আজব চিকিৎসা

মোহছেনা ঝর্ণা's picture
Submitted by shameem [Guest] on Mon, 18/08/2014 - 11:58pm
Categories:

দূর সম্পর্কের এক আত্নীয়ের সাথে হঠাৎ দেখা।দূর সম্পর্কের হলেও একটা সময় বেশ যোগাযোগ ছিল।ব্যস্ততা আর সময়ের অভাবে এখন আর তেমন একটা যোগাযোগ হয় না। তাই সেদিন হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়াতে বেশ ভালোই লাগছিল।কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সেই ভাল লাগা উবে গেল।তার বড় ছেলের ডিভোর্স হয়ে গেছে। ছোট একটা বাচ্চা রেখে বউ চলে গেছে।সমস্যা কি জানতে চাইলে তিনি বলবেন কি বলবেন না ভেবে কিছুক্ষণ ইতস্ত করছিলেন।পরে বললেন,আসলে আমার কপালটাই খারাপ,তা না হলে একটার একটা খারাপ আমার সাথেই কেন হবে?
আমি জিজ্ঞেস করলাম,কি হয়েছে? আমি যতটুকু জানতাম ওনার ছেলেটা খুবই ভদ্র ,সুদর্শন এবং মেধাবী।সেই ছেলের ঘর ভাঙ্গার খবর আমার জন্য কিছুটা অবাক হওয়ার মতোই।পরে বিস্তারিত যা শুনলাম,তা হলো ওনার ছেলেটা হঠাৎ করেই কেমন যেন বদলে যেতে লাগল।কারো সাথে কথা বলতো না, কোথাও যেতে চাইত না, এমনকি শেষ পর্যন্ত একদিন হঠাৎ করে চাকরিটাও ছেড়ে দেয়।বউয়ের সাথেও তেমন একটা কথা বলতো না। বউয়ের কথাও শুনতে চাইত না। আর এসব নিয়ে প্রতিদিনই বউয়ের সাথে অশান্তি লেগেই থাকতো।ব্যস তারপর একদিন রাগ করে চলেই গেল।এর বেশ কিছুদিন পর ডিভোর্সের জন্য উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে।
এর অনেকদিন পর আমি আমার সেই আত্নীয়ের আরেক নিকটজন থেকে জানতে পারলাম ওনার ছেলেটা নাকি মানসিকভাবে অসুস্থ।ওর চিকিৎসা চলছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম,কখন থেকে অসুস্থ?
সেই নিকটজন বললেন,অনেক দিন ধরেই অসুস্থ।কিন্তু প্রথম দিকে ওনারা লোকলজ্জার ভয়ে ছেলের চিকিৎসা করান নি। বরং মানুষের কথা ধরে অসুস্থ ছেলেটাকে বিয়ে করিয় দিলেন। আর এখন কি হলো,ছেলের ঘর তো ভাঙলই ,মাঝখান থেকে একটা ছোট বাচ্চার কত কষ্ট! আর বউটা! তাকে তো একরকম প্রতারিতই করা হলো।
মনটা স্বাভাবিক ভাবেই খারাপ হলো।আর মনে হলো আমরা মানুষ কেবল লোক লজ্জার ভয়েই এমন কিছু কাজ করি সেগুলো আদৌ করার দরকার আছে কিনা তা ভাবি না। লোকলজ্জাকে বেশি গুরুত্ব দিলে জীবনে সমস্যা বাড়া ছাড়া কখনো কমেছে বলে আমার মনে হয় না।
সেই ঘটনার কয়েকদিন পর আমাদের এক প্রতিবেশির ছেলেটা হঠাৎ করে কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। সুস্থ একটা ছেলে যখন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যায় সেটা মেনে নেয়া যে কোনো বাবা-মায়য়ার জন্য বেশ কঠিন বিষয়। আর সেই অসুস্থতা যদি হয় মানসিক তাহলে তো জীবনটা মুহূর্তেই ছাই হয়ে যাওয়ার মতোই যন্ত্রণাদায়ক হয়। আমাদের এই প্রতিবেশির ছেলেটার বয়স ও খুব বেশি না ।মাত্র অনার্স এ ভর্তি হয়েছিল। পড়া লেখায় মোটামুটি ভালোই ছিল।নিয়মিত নামাজ পড়তো।সেই ছেলেটা হঠাৎ যে কি কারণে এমন অসুস্থ হয়ে গেল বুঝতেই পারছি না। ছেলের বাবা-মা,আপন জনেরা চিকিৎসার কোনো ত্রুটিই রাখছে না। ডাক্তার রা বলেছে,ভাল হতে সময় লাগবে।তবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।এর মধ্যে শুনলাম সেই ছেলেটাকে নাকি বিয়ে করানো হচ্ছে।
অসুস্থ ছেলেটার বিয়ের কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না ।ছেলের বাবা-মাকে নাকি কারা পরামর্শ দিয়েছে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।এরকম কত পাগল নাকি নিমিষেই ভাল হয়ে গেছে।আর তাই ছেলের বাব-মাও খূঁজে খূঁজে ঠিক ই ছেলের জন্য পাত্রী বের করে ফেললেন।
আমি ভাবছিলাম সেই মেয়েটার কথা।যে সারা জীবনের জন্য বলি হয়ে যাচ্ছে অথচ সে তো জানে না কোন পাপে তার এই শাস্তি।আর ভাবছিলাম মেয়েটার বাবা-মা ,আত্নীয়-স্বজনের কথা।ছেলের বাবা-মা তো ছেলের ভালোর জন্য সব করছিলেন।তাদের সেই চেষ্টার কারণে যে আরেকটা মেয়ের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনটা মুহূর্তেই নরকে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে সেটা ভাবার মতো হিতাহিত জ্ঞান আর তাদের অবশিষ্ট নেই।কিন্তু মেয়ের বাবা-মায়ের এই হিতাহিত জ্ঞান লোপ পাওয়ার কারণটা কি???
উত্তরের জন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় না আমাকে।কারণ দারিদ্র্যের মতো বিশাল সামাজিক ব্যাধি তো আগে থেকেই আমাদের সমাজের একটা বড় অংশকে আষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। জীবন বহতা নদীর মতো।আর তাই তো কেউ কেউ এটাকে শুধুই বয়ে চলতেই দেয়। বয়ে যে কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে এসব ভাবার মতো ফুরসৎ কোথায়??
অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা হওয়া জরুরি।কিন্তু এমন আজব চিকিৎসা আসলে কতটা যৌক্তিক সেটা নিয়েই প্রশ্ন আমার। একটা অসুস্থ জীবনকে সুস্থ করতে গিয়ে আরেকটা সুস্থ জীবনকে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেওয়া কতটা মানবিক সেটা বোধ হয় আমাদের সবারই ভাবা উচিত।


Comments

দীনহিন's picture

আপনার যুক্তি অকাট্য, আসলেই পাগল ছেলের জন্য বিয়ে-দাওয়াই একটি অতীব আজব চিকিৎসা। বিশেষ করে, যদি লুকোনো হয়!

তবে, পাগল ছেলের জন্য একটুও সহানুভূতি দেখা গেল না লেখাটিতে, এই যা! পাগল ছেলের জন্যও তো ভাবতে হবে, নাকি? মানে, পাগল হয়েছে বলে সে বিয়েথা করবে না? পাগলরা অলিম্পিক খেলতে পারবে, কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না? পাগলরাও মূল ধারায় চলে আসুক, তাই কি আমরা চাই না সবাই???

পাগলরা অস্পশ্য নয়, এরাও ডিফারেন্টলি অ্যাবল পারসন। এদেরও দেয়ার আছে, এদেরও চাওয়া থাকতে পারে একটি সুখের সংসার!!

একজন অ-পাগল মানুষের যদি বিয়ের দরকার হয়, একজন পাগল মানুষেরও দরকার; হয়ত বেশী করেই দরকার; একজন অ-পাগল মানুষের চেয়েও একজন পাগল মানুষের যে বেশী প্রয়োজন প্রিয়জনের সান্নিধ্য!!!

লেখা দুর্দান্ত হয়েছে, মোহছেনা, পাঁচতারায় ক্লিকও পড়ে গেছে ইতিমধ্যেই! লিখে চলুন! হাসি

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মাসুদ সজীব's picture

Quote:
একজন অ-পাগল মানুষের চেয়েও একজন পাগল মানুষের যে বেশী প্রয়োজন প্রিয়জনের সান্নিধ্য!!!

বিয়ে মানেই কি শুধু প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য? আর অসুস্থতা লুকিয়ে বিয়ে দেওয়া কিংবা করা অনৈতিক। মানসিক ভাবে অসুস্থদের জন্যে বিয়ের চেয়ে বেশি জরুরি সঠিক চিকিৎসা।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

দীনহিন's picture

Quote:
আর অসুস্থতা লুকিয়ে বিয়ে দেওয়া কিংবা করা অনৈতিক।

হে মাসুদ সজীব ভাই, আমার মন্তব্যের প্রথম প্যারাতেই এক কথাটি লেখা ছিলঃ
আসলেই পাগল ছেলের জন্য বিয়ে-দাওয়াই একটি অতীব আজব চিকিৎসা। বিশেষ করে, যদি লুকোনো হয়!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মাসুদ সজীব's picture

আমার মনে হচ্ছে আপনি একসাথে দুটো বক্তব্য দিচ্ছেন। দুটো সমান সত্যি হতে পারে না।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

দীনহিন's picture

আমি একসাথে যে দুটো বক্তব্য দিচ্ছি বলে আপনার মনে হচ্ছে, তা যদি আলাদা পয়েন্ট করে একটু লিখে দিতেন, মানে, এক নম্বর বক্তব্য, দুই নম্বর বক্তব্য?

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মাসুদ সজীব's picture

১। আসলেই পাগল ছেলের জন্য বিয়ে-দাওয়াই একটি অতীব আজব চিকিৎসা। বিশেষ করে, যদি লুকোনো হয়! অর্থাৎ আপনি এই পোষ্টের মূল বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত।

২। আপনি বলছেন পাগলরা ( এ শব্দটিতে আমার আপত্তি আছে, এর চেয়ে মানসিক অসুস্থ শব্দটা যথার্থ) অস্পশ্য নয়, এরাও ডিফারেন্টলি অ্যাবল পারসন। এদেরও দেয়ার আছে, এদেরও চাওয়া থাকতে পারে একটি সুখের সংসার!! এটা দ্বিতীয় বক্তব্য।

পোষ্টদাতাও কোথাও বলেনি যে মানসিক ভাবে অসুস্থ কেউ বিয়ে করতে পারবে না। পোষ্টের মূল বক্তব্য ছিলো এত বড় একটি সমস্যা কে লুকিয়ে বিয়ে করানো টা অন্যায়। বিয়ের আগে প্রয়োজন সেই অসুস্থতার চিকিৎসা। আপনি যদি সেটা বুঝে থাকেন তাহলে পরের মন্তব্যগুলো নিস্প্রয়োজন ছিলো।

আমার মনে হচ্ছে আমাদের মতের খুব বেশি অমিল নেই, আপনি এক লেখায় সব আশা করেছেন। এক লেখায় সবদিক উপস্থান সম্ভব নয়। উনি একটি নিদিষ্ট বিষয়ে জোর দিয়ে পোষ্ট করেছেন, আলোচনা-সমালোচনা সেটা নিয়ে হতে পারে কিন্তু সেখানে আরো কি কি আসতে পারতো, কি কি আসা উচিত ছিলো সে চাওয়া একটু বেশি-ই মনে হলো। ভালোথাকুন দীনহিন দা হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

দীনহিন's picture

ধন্যবাদ।
হ্যা, আপনার দেখানো ১ এবং ২ নং পয়েন্টের বক্তব্য দুটি আমারই এবং আমি এখনো এ দুটোর মাঝে কোন সংঘর্ষ দেখতে পাচ্ছিনে!
পাগলত্ব লুকিয়ে একটি মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া আমি কখনোই মেনে নিতে পারব না। তবে আমাদের সমাজ পাগলদের খুব হীন দৃষ্টিতে থাকে, আমাদের অনেক অভিভাবকই ছেলের মাথায় সামান্য দোষ আছে শুনলেই ভয়ে পালাবেন বা এক সাগর অবজ্ঞা/তাচ্ছিল্য ঢেলে দেবেন; যদিও আপাতদৃষ্টিতে ধনী কিন্তু বদস্বভাবের ছেলের কথা শুনলে তারাই আবার বলবেন, "পুরুষ মানুষ, একটু আধটু খেয়ালি তো হইবও!!" মানে, একজন মানসিকভাবে বা এমনকি দৈহিকভাবে অসুস্থ ছেলে জানামাত্রই পরিত্যাজ্য হলেও, একটি মাতাল, পাড়া বেড়ানো এবং মারদাঙ্গাকারী ছেলে অতটা পরিত্যাজ্য নয় এই ভাবনায় যে, "ছেলে মানুষের এমন একটু আধটু দোষ থাকেই।"

অঃ টঃ ১।আমি কিন্তু সব অভিভাবকের কথা বলছি না।
২।কথাগুলি ঝগড়ার্থে নেয়া হবে না আশা করছি। মাথায় যদি কোন চিন্তা আসে, তা সচলে
আলোচনা করব না তো কই করব? আলোচনা থেকে আমি তো আমার ভুল থেকে বের
হয়েও আসতে পারে। সুতরাং, পারসোনাল্লি নেবেন না, প্রিয় মাসুদ সজীব ভাইয়া!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

তিথীডোর's picture

Quote:
তবে, পাগল ছেলের জন্য একটুও সহানুভূতি দেখা গেল না লেখাটিতে! পাগল ছেলের জন্যও তো ভাবতে হবে, নাকি? মানে, পাগল হয়েছে বলে সে বিয়েথা করবে না? পাগলরা অলিম্পিক খেলতে পারবে, কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না? পাগলরাও মূল ধারায় চলে আসুক, তাই কি আমরা চাই না সবাই???

বটেই।
অলিম্পিক খেলা আর বিয়ে এক হলো!
সহানুভূতিটাই কিভাবে দেখানো উচিত তাহলে, মানসিক ভারসাম্যহীন কোন পুরুষের একটি সুখের সংসারজনিত চাওয়া মেটাতে একটি সুস্থ মেয়েকে গোপনে কোরবানি দিয়ে? হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

দীনহিন's picture

quote]সহানুভূতিটাই কিভাবে দেখানো উচিত তাহলে, মানসিক ভারসাম্যহীন কোন পুরুষের একটি সুখের সংসারজনিত চাওয়া মেটাতে একটি সুস্থ মেয়েকে গোপনে কোরবানি দিয়ে?

আমি কি তা-ই বলেছি, তিথী?

Quote:
অলিম্পিক খেলা আর বিয়ে এক হলো!

মন ভেঙ্গে গেছে, যা আমি বলিনি বা চাইনি, তাই যেন আমার মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে!

আমি তো পাগল-ত্ব লুকিয়ে বিয়ে করার কথা বলিনি কোথাও। অলিম্পিকের কথা এজন্য টেনেছিলাম যে, আমরা চাই পাগল বা মানসিক যেকোনো বৈকল্যে আক্রান্তরাও পিছিয়ে থাকবে না, তারাও সবকিছুতে অংশ নেবে, যেমন করে একটি সুস্থ-স্বাভাবিক ছেলে অংশ নেয়!

আর যে সুস্থ-স্বাভাবিকতার বড়াই করছেন, বলুন দেখি, কজন সুস্থ সত্যিকারের সুস্থ??? আপনার, আমার, আর সমাজের দৃষ্টিতে যে সুস্থ, সে-ই হতে পারে ভয়ানক অসুস্থ যদি সে হয় চরিত্রহীন, ভণ্ড, লম্পট বা ধর্মান্ধ, কূপমণ্ডূক, এরা আমার, আপনার দেখা পাগলের চাইতেও ভয়ংকর!

হ্যাঁ, পাগলের গুরুজন লুকিয়ে বিয়ে দিতে চায় প্রায়শ আমাদের সমাজে, এক কথায় যা জঘন্য অপরাধ এবং এক প্রকারের নিপীড়ন!

কিন্তু শুধুমাত্র কিছুটা মানসিক বৈকল্যে ভোগার জন্য সমাজও যে পাগলদের নিয়ে কুৎসিত হাসি হাসে, সমাজের সেই মুখ ফিরিয়ে নেওয়া চোখে পড়ল না, তিথী???

পাগল হলেই সে বিয়ে করতে পারবে না, এইরকম ধারণা কোথাও খোদাই করে লেখা আছে বলে জানি না, এমনকি সভ্য জগতেও।

সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছি, এদ্দিনেও চিনলেন না!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মরুদ্যান's picture

যে মানসিক বৈকল্যে ভুগছে, তার পক্ষে স্বাভাবিক কার্যক্রমে অংশ নেয়াটা কতটুকু বাস্তবসম্মত? এই মানুষগুলোর প্রথম এবং প্রথম প্রয়োজন হচ্ছে চিকিৎসা এবং সেবা।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

এক লহমা's picture

ডুপ্লি, ঘ্যাচাং।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

এক লহমা's picture

"তবে, পাগল ছেলের জন্য একটুও সহানুভূতি দেখা গেল না লেখাটিতে, এই যা! পাগল ছেলের জন্যও তো ভাবতে হবে, নাকি? মানে, পাগল হয়েছে বলে সে বিয়েথা করবে না? পাগলরা অলিম্পিক খেলতে পারবে, কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না? পাগলরাও মূল ধারায় চলে আসুক, তাই কি আমরা চাই না সবাই???

পাগলরা অস্পশ্য নয়, এরাও ডিফারেন্টলি অ্যাবল পারসন। এদেরও দেয়ার আছে, এদেরও চাওয়া থাকতে পারে একটি সুখের সংসার!!

একজন অ-পাগল মানুষের যদি বিয়ের দরকার হয়, একজন পাগল মানুষেরও দরকার; হয়ত বেশী করেই দরকার; একজন অ-পাগল মানুষের চেয়েও একজন পাগল মানুষের যে বেশী প্রয়োজন প্রিয়জনের সান্নিধ্য!!!"

দীনহিন, আপনি যতই পোস্টে ৫ তারা দিন না কেন, এই তিনটি অনুচ্ছেদ কিন্তু প্রবলভাবেই সমালোচিত হবার মত হয়েছে। ইতিমধ্যেই কেউ কেউ করেওছেন। আমি আশা করব আপনি এই তিনটি অনুচ্ছেদ-এ বিধৃত অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। শুভেচ্ছা জানবেন।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

দীনহিন's picture

Quote:
এই তিনটি অনুচ্ছেদ কিন্তু প্রবলভাবেই সমালোচিত হবার মত হয়েছে।

মাঝে মাঝে সমালোচিত না হলে আলোচিত হওয়ার মজাটাই টের পাওয়া যায় না, এক দা!
আর ঝর্ণাকে পাঁচতারা দেয়ার কারণ সে আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি আজব চিকিৎসাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে! আসলেই তো, বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে পাগলের রোগ সারানোর চিন্তাটি বহুদিন ধরেই আমাদের সমাজে চলছে! আর এইটা যে অন্যায়, তা কিন্তু আমিও মানি, লহমা দা!

Quote:
আমি আশা করব আপনি এই তিনটি অনুচ্ছেদ-এ বিধৃত অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।

কেন বেরিয়ে আসব?? আমি কি বলতে চেয়েছি, তা তো তিথীর মন্তব্যের প্রতিমন্তব্যেই পরিষ্কার করেছি। ভেবেছিলাম, আপনি অন্তত বুঝবেন। কিন্তু প্রতিকূল স্রোতে একাই পাড়ি দিতে হয়, তা আরও একবার বুঝলাম, এক লহমা দা!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

এক লহমা's picture

আমি নিশ্চয়ই অনেক কিছু বুঝি না। আপনার কথা থেকে বুঝলাম, আপনার মন্তব্য থেকেও বুঝিনি। হতেই পারে। আমি এ অবস্থায় দুটো কাজ-এর কোন একটা করতে পারি।
এক) যা খুশী বলুন আপনি, আমি আর এর মধ্যে কথা বাড়াতে চাই না।
দুই) আমি কি বুঝেছি, আপনি সেটা নিয়ে যাই বুঝে থাকুন, আমার নিজের বুঝটাকে আমার নিজের কথায় লিপিবদ্ধ করে রাখা।

আমি দ্বিতীয়টাই বেছে নিলাম, কারণ, আজ আমরা এখানে যা লিখে যাচ্ছি তার অনেক কিছুই ভবিষ্যতেও হয়ত কোন আগ্রহী মানুষের কোন জিজ্ঞাসার উত্তর যোগাবে, যেমনটি ঘটেছে আমার নিজেরই ক্ষেত্রে সচলায়তন-এর এবং আরো বিভিন্ন আন্তর্জালিক লেখালেখি পড়া থেকে।

এক এক করে ধরি।

(১)“তবে, পাগল ছেলের জন্য একটুও সহানুভূতি দেখা গেল না লেখাটিতে, এই যা! পাগল ছেলের জন্যও তো ভাবতে হবে, নাকি?"

[ আরো এগোনোর আগেঃ পাগল কথাটির বদলে মানসিকভাবে অসুস্থ কথাটিই আমি আরো যথাযথ বলে মনে করি। তাই আমি এই শব্দবন্ধই ব্যবহার করব।]
মানসিকভাবে অসুস্থ ছেলের অসুস্থতার কথা লুকিয়ে তার সাথে একটি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার অমানবিকতা নিয়ে এই প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে লেখক কি কোথাও বলেছেন যে অসুস্থ ছেলেটিকে নিয়ে কিছু ভাবতে হবে না? এ যেন, কথা হচ্ছে যে তিনকে চার দিয়ে গুণ করে গুণফল বারো না বলে তেরো বললে ভুল বলা হয়। তখন কেউ মন্তব্য করলেন যে ঠিকই আছে, তবে তিন আর চার যোগ করলে যে সাত হয় সেটাও ত বলা দরকার ছিল, না কি? এবারে বলুনতো, এই রকম অপ্রাসঙ্গিকভাবে “তবে" শব্দটি দিয়ে শুরু করে আপনার এই প্রশ্নবোধক বাক্যটির মাধ্যমে অসুস্থ ছেলেটির প্রতি সহানুভূতি না দেখানোর যে দাবীটি করে বসলেন, তা লেখাটির প্রতি অবিচার হল কি না?

(২) “মানে, পাগল হয়েছে বলে সে বিয়েথা করবে না?”

লেখক কি এরকম দাবী করেছেন নাকি? আর, বিয়েটা ত কারো সাথে হয়, তা, অসুস্থ ছেলেটি যাকে বিয়ে করবে সে মেয়েটি যে একটি সুস্থ মানুষকে বিয়ে করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে তার কি হবে?

(৩) “পাগলরা অলিম্পিক খেলতে পারবে, কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না?”

আপনি নিজেই এই কথা লিখলেন। তারপর তিথী যখন বললেন “অলিম্পিক খেলা আর বিয়ে এক হলো!" তখন আপনি বললেন “যা আমি বলিনি বা চাইনি, তাই যেন আমার মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে”। আপনার কথাটার আর যে কি অর্থ করা যেত তা সত্যিই আমার বোধগম্যতার বাইরে।
এর পরে আপনার মন্তব্যে আপনি ব্যাখ্যা দিলেন, “অলিম্পিকের কথা এজন্য টেনেছিলাম যে, আমরা চাই পাগল বা মানসিক যেকোনো বৈকল্যে আক্রান্তরাও পিছিয়ে থাকবে না, তারাও সবকিছুতে অংশ নেবে, যেমন করে একটি সুস্থ-স্বাভাবিক ছেলে অংশ নেয়!" আপনি চাইতেই পারেন। কিন্তু অসুস্থ ছেলেটি যে মেয়েটিকে বিয়ে করবে সে এই বিয়েটা চাইছে কি? চাইলে ত কোন কথাই নাই! কিন্তু এই প্রবন্ধ ত ঐ রকম কোন চাহিদার কথা জানিয়েছে এমন মেয়েদের নিয়ে নয়। এবং যারা জানায়নি তাদের মাঝে ঐরকম ইচ্ছে জাগানোর কোন সংকল্প নিয়েও নয়। তা হ’লে আক্ষেপটা কি নিয়ে? কেন ঐ রকম সংকল্পর জাগানোর কথা বলা হ’ল না, আক্ষেপ কি সেটা নিয়েই!

(৪) “পাগলরাও মূল ধারায় চলে আসুক, তাই কি আমরা চাই না সবাই???”

এই লেখায় লেখক এ’কথার বিপরীত কোন মত প্রকাশ করেছেন বলে আমার চোখে পড়েনি। সহানুভূতিহীনতার অভিযোগে জানাতে নিয়ে এই বাক্য কোন কাজে এল, বুঝলাম না। আমারই বোধের খামতি, কি আর করা যাবে!

(৫) “পাগলরা অস্পশ্য নয়, এরাও ডিফারেন্টলি অ্যাবল পারসন।”

অস্পৃশ্য - অবশ্যই না। “ডিফারেন্টলি অ্যাবল” - অবশ্যই। আর সেই জন্যই তাদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিও “ডিফারেন্ট" হবে। যে লোকের জন্ডিস হয়েছে তাকে নিশ্চয়ই একজন সুস্থ মানুষের উপযুক্ত খাদ্য পথ্য হিসেবে দেবেন না। সে সেরে উঠলে একসময় অবশ্যই দেবেন। তেমনি, সাহচর্যের জন্য একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষকে আশা করি দাম্পত্যর দাওয়াই বরাদ্দ করবেন না। না কি, দাম্পত্যটা একজন অসুস্থ মানুষের জন্য ওষুধ হলেও হতে পারে, বিফলে গেলে কি আর হবে, বড় জোর একটা মেয়ের জীবনটা ওলটপালট হয়ে যাবে, সে আর এমন কি, একটা মেয়েই ত - এই রকম একটা ভাবনা চিন্তাই কি এই তিনটি অনুচ্ছেদকে লিখিয়ে নিল! আমি কিন্তু কারো মুখে কোন কথা বসাচ্ছি না এখানে। যে বাক্যগুলো পড়েছি তাদের কি ভেঙ্গে ভেঙ্গে, কি সামগ্রিকতায় আর কোন অর্থ করে উঠতে পারিনি, দীনুদা!

(৬) এদেরও দেয়ার আছে, এদেরও চাওয়া থাকতে পারে একটি সুখের সংসার!!

প্রবন্ধকার কোথাও কি এর বিপরীতে কিছু বলেছেন! তা হ’লে খামখা তার উদ্দেশ্যে এই বাক্যবাণ কেন? আর, আমি বলি, আপনার এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে, যে কেউ অনেক কিছু বা সামান্যই কিছু দেওয়ার ইচ্ছে রাখতে পারেন, তার নিজের ইচ্ছেমত, যে কাউকেই, কিন্তু যাকে দিচ্ছেন তার কি নেওয়ার ইচ্ছে থাকতেই হবে? দান নিতে বাধ্য থাকার অসহায়তাটাই কি তার জন্য বরাদ্দ হ’ল তবে?
অসুস্থ ছেলেটির সুখের সংসার বানাতে যে মেয়েটিকে দরকার লাগছে তার সুখের সংসারের চাহিদাটির কি হবে? তার সুখের সংজ্ঞা বোধ হয় অসুস্থ ছেলেটিকে সারিয়ে তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়ে যাওয়াতেই! হবেও বা, তবে আমার বোনেদের ভাই হিসেবে (আর সব হিসেব বাদ-ই দিলাম) এই বোধের ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারিনি দীনুদা!

(৭) “একজন অ-পাগল মানুষের যদি বিয়ের দরকার হয়, একজন পাগল মানুষেরও দরকার; হয়ত বেশী করেই দরকার; একজন অ-পাগল মানুষের চেয়েও একজন পাগল মানুষের যে বেশী প্রয়োজন প্রিয়জনের সান্নিধ্য!!!”

কে প্রিয়? কার প্রিয়? আর, প্রিয়জনের সান্নিধ্য বলতে দাম্পত্য ছাড়া আর কিছুই কি হিসেবে এল না! চিকিৎসকরা যাদের মানসিকভাবে অসুস্থ বলেননি, এমন দু’জন মানুষের জন্যও দাম্পত্য এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষা যা দুজন মানুষ পরস্পরের সহায়তায় পার হয়। আর, একটি অসুস্থ (কি মানসিক, কি অন্য কোন শারীরিক) ছেলের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে সেই দুস্তর পারাবার একটি মেয়েকে পার হতে হবে। একটি ছেলের দরকারের জন্য একটি মেয়ের প্রতি এইরকম একটি নিদানের প্রস্তাবনা করতে, সেই প্রস্তাবনা কেন একটি লেখায় পাওয়া গেল না তার জন্য সেই লেখার লেখককে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কোন দ্বিধা জাগলনা! এই রকম চিন্তাকে লালন করাকে অন্যায় মনে হ’ল না! এই রকম চিন্তা যে মন্তব্য থেকে প্রকাশ পাচ্ছে, সে মন্তব্য কে আরো নুতন নুতন মন্তব্যে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়াকে ভুল হচ্ছে মনে হলনা, হচ্ছে না! কত দূর, আরো কত দূর!

আপনার মন্তব্যের আমার উল্লিখিত তিনটি অনুচ্ছেদ থেকে যে বক্তব্য দাঁড়াচ্ছে, তা আপনার এই প্রবন্ধের সমর্থনে ৫ তারা দেওয়ার বক্তব্যর সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আপনি সেটা দেখতে না চাইলে না দেখতেই পারেন। তাতে সংঘর্ষটা নেই হয়ে যাচ্ছে না।

সবশেষে, প্রতিকূল স্রোতে একা পাড়ি দিচ্ছেন বলেছেন। দীনুদা, আমরা কিন্তু আপনার চারপাশে কোন প্রতিকূল স্রোতের ব্যবস্থা করিনি। আপনাকে ফেলে সরেও পড়িনি। আপনার পাশেই আছি। আমাদের যুক্তিসূত্রগুলো বাড়িয়েও যাচ্ছি। ধরা না ধরা আপনার, একান্তই আপনার ইচ্ছা। ভাল থাকবেন, শুভেচ্ছা জানবেন।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাসুদ সজীব's picture

চলুক চলুক

এত সুন্দর করে গুছিয়ে বলেছেন আশা করি দীনুদা বুঝবেন বিষয়টা।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ধ্রুব আলম's picture

চলুক

দীনহিন's picture

Quote:
আপনাকে ফেলে সরেও পড়িনি। আপনার পাশেই আছি।

ধন্যবাদ, একদা। জানতাম, আপনি সরে যাবেন না, আপনি বা আপনার মত মানুষেরা পাশেই থাকবেন, হৃদয়ের গভীরে এই বিশ্বাসটুকু আছে বলেই বেঁচে আছি।

আমার সমস্যা হল, মাথায় যা আসে তা-ই উগড়ে দেই, কোন আগ-পিছু না ভেবেই! মনে হয়, আমিও কিঞ্চিত পাগলা রোগে আক্রান্ত! ফাযলামি নয়, আমার পরিচিতজনদের বদ্ধমূল ধারনা আমি একটা বদ্ধ পাগল!

তাই বলছিলাম, এক-দা, আমার কথার উপর কষ্ট করে এত্ত এত্ত বিশ্লেষন দরকার ছিল না। পাগল লোকের কথা অত ধরতে আছে, লহমাদা?

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মন মাঝি's picture

১।

Quote:
পাগল হয়েছে বলে সে বিয়েথা করবে না? পাগলরা অলিম্পিক খেলতে পারবে, কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না? পাগলরাও মূল ধারায় চলে আসুক, তাই কি আমরা চাই না সবাই???

এই বক্তব্যটা আমি বুঝলাম না। এই ধরণের ব্ল্যাঙ্কেট স্টেটমেন্ট কি ঠিক হল? "পাগল" একটা বড় ও ভেগ টার্ম। এতে অনেক কিছুই বুঝায়। আমি যদ্দুর বুঝি খুনি, ধর্ষক, পেডোফাইল, রেসিডিভিস্ট সেক্স অফেন্ডার, সিরিয়াল কিলার, মাস মার্ডারার, প্যারাফিলিয়াক, স্যাডিস্ট বা স্যাডোম্যাসোচিস্ট, বিকৃতকামী সেক্স-পার্ভার্ট থেকে শুরু করে অন্য মানুষের জন্য ভায়োলেন্ট বা গুরুতর ক্ষতি করার প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য প্রবৃত্তি-সম্পন্ন বহু ধরণের সিরিয়াস সমস্যাযুক্ত লোকই পাগলামি বা 'পাগল'-এর সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে। এদেরকে যে সবসময় বাইরে থেকে দেখে বা কথা বলে চেনা যায় তাওনা - এমনকি আত্নীয়-স্বজনও যে ভয়াবহ কিছু ঘটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবসময় সমস্যার গভীরতা সম্যক উপলব্ধি করতে পারবে তারও কোন গ্যারান্টি নাই । পাগলের প্রতি সহানুভূতিবশত এদেরকেও আপনি 'বিয়েথা' দিতে চান - দিয়ে আরেকটা মানুষের দৈহিক-মানসিক বা জীবনের নিরাপত্তা বিপন্ন করতে চান? এই নতুন মানুষটার নিরাপত্তার চেয়ে অসুস্থ মানুষটার 'সুখের সংসারের' আকাঙ্ক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? এদেরকে আপনি 'মূল ধারায়'-ও নিয়ে আসতে চান এবং সমাজকে বিপদগ্রস্ত করতে চান?

২।

Quote:
পাগলরা অস্পশ্য নয়, এরাও ডিফারেন্টলি অ্যাবল পারসন। এদেরও দেয়ার আছে, এদেরও চাওয়া থাকতে পারে একটি সুখের সংসার!!

ভায়োলেন্ট-পার্ভার্ট-ডেঞ্জারাস 'পাগল'রা কি-কি ভাবে 'ডিফারেন্টলি অ্যাবল পারসন' জানাবেন কি? এবং এদের ক্ষতি করার ক্ষমতা বা পোটেনশিয়ালের চেয়ে 'দেয়ার' ক্ষমতা বা বস্তু ও ডিফারেন্ট এ্যাবিলিটি-গুলি ঠিক কি-কি ভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ও হ্যাঁ, আপনার ভাষায় তাদের কাঙ্ক্ষিত 'সুখের সংসারের' সুখের পার্টনারের শরীর-মনন ও জীবনের নিরাপত্তার চেয়ে এদের সেই আকাঙ্ক্ষা ও তথাকথিত ডিফারেন্ট এ্যাবিলিটি-গুলির গুরুত্ব কিভাবে বেশি, সেটিও জানা দরকার বৈকি!! আমি পাগলদের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ, আপনার কাছ থেকে আলোকিত হওয়ার আশা রাখি।

৩।
একজন অ-পাগল মানুষের যদি বিয়ের দরকার হয়, একজন পাগল মানুষেরও দরকার; হয়ত বেশী করেই দরকার; একজন অ-পাগল মানুষের চেয়েও একজন পাগল মানুষের যে বেশী প্রয়োজন প্রিয়জনের সান্নিধ্য!!!

এই লাইন পড়ে মনে হচ্ছে, "বিয়ে-দাওয়াই একটি অতীব আজব চিকিৎসা" বলেও আপনি আবার প্রকারান্তরে সেটির পক্ষেই সাফাই গাচ্ছেন!

আশা করি আপনার ভাবনা একটু স্পষ্ট করবেন।

****************************************

দীনহিন's picture

Quote:
আশা করি আপনার ভাবনা একটু স্পষ্ট করবেন।

তিথী, এক লহমাদা এবং মাসুদ সজীব ভাইয়ার সাথে যে আলোচনা হয়েছে, সেখানে একটু কষ্ট করে চোখ বুলাবেন? বিশেষ করে, মাসুদ সজীব ভাইয়াকে সর্বশেষ যে প্রতিউত্তরটি করেছি, তা-র বাইরে আমার আর কিছু বলার নেই।

বিয়ে-দাওয়াইকে ঘেন্না করি, কিন্তু একই সাথে ঘেন্না করি অনেক অভিভাবকের পাগল দেখামাত্রই আতংকে শত হাত দূরে সরে যাওয়ার প্রবনতাকে; এইসব অভিভাবকদের কর্ণে 'ছেলের মাথায় দোষ আছে' - মন্ত্র ঢালতে পারলেই হল, সঙ্গে সঙ্গে বাতাইল করে দেবেন সেই সম্বন্ধ, এমনকি তার সত্যাসত্যও পরখ করে দেখবেন না। অথচ এই অভিভাবকদের অনেকেই আবার জেনেশুনেও একজন মাতাল, পাড়াবেড়ানো এবং মারদাঙ্গাকারি ছেলেকে জামাই আদর করতে ছাড়বেন না, কিছু বললে যুক্তি চলে আসবে তাৎক্ষনিক, "পুরুষ মানুষের একটু-আধটু দোষ থাকেই"।

এইবার বুঝেছেন, কি বলতে চেয়েছি? ঝর্ণাকে পাঁচতারা দিয়েছি কারণ সে সমাজে প্রচলিত একটি সমস্যা অনেক সুন্দরভাবে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ঝর্নার লেখায় পাগলদের প্রতি যারপরনাই বিমুখ সমাজের একটি খন্ডচিত্র থাকলে, তা আরও ভারসাম্যপূর্ণ হত বলে আমার মনে হয়। মানে, ঝর্নার সুন্দর লেখাটিতে অতিরিক্ত কিছু চাইছিলাম, যা চাওয়াটা মনে হয় না কোন অপরাধ!

অঃ টঃ ১। পাগল বলতে যদি আপনি মাতাল, পাড়াবেড়ানো আর মারদাঙ্গাকারিদেরও বুঝাতে চান, ব্রডার ডেফিনিশন ইউজ করে, আমার কিছু বলার নেই; তবে আমি খুব ন্যারো একটা ডেফিনিশকেই নিয়েছিলাম আর কি, মানে, মানসিক ভারসাম্যহীন, কিন্তু তত ক্ষতিকর/আক্রমনাত্বক নয় অন্য মানুষের জন্য, যতটা নিজের জন্য! কি করব, ভাই, আমরা ন্যারো মানুষ তো, তাই আপনার মত ব্রড করে ভাবতে পারিনে!

অঃ টঃ ২। এই পোস্টে আমার শেষ কমেন্ট এটি। কারণ আমি যা বলতে চেয়েছি, তা যদি বোঝাতে না পারি, তা আমার ব্যর্থতা। আবার, আমি যদি ভুল পথে থাকি এবং অন্যদের পৌনঃপুনিক প্রচেষ্টার পরও শুধরাতে না পারি নিজেকে, সেও আমার ব্যর্থতা। দুটোর যেটাই ঘটুক, তার জন্য ক্ষমা চাইছি সংশ্লিষ্টদের কাছে!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মাসুদ সজীব's picture

চলুক

আমাদের পাশের বাসায় ছিলেন এমন একজন। সম্পর্কে আমাদের মামা হতেন, দেখতে বেশ সুদর্শন ছিলেন। উনি যে অসুস্থ সেটা বাইরের মানুষের পক্ষে বুঝা কঠিন ছিলো। সেই মামাকে একদিন দেখলাম খুব ঘটা করে বিয়ে দেওয়া হলো। কিশোরী বয়সকে সদ্য বিদায় জানানো গ্রামের এক তরুণীকে বধূ সাজিয়ে নিয়ে আসা হলো। সেই মামি আবার বাবা-মায়ের এক সন্তান! এত আদরের একটি সন্তানকে বিয়ে দিয়েছে উনার সাথে কারণ ছেলেদের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো। যাইহোক বেশিদিন লাগেনি সেই মোহ কেটে যেতে, অচিরেই অাবিষ্কার হলো জামাই মানসিক ভাবে অসুস্থ।

এরপর ডিভোর্স, জানি না ওই মেয়েটির কপালে এরপর কি হয়েছিলো। এই যে একটা মেয়ের জীবন নিয়ে যারা ছেলেখেলা খেললো তার দায়ভার কি কেউ নেয় কিংবা নিয়েছে কোনকালে? আমার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে সেই মামির বাড়িটা পড়ে, যতবার উনাদের ঘরটা দেখি ততবার উনার সহজ সরল মুখটা মনে পড়ে আর কিছু দীর্ঘশ্বাস ঝরে মন খারাপ

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

শিশিরকণা's picture

ডাক্তার, পরিবার সবাই মিলে চেষ্টা করে যে মানসিক রোগ সারাতে হয়রান হচ্ছে, একটি কমবয়সী মেয়ের ঘাড়ে সেই গুরুভার চাপিয়ে দিয়ে কিভাবে আশা করা হয় কিছু হবে? বিশেষ করে যাকে এই অসুখ সমন্ধে পুরোপুরি আঁধারে রাখা হচ্ছে।

বিয়ে দিয়ে সমস্যা সমাধানের কথা শুনলে মনে হয় সব মানসিক সমস্যা বুঝি যৌনতাকেন্দ্রিক।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

মরুদ্যান's picture

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক's picture

শুধু কি মানসিক সমস্যা, পরিচিত মফস্বলের অর্ধ-শিক্ষিত এক ছেলে কিচ্ছু করে না , বেকার হয়ে পড়ে ছিল। কাজকামে মনোযোগী করতে তাকে ধরে বিয়ে দিয়ে দেয়া হল। ফলাফল, বউকে এখন ঘানি টানতে হচ্ছে, ছেলে আগের মতই আছে। দুঃখের ব্যাপার হল চিত্রটা খুবই কমন।

রাজর্ষি

মেঘলা মানুষ's picture

প্রয়োজনীয় লেখা চলুক

প্রসঙ্গত দুটো প্রশ্ন মাথায় আসলো:

১। ছেলেদের কি এ ধরনের মানসিক রোগ হবার প্রবণতা বেশি?
২। মেয়েদের মানসিক সমস্যা সমাধানার্থে আত্মীয়-স্বজনরা সচরাচর 'বিয়ে' নামক ঔষধের(!) (কু)পরামর্শ দেন না কেন?

শুভেচ্ছা হাসি

মরুদ্যান's picture

বউ ছেলেকে লাইনে নিয়ে আসবে এরকম একটা ধারণা আমাদের সমাজে প্রবল, যদিও আমার ধারণা এক্ষেত্রে সফলতা ০%। কিন্তু উল্টোটা কখনও শোনা যায়না কারণ পুরুষ শাসিত সমাজ।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

বন্দনা's picture

বউ ছেলেকে লাইনে আনলে ও আনতে পারে, কী ভয়ঙ্কর ধারণা আমাদের সমাজের মানুষের।

অতিথি লেখক's picture

Quote:
পাগলরা অস্পশ্য নয়, এরাও ডিফারেন্টলি অ্যাবল পারসন। এদেরও দেয়ার আছে, এদেরও চাওয়া থাকতে পারে একটি সুখের সংসার!!

দিবেন নাকি ভাই সহানুভূতিশীল হয়ে আপনার পরিবারের কাউকে এমন ছেলের সাথে বিয়ে।

মানসিক রোগীর প্রতি সহানুভুতি দেখাতে হলে তা তাঁকে চিকিৎসা করে দেখাতে হবে বিয়ে দিয়ে নয় এবং যারা সত্য গোপন করে বিয়ে দেন তাঁরা সোজা কথায় ক্রিমিনাল।

দরকারী লিখা। চলুক

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

এক লহমা's picture

এই প্রাচীন নিষ্ঠুরতা আজো চলছে - মর্মান্তিক! লেখায় চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি's picture

বহুকাল ধরে চলে আসা একটা সামাজিক রোগ নিয়ে লিখেছেন ঝর্ণা।
এই রোগ কেবলমাত্র অশিক্ষিত দরিদ্র পরিবারেই চলে তা কিন্তু নয়।
মাথা ঘুরে যাবার মত শিক্ষিত পরিবারেও এমন প্রবণতা দেখবার দুর্ভাগ্য হয়েছে আমার।
সচলে স্বাগতম। আরো লিখুন হাসি

***
দীনহিনকে কষে বকে দিতে ইচ্ছে করছে । কিসের লগে কি মিশাইছেন আপনি রেগে টং

দীনহিন's picture

Quote:
দীনহিনকে কষে বকে দিতে ইচ্ছে করছে ।

ইচ্ছেকে বাস্তবায়ন করুন, আয়না। কষে বকা খেতে আমার খারাপ লাগে না! হাসি

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

ধ্রুব আলম's picture

পাগল না বলে মানসিকভাবে অসুস্থ বলা উচিত।

আর কোন সুস্থ-স্বাভাবিক মেয়েকে, একজন মানসিকভাবে অসুস্থ কারো সাথে জোর করে বিয়ে দিলে, উভয় পক্ষের পিতামাতাকেই আইনের আওতায় আনা উচিত। বিয়ে একটা ছেলেখেলা নয়, চিকিৎসা নয়। এটি সম্পূর্ন অমানবিক, বর্বর একটি অপরাধ, যা একটা মেয়ের জীবন ধবংস করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে দারিদ্র কোন অজুহাত হতে পারে না। এ যেন কোনভাবে মেয়েকে দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া, চড়ামূল্যে।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে লেখা। চলুক

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.