বিলাতী বলদ

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture
Submitted by Shashtha Pandava on Wed, 17/12/2014 - 5:23pm
Categories:

পেশাজীবিদের নেটওয়ার্ক লিঙ্কডইনে যখন অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম তখন কানেক্ট করার জন্য যাদের নাম সাজেশনে আসতো তাদের প্রায় প্রত্যেককে অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠাতাম বা কেউ অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠালে সেটা সাথে সাথে অ্যাকসেপ্ট করতাম। এভাবে কিছু দিনের মধ্যে দেখা গেলো আমি বহু লোকের সাথে কানেক্টেড। একদিন কারা কারা আমার সাথে কানেক্টেড আছেন এটা দেখতে গিয়ে দেখি বেশিরভাগ জনকে আমি চিনিনা। তাদের সাথে আমার কানেক্‌শন দুই-তিন ধাপে। তো ঝামেলা এড়াতে আমি যেমন নির্বিচারে তাদের যুক্ত করে ছিলাম আবার তেমন নির্বিচারে তাদের মুক্ত করে দিতে লাগলাম।

বাছাবাছির এই পর্যায়ে লিস্টে সুশীল রাজগরিয়া নামটা দেখে একটু খটকা লাগলো। নামের সাথে দেয়া তার ছবিটা দেখে মনে হলো কোন এক কালে উনাকে চিনতাম বোধহয়। দেখলাম তার সাথে আমার যোগাযোগ সরাসরি, মাঝখানে কোন ধাপ নেই। একটু ভাবতে মনে পড়লো এমন নামের একজনকে স্কুল জীবনে চিনতাম যিনি আমার দুই ক্লাস উপরে পড়তেন। কিন্তু তার প্রফাইলে তিনি কোন স্কুলে পড়েছেন সেটা নেই। কেবল বিলাতের কোন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন সেটা উল্লেখ করা আছে।

সন্দেহ নিরসনের জন্য তাকে মেসেজ পাঠালাম
– আপনি কি অমুক স্কুলের তমুক ব্যাচে ছিলেন?
কিছুক্ষণ পরেই উত্তর আসলো
— হ্যাঁ। কেন, তুমি আমাকে চিনতে পারোনি?
— চিনতে পেরেছি, কিন্তু একটু সন্দেহ ছিল মনে।
আরো কিছু টুকটাক মেসেজ চালাচালির পর আমরা মোবাইল নাম্বার বিনিময় করলাম।

তার কয়েকদিন পর সুশীলদা’র কাছ থেকে ফোন এলো। তিনি আমি কোথায় আছি, কী করি ইত্যাদি কাজসংক্রান্ত ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু আমার নিজের বা আমার পরিবারের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করলেন না। আমিও তাই তাকে তার কাজসংক্রান্ত খোঁজখবর ছাড়া আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। সুশীলদা’র বাবা সুনীল রাজগরিয়া হচ্ছেন ‘রাজগরিয়া গ্রুপ অভ ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর মালিক। এজন্য সুশীলদা’ বলার আগেই আমি ধারণা করেছিলাম তিনি হয়তো পৈত্রিক ব্যবসাতে যোগ দিয়েছেন। দেখা গেলো আমার ধারণা সঠিক। সুশীলদা’ আমাকে একদিন দুপুরে খাবার নিমন্ত্রণ জানালেন। আমি যাবার আশ্বাস দিলাম, কিন্তু কোন দিনক্ষণ ঠিক করলাম না।

আমরা স্কুলে পড়ার সময় সুশীলদা’ এমন কেউ ছিলেন না যে আমি তার কথা মনে রাখবো। না তিনি ভালো ছাত্র ছিলেন, না ভালো খেলোয়াড়, না ভালো শিল্পী। এমনকি দুষ্টুমীর জন্য যাদেরকে সবাই মনে রাখে তিনি সেই দলেরও না। তাকে মনে রাখার একমাত্র কারণ হচ্ছে, তিনি সুনীল রাজগরিয়ার পুত্র। এবং সুনীল রাজগরিয়া হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যার টাকায় আমাদের স্কুলের নতুন বিল্ডিংটা দোতলা থেকে চারতলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুঁতোগুতি করে দেখলাম সুশীলদা’ বিলাত থেকে পড়াশোনা করে ফিরেছেন সাত/আট বছর হয়। তারও আগে থেকে তিনি রাজগরিয়া গ্রুপের মার্কেটিং এন্ড সেলস্‌ ডিরেক্টর পদে আছেন, পরে বিলাতী ডিগ্রি নিয়েছেন। অবশ্য সুশীলদা’র বিলাতী এমবিএ ডিগ্রি না থেকে দেশের বিএ ফেল হলেও এখন যে পদে আছেন সেই পদেই থাকতেন — পৈত্রিক ব্যবসা বলে কথা।

মাঝে বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে, আমি আর সুশীলদা’র খোঁজ নেইনি, তার নিমন্ত্রণও রক্ষা করিনি। সুশীলদা’ও আমার আর খোঁজ করেননি। এমন সময় এক সকালে ফোন করে জানালেন, তিনি আমাকে একটা ই-মেইল পাঠিয়েছেন। আমি মেইল চেক করে দেখি পত্রিকায় প্রকাশিত একটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির স্ক্যানড কপি পাঠানো হয়েছে। রাজগরিয়া গ্রুপ অভ ইন্ডাস্ট্রিজের মশলাজাত পণ্য বিভাগে গোডাউন-ইন-চার্জ পদে লোক নেয়া হবে, পোস্টিং মাগুরা আর ফরিদপুরে। মেইলে উল্লেখ করা আছে, আগ্রহী হলে আমি সেখানে আবেদন করতে পারি, আমার বন্ধুবান্ধবদেরকেও আবেদন করতে বলতে পারি। মেইলটা পড়ে আমার কী মনে হলো সে’কথা পরে বলবো। যাকগে, এখানে আমার আবেদন করার প্রশ্নই ওঠে না, তাই ওটা নিয়ে আর দ্বিতীয়বার ভাবিনি।

এর কিছু দিন পর সুশীলদা’র অফিস থেকে একজন আমাদের অফিসে আসলেন আমার সাথে দেখা করতে। আগত ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, আমি তার জন্য কী করতে পারি। তিনি সোজাসুজি বললেন, তিনি আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে চান। এরপর তিনি যেসব প্রশ্ন করা শুরু করলেন সেসব প্রশ্ন কেবল সেগুনবাগিচার দুই মহারথী — জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (আয়কর বিভাগ আর মূসক বিভাগ) আর দুর্নীতি দমন কমিশন লোকজনকে করে থাকে। এসব প্রশ্নের উত্তর আমি ঐ দুই মহারথীকে দিতে অভ্যস্ত, অন্য কাউকে না, তাই ভদ্রলোককে নিরাশ করতে হয়। এরপর তিনি আমার ব্যক্তিগত আয়-রোজগার সম্পর্কে যে সব প্রশ্ন করা শুরু করলেন সে সব প্রশ্ন বিয়ের সময় পাত্রীপক্ষ পাত্রপক্ষকে করে থাকে। আমি যেহেতু বহুকাল ধরে বিবাহিত, এবং আরেকবার ছাঁদনাতলায় যেতে আগ্রহী না, তাই এই সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকেও বিরত থাকলাম। ভদ্রলোককে রঙ চা খাইয়ে বিদায় দিলাম।

বুঝতে পারলাম ধনকুবের সুশীল রাজগরিয়ার গোডাউন-ইন-চার্জ হবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার সাহস ভিখিরি পাণ্ডব কোথা থেকে পায় সেটা যাচাই করার জন্য এই ভদ্রলোককে পাঠানো হয়েছিল। তিনি গিয়ে কী রিপোর্ট করেছিলেন জানি না, তবে তারও মাসখানেক পরে জুনিয়র রাজগরিয়া আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি তার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বা শিপিং লাইনে কাজ করতে আগ্রহী কিনা। আমি সবিনয়ে তাকে জানাই যে, আমার চাকুরি নিয়ে তিনি যেন অহেতুক পেরেশান না হন।

**************************************************************

আজকাল বেশিরভাগ অফিসে বিড়ি ফোঁকার কোন ব্যবস্থা থাকে না। বাইরের দরজায় ইংরেজিতে ‘ধুমপান করবেন না’ বা ‘ধুমপান নিষেধ’ লেখা থাকে। ফলে ধুমপায়ী লোকজনের সুবিধার্থে অফিসগুলোর ঠিক বাইরে সিগারেট বিক্রির টঙ থাকে। একদিন দুপুরের দিকে অমন এক টঙে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছি এমন সময় একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো। আমি ফোন তুললাম,
— হ্যালো!
— হ্যালো পাণ্ডব! কেমন আছিস?
আমি কণ্ঠটা ঠিক চিনতে পারি না। জিজ্ঞেস করি,
— কে বলছেন?
— আরে আমি বিশু! বিশ্বনাথ আগরওয়াল।
— ও, বিশু! তা আছিস কেমন?
বিশু আমার কলেজ জীবনের সহপাঠী। ওর সাথে মোটামুটি বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু কলেজের পর আর ওর সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না। জানা গেলো আমাদের কমন বন্ধু হিমেলের কাছ থেকে সে আমার ফোন নাম্বার পেয়েছে। বিশুর সাথে টুকটাক নানা কথা হয়। ঠিক হয় একদিন সন্ধ্যায় ধানমণ্ডি লেকের পাড়ের পুরনো আড্ডার জায়গায় দেখা করবো।

নির্ধারিত দিনে পুরনো ঠেকে যাই। দেখি এত লোকজন গিজগিজ করছে মনে হয় যেন সারা শহরের লোক লেকের পাড়ে বেড়াতে এসেছে। ভীড়ের চোটে বিশুর সাথে আর বিশেষ কথা হয় না। বাড়িঘর, বাচ্চাকাচ্চার খবরেই আলাপ শেষ হয়। জানা গেলো গত পনের/ষোল বছর সে নাকি অনেক রকম ব্যবসা করেছে। মাঝে সাত/আট বছর আগে উচ্চ শিক্ষার্থে বিলাত গিয়েছিল। সেখানে সে পড়াশোনা শেষ করতে পেরেছিল কিনা সেটা জানা যায় না। পরে ওর বাবা-মা বয়সোজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় নাকি তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। আর্থিক অবস্থা বিচারে বিশুদেরকে স্বচ্ছল বলা যায়, তবে তারা কোনভাবেই রাজগরিয়াদের এক-আধলারও সমান নয়।

বেশ কয়েক মাস পরে বিশু ফোন করলো। বিশু জিজ্ঞেস করে আমি এখন কোথায় আছি, কী কাজ করি। সাথে এটাও জানায় সাভারে সে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিয়েছে। সেখানে সে ব্যাপক উন্নতি করছে। এবং এর ফলে চকবাজারে তাদের পৈত্রিক মনিহারী ব্যবসায়ে সে সময় দিতে পারছে না। বিশু সরাসরিই বললো, আমি যেন তাদের চকবাজারের মনোহারী জিনিসের দোকানের দায়িত্ব নেই। এ’কথা শুনে আমার কী মনে হলো সে’কথা পরে বলবো। আমি বিশুকে বলি যে, তার সাথে কোন প্রকার পেশাদারী বা ব্যবসায়িক সম্পর্কে যেতে আমি আগ্রহী না। তার প্রয়োজন মেটাতে সে বরং অভিজ্ঞ কাউকে খুঁজে নিক।

**************************************************************

একটা সময় ছিল যখন বাসে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চার ঘন্টায় যাওয়া বা আসা যেতো। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। এখন মাসিক হাজার টাকা দামের ইন্টারনেটের গতি ১৯.২ কেবিপিএস থেকে বেড়ে ১ এমবিপিএস হয়েছে, আর বাসে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় এখন চার ঘন্টা থেকে বেড়ে বারো ঘন্টার মতো হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়তে একটা গোটা দিন লাগার ইতিহাসও জানি। এই জন্য ধনী লোকেরা বিমানে চড়েন আর দরিদ্র লোকেরা বিমানের ব্যয় বইতে না পেরে ট্রেনে চড়েন। যে সব কপালপোড়া বিমানের টিকিট কিনতে পারে না বা পায় না এবং ট্রেনের টিকিটও পায় না তারা বাসের টিকিট কাটে। আমি যেহেতু কালে-ভদ্রে চট্টগ্রাম যাই তাই কখনোই জুতমতো ট্রেনের টিকিট পাই না। বিমানের উল্লেখ এখানে অপ্রয়োজনীয়। অমন এক দুর্দিনে ঢাকা ফেরার জন্য দামপাড়া থেকে বাসে চড়ে বসি।

বাসে যিনি আমার পাশের সিটে বসেছে তাকে বেশ অস্থিরমতি বলে মনে হল। এই কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলছে, আবার কিছুক্ষণ ট্যাবে মুভি দেখছে, আবার কিছুক্ষণ খামোখাই বাসের সুপারভাইজারের সাথে তর্কাতর্কি করছে। কিছুক্ষণ পর পর সে পানির বোতলে চুমুক দিচ্ছে। কিন্তু সেই বোতলে যে পানি নেই সেটা আমি হলফ করে বলতে পারি। সম্ভবত ডাবের পানি মেশানো জিন বা ভদকা। বাস সীতাকুণ্ড পার হতে যখন চার ঘন্টার চেয়ে বেশি সময় নিয়ে নিল তখন সে আর থাকতে না পেরে আমার সাথে আলাপ জুড়লো। অবশ্য আলাপ সে আরো আগেই জুড়তো যদি না আমি জানালা দিয়ে বাইরে ভাটিয়ারী, কুমিরা, বাড়বকুণ্ড এলাকার দৃশ্যে নিজেকে জোর করে মগ্ন রাখার চেষ্টা না করতাম। কতক্ষণে ঢাকা পৌঁছাতে পারবো সে বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে আমিও সহযাত্রীর সাথে আলাপ চালাই।

সহযাত্রীর নাম বঙ্কুবিহারী মিশ্র, পেশায় ব্যবসায়ী, ফতুল্লাতে তার রি-রোলিং মিল আছে। তার চট্টগ্রামে যাবার উদ্দেশ্য স্ক্র্যাপ কেনা। আমার বৃত্তান্ত জিজ্ঞেস করায় শুধু বলি, আমি ঢাকাতে থাকি, চাকুরি করি, অফিসের কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। মিশ্রজী আমার কথা সবিশেষ জানতে আগ্রহী নয়। তার আগ্রহ রি-রোলিং মিলের ব্যবসাটি কতো কঠিন আর সে কতো দক্ষতার সাথে সেটা সামলাচ্ছে সেটা আমাকে জানানো। মিশ্রজী বয়সে আমার চেয়ে দশ-বারো বছরের ছোট হবে। তাই তার প্রগলভতাকে প্রশ্রয়ের চোখে দেখি। তার রি-রোলিং মিলের গল্পের ফাঁকে ফাঁকে দুটো বিষয়ের বার বার উপস্থিতি লক্ষ করি। প্রথমটা হচ্ছে সেই বিষয় যেটা প্রায় সব বাঙালীর গল্পে থাকে — দেশ আর দেশের মানুষের বদনাম করা। আমাদের নিঃস্বার্থ পূর্বপুরুষেরা নিজেদের জীবন দিয়ে দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিলেন তো তাই স্বার্থপর আমরা প্রতিনিয়ত দেশ আর দেশের মানুষকে গালি দিয়ে সেই ঋণ শোধ করি। মিশ্রজীর গল্পের ফাঁকের দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে প্রতিটি বিষয়ে বিলাত কতো ভালো আর আমাদের দেশ কতো খারাপ সেটা দেখানো। আমার একটা সন্দেহ হলো। যাচাই করার জন্য জিজ্ঞেস করলাম সে আগে বিলাতে থাকতো কিনা। সাথে সাথে সে যে গল্প করার জন্য এতক্ষণ ধরে হাঁসফাঁস করছিল সেই গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলো।

মিশ্রজী বছর আষ্টেক আগে বিলাত গিয়েছিল, উদ্দেশ্য উচ্চ শিক্ষা গ্রহন। মিশ্রজী’র দাবি সে বিলাতের প্রথম সারির একটা কলেজে ব্যবসায় বিষয়ে পড়তো। তার ফলাফলও নাকি খুব ভালো। তার কলেজ নাকি তাকে অধ্যাপনার জন্য রেখে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে দেশপ্রেমিক মানুষ, তাই এতো অব্যবস্থার মধ্যেও শিল্প গড়ে দেশের উন্নতি করার জন্য বিলাতের অমন লোভনীয় প্রস্তাব ফেলে দেশে চলে এসেছে। বিলাত সংক্রান্ত মিশ্রজীর দাবি সত্য-মিথ্যা যা-ই হোক, তার শিল্পোদ্যোগের ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। আমি খোলা মনেই তার প্রশংসা করি। মিশ্রজী লাজুক হাসি দেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে আমি কোথায়, কী পড়াশোনা করেছি। তাকে জানাই, আমি অল্পস্বল্প যা পড়েছি সেটা দেশেই, যে বিষয়ে স্নাতক হয়েছি সেটার নাম বলি। মিশ্রজীও আমাকে খুশি করার জন্য বলে, খুব ভালো।

জ্যামে স্থবির বাসের যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ মোবাইলে তাদের পরিচিত জনদের সাথে কথা বলে জানালেন সামনে বেশ লম্বা জ্যাম আছে। এর সীমা কারো মতে ফেনী মহীপাল পর্যন্ত, কেউ বলেন চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত। এমনসব কথা শুনে আমাদের মোটামুটি কেতরে পড়ার জোগাড় হলো। ফলে মীরের সরাই আসতে বাস থামানোর জন্য সবাই হৈচৈ লাগিয়ে দিল। বাথরুমে যাওয়া, চা-নাস্তা খাওয়া, একটু হাঁটাহাটি করা — এসব ছাড়া আমাদের পক্ষে এতো লম্বা জ্যাম পাড়ি দেয়া সম্ভব না। অনিশ্চিত জ্যামের পথে না খেয়ে হয়তো থাকা যাবে কিন্তু বাথরুমে না গিয়ে থাকার উপায় নেই, তাই কাঁধের ব্যাগটা নিয়ে নেমে পড়ি। কিন্তু যে রেস্তোরাঁ পাওয়া গেলো তার বাথরুম এতো নোংরা যে আমার নাড়িভুঁড়ি উলটে আসার যোগাড় হলো। পেটে যেন কোন গোলযোগ না বাঁধে সে জন্য কলা ছাড়া আর কিছু খাবো না বলে ভাবি। মিশ্রজী এসে চা পানের জন্য জোরাজুরি করতে লাগলো। শেষে রঙ চা পানে সম্মত হই।

চা পানের ফাঁকে মিশ্রজী হঠাৎ বলে বসে আমার সাথে কথা বলে তার ভালো লেগেছে, আমি যেন তার রি-রোলিং মিলে শিফ্‌ট-ইন-চার্জ হিসাবে যোগ দেই। কাজটা নাকি খুব সহজ — ‘বদমাইশ লেবার’দের চোখে চোখে রাখা। আমার যা অভিজ্ঞতা তাতে নাকি শিফ্‌ট-ইন-চার্জের কাজটা আমার জন্য কঠিন কিছু হবে না আর সে আমাকে ভালো বেতন দেবে। এ’কথা শুনে আমার কী মনে হলো সে’কথা পরে বলবো। আমি ‘আচ্ছা, ভেবে দেখি’ বলে এই বিষয়ে তাকে আর কথা বাড়ানোর সুযোগ দেই না। বাসে ফিরে তার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমি চোখ পর্যন্ত ক্যাপ নামিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

**************************************************************

নীতা চৌহানদের পরিবারের সাথে দিশাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠতা অনেক বছরের। নীতা আর তার স্বামী বছর পাঁচেক আগে বিলাতে পড়তে গিয়েছিল। তাদের বিলাতে থাকার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিশার সাথে যে যোগাযোগ হয়েছিল তাতে জানা গিয়েছিল তারা আর দেশে ফিরবে না। কয়েক মাস আগে দিশা একদিন বাজারে কেনাকাটা করার সময় হঠাৎ নীতার সাথে তার দেখা হয়ে যায়। জানা গেলো নীতারা দেশে বেড়াতে আসেনি, একেবারে চলে এসেছে। কেন ফিরে এসেছে সেটা জিজ্ঞেস করায় সে শ্বশুর-শাশুড়ির অসুস্থতার কথা বললো। বাস্তবে নীতার শ্বশুর-শাশুড়ির শারিরীক অবস্থা পাঁচ বছর আগে যা ছিল এখন তার চেয়ে বিশেষ কোন অবনতি হয়নি। তাছাড়া ওরা শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে থাকেও না। ধারণা করা যায়, বাস্তবে ভিসার মেয়াদ না বাড়ায় অথবা অভিবাসনের সুযোগ না পাওয়ায় নীতারা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে।

ঘটনাটা যদি এখানেই শেষ হতো তাহলে সেটা এখানে উল্লেখ করার কিছু ছিলনা। কিন্তু ঘটনার আরো কিছু বাকি আছে। জানা গেলো দেশে ফিরে নীতা একটা মধ্যম মানের স্কুলে শিক্ষকতা করছে, যা সে বিলাত যাবার আগেই করতো। নীতা জানালো তাদের স্কুলে টিচিং অ্যাসিসটেন্ট নেয়া হচ্ছে, দিশা আবেদন করলে সে কর্তৃপক্ষকে বলে ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। এ’কথা শুনে দিশার কী মনে হয়েছিল সে’কথা না জানলেও চলবে। দিশা প্রস্তাবটা যেন শুনতে পায়নি এমন একটা ভাব করে নীতার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসে।

**************************************************************

আমি যে একজন দরিদ্র মানুষ সেটা এই শহরের পথের কুকুরটা পর্যন্ত জানে। দারিদ্র্যের ছাপ আমার চেহারা-সুরত, পোশাক-আশাকে চিরস্থায়ীভাবে মারা আছে। অনেকগুলো বছর আমার সাথে থাকতে থাকতে এখন দিশার অবস্থাও তথৈবচ। কিন্তু বাস্তবটা হচ্ছে, টাকাপয়সার বিচারে আমরা দরিদ্র হলেও আমরা লোকজনের কাছে অর্থ বা অন্য কোন প্রকার সাহায্য কামনা করিনা। জীবিকার প্রয়োজনে আমরা যে কাজ করি সেগুলো উল্লেখ করার মতো কিছু হয়তো নয়, কিন্তু তাই বলে আমরা অর্থবান বা ক্ষমতাবান কাউকে দেখলেই তার কাছে চাকুরি প্রার্থনা করি না। তাহলে সুশীল রাজগরিয়া, বিশ্বনাথ আগরওয়াল এবং বঙ্কুবিহারী মিশ্রকে কেন আমাকে অযাচিতভাবে চাকুরি দিতে চাইলো? তাও আবার আমার শিক্ষা, কর্মাভিজ্ঞতা এবং আমার বর্তমান চাকুরির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কিছু! নীতা চৌহানও খুব ভালো করে জানে দিশার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অনেক বছরের, এই ব্যাপারে তার প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে এবং বর্তমানে সে যা করছে সেটা মন্দ নয়। সর্বোপরি দিশা তার কাছে চাকুরি বা অন্য কোন প্রকার সাহায্য প্রার্থনা করেনি। তাহলে সে এমনটা করলো কেন?

অনেক ‘আপস্টার্ট’ আছে যারা অন্যদেরকে হেয় করার জন্য প্রায়ই এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রস্তাব দিয়ে থাকে। বিশ্বনাথ আগরওয়াল, বঙ্কুবিহারী মিশ্র এবং নীতা চৌহানকে হয়তো সেই দলে ফেলা যায়, কিন্তু সুশীল রাজগরিয়া আপস্টার্ট লোক নয়। কয়েক পুরুষ ধরে তারা উঁচুতলার মানুষ। তাহলে সে-ইবা বাকীদের মতো আচরণ করলো কেন?

একটু ভেবে দেখলাম, এই মানুষগুলোর মধ্যে একটা ব্যাপার কমন। তারা প্রত্যেকে বিলাত ফেরত। এই মিলটা হয়তো তাদের এমন আচরণের জন্য দায়ী কোন নিশ্চিত কারণ নয়, তবু এটার একটা সম্ভাবনা আছে। কাকতালীয় ভেবে একে উড়িয়ে না দিয়ে এটা ভেবে দেখার দরকার আছে।

**************************************************************

এদেশের মানুষের বিলাতে পড়তে যাবার ইতিহাস প্রায় দেড়শ’ বছরের। এই সময়ে লাখ লাখ লোক চিকিৎসাবিজ্ঞান আর আইন বিষয়ে পড়ে বিলাত থেকে ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরেছেন। বিলাত থেকে অন্য সব বিষয়ে পড়াশোনা করে দেশে ফেরা লোকের সংখ্যাও কম নয়। কর্মক্ষেত্রে তাদের দেখাও মেলে। এইসব বিলাত ফেরদের মধ্যে কলার ঝাঁকানো লোকজন যে একেবারে নেই তা নয়, তবে তাদের সংখ্যা অনুল্লেখযোগ্য। অবশ্য অমন লোক সমাজের সব গ্রুপেই থাকে। সুতরাং তাদের কলার ঝাঁকানোর পেছনে বিলাতবাসকে দায়ী করা যায় না।

গত শতাব্দীর আশি আর নব্বইয়ের দশকে এই দেশ থেকে যারা উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে যেতেন তাদের প্রথম পছন্দ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সময়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেছেন। ৯/১১-এর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবার সুযোগ একটু কঠিন হয়ে যাওয়ায় উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে গমনেচ্ছুকদের অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের বদলে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজীল্যান্ড আর ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশে পাড়ি জমাতে থাকেন। ঠিক এই সময়ে বিলাতের শিক্ষাবণিকেরা নতুন পসরা সাজিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছুকদের সামনে হাজির হয়। বিলাতে রাতারাতি গজিয়ে ওঠা সব কলেজে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ছাত্র ভর্তি শুরু হয়। বিলাত সরকারেরও বোধকরি অমন ব্যবস্থাতে সায় ছিল, তাই এদের ছাড়পত্র পেতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি। ফলে বানের জলের মতো শিক্ষার্থীরা বিলাতে পাড়ি জমায়। এই সময়ে বিলাত গমনেচ্ছুকদের বড় অংশের লক্ষ্য পড়াশোনার চেয়ে বেশি ছিল যে কোন উপায়ে বিলাতে থেকে যাওয়া। তা তারা কয়েক বছর সেখানে থাকতে পেরেছিল বইকি। বিলাতে সস্তা শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবার পর এই সব নামসর্বস্ব কলেজগুলোর বিরুদ্ধে বিলাতের সরকার খড়্গহস্ত হয়ে ওঠে। ফলে দিনের পর দিন ছাত্রত্বের নামে কাজ করে যাওয়াদের ছাড়পত্রের মেয়াদ আর নবায়ণ করা হয় না। পরিণামে তাদের বেশিরভাগ জন কোন ডিগ্রি অর্জন ছাড়াই দলে দলে দেশে ফিরতে থাকে।

নামসর্বস্ব কলেজগুলো বোধকরি তাদের মক্কেলদের এমন ধারণা দিয়েছিল যে, তাদের প্রতিষ্ঠান বিশ্বসেরা। গবেটদের দল সেটা বিশ্বাস করেছিল। অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমানেরা ফাঁকিটা ধরতে পারলেও ততক্ষণে তাদের মোটা অঙ্কের টাকা বাটপারদের পকেটে চলে যাওয়ায় তাদের আর কিছু করার ছিল না। ফলে দেশে ফেরার পর গবেট আর বুদ্ধিমান উভয় দল এটা দাবি করতে থাকে যে, তারা বিলাতের নামজাদা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা। এমনকি যারা কোন ডিগ্রি অর্জন করতে পারেনি তারাও অমন দাবি করতে থাকে।

এই দলটাই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার জন্য আমাদের মতো বিলাতে না-যাওয়াদেরকে অযাচিত করুণা করতে আগ্রহী হয়। দেখা যাচ্ছে, বিলাতের জল-হাওয়া, অন্যান্য পরিবেশ বা শিক্ষা এই বলদদের মেধা ও বোধের কোন উন্নতি ঘটাতে পারেনি। বরং এরা আরো বড় বলদ হয়ে ফিরে এসেছে।

এক কালে উচ্চ শিক্ষার্থে সাইপ্রাস যাওয়াদের সিংহভাগের একই পরিণতি হয়েছিল। কিন্তু তারা সংখ্যায় অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায়, এবং ‘সাইপ্রাস’ নামটা অপরিচিত ও গুরুত্ববাহী না বলে সাইপ্রাসী বলদদের অত্যাচার বিশেষ সহ্য করতে হয়নি। একই কারণে রুশী বলদরাও হালে পানি পায়নি। কিন্তু বিলাত চেনে না এমন মানুষ তো এই দেশে নেই। সাবেক প্রভুদের দেশ বলে তার গুরুত্বও যথেষ্ট। হাতি মরলেও তার দাম নাকি লাখ টাকা। এ’জন্য বিলাত ফেরত কথাটা এখনো গুরুত্ব বহন করে। বিলাতী বলদরা এই পূর্ব ধারণাটার সুযোগ নেবার চেষ্টা করে।

**************************************************************

যতদিন পর্যন্ত না পৃথিবীর অন্য কোন কোণ্‌ থেকে বাংলাদেশে নতুন কোন শ্রেণীর বলদের আবির্ভাব ঘটছে ততদিন পর্যন্ত বোধকরি বিলাতি বলদদের অত্যাচার আমাদেরকে সহ্য করে যেতে হবে।


Comments

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

হ করুম। বুনো পশ্চিমে কাউবয়ের চাকুরি করতে চাই। কাউবয় হ্যাট, লেদার জ্যাকেট, জিনস, হাই বুট পরে; কোমরের দুই পাশে দুটো পিস্তল ঝুলিয়ে; হাতে চাবুক নিয়ে কালো স্ট্যালিয়নের পিঠে চড়ে গরুর পাল দাবড়ে বেড়াতে চাই। আর অতি অবশ্যই একাধিক স্বর্ণকেশী, নীল নয়নার সাথে সকাল-বিকাল প্রেম করার সুযোগ চাই। পারবে এমন চাকুরি দিতে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নজমুল আলবাব's picture

বিলাতীর বদলে মাড়োয়ারীও লিখতে পারতেন। শয়তানী হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আসল নামগুলো পালটে দেয়ায় আপনার কাছে অমনটা মনে হচ্ছে। তবে যাদের কথা বলেছি তারা সবাই বিশুদ্ধ বিলাত ফেরত। এবং তারা ঐ পরিচয় দিতে ভালোবাসে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী's picture

দাঁড়াও, আমি ফিরে নিই আগে! তারপর দেখবে 'সাইপ্রাসী বলদ'-এর অত্যাচার কাকে বলে?

সে ছিল সম্পর্কে আমার চাচাতো ভাই। বয়সে আমার চাইতে ঢের ছোট। বছর দশেক তো হবেই। পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। সাগরে-সফরে টেকা-টুকা ভালোই কামিয়েছে। জেলা শহরে অধুনা ব্যপ্তি পাওয়া রিয়েল (?) ষ্টেটের ব্যবসায় লগ্নি করে ফুলে-ফেঁপেও উঠেছে হয়ত। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। একদিন হঠাৎ করেই তার ফোন পেলাম। তারপর কোন ভূমিকা ছাড়াই একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম, ''ভাইয়া আপনি, কি ইঞ্জিনিয়ার? মানে সিভিল না অন্য কিছু?" এ ধরণের একটি প্রশ্নকে স্বাভাবিক ভাবেই নির্দোষ মনে হলো। তাই নির্দ্বিধায় উত্তর করলাম। বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হলো তখনই। আমার উত্তর শুনে যেন সে আশাহত হয়েছে এমন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ''ওহ হো! সিভিল ঈঞ্জিনিয়ার হলে আমার প্রজেক্টে আপনাকে এপয়েণ্ট করা যেতো।'' ভ্রুত এসে আয়নায় নিজের মুখটা ভালো করে পরীক্ষা করেছিলাম, ''আমি কি তবে ফুরিয়ে গেছি?''

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আপনি বস্‌ আরেক মহান ব্যক্তির কথা মনে করিয়ে দিলেন। সেই মহান ব্যক্তি পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এবং গোলাপ রেহমানের পত্রিকায় 'নরম পানু' লিখতেন। তার লেখা পড়লে মনে হতো সারা দুনিয়া জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খামাখা নানা বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায়। ঐসব আজাইরা বিষয় না পড়িয়ে সর্বত্র আসলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো দরকার। কারণ, ঐসব ইঞ্জিনিয়াররা আসলে কোন কাজই জানে না। যে কোন কাজ সমাধা করার জন্য তারা সব সময় মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে পড়ে থাকে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি's picture

ইন্টারেস্টিং পর্যবেক্ষণ। আমার এখন পর্যন্ত এমন সুযোগ ঘটেনি, বিলাতফেরত লোকজনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে দেখছি, দেখি কোনো ভাল চাকরি বাকরি জোটাতে পারি নাকি।

নামগুলো নিশ্চয়ই বদলে দিয়েছেন, কিন্তু বদলে যাওয়া নামগুলোর প্যাটার্নে কোথায় যেন একটা মিল পাচ্ছি। মিল পাওয়াটা কি আমার বোঝার ভুল নাকি আপনার ইচ্ছাকৃত নাকি কাকতালীয়?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

নামগুলো তো অবশ্যই পালটে দিয়েছি, এবং পালটে দেয়া নামগুলোতে স্পষ্টতই একটা প্যাটার্ন অনুসরণ করা হয়েছে। তোমার পর্যবেক্ষণ সঠিক।

বিলাতী বলদরা তোমাকে তো ভালো চাকুরী সাধবে না। তারা সধাবে ঐটা যেটা দিয়ে তোমাকে অপমান করা যায়। অবশ্য আমার ধারণা, তোমার ব্যাকগ্রাউন্ড শুনলে বিলাতী বলদরা তোমাকে কোন চাকুরীই দেবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা's picture

বলদের রকমফের। বিলায়তী বলদ! হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

বলদের আরো রকমফের আছে। একটু এদিক-ওদিক তাকালেই দেখতে পাবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক's picture

অদ্ভুত অভিজ্ঞতা তবে অপরিচিত নয়।উগড়ে দিয়ে তবেই শান্তি পাওয়া যায়
ট্রোল

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

অপরিচিত হতে যাবে কেন! খুবই পরিচিত অভিজ্ঞতা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মেঘলা মানুষ's picture

বাঃ! সবাই আপনাকে চাকরি দিতে চাইছে আর আপনি তাদের নিন্দা-মন্দ কচ্ছেন কেন হে! খাইছে
আপনার সুশীলদা' আপনার ভালো-মন্দ জানার আপনার অফিসে লোক পর্যন্ত পাঠাল!

"...নীতার সাথে আর কথা বাড়িয়ে চলে আসে।"
এটা "...নীতার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসে।"‌ ‌ হবার কথা বোধ হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

সচলের মজাটা এখানে। ভুলগুলো মনোযোগী পাঠকের চোখ এড়ায় না। সংশোধন করা হলো। ধন্যবাদ।

আপনা ভালো নাকি পাগলেও বোঝে। আমি মনে হয় পাগলেরও অধম। তাই সাধা লক্ষ্মী পায়ে ঠেলি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুমিমা ইয়াসমিন's picture

এক বিলাতী বলদ জিজ্ঞেস করেছিল, কত টাকা বেতন পাও?
আমি বলেছিলাম, বিনা বেতনে চাকরি করি। টাকার কী দরকার!

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

এ কেমন বিলাতী বলদ যে এখনো টাকার অঙ্কে হিসেব করে! এখনো পাউন্ড-ইউরো এসবে অভ্যস্ত হয়নি।

আপনি তাকে বরং একটা বিনা বেতনের চাকুরী অফার করুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন's picture

মানুষ উপকার করতে চাইলে অত ক্ষ্যাপেন ক্যা? বিলাতি মানুষরা জানে এইদেশের মানুষ বেকাট টেকার থাকে; তাই সুযোগ থাকলে সিএসআর করে বেকারত্ব ঘোচাতে চায়

০২
আপনার যদি এইসব পছন্দ না হয় নিজের পদ পদবী ডিগ্রি এবং মাসিক ইনকামের ফিগারসহ একটা ভিজিটিং কার্ড ছাপাইলেই পারেন (লগে ছবি দিয়েন কিন্তু) আর নীচে লিখে দিয়েন: 'সাহায্য নয়; দোয়া প্রত্যাশী'

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

১। আমার বুদ্ধিশুদ্ধি কম তো তাই মানুষ যে যেচে পড়ে সাহায্য করতে চাইছে সেটা বুঝতে পারি না।

২। বিলাতী বলদেরা তো কারো ভিজিটিং কার্ড পড়ে দেখে না। তারা মুখের দিকে তাকিয়ে যা হিসেব করেন সেই অনুযায়ী আচরণ করেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক's picture

গল্পগুলোর সঙ্গে শেষের পর্যবেক্ষণকে ঠিক মেলাতে পারছি না - গল্পগুলোতেও তেমন দোষের কিছু পেলাম না, প্রথমটা ছাড়া। যারা আপনাকে কাজ দিতে চাইছে, তারা তো আর খারাপ কিছু ভেবে বা আপনাকে অপমান করার জন্য কাজ দিতে চাইছিল, এমন কেন ভাবছেন? কোরিলেশান মাত্রেই কার্যকারণ সম্পর্ক, এমন বলা যায় কি?

আশরাফুল

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

প্রথম গল্পটাতে আপনি যা কিছু দুষণীয় পেয়েছেন পরের তিনটা গল্পে ঠিক একই বস্তু আছে।

একজন মানুষ আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মাভিজ্ঞতা, সামাজিক অবস্থান সব কিছু জেনেও যদি আপনাকে তার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অবনমনকর কোন কাজ অফার করে তাহলে বুঝতে হবে যে সেটা আপনাকে অপমান করার জন্য করা হয়েছে। আর যেখানে আপনি চাকুরীপ্রার্থী না সেখানে যদি অমন অফার করা হয় তাহলে সেখানে চাকুরী দিতে আগ্রহী ব্যক্তির নীচ মানসিকতাটা আরো স্পষ্ট হয়। এই চারটা গল্পেই এই ব্যাপারগুলো উপস্থিত।

আমি কিন্তু এই ব্যাপারে স্থির কোন সিদ্ধান্ত দেইনি যে, এই কোরিলেশন কার্যকারণ সম্পর্ককে প্রমাণিত করে। দেখুন আমি বলেছি,

Quote:
এই মিলটা হয়তো তাদের এমন আচরণের জন্য দায়ী কোন নিশ্চিত কারণ নয়, তবু এটার একটা সম্ভাবনা আছে। কাকতালীয় ভেবে একে উড়িয়ে না দিয়ে এটা ভেবে দেখার দরকার আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুমাদ্রী's picture

পাণ্ডব'দা, ইংল্যাণ্ড এর বিলেত হবার কাহিনিটা জানতে চাই।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

দিলেন তো প্যাঁচ লাগিয়ে! এই ব্যাপারে কখনো ভাবিনি বা খোঁজ করিনি। জানতে পারলে আপনাদের জানাবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম.'s picture

আরবীতে মূল শব্দটা বিলায়ত, অর্থ- বিদেশ, বিজাতীয়। মুসলমানি শাসনামলে সাধারনভাবে ইউরোপকে বুঝানোর জন্য ভারতীয় অঞ্চলে বিলায়ত>বিলাত শব্দটি ব্যবহার করা হতো। পরে ইংল্যান্ড পাকাপাকি ভাবে ভারতে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ইংল্যান্ডকেই বিলাত বা বিলেত হিসাবে অভিহিত করা হতে থাকে। অবশ্য বিলাত এর আরও একাধিক অর্থ আছে, যেমন- রাজ্য, রাজস্ব, গুরুপ্রণামী ইত্যাদি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

একটু ভুল হলো বস্‌। আরবি 'بلد' (বিলাদ) শব্দটার মানে দেশ/ভূমি/জমি, বিদেশ নয়। যেমন, মদিনাকে বলা হয় বিলাদুন্নাবী বা নবীর দেশ। এদেশে মুসলিমদের শাসনামল শুরু হবার বহু আগে থেকে আরবদের সাথে ইউরোপের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তাদের কাছে ইউরোপের কমন নেম 'য়্যুরোবা'ই ছিল। যেমন, এই দেশের কমন নেম ছিল 'ইন্দ' বা 'হিন্দ'।

বিলাতের অন্য যে অর্থগুলো বললেন সেটা কোন ভাষার?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম.'s picture

নগেন্দ্র নাথ বসু সম্পাদিত "বিশ্বকোষ" এ বিলাৎ শব্দটিকে আরবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থ হিসেবে বলা হয়েছে- বাকি, বিদেশ, ভিন্নদেশ, ইংল্যান্ড ও ইউরপীয় দেশ সমূহ। আর সাহিত্য একাডেমী প্রকাশিত "বঙ্গীয় শব্দকোষ" এ বিলাত শব্দটির উৎস হিসেবে আরবি বিলায়ত শব্দটি নির্দেশিত হয়েছে, অর্থ হিসেবে বলা হয়েছে- দেশ, রাজ্য, বিদেশ, রাজস্ব, গুরুপ্রনামী, ইংল্যান্ড ও ইউরপীয় দেশ সমূহ, ইত্যাদি।
তবে হরেন্দ্রচন্দ্র পাল তাঁর "বাঙলা সাহিত্যে আরবী-ফারসী শব্দ" বইটিতে শব্দটির উৎসের ব্যাপারে আরও পরিষ্কার করে বলেছেন- আরবি ‘ওয়ালাত’ শব্দটি ফারসি, উর্দু ও হিন্দি ভাষায় আরবি বর্ণ ‘ওয়াও’-এর উচ্চারণজনিত কাঠিন্যে পড়ে বিলায়ত হয়ে যায়। বাংলা ভাষায় এসে ‘বিলায়ত’ আরও বিকৃত হয়ে ‘বিলাত’ হয়ে যায়। আরবি ওয়ালাত শব্দের মূল অর্থ ওয়ালি বা গভর্নর-শাসিত দেশ বা প্রদেশ। এক সময় মিশর, ইরানসহ অনেক দেশ ছিল আরবদের ‘ওয়ালাত’। ভারতের মুসলমান রাজত্বের প্রথম দিকে ভারতীয় মুসলমানগণ পারস্য ও মধ্য এশিয়ার দেশসমূহকে ‘বিলায়ত’ বলত । তাদের কাছে ঐসব এলাকার অধিবাসীরা ছিল আহলে বিলায়ত বা দেশি লোক। ইউরপীয়দের আগমনের পর শব্দটির অর্থ ধীরে ধীরে পাল্টে যায় এবং বিলায়ত ভারতীয়দের কাছে হয়ে পড়ে ইংল্যান্ড বা ইউরোপ।

এক লহমা's picture

অসাধারণ! গুরু গুরু

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আমরা আলোচনাটা ঠিক লাইনে রাখি। আপনি বলেছেন,

Quote:
আরবীতে মূল শব্দটা বিলায়ত, অর্থ- বিদেশ, বিজাতীয়।

আর আমি বলেছি,

Quote:
আরবি 'بلد' (বিলাদ) শব্দটার মানে দেশ/ভূমি/জমি, বিদেশ নয়।

প্রথমে এটার মীমাংসা করা যাক। আরবীতে বিদেশ হচ্ছে بلد أجنبي (বিলাদে আজনাবী)। অর্থাৎ, আজনাবী যুক্ত না করলে বিলাদের মানে বিদেশ হয় না।

শ্রী নগেন্দ্র নাথ বসু 'বিলাৎ' (আরবীতে খণ্ড-ত-এর সাথে তুলনীয় কোন বর্ণ নেই)-এর বাংলায় প্রচলিত অর্থে যদি বিদেশ বলে থাকেন তাহলে ঠিক আছে, নয়তো বলতে হবে তিনিও ভুল করেছেন। সাহিত্য একাডেমী'র ব্যাখ্যাতে দেশ ও বিদেশ দুটো অর্থই ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, তারা মূল অর্থ আর বাংলায় প্রচলিত অর্থ দুটোই একসাথে দিয়েছেন (কোন ব্যাখ্যা ছাড়া)। হরেন্দ্রচন্দ্র পালের ব্যাখ্যার ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। কারণ, এটা ভিন্ন কনটেক্সট থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম.'s picture

আমি 'বিলাত' শব্দটির একাডেমিক আলোচনা করার জন্য এটা লিখি নাই, লিখেছিলাম সুমাদ্রী এর কৌতূহলের সুত্র ধরে। বস্তুতপক্ষে এ কৌতূহল অনেকেরই আছে যে লন্ডন বা ইংল্যান্ডের নাম বিলাত কেন? সেই পরিপ্রেক্ষিতেই উক্ত মন্তব্যে বিলাতের উৎস হিসেবে বঙ্গীয় শব্দকোষে আরবি শব্দ হিসেবে বর্ণিত 'বিলায়ত' এর উল্লেখ করেছিলাম, প্রকৃতপক্ষে যা আসলে অপভ্রংশ শব্দ মাত্র। এতে মূল কৌতূহলের সাধারনভাবে নিবৃত্তি ঘটে বলেই তো মনে হয়।

মাহবুব লীলেন's picture

বিলাত এর একটা সূত্র:
বৈলাট= ভিন্নলাট= অন্যভূমি/বৈদেশ

অতিথি লেখক's picture

সবই সেই "চৌধুরী-সাহেব" সিনড্রোম। এই চৌধুরীরা কেউ বুয়েটে/ঢাকা মেডিকেলে পড়ে চৌধুরী হন, অনেকে বিলাতে গিয়ে হন, আর অনেকে আছেন "এমনে এমনেই চৌধুরী সাহেব"।

অনেক ভেবে যা বুঝেছি, যারা "চৌধুরী" হন, তারা বুয়েটে পড়লেও হন, আবার ইন্টার পাশ হলেও হন। এইটা শেষ পর্যন্ত মূলত ব্যাক্তি আর তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ব্যাপার।

---দিফিও

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

'চৌধুরী সাহেব' সিনড্রোম সংক্রান্ত আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। প্রত্যেক চৌধুরী গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হলেও দিনশেষে তাদের ভূমিকা ঐ কলার ঝাঁকানোই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাসনীম's picture

Quote:
আমি যে একজন দরিদ্র মানুষ সেটা এই শহরের পথের কুকুরটা পর্যন্ত জানে। দারিদ্র্যের ছাপ আমার চেহারা-সুরত, পোশাক-আশাকে চিরস্থায়ীভাবে মারা আছে। অনেকগুলো বছর আমার সাথে থাকতে থাকতে এখন দিশার অবস্থাও তথৈবচ। কিন্তু বাস্তবটা হচ্ছে, টাকাপয়সার বিচারে আমরা দরিদ্র হলেও আমরা লোকজনের কাছে অর্থ বা অন্য কোন প্রকার সাহায্য কামনা করিনা। জীবিকার প্রয়োজনে আমরা যে কাজ করি সেগুলো উল্লেখ করার মতো কিছু হয়তো নয়, কিন্তু তাই বলে আমরা অর্থবান বা ক্ষমতাবান কাউকে দেখলেই তার কাছে চাকুরি প্রার্থনা করি না। তাহলে সুশীল রাজগরিয়া, বিশ্বনাথ আগরওয়াল এবং বঙ্কুবিহারী মিশ্রকে কেন আমাকে অযাচিতভাবে চাকুরি দিতে চাইলো? তাও আবার আমার শিক্ষা, কর্মাভিজ্ঞতা এবং আমার বর্তমান চাকুরির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কিছু! নীতা চৌহানও খুব ভালো করে জানে দিশার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অনেক বছরের, এই ব্যাপারে তার প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে এবং বর্তমানে সে যা করছে সেটা মন্দ নয়। সর্বোপরি দিশা তার কাছে চাকুরি বা অন্য কোন প্রকার সাহায্য প্রার্থনা করেনি। তাহলে সে এমনটা করলো কেন?

সব সময়েই যে মানুষ অপমান করার উদ্দেশ্যে এটা করে মনে হয় না। বাংলাদেশিদের অনেকেরই (ইনফ্যাক্ট অধিকাংশেরই) ঔচিত্যবোধ কম, কোনটা বলা উচিত অথবা কোনটা বলা উচিত না, সেটা তারা জানে না। তবে কেউ কেউ অপমান করার জন্যই করে - কিন্তু সাধারনত তারা ঘনিষ্ঠ মানুষ হয় - অর্থাৎ তারা জানে কিভাবে বললে অপমান করা যাবে। এই রকম একটা অভিজ্ঞতা আমারও আছে।

বিদেশে বাস করার কারনে চাকরি নিয়ে অন্য অভিজ্ঞতা হয়েছে। চাকরি থেকে লে-অফ হওয়ার পরে (যেটা দুইবার হয়েছে) চেনাজানা মানুষকে রেজিউমে দিয়েছি, কেউ কেউ ইংরেজিতে যেটাকে বলে "এবোভ অ্যান্ড বিয়োন্ড" সেই রকম সাহায্য করেছে, কিন্তু অধিকাংশই নির্লিপ্ত ছিল। আমি দেখেছি সত্যিকারের প্রয়োজনের সময় অনেক অদ্ভুত জায়গা থেকে অযাচিত সাহায্য আসে। মানুষের উপরে বিশ্বাস আছে এখনো - তাই বদলামিগুলোও ক্ষমা করে দেওয়ার চেষ্টা করি।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

একটা বড় অংশ মানুষের যে ঔচিত্যবোধ, লঘুগুরুজ্ঞান, স্থানকালপাত্রজ্ঞান ইত্যাকার জ্ঞান নেই সেটা আমি হাড়ে হাড়ে জানি। এটা দেশভেদে খুব বেশি হেরফের হয় না। আসল অপমানটা তো ঘনিষ্ঠ জনেরাই করে। কারণ, তারা জানে কোন জায়গাটাতে আঘাত করলে কম সাবানে বেশি ফেনা হবে। এই গল্পগুলোর চরিত্রগুলোর মধ্যে আপনি কেবল মিশ্রজীকে ঔচিত্যবোধ না থাকার বেনেফিট অভ ডাউট দিতে পারেন। বাকিরা সবাই বিশুদ্ধ অপমান করার মানসে এমনটা করেছে। বলতে পারেন, তারা খামাখা গায়ে পড়ে এসে অপমান করতে যাবে কেন? উত্তরটা হচ্ছে, অন্যকে অপমান করাটা বোধহয় এদের প্যাশনের পর্যায়ে চলে গেছে।

বন্ধুদের উপকার যদি আমি অস্বীকার করি তাহলে আমি পৃথিবীর সর্ব নিকৃষ্ট নিমকহারামদের একজন হবো। বন্ধুদের উপকারের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধা, গভীর ভালোবাসা আছে। সেখানে অপমান করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মরুদ্যান's picture

কঠিন বাস্তবতা!

চরিত্রের নামগুলো চমৎকার! হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

সুশীল রাজগরিয়ার আসল নামটা পালটে দেবার সময় মনে হলো এই প্যাটার্নটা অনুসরণ করি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ইয়াসির আরাফাত's picture

আপনি নরম গলায় অনুচ্চ স্বরে কথা বলেন, এটা একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। মুখাপেক্ষিতা ছাড়া লোকের সঙ্গে নম্র ব্যবহার এখনও আমজনতার চর্চা হয়ে উঠতে পারেনি প্রিয় শহরে। কথা বলার সময় যে তেড়েফুঁড়ে উঠতে পারে, তাকেই লোকে সমীহ করে।

সময় আছে, ভোল পালটে নিন। (বদলে যাঊ বদলে দাঊ ইত্যাদি..................)

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

যাদের লক্ষ অপমান করা তারা নরম স্বর, গরম স্বর কোনটারই তোয়াক্কা করে না। পুচ্ছ লাগালে যেমন কাক ময়ুর হয় না, তেমন আমি বহিরঙ্গে নিজেকে যতই বদলাই তাতে আমার ফকিরী ঢাকা যাবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম.'s picture

Quote:
এ’কথা শুনে আমার কী মনে হলো সে’কথা পরে বলবো

পরে তো আর বললেন না যে আপনার কী মনে হলো, মানে সেই মুহূর্তে আপনার কী মনোভাব হলো। যাই হোক, গল্পটা শেষ হওয়ার আগে সবার মত আমার মনেও প্রশ্ন জেগেছিল, বন্ধু বৎসল মানুষগুলোর সহৃদয় মহানুভবতা আপনার মনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করছে কেন? এখন আর সে প্রশ্ন করছি না, কারন ততক্ষণে আমারও বন্ধু বান্ধব এবং পরিচিত জনদের মধ্যে যারা বিলায়েত গমনের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন, তাদের আচরণ এবং মনোভাবের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয়গুলো যেন পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠল। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

ঐসময় কী মনে হয়েছিল সেটা বিচ্ছিন্ন ভাবনা। পরে সেগুলো জোড়া দিয়ে আপনাদেরকে জানালাম।

একটা জিনিস কি লক্ষ করেছেন, বহিরাগত আর্যরা এদেশে এসে যে চোটপাট শুরু করেছিল সেটা আজো অব্দি চালু আছে। তখন থেকে আমরা বিদেশীদের প্রভুজ্ঞান করে আসছি। এজন্য বিলাত ফেরত কাউকেও আমরা অমন জ্ঞান করি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম.'s picture

খাঁটি কথা বলেছেন। সেই যে বিদেশী গৌর আর্যকে আমরা মাথায় তুললাম, সেই অবধি বিলাতী কাউকে দেখলে, নিদেনপক্ষে বিলাতফেরত কাউকে দেখলেই আমরা গদ গদ হয়ে যাই। আমাদের অনেক গুণের মধ্যে এটা অন্যতম।

নাশতারান's picture

কোনো বিলাতফেরতকে চিনি না বলেই কি আজ পর্যন্ত কেউ চাকরি সাধেনি আমাকে? ইয়ে, মানে...

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

তাহলে তুমি লোকজনকে চাকুরি সাধা শুরু করো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অভিমন্যু .'s picture

আসলেই ঘনিষ্টজনরাই জানে কিভাবে অপমান করতে হয়।
আমি আপনার একটা মন্তব্যের সাথে সম্পূর্ন একমত

Quote:
বন্ধুদের উপকার যদি আমি অস্বীকার করি তাহলে আমি পৃথিবীর সর্ব নিকৃষ্ট নিমকহারামদের একজন হবো।

কারন আমি ও আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের বেলায় বিভিন্ন দূর্যোগে না চাইতে এই বন্ধুরাই এগিয়ে এসেছে , অথচ যাদের কথা ছিল তাঁদের টিকির নাগালও পাইনি।
আমার জীবনে এক দূর্যোগের সময় যখন এই বন্ধুদের অবদানের কথা স্বীকার করছিলাম তখন আমার অগ্রজের এক বন্ধু একটা কথা বলেছিলেন, " আসলে আমরা যাদের 'আত্নীয়' বলি তাঁরা আত্নীয় নয় তাঁরা হচ্ছেন 'রক্তিয়' প্রকৃত 'আত্নীয়' তাঁরা যাদের সাথে আত্নার সম্পর্ক থাকে, যেখানে কোন কিছু পাবার আকাংখ্যা থাকেনা" তাই বন্ধুরাই হচ্ছে প্রকৃত আত্নীয়।।

________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠার জন্য রক্তের সম্পর্ক থাকাটা জরুরী নয়।

Love gives naught but itself and takes naught but from itself.
Love possesses not nor would it be possessed;
For love is sufficient unto love.


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অছ্যুৎ বলাই's picture

একেই বলে হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলা!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আমি বেকুব মানুষ তো তাই কোনটা যে লক্ষ্মী সেটা আর বুঝতে পারিনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত's picture

বিলাত যাওয়া যে একটা অর্জন সেইটা বোধহয় এদের মগজে ঢুকে থাকে। আর সেই অর্জনের বলে যে সে অন্যের চেয়ে উঁচুতে অবস্থান করে সেই ধারনাও এদের থাকতে পারে। অর্জন আর অবস্থানের বাস্তব রূপ থাকেনা, তখন সেটাকে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেখিয়ে বেড়ানো ছাড়া কী উপায়!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

ঐযে একটা কথা আছে না, offence is the best defence! তাই এরা অফেন্সিভ হয়ে নিজেদের ডিফেন্ড করার চেষ্টা করে। একটা গল্প শোনো।

শফি নামের এক লোক এক ধনী পরিবারে বাজার সরকারের কাজ করতেন। বছর পঁয়ত্রিশ আগে একবার ঐ পরিবারের এক ছেলে লন্ডনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কী করে যেন তখন পরিবারের কারো পক্ষে লন্ডন যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে জনাব শফিকে লন্ডনে পাঠানো হয় অসুস্থজনকে নিয়ে দেশে চলে আসতে। ঐ আমলে লন্ডন যেতে ভিসা লাগতো না। ফলে জনাব শফি অনায়াসে লন্ডন গিয়ে চারদিনের মাথায় অসুস্থজনকে নিয়ে ফিরে আসলেন। তারপর এই পঁয়ত্রিশ বছরেও জনাব শফির লন্ডনের গল্প শেষ হয়নি। এলাকায় তার নামই হয়ে গেছে 'শফি লন্ডনী'!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফি's picture

বানান খেয়াল কইরা দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

হায়! হায়!! তুমিই কি সেই? আমি তো জানতাম তুমি আম্রিকান!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফি's picture

নাহ। আমি নরওয়ে সাফি। দুষ্ট বন্ধু/কাজিন/আত্মীয়রা বলে নরওয়ে ঘুরে আসার পরে প্রথম প্রথম যাই হতো বলতাম বলে - "আমি যখন নরওয়ে ছিলাম...."

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

ঠিক! ঐ যে বলে না - 'ইন দ্য ইয়ার নাইন্টিন সিক্সটি এইট .....................


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত's picture

বুঝলেন, আমি যখন জার্মানি ছিলাম তখন দেখেছি, জার্মানদের সে কী তেজ! বাঙালির মতো মিনমিনে না! বাঙালির উন্নতি হচ্ছেনা যে, তার কারণ আছে...

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

ঠিক! ঠিক!! য়্যাকদম ঠিক!!! এই তো শিখে ফেলেছো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক's picture

হুম এটা একটা কারণ হতে পারে
ট্রোল

আনু-আল হক's picture

Quote:
আমাদের নিঃস্বার্থ পূর্বপুরুষেরা নিজেদের জীবন দিয়ে দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিলেন তো তাই স্বার্থপর আমরা প্রতিনিয়ত দেশ আর দেশের মানুষকে গালি দিয়ে সেই ঋণ শোধ করি।

গুরু গুরু

কিন্তু,

Quote:
এ’কথা শুনে আমার কী মনে হলো সে’কথা পরে বলবো

- পরে তো আর বল্লেন্না পাণ্ডবদা অ্যাঁ

----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

উপরে আবদুল্লাহ্‌ ভাইকে দেয়া উত্তরটা দেখুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফি's picture

পান্ডবদা, চাকরি করবেন? দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

হ করুম! বুনো পশ্চিমে কাউবয়ের চাকুরি করবো। কাউবয় হ্যাট, লেদার জ্যাকেট, জিনস, হাই বুট পরে; কোমরের দু'পাশে দুটো পিস্তল ঝুলিয়ে; হাতে ল্যাসো নিয়ে; কালো স্ট্যালিয়নে চড়ে গরুর পাল দাবড়ে বেড়াতে চাই। আর অতি অবশ্যই একাধিক জন স্বর্ণকেশী, নীল নয়নার সাথে সকাল-বিকাল প্রেম করার সুযোগ চাই। পারবে এমন চাকুরি দিতে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফি's picture

দেখি বারটেন্ডারের সাথে কথা বলে

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

যে বারটেন্ডারের রেফারেন্স দিলে তাতে আমি তো তোমাকে নিয়েই চিন্তায় পড়ে গেলাম!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত's picture

গান্টা দেখতে ভাল্লাগ্লো!
মণিকা বেলুচির ছবিগুলান তো শেয়ার কল্লেন্না সাফি ভাই, এসব কি ভালো?

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নীড় সন্ধানী's picture

আপনি প্রতিষ্ঠিত কর্মে অধিষ্ঠিত থেকেও এহেন অফার পেলেন, আর আমি যে চাকরীবাকরী ছেড়ে স্বাধীন জীবন উপভোগ করছি এটা জানলে কিরকম লক্ষী অফার আসতে পারে তাই নিয়ে চিন্তায় পড়লাম। খাইছে

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আপনাকে ঈর্ষা করছি!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি's picture

সামনের গ্রীষ্মে দেশে আইতাছি, খাড়ান। 'দি নিউ ধুগো বিতান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ'-এ জরুরী ভিত্তিতে লোকবল লাগবে। আপনের চাকরি পাক্কা। চাচা-মামু-খালু ধরাধরির সিস্টেম নাই। গেটলক সার্ভিস। খালি ভাত রান্তে জানলেই হবে। নিদেনপক্ষে, পানি গরম করা। সেইটাও না পারলে চুলায় আগুন ধরানি। আর যদি এইটাও না পারেন, তাইলেও সমস্যা নাই। হাতে একটা ছড়ি নিয়া জনগণের লগে হাদুমপাদুম করবেন। কিন্তু, চাকরি আপনের করোনই লাগবো। যাবেন কোয়ানে... মুহাহাহা...

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আমি গত ৭ বচ্ছর ধৈরা আপনার হাদুম্পাদুম শুন্তাছি - 'খাড়ান, এই আয়া পড়লাম' কইয়া। আপনার চাক্রি'র আশায় থাকলে আমারে না খায়া মর্তে হৈবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা's picture

হো হো হো

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ধুসর গোধূলি's picture

এইবার নো হাদুমপাদুম, গুলিস্তান টু লছ্যন্দি, খোদার কসম গেইটলক। দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

ঠিকাছে আপনের কথা বিশ্বাস গেলাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত's picture

ওনার বিবাহের বিরিয়ানিও গত সাড়ে পাঁচবছর ধইরা খাইতাছি!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

স্যাম's picture

দেঁতো হাসি

রণদীপম বসু's picture

এরেই কয় তেলা মাথায় তেল দেওয়া ! আহারে, আমাগোর দিকে কেউ একটিবার ফিরেও চাইলো না !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

আপনার তো এসবের দরকার নেই। আপনি বরং ভারতীয় দর্শন শিক্ষার পাঠশালা খুলুন। তাতে শিক্ষা গ্রহন করে আমরা এসব জাগতিক ব্যাপারে দার্শনিক নির্লিপ্ততা অর্জন করি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা's picture

যতবারই আপনার লেখায় মন্তব্য করতে বসছি আগেই অন্য কারো চমৎকার মন্তব্যে কিছু জানিয়ে বসে থাকছি। তারপরে মন্তব্য লাফাং-এর ভয়ে আপনার লেখায় আর কছু না বলে কেটে পড়ছি। এবারে অন্য কোনও কিছু লেখার আগে সেই বকেয়া মন্তব্যটা করে ফেলি। ব্লগরব্লগর ভেল লেগেছে। আর, আপনার লেখায় কোনকিছুই একেবারে এমনি এমনি আসে বলে মনে হয়নি কখনো, তাই জানতে ইচ্ছে করছে যে নামকরণ-এর প্যাটার্ন এর কারণটা কি?

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

এটা খুব ভেবে করা নয়। জীবনে এই প্যাটার্নের নামের যে সব মানুষের কাছাকাছি ছিলাম কী করে যেন তাদের কাছ থেকে খারাপ ব্যবহারই পেয়েছি। অবচেতন মনে এটা হয়তো কাজ করেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রায়হান আবীর's picture

পাণ্ডব দা, আমাদের ল্যাবে না একটা ... দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

কী আছে? বিলাতী বলদ নাকি চাকুরি?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা's picture

খ্যা-খ্যা-খ্যা-খ্যা শয়তানী হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

স্যাম's picture

শয়তানী হাসি

পুতুল's picture

বস, শুধু বিলাতে নয় এরা সব খানেই আছে। সর্বশেষ অভিজ্ঞতা এত ভয়ংকর ছিল যে, এদের চরিত্র বা এরা কেন এমন আচরণ করে, সেটা বোঝার জন্য মনোবিজ্ঞানের একটা বই কিনেছি।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব's picture

'বিলাত' মানে শুধু ইংল্যান্ড নয়, বস্‌।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাসুদ সজীব's picture

বিলাতী ফেরৎ মানুষগুলোর মাঝে অনেকের দেশে ফিরে আসার পর নাক সিটকানোর ভাবটা সবচেয়ে বেশি লক্ষনীয়। প্রথম প্রথম তো প্রসঙ্গে-অপ্রসঙ্গে তুলনা, সেই তুলনায় বুঝিয়ে দেন বিলেত হলো স্বর্গ আর এই দেশ নরক, তিনি প্রথম এই নরকে এসেছেন, আগেও কখনও এখানে ছিলেন না। এখানে কিছু নেই, ওখানে এই-সেই, কত-কি, না এই দেশ দিয়ে হবে না! আর অতি উচ্চ মর্গের কেউ কেউ জিয়া হায়দার হয়ে ওঠেন, বলেন এরচেয়ে পাপিস্থান আমলেই ভালোছিলাম অ্যাঁ

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

রণদীপম বসু's picture

জিয়া হায়দার লোকটা মনে হয় কিছুটা স্ট্যান্টবাজী করে আসলে নিজেকে মিডিয়া প্রমোশন দেয়ার চেষ্টা করেছে ! তবে একইসাথে নিজের পরিচয়টাও জানান দিয়ে গেলো !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.