাপছেই এর একটা শেষ দেখেই ছাড়বো।

বাসায় থাকা প্লাস্টিকের সসের বোতলের পাছা কেটে, যেদিক দিয়ে সস বের হয় সেখানে স্যালাইনের পাইপ আর ড্রপ কন্ট্রোল করার সেই চাক্কি লাগিয়ে কিছু একটা বানালাম। তারপর ইলেক্ট্রিকের দোকানে গিয়ে একান্ত নিজস্ব ডিজাইনে ৩/৪" প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে মাত্র ১৫০ টাকা খরচে একটা স্ট্রাকচার বানিয়ে ফেরত এলাম বাসায়। এবার শুরু হলো আসল কসরৎ ... লাইট, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ওয়াটার বোউল / ওয়াটার ট্রে'র পরিমাপের খেলা। এবার আসি একটু টেকনিক্যাল বিষয়ে, মোমেন্ট তো মাত্র মিলি সেকেন্ডের ব্যাপার কিন্তু আমার ক্যাম্রার সর্বোচ্চ শাটার স্পিড হলো ১/৮০০০ সেকেন্ড, আর ছবি তুলতে হবে লার্জ ডেপথ অব ফিল্ডে মানে এ্যপার্চার ছোটো করে, আর ছোট এ্যাপার্চারে ১/৮০০০ শাটারে ছবি তুললে তো আন্ধার ছাড়া আর কিছুই আসবে না, তাহলে ক্যাম্নেকী? হুম, এরও ব্যাবস্থা আছে রে মনা, এর নাম হলো ফ্লাশ শাটার স্পিড! ঘটনাটা কি? আমরা ম্যানুয়াল মোডে যখন ফ্লাশ ব্যাবহার করি, তখন এর আউটপুট পাওয়ার বাড়িয়ে - কমিয়ে এর আলো বাড়াই কমাই। কিন্তু আসলে কী এতে ফ্লাশের পাওয়ার বাড়ে কমে? মোটেও না! এগুলা মূলত ফ্লাশ শাটার স্পিড, ফ্লাশের আউটপুট নাম্বার যতই বাড়বে ফ্লাশ তত অল্প সময়ের জন্যে জ্বলে থাকবে। মানে হলো ১/২ আউটপুটে দিলে ফ্লাশ এর শাটার স্পিড থাকবে কম, অর্থাৎ ফ্লাশটা জ্বলে থাকবে বেশিক্ষন আর ১/১২৮ আউটপুটে থাকলে ফ্লাশ জ্বলে থাকবে খুবই অল্প সময়ের জন্যে। ব্যাপারটা ক্যামেরার শাটার স্পিডের মতোই। এখানে জেনে রাখা ভালো যে ১/২ আউটপুটে ফ্লাশ যেই পাওয়ারে জ্বলবে, ১/১২৮ আউটপুটে সে একই পাওয়ারে জ্বলবে, কিন্তু ব্যাপারটা যেহেতু স্থায়ীত্বের উপর নির্ভর করে সেহেতু ১/২ আউটপুটে আপনি ২০০-২৫০ ক্লিক করলেই ব্যাটারি ফুরাবে আর ১/১২৮ আউটপুটে আপনি ১২০০ ক্লিকও করতে পারবেন। নিচের চার্ট থেকে জেনে নেই কোন আউটপুটে ফ্লাশের স্থায়ীত্ব কতো -

1/1050 sec. at 1/1 (full) output
1/1100 sec. at 1/2 output
1/2700 sec. at 1/4 output
1/5900 sec. at 1/8 output
1/10900 sec. at 1/16 output
1/17800 sec. at 1/32 output
1/32300 sec. at 1/64 output
1/41600 sec. at 1/128 output

এবার আরো একটা জিনিশ খোলাশা করি তা হলো, ফ্লাশ সিনক্রোনাইজেশন স্পিড আর ফ্লাশ শাটার স্পিড দুটো কিন্তু আলাদা জিনিশ। সিনক্রোনাইজেশন স্পিড হলো, ক্যামেরার সর্বোচ্চ কতো শাটারে ফ্লাশ আর ক্যামেরা পার্ফেক্টলি যোগাযোগ করতে পারে। বেশিরভার ফ্লাশই ক্যামেরার ১/২৫০ শাটার পর্যন্ত সিনক্রোনাইজ করতে পারে, এর উপরে উঠলেই ছবির ফ্রেমের উপরে একটা কালো অংশ চলে আসে, যেটা আসলে ক্যামেরার শাটার লিফের চেহারা। এটা কেনো হয়? তাহলে আরো একটু গভীরে যাই। ক্যামেরার সাথে ফ্লাশ কিভাবে কাজ করে? সহজে বলি - ক্যামেরার শাটার লিফ উপরে উঠে আলোকে সেন্সরে প্রবেশ করতে দেয়, তারপর নেমে যায়, ঠিক উপরে উঠা আর নেমে যাবার মুহূর্তে ফ্লাশের আলো জলে উঠে। এই কারণেই HSS (High Speed Sync) ফ্লাশ না হলে আপনাকে ঐ ১/২৫০ এই ছবি তুলতে হবে। সুতরাং আমরা জেনে গেলাম যে, HS (High Speed) ফ্লাশ আর HSS (High Speed Sync) ফ্লাশ দুটো আলাদা ক্যালকুলেশন। সব ফ্লাশই HS, কিন্তু সবাই HSS নয়। আবার একটু ইলেক্ট্রনিক্সের কাজ জানা পাবলিক আরো স্পিড পাবার জন্যে ফ্লাশকে মডিফাই করে এর পাওয়ার ১/২৫৬ বা ১/৫১২ পর্যন্ত নিয়ে যায় ( দেখে নিস, একদিন আমিও ... ... )।

এই তো গেলো লাইটের খেলা, এবার তাহলে আসি ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কেরামতিতে। পানিতে সব কিছুর রিফ্লেকশন খুব ভালো পড়ে, এটা ওয়াটার ড্রপ ফটগ্রাফিতে যেমন সুবিধার, ঠিক তেমন অসুবিধার। কারণ লাইট এর এঙ্গেল একটু উলটা পাল্টা হলে আপনার পানির ড্রপ হাইলাইটের ঠেলায় এক্কেবারে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবে। অনেক রকম ভাবেই ব্যাকগ্রাউন্ড সেট করা যায়। প্রায় ১৬-১৭ দিন অভিযান চালিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে যা বোঝলাম তাতে আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড লাইট দিতে পারেন -

১) ফ্লাশের মাথায় জেল দিয়ে ( জেল আসলে রঙ্গিন টুপি) ব্যাকগ্রাউন্ডের সরাসরি সামনে থেকে ( ফ্লাশ কিন্তু পানির ড্রপের দিকে পেছন ফিরিয়ে রাখবে) একটি বা দুইটি ফ্লাশ। আরেকটি ফ্লাশ স্নুট করে (ফ্লাশের মাথায় চুঙ্গা লাগালে ঐটাকে স্নুট বলে) পানির ফোঁটা বরাবর।

... যেমন ...

২) ফ্লাশের মাথায় জেল দিয়ে ( আবারও, জেল আসলে রঙ্গিন টুপি) ব্যাকগ্রাউন্ডের পেছন থেকে একটি, দুইটি বা তিনটি ফ্লাশ। ( যদিও 'স্যার অনন্ত জলিল' বলেছেন - পপেশনালদের পেচন তেকে গুলি করা মানায় না। তবুও, কী আর করা!)

... যেমন ...

৩) একটি ফ্লাশ খুব ছোট স্নুট করে পানির ফোঁটা বরাবর আরেকটি ফ্লাশ নরমাল স্নুট করে ব্যাকগ্রাউন্ড বরাবর।

... যেমন ...

৪) শুধু একটি ফ্লাশ খুব ছোট স্নুট করে পানির ফোঁটা বরাবর।

... যেমন ...

এবার আসা যাক ওয়াটার বোউল বা ওয়াটার ট্রেতে। বোতলে লাগানো পাইপ থেকে যেখানে পানির ফোটাটি পড়বে ঐটাই ওয়াটার ট্রে। এটা ছোটো-বড় যে কোনো মাপের হতে পারে। ছোটো হলে ক্যামেরার এঙ্গেল ওয়াটার ট্রে'র সাথে ৮৫ ডিগ্রি বা ৯০ ডিগ্রি রাখতে হবে, নইলে পানির ফোঁটা যেই ফিগারটি তৈরী করবে ঠিক তার মাঝ বরাবর চলে আসবে ওয়াটার ট্রে'র পেছনের অংশ। আর ওয়াটার ট্রে বড় হলে একটু আগু-পিছু করে ইচ্ছা মতো এঙ্গেলে ছবি তোলা যায়। তবে মনে রাখবেন, ট্রের ডেপথ খুব বেশি হবার প্রয়োজন নেই। আর ওয়াটার ট্রে যেনো কোনো ভাবেই রঙ্গীন না হয়, পানশে বা কালোই ভালো, তাহলে ওয়াটার সার্ফেসে রিফ্লেকশন আর কালার খুব ভালো আসে। রঙ্গীন হলে আপনার ছবির রঙ্গে উনি ইন্টারাপ্ট করে বসবে! আপনি আপনার ওয়াটার বোউল বা ওয়াটার ট্রে উল্টিয়ে এর পাছায় পানির ফোঁটা ফেলেও ছবি নিতে পারেন, সেক্ষেত্রে রেজাল্ট ভিন্ন আসবে কিন্তু ওটা নিয়ে অনেক অনেক মজা করতে পারবেন। আবার এই ক্ষেত্রে ১৮' বাই ১২" মাপের ৫মিমি কালো কাঁচের টুকরাও ব্যাবহার করতে পারেন। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, যেখানেই আপনি এই ওয়াটারড্রপ ফটোগ্রাফি করেননা কেনো খেয়াল রাখবেন যেনো ঘরের আলো কখনোই উজ্জ্বল না হয়। প্রয়োজনে বাতি বন্ধ করে দিতে পারেন অথবা খুবই হাল্কা আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারেন। নইলে ছবিতে এক্কেবারে পানির ফোঁটার ট্রেইল চলে আসবে।

... যেমন ...

আমাদের সব মাপামাপি শেষ এবার আসি আসল কথায়। আগের পর্বে ত্যালগ্রাফির জন্যে কি কি লাগবে তার একটা লিস্টি ধরিয়ে দিয়েছিলাম। এবারও তেমন করে একটা লিস্টি ধরিয়ে দেই ...

যা লাগবে -

ক) একটা ক্যামেরা
খ) একটা ট্রাইপড
গ) একটা ম্যাক্রো ল্যান্স (টেলি ম্যাক্রো যেমন ১০৫মিমি বা ১০০ মিমি হলে ভালো, বেকগ্রাউন্ড অনেক স্মুথ আসবে আর একটু দূর থেকে ছবি তুলতে পারবেন। নইলে আপনার ক্যামেরা আর ল্যান্স দৈনিক কয়েকবার গোসল দিবে, হুম ...)
ঘ) দু'টি অথবা তিনটি ফ্লাশ (ম্যানুয়াল মুডে কাজ কর্তে হপে)
ঙ) একটা গ্লাস বোউল (পানসে অথবা কালো, খুব বেশি গভীর না কিন্তু একটু বড়। ডিম আকৃতির হলে ভালো।)
চ) ফ্লাশের মুখে বসানো যায় এমন কিছু রঙ্গীন প্লাস্টিকের বাটি (আমি একেকটা ২০ টাকা দিয়ে ক্রোকারিজের দোকান থেকে কিনে নিয়েছি)
ছ) কর্কের খালি ডিব্বা অথবা প্রিঙ্গেল চিপসের ডিব্বা (এটা কেটে ফ্লাশের মুখে বসিয়ে দিলেই স্নুট হয়ে যাবে)
জ) রেডিও ট্রিগার দুইটা (লাগবেই) আর রিমোট (লাগবেই)
ঝ) কিছু রঙ্গীন কাগজ (ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে ব্যাবহার করার জন্যে)
ঞ) বেশ কিছু ভালো পলিথিন (অবশ্যই আপনার সব কয়টা ফ্লাশ, ল্যান্স আর ক্যামেরা পেঁচিয়ে রাখার জন্যে)
ত) ফুড কালার (যেই কয় রঙের পাওয়া যায়), ড্রপার।
থ) পোস্টার কালার (কালো বাদ দিয়ে যেই কয় রঙের পাওয়া যায়), খুবই ছোট মাথার ব্রাশ।
দ) ৫০মিলি সাইজের সিরিঞ্জ, কয়টা বড় সাইজের পানির বোতল (পানি রাখার জন্যে অবশ্যই), মেঝে মোছার ন্যাকড়া, কয়েক বাক্স টিস্যু পেপার, মাস্কিং টেপ (ফ্লাশের মাথায় জেল এবং স্নুট লাগানোর জন্যে) আর যারা চা-কফি-সিগারেট ইত্যাদির নেশা করেন, হাতের কাছে তা রাইখেন।
ধ) কয়েক হাজার বালতি ধৈর্য (এইটা ভয়াবহ ইম্পর্ট্যান্ট, এটা লাগবেই লাগবে)
ন) আর একটা স্ট্রাকচার বানিয়ে নিতে পারেন বোতল, পাইপ আর ওয়াটার কন্ট্রোলার সহ অথবা বড় ড্রপার দিয়েও পানির ফোঁটা ফেলতে পারেন।

আমি আপনাদের আইডিয়ার জন্যে আমার ডিজাইনটা মেরে দিলাম এখানে (নজেল থেকে নীচের বেজ এর উচ্চতা ৫০ সেমি হলেই ভালো, বাকী মাপ নিজের আইডিয়া মতো) -

এবার শুরু হোক তবে দিনলিপি। প্রথম দিন তো সব বুঝতে বুঝতেই গেলো। একবার এদিক বায়া পানি পড়ে তো আবার ওদিক বায়া পানি পড়ে, আর আমি কাজের বুয়াদের মতো কোমরে গামছা বেধে ঘর মুছি। পানির স্পিড বাড়ালে এর সাথে আমার ক্লিক মিলাতে পারি না, স্পিড কমালেও ক্লিক মিলাতে পারি না। ক্লিক করলেই শুধু এতিমের মতো খালি ওয়াটার ট্রে'র ছবি আসে, আরে বাবা একটা দুইটা ড্রপের ছবি আসলে কি হয়? ৮ গিগা মেমরি শ্যাষ লগে শ্যাষ ক্যামেরার ব্যাটারি, আরো ৮ গিগা নিলাম, নয়া ব্যাটারিও নিলাম। দুপুর তিনটা থেকে রাত প্রায় দেড়টা পর্যন্ত সেরাম কসরৎ চললো, ছবি পেলাম হাতে গুনা কয়েকটা। বুঝলাম, ধৈর্যের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা এই এক্সপেরিম্যান্টেই দিতে হবে! কি আর করা, মাথায় যখন ভূত চরছেই, নামাইতে তো হবে! আর আমারে ধৈর্যহারা করে আছেনি এমন কেউ? তাই কাছা মাইরা নাইমা গেলাম আর ১৬-১৭ দিনের অভিযানে হালকা-পাতলা কিছু পাইলাম।

এছাড়াও অভিজ্ঞতাগুলো ছিলো মারাত্মক রকমের মজার। আমি জানিনা কি তুলছি, বা কি ছবি আসবে! ক্লিক করার পর অনেকগুলো মিস হয়, হঠাৎ করে একটা চলে আসে, ধন্দে পড়ে যাই - এটা আসলেই আমার সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা? একটা পানির ফোঁটা ট্রে তে পড়ে বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় একটা চোঙ এর মতো আকৃতী নিয়ে কিছুটা উপরে চলে আসে, ঠিক সেই মূহুর্তে এর উপড় আছড়ে পড়ে আরেকটি ফোঁটা তৈরী হয় কিছু অদ্ভুত টাইপের পানির ছাতা। আমার লিকুইড সোপ গুলিয়ে ওয়াটার ট্রে'র সার্ফেসে বাবল তৈরি করলাম, কি তামশা সে বাবলের ভেতরেই পানির ফোঁটার অপূর্ব সব ফিগার তৈরি হচ্ছে। আব্বা-আম্মা-বোন-ভাইগ্না-ভাগ্নি সহকারে ব্যাপক হুল্লোড় করে চললো আমার এই বিশাল যজ্ঞ। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ফ্যামিলির এ্যাপ্রিসিয়েশন। প্রথম দিকের এক্সপেরিম্যান্ট গুলোতে আমার পাশে বসে এই পাগলামীটা উপভোগ করেছে আমার সদা গম্ভীর আব্বা আর বারবার তার অনুরোধ যেনো অবশ্যই এগুলো প্রিন্ট করিয়ে বাঁধিয়ে রাখি দেয়ালে। সাথে আফসোসও করেছে - এই দেশে কী বাবা এইসব আর্টের দাম আছে? আমার মায়ের, বোনের কেবিনেট ঘেঁটে যতো রঙ, গ্লাস ট্রে, প্লাস্টিক ট্রে সব আমাকে তারা দান করেছে। আমার সদা উৎসুক ভাইগ্না সাবান গুলিয়ে, রঙ গুলিয়ে, হাতে ফ্লাশ ধরে রেখে আমাকে বিরাট সহায়তা করেছে। সবার কাছেই দিন শেষে কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম, এই পাগলামীতে সাপোর্টের জন্য।

বলে রাখা ভালো যে, সেশন গুলো ছিলো মাঝে মাঝে কিছু বিরতী দিয়ে প্রায় দুপুর ১২টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত। ঝামেলা বলতে এই শীতে সারাক্ষণ পানি নিয়ে হাতাহাতি আর সব কাজ শেষে গভীর রাতে ঘর, বাটি-ঘটি সব কিছু ধুয়ে মুছে সাফ করা!

১)

২)

৩)

৪)

৫)

৬)

৭)

৮)

৯)

১০)

১১)

১২)

১৩)

১৪)

১৫)

১৬)

১৭)

১৮)

১৯)

২০)

২১)

২২)

২৩)

২৪)

২৫)

২৬) এই ডিসেম্বরে লাল-সবুজ নিয়ে একটা থিম ওয়ার্ক -

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ফুটলুটঃ আমি একদিন ঐ পুরো সিস্টেমটা কিনবো, ইনশাল্লাহ। যাদের কাছে ছবিগুলা ভালো লাগবে এবং ভবিষ্যতে যারা আরো ভালো পানি-পানি ছবি দেখতে চান, তারা এক্ষুনি কাছা বেঁধে একটা মাটির ব্যাংকে আমার জন্যে বাজেট জমান। আর যারা লিকুইড ডায়নামিক্স সম্পর্কে জানেন, তারা আমাকে বিনা মূল্যে পড়ানোর জন্যে লাইনে দাঁড়ান। আর যারা আম্রিকা, কানাডা, জর্মন, ইংল্যান্ড ঐসব ইহুদি নাছারাগো দেশে থাকেন, তাদের চান্দা ডবল ডবল। বেশী তেড়িবেড়ি করলে রি-ডবল।


Comments

মেঘলা মানুষ's picture

আগেই দেখেছি খাইছে

ভাবছেন কোথায়?
আপনার ত‌্যালগ্রাফির ছবি দেখতে আবার ফ্লিকারে ঢুকে দেখি, এ কি! টুপটাপ পানির ফোঁটাওয়ালা ছবি আবার কখন আসলো?
আপনার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের আগের লিমিটেড স্ক্রিনিং দেখে এলাম দেঁতো হাসি

শুভেচ্ছা হাসি

অনুপম ত্রিবেদি's picture

আপনে পুরাই পাপারাজ্জি মিয়া। কইশ্যা মাইনাচ। হা হা হা হা।

অনেক ধন্যবাদ।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

মাসুদ সজীব's picture

গুরু গুরু

মুগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করার অযোগ্য। আমি ফুটুগ্রাফি শিখতে চাই আপনার কাছে থেকে, ক্যাম্নে হবে জানি না। না শিখালে এই মুমিন বন্দার বদ-দুয়ায় পৃথিবীর “নরক” পাপিস্থানে আপনার ঠাঁই হবে বলে রাখলাম চোখ টিপি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অনুপম ত্রিবেদি's picture

অনেক ধন্যবাদ। আচ্ছা, অবশ্যই শিখাবো ... লাইনে আসুন। হা হা হা হা ...

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

তাসনীম's picture

আকাশ সমান মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম। অসাধারন।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অনুপম ত্রিবেদি's picture

অনেক ধন্যবাদ, তাসনীম।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

সত্যপীর's picture

উরে খাইছে, কুপাকুপি পুস্ট!

আপ্নে কি খান মিয়াভাই?

..................................................................
#Banshibir.

অনুপম ত্রিবেদি's picture

ধন্যবাদ। আমি ভাত-মাছ-মাংশ খাই আর খাই প্রচুর চা ...

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

ইয়াসির আরাফাত's picture

সাবাস ত্রিবেদি, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
ভিজে শীতে কেঁপে একাকার তবু গ্রাফি থামাবার নয়

- স্রেফ ধন্দে পড়ে গেলাম। ফটোগুলি কি এই গ্রহের?

অনুপম ত্রিবেদি's picture

হা হা হা হা, মজা পাইলাম!

কবিতা-মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ, সবই এই নীল গ্রহে তোলা।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

মরুদ্যান's picture

গুল্লি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অনুপম ত্রিবেদি's picture

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আগে যেমনটা বলেছিলাম - 'অসম্ভব' বললেও আসলে কিছুই বলা হয় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনুপম ত্রিবেদি's picture

অনেক ধন্যবাদ পান্ডবদা। এইবার একটা সিস্টেম কিন্যা দেন, আসল 'অসম্ভব' শুরু করি ...

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

তাহসিন রেজা's picture

ত্যালগ্রাফিকে ছাড়িয়ে গেছে পানিগ্রাফির মুগ্ধতা গুরু গুরু
অসাধারণ!!!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

অনুপম ত্রিবেদি's picture

মুগ্ধ হয়েছেন জেনে এক গাল খুশি হলাম দেঁতো হাসি

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

অনার্য সঙ্গীত's picture

সব এলিয়েনগো ইন্টারনেটত্তে কপি করা ছবি! কুনো মানুষ এইসব ছবি তুলতে পারেনা! শয়তানী হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অনুপম ত্রিবেদি's picture

এলিয়েন! এলিয়েন!! এলিয়েন!!! অনার্য একটি পাক্কা এলিয়েন!!!! (রিভার্স মারলাম রে সুনা)

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

এক লহমা's picture

হাততালি জব্বর হয়েছে, সব কটাই ভাল লেগেছে। বুদ্বুদের ভিতরেরগুলো বেশী মজাদার লেগেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অনুপম ত্রিবেদি's picture

ধন্যবাদ।

এই ড্রপের ছবি তোলা মহা ঝামেলার আর বাবল তৈরি করে তার ভেতর ড্রপের ছবি তোলা তো সাক্ষাৎ পুল-সে-রাত পাড় হবার মতো কঠিন ...

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

শাব্দিক's picture

জটিল!
শেষ ছবিটা ব্যানারে দেখেই অসাধারণ লেগেছিল। চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

অনুপম ত্রিবেদি's picture

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

অনুপম ত্রিবেদি's picture

লাফাং মন্তব্য, ঘ্যাচাং

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

ত্রিমাত্রিক কবি's picture

১) দুর্দান্ত। আপনে একখান মাল।

২) কিছু টেকনিক্যাল বিষয়াদি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেল, বিশেষ করে ফ্লাশের বিষয়ে এই জিনিসগুলা ভাসাভাসা জানতাম, ফ্ল্যাশ নিয়ে সিরিয়াস এক্সপেরিমেন্ট বা পড়ালেখা কোনোটাই করা হয়ে ওঠে নাই। এখন এই জিনিস দেখে পড়াশোনা করার একটু আগ্রহ হচ্ছে। কিছু মিছু লিঙ্ক বা টিউটোরিয়াল ধরায়ে দ্যান নাইলে আপনে নিজেই কিছু একটা লেখেন। অবশ্য আপাতত থিওরির জ্ঞান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

৩) আপনের ব্যবহৃত সেটাপের একটা ছবি দেখতে মন চায়। নেক্সট টাইম এই কাজে নামলে আপনার ভাইগ্নারে দিয়া পুরা ঘটনার কিছু ছবি বা ভিডু করার ব্যাবস্থা কইরেন।

৪) এইটা খারাপ কথা। আপনার লগে এক রিকশায় চড়ছি এইটা ভাইবা শিহরণ লাগতেছে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অনুপম ত্রিবেদি's picture

১) জইম্যা জেলি হয়া গ্লাম!

২) আসলে সত্যি বলতে কি, এইসব ব্যাপার একটা লিংকে গিয়ে লাভ নাই। অনেক অনেক ঘাটাঘাটি করে এগুলা জানছি। তারপরও আমি কিছুমিছু লিংক আপনারে ইনবক্স করুম্নি। আর টাইম পাইলে ফটোগ্রাফি নিয়া যদি আড্ডা মারতে চান, তয় আওয়াজ দিয়েন। আমার আবার এই ব্যাপারে আড্ডাবাজিতে কোনো 'অনাগ্রহ' নাই।

৩) আমার ভাইগ্নার নিজস্ব এইচ ডি ভিডিও ক্যাম্রা আছে, নেক্সট টাইম তাইলে এরে কাজে লাগাইতে হপে।

৪) শীতকালে আমার লগে একসাথে রিকশা চইড়া শিহরণ পাইছেন, ভাবতেই খ্রাপ লাগতেছে ...

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

রায়হান আবীর's picture

ভাই, তাজ্জব হইয়া গেলাম। চলুক!!

অনুপম ত্রিবেদি's picture

অনেকদিন পর তোমারে পাইলাম। ধন্যবাদ, ভায়া।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

রায়হান আবীর's picture

বিশ্ববিদ্যালয় আসলে আওয়াজ দিয়েন, চা-চু হয়ে যাবে দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক's picture

আমি কথা দিচ্ছি যেদিনই আমার টাকা হবে আমি আপনাকে অমন একটা সিস্টেম কিনে দেব, শর্ত শুধু একটাই আমাকে সামনে বসে থেকে আপনার সব কারিগরি দক্ষতা দেখার সুযোগ দিতে হবে আর আমার হাজার হাজার বা লাখ লাখ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে কোন ঝাড়ি না দিয়ে দেঁতো হাসি

ফাহিমা দিলশাদ

অনুপম ত্রিবেদি's picture

উক্কেই, নো প্রবলেম। এক্কেবারে লাইভ দেখবেন আর যেহেতু আপনিই স্পন্সর, তাই জ্বালাতন করলেও ঝাড়ি মারবো না অবশ্যই।

অনেক ধন্যবাদ।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

রণদীপম বসু's picture

বুঝছি, পুরাই গেছে ! একটা পানির ফোঁটার জন্য এতো কসরত ! এক ফোঁটা পানি ধরার জন্য কয় বালতি পানি খরচ আর অপচয় করলেন খবর আছে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অনুপম ত্রিবেদি's picture

হা হা হা হা ... রণ'দা, দৈনিক গড়ে ১০ থেকে ১৫ লিটার পানি খরচ করেছি। ১৭ দিনে খরচ হয়েছে ১৭০ থেকে ২৫৫ লিটার পানি। এক্সপেরিম্যান্ট অবশ্যই অপচয় না, হুম চোখ টিপি

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

অতিথি লেখক's picture

আমার মাস্টার্স থিসিস ছিল এই পানির ফোঁটা নিয়ে, চমৎকার একটা ব্যাপার। কিন্তু আজও পুরা ব্যাপারটা বুঝা যায় নি। সবচেয়ে ভাল হয় হাই স্পীড ক্যামেরা দিয়ে কাজ করতে পারলে(ট্রিগারের প্রয়োজন হয় না)। প্রায় কাছাকাছি মানের একটা কাজ ইউটিউবে খুঁজে পেলাম। নিচের ভিডিও দ্রষ্টব্য চোখ টিপি , আপনার কাজগুলিও যথেষ্ট উঁচু মানের। শুভ কামনা রইল

http://www.youtube.com/watch?v=cNI-LIVs-to

উদাস বাঙাল

অনুপম ত্রিবেদি's picture

অনেক ধন্যবাদ। যেহেতু থিসিস করেছেন, সুতরাং আপনিও জানেন যে এই পানি কতো খতরনাক জিনিশ। ভিডিওটি আগেও দেখেছি, আসলে এখানে কিন্তু হাই স্পীড ভিডিও ক্যামেরা বযাবহার করা হয়েছে আর সাথে ঐ মাইক্রো কন্ট্রোলারও ছিলো পানির ড্রপ কলিশন তৈরি করার জন্যে।

আমার কাজ গুলো ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

স্যাম's picture

দুর্দান্ত! আমার মত সীমিত ধইযযের লোকের কাছে এ এক অসম্ভব ব্যাপারস্যাপার!
কিছু কিছু রঙ যা এসেছে - মনে হয় এই জগতের না! ২/১ টা ছবির ওরিয়েন্টেশন পরিবর্তন করে বা হরাইজন্টাল ফ্লিপ করলে অন্যরকম লাগতে পারে। চলুক...

অতিথি লেখক's picture

পানির এত রঙ, এত ভঙ্গিমা, বেশ ভালো লাগছে।

আদি কোষ

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.