লো সিয়েন্তো সেনিওরা।মাদ্রিদের বুড়িমা ।

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Sat, 20/08/2011 - 7:55am
Categories:

লো সিয়েন্তো সেনিওরা।মাদ্রিদের বুড়িমা
- সুমাদ্রি শেখর।

ইউরোপে গ্রীষ্মের বড়ই কদর। কেন? ওমা, জাননা বুঝি, ঐ মহাদেশটা প্রায় সারাটা বছর শীত আর ইলশে গুড়ি বৃষ্টির হাতে নাকাল হয় যে! গরমের কটা দিন এসেই তো ওর বুকে ফুল ফোটায়।

আফ্রিকার গরমে ছয় মাস সেদ্ধ হবার পর যখন ছুটি এল তখন ভাবলাম কড়ি গেলে যাক, ইউরোপের ফুল ফোটার মৌসুম দেখে আসি। গেলবার যখন গিয়েছিলাম, তখন শরতের পাতা ঝরানোর দিন, শীতে জমেই গিয়েছিলাম ফ্রান্সের ছোট্ট শহর বোজঁসঁতে। জুলাই মাসের ইউরোপ মনোমুগ্ধকর শুনেছি বহুবার, তাই জুনের শেষদিকে একদিন আফ্রিকা থেকে লম্বা একটা লাফ দিয়ে জিব্রাল্টার পার হয়ে এসে পড়লাম ফ্রান্সের সুন্দর গোছানো শহর লিওঁতে। লিওঁ-র গল্প অন্য একদিন বলব তোমাকে। আজ শোন স্পেনের রাজার শহর মাদ্রিদের এক বুড়িমা'র খবর। আরে এইনা তুমি হনুমানের লাফ দিয়ে জিব্রাল্টার পার হলে, ফ্রান্স গেলে, স্পেন এল এরমধ্যে কোথা থেকে? ছিলাম তো, ফ্রান্সেই তো ছিলাম সবচেয়ে বেশীদিন। আহা, যেন দৃশ্যপট। গম আর যব ক্ষেতে আলসে সূর্যের আলো পড়ে আছে আর গোলগোল চাকার মত খড়ের গাদাগুলো সে রোদ গায়ে মেখে অপেক্ষা করে আছে কখন ক্ষেতের মালিক এসে তাদের তুলে নিয়ে যাবে খামারে। তবে সে গল্প আরেকদিন শোনাব তোমাকে।

বলছি, বলছি কীকরে স্পেন গিয়ে পৌঁছালাম। ফ্রান্সের পূর্বদিকের সুন্দর একটা শহর বর্দো, রেড ওয়াইনের জন্য বিখ্যাত এই শহর। ও তুমি জান রেড ওয়াইন মানে কী! বর্দোতে আমার বন্ধু আশরাফের সাথে দুদিন থেকে শহরটা চষে বেরিয়ে একরাতে বাসে চেপে বসলাম মাদ্রিদ যাব বলে। ইউরোপে আবার আমাদের দেশের মত সোহাগ, শ্যামলী, হানিফের মত শয়ে শয়ে বাস সার্ভিস নেই। এক শহর থেকে অন্য শহরে যাবে, তো কাটো ট্রেনের টিকিট। কী কারণে জানি ট্রেনে টিকিট করা আমার হলনা। সবেধন নীলমনির মত পেলাম একটা বাস সার্ভিস " ইউরোলাইন্স" যেটি এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাত্রী পারাপার করে। আশরাফের কোলকাতার বন্ধু অনির্বাণের কল্যাণে টিকিট কেটে রাতে উঠলাম বাসে, পরদিন সকাল সকাল মাদ্রিদ গিয়ে পৌঁছাব এই ভেবে। বাসেই ঘুমটা মেরে দেব, হোটেলে আর রাত কাটাতে হবেনা এই ছিল প্ল্যান। গিয়ে বসলাম এক ব্রাজিলীয় ছাত্রীর পাশে, তারপর দে ঘুম। কিছু পর হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, কে যেন সিলেটি ভাষায় কথা বলছে, দেখলাম আমার ডানে এক বাংলাদেশী দম্পতি আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টি রেখে কথা বলছেন। খুশিমনেই আলাপ করতে গিয়ে টের পেলাম ভদ্রলোক বিশ্বাসই করতে পারছেন না আমি মাদ্রিদ বেড়াতে যাচ্ছি। কেন? আমার যে গায়ে চাপানো ফতুয়া, পায়ে কেডস, পিঠে ইয়া বড় একটা ঝোলা। বার বার আমায় তার একটাই প্রশ্ন, " পাসপোর্ট, ভিসা এসব ঠিকমত আছে তো? " মাঝরাস্তায় পুলিশ যখন উঠে সবার কাগজ-পত্র দেখছিল এবং এক আফ্রিকান যাত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে নিচ্ছিল, আমি তার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম তিনি তক্কে তক্কে আছেন এটা দেখার জন্য কখন পুলিশ এসে আমাকেও নিয়ে যাবে। কিছুই যখন হলনা, তাকে বড্ড নিরাশ মনে হল তখন। তাঁর বেলায় দেখলাম তিনি রাজনৈতিক শরনার্থী। দেশের নাম ঊজ্জ্বল করছেন। ভেবেছিলাম মাদ্রিদ পৌঁছানোর পর উনার কাছ থেকে হোটেল যাবার রাস্তাটা জেনে নেব। কিন্তু বাস টার্মিনালে নেমে যাবার সময় ভদ্রলোক কুশল বিনিময় ও করলেন না। আরে অবাক হচ্ছো কেন?

ইউরোপের যে দেশেই যাও, ওখানের ভাষা জানো না তো তুমি মরেছ। আমি ইংরেজী আর ফরাসীটা দিয়ে মোটামুটি কাজ চালাতে পারি। স্প্যানিশ জানি সব মিলিয়ে গোটা বিশেক শব্দ। ওতে কাজ হবার নয়, তাই ইংরেজীটা দিয়েই চেষ্টা করতে লাগলাম সবখানে। কিন্তু কী মুশকিল! সবাই বলে, লো সিয়েন্তো, নো আবলো ইংলেস, মানে দুঃখিত,আমি ইংরেজী বলতে পারিনা। অনেকক্ষণ পর ঘুরতে ঘুরতে অনুসন্ধান নামের ঘরটায় গিয়ে ভদ্রমহিলার কাছে কাকুতি জানালাম, ‘ সেনিওরা, আমার মহা অন্যায় হয়ে গেছে এ যাত্রায় স্প্যানিশটা শিখে না আসাতে, কিন্তু আপনাকে আমাকে বলতেই হবে সোল নামক জায়গাটায় আমি কীকরে পৌঁছাব?’ ভদ্রমহিলার একটু দয়া হল, হেসে বললেন, “ ঠিক আছে, অমন করে বলছ যখন, তবে এই ভাবে, এই ভাবে ওখানে গিয়ে পৌঁছাবে, তবে বাপু আমাদের মধুর ভাষাটা দেশে গিয়ে অবশ্যই শিখতে বসবে”। সোল মাদ্রিদের পুরোনো শহরের কেন্দ্রস্থল। আগেই ইন্টারনেট ঘেঁটে সস্তার হোটেলের, এরা বলে ইয়ুথ হোস্টেল, বিবরণ নিয়ে নিয়েছিলাম। মেট্রো থেকে নেমে মাটিতে উঠে তাই প্রথমেই খুঁজতে বেরুলাম আমার সস্তার হোটেল। ভাগ্য আমার সহায়। কাছেই পেয়ে গেলাম ২০ ইউরোর ওস্তাল লিওঁ। দরজায় কয়েকটা ঘা দেওয়ার পর শুনলাম বিলিতি কুকুরের ঘেউ ঘেউ, আর দরজা খোলার পর দেখলাম থুত্থুরে এক বুড়িমা দাঁড়িয়ে আছেন আমার সামনে। তারপর যেন আমি তার বিদেশ থেকে ঘরে ফেরা নাতি, কোন সূচনা ছাড়াই আমাকে ঘরের ভেতর ঢুকতে নির্দেশ দিল আর আমিও দরদাম পরে করা যাবে আগে তো রুম দেখি এই ভেবে ঢুকে পড়লাম। সবাইকে বলতে শুনি বডিল্যাংগুয়েজ এর কথা। আমিও স্প্যানিশে বকলম আর বুড়িমা’র তো বলিহারি যাই। দুনিয়ায় যে আরো আরো ভাষা থাকতে পারে তা বোধহয় উনার জানা নেই। ঘরে ঢোকার পর থেকে সমানে বলে যাচ্ছেন তাঁর মধুর ভাষা স্প্যানিশ, আর আমিও কিছু বুঝতে না পেরে সমানে বলে যাচ্ছি, “ লো সিয়েন্তো সেনিওরা, নো কম্প্রেন্দো”।(দুঃখিত ম্যাডাম, আমি বুঝতে পারছিনা।) কিন্তু কে শোনে কার কথা। অগত্যা সেই বডিল্যাংগুয়েজই ভরসা।

বুড়িমা’র ঘরে অন্য যারা ছিলেন তাদের অবস্থা ও তথৈবচ। অর্থাৎ স্প্যানিশ না জানো তো ভাব করতে এসোনা। অথচ ভাব করার জন্য হৃদয় আমার আকুল, কি আর করা, শেষ পর্যন্ত কাউকে না পেয়ে বুড়িমা’র কুকুরটাকেই বুকে টেনে নিলাম। ও বেটা ও আবার আমার গা ঘেঁষতে চায়না। কাছে গেলেই ঘেউ ঘেউ করে কী সব যেন বলে, হয়তো বলে, স্প্যানিশ জানো না তো, টাচ মি নট। ঘরে ছিল বুড়ির নাতনি ছোট্ট ক্লারা, সে দরজার আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে অবাক চোখে আমায় দেখে, আমি ডাকলে মুহুর্তেই সরে পড়ে। আমার রঙের মানুষ ও খুব একটা দেখেছে বলে মনে হলনা। যাক তবু খুশি হলাম, রুমতো একটা পাওয়া গেল, ঘরের মানুষগুলোকেও মন্দ মনে হলনা।

http://www.flickr.com/photos/sumadrictg/6060465552/in/photostream/
বলতো গরমকালে ইউরোপে সূর্য ডোবে ক’টায়? উঁহু, হলনা। রাত ন’টা বেজে যায়, অথচ সূর্যদেব পশ্চিমাকাশে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। বিশ্বাস হয়না বুঝি, আমারও প্রথমদিকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হত। হোস্টেল থেকে যখন বেরুলাম, তখন বেশ দুপুর, অথচ মনে হচ্ছিল যেন সকাল দশটা। বুড়িমা একটা ছোট্ট ম্যাপ দিয়েছিল, তাতে পুরোনো শহরের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে যাবার পথ সুন্দর করে বলে দেয়া আছে। এখানে রাস্তাকে বলে কাই(calle)। আমার কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই, শুরু করলাম কাই মেয়র দিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পৌঁছালাম প্লাজা মেয়র( plaza mayor) -এ। রাস্তায় গিজগিজ করছে মানুষ, তাদের সিংহভাগই বিদেশি পর্যটক। প্লাজা মেয়র পুরোনো শহরের কেন্দ্র, ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত। চতুষ্কোনাকৃতির এই প্লাজাকে চারদিক থেকে ঘিরে আছে লাল আবাসিক বিল্ডিং যেগুলোর গায়ে আবার হরেক রকমের চিত্রকর্ম। এখানেই অনুষ্ঠিত হত ষাঁড়ের লড়াই, এখানেই স্প্যানিশ ইনকুইজিশন এর সময়ে শিরঃচ্ছেদ করা হত ধর্মদ্রোহীদের। চত্বরের কেন্দ্রস্থলে আছে রাজা তৃতীয় ফিলিপের বিশাল ব্রোঞ্জ মূর্তি। প্লাজার চারদিকে বিচিত্র সব দোকান। পুরোনো মুদ্রা, স্ট্যাম্প, দলিলপত্র,ছবি,বোতলের ছিপি,বই আরো কত কি যে পাওয়া যায় এসব দোকানে। এককোনায় দেখলাম শিল্পীদের জটলা, অনেকে নিজেদের পোর্টেট করিয়ে নিচ্ছেন বিশ ইউরো মূল্যের বিনিময়ে।
http://www.flickr.com/photos/sumadrictg/6054238654/in/photostream/

আবার একজায়গায় দেখলাম রঙচঙা সব কাপড় পড়িয়ে রাখা হয়েছে কিছু মস্তকহীন ম্যানকিনকে। মাথা নেই কেন? ওখানে পর্যটকরা মাথা দিয়ে ছবি তুললেই মালিক আড়াল থেকে এসে টুপি বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, “ মশাই, ফেলুন কড়ি”।

http://www.flickr.com/photos/sumadrictg/6054238472/

ইউরোপের শহরগুলো আসলে ছবির মত। পাথরের রাস্তাঘাট, সারি সারি পুরোনো বাড়িঘর, আর সবখানেই তাদের ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা। প্লাজা মেয়র থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্লাজা দেলা ভিলা পেরিয়ে এসে পড়লাম কাতেদ্রাল দেলা আলমুদেনা(cathedral de la almudena)-র সামনে।
http://www.flickr.com/photos/sumadrictg/6060433410/
সুদৃশ্য এই ক্যাথিড্রালের সামনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ। ইতিহাস বলে ১৫৬১ সনে তোলেদো থেকে মাদ্রিদে যখন রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয় তখন মাদ্রিদ-এ কোন কেন্দ্রীয় ক্যাথিড্রাল ছিলনা। তখন এগারশ শতকে ধ্বংসপ্রাপ্ত এক মসজিদের জায়গায় কুমারী আলমুদেনা’র উদ্দেশ্যে নিবেদিত এই ক্যাথিড্রালটি নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কয়েক পা এগুলেই স্পেনের রাজপ্রাসাদ। হুম, নাম তার পালাসিও রেয়াল(palacio real)।এটি স্পেনের রাজা হুয়ান কার্লোস-এর সরকারী বাসভবন হলেও রাজা এখানে থাকেন না। যখনই কোন গুরুত্বপূর্ণ অথবা জাঁকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় তখনই রাজা রাজরাদের ডাক পড়ে এখানে। এই রাজপ্রাসাদটি ও দশম শতকে স্পেনের মুসলমান শাসকদের ব্যাবহৃত দূর্গের ধ্বংসাবশেষের উপর নির্মিত। ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই রাজপ্রাসাদটি বিখ্যাত শিল্পীদের অনেক দুর্মূল্য শিল্পকর্মকে ও ধরে রেখেছে। রাজপ্রাসাদে ঢোকার সাধ থাকলেও সাধ্য হয়নি টিকিটের চড়া দামের কারণে। তারপর আবার হাঁটা, কিছুদূর গিয়েই পড়লাম প্লাজা দে অরিয়েন্তে-র সামনে। এটি মূলঃত চারকোনার একটা চত্বর যার সামনেই রয়েছে বিখ্যাত রয়াল থিয়েটার(teatro real)। চত্বরটি বিখ্যাত এর চুনাপাথরে নির্মিত বিশটি গথিক রাজার মূর্তি আর বাগানের জন্য।
http://www.flickr.com/photos/sumadrictg/6053686697/in/photostream/
বাগান তো নয় যেন একটা গাছ-গাছড়ার যাদুঘর। এখানে ওখানে চীনা হকাররা শরীর ম্যাসাজের বিজ্ঞাপন করে বেড়াচ্ছে, কেউবা বিচিত্র পোষাকে সঙ সেজে বসে আছে, আর পথ-সংগীতশিল্পীরা তাদের বাদ্যযন্ত্রের সুরে মুখরিত করে তুলছে পুরো চত্বর।

তখনো বেশ রোদ। এই গরমের চোট যে একবার পেয়েছে তার বিশ্বাস করতে কষ্টই হবে শীতে এখানের রাস্তাগুলো বরফে সাদা হয়ে যায়। বাগান থেকে বেরিয়ে একটু এগিয়ে গিয়েই পড়লাম মনোরম প্লাজা দে এস্পানিয়া (plaza de espana)-য়। এটিও ছায়াশীতল একটা পার্ক যার মাঝখানে রয়েছে বেশ বড় একটা মনুমেন্ট, যার চারদিকে আবার ছোট্ট একটা জলাধার।
http://www.flickr.com/photos/sumadrictg/6059914519/
বিখ্যাত স্প্যানিশ সাহিত্যক মিগুয়েল সারভান্তেস-এর মূর্তিটা দেখলাম বিরস বদনে তাকিয়ে দেখছে তার নীচে থাকা দন কিহোতে আর সাঞ্চো পাঞ্জার মূর্তিদ্বয়ের দিকে। দন চলেছে তেজী ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে আর সাঞ্চো তার গাধার পিঠে। মনুমেন্ট-টির পেছনে ঠায় দাঁড়ানো নিও-বারোক রীতিতে তৈরী মাদ্রিদের সুন্দরতম সুউচ্চ দালান এদিফিচিও এস্পানিয়া। তার পাশ দিয়ে হেঁটে এসে পড়লাম বড় রাস্তায়, নাম তার গ্রান ভিয়া(gran via), মাদ্রিদের সবচেয়ে ব্যস্ত ও প্রাণবন্ত সড়ক। গ্রান ভিয়ার দুপাশে অভূতপূর্ব সব বিল্ডিং। বড় বড় শপিং মল, থিয়েটার, অফিস, মিউজিয়াম, হোটেল এসব। প্রতিটির সামনেই থমকে দাঁড়াতে হয়। দূর থেকে হঠাৎ চোখে পড়ল ঊজ্জ্বল সাদা রঙের এক প্রাসাদ। অনেকটা কোলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমরিয়াল-এর মত। ম্যাপ বলছে এটিই সেই বিখ্যাত সিবেলেস প্যালেস(palacio de cibeles), নিও ক্ল্যাসিকাল রীতিতে মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী এই প্রাসাদ আর তার সামনের নির্ঝরিনি(fuente de cibeles) মাদ্রিদের অনন্য এক সৌন্দর্য।
http://www.flickr.com/photos/sumadrictg/6059915077/in/photostream/
রোমান প্রকৃতি দেবী সিবেল-এর নামে রাখা মনোহারী এই ঝর্ণা আর সিবেলেস প্যালেস যেটি আবার মাদ্রিদের সিটি হল ও বটে, এদের ঘিরে নতুন বছর এবং বড় দিন উদযাপন করা হয় বেশ ঘটা করে। সিবেলেস প্রাসাদ-এ ঢুকে একটা কাজের জিনিস পেলাম, তাও আবার বিনে পয়সায়।দোতলার বিশাল হলরুমটায় দেখি অনেক কম্পিউটার আর লোকজন ওদের সাথে আঠার মত আটকে আছে। ব্যাপার কী বোঝার জন্য কাছে গিয়ে দেখলাম সবাই ফ্রি-তে ইন্টারনেট ব্রাউজে মেতে আছে। আমিও একটা খালি পেয়ে দ্রুত আমার কাজ সেরে ফেললাম। তখনও জানিনা এর জন্য গাঁটের পয়সা খরচ হবে না, তাই কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে গেলাম, পড়লাম স্পেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংকো দে স্পেনিয়া(banco de espana)-র সামনে। আমার নির্বুদ্ধতার ব্যাপারটা টের পেয়েছিলাম পরদিন আমেরিকান তরুনী জেসিকা’র সাথে আলাপচারিতায়। জেসিকা কে? কাল বলব।

আবারও গ্রান ভিয়া, পিঠে আমার ভারী বোঝা। একটু হাঁটলাম, আর দেখলাম সামনে দাঁড়ানো অদ্ভুত সুন্দর তোরন, পুয়ের্তা দে আলকালা(puerta de alcala)।
http://www.flickr.com/photos/sumadrictg/6059914707/in/photostream/
ইতালীয় ভাস্কর সাবাতিনি কর্তৃক ১৭৭৮ সালে নির্মিত অনুপম এই নগরদ্বারটি মাদ্রিদের জাতীয় সৌধ। এর পাশেই রয়েছে মাদ্রিদের সবচেয়ে বড় পার্ক বুয়েন রেতিরো(parquet del buen retiro) যেখানে মনস্থির করলাম লম্বা একটা বিরতি দেব। বিরতির পর তোমাকে গল্পের শেষটুকু শোনাব নিশ্চয়ই।


Comments

কৌস্তুভ's picture

ছবিগুলো একদমই আসেনি, মডুরা কেউ ঠিকঠাক করে দিতে পারেন?

সুমন_তুরহান's picture

আপনার বর্ণনার ভঙ্গিটা খুব ভালো লাগলো।

ফাহিম হাসান's picture

আপনার বর্ণনাভঙ্গী অসাধারণ। আফসোস ছবি আসে নাই।

অরুন্ধতী ঝিলি's picture

তুমি সবসময়ই ভালো লিখতে, সে আর নতুন কি !
তোমার ভ্রমন বর্ননা যেন ছোট্ট পূর্নাঙ্গ একটা ট্রাভেল বুক।
ভালো থাকো জুলিয়াস হাসি

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.