গ্রীক মিথলজি-১ (বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের সৃষ্টি, ইউরেনাসের পতন)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৬/০৭/২০১৩ - ১০:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মিথলজি শব্দটির আকর্ষন যেনো অনতিক্রম্য। ছোট থেকে বড়, বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবার মধ্যেই মিথলজির প্রতি এক দুর্নিবার আকর্ষন আছে। মিথলজি মানে কি? বাংলা করলে এই শব্দটির অর্থ হতে পারে পৌরানিক কাহিনীসমূহ। কিন্তু ব্যাপারটি এতো সরলীকরণ নয়। আমাদের যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি, বিশ্বাস, কোনো আচার অনুষ্ঠানের উৎপত্তির কাহিনীসহ অনেক কিছুই মিথলজির মধ্যে হতে পারে, কাহিনী সত্যও হতে পারে, আবার মিথ্যাও হতে পারে। সত্য হোক, কিংবা মিথ্যা- মিথলজি বরাবরই আমার খুবই প্রিয় এক বিষয়। অনেকদিন ভেবেছি মিথলজি, বিশেষত গ্রীক মিথলজি নিয়ে একটি ধারাবাহিক লেখা লিখবো। এই ভাবনাকেই বাস্তবে রুপ দেবার অপচেষ্টা শুরু করতে যাচ্ছি। শুরু করতে যাচ্ছি গ্রীক মিথলজির আদি থেকেই। এবং এখানে একটি কথা বলে রাখি, যদি কোন মিথে অনেকগুলো ভার্সন প্রচলিত থাকে, তাহলে অধিক গ্রহনযোগ্য ভার্সনটিকেই এখানে আমি নিয়েছি। যাহোক, সবাইকে গ্রীক মিথলজির জগতে স্বাগতম।

পৌরানিক কাহিনীগুলো অনেক রকমের হতে পারে। তবে যে কোন মিথলজিতে সৃষ্টিতত্ত্ব একটি অবিচ্ছেদ্য এবং গুরুত্বপূর্ন অংশ। এই সৃষ্টিতত্ত্ব আবার তিন রকমের হতে পারে- বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের সৃষ্টি, দেবতাদের জন্ম এবং মানবজাতির সৃষ্টি। আর গ্রীক মিথলজিতে সৃষ্টিতত্ত্বে এই তিনটি অংশই আছে।

৭৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৬৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ সময়ে প্রাচীন গ্রীসে এক চারণকবি ছিলেন, নাম ছিলো তাঁর হেসিয়ড। হেসিয়ড ছিলেন আরেক বিখ্যাত গ্রীক মহাকবি হোমারের প্রায় সমসাময়িক। এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের সৃষ্টি, দেবতাদের জন্ম – এই সমস্ত কিছু তিনি তাঁর গ্রন্থ ‘থিওগোনী’-তে লিখে গিয়েছেন। সেই ‘থিওগোনী’ অনুযায়ী- সৃষ্টির আদিতে, দেবতাদের আবির্ভাবের বহু পূর্বে, সুদূরের তমসাচ্ছন্ন অতীতে শুধু ছিলেন ক্যায়োস - এক অবয়বহীন অস্তিত্ব, যা আচ্ছিন্ন ছিলো অবিচ্ছিন্ন অন্ধকারে। ক্যায়োস হচ্ছেন এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের আদিম দেবতা, বিশাল ও অপরিমেয় গভীরতার এক গর্ত, সমুদ্রের মতো নিষ্ঠুর, অন্ধকার, অমিতাচারী এবং উদ্দাম, একইসাথে অবয়বহীন শূন্যতা। সেই সময়ে না ছিলো কোনো স্থল ভূমি, না ছিলো কোনো জলভাগ, না ছিলো মানুষ, না ছিলো কোনো দেবতা। ছিলো না সূর্য বা চাঁদ, পাহাড় বা নদী। এমনকি সময়েরও অস্তিত্ব ছিলো না। ছিল শুধু এক বিশাল শূন্যতা। এই বিশাল শূণ্যতা থেকে কীভাবে যেনো জন্ম নিলেন- গাইয়া বা পৃথিবী, বা অন্যভাবে বলা যেতে পারে ক্যায়োসের পর গাইয়ার আবির্ভাব হয়, তিনি ক্যায়োসের সন্তান হো্ন, বা না হোন। গাইয়ার সাথেই জন্ম হয় টারটারাস (পাতালপুরী) এবং এরোসের, ভালোবাসার আদিম দেবতা। এভাবেই বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ড তখনো তৈরী হয় নি, কিন্তু সৃষ্টি হয় পৃথিবী, পাতালপুরী আর ভালোবাসার।


ক্যায়োস- অবয়বহীন শূণ্যতা

হেসিয়ডের থিওগোনি অনুযায়ী, টারটারাস হচ্ছে এই বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ডের তৃতীয় আদিম দেবতা- ক্যায়োস ও গাইয়ার পর এবং এরোসের পূর্বে যার জন্ম। টারটারাস একইসাথে দেবতা এবং পাতালপুরী। স্থান হিসাবে টারটারাসের অবস্থান পৃথিবীর গভীর তলে। হেসিওড একে স্বর্গ থেকে বহু নিচে অবস্থিত অঞ্চল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে- স্বর্গ থেকে একটি ব্রোঞ্জ মুদ্রা নিক্ষেপ করলে, পৃথিবীতে তা পৌঁছাতে নয় দিন সময় লাগে। একইভাবে পৃথিবী থেকে এই মুদ্রা পাতালে পৌঁছাতে সময় নেয় নয় দিন। পাতালের এই অঞ্চলটি অন্ধকারময়, গুমোট। এই অঞ্চল ঘিরে রয়েছে একটি ব্রোঞ্জ নির্মিত দেওয়াল। এই দেওয়ালকে বাইরের দিক থেকে ঘিরে রয়েছে তিন স্তরে বিন্যস্ত রাত্রির অন্ধকার। টারটারাস এবং এর অধিবাসীদের নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করবো।

ক্যায়োস এরপরে জন্ম দিলেন এরেবাস (অন্ধকার ও ছায়ার দেবতা) এবং নিক্স (রাত্রি-র দেবী)-কে। ভালোবাসার আদি দেবতা এরোসের হস্তক্ষেপে এরেবাস এবং নিক্স মিলিত হলেন, এবং জন্ম নিলেন ইথার (স্বর্গীয় আলো) এবং হেমেরা (দিন বা পৃথিবীর আলো)। এরেবাস এবং নিক্সের এই মিলিত হওয়া যেনো বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ডের প্রথম মিলন। নিক্স আবার একা একা জন্ম দিলেন মোমুস (নিন্দা), মোরোস (অদৃষ্ট), থানাটোস (মৃত্যু), হিপনোস (নিদ্রা), ওনেইরোরি (স্বপ্ন), কের (ধ্বংস), ওইজিস (দুর্দশা), হেসপেরিদেস (সূর্যাস্ত), কেরেস (মৃত্যুভাগ্য), মোইরাই (ভাগ্য), নেমসিস (কর্মফল), এ্যাপাটে (কপটতা), ফিলোটেস (বন্ধুত্ব), গেরাস (বৃদ্ধত্ব) এবং এরিস (দ্বন্দ্ব)সহ মোট পনেরজন সন্তানকে, যারা অন্ধকার থেকে মানুষের কাছে এসেছেন। নিক্স আর এরেবাসের সন্তানদের কথায় আমরা পরে আসবো, তার আগে ঘুরে আসি গাইয়ার জীবনীতে।

আসলে গ্রিক মিথোলজির ক্রমানুসরণটা হয়েছে এই গাইয়া থেকেই। এই বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ড ধীরে ধীরে তার চেহারা পেতে থাকে গাইয়ার জন্যই। খুব দ্রুতই গাইয়া বা পৃথিবীর সন্তান জন্মাবার ইচ্ছা হলো এই বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ডকে বসতিপূর্ণ এবং শাসন করার জন্য। গাইয়ার সন্তানের জন্য এতোই প্রবল ইচ্ছা ছিলো যে সর্বপ্রথম নিজে নিজেই জন্ম দেন তাঁর সমপর্যায়ের ইউরেনাসকে (আকাশ, বা স্বর্গ), যাতে গাইয়ার অন্যান্য সন্তানেরা বা ভবিষ্যত প্রজন্ম গাইয়া বা পৃথিবীর বুকে দাঁড়াতে পারেন এবং ইউরেনাসে বা স্বর্গে বিশ্রাম নিতে পারেন। আর এভাবেই গাইয়া আর ইউরেনাস (পৃথিবী এবং স্বর্গ বা আকাশ) আলাদা হলেও সমপর্যায়ে পরিনীত হয়। ইউরেনাসকে জন্ম দেওয়ার পর গাইয়া অউরিয়া বা পাহাড় এবং পন্টাস বা সমুদ্রকে জন্ম দেন। ফলে এই বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ড আকৃতি পেতে থাকলো- পৃথিবী, পাতালপুরী, আকাশ (বা স্বর্গ), পাহাড় এবং সমুদ্র।

গ্রীক কবি হেসিয়ডের মতে, ইউরেনাস গাইয়ার সন্তান হলেও যেহেতু সমপর্যায়ের ছিলো তাই প্রতিরাতে গাইয়াকে চারপাশ থেকে আবৃত করে রাখতেন এবং এভাবেই গাইয়া মা হওয়া সত্ত্বেও ইউরেনাস তাঁর সাথে মিলিত হতেন। গ্রীক মিথলজিতে যে ইনচেষ্ট বা অজাচারের ছড়াছড়ি, সেটার উৎপত্তি যেনো সেই আদিতেই!


গাইয়া এবং ইউরেনাস

গাইয়া এবং ইউরেনাসের মিলনে প্রথমে জন্মগ্রহন করেছিলো হেকাটনখিরাস নামক দানব। হেকাটনখিরাসরা সংখ্যায় ছিলো তিনজন- তেজস্বী ব্রিয়ারেস, উন্মত্ত কোট্টুস এবং বড় অঙ্গযুক্ত গিয়েস। তারা প্রত্যেকেই ছিলো শক্তিশালী, বিশালকায় এবং ভয়ঙ্কর ও দাম্ভিক প্রানী, যাদের প্রত্যেকের ছিলো একশটি হাত এবং পঞ্চাশটি মাথা, যেগুলোর উৎপত্তি হয়েছিলো কাঁধ থেকে। এই কিম্ভূতকিমাকার সন্তানদের দেখে ইউরেনাস খুব বিরক্ত হলেন, এদের শক্তিমত্তা দেখে ভীতও হলেন। তাই জন্মাবার পর পরেই এদেরকে গাইয়ার গর্ভাশয়ে ধাক্কা দিয়ে ফিরিয়ে দিলেন। ইউরেনাসের এই আচরনে গাইয়া খুব ব্যথিত হলেন।


শিল্পীর তুলিতে- হেকাটনখিরাস (শিল্পী- রাচেল মায়ো)

হেকাটনখিরাসদের পর ইউরেনাস আর গাইয়ার মিলনের ফলে জন্মগ্রহন করলো সাইক্লোপসরা, যারা দেখতে অনেকটা মানুষের মতোই, কিন্তু বিশালকায় আকৃতির। এরা বিশাল আকৃতির হলেও বুদ্ধিতে অনেক খাটো ছিলো। এদের কপালের মাঝখানে ছিলো একটি মাত্র চোখ। এরা স্বভাবেও অনেকটা একগুয়ে। সাইক্লোপরা ছিলো তিনজন- ব্রোন্টেস, স্টেরোপেস এবং আর্গেস। স্বভাবে একগুয়ে এবং বুদ্ধিতে খাটো হওয়ার জন্য এরা একের পর একের বিব্রতকর এবং অবাঞ্চিত ঘটনার জন্ম দিতে লাগলো। ইউরেনাস বিরক্ত হয়ে আবারো কঠোর হলেন। এদেরকেও বন্দী করে রাখলেন গাইয়ার অভ্যন্তরে কোন এক গোপন স্থানে। মা গাইয়া আবারো ব্যথিত হলেন।


শিল্পীর তুলিতে- সাইক্লোপস

হেকাটনখিরাস এবং সাইক্লোপসদের পরে গাইয়া এবং ইউরেনাসের একে একে আরো বারোটি সন্তান জন্ম গ্রহন করে, এদেরকেই বলা হয় টাইটান, আসলে এরা ছিলেন প্রথম প্রজন্মের টাইটান। এরাই মূলত দেবতাদের উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। এই টাইটানরাও আকৃতিতে ছিলেন বিশাল, তবে দেখতে ছিলেন সাইক্লোপদের চেয়েও মানবীয়। এই বারোজন টাইটানের ভিতর আবার পুত্র ছিলেন ছয়জন আর বাকী ছয়জন ছিলেন কন্যা সন্তান। ছয়জন পুত্র টাইটান হচ্ছেন- ওসেনাস, হাইপেরিয়ন, কয়ওস, ক্রিয়াস, ইয়াপেতুস ও ক্রোনাস এবং ছয়জন কন্যা টাইটান হচ্ছেন- টেথিস, থেইয়া, ফয়বে, থেমিস, নেমোসাইনে ও রিয়া। (হেসিয়ডের থিওগোনী অনুযায়ী, গাইয়া ও ইউরেনাসের প্রথমে টাইটান, পরে সাইক্লোপ এবং সবশেষে হেকাটনখিরাস জন্ম গ্রহন করে।)

এই বারোজন টাইটানদের কথাই আমরা জানবো, তবে সবার আগে আসি এদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ, কিন্তু সবচেয়ে বেশী সাহসী, উচ্চাকাঙ্খী, দুর্বীনিত সন্তান ক্রোনাসের কথায়। আগেই বলেছি, বাবা ইউরেনাস কদাকার চেহারার জন্য সাইক্লোপস আর হেকাটনখিরাসদের গাইয়ার ভিতরে লুকিয়ে রাখেন। এই ব্যাপারটি গাইয়া মেনে নিতে পারেন নি। এছাড়া এদেরকে তাঁর ভিতরে লুকিয়ে রাখার জন্য ব্যথাও শুরু হতে লাগলো। ব্যথা যখন অসহনীয় পর্যায়ে পরিনীত হলো, গাইয়া তাঁর সন্তানদের আহবান করলেন এই অরাজক অবস্থার অবসান করার জন্য। গাইয়া তাঁর সন্তানদের বললেন, “হে আমার সন্তানেরা! পাপাচারে নিমগ্ন বাবার সন্তানেরা! যদি তোমরা আমাকে মান্য করো, তাহলে তোমাদের বাবাকে তাঁর পাপময় কৃতকর্মের জন্য অবশ্যই শাস্তি দেওয়া উচিত”। কিন্তু তাঁর টাইটান সন্তানরা কিছু করতে ভয় পেলেন, শুধুমাত্র একজন ছাড়া। তিনিই হচ্ছেন ক্রোনাস। তিনি গাইয়াকে বললেন, “মা! আমি এই দায়িত্ব নিলাম। বাবাকে শাস্তি দিবো, শুধু তুমি বলেছ বলে নয়, বরঞ্চ সে লজ্জাজনক পাপ কাজ করেছে বলে!” শুরু হলো ক্রোনাসের সাথে মা গাইয়ার ষড়যন্ত্র!

গাইয়া চিন্তা করলেন, ইউরেনাস বাবা হিসেবে মোটেও ভালো নন। অবশ্য যে তার সন্তানদের জন্মাবার সময় আবার মায়ের পেটে পাঠিয়ে দেয়, কিংবা কোথাও বন্দী করে রাখে, সে বাবা হবার যোগ্যও নয়। তাই গাইয়া ঠিক করলেন, ইউরেনাসকে আর বাবা হতে দেওয়া যাবে না!
গাইয়া ইউরেনাসকে নপুংসক করার জন্য একটি অনমনীয় কাস্তে তৈরী করে ক্রোনাসের হাতে তুলে দিলেন। এক রাতে ক্রোনাসের নেতৃত্বে ছয়জন পুত্রের মধ্যে পাঁচজন টাইটান ইউরেনাসকে আক্রমণ করার জন্য ওঁত পেতে থাকেন। অধিকাংশ মিথে দেখা গেছে, ওসেনাস ক্রোনাসের সাথে এই ষড়যন্ত্রে ছিলেন না। ইউরেনাস যখন অন্যান্য রাতের মতো গাইয়ার সাথে মিলিত হতে আসেন, তখনই চারজন টাইটান হাইপেরিয়ন, কয়ওস, ক্রিয়াস এবং ইয়াপেতুস চারদিক থেকে ইউরেনাসকে শক্ত করে ধরে রাখেন এবং ক্রোনাস মাঝখানে গিয়ে মা গাইয়ার তৈরী অনমনীয় কাস্তে দিয়ে ইউরেনাসকে নপুংসক করেন।


টাইটান ক্রোনাস ইউরেনাসকে নপুংসক করছেন (শিল্পী- জর্জিও ভাসারি ও ক্রিস্টোফানো ঘেরাডি, ১৫৬০ সাল)

ইউরেনাসকে নপুংসক করার সময় যেসব রক্তের ফোঁটা ঝরতে থাকে, সেগুলো গাইয়া নিজের বুকে রেখে দেন এবং মৌসুম শেষে সেখান থেকে জন্ম নেয় শক্তিশালী এরিনিজ, জায়ান্ট এবং মেলিয়া নামক এক অ্যাশ গাছের নিম্ফ। আর ইউরনাসের অন্ডকোষসহ জননাঙ্গটি সমুদ্রের যেখানে ফেলা হয়েছিলো, সেখানের ফেনা থেকে উত্থিত হয়েছিলেন দেবী আফ্রোদিতি, এজন্য আফ্রোদিতিকে বলা হয়ে থাকে “ফেনা থেকে উদ্ভূত”। এই সমুদ্র জন্মটি ঘটেছিলো সিথেরার অদূরে, সেখান থেকে আফ্রোদিতিকে ভাসিয়ে নেওয়া হয় সাইপ্রাসে।

এভাবেই ইউরেনাসের পর এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের রাজা হলেন ক্রোনাস। ক্রোনাস ইউরেনাসকে নপুংসক করার পর গ্রীক মিথে ইউরেনাসকে আর খুব একটা দেখা যায় নি, যদিও ইউরেনাস জীবিত ছিলেন, কারণ তাঁকে হত্যা করা হয় নি, তবে আর কোনো ক্ষমতা ছিলো না। ক্রোনাস যখন ইউরেনাসকে নপুংসক করে তখন চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে ইউরেনাস বেদনার্ত কন্ঠে ক্রোনাসকে অভিশাপ দেন, “ক্রোনাস, তুমি আজ আমার সাথে যে ব্যবহার করেছ, একদিন তোমার সন্তানও তোমার সাথে সেই ব্যবহার করবে, তোমাকে ক্ষমতা থেকে ছুড়ে ফেলে সে এই বিশ্ব- ব্রক্ষ্মান্ডের রাজা হবে”। ক্রোনাস ইউরেনাসের কথাকে খুব গুরুত্বের সাথে বিশ্বাস করলেন।


মন্তব্য

এ হাসনাত এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিকাছে ভাইয়া, আপনি গ্যালারীতে বসেন, আমি মাঠেই আছি!

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

একী রে ভাই!!! সবাইকে মিথোলজীতে পেয়েছে নাকি? আমিও তো গ্রীক পুরাণের দুই তিনটা কাহিনী রেডি করছি সচলে ছাড়বো বলে!! শুরু করেছি ইউরোপা আর প্রমিথিউসের কাহিনীদুটো নিয়ে। আপনি আদি কাল থেকে শুরু করায় ভালো হলো - একটা ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরী হবে।

দুটো প্রশ্ন:
১। লেখকের নাম কোথায়?
২। ক্রোনাস নাকি ক্রনোস? নামগুলোর উচ্চারন নিয়ে একটু সমস্যায় আছি, আপনি যদি সাহায্য করতে পারেন কৃতজ্ঞ থাকবো।

ধন্যবাদ।

সাইদ এর ছবি

ক্রোনাস অথবা ক্রনোস দুইটাই ঠিক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার কাহিনীগুলোও লিখুন না! আসলে আমি মিথলজির খুব ভক্ত, কিন্তু বাংলা ভাষায় সম্পূর্ণ ভালো কোন লেখা পাইনি এই সংক্রান্ত- তাই নিজেই প্রথম থেকেই শুরু করেছি।

লেখকের নাম বা পরিচয়ঃ
লেখার নিচে দিতে ভুলে গেছি। আপনার প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে নিজের ঢোল বাজাই-
নামঃ এস এম নিয়াজ মাওলা
ব্লগীয় নামঃ ডাক্তারের রোজনামচা
অনেক পূর্বে সচলায়তনে অতিথি লেখক হিসেবেই দুটি লেখা লিখেছিলাম- তখন অবশ্য নাম ছিলো 'ডাক্তারের দিনকাল'।

মিথলজির নামগুলোর উচ্চারণ নিয়ে আমিও খুব সমস্যায় আছি। আমি যতদূর জানি- ক্রোনাস, ক্রনোস- দুটোই সঠিক, আমার জানায় ভুলও হতে পারে!

ভালো থাকুন খুব, সব সময়ের জন্য।

(ডাক্তারের রোজনামচা)

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

কিন্তু লেখকের নাম কোথায়?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার উৎসাহ পেয়ে খুব ভালো লাগছে ভাইয়া। এই সিরিজে আপনার মতামৎ আমার জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে। আর আমার নাম? আগের কমেন্টেই দিয়েছি, তবুও আবার বলি- এস এম নিয়াজ মাওলা (ডাক্তারের রোজনামচা)

আয়নামতি এর ছবি

এসব পড়তে মজাই লাগে। ইয়ে ষ' এর পর কখনোই ন বসে না, ণ বসে।
এ ব্যাপারে হিমুভাইয়ের চমৎকার একটা গল্প আছে। ওটা পড়েছি বলেই এমন পাণ্ডিত্য ঝাড়ছি দেঁতো হাসি
নইলে এমন ভুল আমিও খুব করতাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ণ-ত্ব আর ষ-ত্ব বিধাণ মেনে চলার প্রাণপনে চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। কতটুকু পারবো, সেটা অবশ্য জানি না হাসি

ভালো থাকুন খুব, সব সময়ের জন্য।

খেকশিয়াল এর ছবি

শুরুটা বেশ হয়েছে, চলুক চলুক

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাদের উৎসাহ পেলেই এই লেখাটা নিয়মিতভাবে লিখতে পারবো আশা করি।
ভালো থাকুন অবিরত।

(ডাক্তারের রোজনামচা)

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা লম্বা সিরিজ শুরু হয়ে গেল তবে! চমৎকার! চলুক
লেখা ভাল লেগেছে। তবে নানা সুতোগুলোর মধ্যে খেই রাখা কিন্তু খুব মুস্কিল। চোখ টিপি
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনাদের উৎসাহ পেলে অবশ্যই এইটা একটা লম্বা সিরিজ হবে।
ভালো থাকুন খুব।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বাহ চমৎকার। সিরিজ চলুক। মিথোলোজিতে বেশ আগ্রহ থাকা স্বত্ত্বেও ভেঙ্গে ভেঙ্গে কিছু পড়া ছাড়া ধারাবাহিকভাবে পড়া হয়ে ওঠেনি। আগ্রহের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।

এবারে একটু ফিডব্যাক। লেখাটা পড়তে আমার কাছে একটু একাডেমিক প্রবন্ধ টাইপ লাগছে। আমি আরও স্বচ্ছন্দ বধ করতাম সম্ভবত গল্পের মত করে বলা হলে। অবশ্য আপনি আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ীই লিখবেন। আমি আমার আবদারটা জানিয়ে গেলাম, এই।

আর, কোন ভাল বই সহজপাচ্য বই সাজেস্ট করবেন?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্য আমার খুব ভালো লাগলো, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। হ্যাঁ, আমিও বুঝতে পারছি এই লেখাটা কিছুটা একাডেমিক হয়ে যাচ্ছে। আসলে সৃষ্টিতত্ত্বের এই অংশটা আমি কোনোভাবেই মজা করে লিখতে পারলাম না! চেষ্টা থাকবে পরবর্তীতে।

ভালো বইয়ের নাম জানতে চাইলেন? বাংলা ভাষায় না কি বিশ্ব সাহিত্যে? বাংলাতে এডিথ হ্যামিলটনের 'মিথলজি' বইটির অনুবাদ আছে, খারাপ নয় বইটি। আর বিশ্ব সাহিত্যে তো অনেক বই-ই আছে- তবে সহজপাচ্য কথাটা লিখে আমাকে একটু থমকে দিয়েছেন। ওভিদের মেটামরফোসিস অনেক ভালো, কিন্তু সহজপাচ্য নয় বোধহয়। থিওগোনী এবং ওয়ার্ক এন্ড ডেইজ -এর লেখাও খুব একটা সহজপাচ্য নয়। সেদিক থেকে বালফিনচ মিথলজি খারাপ না, তবে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে মোরফোর্ড এবং লেনারডনের লেখা 'ক্ল্যাসিক্যাল মিথলজি'। এছাড়াও ইন্টারনেটে বিষয় ভিত্তিক বহু বই আপনি খুঁজে পাবেন। জানি না, কতটুকু আপনাকে সাহায্য করতে পারলাম!

ভালো থাকুন, অবিরত।

(ডাক্তারের রোজনামচা)

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ্যামিলটনের "মিথলজি" বইটার একাধিক বাংলা অনুবাদ আছে... ঐতিহ্যের টা একটু খটোমটো... (কিন্তু ঐটাই আগে কিনে ফেলেছিলাম ওঁয়া ওঁয়া আর কেউ এই ভুল করবেন না) খন্দকার আশরাফ হোসেনের অনূদিত একটা আছে... প্রকাশনী ভুলে গেছি... সেইটা চমৎকার সুপাঠ্য

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন খুব।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

চমৎকার লেখা হয়েছে। তবে প্রবন্ধের যে কথাটা বললেন কবি ভাই একটু আগে ওইটা আমারো মনে হয়েছে।

*"গাইয়া" উচ্চারনটাকি ঠিক আছে? ইংলিশ বানান gaia কিন্তু আমি বেশিরভাগ জায়গায় বলতে শুনেছি "গায়া"

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি ঠিক শিওর নই 'গাইয়া' না কি 'গায়া' হবে।
ভালো থাকুন অবিরত।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

যতদূর পড়েছি - গায়া হবে। মুভিতে উচ্চারণও তাই শুনেছি (মুভির নাম মনে নেই)

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া।

-নিয়াজ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বাহ পুরাণের ছড়াছড়ি... পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও।
ভালো থাকুন খুব।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

তারেক অণু এর ছবি

চলুক! পুরাণ খুব পছন্দের। সাইক্লোপসে ধারণা যে হাতির কঙ্কাল থেকে এসেছে সেটা জানে স্কুল জীবনে অভিভূত হয়েছিলাম।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

তিন গোয়েন্দা থেকে কি? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সম্ভবত জাফর ইকবাল - টি রেক্সের সন্ধানে, ওই যে যেখানে ইবুর মা গল্পের বই পড়তে পড়তে বলেন এক চোখো দানবের কংকাল পাওয়া গেছে। পরে রাতে ইবুকে বুঝিয়ে দেন ব্যপারটা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ অণু ভাইয়া। আপনার মন্তব্য আমার জন্য অনুপ্রেরনা হয়ে থাকবে।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

রাত-প্রহরী এর ছবি

পড়লাম অনেক দেরীতে।
পরের পর্বগুলো একসাথেই পড়তে পারবো এটা ভেবে ভালো লাগছে।
চলুক।

----------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

দেরীতে হলেও পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন খুব।

-নিয়াজ

সৌমিত্র বিশ্বাস  এর ছবি

এই লেখার পরবর্তী পর্ব/ অংশ আছে কি? থাকলে লিংকটা কিভাবে পাবো? নাকি এই লেখাটি পরবর্তী অংশ লেখা হয়নি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।