মেঘের পড়শি (রাঙামাটি পর্ব- ৩)

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Sun, 15/12/2013 - 4:42pm
Categories:

DSC02031

রাঙামাটি নিয়ে আমার প্রথম লেখা ‘মেঘের আয়নায়’ দেখিয়েছিলাম মেঘের সাথে পানির এক ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা ভালোবাসার কথা। সেখানে বলেছিলাম মেঘ কি করে শুভলং এর পানিতে উঁকি দিয়ে খুব নিবিড়ভাবে নিজেকে প্রসাধন করে নিত। আর তাদের এই একান্ত বিষয়গুলো কালে ভদ্রে ধরা দিত আমার মত দু একজন আনাড়ি ফটুয়েদের ফটুকদারিতে। তবে এখানকার মানুষের সাথে মেঘের মেলামেশা যে এত প্রাচীন আর নিত্যদিনের তা এখানে না আসলে হয়তো জানা হত না।

(১)

DSC02022

মেঘ আর রাঙামাটির মানুষ যেন খুবই চেনা ও বন্ধুবৎসল পড়শি একইসাথে তাদের বেড়ে ওঠা আর দেখা হওয়া যেন তাদের মনের দাবী। তাদের এই নিবিড় সম্পর্ক যার মধ্যস্থতায় গড়ে ওঠা সেই বিশাল দেহি পাহাড়দের কথা না বললে অনেক কিছুই যেন অব্যক্ত থেকে যাবে।
সত্যি এক অদ্ভুত প্রেম এই মেঘের পুরু চাদর আর পাহাড়ের। একজন অন্যজনের সারা শরীর জুড়ে ছেয়ে না থাকলে যেন দিনের শুভ সূচনা হয়না।

(২)

DSC02072

(৩)

DSC02050

কী শীত আর গ্রীষ্ম এখানকার ভোর বেলার প্রকৃতি ঠিক এমন এক রূপেই যেন দিনের আগমনী গানের রচনা করে। এমন এক সকাল দেখে যার দিনের শুরু তার দিন ভালো না হয়ে যাবার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। সেই জন্য অবশ্য খুব ভাগ্যবান হতে হয়- আমার মত দুর্ভাগা হলে কিন্তু দুর্গতি। প্রকৃতির এই উদারতায় আর মহনীয় এক অপার সৌন্দর্যে বেড়ে ওঠার কারণেই মনে হয় এখানকার মানুষেরা দারুণ সুখী। খুব বেশী বিলাসিতা এদের নেই শুধু জীবন ধারণের জন্য সামান্য কিছু নিয়েই যেন এরা অনেক সুখী।

(৪)

DSC01719

পানি যতদিন আছে অর্থাৎ কাপ্তাই লেকের সাথে মিলিত হওয়া এই লেকের পানি যতদিন আছে খুব ভোর বেলা থেকেই মাঝিদের ব্যস্ততার যেন অন্ত থাকে না এখানে। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য যারা সবার প্রথমে উপভোগ করে তারা এই মাছ ধরা মাঝির দল।

(৫)

DSC02045

(৬)

DSC02047

(৭)

DSC02043

(৮)

DSC02035

প্রকৃতির অন্য প্রাণীরাও তাই বলে বাদ পড়ে না। এই প্রজাপতিটা কী দেখছে পাহাড়ের দিকে চেয়ে। পাহাড় বুকে কী সুন্দর সব শুভ্র মেঘের খেলা, তাইনা? আর গাছের আড়াল থেকে তাই বুঝি খুব সন্তর্পণে অবলোকন করে চলেছে এই ডানাওয়ালা প্রাণীটা।

(৯)

DSC00314

পাহাড়ের গায়ে ঢলে পড়া এই মেঘের কোন বেধে দেয়া সময় নেই। যে কোন সময় সে নিজেকে এলিয়ে দিতে পারে পাহাড়ের গায়ে। এ যেন এক অলিখিত সন্ধি। তবে অলিখিত এই সন্ধির শর্তগুলো সময় ভেদে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে জুড়ে দেয়া হয় পাহাড়ের গায়ে। ভিন্ন চেহারায় ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সে ধরা দেয় এই লাল পাহাড়ের দেশে। সময়ের তারতম্যে তার উপস্থিতি আর ব্যাপ্তিও যেন একটু আলাদা।

(১০)

DSC00304

(১১)

DSC00302

সবুজ ঘাসের বুকে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে জেগে থাকা পাহাড় কালো মেঘের সাথে মিশে যেন সাগরের মাঝে জেগে থাকা কয়েক টুকরো ঢেউ।

(১২)

DSC00190

(১৩)

DSC00141

নীল আকাশের নিচে ভেসে বেড়ানো মেঘ কখনো আবার ক্রমেই নিচে নেমে মিশে যায় সবুজ বৃক্ষে শোভিত পাহাড়ের গায়ে। সবুজ ,সাদা আর নীল এই তিন রঙের এক মিলন মেলায় ব্যস্ত তখন প্রকৃতি। উষ্ণ শীতল এক অনুভূতির ছোঁয়ায় আন্দোলিত তখন পাহাড়ের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা সবুজ প্রাণ।

(১৪)

DSC00373

(১৫)

DSC00369

বর্ষাকালে সাদা মেঘের ত্বকে নেমে আসে কিছুটা ফ্যাকাসে আবরণ। লেকের ওপর থেকে দূরে তাকালে দেখা যায় এসব দৃশ্য। কেমন যেন শোকাহত পরিবেশে গুমোট অবস্থান প্রকৃতির। আসলে নানা ভঙ্গিমায়, নানা ভাবে ধরা দেয় মেঘ। তার রূপ কখনো মায়াবী আবার কখনো বেশ দানবীয় এক রূপে তার আবির্ভাব।

(১৬)

DSC00403

(১৭)

DSC00034

অনেক রূপের মাঝে লোভনীয় হয়ে ওঠে মেঘ আর রৌদ্রের সেই লুকোচুরি খেলা। অনেক চেষ্টার পর নরম মেঘের ঘন স্তরের সেই আবরণী পার হয়ে তার কিরণ যখন ছড়িয়ে পড়ে পানির ওপর তখন হঠাৎ করে নেমে আসে অপরূপ এক শুভ্রতা।

(১৮)

DSC02077

(১৯)

DSC00319

এখানে যেন মেঘদের রাজত্ব। শুভলং পার হয়ে কিছুদূর আসলেই দেখা যায় রাঙামাটির এই ছোট্ট শহরের কংক্রিট। কিন্তু তাতেও যেন বাঁধ সাধে মেঘ। এই শহরের সৌন্দর্য অন্য কেউ দূর থেকে দেখে নেয়ার এই বিষয়টিতে তার ঘোর আপত্তি। তাইতো সে তার সর্বস্ব দিয়ে ঢেকে রেখেছে এই শহর। জানিনা সে সূর্যের চোখ ফাঁকি দিয়ে তার অধীনস্থ এই শহরকে কত কাল তার ফ্যাকাসে চাদরের তলে ঢেকে রাখতে পারে।

(২০)

DSC02102

অমি_বন্যা

রাঙামাটি নিয়ে অন্যান্য লেখা

১। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/50537#comment-613011

২। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/50616#comment-614617


Comments

অতিথি লেখক's picture

ধন্যবাদ আপনাকে এই অদেখা মায়াবী ভুবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
- ষণ্ডাকুমার

অমি_বন্যা's picture

ধন্যবাদ আপনাকেও, কষ্ট করে পড়ার জন্যে।

অতিথি লেখক's picture

ছবি সুন্দর হয়েছে। অনেকদিন পর আমার চেনা রাঙামাটিতে দেখছি। শুভলং পার হয়ে মাইনিমুখ যাবার পথে এক জায়গায় কাসালং নদী এবং কাপ্তাই লেক অনেক চওড়া হয়ে গেছে, প্রায় ১২/১৩ কিলোমিটার হবে। ঐদিকের গ্রামগুলো সুন্দর, আপনার কাছে ঐদিকের ছবি থাকলে সেগুলো নিয়ে একটা আলাদা পোস্ট দিতে পারেন। কাসালং নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো বেশিরভাগ মানুষের রাঙামাটিতে জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিবে।

শব্দ পথিক

অমি_বন্যা's picture

সুযোগ পেলে ওদিকে একবার ঢু মারার ইচ্ছে আছে, শব্দ পথিক। ড়

বনি's picture

চমৎকার লেখা।আর ছবিগুলোর কথা কি বলব - অসাধারন।
১,৫,৯,১০ এবং প্রথম ছবি বেশী ভাল লেগেছে। চলুক

অমি_বন্যা's picture

অসংখ্য ধন্যবাদ ।

সাক্ষী সত্যানন্দ's picture

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অমি_বন্যা's picture

ধন্যবাদ।

তিথীডোর's picture

৫ এবং ৭ নং ছবি বেশ ভাল্লেগেছে। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অমি_বন্যা's picture

ধন্যবাদ তিথীডোর

অতিথি লেখক's picture

চলুক

মাসুদ সজীব

অমি_বন্যা's picture

ধন্যবাদ আপনাকে।

রাকিব's picture

চমৎকার ছবি।।।অসাধারন।।।।।

অমি_বন্যা's picture

অনেক ধন্যবাদ , রাকিব ।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.