বন্দুকচি তকীউল্লার ট্যাঁকঘড়ি - শেষ পর্ব

সত্যপীর's picture
Submitted by mir178 on Tue, 15/07/2014 - 9:47am
Categories:

(প্রথম পর্বের পর)

তাগড়া মধ্যবয়েসি নেতাগোছের লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় জিজ্ঞাসা করল, তর নাম কবুতর ফারুক?

কানে বিরাশী সিক্কার থাপ্পড় দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়েছে এইমাত্র, কান এখনো ভোঁ ভোঁ করছে। আমি কষ্টে মাথা হেলিয়ে বললাম, জ্বী।

চিন্তিত মুখে পাশে দাঁড়ানো দুইজনের দিকে তাকিয়ে সে বলল, বন্দুকচির নাম কবুতর হয় জিন্দেগীতে শুনছস?

পাশের দুইজনই গম্ভীর মুখে মাথা নেড়ে জানিয়ে দিল জিন্দেগীতে শোনেনি। একজন বলল, কোতোয়ালজী এ চাপা মারতেছে মনে হয়। বিচিতে টিপ দিয়া ধরুম? বিচিতে টিপ দিলেই কথা বাইর হয়া আসব।

আমি মনে মনে একটু শংকিত হয়ে উঠলাম। বিচিতে টিপ দিলে কথার সাথে সাথে ট্যাঁকঘড়িও বের হয়ে আসার সমূহ সম্ভাবনা, সেইখানেই কায়দা করে লুকিয়ে রেখেছি ঘড়ি। এদের হাতে ঘড়ি পড়লে বিরাট ঝামেলা হবে সেইটা আবার হস্তগত করতে।

আমি ফাটা ঠোঁটে জিব বুলিয়ে বললাম, কোতোয়ালজি আমি কবুতরের খেলাও দেখাই গো কত্তা। রাজা চোগান সিং এর পেয়ারা লোক আমি, আপনেদের হাবশি বন্দুকচি আব্দুল্লার লগে কত লড়াইয়ে গেছি। হে চোগান সিং এর ফৌজেই আছিল কত্তা খোঁজ নেন।

কোতোয়াল ভুরূ কুঁচকে কি একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। তারপরে পাশের একজনকে বলল, আব্দুল্লারে ডাক।

লোকটি বেরিয়ে গেল। আমি লুকিয়ে ঢোঁক গিললাম একটা। কিংবা লুকানো গেলোনা হয়ত, লুকায় ঢোঁক গিলা কঠিন। দেখা যায়।

একজনের ঘাড়ে হেলান দিয়ে আস্তে আস্তে তাঁবুতে প্রবেশ করল হাবশি বন্দুকচি আব্দুল্লা। খোঁড়াচ্ছে, চোখ লাল। আমার দিকে তাকিয়ে সে দাঁতে দাঁত ঘষল। আমি লুকিয়ে আরেকটা ঢোঁক গিলার চেষ্টা করলাম। একে দিয়ে বিচিতে টিপ দেওয়ালে বিচি তো বটেই ঘড়িসুদ্ধা গলিয়ে দেবে।

কোতোয়াল আমার দিকে তাকিয়ে বলল, অরে মারছস ক্যান? কি করছে অয়?

আব্দুল্লার মুখ তখন টকটকে লাল। সে কোতোয়ালের দিকে তাকিয়ে হুঁ হুঁ শব্দ করতে লাগল আর হাত দিয়ে গোল একটা জিনিসের ইঙ্গিত করতে থাকল। অর্থাৎ সে ট্যাঁকঘড়িটার কথা বলছে। আমাকে দ্রুত কিছু একটা চিন্তা করতে হবে। সময় অল্প, কখন আব্দুল্লা আমার দেহ তল্লাশে লাফ দিয়ে আসে ঠিক নাই।

হঠাৎ করে একটা লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করলাম আমি, যেন আমার বলতে খুব শরম করছে। কোতোয়াল তখনও ভুরূ কুঁচকে আব্দুল্লার দিকে তাকিয়ে, সে হাত দিয়ে গোল ইঙ্গিত করে হুঁ হুঁ শব্দ করে যাচ্ছে। কোতোয়াল আমাকে জিজ্ঞাসা করল, কী, কী করছে বল্। কালায় হাতে কী দেখায়?

আমি মাথা নিচু করে আস্তে করে বললাম, দুধ।

দুধ?!

হ। দুধ। আমার বউয়ের দুধে হাত দিছিল এই শুয়ারের বাচ্চা কালা। তাই পিটাইতে আসছি। আমার ভোলাভালা বউটা…

আমি গলা বুজে এসেছে এই ভান করে থেমে গেলাম। তাঁবুতে আচমকা ভয়ঙ্কর নীরবতা। তারপর আসমান ফাটিয়ে হা হা করে হেসে উঠল কোতোয়াল। তার দুই সঙ্গীও দাঁত বের করে হাসতে থাকল। তাই দেখে হঠাৎ বোকা বনে গেল আব্দুল্লা, এদের হাসির কারণ তার কাছে অজানা। কিন্তু আমিও হাসছি দেখে সে আশঙ্কা করল আমার পক্ষেই বুঝি এরা হাসছে, তাই আরো জোরে জোরে সে গোঁ গোঁ আওয়াজ করতে লাগল আর হাত গোল করে বুঝাতে থাকল ঘড়ির কথা।

সেই গোল হাত দেখে আরো জোরে হেসে উঠল কোতোয়াল আর দুই সঙ্গী, আব্দুল্লা যতই হাত গোল করে দেখায় তারা আরো হাসিতে ফেটে পড়ে। এতই জোরে সেই হাসির দমক যে বাইরে থেকে লোকে উঁকি দিয়ে দেখতে থাকল কী ঘটনা।

হাসি তখনও থামেনি, হাসির দমকে কোতোয়ালের চোখ তখন লাল। সে বলতে থাকল, হারামজাদা কবুতরের বউয়ের মান রাখতে গিয়া আমার হাতি বন্দুকচির ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিছে হা হা হা হা হা। বউয়ের...হা হা হা...বউয়ের দুধে হাত দিছে দেইখা...হা হা হা।

আমি দাঁত বের করে হাসলাম একটু। বেঁচে যাচ্ছি কি?

কোতোয়ালের নির্দেশে হাবশি আব্দুল্লাকে তাঁবু থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হল। সে খুবই মোচড়ামুচড়ি করছিল তবে কেউ পাত্তা দিলনা, সকলে হাসতে ব্যস্ত। কোতোয়াল জুইত করে বসল, হাসি তখনও পুরো মুছে যায়নি মুখ থেকে। সে বলল, আচ্ছা ছাড়ান দে। মাগো পেট ব্যথা হইয়া গেল হাসতে হাসতে। কইত্থিকা এক জুয়ান কবুতরের পুত আসছে আমার হাতি বন্দুকচিরে পিটায়া শোয়ায় ফেলতে তার বউয়ের গায়ে হাত দিছে দেইখা। যুদ্ধের মাঝখানে আমি মরি আমার জ্বালায়, মাইনষে আছে তার প্রেমপিরিত নিয়া। হা হা হা।

এই বলে সে পাশের সঙ্গী দুইজনের দিকে তাকাল। তাদের হাসি শুকিয়ে গেছে ততক্ষণে, তারা কাষ্ঠ হাসল।

তারপর আচমকা গম্ভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে কোতোয়াল বলল, শুন হারামজাদা। আশ মিটায় আব্দুল্লার ঠ্যাং ভাঙছস ভালো কথা, এইদিকে আমার বন্দুক চালাইব কে? হাত পাও ভাঙ্গা মরদরে আমি যুদ্ধে পাঠামু না। আসলামের লগে তুই যা, তরে দেখায় দিব বারুদ বন্দুক গোবরের গুঁড়া কুনজায়গায়। কাল্কা তুই আব্দুল্লার জাগায় ময়দানে যাবি।

পাশের একজন হাতের ইশারা দিয়ে আমাকে উঠতে বলল। সে ই সম্ভবত আসলাম। আমি উঠে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করতে থাকলাম। কোতোয়াল তাকিয়ে বলল, কী চাস?

আমি গা মুচড়ে ভারি মিহি গলায় বললাম, কত্তা গেরামের একটা পুলারে নিয়া আসছিলাম, সেলিম। হ্যা কি আছে আশপাশে? হ্যারে ফিরত না নিয়া গেলে অর মায়ে খুব কানব।

কোতোয়াল অল্প কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আমার দিকে। তারপর বলল, বেশি কানব? ওরে একটা থাপ্পড় দিছিলাম পইড়া মাথা ঠুকছে, দেখ গিয়া কি অবস্থা। পুলাপান অত জুরে মারা ঠিক হয় নাই।

আমি চুপ করে রইলাম।

কোতোয়াল আবার অন্যমনস্ক স্বরে বলল, আসলাম পিচ্চিরে একটা মিঠাই খাওয়ায় দিস রাইতে।

আসলাম মাথা নাড়ল। তারপরে আমরা দুইজন তাঁবু থেকে বের হয়ে আসলাম। অত্যন্ত ব্যস্ত ফৌজ, অনেক মানুষের তাঁবু দেখা যায় যতদূর চোখ যায়। একধারে অনেকগুলি ঘোড়া বেঁধে রাখা, তারা পানি খাচ্ছে। তার পাশ দিয়ে আমরা আরেকটু এগিয়ে গেলাম, দেখি কয়টা হাতি দাঁড়ানো।

আসলাম আমাকে বলল, কোণার হাতিটা দেখছস? ঐটা তর হাতি লালরুখ। পাগলা কিছিমের।

আমি শুকনা গলায় বললাম, পাগলা হাতি?

পাগলা না, মাথা নেড়ে আসলাম বলল, পাগলা কিছিমের। জোশ উঠলে মাঝে মইধ্যে খাড়া দাঁড়ায়া ঝাক্কি মারে গায়ে, উপরে যে আছে তার হাগা বাইর কইরা ছাড়ে। তয় সবসময় এরম করেনা। জোশ উঠলে করে।

আমি মনে মনে ঠিক করলাম যুদ্ধে যাওয়ার আগে ভালোমত পায়খানা করে পেট খালি করে রেখে যাব। যুদ্ধ জিনিসটাই জোশের।

আসলাম আবার বলল, শুন তুই তর লগের ছ্যামড়ারে নিয়া যা। অর লাইগাও ঢালঢাক্কি দিতেছি। হাতি সামলাইতে পুলা কামে লাগব। আর বন্দুকের নলও অর কান্ধে রাইখা ফটাফট গুলাগুলি চালাইতে পারবি। নিয়া যা।

বলতে বলতে আমরা একটা ছাপড়ার ভিতর ঢুকলাম। নিচে থেকে বের করে আমার হাতে লম্বালম্বি ধরিয়ে দিয়ে আসলাম বলল, ল। তর বন্দুক।

আমার প্রায় সমান লম্বা একনলা বন্দুক। আমি ঢোঁক গিললাম। এত লম্বা বন্দুক আমি কখনো চালাইনাই, সেলিম সামনে থাকলে ভালই হবে। ওর কাঁধে রেখে তাক করতে সুবিধা। তবে সেইক্ষেত্রে সেলিমের কাঁধে এবং সম্ভব হলে গালে শক্ত ধাতব পাত চাই, নইলে সেলিমের চামড়া পুড়ে যাবে তাপে। নলের বাঁধুনি তেমন পোক্ত মনে হচ্ছেনা, দুম করে নল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। এছাড়া আওয়াজ ও হবে মারাত্মক, কান ফেটে যাবে হয়তো। সেলিমকে না নিলেই আসলে সবচেয়ে ভালো হত, তবে সেইটা সম্ভব নয়। আসলাম সঠিক, একলা এই লম্বা বন্দুক আর পাগলা কিসিমের হাতি সামলায় যুদ্ধ করা মোটের উপর অসম্ভব।

ছাউনি থেকে বের হয়ে এসে আমি একটা গাছের নিচে বসলাম, এই সময় কাছে এসে হাজির হল সেলিম। দাঁত বের করে হেসে সে বলল, ছাড়া পাইছেন? আপনেরেও লাড্ডু খাইতে দিছে?

আমি মাথা নেড়ে হেসে বললাম, হ দিছে তো।

………………………………………………………………………

পরদিন সকাল।

হাতি লালরুখের সামনে দাঁড়িয়ে আমি শুঁড়ে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিলাম কিছুক্ষণ। লাল ঝালর শুঁড়ে, সোনালি কাজ করা। চোখের জায়গাটা ছিদ্র, তাই দিয়ে সে উদাস দৃষ্টিতে আরেকদিক চেয়ে রইল। আমি দুইবার চাপড়ে একটু সরে দাঁড়ালাম।

ডাক দিয়ে সেলিমকে কাছে আনলাম, তারপর একটা মোটা কাপড় দিয়ে সেলিমের থুতনি থেকে মাথার তালু পর্যন্ত বাঁধলাম, আর কানের পাশে আরেক পরত কাপড়। সেলিমের কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি ফুটালে প্রচণ্ড শব্দ হবে, তার কানের তালু যেন ফেটে না যায় তাই এই ব্যবস্থা।

অম্বর বলে এক কিশোর আমাদের দুইজনের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে গেল। সেলিমের জন্য পূর্ণবয়স্ক লোকের বর্ম ও শিরস্ত্রাণ, মুস্কিল হল। মাথার শিরস্ত্রাণটা বিশাল, দুইপাশে কান ঢেকে যায় এরকম। মাথায় দিয়ে সেলিমের একবারে মাথার তালু থেকে নাকের নিচ পর্যন্ত ঢেকে গেল। সে বলল, ও আল্লা কিছু দেখিনা।

আমি একটু চিন্তা করলাম। কথা ঠিক, সে কিছু দেখবেনা এইটা পরলে। তবে জিনিসটা মাথায় থাকা যুদ্ধের ময়দানের দেখার থেকেও দরকারি জিনিস তার জন্য। আমি তার গলায় বর্মটা পরিয়ে দিয়ে বললাম, এইটা পর আগে। মাথার ঢাল পরে।

সেই বর্মও ঢলঢল করছে, তবে গায়ে থাকা দিয়ে কথা। সময় অল্প। বাকি হাতি সব প্রস্তুত, এখনই সকলে রওনা দেবে। তুতাপাতার সময় নাই। আমি দ্রুত নিজে বর্ম শিরস্ত্রান পরে হাতি গায়ে চাপড়ে সঙ্কেত দিলাম, সে আধা বসা হয়ে শুঁড়টা পেতে দিল। আমি শুঁড় বেয়ে চট করে উঠে গেলাম, তারপরে সেলিম উঠল। হঠাৎ চল চল রব উঠল, আর সকলে পশ্চিমদিক বরাবর আস্তে আস্তে এগুতে থাকল। লড়াই সন্নিকটে।

আমি সেলিমকে ঝুঁকে বললাম, শুন। একটু পরেই লড়াই বাজব, প্রচুর আওয়াজ আর গুলাগুলি। ভয় খাইসনা, আমি আছি তর পিছে।

এই বলে তার মাথায় শিরস্ত্রাণটা পরিয়ে দিলাম। বললাম, এক হাতে এইটা ধইরা থাক। আরেক হাতে দড়ি ধর। খবরদার হাত জানি না ছুটে। আমি বন্দুক ফুটাইলে কানের কাছে আসমান ফাটানি আওয়াজ শুনা যাইব। ভয় খাইসনা, আমি আছি তর পিছে। যা ই হৌক, লড়াই যেইদিকেই যাউক, লাফ দিবিনা। আঁৎকা সরবিনা। পিছে হেলবিনা। মনে থাকব?

মাথা ঝাঁকিয়ে সেলিম বলল, হ। থাকব।

আমার হাতি তখন আস্তে আস্তে বাকি হাতিদের সাথে ময়দানে প্রবেশ করছে। চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল, বিশাল ময়দান। ডাইনে পাহাড়ি এলাকা একটু, সেইখানে ঘাপটি মেরে আছে তীরন্দাজের দল। কিছু ঘোড়সওয়ারও আছে, তবে ঘোড়া মূলত মাঠেই। হাতিও সব একখানে, ছড়িয়ে দেওয়া নয়। আমি গুণলাম, মোট উনিশটা হাতি। সব মাহুতের হাতে বন্দুক নাই অবশ্য, হাতি বন্দুকচি দেখলাম তেরোজন।

নির্দিষ্ট দূর গিয়ে সকলকে থামার সঙ্কেত দেওয়া হল। আমি হাতি থামিয়ে সোজা তাকালাম। অনেক দূর চোখ যায়, মস্ত ময়দান। একটা কালো রেখা নড়ছে যেন অনেক দূরে, সেই বুঝি শত্রুপক্ষ। আমি শ্বাস ফেললাম একটু। জানিও না কার বিরুদ্ধে লড়াই, আজাইরা চোরাই ট্যাঁকঘড়ি বাঁচাতে এসে এখন জানটাই যাবে বুঝি।

ডাইনে বাঁয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম নানাবিধ বাহিনীর আঞ্জাম। সবার সামনে ঘোড়সওয়ার, দুই দিকেও তাই। তবে দুই দিকের ঘোড়সওয়ারেরা সম্ভবত তীরন্দাজ, তলোয়ারওয়ালা নয়। ঘোড়ার পাশাপাশি গোলন্দাজের দল। তার পিছনে হাতির পাল, অর্থাৎ আমরা। আমাদের ঠিক পিছনে পায়দল সিপাই এবং কিছু ছুটা ঘোড়সওয়ার। আমাদের পিছনের ঘোড়সওয়ারের হাতের অস্ত্র আদৌ পোক্ত নয়, তারা সম্ভবত প্রয়োজনে এগিয়ে সামনের মৃত বাহিনীর অস্ত্র তুলে লড়াই করবে।

মৃদু একটা ঢাকের বাড়ি শুনে আমি পিছনে ঘুরে তাকালাম, কিছু একটা হচ্ছে। দেখি আরেক হাতি আসছে, আস্ত গা লোহার ঝালরে মোড়ানো। খুবই সুন্দর হাতি। উপরে বসা এক বারো/চৌদ্দ বছর বয়েসি কিশোর।

এই তবে রাজা? এর হয়ে লড়ছি বুঝি আমি? ধুরোযা।

রাজার হাতি পিছন থেকে এগিয়ে ঠিক আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল। সব চুপচাপ, শুধু থেকে থেকে কিছু অস্ত্রের ঝনঝনানি আর ঘোড়ার হ্রেস্বারব।

কিশোর রাজা ডান হাত তুলে লাল রুমাল দেখিয়ে ইশারা দিলেন, আর অমনি প্রচণ্ড শব্দে বেজে উঠল নহবত। সাথে কান ফাটানো আওয়াজে বাজতে থাকল নাকাড়া আর ডঙ্কা। সহস্র কন্ঠে রব উঠল, আ-ল্লা-হু আ-ক-বা-র! আ-ল্লা-হু আ-ক-বা-র! দ্বী-ন দ্বী-ন মুহাম্মাদ! ই-য়া-য়া-য়া-য়া মুয়িইইইইইইন!!!

প্রচণ্ড বেগে সকলে এগিয়ে যেতে থাকল, আমিও হাতি ছুটালাম যথাসম্ভব দ্রুত। হাতি আমি আগেও চালিয়েছি, কঠিন নয় কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হয়। খাড়া পাহাড় বেয়ে দৌড়ে নামা যতটা সহজ থামা ততটাই কঠিন, হাতির বেলাও তাই। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

অল্পক্ষণ পরেই বৃষ্টির মত তীর আছড়ে পড়তে থাকল, আমি লালরুখকে একটু ডাইনে নিয়ে গেলাম। হাতির উপরে বসা মানে আমি অনেক লোকের সহজ তাক এই মুহুর্তে, তীর কাটানো চাই। ডাইনে নিয়ে দেখি উল্টোদিক থেকে কিছু ঘোড়া আসছে, তাদের হাতে নাঙ্গা তলোয়ার। আমি বিসমিল্লাহ বলে সেলিমের কাঁধে নল রেখে বারুদে আগুন দিলাম, তারপরে সই করে দিলাম ঘোড়ায় চিপি।

গুলির প্রচণ্ড আওয়াজে মনে হল মাথার ঘিলু কান দিয়ে বেরিয়ে এসেছে আর গাল বেয়ে পড়ছে। আমি হাত দিয়ে দেখলাম নাহ ঘিলু না শুধু ঘাম। ঘাম পড়লে অসুবিধা নাই। সেলিম কাঁপছে টের পেলাম, তবে পড়ে যায়নি বা দড়িও ছাড়েনি। ঠিক আছে।

গুলিতে কেউ মারা পড়েছে কিনা বুঝা গেলনা তবে লোকগুলো ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে ঠিকই। এক দাড়িওলা পড়ে মা মা করে চ্যাঁচাচ্ছে, পায়ে রক্ত। আমি গুলি ভরতে মন দিলাম। নল এত গরম যে হাতে ঠোসা পড়ে গেছে সম্ভবত। যাক কি আর করা। গরম নল এক হাতে ধরে আরেক হাতে বারুদ ভরলাম, আর একটু গোবরের গুঁড়া। তারপর গুল্লি ভরে দ্রুত আবার নল তাক করলাম সামনে, বারুদে আগুন দিয়ে গুলি করলাম সামনে বরাবর।

প্রচণ্ড শব্দে আবার কানে তালা লেগে গেল। আমি মাথা ঝাঁকালাম জোরে জোরে, কান কটকট করছে। নলে আবার বারুদ ভরার সময় দেখলাম একবারে পাশে সেই কিশোর রাজার হাতি, তার গতি কমিয়ে আনা হচ্ছে। আমিও আমার হাতির গতি কমালাম। কি ব্যাপার, হচ্ছেটা কি? মাথা বাড়িয়ে দেখি রাজা আহত, ডান হাতে রক্তের ছোপ। পাশে একটা উত্তম আরবি ঘোড়া, তাতে লাফ দিয়ে পড়লেন রাজা। ঘোড়া ছুটিয়ে আবার রাজা যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরত গেলেন।

এমন সময় এক তাজ্জব তেলেসমাতি ঘটে গেল। রাজার ফাঁকা হাতি দেখিয়ে কেউ চিৎকার দিয়ে বলল, ইয়া আল্লাহ! রাজা মর গিয়া! রাজা মর গিয়া!

চতুর্দিকে সেই বিলাপ প্রতিধ্বনিত হতে থাকল। রাজার পক্ষের সিপাইসান্ত্রী সকলে চিৎকার করে বলতে লাগল, মর গিয়া। মর গিয়া। ও জিত গিয়া। হার গিয়া। হার গিয়া।

প্রচণ্ড মাতমে যে যেদিকে পারল ছুট দিল। রাজাই মরে গেছে আর যুদ্ধের ফয়দা কী। আমি ভালো করে মাথা উঁচিয়ে দেখলাম রাজার ঘোড়ায় রাজা তখনো ময়দানেই, কিন্তু কেউ তার কথা শুনছে না যে সে ই রাজা। রাজাকে চেনেই বা কয়জন। সবাই দিল জান নিয়ে ছুট।

আমি একবার ভাবলাম গিয়ে রাজাকে বাঁচাই, ছেলেটা মরবে নিজের বোকামীর জন্য। হাতিতে থাকলেই পারত। কিম্বা হাতিও হয়তো জখম হয়েছিল তাই তিনি বাধ্য হয়েছেন ঘোড়ায় চাপতে। হতে পারে।

তারপরে ভাবলাম, রাজাকে তো চিনিনা। দুই রাজার একজনকেও চিনিনা, তাই তাদের একজনকে বাঁচানোর জন্য আমি আগ বাড়ায় নানান বীরত্ব দেখানোর কারণ কী? রাজার যারা সহী দোস্ত তারাই বরং রাজাকে বাঁচাক। আমি কেটে পড়ি।

পাশের অগভীর নালা ধরে আমি হাতি নিয়ে দিলাম ছুট।

……………………………………………………………

পরের দিন। মুসলিম জং বাজার।

কোণার কারখানার সামনে হাতি নামিয়ে রেখে আমি আর সেলিম নামলাম। হাতি আরাম করে বসল, তার পাশে আমি উবু হয়ে বসে হাঁক দিলাম, তৈয়ব বাড়ি আছস?

কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে বের হয়ে এসে আস্তা হাতি দেখে তৈয়ব ভয়ানক অবাক হয়ে গেল। তারপর আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল, কবুতর ফারুক চাচা! আরে কবুতর ফারুক চাচা! আপনে কইত্থিকা?

আমি গামছা দিয়ে ঘাম মুছে বললাম, তরে দেখতে আইলাম। আছস ক্যামন?

হাতি কই পাইলেন ফারুক চাচা?

আমি উদাস গলায় বললাম, রাস্তায় দেখা। কইল এদিকেই আসতেছে, একসাথেই আসলাম।

ঠা ঠা শব্দ করে উচ্চস্বরে হেসে দিল তৈয়ব। তারপর বলল, ঠিকাছে খুব ভালো করছেন। ঘরে আইসা জিরান, ভালো পুলাউর চাল আছে। খিচুড়ি বসাই। খাঁটি ঘি দিয়া খিচুড়ি।

খাঁটি ঘি সহকারে উত্তম খিচুড়ির কথা শুনে উত্তেজিত সেলিম আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে দিল।

(শেষ)


Comments

মুস্তাফিজ's picture

ভালৌছে। এখন ঘি দিয়া ভাত খাই।

...........................
Every Picture Tells a Story

সত্যপীর's picture

হ ঘি দিয়া খাইতে হইবো খিচুড়ি। সাথে হাতকড়ার আচার। ইয়াম্মি।

..................................................................
#Banshibir.

মুস্তাফিজ's picture

এইতো আরেক মুশকীলে ফেলাইলেন, এখন এখানে হাতকড়ার আচার কই পাই?

...........................
Every Picture Tells a Story

মাহবুব লীলেন's picture

হ ঘি ভাত খাউক

সত্যপীর's picture

ঘি দিয়া উত্তম পুলাউর চালের খিচুড়ি। এক্টা আস্তা যুদ্ধের পরে একটু আরামায়েশ ভালু খানাদানার দরকার আছে। বহুত এনার্জি গেছে।

..................................................................
#Banshibir.

মর্ম's picture

ওমা! বন্দুকচীর ট্যাঁকঘড়ির কী হইল? খালি ঘি ভাত খাইলেই হইব? ঘড়ি ফিরত দিওন লাগব না? কবুতরের ভাবগতিক তো সুবিধার না! চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

সত্যপীর's picture

ইন কবুতর উই ট্রাস্ট। এতো গিয়াঞ্জাম কইরা কালা হাবশি পিটায়া ধরা খায়া জীবনের ঝুঁকি নিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে বন্দুকবাজি ইত্যাদির পরে মুসলিম জং বাজারে গেছে যখন, তখন ট্যাঁকঘড়ি দিতেই গেছে। আপনেরা সন্দেহপিচাশ!

..................................................................
#Banshibir.

মেঘলা মানুষ's picture

বেচারা পিচ্চি রাজার জন্য মন খারাপ লাগল।
(এই পর্বটা একটু বেশি মাসুদ্রানা মাসুদ্রানা ঠেকল)।

শুভেচ্ছা হাসি

সত্যপীর's picture

ভবিষ্যতে আরো বেশি মাসুদ্রানা ঠেকব। স্পাই থ্রিলার বইলা কথা, পচুর গাঞ্জাগুলি ছাড়া গল্প জমব না।

..................................................................
#Banshibir.

নীড় সন্ধানী's picture

শেষ? কন কী?? আরো কাহিনী গেল কই??? ঘড়িটা কি কবুতর ফারুক মেরে দিল?? অ্যাঁ

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সত্যপীর's picture

কবুতর ফারুক মনে করেন হিরু। হিরুরা কি চুরিচাপাটি করে? মাত্র হাত্তি থিকা নামল জিরাইতে, আর অমনি আপনেরা হাউকাউ লাগাই দিছেন ঘড়ি দেয়নাই দেয়নাই। হিরু তো এট্টু দম নিব নাকি?

..................................................................
#Banshibir.

তানিম এহসান's picture

হুমম!

সত্যপীর's picture

কী বুঝলেন কত্তা?

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম.'s picture

ঝাঁঝাঁ! কবুতর ফারুক নামেই একটা সিরিজ চালু করেন। অলরেডি কবুতরের ভক্ত হয়ে পড়েছি, সিরিজটারও ভক্ত হয়ে জাব ইনশাল্লাহ!

সত্যপীর's picture

কবুতর ফারুক মনে করেন আমাদের এই ছাতাপড়া জীবনে হঠাৎ দখিনা বাতাসে উড়ায়া আনা এক ঝলক আতরের গন্ধ, পুতায়া যাওয়া মুড়ির সাথে আচানক গরমাগরম বেগুনির আনন্দ চাল্লু

কবুতর ফারুক ভবিষ্যতে আরো আসতেছে বস, দোয়া খায়ের কাম্য। সে হইল আমার স্পাই অন দ্য মুভ, যেকোন স্থানে যেকোন পরিস্থিতিতে তারে ফিট করা যায়।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক's picture

ঘি দিয়া ভাতের কথা শুইনা রোজা আরো ধইরা গেলো গো পীরবাবা।
লেখা উত্তম জাঝা!

অনেক ভালো থাকবেন।
আপনার জন্য শুভকামনা।

------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

সত্যপীর's picture

ইফতারে কইষা দুই বাটি খিচুড়ি খায়া লান ঘি আর হাতকড়ার আচার সহযোগে। পুষায় যাইব।

..................................................................
#Banshibir.

স্যাম's picture

গুলাগুলি না আরো হউয়ার কথা ছিল? শ্যাষ?!
কবুতর ফারুক (কফা) র ভাই কুফা

অতিথি লেখক's picture

কুফাত ভাই, কুফামিষুল। আমিষুল ভর্তি কুফা, কুফা ভর্তি আমিষুল। রেগে টং

কড়িকাঠুরে

সত্যপীর's picture

রাজা বুকার মত হাতি থিকা নাইমা খেলা ফট কইরা শেষ কইরা দিল তো, নাইলে গুলাগুলি তো ভালোই চলতে আছিল।

(এই বেকুবটারে আমার চটপটে স্পাই কবুতর ফারুকের লগে মিলাইলেন?)

..................................................................
#Banshibir.

কল্যাণ's picture

এই ভদ্রলোককে দেখলেই কেন যেন উন্মাদের কার্টুনটার কথা মনে পড়ে। পার্থক্য শুধু কার্টুনে চশমা গোল ছিল ইয়ে, মানে...

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক's picture

দারুণ লাগল! ইতিহাসের গল্পগুলো পড়ে খুব আনন্দ পাই!
মোঃ জাকির হোসেন

সত্যপীর's picture

আমিও লেইখা ব্যাপকানন্দ পাই।

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর's picture

ঘ্যাচাং

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর's picture

আপনাদের হাতে পাঁচ মিনিট সুমায় থাকলে নিচের এই ভিডিওটা দেখেন। সেই আমলের বন্দুকচিদের কাজ যে কি পরিমাণ কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল চিন্তাই করা যায় না।

..................................................................
#Banshibir.

এক লহমা's picture

মন্তব্য করতে দেরী হয়ে গেল, সময় পাইনি। লাভ হল, ভিডিওটা দেখা হয়ে গেল! হাসি
এবারের লেখার খুঁটিনাটিগুলো ভাল লেগেছে। গল্পের এই পর্ব ছোট লেগেছে। সেটা অবশ্য এই কারণগুলোর জন্যও হতে পারে যেমন,
(১) আরো বেশী বেশী পেয়ে পেয়ে অভ্যেস হয়ে গেছে বড় লেখা পাওয়ার,
(২) লেখা এত ভাল যে চট করে পড়া হয়ে গিয়ে ফুরিয়ে গেছে।
যেটাই হোক, আসল কথা হচ্ছে, কবুতর ফারুক সিরিজ এগুচ্ছে। দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সত্যপীর's picture

খুঁটিনাটি ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগল আমারও, খুঁটিনাটির পিছনে আমাকে অনেক পড়তে হয়। দেখা যায় কয়েক পাতা লেখার পর একটা তথ্য খুঁজতে হালুয়া টাইট। আবার লেখার সময় খেয়াল রাখতে হয় যেন তথ্যের ভারে দশ কেজি না হয়ে যায়, তাহলে গল্প নয় ডকুমেন্টারি হয়ে যাবে হাহা।

হ্যাঁ কবুতর ফারুক এগুচ্ছে বটে। নিকট অথবা দূর ভবিষ্যতে আসা উচিৎ তার গার্লফ্রেন্ড তারাবাঈর কাণ্ডকীর্তি। ভয়ঙ্কর দোয়া কইরেন।

..................................................................
#Banshibir.

কল্যাণ's picture

আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে। এই কথা এত বার বলা হয়েছে, বলেছি যে এইটায় আর কোন চার্ম নাই। আপনে আসলেই অমানুষ।

প্রশ্নঃ
১। সেলিম কবুতর চাচার কে হয়?
২। মুসলিম জং বাজারের তৈয়ব কে? তার সাথে কবুতর ফারুকের কি সম্পক্ক?
৩। তকিউল্লার ট্যাঁকঘড়ির কি হইল?

রাজার ফাঁকা হাতির ঘটনায় হাসি থামানো মুশকিল খিক্ক খিক্ক। এইটা যুধিষ্ঠিরের সেই অশ্বত্থামা হত ইতি গজ নামে'র মত হইছে খিক্ক খিক্ক । বলদ গল্পেও ছিল, বাস্তবেও ছিল, আছে খিক্ক খিক্ক।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সত্যপীর's picture

১। সেলিমকে চিনতে হলে পড়তে হবে কবুতর ফারুক সিরিজের পয়লা গল্প। উপরে "কবুতর ফারুক" ট্যাগ ক্লিকাইলে সিরিজের চারটা গল্পই পাইবেন। সেলিম কবুতর ফারুককে চাচা ডাকেনা কিন্তু, এই গল্পে চাচা ডাকছে তৈয়ব।
২। তৈয়ব কবুতর ফারুকের মৃত বন্ধু তকীউল্লার ছেলে। বন্দুকচি তকীউল্লার কো-ওয়ার্কার আব্দুল্লা যখন তার সাধের ধন ট্যাঁকঘড়ি নিয়া পালায় তখন তকীউল্লা ফারুককে অনুরোধ করে তা উদ্ধার করে ছেলে তৈয়বকে দিয়ে আসতে। প্রথম পর্বে এই ঘটনা বলা আছে।
৩। গল্পটায় আমি ইচ্ছে করেই ট্যাঁকঘড়ি হ্যান্ডওভার এড়িয়ে গিয়েছি, আমি বরং ঘড়ি উদ্ধারের জার্নির গল্পটা বলতে চেয়েছিলাম। ইস্পাতের নার্ভ না হলে এইরকম ভয়ংকর সব ঝুঁকি নিয়ে কেউ বন্ধুর অনুরোধ রাখতে যায়না। ভাইসাহেবের কাছ থেকে এইরকম ভয়ংকর ঝুঁকির গল্প আরো নিশ্চয়ই আসবে চাল্লু

ফাঁকা হাতির ঘটনা ঘটছিল কিন্তু। রাজপুতের সাথে লড়াইয়ে প্রিন্স দারা শুকো হাতি থিকা ঘোড়ায় নাইমা যায় কারণ তার হাতি আহত হইছিল, আর সেই ফাঁকা হাতি দেইখা দারার আর্মি ভয়ে পিছু হটে। দারা ধনমান ফালায়া পালাইতে বাধ্য হয়। এইখানে দেখতে পারেন পুরা কাহিনী।

..................................................................
#Banshibir.

কল্যাণ's picture

আজকে রাতে কবুতর ফারুকের সবগুলা পড়ে ফেলবো দাড়ান। আর একটা প্রশ্ন ছিল, সাহস করে বলেই ফেলি, ইয়ে মানে হাতিটার কি হল শেষ পর্যন্ত? এত বড় জীব গায়েব করা তো সহজ না চিন্তিত

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সত্যপীর's picture

কবুতর ফারুকের বুদ্ধি কম্পিউটারের চেয়েও প্রখর!

..................................................................
#Banshibir.

কল্যাণ's picture

হো হো হো

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

প্রৌঢ় ভাবনা's picture

হ্যাঁ, রাত জেগে খেলা দেখে বেশ অসুস্থই হয়ে পড়েছিলাম। একটু জিরিয়ে নিয়ে আজ গল্পটা পড়লাম। তা কবুতর ফারুক আবারও আসবেতো? খেলা নাই ধূলা নাই এই আকালের কালে লেখাটা খুব খুব ভাল লেগেছে।

সত্যপীর's picture

আসবে তো বটেই। পেপ্যাল ডোনেশন দিলে পরের হপ্তাতেই আসপে চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

আয়নামতি's picture

আয়হায় এই গপ কবে লিখলেন? আবার শেষও হয়ে গেলু! দাঁড়ান প্রথম থেকে পড়বো তাপর জানাবো কিরাম লাগছ। হাসি

সত্যপীর's picture

ঘুমের মধ্যেও গপ লিখি আজকাল। গল্পবাগীশ টাইটেল নিব ভাবতেছি।

..................................................................
#Banshibir.

আয়নামতি's picture

সত্যপীর গল্পবাগিশ দেঁতো হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

ধুর্মিয়া, শেষপর্ব দেইখা এত আশা নিয়া দুই পর্ব একলগে পড়লাম।
এ তো দেখি শেষ হইয়াও হইল না শেষ! ইয়ে, মানে...

আইচ্ছা, বন্দুকের ভিতরে গোবরের কাম কি বুঝলাম না! চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সত্যপীর's picture

বন্দুকে গুলি আর বারুদ ঢুকানো হইত নল উঁচু কইরা গুলি যেদিক দিয়ে বাইর হইব সেদিক দিয়াই। এখন ভরার পরে যদি বন্দুক নিচু কইরা ধরেন তখন গুলি বারুদ পইড়া যাইব না? তাই গোবরের গুড়া দিয়া একটা প্যাডিং এর মত দেওয়া হইত যাতে আটকায় থাকে সব।

..................................................................
#Banshibir.

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি's picture

উত্তম জাঝা!
কবুতর ফারুকের ফেন হয়ে যাচ্ছি রে ভাই! এতসব কী আগেই ভেবে রাখেন তারপর গল্পটা লিখেন?
নাকি লিখতে লিখতেই এসে যায়? পথঘাট এতসবের এমন নিখুঁত বর্ণনা সত্যিই দারুণ লাগে পড়তে চলুক
তারাবাঈয়ের গপটা কবে দেবেন? জলদি জলদি দেন।

কল্যাণ's picture

কবুতর ফারুক আমার হিরু। এখন ফারুকের সোল এজেন্সি নিজ দায়িত্বে আমার কান্ধে তুইলা নিছি। অফিসিয়াল ফ্যান হইতে হইলে ইদিকে যোগাযোগ করেন তাত্তাড়ি শয়তানী হাসি

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সত্যপীর's picture

হো হো হো

..................................................................
#Banshibir.

আয়নামতি's picture

আপ্নে তো কান্ধে নিছেন আয়না নিতেছে হিদয়ে শয়তানী হাসি সমুস্যা??

আয়নামতি's picture

সবই তাইলে মুয়িনের কারসাজি! তারাবাঈয়ের গপ দেন সুবিধামত সমস্যা নাই।
তবে গপটা কিন্তু সেরকম ধিংচাক হওয়া চাই। দু'আ দিলাম দেঁতো হাসি

সত্যপীর's picture

অত্যন্ত ধিংচাক হইবেক। হেরেমের অন্দরের কিচ্ছা বইলা কথা...পচুর সেক্স ব্লাড এবং ভায়োলেন্সে ভরপুর।

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর's picture

এক এক দিন সকালবেলা উইঠা মনে করেন ইয়া মুয়িইইইন বইলা দাঁত মুখ খিঁচায় লিখতে বইসা যাই আর লিখা হয়া যায়। সবই উপরওয়ালার ইচ্ছা এবং আপনাদের দু'আ।

তারাবাঈর গল্প হইবনে তাড়া কি। সময় লাগব একটু। কুপাকুপি রকম প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ছাড়া তারাবাঈর গল্প জমব না, ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হইব আরো।

..................................................................
#Banshibir.

এক লহমা's picture

"এক এক দিন সকালবেলা উইঠা ••• ••• " হো হো হো হো হো হো

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

হো হো হো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ's picture

ক্যান যানি পড়তে পড়তে পাল্প ফিকশন মিভিটার কথা মনে হচ্ছিল - বাবার ঘড়ি ছেলের হাতে পৌঁছে দেয়ার কাহিনি বলেই হয়তো। তবে যাই বলেন, আমার কিন্তু আপনার কাহিনিগুলো নিয়ে এনিমেশন ফিল্মের কথাটা মাথা থেকে যাচ্ছেই না!!

____________________________

সত্যপীর's picture

তাইলে উপরে ডিস্কলেইমার দিয়া দেই এই মর্মে যে "গল্প পাল্প ফিকশন অবলম্বনে", তাইলে পাব্লিক মনে করব ওরে না জানি কি গল্প...আর লাফ দিয়া আসব পড়তে। ভালো বুদ্ধি।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি's picture

ফাটাফাটি অইছে পীরছাহেব, এক্কেরে ফাটাফাটি!! গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু
লন, এই খুশিতে একটা ইতিহাসভিত্তিক নজরানাই বরং দিলাম এইবার -- হাসি

****************************************

সত্যপীর's picture

গল্প পছন্দ করার জন্য ধইন্যবাদ। লেইখা আমিও অত্যন্ত আরাম পাইছি। গোলাগুলি কামানবন্দুক আমার প্রিয় বিষয়।

আপনের নজরানা লোড হইতে পেইন দিতেছে, আমার লাইন না আপনের অডিও বুঝতেছিনা। কাল্কা সকালে আবার ট্রাই দিতে হইব।

তবে সম্রাজ্ঞি উ ম্যাডামের উইকি এন্ট্রি পড়লাম, ম্যাডাম নাকি গদির লুভে নিজের মেয়েরে মেরে ফেলছে বলে মাইনষে সন্দেহ! ডেঞ্চারাস ব্যক্তি মনে হচ্ছে। খোঁজ দিবার জন্য ধন্যবাদ, কত কত ইতিহাসের কাহিনি দুনিয়ায় জানা হইল না...

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি's picture

ছি ছি, গোস্তাকি মাপ করবেন পীরবাবা - আপনারে পেইন না দিয়া এখন পর্যন্ত সামান্য একটা নজরানা পর্যন্ত দিতে পারলাম না। কি কমু, আমার কপালটাই খারাপ! মন খারাপ

যাউজ্ঞা, আরেকবার টেরাই দিলাম আপনার দরবারে গরীবের নজরানাটুকু যথাবিহিত সম্মান পুরসর পূর্বক সঠিক ও নতুন কায়দায় পেশ করার। হুজুরের মর্জি হলে এবার আশা করি পেইনলেসলি সফলকাম হব এবং হুজুরের দোয়া ও আশীর্বাদ লাভ করে অশেষ নেকি হাসিল করব। নেকি হাসিলের লোভে, "লোড" করার একাধিক 'অপশন'-ও দিয়ে দিলাম এবার - নীচের নীল রঙা বর্ডারে। যাতে একটাতে কাজ না হলে আরেকটা এস্তেমাল করতে পারেন। তবে, ছবিযুক্ত অডিও-র সাথে 496 KB-র একটা স্লাইডশোও আছে। অডিও লোড হওয়ার আগে এই ছবি লোড হবে, এবং এতে একটুখানি সময় লাগলেও লাগতে পারে। নাও পারে। চাইলে ছবিহীণ অপশন বেছে নিতে পারেন। আরও নিবেদন থাকে যে,
...................................................

সম্রাজ্ঞি উ ম্যাডামরে নিয়া আমিও একবার একটা মাইক্রো-এন্ট্রি দিছিলাম সচলায়তনে। এইখানে পাবেন আমার সেই অণুয়েন্ট্রি। হাসি

হাছাই কইছেন, ডেঞ্জারাস মানে ডেঞ্জারাস - সাঙ্ঘাতিক কালারফুলি ভয়ঙ্কর বিউটিফুলি শকিংলি আকর্ষনীয় একটা চরিত্র আমাগো এই ঊ ম্যাডাম। হেরে নিয়াই তো উপ্রের অডিও নাটকটা। শুনলে - ব্যাকগ্রাউন্ড সাউণ্ড এফেক্টগুলি ভালভাবে পেতে ভলিউম বাড়িয়ে হেডফোন লাগিয়ে ট্রাই করে দেখতে পারেন।

****************************************

সত্যপীর's picture

এখনো সময় কইরা শুনতে পারিনাই বস, দু:খিত মন খারাপ...শুনার পরে কইতেছি।

..................................................................
#Banshibir.

অর্ধ অর্বাচীন's picture

গুরু গুরু কোপাও মামা...

সত্যপীর's picture

"অর্ধ অর্বাচীন" হা হা হা হা! জটিল নিক ভাই। যাক আল্লার কাছে হাজার শুক্রিয়া পুরা অর্বাচীন না দেঁতো হাসি

..................................................................
#Banshibir.

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.