একটি বিদেশী ভাষা থেকে অনূদিত গল্প

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Tue, 29/07/2014 - 5:26pm
Categories:

এই নিয়ে একে একে চারবার পত্রিকা অফিস থেকে গল্পের পান্ডুলিপি ফেরত আসলো। গল্পটি ছাপানোর জন্য "মনোনীত" হয়নি। তবে সম্পাদক মহোদয় আশা ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতে "মানসম্মত" ও "ভাল" লেখা দিলে, তা তিনি নিশ্চই ছাপানোর জন্য বিবেচনা করবেন। যাই হোক, আবারও হতাশার তীরে বিদ্ধ হল আমার হৃদয়ের তরুন লেখক সত্ত্বা। আমার ধারনা, সম্পাদক মহোদয় কোনবারই পান্ডুলিপিখানা খুলে দেখার প্রযোজন বোধ করেননি। খুব সম্ভবত গল্পটিতে আহামরি কোন চমকও ছিলনা। তবুও তাতে আবেগের কমতি ছিল- একথা বলা যাবে না। যদিও মূল বিষয়বস্তু অতি সাধারণঃ একটি ভ্রমণকাহিনী, আর তৎসংক্রান্ত কিছু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা মাত্র।

নীল পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা কজন বাল্যবন্ধু। ছোট ছোট টিলার উপর ছবির মত সাজানো সুন্দর মেঠোপথ, আর সেই পথ ডিঙ্গিয়ে উঁচু পাহাড়ের কোল ভরে উঠেছিল এক অনাবিল আনন্দের বর্ণিল আলোচ্ছটায়। ছিল পাহাড়ের বুক বেয়ে নেমে যাওয়া চিকন-মাঝারি জলের ধারা, চূড়া থেকে দেখা অবিশ্বস্য নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত। অক্লান্ত খরস্রোতা পাথুরে নদীটি যেন তার ভ্রমনার্থীদের সব ক্লান্তি-অবসাদ ধুয়ে দিচ্ছিল এক নিমিষেই। মহুয়া বনে গৃহত্যাগী জোছনার আলো, বেসুরো গলার গান-বাদ্য, ক্ষণে ক্ষণে গগনবিদারী অট্টহাসি; সবার কন্ঠে ছিল কোন এক আশ্চর্য শক্তির জোয়ার!

জানি, এই মাধুর্য, এই আনন্দ-স্মৃতি ক্ষণিকের। তবু একবার তাকে চিরস্থায়ী ফ্রেমে বন্দি করার চেষ্টা করে দেখা যায় কি? সহযাত্রীদের কেউ কেউ আমার এই প্রচেষ্টায় উৎসাহ দিচ্ছিল, কেউবা কলম কেড়ে নিয়ে, সর্বাঙ্গে লাথি-গুতো-কিল দিয়ে, অকারণ খিস্তিখেউড় করে অমূল্য মুহূর্তগুলোকে আরো বেশি স্মৃতিময় করে তুলছিল।

অতঃপর এভাবেই মনের আবেগ নিংড়ে "নীল পাহাড়ের গল্প" রচিত হল। গল্পের সাথে আগের লেখা কিছু কাব্যও যোগ করে দেওয়া যায়! খুব একটা মন্দ হয় না। আমার রচিত কবিতাগুলোরও ছাপার অক্ষরে কোন প্রাপ্তি নেই, কোন পত্রিকা তাদের ছাপাতে রাজি হয়নি। লেখক হিসেবে আমি আজ পর্যন্ত শতভাগ ব্যর্থ।

মনে মনে এবারও আশঙ্কা ছিল- একজন আনকোরা লেখকের লেখা গল্প কেন ছাপাবে ওরা! পান্ডুলিপি পাঠানোর আগে গল্পের বর্ননায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বেশ কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জন করি, লেখা ছাপানোর সম্ভাব্যতা কিঞ্চিৎ বাড়ানোর তাগিদেই। কিন্তু ফলাফল- প্রথম তিনবারের মত এবারের চেষ্টাও বিফল।

শূন্যদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছিলাম, বুদ্ধিটা তখনই মাথায় এল। খুব বেশি কিছু করতে হবেনা, গল্পের টাইটেলে সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে শুধু। এমনিতেই কেউ আমার লেখা ছাপায় না, এবার তাই একটু ভিন্নচেষ্টা করে দেখতে দোষ কী! যাই হোক, এই বুদ্ধিতে দারুন কাজ হল। পরবর্তী সংখ্যার সাহিত্য সাময়িকীর বেশ অগ্রভাগেই জায়গা পেল আমার লেখা। টাইটেল সামান্য পরিবর্তিত, "নীল পাহাড়ের গল্প- একটি বিদেশী ভাষা থেকে অনূদিত।" লেখক-মনে মৃদু কষ্ট হচ্ছিল শুরুতে, তবু গল্পের শেষাংশে "অনুবাদের" কৃতিত্ব আমাকেই দেওয়া হয়েছে দেখে সেই কষ্ট চিরস্থায়ী হল না।

--সুবীর


Comments

ত্রিমাত্রিক কবি's picture

ঘটমা সত্য নাকি? সত্য হইলে লিঙ্ক দ্যান।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক's picture

নাহ ভাই, কোন সত্যতা নাই (লিঙ্কও নাই) চোখ টিপি

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

ধুউউর, এই কমেন্টখান গপ্পের মজা নষ্ট কইরা দিল রেগে টং

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক's picture

ঢাকা কেন্দ্রিক সাহিত্য চর্চার একটা সত্য দিক। অনলাইন সাহিত্য চর্চায় সে ব্যাপার নেই। নেই ঢাকাকে আকড়ে থাকার চেষ্টা। আগামী দিনের ক্রিয়েটিভ লেখালেখির প্রধান কেন্দ্রই হবে অনলাইন তথা ব্লগ সাইট। যাই হোক, লেখাটি কি গল্প?

-সুষুপ্ত পাঠক

অতিথি লেখক's picture

গল্পই, তবে একটু বাস্তবতার নিরিখে লেখার চেষ্টা আরকি চোখ টিপি

গান্ধর্বী's picture

মজা পেলাম পড়ে। শুরুর দিকে একটু দ্বন্দ্বে ছিলাম বটে কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল গল্পের লিঙ্ক না থাকায় বুঝতে পারলাম যে ঠিক বুঝেছি খাইছে

আরো লিখুন।

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

অতিথি লেখক's picture

খাইছে

অতিথি লেখক's picture

নতুনত্ব আছে। ভালো লেগেছে।

--আরাফ করিম

অতিথি লেখক's picture

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মেঘলা মানুষ's picture

ভালো গল্প। আসলে আমরা খুব কম লোকই নতুন কিছু পড়তে সাহস রাখি। অনলাইনে যেহেতু বিনা পয়সায় পড়া যাচ্ছে কেউ কিছু মনে করে না। বাস্তবে খুব কম লোকই পয়সা দিয়ে নতুন লেখকের বই কেনে। পত্রিকাওয়ালারাও এ বিষয়ে হুশিয়ার।

ছোট আকারের মধ্যেই পুরো জিনিসটা উঠে এসেছে সুন্দরভাবে।

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক's picture

লইজ্জা লাগে

মরুদ্যান's picture

একবার ভাবলাম এই লেখাটাই বিদেশি ভাষা থেকে অনুবাদ করা কিনা খাইছে হেহে।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক's picture

পড়ার জন্য ধন্যবাদ চোখ টিপি

অতিথি লেখক's picture

আমি ত আপনার অনুবাদের প্রশংসা করতে করতে প্রথম কমেন্টখানা পড়লাম আর রেগে টং নিজের উপর।

চলুক
---------------------
আশফাক(অধম)

অতিথি লেখক's picture

পত্রিকার সম্পাদক মহোদয়ও তাই ভেবেছিলেন হয়ত হো হো হো ভালো থাকুন।

অতিথি লেখক's picture

ভাবলাম বিদেশী কুকুর ধরি,,,,,,, এখন দেখছি স্বদেশী ঠাকুর ধরেছি,,,,,,

অতিথি লেখক's picture

আপনি ঠিকই ধরেছেন চাল্লু

দীনহিন's picture

লেখাটার মূল কৃতিত্ব এর নতুনত্বে! এর থিমে! এর বর্ণনা ঢংয়ে!
লেখকের অনেক কিছু দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে, তা স্পষ্ট!
লেখকের জন্য শুভ কামনা!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক's picture

বাপ্রে, একদম গলে গেলাম খাইছে অনেক ধন্যবাদ, শুভকামনা।

অতিথি লেখক's picture

ভালো লেগেছে।

গোঁসাইবাবু

অতিথি লেখক's picture

সাধারণ কাঠের স্কেলে "Made in China" লিখা দেখে স্কুলে থাকতে বাবাকে জিগেস করেছিলাম, বাংলাদেশে কি স্কেল বানানোও সম্ভব না।তখন বাবা উত্তর দিয়েছিলেন, ''Made in Bangladesh'' লিখলে বিক্রি হয় না, তাই ওরা ওরকম লিখে।
ভাল লাগল, আরও লিখবেন আশা করি।

Gang Chil's picture

মোটামুটি সুন্দর হয়েছে। পড়েও ভাল লাগলো....

অতিথি লেখক's picture

ভাল লাগলো....

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.