তাজউদ্দীনদের জন্য অশ্রুজল

শেহাব's picture
Submitted by shehab on Fri, 31/10/2014 - 3:58pm
Categories:

সামনে তো ৩রা নভেম্বর আসছে। ১৯৭৫ সালের এইদিনে আমাদের জাতীয় চার নেতাকে জেলের মধ্যে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছিল। আমাদের গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকীয়তে এ নিয়ে তারপরের কয়েকদিনে কী প্রতিক্রিয়া ছিল?

৪ থেকে ৬ই নভেম্বর পর্যন্ত পত্রিকাগুলো দেখলে জানা যায় মাত্র একবার একটি পত্রিকায় সুশীল টাইপ একটি সম্পাদকীয় এসেছিল। ৭ই নভেম্বর থেকে যেহেতু আবার দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয় সেদিন বা এর পরে যদি না এসে সেটা না হয় মাফ করা যায়। কিন্তু তার আগে যে বড় বড় পত্রিকার সম্পাদকরা এটি নিয়ে টুঁ শব্দটিও করলেন না এটি তো দেশের সাংবাদিকতা চর্চার ইতিহাসে একটি বড় কলংক। আজকে যখন প্রথম আলোর মতিউর রহমান বা ডেইলী স্টারের মাহফুজ আনামের দ্বিচারিতা আমরা দেখি তখন কি খুব বেশি অবাক হওয়া উচিৎ? তারা যে উত্তরাধিকার বহন করছেন সেটি কী খুব গৌরবজনক?

নিচে নিউজক্লিপগুলোতে আমি সম্পাদকীয়গুলো দিলাম। যেসব পত্রিকার কথা বলা হচ্ছে তাদের সম্পাদকরা ছিলেন নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী (দৈনিক বাংলা), আনোয়ার হোসেন (ইত্তেফাক), ওবায়দুল হক (অবজারভার) ও এনায়েতউল্লাহ খান (বাংলাদেশ টাইমস)।

৪ঠা নভেম্বর, ১৯৭৫

এদিন কোন পত্রিকার সম্পাদকীয়তেই জেল হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছু বলা হয় নি। সেদিন অবশ্য সংবাদ হিসেবেও এটি পত্রিকাগুলোতে আসেনি।

দৈনিক বাংলা

প্রথম সম্পাদকীয়টি ছিল দেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও দ্বিতীয় সম্পাদকীয় ছিল আন্তর্জাতিক বিষয়ে।

দৈনিক ইত্তেফাক

প্রথম সম্পাদকীয় ছিল পুরান ঢাকার একটি কাঠের পুল আর দ্বিতীয়টি ছিল আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে।

বাংলাদেশ অবজারভার

প্রথম সম্পাদকীয় ছিল খাদ্যক্রয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে আর দ্বিতীয় সম্পাদকীয় ছিল বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ে।

বাংলাদেশ টাইমস

প্রথম সম্পাদকীয় ছিল বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নিয়েে আর দ্বিতীয়টি ছিল আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে।

৫ই নভেম্বর, ১৯৭৫

এই দিনই সম্ভবত: প্রথমবারের মত জেল হত্যাকাণ্ডের খবর পত্রিকায় আসে। কিন্তু কোন সম্পাদকীয়তে সেটি নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

দৈনিক বাংলা

সম্পাদকীয়র বিষয় ছিল জনস্বাস্থ্য ও অন্য কিছু উন্নয়ন প্রকল্প।

দৈনিক ইত্তেফাক

এদিনের সম্পাদকীয়র বিষয় ছিল জনস্বাস্থ্য ও যোগাযোগব্যবস্থা।

বাংলাদেশ অবজারভার

সম্পাদকীয়র বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক খাদ্য সাহায্য ও জাতীয় উন্নয়ন।

বাংলাদেশ টাইমস

সম্পাদকীয়র বিষয় ছিল স্বনির্ভরতা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি।

৬ই নভেম্বর, ১৯৭৫

এই দিনই প্রথম কোন পত্রিকায় জেল হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি সম্পাদকীয় আসে। এটি এসেছিল ইত্তেফাকে। একটি সুশীল বুদ্ধি সমাজ টাইপ উপসম্পাদকীয় ছিল এটি।

দৈনিক ইত্তেফাক

বাংলাদেশ অবজারভার

সম্পাদকীয়র বিষয় ছিল সেচ ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক সাহায্য আর খাওয়াদাওয়া।

বাংলাদেশ টাইমস

সম্পাদকীয়র বিষয় ছিল বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আর ইজরায়েলের ষড়যন্ত্র।


Comments

হিমু's picture

তখনকার সম্পাদকরা বলতো দুস্কৃতিকারী, এখনকার সম্পাদকেরা বলে দুর্বৃত্ত। তফাত এটুকুই। বড় গুহ্যদ্বারদের ছোটো ভাইয়েরা ছোটো গুহ্যদ্বার হয়েছে।

অতিথি লেখক's picture

যা বুঝলাম, মিলিটারির ডাণ্ডারে সুশীলরাই সবচেয়ে বেশী ডরায়!

"বাংলাদেশ টাইমস"-এর এনায়েতউল্লাহ খান আর "হলিডে" সম্পাদক এনায়েতউল্লাহ খান কি একই ব্যক্তি? হয়ে থাকলে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় অবাক হচ্ছি না। চীনাবাম হিসেবে এনায়েতউল্লাহ খান এবং "হলিডে" ১৯৭২-১৯৭৫ পর্যন্ত সময়ে মুজিবফোবিয়া এবং আওয়ামীবিদ্বেষের জন্য সুপরিচিত ছিলেন।

Emran

Emran

হিমু's picture

বঙ্গবন্ধু মরার পর এনায়েত মিয়া স্পেন আর ইসরায়েল ছাড়া আর কিছু নিয়াই কথা কইতো না মনে হইতেছে।

অতিথি লেখক's picture

আরেকটু লেখাপড়া কইরে বুঝলাম যে দুইজন একই লোক! ১৯৭৫-১৯৭৭ পর্যন্ত এনায়েতউল্লাহ খান "বাংলাদেশ টাইমস"-এর সম্পাদক ছিলেন (১৯৭৭ সালে তিনি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী হন)। "হলিডে" বঙ্গবন্ধু ব্যান করসিলেন ১৯৭৪ সালে; এইজন্যই মনে খান সাহেব বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের উপর বিশেষভাবে খ্যাপা ছিলেন।

Emran

হিমু's picture

হলিডে ঐ আমলের ইংরেজি আমার দেশ।

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

আমার জানামতে দুজনএকই ব্যাক্তি।
(বাকশালের লিস্টেও তার নাম দেখেছি মনে পড়ে। চোখ টিপি )

এনায়েতউল্লাহ খান এখনও মুজিবফোবিয়া এবং আওয়ামীবিদ্বেষের জন্য সুপরিচিত আছেন।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক's picture

Quote:
এনায়েতউল্লাহ খান এখনও মুজিবফোবিয়া এবং আওয়ামীবিদ্বেষের জন্য সুপরিচিত আছেন।

ইয়ে, মানে... এনায়েতউল্লাহ খান না মারা গেছেন ২০০৫ সালে?!

Emran

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

হ্যাঁ, কিন্তু আমৃত্যু তাকে এই ভুমিকাতেই পাওয়া গেছে
সেটা শুধুমাত্র ৭২-৭৫ সালে সীমাবদ্ধ নয় হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সত্যপীর's picture

একই লোক। ৭৭ এ জিয়ার আমলে মন্ত্রী হইছিলেন ভদ্রলোক, এরশাদের আমলে ছিলেন চীনে বাংলাদেশী হাই কমিশনার। মিলিটারির সাথে উনার পুরাতন খাতির।

..................................................................
#Banshibir.

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি যদি চিন্তার স্বাধীনতাবাক স্বাধীনতা ব্যাবহার করে বলিঃ "বাকি ঐ ৪টা পত্রিকাও বন্ধ করে দেয়া উচিৎ ছিল।" সেটা কি ফ্যাসিবাদী হয়ে যাবে?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক's picture

এনা রে তেলানোর খাঁ‘র সম্পাদিত পত্রিকায় জেল হত্যার নিন্দা জানিয়ে সম্পাদকীয় না দেখে আশ্চর্য তো হইনিই বরং তার পত্রিকায় হত্যাকারীদের বাহবা জানিয়ে লেখা সম্পাদকীয় বা খবর না দেখেই আশ্চর্য হচ্ছি। কেউ যদি বলেন যে এ সুবিধাবাদী খাঁ ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে ছিল, তাতেও অবাক হবো না। এ মাল যে কি মাত্রায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব বিদ্বেষী ছিল, একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম ওয়েস্টার্ণ এনোটেশনকারী, সর্বজন শ্রদ্ধেয় কালজয়ী সুরকার সমর দাসের মহাপ্রয়ানের পর প্রেসক্লাবে যে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে উপস্থিত থাকার সুযোগ আমার হয়েছিল। বুঝতেই পারছেন, এমন একজন ব্যক্তিত্বের স্মরণ সভা, স্বাভাবিকভাবেই ছিল নজিরবিহীনভাবে ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ এবং শোকাবহ। প্রায় সব স্মৃতিচারণকারীবৃন্দই অশ্রু সম্ভরণ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এমন শোকাসন্তপ্ত সভাতে স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে উনি বলে বসেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শ্রদ্ধেয় সমর দাসের মত আমাদের দেশের অগনিত মানুষের অতুলনীয় অবদান ছিল। তবে এ যুদ্ধের কোন পিতা বা মাতা ছিল না। কোন পিতা বা মাতার দ্বারা এ যুদ্ধ হয়নি, হয়েছে আমাদের দেশের মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগে।‘ এমন একটি শোকাবহ পরিবেশে এ ধরণের অপ্রাসঙ্গিক ভাবে টেনে আনা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে সবাই হতবাক হয়ে যান।
যে মাল, ২০০১ খ্রীষ্টাব্দে এসেও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশে এতটা উগ্রবাদী, তিনি ১৯৭৫ সালে যদি নৃশংষ জেলহত্যার পক্ষ নিয়ে সম্পাদকীয় লিখতেন তবে অবাক হতাম না।

অতিথি লেখক's picture

দেখতে পাচ্ছি, আনোয়ার হোসেন সম্পাদিত ইত্তেফাকের ৬ই নভেম্বরের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছেঃ

Quote:
সরকারী প্রেসনোটেও কেন্দ্রীয় কারাগারের এই হত্যাকাণ্ডকে "জঘন্য অপরাধমূলক কার্যকলাপ" বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে। প্রেসনোটে স্বার্থান্বেষী মহলের গুজবের কুয়াশা ছিন্ন করা হইয়াছে, এবং পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, এই অপরাধমূলক কার্যকলাপের সহিত সেনাবাহিনী কোনক্রমেই জড়িত ছিলেন না।

প্রয়াত সাংবাদিক Alexander Cockburn-এর লেখায় একবার পড়েছিলাম, "Never believe something until it's officially denied." ঘাগু সম্পাদক আনোয়ার হোসেন কেন যে এটা ভুলে গেলেন, সেটা পরিষ্কার না।

আনোয়ার হোসেন বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়ও মন্ত্রী ছিলেন, আবার ১৯৯৬-২০০১ সময়কালীন আওয়ামী লীগ সরকারেও মন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের সমস্যা হল তারা শত্রু-মিত্র ঠিক বাছাই করতে পারে না। বিএনপি-র মধ্যে এই ভুল করার প্রবণতা কম, আর জামাতের মধ্যে শুন্য। দিনের সমস্ত হিসাব শেষে দেখা যায় আওয়ামী লীগের একমাত্র মিত্র হল আওয়াম।

Emran

হিমু's picture

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এখনও পরিবেশ ও বন মন্ত্রী।

নীড় সন্ধানী's picture

তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্তকমিটির তামাশাটা সেই আমলে কোন অশ্বডিম্ব প্রসব করেছিল তা জানতে কৌতুহল হয়। রিপোর্টে চার নেতা নিজেরা নিজেরা গোলাগুলি করে মারা গেছেন, এরকম কিছু থাকলেও আশ্চর্য হবার নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মাসুদ সজীব's picture

সম্পাদক মন্ডলীদের এই বিরোচিত ইতিহাস জেনে মুগ্ধ হলাম! সেই আদর্শের নমুনা তাহারা এখনো রেখে যাচ্ছেন! শুধু তাহাদের গোত্রের কেউ আক্রান্ত (অন্যায় করে আইনের মুখোমুখি) হলে তখনি তাদের সাহসী সাম্বাদিকতার সৎ সাহস জেগে ওঠে। বিবৃতি দিয়ে ভন্ডামির শেষ নমুনা রেখে যান।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মরুদ্যান's picture

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক's picture

কিছু কিছু জিনিস সহজে বদলায় না। এখন হয়ত সেরকম অস্ত্রের মুখে কাউকে পড়তে হচ্ছে না, তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় পড়লে সেচ প্রকল্প টাইপ খবরই আসবে!

রাসিক রেজা নাহিয়েন

অতিথি লেখক's picture

Quote:
তাহাদের এই রহস্যজনক হত্যাকন্ডের ব্যাপারে তদন্দ কমিশন গঠন করিয়া সরাকার সদ্বিবেচনার পরিচয় দিয়াছেন

বন্দুক ভয়ে বন্দুকওয়ালা আমাদের বন্ধু হয়ে যায়।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.