কাল্পনিক

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Sat, 17/05/2014 - 12:46am
Categories:

ঘটনাটা ঘটেছে এক ঝড়ের রাতে । বাইরে বাতাসের গো গো শব্দ, গগন বিদীর্ণ করে দেয়া আলোর ঝলকানি আর মেঘেদের গর্জনে ধরনী কেঁপে কেঁপে উঠছিল । বাইরে চলছে তুমুল বর্ষণ । বাড়ির পাশেই আমগাছের ডাল মড় মড় করে ভেঙ্গে গেল । এমন সময় দ্রিম করে বিকট শব্দ তুলে বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে গেল । মুহূর্তের মধ্যেই ঘুটঘুটেু আঁধারে তলিয়ে গেল সব কিছু । প্রয়োজনের সময় কিছুই হাতের কাছে পাওয়া যায় না । নিয়ম মাফিক কোন মোমবাতি পাওয়া গেল না । রান্না ঘরে গিয়ে দেখা গেল ম্যাচ বাক্সে একটা কাঠিও নেই ।
এবার কোরবানীর ঈদ পড়েছে বৈশাখ মাসে । আগামিকাল ঈদ । সবাই দেশের বাড়িতে চলে গেছে ঈদ উৎযাপন করতে । পুরো বিল্ডিং টাতে আমি একা।

আমার নাম আফসার উদ্দীন । আমি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা আফিসার । ঢাকা শহর পরিষ্কার রাখা আমার মহান দায়িত্ব । বকরীর ঈদে কোরবানী হয়ে যাওয়ার পর ঢাকার অলিতে গলিতে গরু ছাগলের রক্ত, হাড়, নাড়িভুড়ি, আর বর্জ্যের যেহেতু বাম্পার ফলন ঘটে সেহেতু সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং অফিসারদের এই ঈদে কোন ছুটি দেয়া হয় না ।
আমার প্ল্যান ছিল ঈদের তিন দিন পর বাড়ি যাওয়া । ততদিনে বেশিরভাগ আবর্জনাই আমাদের পক্ষে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হবে । তবে যে হারে বর্ষণ চলছে বন্যা না হয়ে যায় । তাহলে চার দিকে ময়লায় সয়লাব হয়ে বিরি কিচ্ছিরি বেধে যাবে । তিন দিন পর আমার হয়তো আর বাড়িতে যাওয়া হবে না ।

এমন সময় আকাশ চিরে বিদ্যুতে ঝলকানি খেলে গেল । এক সেকেন্ডের জন্য চারদিকে দিনের মতন হয়ে গেল । তারপরই ঘোর অন্ধকার । ঠিক তিন সেকেন্ড পরই দালান কাপিয়ে ব্জ্রধবনি হল । আমার এখনো রাতে খাওয়া হয়নি । ক্ষুধায় পেটের ভিতর কুরুম কুরুম করে শব্দ হচ্ছিল । অন্ধকারে কিভাবে খাব বুঝতে পারছি না ।

চারদিকের তুল কালাম কান্ডের মধ্যে মিহি গলায় কান্নার শব্দ শুনলাম । প্রথমে মনে হল বাতাসের শব্দ । কিংবা আমার শোনার ভুল । কিন্তু ভাল করে কান পাততেই বুঝলাম কেউ কাদছে । মেয়েলী গলা । শব্দের উৎপত্তি স্থল মনে হল দরজার বাইরে । এই অন্ধকারে দরজা খোলা নিরাপদ হবে কিনা ভেবে শব্দটাকে ইগনোর করার চেষ্টা করলাম । কান্নার শব্দ মিনিট পাচেক পরে আর পেলাম না ।
বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে প্রায় আধা ঘন্টার মতন হয়েছে । আমি নিশ্চিত আমাকে আজকে সারারাতই অন্ধকারে কাটাতে হবে । আমার পানির তেষ্টা পেয়েছিল । আমি হাতরে হাতরে একটা গ্লাস খুজে পেলাম । বৃষ্টির কারনে ঠান্ডা পরে গিয়েছিল । টেপের পানি বরফ শীতল লাগল।

কান্নার শব্দ আবার পেলাম ঘন্টা খানেক পর । এবার আরো জোড়াল শব্দ । মনে হলো আমার বাসার দরজার ঠিক ওপাশেই কেউ কাঁদছে । ঘটনাটা তদন্ত করে দেখা দরকার । দরজা খোলাটা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না । কান্নার শব্দ এক সময় এত জোড়াল হল যে আর থাকতে পারলাম না । দরজা খুলে বাইরে উকি দিলাম । কান্নার শব্দটা হঠাৎ করে থেমে গেল । অন্ধকারে সিড়িতে কেও আছে কিনা তাও বুঝতে পারলাম না । দরজা দিয়ে মাথা বের করে অন্ধকারের উদ্দ্যেশে জিজ্ঞাশা করলাম,
হ্যালো, কেও কি আছেন?

কোন উত্তর পেলাম না । ঘরে ঢুকে আমি দরজা সিটকিরি তুলে দিলাম । ঝড়ের দাপট কিছুটা কমে এসেছে । বাতাসের গোংগানি কমে এসেছিল । এমন সময় কান্নার শব্দ আবার পেলাম । নাহ এর একটা বিহিত হওয়া দরকার ।

দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম আমি । বিল্ডিং টা পাঁচ তলা । আমি পাঁচ তলাতেই থাকি । সামনা সামনি দুটি করে ফ্ল্যাট প্রতি তালায় । আমার পাশের ফ্ল্যটে থাকেন মতিউর রহমান সাহেব । নটর ডেম কলেজের অংকের প্রফেসার । উনার বাড়ি চাঁদপুরে । দুই দিন আগে গিন্নি আর দুই বাচ্চা সহকারে ঈদ করতে চাঁদপুরে চলে গিয়েছেন ।

আকাশে তখনো বিদ্যুতের ঝলকানি খেলে যাচ্ছিল । তার আলোয় এক সেকেন্ডের জন্য দেখতে পেলাম মতিউর রহমান সাহেবের বাসার দরজায় কোন তালা ঝোলানো নেই । কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে আজকে সকালেও আমি তার দরজায় তালা দেখেছিলাম । এগিয়ে গিয়ে দরজার কড়া নারলাম । কোন উত্তর পেলাম না। দরজার হাতল ধরে একটু চাপ দিতেই দরজা খুলে গেল । আমি জোড় গলায় বললাম,
মতিউর রহমান বাসায় আছেন ? হ্যালো ?

কোন সাড়া পেলাম না । মনে হল বাসায় কেউ নেই । আমি দরজা চাপিয়ে দিলাম । এবার খুব হাল্কা ভাবে শুনতে পেলাম কান্নার শব্দ । বোঝার বাকি রইল না শব্দের উৎপত্তি স্থল নিচের কোন তালায় । আমি সিড়ির রেলিং ধরে আস্তে আস্তে নিচে নামতে থাকলাম । চার তালায় এসে কাওকে দেখলাম না । যত টুকু জানি একমাত্র আমি ছাড়া পুরো বিল্ডিংটা তে আর কারোই থাকার কথা না । কিন্তু মাঝে মধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানির কারনে আমি দেখতে পাচ্ছি এখানেও কারো দরজায় তালা নেই । কি কারনে জানি না আমি এগিয়ে গিয়ে ডান পাশের ফ্ল্যাটের দরজায় ধাক্কা দিলাম । দরজা খুলে গেল । আমি "হ্যালো...হ্যালো...কেঊ বাসায় আছেন" বলে চেচালাম কয়েকবার ।বাসার ভেতরে ঘোর অন্ধকার । কোন উত্তর পাওয়া গেল না । আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না । সবার বাসা খালি এবং দরজায় কোন তালা নেই । এর মানে কি ?

এবার জোড় গলায় কেও কেঁদে উঠল । আমি নিশ্চিত তিন তলা থেকেই শব্দটা এসেছে । আমি আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম । তিন তলায় সিড়ির গোড়ায় কেও বসে আছে । নড়াচড়ার শব্দ পাচ্ছি । অন্ধকারে ভাল করে কিছু দেখা যাচ্ছে না । আমি জিজ্ঞেশ করলাম,
হ্যালো ? নিচে কেও আছেন ?
কিছুক্ষন কোন শব্দ পেলাম না । তারপর ভাঙ্গা গলায় কেউ বলল,
জ্বি, আমি।
গলার স্বর থেকে বুঝলাম অল্প বয়সী কোন মেয়ে । আমি জানতে চাইলাম, আপনি ঠিক আছেনতো ? কোন সমস্যা ?
মেয়টি বলল, আমার ভয় লাগছে ।
আমি বললাম, আপনাকেতো চিনলাম না ।
মেয়েটি বলল, আমার নাম শায়লা । আমি রশিদ সাহেবের ছোট বোন ।
রশিদ সাহেব তিন তালায় থাকেন । আমি জানতাম তিনি একাই থাকেন । তার যে ছোট বোন আছে সে ব্যাপারে আমি অবগত ছিলাম না । আমি জিজ্ঞেশ করলাম,আপনাররা দেশের বাড়ি যাননি ?
শায়লা বলল, আমাদের গতকাল যাওয়ার কথা ছিল । আমাদের দেশের বাড়ি বাগের হাট । আমার ভাই ব্যাবসার কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছেন সোমবার । তিনি ফিরে আসলেই আমাদের চলে যাবার কথা ছিল । কিন্তু তিনি এখনো ফরে আসেননি । আমি বাসায় একা । আমার ভীষন ভয় লাগছে ।
আমি বললাম, যে দুর্যোগ শুরু হয়েছে ভয় লাগারি কথা। আমার নিজেরি ভয় লাগছে ।
শায়লা বলল, আপনি ঈদ করতে বাড়ি যাননি ?
আমি বললাম, আমি সিটি করপোরেশনে চাকরি করি। কোরবানীর ঈদে আমি ছুটি পাই না ।
শায়লা বলল, ওহ । আপনার ঈদতো তাহলে প্রতি বছরই মাটি হয় ।
আমি বললাম, ওরকমি বলতে পারেন ।
এমন সময় পৃথিবী কাপিয়ে এত জোড়ে বজ্রপাত হল যে পুরো বিল্ডিংটা থর থর করে কেপে উঠল । ভয়ে শায়লা শব্দ করে কেদে উঠল । আমি নিজেও কেপে উঠলাম । প্রবল বেগে আবার বর্ষণ শুরু হল । সেই সাথে তীব্র ঝোড়ো হাওয়া । সিড়ি একপাশে শুধু গ্রিল দেয়া জানালা । কোন কাচ নেই । ফলে বৃষ্টির ছটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছিল । আমি শায়লাকে বললাম,
এখানে বসে থাকলে ভিজে যাবেন । বাসায় ঢুকে যান ।
শায়লা কাপা কাপা গলায় বলল, বাসায় কোন মোমবাতি নেই । অন্ধকারে আমার ভয় করে ।
আমি বললাম, আমারও একি অবস্থা । যখন দরকার পরে না তখন যেখানে সেখানে মোমবাতি পড়ে থাকে । এখন একটাও খুজে পাচ্ছি না ।
শায়লা বলল, আপনি কি আমার সাথে একটু ভিতরে বসবেন ? একা একা আমার ভয় করছে ।
আমি বললাম, আপনার কোন অসুবিধা না থাকলে বসতে পারি । আমার নিজেরও একা একা লাগছিল ।
শায়লা বলল, আপনি থাকলে মনে জোড় পাব । আর নয়তো আরেকবার এভাবে বজ্রপাত হলে নির্ঘাত আমি হার্ট এট্যাক করব ।
আমি বললাম, ঠিক আছে তাহলে চলুন ভিতরে গিয়ে বসি ।

রশিদ সাহেবের বাসায় আগে কখনো ঢুকিনি । লোকটা মিতভাষী । দেখা হলে সালাম বিনিময় আর কেমন আছেন-ভাল আছেন ছাড়া তার বেশি কোন কথা হয় না ।

শায়লা সিড়ি থেকে উঠে আসল । বিদ্যুৎ চমকের আলোয় ক্ষনিকের জন্য তার মুখ দেখতে পেলাম । ফরসা লম্বাটে মুখে একজোড়া সুন্দর টানা টানা চোখ । নিঃসন্দেহে রুপবতী । বয়স একুশ বাইশের আশে পাশে হবে । মেয়েটা ভাল লম্বা । আমার থেকে এক দুই ইঞ্চির মতন ছোট হতে পারে । আমি নিজে পাচ ফুট দশ ।

আমারা বসার ঘরে গিয়ে বসলাম । শায়লা বলল, আপনাকে কি যে খেতে দেব । অন্ধকারে রান্নাঘরের কিছুই ঠাওর করতে পারব না ।
শায়লার গলার স্বর মিষ্টি । কথা বলার ধরন খুব সাধারন । কোন জড়তা নেই । তাঁর কথা বলায় এক ধরনের নিষ্পাপতা আছে । এধরনের মানুষের সাথে দীর্ঘ ক্ষন কথা বলে কাটিয়ে দেয়া যায় ।

আমি বললাম, আপনাকে এই পরিস্থিতিতে কোন আতিথেয়তা করতে হবে না । আপনি বসুন । চলুন গল্প করে রাতটা কাটিয়ে দেই ।
শায়লা বলল, আপনি কি একাই থাকেন ?
আমি বললাম, আমি আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে উপরের তালায় বাম পাশের ফ্ল্যাটে থাকি । ফ্ল্যাটটা আসলে আমার বন্ধুর দুলাভাইয়ের কেনা । উনারা ইউ এস এ থাকেন । আমার ফ্রেন্ড অনেকটা তাঁর বোনের বাসা পাহারাদার আর কি । আমিও থাকার মতন ভাল যায়গা খুজে পাচ্ছিলাম না। আমার ফ্রেন্ড ওর সাথে থাকার জন্য অফার করল । আমি লুফে নিলাম। বাসাটা আমার কাজ থেকে কাছে হয় । আমার ফ্রেন্ড অবশ্য গতকাল দেশের বাড়ি চলে গেছে ।
শায়লা বলল, ভালোতো ।

ঝড়রের প্রোকপ বাড়ছিল । বাতাসের ধাক্কায় মনে হচ্ছিল বিল্ডিং ধসে পরবে । এক সময় শব্দ করে বসার ঘরের জানালার কাচ ভেঙ্গে গেল । শায়লা আমার মুখোমুখি বসেছিল । সে ধড়মর করে উঠে দাড়াল । তারপর কাঁপতে কাঁপতে বলল,
আজকে কি হচ্ছে বলুনতো ? আমি জীবনে কখনো এত ঝড় দেখিনি ।
আমি বললাম, এরকম ঝড় আমিও অনেক দিন দেখিনি ।
শায়লা বলল, বুঝতেছি না আমার কি হয়েছে । প্রচন্ড ভয় লাগছে । মনে হচ্ছে আজকে কিছু একটা হয়ে যাবে । আমি যদি আপনার হাত টা একটু ধরি আপনি কি মাইন্ড করবেন ?

অচেনা একজন মেয়ের হাত ধরতে আমার অসস্থি লাগছিল । তার মধ্যে আমরা অন্ধকার বাড়িতে একা । আমি বললাম,
এত ভয়ের কিছু নেই । আমার মনে হচ্ছে ঝড় আর বেশিক্ষন থাকবে না । ঝড় মরে যাবার আগে তাঁর দাপট দেখাচ্ছে আর কি । তবে আপনার অনেক ভয় লাগলে আমার হাত ধরতে পারেন ।

শায়লা এসে আমার পাশে বসল । আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম । অসম্ভব শীতল একটা হাত এসে আমার হাতটা ধরল । আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল । এ মানুষের হাত হতে পারে না । মানুষ উষ্ণ রক্তের প্রাণী । যাদের ব্লাড সার্কুলেশন ভালো নয় তাদের হাতও এত ঠান্ডা নয় । আমার কাছে মনে হল বড় এক টুকরা ড্রাই আইস কেউ আমার হাতে চেপে ধরেছে । তীক্ষ্ণ ঠান্ডায় আমার হাত জমে গেল । তারপর আমার রক্তনালী বেয়ে হিম শীতল ঠান্ডা আমার সারা দেহে ছড়াতে লাগল । আমি হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম । পারলাম না । এক সময় আমি বুঝতে পারলাম আমার শরীরের উপর আমার আর কোন নিয়ন্ত্রন নেই । অনেক অনেক দূর থেকে কে যেন ডাকতে লাগল "আফসার...আফসার...আমার ভয় লাগছে" । গলা শুনে মনে হল শায়লা । কিন্তু শায়লারতো আমার নাম জানার কথা নয় । এখনো তাকে আমার নামটাই বলা হয়নি ।

যখন জ্ঞান ফিরল তখন সকাল হয়ে গিয়েছে। বাইরে কাক ডাকার শব্দ পেলাম। কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়েদের হইচইও শুনলাম । মনে পরল আজকে ঈদ। মাথা তুলতে গিয়ে ব্যাথায় কাকিয়ে উঠলাম । মনে হল আবার জ্ঞান হারাব । বমি বমি ভাব হল । এক সময় হরবর করে বমিও করে দিলাম ।

মাথার ভিতর ধুপ ধুপ করে কে যেন হামান দিস্তা পেটাচ্ছিল । আমি দুই হাত দিয়ে আমার মাথা তুলে ধরার চেষ্টা করে ব্যারথ হলাম । মনে হচ্ছে কেওক্রাডং পাহাড়ের সমান সাইজের একটা পাথার কেউ আমার মাথায় ঠেশ দিয়ে ধরে রেখেছে । মেঝেতে উপুর হয়ে পড়েছিলাম আমি । অনেক কষ্টে চিত হতেই আমার হার্ট এটাক হয়ে যাবার মতন হল । সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে শায়লা । দেড় হাতের মত জিব বেরিয়ে ঝুলে আছে । মাথা একদিকে কাত করা । টানা টানা দুই চোখ বেয়ে এক সময় রক্ত নেমে এসেছিল । এখন তা শুকিয়ে গেছে । তাঁর চোখের পাতা খোলা । এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি খুব সবল চিত্তের মানুষ নই । এই দৃশ্য সহ্য করার মতন মানসিক শক্তি আমার ছিল না । আমি দ্বিতীয় বারের মতন জ্ঞান হারালাম ।

ঈদের পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে । ঐ দিন জ্ঞান ফিরে আসার পর দেহের সর্ব শক্তি এক করে হাচড়ে পাচড়ে নিজের রুমে চলে এসেছিলাম । পরস্থিতির সিরিয়াসনেস আচ করতে পেরে ঘটনাটা আমি চেপে গিয়েছি । কাওকে বলিনি । এমনকি আমার বন্ধু জাফরকেও বলা হয়নি। ঘটনাটা ঘটে যাবার পর আমি কয়েকদিন জানালা দিয়ে নজড় রেখে ছিলাম । পুলিশ আসে কিনা দেখা দরকার। সপ্তাহ খানেক পার হয়ে গেল । কিন্তু কোন পুলিশের দেখা পেলাম না।

ঈদ কাটিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে এসে আমাকে দেখে জাফর ভুত দেখার মতন চমকে উঠল । এই কয় দিনে কম করে হলেও আমি পাচ কেজির মতন ওজন হারিয়েছি। কিছুই খেতে পারি না । অসহ্য ক্ষুধায় কাতরাই । কিন্তু খেতে গেলে বমি হয়ে যায় । রাতে ঘুম হয় না। শুধু এপাশ ওপাশ করি। চোখ বুজলেই শায়লার জিব বের হয়ে যাওয়া ভয়ানক মুখটা ভেসে উঠে। ঈদের পর আমার বাড়িতেও যাওয়া হয়নি । ঠাকুরগাও পর্যন্ত বাসে যাবার মতন শারীরিক শক্তি আমার ছিল না । আমার বসকে অসুস্থতার কথা বলে কাজ থেকে কিছু দিনের ছুটি নিয়েছি । এরকম চলতে থাকলে আমাকে শীঘ্রই কোন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। যদিও ডাক্তার দেখানোর জন্য জাফর পীড়াপীড়ি করছিল কয়েকদিন ধরে । আমি যেতে চাইনি । আর কয়েকটা দিন দেখি । এরপর পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে যাব।

দুপুরে বিছানায় শুয়ে হাবিজাবি চিন্তা করছিলাম । এতখন ধরে ক্ষীণ একটা মাথা ব্যাথা করছিল। আমি ইগনোর করছিলাম । কিন্তু এবার সেটা প্রকট হয়ে ঊঠল । ড্রায়ার খুলে দেখলাম প্যারাসেটামল শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাকে নিচে যেতে হবে। আমি জানি এখন প্যারাসেটামল না খেলে এই ব্যাথা এক সময় সহ্যের বাইরে চলে যাবে। আমি গায়ে জামা চাপিয়ে বের হলাম। না খেয়ে খেয়ে আমার শারীরিক শক্তি অনেক হ্রাস পেয়েছে । সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে হয়তো খুব কষ্ট হবে না। কিন্তু উপরে উঠার সময় কি করব আল্লাহ মালুম।

সিড়ি দিয়ে নামার সময় রশিদ সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেল। রশিদ সাহেব তেমন কথা-টথা বলেন না । কথা যাও বা বলেন সেটা মেঝের দিকে তাকিয়ে। তাকে দেখে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম, ভাল আছেন?
রশিদ সাহেব যথারীতি মেঝের দিকে তাকিয়ে বললেন, জ্বী ভাল । বলে তাড়াহুড়ো করে বাসার তালা খুলতে লাগলেন । আমি চলে আসছিলাম । কিন্তু কি কারনে জানি না তকে জিজ্ঞেশ করলাম, আপনার বোন শায়লা কেমন আছেন?
রশিদ সাহেব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন । এই প্রথম বার বোধ হয় তাঁর চোখ দেখতে পেলাম আমি। ভীত একজোড়া চোখ । তারপর মনে হল দ্রুত নিজেকে সামলে নিলেন তিনি । বললেন, শায়লা ভাল আছে । বলে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন ।
এর মানে কি? শায়লা ভাল থাকে কি করে? নিজের চোখে আমি তাকে ফ্যান থেকে ঝুলে থাকতে দেখেছি। মনে আরো খটকা বেধে গেল।

সকালে কে যেন সমানে দরজার কড়া নাড়ছিল। ঊঠে এসে দরজা খুললাম । মতিউর রহমান সাহেব দাঁড়িয়ে । তিনি খুব উত্তেজিত গলায় বললেন,
আফসার পুলিশ এসেছে দেখেছ?
আমি বললাম, না স্যার। কেন কি হয়েছে?
ঘটনা কিছুই জানো না?
আমি অবাক হয়ে বললাম, কি ঘটনা?
মতিউর রহমান সাহেব ফিশ ফিশ করে বললেন, রশিদ সাহেব তাঁর এক ফুফাতো বোনের মেয়েকে ভাগিয়ে এনে নিজের বাসায় রেখেছিলেন । কেউ জানতো না । মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়েছিল । তারপর তাকে মেরে ফ্যানের সাথে ঝুলে সম্ভবত আত্তহত্যা হিসাবে চালিয়ে দিতে চাইছিলেন । পরে কি কারনে যেন ব্যাপারটা আর প্রকাশ করেননি । তাঁর ফ্ল্যাট থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল কিছু দিন ধরে। ফজলুর সাহেবের (রশিদ সাহেবের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা) কাজের বুয়া কিভাবে দেখে ফেলেছিল । ফজলুর সাহেব পুলিশ খবর দিয়েছেন ।
আমি বললাম, তাই নাকি?

মাস ছয়েক পর।

সেই ঝড়ের রাতের ঘটনাটা দিনে দিনে ফিকে হয়ে আসছিল । কাজ নিয়ে অনেক ব্যাস্ত থাকি। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেই । তাস পেটাই। এক রাতে বাইরে থেকে ফিরছিলাম। তিন তালায় সিড়ির বাতিটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে জায়গাটা অন্ধকার থাকে। উপরে উঠার সময় লম্বা ছিপছিপে গড়নের মাথায় ওড়না দেয়া একটা মেয়ে নেমে আসছিল । আমাকে দেখে সে মাথাটা ঘুরিয়ে নিল। কেন জানি আমার কাছে মনে হল মেয়েটাকে আমি চিনি । একে আমি আগেও দেখেছি । আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসল । আমি কোনমতে ঢোক গিলে ডাকলাম, শায়লা? মেয়েটা মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল। বাইরের ল্যাম্প পোস্টের মৃদু আলো সিড়িতে এসে পড়ছিল। সেই আলোতে দেখলাম নিষ্পাপ টানা টানা একজোড়া চোখ । মেয়েটা তরতর করে নিচে নেমে গেল ।

সোহেল লেহস


Comments

মেঘলা মানুষ's picture

ভাল লাগলো গল্পটা, বর্ণনাও চমৎকার হয়েছে।

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক's picture

ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ!

সোহেল লেহস

অতিথি লেখক's picture

লেখায় অনেক বানান ভুল আছে। আগেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম। এডিট করার অপশন থাকলে ভুল গুলো শুধরে দিতাম।
সোহেল লেহস

দীনহিন's picture

Quote:
ঢাকা শহর পরিষ্কার রাখা আমার মহান দায়িত্ব

ঠিক এভাবেই বলে নাকি কেউ?

Quote:
বকরীর ঈদে কোরবানী হয়ে যাওয়ার পর

আগের প্যারাতে 'কোরবানী ঈদ' লিখেছিলেন, কিন্তু এখানে হঠাৎ 'বকরীর ঈদ' নিয়ে এলেন সম্ভবত ডুপ্লিকেশন এড়ানোর জন্য যেহেতু পরের শব্দেই আবার কোরবানী আছে! কিন্তু 'বকরীর ঈদ' ছেঁটে দিলে কেমন হয়? বাক্যটি খানিকটা নির্ভার হয় না এতে করে? কোন অর্থ-বিকৃতি না ঘটিয়েই??

আপনি বর্ণনা করতে পারেন ভালই, তবে গল্পের প্লট অনেক অনেক পুরনো। আপনার কাছে নতুন ধাঁচের গল্প অচিরেই পেয়ে যাব আশা করছি।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক's picture

দীনহিন,

Quote:
ঢাকা শহর পরিষ্কার রাখা আমার মহান দায়িত্ব

কথাটা ব্যাঙ্গ করে লেখা। আর "বকরীর ঈদ" কথাটা ডূপ্লিকেশন এড়ানোর জন্যই লেখা। আপনার কথাই ঠিক, ছেটে দিলেই বরঞ্চ ভাল হবে।
গল্পের প্লট পুরনো। আমি নিজে নতুন লেখক। পুরানো প্লট ঘাটা ঘাটি করে লেখার হাত পাকাচ্ছি। তবে নতুন ধাঁচের গল্প অচিরেই পাবেন। আপনার ফিডব্যাক এর জন্য ধন্যবাদ।
সোহেল লেহস

অতিথি লেখক's picture

ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ!

সোহেল লেহস

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ's picture

লেখার পর কিছুদিন (একান্তই না পারলে ঘন্টাখানেক) গ্যাপ দিয়ে লেখাটা একবার পড়ে নেবেন। এতে করে টাইপোগুলো এবং আরো ছোটখাট অনেক কিছুর উন্নয়ন করতে পারবেন। এই ছোটখাট ব্যপারগুলো এমনিতে কিছু নয়, কিন্তু পরিবর্তন করলে যাদুর মত কাজ করে, লেখা একটানে অনেক সুখপাঠ্য হয়ে যায়।

এই গল্পের ক্যাটেগরি কী করে অণুগল্প হলো বুঝলাম না। আর এটা কি সব বয়সীদের উপযোগী?

____________________________

অতিথি লেখক's picture

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ, কিছু মানুষ প্রুফ রিডিং এর ব্যাপারে একেবারেই জঘন্য। আমি সে কিসিমের। আমি বাংলা বানান কিংবা ব্যাকরনেও অনেক কাঁচা। এক বছর পরে পড়ে দেখলেও অনেক ভুল আমার চোখ এড়িয়ে যাবে। সবচেয়ে ভাল হয় অন্য কেও যদি প্রুফ রিড করে দেয়। এই কাজটা করে দেয়ার জন্য বেশিরভাগ সময়ই কাওকে খুজে পাই না।

অনুগল্পটা ভুল করে দেয়া। "সববয়সী" দেয়াটা হয়তো ঠিক হয়নি। মানে দশ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের জন্য হয়তো ঠিক হবে না। কিন্তু এর উপরে যাদের বয়স তাদের জন্য সমস্যা হবার কথা নয়। ভয়ঙ্কর কিছু কোথাও বৃত্তান্ত করে লিখিনি।

সোহেল লেহস

অতিথি লেখক's picture

চলুক
ঠোঁটকাটা বিচ্ছু

অতিথি লেখক's picture

ভালো, খুব ভালো।
ঝরঝর করে পড়ে ফেলেছি।

অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে সোহেল।
ভালো থাকবেন।

-----------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

অতিথি লেখক's picture

কামরুজ্জামান পলাশ, আপনাকেও শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।

সোহেল লেহস

এক লহমা's picture

আপনার লেখা খুবই গতিময়।
আশা রাখছি, উপরে বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ীরা যে মন্তব্যগুলি করেছেন সেগুলি খুব তাড়াতাড়িই আপনার লেখায় তাঁদের কাঙ্খিত পরিবর্ত্তনগুলি নিয়ে আসবে। হাসি
আমার কাছে, এবারের গল্পের মান কিন্তু আপনার লেখার মানের বিপরীত ছিল। আশা রাখছি, দ্রুতই মন-ভরানো গল্প ও পাওয়া যাবে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক's picture

এক লহমা, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সময়ের সাথে আমার লেখার মান আশা করি বাড়বে। দীর্ঘ দিন লেখালেখির সাথে যুক্ত না থাকার কারণে ব্যাকরণ, বাক্য গঠন, গল্প বলার ভঙ্গিমা, গল্পের প্লট ইত্যাদি আবার নতুন করে শিখছি। আপাতত সহজ প্লট নিয়ে লেখা শুরু করেছি। আমার মূল লক্ষ্য সহজতম ভাষায় গল্প বলা। গল্পের ভাষা এত সহজ হবে যে প্রতিটা শব্দ কিংবা বাক্য যেন পাঠক আলাদা আলাদা ভাবে মনে রাখে। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের ফিডব্যাক আমার জন্য অনেক সহায়ক হবে।

আবারো ধন্যবাদ।

সোহেল লেহস

অতিথি লেখক's picture

এক কথায় অসাধারণ বর্ননা শৈলী। মুগ্ধ হয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। তবে গল্পটি কি ভৌতিক অথবা আধা ভৌতিক কিনা বুঝতে পারলাম না। যদি পুলিশের তদন্ত হয়, সেখানে আবসার সাহেবকে ও জিজ্ঞাবাদ করা হবে। যা কিছুই হলো না। পরে ছয়মাস পর একই জাতীয় কিছুর ইংগিত লেখক দিলেন। তারমানে আগের কুকর্মের জন্য ঐ ব্যক্তির কোন শাস্তি হয়নি। -সাখাওয়াৎ।

অতিথি লেখক's picture

ধন্যবাদ সাখাওয়াৎ! আমার কাছে মনে হয় গল্পটা ভৌতিক। ছোট গল্পতে অনেক কিছু বৃত্তান্ত লেখার সুযোগ নেই। আপনার মনে যেসব প্রশ্ন জেগেছে সেই প্রশ্ন গুলো জাগানোটাই ছিল আমার মূল উদ্দেশ্য। এসবের উত্তর আমার নিজেরও জানা নেই। উত্তর আপনি নিজেই কল্পনা করে নিন। চোখ টিপি

সোহেল লেহস

অতিথি লেখক's picture

আপনার বানান ভুল করার বাতিক টা মনে হয় গেল না। তবে আমার মনে হয় এটা নিয়ে আপনার আরো সচেতন হওয়া উচিৎ। এটা একটা পাবলিক সাইট, সারাদেশের মানুষ এখানে গল্প পড়ে, লেখে ও মন্তব্য দেয়। নিজের লেখা প্রেজেন্টেবল করার অর্থ হল, সেই সব মানুষের প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধাবোধ দেখানো। আর কোন কিছু লেখার পর নিজে একবার না পড়ে সেটা আসলেই কোথাও প্রকাশ করা উচিত না। বানানের কথা বাদই দিলাম, লেখার প্রকাশভঙ্গী আর প্লটের অনেক উন্নতি হয়।
গগন বিদীর্ণ করে দেয়া আলোর ঝলকানি আর মেঘেদের গর্জনে ধরনী কেঁপে কেঁপে উঠছিল...
আপনার লেখা তো এত ভারী ছিলনা, এইধরণের গল্প আরো হালকা হওয়া দরকার। কিছু মনে করবেন না, আপনার লেখা ভাল লাগে বলেই এত কথা বললাম। আর “কাছের মানুষ দূরে থুইয়া-২” তো আর পেলাম না, ব্যাপার কি?
নিশাচর জীব।

অতিথি লেখক's picture

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নিশাচর জীব! আপনার কথা ঠিক, বানান ভুলের বাতিক এখনও যায়নি। তবে বানান ঠিক রাখার জন্য একেবারেই যে কোন চেষ্টা করছি না তা কিন্তু নয়। 'কাছের মানুষ দূরে থুইয়া' ছিল সচলে আমার প্রথম লেখা যা ছিল বানান ভুলের ভয়ংকর দৃষ্টান্ত। এরপর অনেক চেষ্টা করছি বানান ভুল কমিয়ে আনতে। সাফল্য অল্প, কিন্তু চেষ্টাতো করে যাচ্ছি। আস্তে আস্তে অবশ্যই উন্নতি ঘটবে।

পাঠকদের প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধাবোধ আমি দেখাচ্ছি না (সরাসরি বলেননি। কিন্তু আপনার কথার সারমর্ম এটাই দাঁড়ায়) কথাটা খুব কড়া হয়ে গেল ভাই। আমি নিজে না পড়ে সেটা প্রকাশ করছি এই কথাটা ঠিক নয়। নিজের লেখা আমি বার বার পড়ছি। কিন্তু সব ভুল ধরতে পারছি না বিশেষ কিছু কারণে। এমনিতেই আমি বানানে কাঁচা, তাঁর উপর সাইকোলজিক্যাল কিছু অক্ষমতা আছে, তা এখানে নাই বা বললাম। যাহোক এই মুহূর্তে আমার হয়তো লেখার চেষ্টা বাদ দিয়ে বানান শিখতে বসা উচিত।

শুরুতেই গল্পের (কাল্পনিক) পরিবেশটা ঠিক মত ধরতে ভারী কিছু শব্দের ব্যবাহার করেছি। এরপর কিন্তু সব কিছু হালকা ভাবেই লেখা।

"কাছের মানুশ দূরে থুইয়া" ছোট কিম্বা মাঝারি টাইপের গল্প হবে ভেবে লিখতে বসেছিলাম। তারপর লিখতে লিখতে দেখি বড় গল্প ছাড়িয়ে উপন্যাস হয়ে যাচ্ছে। নানারকম ঘটনা আর চরিত্রের আবির্ভাব ঘটতে লাগল। শেষ পর্যন্ত সাহস করে সিদ্ধান্ত নিলাম একটাই বই লিখে ফেলব। শেষ করতে পারব কিনা জানি না। তবে চেষ্টা চলছে। লেখা শেষ হউক তারপর হয়ত আস্তে আস্তে সচলে দেব। তবে বানান নিয়ে ভাই যে ভয় ঢুকিয়ে দিলেন এখন আর বুকে সাহস পাচ্ছি না। চিন্তিত

সোহেল লেহস

অতিথি লেখক's picture

আপনার কথায় রীতিমতো লজ্জা পাচ্ছি। দুঃখিত, কোনভাবে যদি আপনাকে আহত করে থাকি। তবে, নিঃসন্দেহে সেরকম কোন উদ্দেশ্য আমার ছিলনা। আপনি লেখার পর পড়েননি সেটা ধরে নেয়া অবশ্যই অন্যায় হয়েছে, তবে আপনার লেখা পড়ে মনে হল এরকম লেখার হাত যার আছে, আরেকটু মনোযোগী হলে তার কাছ থেকে আরো অনেক বেশী কিছু পাব। তখন খেয়াল করিনি, তবে কথাটা আসলেই রূঢ় হয়ে গেছে। হয়ত যা বলছিলাম তা নিয়ে ভেবেছি, কিন্তু কিভাবে বলছিলাম তা নিয়ে একদমই ভাবিনি। তবে এটা ঠিক যে, অন্তরে শুভকামনা ছাড়া অন্য কিছু নেই। বইটা শেষ করেন, অপেক্ষায় থাকলাম তা বলাই বাহুল্য। বানানের ভয় বা পাঠকের মন্তব্যের ভয় সাহিত্য ও সাহিত্যিক কে আটকে রাখলে ইতিহাস থমকে যাবে।
অধমের থেকে আরো একটা টিপস-গল্পের (কাল্পনিক) পরিবেশটা পাঠকের মনের পর্দায় ফেলতে শব্দ না, বাক্যগঠন, বাক্যের টেক্সচার, অর্থাৎ গল্প বলার ঢং আর গ্রাফিক বর্ণনার দিকে নজর দিন। সব কিছুর পরেই, একজন লেখক, আসলে একজন গল্প বলিয়ে ছাড়া আর কী?
নিশাচর জীব।

অতিথি লেখক's picture

লজ্জা পাবেন না। আমি কিছু মনে করিনি। আমার ভুল ভ্রান্তি অনেক। এজন্যই সচলে লেখা দেই। আমি জানি ভুলগুলো আমার নজর এড়িয়ে গেলেও আপনার কিম্বা আপনার মত সজাগ পাঠকদের নজর এড়াবে না। তবে বানান নিয়ে আমি নিজেই হতাশ। এখন থেকে বাংলা অভিধান সাথে নিয়ে লিখতে বসব খাইছে

টিপসের জন্য ধন্যবাদ! হাসি

সোহেল লেহস

কল্যাণ's picture

বানানের জন্যে গল্পটার মজা অর্ধেকটাই মাটি মন খারাপ

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক's picture

চমত্‍কার হয়েছে বোকা তুষার

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.