পূর্ব ইউরোপ-২ ( বাল্টিকের দেশগুলো)

তারেক অণু's picture
Submitted by tareqanu on Tue, 16/09/2014 - 4:37am
Categories:

IMG_5240

রাতে সাড়ে বারটা, আধা ঘণ্টা আগে পৌঁছালাম লিথুয়ানিয়ার ২য় বৃহত্তম শহর কাউনাসে। হোটেল ম্যাগনাসে সীট বুক দেয়া ছিল, একটা থ্রি স্টার হোটেল হিসেবেও বেশ কম মূল্যে সীট রিজার্ভ করা ছিল বটে কিন্তু প্রথমেই রিসেপসনিস্ট মিষ্টি হাসি দিয়ে জানাল আমাদের রুম ৭ তলায়, কিন্তু ওয়াই ফাই ১ তলা ছাড়া কাজ করে না !!! মনে পড়ল জাগরেবের এক হোস্টেলে ওয়াই ফাই নিয়ে অভিযোগ করাই তারা জিজ্ঞাসা করেছিল,

Why u need Wi Fi?
মেজাজ খারাপ করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- why u need water?

যাই হোক, ব্যাগ মেঝেতে ফেলে, চট জলদি শাওয়ার নিয়ে জানালা দিয়ে বিখ্যাত কাউনাস ক্যাথেড্রাল দেখতে দেখতে আর পথে সংগ্রহ করে ফরাসী দেশের পাহাড়ি রেড ওয়াইন চাখতে চাখতে মনে করছি আজকের ঘটনাপঞ্জি-

সকাল সাড়ে ন্যতায় যাত্রা শুরু হেলসিংকি থেকে, তখনি গাড়ীর মিটার একেবারে জিরো কিলোমিটার করে রাখা হল যেন যাত্রা শেষে জানা যায় কত চন্দ্রদূরত্ব অতিক্রম করা গেল এবারের পাগলামিতে।

IMG_5195

হেলসিংকি বন্দরে পৌঁছে জাহাজের জন্য অপেক্ষারত আমরা ৪ জন-

10557433_10154569201900497_2007286397026546486_n

উল্লেখ্য রমজান ভাই এবং শাহীন ভাই ১৯৯১ সালে সাইকেল ভ্রমণ শুরু করেছিলেন নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য, সেখান থেকে নেপাল হয়ে মস্কো পর্যন্ত বিমানে চেপে ফিনল্যান্ড এসে আটকে যাওয়া নানা কারণে। কিন্তু ভ্রমণ আজও অব্যাহত রেখেছেন দুই বন্ধু, শুধু দুই চাকার সাইকেলের বদলে এখন চার চাকার গাড়ীতে।

২ ঘণ্টার বাল্টিক সাগর অতিক্রম করে এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিন পৌঁছেই পুরনো তাল্লিনের এক পাশ দিয়ে সোজা ধরলাম লাটভিয়ার রাস্তা। পথে কেন এস্তোনিয়ান ভাষায় STOPকে একটা P যোগ করে জোরদার STOPP করা হয়েছে কিনা??

IMG_5222

সেটা নিয়ে চিন্তা করতে করতেই দুপুরের ভোজনের সময় হয়ে গেল, শাহীন ভাইয়ের স্ত্রী আমাদের জন্য ছাগ মাংসের চমৎকার বিরিয়ানি রান্না করে দিয়েছিলেন লেবু, কাঁচা মরিচ, লাল পেয়াজ সহ!

IMG_5204

IMG_5202

খাবার শেষে বড় এক মগ কফি ( ফিনিশ ভাষায় Kahvi আর ফিনিশ ভাষায় Kohvik) পান করতে করতে গাড়ীতে তেল ভরে ফের যাত্রা শুরু এই সমতল দেশের বন আর প্রান্তর চিরে, পথে দুটো শিকারি বাজ চোখে পড়ল, আর এক দল পরিযায়ী সারস, সেই সাথে এস্তোনিয়ার আবাসিক পাখি ধলামাণিকজোড় ( বাংলাদেশে মহাবিপন্ন, হয়তো বা বিলুপ্ত আজ), কিন্তু কোন এল্ক হরিণের দেখা মিলল না এযাত্রা।

ক্ষুদে দেশটি পাড়ি দিতেই লাটভিয়া, সেখানের রাজধানী রিগা আসতে আসতেই সন্ধ্যা। এযাত্রা আর রিগা নয়, তাই সেখানের অবস্থিত বিখ্যাত পরিচালক সেরগেই আইজেনস্টাইনের বিখ্যাত স্থপতি পিতার তৈরি ভবনগুলো আর দেখা হল না। বরং ফাঁকে ফাঁকে আলাপ করে ঠিক হল আগামীকাল পোল্যান্ডে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে সীমান্তে কোনরকম সমস্যা না করলে ইউক্রেনে প্রবেশ করব সবাই।

আবারও সীমান্ত অতিক্রম, নেই কোন বিশেষ রক্ষী, কোন কাঁটাতারের বেড়া। গাড়ীতে বেজে চলেছে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান-
সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে ,
এই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম?

IMG_5252

আকাশে তখন তারার মেলা, সপ্তর্ষি যেমন দেখা দিয়েছে দিগন্ত শুয়ে তেমনি আছে আকাশে অন্য দিকে ক্যাসিওপিয়া। এর মাঝেই কত নদী প্রান্ত পেরিয়ে আমরা চলে এসেছি লিথুয়ানিয়ায় ! সকালেই ঘুম ভেঙ্গেছে ফিনল্যান্ডে, একদিনেই ৪ দেশে পা দিয়ে ভিসার জটিলতা না থাকার জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতি একটা মুগ্ধতা প্রকাশ করলাম, সেই সাথে স্মরণ করলাম প্রথমবার এস্তোনিয়া আসার সময় ২০০৬ সালে মাত্র ১ দিনের জন্যও আলাদা ভিসা লেগেছিল!
IMG_5207
(অপু আর শাহীন ভাই )

চমৎকার একটা শরতের সন্ধ্যা পার করে আমরা যখন নানা জায়গায় গোত্তা খেয়ে, পথে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাশা করে এই হোটেলে আসলাম তখন প্রায় মধ্যরাত কাজেই কিচেন বন্ধ, অন্য খাবার সুযোগও নেই বললেই চলে। যদিও তাতে আফসোস নেই কোন, দুপুরের বিরিয়ানি এখনো ঝম হয় নি, আর সাথে আছে ফরাসী অমৃত আর আছেন আপনারা।

সত্যি বলতে, যারা আমাদের পূর্ব ইউরোপের এই দিনলিপি আগ্রহ ভরে পড়ছেন আমি কায়মনোবাক্যে আশা করছি আপনি আমাদের সাথে যদি থাকতেন! কাল আবার দেখা হবে, হয় ইউক্রেনের কোন পাহাড়ি গ্রামে বা পোল্যান্ডের কোন শহরে--- শুভ রাত্রি।

IMG_5221


Comments

অতিথি লেখক's picture

বেড়ানোর ছবি দিছেন, ঠিকাছে; কিন্তু বিরিয়ানির ছবি কি না দিলে চলত না ভাই? চোখ টিপি

Emran

তারেক অণু's picture

আমরা আমরাই তো

এক লহমা's picture

"একদিনেই ৪ দেশে পা" - এই না হ'লে তারেকাণুর ঘোরাঘুরি! হাততালি
বিরিয়ানীর ছবি অতি উত্তম! হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু's picture

নাহ, এইগুলা আগে অনেক বার ঘোরা, কেবল অতিক্রম করে গেলাম-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর's picture

‌ছবির সাইজ একটু রিসেট করে দেন। নীড়পাতা ভচকায়া গেছে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু's picture

চেষ্টা করছি-

প্রৌঢ় ভাবনা's picture

দুইন্নার পাতা সব ভচকায়া যাইতাছে তো নীড়পাতা! তারেক অণু বলে কতা!

আব্দুল্লাহ এ.এম.'s picture

যাত্রায় সাথে রাখার জন্য(লেখনীর মাধ্যমে) কৃতজ্ঞতা!

তারেক অণু's picture

শুভেচ্ছা, পোল্যান্ড থেকে

অতিথি লেখক's picture

দাদা , আপনার ব্যাগপত্তর বইবার জন্য লোকের দরকার থাকলে জানাবেন (পরবর্তী যাত্রায়)। আমি আগে থাকতে আবেদন করে রাখলাম। ভালোভাবে ঘোরাঘুরি করে আসুন। হাসি

তারেক অণু's picture

নামই তো জানালেন না!

তাহসিন রেজা's picture

বিরিয়ানি আর "খাবি" সহযোগে একদিনেই চার দেশ ভ্রমণ হাসি দারুণ অণু ভাই হাততালি

বিরিয়ানির ছবি দেখে খেতে ইচ্ছে হল, তাই এখন বিরিয়ানি কুকিং শুরু হইল দেঁতো হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

তারেক অণু's picture

স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ !

অতিথি লেখক's picture

আসলেই ভাইয়া আমিও যদি যেতে পারতাম এমন যাযাবর যাত্রায়। ঘোরাও হচ্ছে আবার পিকনিকও হচ্ছে। এত পথ পাড়ি দিয়ে আবার আমাদের জন্য লিখছেন এই জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
কিন্তু আপনার আগের লেখাটা কোথায় গেল চিন্তিত । আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।

ফাহিমা দিলশাদ

তারেক অণু's picture

ব্লগ এ যেয়ে তালিকা খুঁজেন! তাহলেই হবে

সুমাদ্রী's picture

আহা ফরাসী দেশ! আহা লাল দ্রাক্ষার মদিরা!! মিসিং দ্যা জার্নি অনু'দা। যাহোক, বোঁ ভোইয়াজ!!

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

তারেক অণু's picture

বোঁ ভোইয়াজ!!

প্রৌঢ় ভাবনা's picture

ছিঃ, আপনি লাল পানি খান! আমি কবেই ছেড়ে দিছি। তা, একটু রেড ওয়াইন হলে মন্দ হতোনা! হাসি

তারেক অণু's picture
ভাবুক পাঠক's picture

দারুন। চলুক!

তারেক অণু's picture
রায়হান আবীর's picture

চলুক

তারেক অণু's picture

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.