কামরূপ কামাক্ষা এক্সপ্রেস

বন্দনা's picture
Submitted by বন্দনা [Guest] on Thu, 24/04/2014 - 10:49pm
Categories:

খালামনি, সকাল দশটায় কি কামরুলকে আবার নতুন করে বানিয়ে হাওড়ায় এনে দিবে ওরা। আমি কিছু না বলে যায়ানের দিকে ফিরে তাকালাম একবার। এই ছেলের হাজারটা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আমার দাঁত ভেঙ্গে যাচ্ছে প্রায়। জেরী ওকে কিভাবে সামলায় আল্লাহ মালুম। আমি কিছু বলবার আগেই পাশ থেকে জেরী বলে উঠলো বাবা, ওটা কাম্রুল না কামরূপ হবে। এরপর ও যায়ান কামরুলের নামে হাবিজাবি বকে যেতে লাগলো। সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে চেয়ারের উপরে রাখা নিজের ফোলা পায়ের দিকে একবার তাকিয়ে আমি চুপচাপ আশপাশ দেখতে থাকি। থেকে থেকে মিষ্টীমত একটা মেয়ের দিকে চোখ চলে যাচ্ছে না চাইতেই। ভেজা ভেজা চোখে ফোনটাকে চার্জে বসিয়ে অবিরাম নাম্বার ডায়াল করে যাচ্ছে মেয়েটা । ওপাশ থেকে সাড়া না পেয়ে মিষ্টি মুখটায় কেমন মেঘ জমে গেছে, মনে হচ্ছে খানিক বাদেই বুঝি কেঁদে ফেলবে। এই রাত দশটায় স্টেশনের লেডিস রুমে একা ওই বয়সী একটা মেয়ে বসে আছে এটা ভাবনার অতীত। ওই বয়সে বাড়ি থেকে আমাকে কখনোই একাই ছাড়েনি, সময় কত এগিয়ে গেছে।

লেডিস রুম হলে ও দু একজন ছেলে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের পাত্তা না দিয়েই এক ভদ্রমহিলা শাড়ি পরিবর্তন করে ফেললেন ঝটপট। তাই দেখে আমি জেরীর সাথে অবাক দৃষ্টি বিনিময় করে ফেললাম। ততক্ষণে মিষ্টিমুখের মেয়েটা পাশে বসে থাকা সমবয়সী অন্য আর একটা মেয়ের সাথে ভাব করে ওদের পাতা কার্টুনে একটু জায়গা করে দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লো। ওর ভেজা চোখগুলা দেখতে পেলাম না আর, তবে দূর থেকেই মনে হচ্ছিল মেয়েটা বোধহয় কাঁদছে। ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিই, এত্ত বাচ্চা একটা মেয়ের এত্ত কষ্ট থাকবে কেন।

যায়ানের মা টয়লেট ঘুরে এসে বললো যা এক্কেবারে ডানেরটায় যাস, ওটা একটু ঠিক আছে। যাব না যাব না করে ও হাতে দুটো টাকা নিয়ে টয়লেটের দিকে হাটতে থাকলাম। খানিক-বাদেই বের হয়ে চলে এলাম। ভালো টয়লেট না পেলে আমার সিস্টেম আপনিতেই শাট ডাউন হয়ে যায়। ফিরে এসে চেয়ারে পা তুলে যায়ানের পাশে বসে যাই। তখন ও কামরুল এক্সপ্রেসের কি হলো সেই গল্প চলছে। যায়ানের মাথা থেকে কাম্রুল এক্সপ্রেসকে বের করা যাচ্ছেনা। থেকে থেকেই সে আব্জাব বলে যাচ্ছে, জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া জেরীর দুচারটা বকা ও জুটছে বেচারার কপালে। বারটা দশের ট্রেনের অপেক্ষায় সেই বিকেল থেকে বসে আছি স্টেশনে। মাঝে রাতের খাবারের জন্য বের হয়েছিলাম স্টেশন থেকে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে রাস্তার ট্রাফিক পুলিশকে বললাম, ভাই ভাল একটা খাবার জায়গা কই পাওয়া যাবে এসি থাকলে ভালো হয়। সামনেই রেলওয়ে বার এন্ড রেস্টুরেন্ট আছে বলে হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল ভদ্রলোক। চোখ কপালে তুলে জেরী জানতে চাইলো বারে যাবি। আমি বললাম খেতেই তো যাবো, সমস্যা কী, ড্রিঙ্ক তো করবোনা। হাঁটতে হাটতে খুঁজে ও পেলাম খাবারের জায়গাটা। ঢুকবো কি ঢুকবো না দোনোমনা করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম কতক্ষণ। সামনে পার্ক করে রাখা বিশাল বিশাল বাইকগুলা দেখিয়ে জেরী বললো এরপরে ও এখানেই খাবি? এসির ঠাণ্ডা হাওয়া খাবার জন্য এতদূর হেটে এসে ফিরে যেতে মন চাইছিল না আমার। এর মাঝেই এক লোক দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসতেই ভিতর থেকে ধূম-তারাক্কা গানের শব্দ ভেসে আসলো। সেই দেখে দুজনে যায়ানের হাত ধরে বলা যায় পালিয়েই এলাম। রাস্তায় একটা সস্তা হোটেল খুঁজে নিয়ে ডিনার সেরে স্টেশনে ফিরে এলাম।

সেই বিকেল পাঁচটায় আমাদের দার্জিলিং এর ট্রেন ধরার কথা। তাড়াহুড়া করে স্টেশনে এসেই বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আমাদের চোখ চড়কগাছ। ট্রেন রিস্কেজিউল হয়ে পরেরদিন সকাল নটা পঞ্চাশে চলে গেছে।খুঁজে পেতে স্টেশনমাষ্টারমত এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম কাহিনী কি, এক–দু ঘণ্টা লেট হতে পারে, তাই বলে লেট হয়ে পরের দিন ট্রেন যাবে, এটা কোন কথা হল। বিরক্ত হয়ে লোকটা বললো, ট্রেন না আসলে এখান থেকে যাবে কিভাবে। তার ভাবভঙ্গি দেখে জিজ্ঞেস করতে ও ভয় লাগছিল, তবু জিজ্ঞেস করে ফেললাম, ট্রেন আসেনি মানেটা কি। তেতে উঠে উত্তর করলো, অন্য একটা ট্রেন এক্সিডেন্ট করায় কামরূপ এক্সপ্রেস পথে আটকে গেছে, আমরা না গেলে গিয়ে যেন রিফান্ড করে নিই। আমার তো মাথায় হাত। একবারে অল্প সময় নিয়ে দার্জিলিং দেখতে এসছি, ট্রেন না পেলে হবেটা কি। জেরী গজগজ করে পাশ থেকে বলে উঠলো এমন কামরূপ কামাক্ষা মার্কা নাম দিলে তো এমনি হবে, শুনলেই কেমন লাগেরে বাবা।


Comments

সাফিনাজ আরজু's picture

বেশ লাগছিল পড়তে ...... চলবে টা কি বাদ পড়ে গেছে বন্দনাদি?
দার্জিলিং এর গল্প বাকি থেকে গেল যে -- হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

বন্দনা's picture

দার্জিলিং এর গল্প সময় পেলে করবোনে আপু, মেঘের কারণে ঠিক্মত দেখতে পারিনি, মন খারাপ হয়েছিল খুব।

দীনহিন's picture

অনেক দিন বাদে এলেন, দার্জিলিং কাহিনি ছাড়াও শুধু এই ব্যাপারটাই আনন্দনায়ক।
দার্জিলিংকে জানার আগ্রহ আছে, তাই চোখ রাখছি সিরিজটিতে।
কিছু ফডু-সংযোগে ভ্রমনকাহিনিটিকে আরও প্রাণবন্ত করা যেত না কি?

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

বন্দনা's picture

দার্জিলিং এর ছবিগুলা মেঘের জন্য খুব একটা ভাল আসেনি, নইলে শেয়ার করা যেত।

দেশীছেলে's picture

থামলেন কেন.. চলুক না .. মন খারাপ

বন্দনা's picture

এই একটা জার্নি করলাম পুরাই যন্ত্রনায় ভরপুর, তার এক্টুখানি শেয়ার করলাম ভাই।দেখি সময় পেলে আর ও কিছু লিখবোনে।

তারেক অণু's picture
প্রৌঢ় ভাবনা's picture

চলুক। বাকিটুকুও দিয়ে দিন তাড়াতাড়ি।

শাব্দিক's picture

Quote:
ভালো টয়লেট না পেলে আমার সিস্টেম আপনিতেই শাট ডাউন হয়ে যায়।

ইয়ে, মানে... আমার সিস্টেম উল্টা কাজ করে।
লেখা চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান's picture

ভালো। চলুক।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ's picture

পরের পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

____________________________

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.